তাওবার তিনটি রুকন



সদরুল      আফাযিল   হযরত    আল্লামা    সায়্যিদ   মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন   মুরাদাবাদী   رَحۡمَۃُ    اللہِ   تَعَالٰی   عَلَیْہِ    বলেন: তাওবার  রুকন   তিনটি।   যথা-   (১)  কৃত  পাপ   স্বীকার  করা।  (২)  এতে  লজ্জিত হওয়া। (৩) ঐ গুনাহের কাজ ছেড়ে দেয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। আর যদি  ঐ গুনাহের ক্ষতিপূরণের         ব্যবস্থা       থাকে,       তাহলে       পরবর্তীতে যথাযথভাবে    তা    ক্ষতিপূরণ      করে    নেয়া    আবশ্যক। যেমন- নামায  ত্যাগকারী ব্যক্তির  তাওবা   শুদ্ধ  হওয়ার জন্য     ঐ    নামায    কাযা    আদায়    করে    নেয়া    জরুরী।  (খাযায়েনুল ইরফান, ১২ পৃষ্ঠা)



ঘুমন্ত ব্যক্তিকে নামাযের জন্য জাগিয়ে দেয়া ওয়াজিব



কেউ     ঘুমাচ্ছে    কিংবা     নামায    আদায়     করতে     ভুলে গিয়েছে  তবে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জ্ঞাত    ব্যক্তির জন্য জরুরী   হবে   যে,  ঘুমন্ত  ব্যক্তিকে   জাগিয়ে  দেয়া  কিংবা ভুলে    যাওয়া   ব্যক্তিকে   নামাযের   কথা   স্মরণ   করিয়ে  দেয়া।        (বাহারে        শরীয়াত,        ১মখন্ড,        ৭০১পৃষ্ঠা) (অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।) মনে   রাখবেন! জাগ্রত  করা  কিংবা  স্মরণ  করিয়ে  দেয়া তখনই ওয়াজীব হবে, যখন আপনার   প্রবল ধারণা হয়  যে, এ  ব্যক্তি অবশ্যই নামায পড়বে অন্যথায় ওয়াজীব নয়।



ফযরের সময় হয়েছে উঠে যান!



প্রিয়  ইসলামী ভাইয়েরা! খুব বেশি করে সদায়ে মদীনা দিতে      থাকুন।     অর্থাৎ    ঘুমন্তদেরকে    নামাযের     জন্য জাগ্রত    করুন   এবং   অফুরন্ত   সাওয়াব    অর্জন    করুন।  দা’ওয়াতে      ইসলামীর      মাদানী      পরিবেশে      ফযরের  নামাযের   জন্য   মুসলমানদেরকে   ঘুম   থেকে   জাগিয়ে  তোলাকে    ‘সদায়ে    মদীনা    দেয়া’    বলা   হয়।     সদায়ে মদীনা   প্রদান   করা  ওয়াজীব    নয়।   ফযরের  নামাযের জন্য    জাগিয়ে    দেয়া    সাওয়াবের   কাজ।    যা   প্রত্যেক মুসলমানকে  সময়   ও   স্থান    অনুযায়ী  করা   প্রয়োজন। আর সদায়ে  মদীনা প্রদানের  সময় এ  বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন  করা  খুবই  জরুরী   যে,  যেন   কোন   মুসলমান কষ্ট না পায়।



