প্রশ্ন:-হযরত,বর্তমানে আহলে হাদীস নামে একটি দল বের হয়েছে যারা বলে বেডায় মাজহাবের কোন প্রয়োজনীয়তা নাই এবং তারা আমার মত সাধারন মানুষের হাতে বাংলা বোখারী মুসলিমের হাদীসের কিতাব দিয়ে বলে আপনি এগুলো পডুন আর আমল করুন,তাই এখন আমি কি করতে পারি?
জাওয়াবদাতা:-
হাসনাইন আহমদ আলকাদেরী
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম বলেন
إذا حكم الحاكِمُ فاجتهدَ ثمَّ اصابَ،فله اجرانِ واذا حكَمَ فاجْتَهَدَ ثمَّ أخطأ فله أجرٌ
যখন কোন মুজতাহিদ মিমাংসাকালে ইজতিহাদ করে সহীহ রায় প্রদান করে তার জন্য রয়েছে দুটি প্রতিদান। আর যদি মিমাংসাকালে ইজতিহাদ করে ভুল সিদ্ধান্তও প্রদান করে,তারপরও তার জন্য রয়েছে একটি প্রতিদান।
দ্র:-যে ভুলের বিনিময়ে সাওয়াব পাওয়া যায় তাকে ভুল বলা যায়না। এখানে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে আমাদেরকে বুঝানোর জন্য, যাতে আমরা বিষয়টাকে অনুধাবন করতে পারি।
সুত্র:-বুখারী-কিতাবুল ই’তিসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ, বাবু আজরিল হাকিম ইযাজতাহাদা ফা আসাবা আও আখতাআ ৬:২৬৭৬, হাদীস নং ৬৯১৯;
মুসলিম:- কিতাবুল আকযিয়া,বাবু বয়ানি আজরিল হাকিম ইযাজতাহাদ ফা আসাবা আও আখতাআ ৩:১৩৪২,হাদীস নং ১৭১৬;
যা শিখলাম:-
১.আমাদের দেশে পুলিশ অন্যায়কে শেষ করতে আর ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার জন্য যদি কোন আসামী ধরতে গিয়ে গুলি করে, এমতাবস্হায় ভুল করে গুলিটা অন্য কারো গায়ে লেগে যায় তখন এর জন্য পুলিশকে শাস্তি পেতে হয়না কারন তার সরকারী লাইসেন্স রয়েছে।আর সে অন্যায়কে শেষ করার জন্য কোন লাইসেন্সহীন কোন মানুষ যদি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে কাওকে আঘাত করে তখন সে ব্যক্তি রাইট হলেও তাকে শাস্তি পেতে হবে,কারন তার এই বিষয়ে লাইসেন্স নেই।
ঠিক তেমনিভাবে মুজতাহিদদের বিষয়ে যে লাইসেন্স নবিজী দিয়েছেন যে, তারা ভুল করলেও সাওয়াব আছে কিন্তু অন্য কোন সাধারন আলেম ওলামার জন্য এই লাইসেন্স দেয়া হয়নি।তাই নিরাপদ হলো লাইসেন্সধারীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসলামের শাষন অনুশাষন মেনে চলা।
২.ফার্মেসীতে যারা ঔষধ বিক্রি করে তাদের কাছে গেলেও তারা বিভিন্ন রোগে ঔষধ দিতে পারে, যা কখনোই নিরাপদ নয় কারন একজন সত্যিকারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মত রোগ নির্ণয় করে সে ঔষধ দিতে পারবেনা।তবে যারা সচেতন ঔষধ বিক্রেতা তারা আপনাকে পরামর্শ দিবে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার জন্য আর ভুয়া হলে বলবে বিশেষজ্ঞেরা কি জানে বলে উল্টাপাল্টা ভুয়া কোম্পানীর ঔষধ দিয়ে কোম্পানীগুলোকে প্রসিদ্ধ করে তুলবে,যা দ্বারা পর্যায়ক্রমে সম্পুর্ন জাতী অসুস্হ হয়ে পডবে। তাই নিরাপদ হলো লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।
তেমনিভাবে শরীয়তে লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞ (মাজহাবের ইমামগন) এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলা আপনার জন্য যতটুকু নিরাপদ হবে, মুজতাহিদ (লাইসেন্সধারী) নয় এমন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসলামের বিধি নিষেধ পালন করা কখনোই নিরাপদ হবেনা কারন তার ভুলের জন্য কোন সাওয়াব নেই কিন্তু মুজতাহিদের জন্য একটা সাওয়াব হলেও আছে।
এজন্য এক সময় ইমাম আ’মাশ থেকে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিলো আর ঐ মাহফিলে ইমাম আবু হানিফা রহ: উপস্হিত ছিলেন।তখন তিনি ইমাম আবু হানিফার দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন আবু হানিফা রহ: সকল মাসয়ালার জাওয়াব দিলেন।ইমাম আ’মাশ তার থেকে দলিল তালাশ করলেন,তখন তিনি আ’মাশ রাঃ সুত্রে বর্ণিত হাদীস দিয়ে দলীল দিয়ে দিলেন।এরপর ইমাম আ’মাশ আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং ইমাম আবু হানিফার ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন-
انتم يا معْشرَ الفقهاءِ الأطْبياءُ ونحنُ الصّيادَلَةُ
হে ফুকাহা দল! আপনারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং আমরা (মুহাদ্দীসগন) ফার্মাসিষ্ট (ঔষধ বিক্রয়কারী) মাত্র।
সুত্র:-ইবনে হিব্বান-আস সিকাত ৮/৪৬৭,হাদীস ১৪৪৬৫;
সায়দাবাদী -মু’জামুশ শুয়ুখ ১/৮০;
সায়মুরী-আখবারু আবী হানিফা ওয়া আসহাবিহী,১৩পৃষ্টা;
ইবনে আদি-আল কামিল ৭/৭ পৃষ্টা।
এখন আপনারাই চিন্তা করুন লাইসেন্সধারী নিরাপদ ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলবেন নাকি অনিরাপদ লামাজহাবীদের কথা অনুযায়ী চলবেন!
