আট রাকাত তারাবীহ বিষয়ে উপস্হাপিত হাদীসটির বিভ্রান্তির অবসান:-



লেখক:-হাসনাইন আহমদ আলকাদেরী।



প্রথমে দেখি হাদীসটির মধ্যে কি বলা হয়েছে?



হযরত আবি সালামাহ ইবনে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ কে জিগ্যেস করেছেন-

كيفَ كانتْ صلاةُ رسولِ اللّٰهِ صلى اللّٰه عليه وسلم في رمضان؟فقالتْ ما كانَ رسولُ اللّٰهِ صلى اللّٰه عليه وسلم يزيدُ فى رمضانَ ولا فى غيرهِ إحدى عشرةَ ركعةً

রমজানে নবিজীর নামাজ কেমন ছিলো?

তিনি বলেন রমজান এবং রমজান এবং রমজান ছাডা নবিজী এগারো রাকাআতের বেশী পডতেননা।



সহীহ বুখারী-কিতাবুত তারাবীহ,হাদীস নং ১৯০৯;

সহীহ বুখারী-কিতাবুত তাহাজ্জুদ, باب قيام النبي بالليل فى رمضان وغيره, ১/৩৮৫,হাদীস নং ১০৯২;



ভ্রান্তির অবসান:-



১.হাদীসটিতে বলা হয়েছে “রমজান এবং রমজান ছাডা নবিজী এগারো রাকাতের বেশী পডতেননা”।তাই চিন্তা করুন রমজান ছাডা তারাবীহ নামাজ অন্য মাসে পডা হয় কিনা!

জাওয়াব আসবে, নিশ্চয়ই না,কারন রমজান ছাডা তারাবীহ হয়না।তাহলে স্পষ্ট বুঝা যায় এটা তাহাজ্জুদ নামাজ ছিলো যা নবিজী অন্য মাসেও পডতেন।তাছাডা প্রশ্নকারী তারাবীহ এর কথা জিগ্যেসও করেনি। তিনি প্রশ্ন করেছেন শুধু রমজানের নামাজ কেমন ছিলো।



২.আট রাকাত তারাবীহ দাবীদারগন এই হাদীসটি পেশ করে থাকেন।কিন্তু এই হাদীসটা তাদেরও বিপক্ষে চলে যায়, কারন হাদীসটি তে আট রাকাত তারাবীহ ধরা হলে, বিতির হয়ে যায় তিন রাকাত, এ হিসেবে মোট এগারো রাকাত। কিন্তু তারাতো বিতির এক রাকাত পডে থাকে!

তাই তারা যদি হাদীসটি দ্ধারা তারাবীহ আট রাকাত পডে থাকে যদিও তার দলিল এই হাদীসে নেই, তাহলে তাদেরকে বিতির তিন রাকাত মেনেই নিতে হবে।কিন্তু চোর ধর্মের কথা শুনবেনা।



৩.তাদের অন্যতম যুক্তি হলো যদি এটা দ্ধারা তারাবীহ উদ্যেশ্য না হতো,তাহলে বুখারী শরীফে এটাকে তারাবীহ অধ্যায়ে আনা হয়েছে কেন?

তার জাওয়াব হলো-

বুখারী শরীফকে বলা হয় “জামে”, তাই এখানে অধ্যায়, পরিচ্ছেদ অনুযায়ী হাদীস আসা এটা শর্ত নয়।অন্যদিকে সুনান গ্রন্হ যেগুলো আছে সেখানে অধ্যায়, পরিচ্ছেদ অনুযায়ী অনেকাংশে হুকুম,আহকাম ইত্যাদি চলে আসে।কিন্তু জামে গ্রন্হ তার ব্যাতিক্রম, তাই ইমাম বুখারী কোন হাদীসের অধ্যায়ের সাথে শাব্দিক অথবা পারিভাষিক কোন কিছু হাদীসে মিল পেলে ঐ হাদীসটাকে ঐ অধ্যায় বা পরিচ্ছেদে নিয়ে আসতেন। যার কারনে একটা হাদীস অনেকবার রিপ্লাই করে বিভিন্ন অধ্যায়ে, পরিচ্ছেদে নিয়ে এসেছেন।এজন্য দেখা যায় একটা হাদীস বোখারীর বিভিন্ন জায়গায় বারবার দেখা যায়।

তারাবীহ যেমন রাতে পডা হয়, ঠিক তাহাজ্জুদ নামাজও রাতে পডা হয়,এইখানে রাতের অংশ মিল পাওয়া যাওয়ার কারনে তিনি এই হাদীসটিকে তারাবীহ অধ্যায়ে নিয়ে এসেছেন, যদিও তা তাহাজ্জুদের নামাজ।

তাছাডা সিহা সিত্তার হাদীসের বাকী ইমামগন কেউ এটাকে তারাবীহ সংক্রান্ত কোন অধ্যায়ে এই হাদীসটিকে আনেনি।

এমনকি ইমাম মুসলিমও রমজানের উপর অধ্যায় এনেছেন কিন্তু সেখানে তিনি এই হাদীসটিকে আনেনি।হয়ত তারা বলতে পারে ইমাম মুসলিমের কাছে হাদীসটি পৌছায়নি, অথচ ইমাম মুসলিমের কাছেও হাদীসটি ছিলো।তিনি হাদীসটি অন্য পরিচ্ছেদে এনেছেন তথা নফল ইবাদতে গন্য করেছেন।