একটি কাহিনী



একজন ইসলামী ভাই আমাকে (সগে মদীনা عُفِىَ عَنْهُ (লিখক)     কে)     বলেছিলেন     যে,     আমরা     কয়েকজন  ইসলামী    ভাই মেগাফোন  (ছোট্ট  মাইক) দ্বারা ফযরের সময়    সদায়ে    মদীনা     প্রদান    করছিলাম।    পথিমধ্যে  একটি       গলি      দিয়ে       যাওয়ার       সময়       এক      ব্যক্তি  আমাদেরকে বাধা প্রদান করলেন এবং তিনি বললেন: আমার  ছেলে সারারাত  ঘুমায়নি। এই   মাত্র  তার  চোখ লেগে  এসেছে  (অর্থাৎ  তার  ঘুম  এসেছে)  ,  আপনারা  মেগাফোন  বন্ধ করে দিন। ঐ ব্যক্তির উপর    আমাদের খুব     রাগ      এলো।     জানিনা     সে       কেমন      মুসলমান! আমরাতো   নামাযের  জন্য  লোকদেরকে    জাগ্রত  করে দিচ্ছি।   আর  ঐ  ব্যক্তি  একটি     সৎকাজে  আমাদেরকে বাধা    দিচ্ছে।  অনুরূপ    দ্বিতীয়   দিনেও  আমরা   সদায়ে মদীনা   প্রদান   করতে   করতে   ঐ   গলির   নিকট   গিয়ে  পৌঁছলাম। তখন দেখতে পেলাম ঐ ব্যক্তি পূর্ব থেকেই গলির  মুখে  খুবই  মর্মাহত  হয়ে  দাঁড়িয়ে  আছেন।  সে  আমাদেরকে    বললেন:      আজ    রাতেও    আমার    ছেলে সারারাত   ঘুমায়নি।   এইমাত্র  তার   ঘুম  এসেছে।  তাই আমি  এখানে  দাঁড়িয়ে  আছি,   যাতে আপনারা আমার  গলি    দিয়ে    যাওয়ার     সময়    চুপে    চুপে    চলার     জন্য  আপনাদের    খেদমতে    আবেদন    করতে      পারি।    এর থেকে  বুঝা গেলো, মেগাফোন ব্যতীতই সদায়ে মদীনা দিতে হবে।   অনুরূপ   এমন উচ্চ স্বরেও সদায়ে  মদীনা দেয়া যাবে না, যা দ্বারা ঘরে নামায ও তিলাওয়াতে রত ইসলামী বোন, দূর্বল,  রুগ্ন ও শিশুদের কষ্ট হয়। অথবা যারা    প্রথম     ওয়াক্তে    ফযরের    নামায     আদায়    করে  ঘুমাচ্ছেন   তাদের  ঘুমের   বিঘ্ন  ঘটে।   আর  যদি    কোন মুসলমান নিজ ঘরের নিকট সদায়ে মদীনা প্রদানে বাধা প্রদান করে,   তাহলে  তার  সাথে  অযথা  তর্কে  লিপ্ত  না হয়ে   তার থেকে  ক্ষমা  চেয়ে নিবেন এবং তার সম্পর্কে এই     সু-ধারণা    পোষণ    করবেন     যে,    নিশ্চয়ই    কোন মুসলমান নামাযের  জন্য জাগানোর বিরোধীতা  করতে পারে না।   হয়ত এই বেচারা  কোন অসুবিধার   কারণে   বাধ্য    হয়ে   বাধা  প্রদান  করছে।  আর   যদি  বাস্তবে  সে বেনামাযীও হয়, তারপরও তার উপর কঠোরতা করার কোন    অবকাশ   আপনার   নেই।   অন্য    কোন   উপযুক্ত সময়ে     অধিক   নম্রতা   ও    বিনয়ের   সাথে     ইনফিরাদী কৌশিশের  মাধ্যমে    তাকে   নামাযের   প্রতি   উৎসাহিত করবেন।    মসজিদ    সমূহেও   ফযরের    আযান   ব্যতীত অযথা     মাইক   ব্যবহারকারী   কিংবা       গ্রামে   গঞ্জে   বা বাড়ীতে            অনুষ্ঠিত           মাহফিল           সমূহে             মাইক ব্যবহারকারীদের  খেয়াল  রাখতে   হবে  যে,   নিজ   নিজ ঘরে  ইবাদতে  রত   ব্যক্তিবর্গ,  অসুস্থ,   দুগ্ধপোষ্য   শিশু কিংবা ঘুমন্ত ব্যক্তিরা যেন তার মাইকের   শব্দ দ্বারা কষ্ট না পায়।