এখন ভুয়া ফার্মাসিষ্টরা প্রশ্ন করতে পারে মাজহাব চারটা যদি হক হয় তাহলে এখন আমরা কোন ইমামের সিদ্ধান্ত মানবো!
জাওয়াব হলো-
১.আমরা অসুস্হ হলে যেকোন একজন লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞের কাছে যাই এবং ওনার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলি কিন্তু ওনার ঔষধ সেবন করা অবস্হায় যেমন অন্য কোন লাইসেন্সধারীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে একি সময় ঔষধ সেবন করা যায়না,যদিও বিশেষজ্ঞ লাইসেন্সধারী হয়। তেমনিভাবে এক মাজহাব অনুসরন করা অবস্হায় অন্য মাজহাবও একি সময় অনুসরন করা যায়না।
২.যদি একজনের ঔষধ সেবন করার পর যদি আপনার মনে হয় যে ঔষধগুলো আপনার সেবনে কষ্টকর মনে হচ্ছে,তাহলে আপনি ঐ বিশেষজ্ঞের প্রেসক্রিপশন ও ঔষধ বাদ দিয়ে আপনি অন্য লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ গ্রহন করতে পারেন অর্থাৎ আপনার জন্য যে বিশেষজ্ঞের ঔষধ সেবন সহজ হয় আপনি সেটা গ্রহন করুন।
ঠিক এমনিভাবে যেহেতু একি সময় সমস্হ লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞের ঔষধ একি সময় সেবন করা যায়না একই ভাবে চারমাজহাবকে একসাথে অনুসরন করা যায়না,যদিও চার মাজহাব হকের উপর রয়েছে।প্রয়োজনে শরীয়তের বিধি নিষেধ পালনে আপনার সুবিধা মত চার মাজহাবের যেকোন একটিতে মাজহাব পরিবর্তন করতে পারবেন অর্থাৎ চারটা (লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান) মাজহাবকে হক জেনে যেকোন একটি মাজহাবে (প্রতিষ্ঠানে) ভর্তি হতে হবে ।অন্যথায় ভুয়া MLM কোম্পানীর ফাঁদে পডে আপনার সর্বস্ব (ঈমান ও আমল) খোয়াতে হবে এবং আপনার মাধ্যমে আপনার পরিচিতদেরকেও শেষ করে ছাডবে।মনে রাখবেন এই ভুয়া কোম্পানীর এড খুব তাডাতাডি আপনাকে আকর্ষন করবে কিন্তু কখন যে আপনাকে স্বর্বহারা করে দিবে আপনি নিজেও টের পাবেননা।
৩.এরপর আরেকটি বিষয় হলো যদি কোন
ক্যান্সার অপারেশন রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা দেখে কেউ যদি বলে কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার দরকার নাই আমি তোমাকে ক্যান্সার চিকিৎসার এই বইটি দিলাম এটা পডে তুমি তোমার চিকিৎসা করাও এটাতে সব দেয়া আছে এবং সে যদি এটা মেনে নিয়ে নিজের অপারেশন নিজে করতে যায় এটা তার জন্য মরনঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
ঠিক তেমনিভাবে একজন সাধারনের কাছে বোখারী মুসলিম ইত্যাদি তুলে দিয়ে তদানুযায়ী আমল করার কথা বলা এটা ঈমানঘাতী পরামর্শ কারন সাধারন মানুষ বাংলা পডতে পারবে সত্য কিন্তু কোরআন হাদীসের মুল এমন অনেক বিষয় বা রহস্য জানেনা যা মুজতাহীদ মাজহাবের ইমামগন জানেন।এজন্য নিরাপদ হলো চার মজহাবের যেকোন একটি ফলো করা।
এখন তারা জাওয়াব পাওয়ার পরও বলবে নবিজীর কোন সাহাবী কি এমন ইজতিহাদী পন্হার অনুসরন করেছেন!