ইমাম মুসলিম,মুসলিম শরীফে হাদীসটিকে যেখানে এনেছেন –

كتاب صلاة المسافرين وقصرها،باب فضل السنن الراتبة قبل الفرائض وبعدهن وبيان عددها

১/৫০৩ পৃঃ,হাদীস নং ৭২৮ ;

কিন্তু তিনি রমজানের অধ্যায়ে এই হাদীসটি আনেননি তার কারন হলো ইমাম মুসলিমও জানতে এটা তারাবীহ নয় এটা নফল/তাহাজ্জুদ।







৪.হাদীসের অন্যান্য ইমামগনও হাদীসটিকে তারাবীহ সংক্রান্ত কোন জায়গায় আনেনি।তারাও হাদীসটিকে নফল নামাজ/তাহাজ্জুদ হিসেবে পরিগনিত করেছেন।

যেমন -সুনান আবু দাউদ হাদীসটিকে যেখানে আনা হয়েছে –

كتاب الصلاة،باب التفريع ابواب التطوع وركعات

السنة

২/১৮,হাদীস নং ১২৫০;



সুনান নাসায়ী শরীফে হাদীসটি কিয়ামুল লাইল তথা নফল ইবাদতের এই পরিচ্ছেদে আনা হয়েছ-

كتاب قيام الليل وتطوع النهار،باب اختلاف علي إسماعيل بن أبي خالد

৩/২৬৪,হাদীস নং ১৮০৮;



এইভাবে কোন গ্রহনযোগ্য হাদীসের ইমাম হাদীসটিকে তারাবীহতে গন্য করেননি। সবাই হাদীসটিকে নফল ইবাদতে গন্য করেছেন।



৪.সর্বশেষ ইমাম বুখারীর ইজতেহাদ অনুযায়ীও এটা তাহাজ্জুদ নামাজ, কারন তিনি হাদীসটিকে “কিতাবুত তাহাজ্জুদ” باب قيام النبي بالليل في رمضان وغيره ১/৩৮৫ পৃষ্টার ১০৯২ নং হাদীসে এনেছেন।



ইমাম বুখারী হাদীসটিকে তারাবীহ অধ্যায়ে এনেছেন বলে যারা এটা দিয়ে তারাবীহ সাব্যস্ত করতে চায়,তাহলে ইমাম বুখারীতো এই হাদীসটিকে তাহাজ্জুদ অধ্যায়েও এনেছেন!তাই তাদের প্রশ্ন করুন অধ্যায়ের কারনে হাদীসটিকে তারাবীহ ধরা হলে তাহলে অধ্যায়ের কারনে এটাকে তাহাজ্জুদও ধরতে হবে।অথচ একি হাদীস একবার তাহাজ্জুদ আবার তারাবীহ ধরা এটা মুলত মুর্খের কাজই হবে।

কিন্তু হাদীসটিতে যেহেতু বলা হয়েছে রমজানের বাহিরে অন্য মাসেও নবিজী এই নামাজ পডতেন, তাই এটা দ্ধারা পরিস্কার হয়ে গেলো এটা তারাবীহ নয় বরং এটা তাহাজ্জুদ নামাজ ছিলো।কারন রমজান ছাডা অন্য মাসে তারাবীহ পডার কোন বিধান তাদের কাছেও নাই।

তাহলে প্রমান হয়ে গেলো আলোচ্য হাদীসটি তাহাজ্জুদের নামাজ ছিলো,তারাবীহ নয়।আর যদি তারা এরপরও বলে তারাবীহ আট রাকাত,তাহলে তাদেরকে প্রশ্ন করবেন হাদীসটির দ্ধারা যদি আট রাকাত তারাবীহ ধরা হয়, তাহলে হাদীসটিতে বিতিরতো তিন রাকাত পাওয়া যায় কিন্তু তোমরা এক রাকাত পডো কেন? এবং রমজান ছাডা অন্য মাসে তারাবীহ পডা হয় কিনা?

যার জাওয়াব তারা জীবনেও দিতে পারবেনা।



তারাবীহ বিশ রাকাতের প্রমান:-

عن ابنِ عبّاسٍ رضي اللّٰه عنه قال أنّ النبيَّ صلى اللّٰه عليه وسلم كان يصلي في رمضانَ عشرينَ ركعةً سوى الوترَ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম বিতির ছাডা রমজানে বিশ রাকাত তারাবীহ পডতেন।



সুত্র:- ইবনে আবি শায়বাহ-২/১৬৪, হাদীস নং ৭৬৯২;

তাবরানী-মুজামুল আওসাত ১/২৪৩,হাদীস নং ৭৯৮;

তাবরানী-মু’জামুল কাবীর, ১১/৩৯৩,হাদীস নং ১২১০২;

বায়হাকী-সুনানে কুবরা ২/৪৯২,হাদীস নং ৪৩৯১;

মাসনাদু ইবনে হুমাইদ-১/২১৮,হাদীস নং ৬৫৩;

হায়সামী-মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১৭২;

আসকালানী-ফাতহুল বারী ৪/২৫৩,হাদীস নং ১৯০৮;



শিক্ষনীয়:-প্রথম হাদীস থেকে বুঝা গেলো এটা তারাবীহ নয় এটা তাহাজ্জুদ।কারন রমজান ছাডা তারাবীহ হয়না কিন্তু নবিজী এই নামাজ অন্য মাসেও পডতেন। দ্ধিতীয় হাদীস দ্ধারা স্পষ্ট হয়ে যায় তারাবীহ বিশ রাকাত।

Top