সর্ব সাধারণের হক অনুধাবন করার কাহিনী



সর্ব সাধারণের হকের  কথা খেয়াল  রাখা  খুবই  জরুরী। আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গগণ এ ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন  করতেন।  যেমন-   হুজ্জাতুল   ইসলাম  হযরত  সায়্যিদুনা ইমাম  মুহাম্মদ গাযালী رَحْمَۃُ اللّٰہِ  تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন:   হযরত    সায়্যিদুনা  ইমাম   আহমদ   বিন   হাম্বল رَحْمَۃُ اللّٰہِ   تَعَالٰی عَلَیْہِ এর খিদমতে এক   ব্যক্তি কয়েক বছর যাবৎ উপস্থিত হয়ে ইল্ম অর্জন করছিল। একদিন যখন    সে  ইমাম  আহমদ  বিন  হাম্বল  رَحْمَۃُ   اللّٰہِ    تَعَالٰی  عَلَیْہِএর    দরবারে আসল, তখন  তিনি رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی   عَلَیْہِ তার  নিকট থেকে  মুখ    ফিরিয়ে নিলেন। সে  বার  বার   মুখ   ফিরিয়ে   নেয়ার   কারণ   জিজ্ঞাসা  করার    পর তিনি   رَحْمَۃُ    اللّٰہِ   تَعَالٰی   عَلَیْہِ    বললেন:   তুমি   তোমার  ঘরের রাস্তার পার্শ্বস্থ দেয়ালে চোড়া লাগিয়ে দেয়ালকে রাস্তার   দিকে   এক   কদম   পরিমাণ   বাড়িয়ে   দিয়েছ।  অথচ    এটা    মানুষেরই   চলাচলের   পথ।   অর্থাৎ   আমি তোমার  উপর   কিভাবে   সন্তুষ্ট  থাকতে  পারি  যে,   তুমি মানুষের    চলাচলের        পথকে    সংকীর্ণ    করে    দিয়েছ? (ইয়াহইয়াউল    উলুম,   ৫ম  খন্ড,   ৯৬  পৃষ্ঠা)    এ  ঘটনা থেকে ঐ সকল ব্যক্তিরও শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ, যারা নিজ   ঘরের   বাইরে   বৈঠকখানা   ইত্যাদি   নির্মাণ   করে  মুসলমানদের চলাচলের পথকে সংকীর্ণ করে দেয়।



صَلُّوْا  عَلَی  الْحَبِیْب!              صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی  مُحَمَّد



তাড়াতাড়ি কাযা আদায় করে নিন



যার      যিম্মায়   কাযা   নামায   রয়ে গেছে  তার   অতি দ্রুত   কাযা   আদায়   করে   নেয়া   ওয়াজীব।   কিন্তু   শিশু  সন্তানের  লালন পালন কিংবা নিজের অতি  প্রয়োজনীয় কারণে  বিলম্ব  করা   জায়েয   রয়েছে।  তাই  প্রয়োজনীয় কাজকর্মও  করুন আর   অবসর সময় পাওয়া মাত্র কাযা নামাযগুলো  আদায়  করতে  থাকবেন।  যাতে  আপনার  কাযা  নামায  পূর্ণ হয়ে যায়। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৬৪৬ পৃষ্ঠা)



কাযা নামায গোপনে আদায় করুন



কাযা নামায   সমূহ  গোপনে আদায় করুন  মানুষ কিংবা পরিবারবর্গ    এমনকি  ঘনিষ্ট  বন্ধুর  নিকটও  তা   প্রকাশ করবেন না। (যেমন-তাদেরকে এ কথা বলবেন না যে, আজ  আমার ফযরের নামায কাযা হয়েছে অথবা  আমি ‘কাযায়ে     ওমরী’আদায়      করছি     ইত্যাদি।)       কেননা,  গুনাহের   কথা    প্রকাশ   করাও    মাকরূহে   তাহরীমী    ও গুনাহের কাজ। (রদ্দুল   মুহতার,  ২য়  খন্ড, ৬৫০  পৃষ্ঠা) তাই   মানুষের   সামনে   বিতরের   নামায   কাযা   আদায়  করলে কুনুতের তাকবীরের জন্য হাত উঠাবেন না।



‘জুমাতুল বিদা’য় কাযায়ে ওমরী



রমযানুল মুবারকের শেষ জুমাতে কিছু লোক জামাআত সহকারে  কাযায়ে  ওমরীর  নামায   আদায়   করে   থাকে এবং এই ধারণা  পোষণ করে থাকে যে, সারা জীবনের কাযা  নামায  এই  এক  নামাযের  মাধ্যমে  আদায়  হয়ে  গেলো। এটা ভুল ধারণা।  (বাহারে শরীয়াত,  ১ম খন্ড, ৭০৮ পৃষ্ঠা)



সারা জীবনের কাযা নামাযের হিসাব



যে ব্যক্তি  জীবনে কখনো নামায আদায় করেনি। এখন তাওফীক  হয়েছে  সে     ‘কাযায়ে  ওমরী’    পড়ে  দেয়ার ইচ্ছা করছে।  তাহলে   সে বালিগ    হওয়ার সময়  থেকে নামায  হিসাব   করে  নিবে।  আর   যদি   বালিগ    হওয়ার দিন,     তারিখ    জানা     না     থাকে,    তাহলে    সাধারণতঃ মহিলারা  যেহেতু  ০৯  বছরে  আর  পুরুষেরা  ১২  বছরে  বালিগ  হয়,  সেহেতু  ঐ  সময়  হতে  হিসাব  করে  কাযা  নামায আদায় করবে।



কাযা নামাযে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা



কাযায়ে ওমরী আদায় করার সময় এই নিয়মও  পালন  করা যায় যে, প্রথমে ফযরের সকল নামায আদায় করে নিবে।  অতঃপর    যোহরের  সকল  নামায  আদায়   করে নিবে,  অতঃপর  আছরের, তারপর মাগরিবের, তারপর ইশার নামায আদায় করে নিবে।



কাযায়ে ওমরী আদায় করার নিয়ম (হানাফী)



প্রত্যেক দিনের কাযা হয় মাত্র ২০ রাকাত। ফজরের ২ রাকাত,   জোহরের    ৪    রাকাত,    আছরের    ৪   রাকাত, মাগরিবের   ৩  রাকাত, ইশার ৪ রাকাত  এবং  বিতরের ৩   রাকাত   মিলে   মোট    ২০    রাকাত।   আর   এভাবেই নিয়্যত করবে যে; “সর্বপ্রথম ফযরের যে নামায আমার উপর   কাযা   রয়েছে   তা    আমি   আদায়   করে   দিচ্ছি।”  প্রত্যেক   নামাযে  এভাবেই   নিয়্যত   করবে।   আর  যার  যিম্মায়  অধিক  নামায  কাযা  রয়েছে  সে  সহজের  জন্য  এভাবে   পড়লেও   জায়েয  হবে   যে,   প্রত্যেক   রুকু   ও সিজদাতে   ৩+৩  বার   سُبْحٰنَ رَبِّىَ  الْعَظِيْم, سُبْحٰنَ  رَبِّىَ  الْاَ  عْلٰى   পড়ার   পরিবর্তে   মাত্র  ১+১   বার    পড়বে।  কিন্তু সর্বদা   এবং   সব   ধরণের   নামাযে   এটা   খেয়াল   রাখা  বাঞ্চনীয়    যে,     রুকুতে     পরিপূর্ণভাবে     পৌঁছার    পরেই “سُبْحٰنَ”এর সীন   শুরু   করবে (এর   আগে  নয়।) এবং “عَظِيْم” শব্দের  মীম পড়া শেষ করেই রুকু থেকে মাথা উঠাবে।   এরূপ  সিজদাতেও   করতে  হবে।    সহজতার  এক  পদ্ধতিতো এটা হলো।  আর “দ্বিতীয়  পদ্ধতি” এই  যে,   ফরয  নামায   সমূহের   তৃতীয়  ও  চতুর্থ   রাকাতের  মধ্যে       اَلْحَمْدُ      পড়ার      পরিবর্তে      শুধুমাত্র       ৩      বার সুবহানাল্লাহ   পড়ে  রুকুতে  চলে  যাবে।   কিন্তু  বিতরের প্রত্যেক  রাকাতেই  اَلْحَمْدُ   এবং  সুরা  অবশ্যই   পড়তে হবে।   আর     “তৃতীয়  সহজতর  পদ্ধতি”  এই  যে,   শেষ  বৈঠকে  তাশাহুদ  অর্থাৎ  আত্তাহিয়্যাত  এর  পরে  উভয়  দরূদ শরীফ এবং দোয়ায়ে মাছুরার পরিবর্তে শুধু اَللّٰہُمَّ صَلِّ  عَلٰی  مُحَمَّدٍ  وَّاٰلِهٖ  পড়ে   সালাম  ফিরিয়ে  নিবে।   আর “চতুর্থ সহজতর পদ্ধতি হলো, বিতরের ৩য়   রাকাতের মধ্যে দোয়ায়ে  কুনুত এর  পরিবর্তে “اَللهُ  اَکْبَرُ”  বলে  মাত্র একবার  কিংবা তিনবার رَبِّ  اغْفِرْ لِىْ পড়ে  নিবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া হতে  সংগৃহীত, ৮ম খন্ড,  ১৫৭ পৃষ্ঠা)



মনে রাখবেন!   সহজতার এই পদ্ধতির অভ্যাস কখনো বানাবেন     না।     সামগ্রিক    নামায    সুন্নাত     মোতাবেক  আদায়   করবেন  এবং   তাতে  ফরয,  ওয়াজীব  সমূহের সাথে   সাথে     সুন্নাত   ও     মুস্তাহাব   সমূহের    ও   খেয়াল রাখবেন।







কসর নামাযের কাযা



যদি   সফর  অবস্থায়    কাযাকৃত    নামায  ইকামত   (স্থায়ী বসবাসকালীন)   অবস্থায়   পড়ে   দেয়ার    ইচ্ছা    করেন  তাহলে  কসরই  পড়তে  হবে।   আর   ইকামত  অবস্থায় কাযাকৃত    নামায   সফরকালীন   সময়ে   আদায়    করলে সম্পূর্ণ  নামাযই পড়তে হবে। কসর   পড়া  যাবে   না।  (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২১ পৃষ্ঠা)



ধর্মদ্রোহীতা কালীন নামায



যে    ব্যক্তি    (আল্লাহর    পানাহ)    ধর্মদ্রোহী     হয়ে    গেছে  অতঃপর পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তার উপর ধর্মদ্রোহীতা   কালীন  নামায   সমূহ   কাযা    আদায়  করা  আবশ্যক নয়। তবে মুরতাদ হওয়ার পূর্বে ইসলাম ধর্মে থাকাকালীন  সময়ে  যে   নামাযগুলো   সে  পড়েনি,  তা   (ওয়াজীব)   অবশ্যই    তাকে   কাযা  আদায়   করে  দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৬৪৭ পৃষ্ঠা)



সন্তান প্রসবকালীন সময়ের নামায



ধাত্রী   নামায   আদায়   করতে   গেলে   যদি   সন্তান   মারা  যাওয়ার    আশঙ্কা    থাকে,    তাহলে    ধাত্রীর      জন্য      সে  ওয়াক্তের   নামায   কাযা  করা   জায়িজ  হবে  এবং    এটা তার জন্য নামায  কাযা করার একটি গ্রহণযোগ্য কারণ হিসাবে   বিবেচ্য  হবে।   সন্তানের   মাথা  বেরিয়ে   আসল কিন্তু      নিফাসের     পূর্বেই    নামাযের      সময়    শেষ    হয়ে যাওয়ার   আশঙ্কা   হলে        সন্তানের   মাতার     উপর    সে  ওয়াক্তের   নামায  আদায়  করা   ফরয  হবে।  নামায   না পড়লে  গুনাহগার  হবে।  এমতাবস্থায় সে  কোন  পাত্রে  সন্তানের  মাথা   রেখে  যাতে  তার  ক্ষতি    না  হয়   নামায আদায়    করে  নিবে।   আর    যদি   এ  পদ্ধতিতেও  সন্তান মারা  যাওয়ার আশঙ্কা  থাকে, তাহলে তার জন্য নামায দেরী    করে   আদায়   ক্ষমাযোগ্য   হবে।   নিফাস     থেকে পবিত্র হয়ে সে উক্ত নামায কাযা পড়ে দিবে। (প্রাগুক্ত, ৬২৭ পৃষ্ঠা)



অসুস্থ ব্যক্তির জন্য নামায কখন ক্ষমাযোগ্য



এমন অসুস্থ  ব্যক্তি যে    ইশারায়  নামায আদায়   করতে পারছে  না। তার এ অবস্থা  যদি    একাধারে ছয়  ওয়াক্ত নামাযের    সময়      পর্যন্ত    থাকে,    তাহলে    এমন    অসুস্থ অবস্থায়  তার  যে  সব   নামায   ছুটে  গিয়েছে  তার  কাযা ওয়াজীব   হবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২১  পৃষ্ঠা)  



সারা জীবনের নামায পূনরায় আদায় করা



যার  আদায়কৃত  নামাযে  ঘাটতি,  অপূর্ণতা    থাকে  বলে ধারণা  হয়  সে  যদি  সারা    জীবনের   নামাযকে  পূনরায় আদায়   করে নেয়, তাহলে ভাল  কথা। আর যদি কোন  রকমের       অপূর্ণতা     না    থাকে     তাহলে    এমন     করার প্রয়োজন  নেই।  আর    যদি  ঐ  নামায   পূনরায়    আদায় করে দিতে চায়, তাহলে ফযর ও আছরের পরে পড়বে না।  আর সকল   রাকাতগুলোতে (সূরা ফাতিহা’র সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়বে)   আদায়  করবে এবং বিতর নামাযে  দোয়ায়ে   কুনুত  পড়ে  তৃতীয়  রাকাতের   পরে কা’দা   করে   (বৈঠকে   বসে)   এর   সাথে   আরো   অপর  একটি রাকাত মিলিয়ে চার রাকাত পরিপূর্ণ করে নামায শেষ  করবে  (আর  নামায  কবুল  হয়ে  থাকলে  যেন  এ  নামায নফল নামায হিসেবে গণ্য হয়। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১২৪ পৃষ্ঠা)



কাযা      শব্দ    উচ্চারণ    করতে      ভুলে    যায়     তখন      কি করবে?



আ’লা   হযরত   ইমামে  আহলে     সুন্নাত,  মাওলানা  শাহ আহমদ    রযা     খাঁন    رَحْمَۃُ     اللّٰہِ    تَعَالٰی     عَلَیْہِ      বলেন: আমাদের   মাযহাবের   ওলামায়ে    কিরাম     স্পষ্ট    বর্ণনা করেছেন: ‘কাযা’ নামায  ‘আদা’ নামাযের নিয়্যত দ্বারা,  অনুরূপ  ‘আদা’   নামায  ‘কাযা’  নামাযের    নিয়্যত   দ্বারা  আদায়       করলে      উভয়ই       সহীহ      ও        বিশুদ্ধ      হবে। (ফতোওয়ায়ে  রযবীয়া   (সংশোধিত) ,  ৮ম খন্ড,  ১৬১ পৃষ্ঠা)



কাযা  নামায  (আদায় করা)  নফল  নামায আদায়   করা থেকে উত্তম



ফতোওয়ায়ে শামীতে বর্ণিত আছে: কাযা নামায আদায় করা    নফল   নামায   আদায়    করা    থেকে    উত্তম    এবং গুরুত্বপূর্ণ    কিন্তু    সুন্নাতে   মুয়াক্কাদা,    চাশতের     নামায, সালাতুত তাসবীহ এবং  ঐ  নামায  যেগুলোর ব্যাপারে   হাদীসে  মোবারকায় বর্ণিত আছে।যেমন- তাহাইয়াতুল  মসজিদ,    আসরের  প্রথম  চার   রাকাত  (সুন্নাতে  গাইর মুয়াক্কাদা)  এবং    মাগরিবের   পরে   ছয়  রাকাত  আদায় করতে  হবে।  (রদ্দুল  মুহতার,    ২য়  খন্ড,   ৬৪৬  পৃষ্ঠা)  মনে  রাখবেন!   অবশ্য   সুন্নাতে   গাইর   মুয়াক্কাদা  এবং  হাদীস সমূহের মধ্যে বর্ণিত নির্দিষ্ট নফল সমূহ পড়লে, সাওয়াবের হকদার  হবে কিন্তু ঐ সব নামায না পড়ার কারণে   কোন   গুনাহ   নেই।    চাই   তার   দায়িত্বে    কাযা নামায থাকুক বা না থাকুক।





Top