আমাদের জাওয়াব হাঁ করেছেন-
হযরত মুআয ইবনে জাবাল রাঃ কে যখন ইয়ামেনের শাষনকর্তা হিসেবে প্রেরন করা হচ্ছিলো তখন ওনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো হে মুআয মাসআলা বা মুকাদ্দামাগুলো কিভাবে সমাধান করবে?
তিনি বলেন আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী।
নবিজী বললেন যদি তাতে না পাও ?
সাহাবী বললেন সুন্নাহ অনুযায়ী।
নবিজী বললেন যদি দুটোতেই না পাও?
তখন তিনি বললেন-اَجْتَهِدُ رأيِي ولا آلو অর্থাৎ আমি আমার মতামতের ভিত্তিতে ইজতেহাদ করবো আর বাস্তব মিমাংসায় পৌছাতে কোন প্রকার কার্পন্য করবোনা।
এই জাওয়াব শুনে নবিজী হযরত মুআয রাঃ এর বক্ষে মৃদু চাপড মেরে বললেন-
الحمد لله الَّذي وفَّقَ رسولَ رسولِ اللّٰه لِما يُرْضِي رسولَ اللّٰه
প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার, যিনি আল্লাহর রাসুকের দুতকে এমন তৌফিক দান করেছেন,যা আল্লাহর রাসুলকে সন্তুষ্ট করে।
সুত্র:-আবু দাউদ-কিতাবুল আকযিয়া,বাবু ইজতিহাদী রায় ফিল কাযা ৩:২৯৫, হাদীস নং ৩৫৯২;
আফসোস! নবিজী যে ইজতিহাদী বিষয়ের রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন আজ নবিজীর উম্মত দাবী করে সেই ইজতিহাদী বিষয়কে অস্বীকার করতে গিয়ে মাজহাবের ইমামদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে মুসলিম মিল্লাতকে ধ্বংস করা অপচেষ্টা চালাচ্ছে এক শ্রেণীর নামদারী মুসলমানেরা।
পরিশেষ হলো:-চার মাজহাবের ইমামগন হলো মুজতাহিদ আর মুজতাহিদরা হলেন নবিজী কতৃক লাইসেন্সধারী শরীয়তের ভিবিন্ন বিষয়ে সমাধানকারী, তাই তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া নিরাপদ।এজন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন-يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ অর্থাৎ আমি (আল্লাহ) হাশরের ময়দানে প্রত্যেক মানুষকে তাদের ইমামের নামে ডাক দিবো।এজন্য আমরা আল্লাহ তাআলার ভাষায় বলবো-
فمَن شاء فليؤمن ومن شاءَ فليَكفُر
অতঃপর যার ইচ্ছা ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করুক (কাহাফ ২৯)।
জাওয়াবদাতা:-
হাসনাইন আহমদ আলকাদেরী
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম বলেন
إذا حكم الحاكِمُ فاجتهدَ ثمَّ اصابَ،فله اجرانِ واذا حكَمَ فاجْتَهَدَ ثمَّ أخطأ فله أجرٌ
যখন কোন মুজতাহিদ মিমাংসাকালে ইজতিহাদ করে সহীহ রায় প্রদান করে তার জন্য রয়েছে দুটি প্রতিদান। আর যদি মিমাংসাকালে ইজতিহাদ করে ভুল সিদ্ধান্তও প্রদান করে,তারপরও তার জন্য রয়েছে একটি প্রতিদান।
দ্র:-যে ভুলের বিনিময়ে সাওয়াব পাওয়া যায় তাকে ভুল বলা যায়না। এখানে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে আমাদেরকে বুঝানোর জন্য, যাতে আমরা বিষয়টাকে অনুধাবন করতে পারি।
সুত্র:-বুখারী-কিতাবুল ই’তিসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ, বাবু আজরিল হাকিম ইযাজতাহাদা ফা আসাবা আও আখতাআ ৬:২৬৭৬, হাদীস নং ৬৯১৯;
মুসলিম:- কিতাবুল আকযিয়া,বাবু বয়ানি আজরিল হাকিম ইযাজতাহাদ ফা আসাবা আও আখতাআ ৩:১৩৪২,হাদীস নং ১৭১৬;
যা শিখলাম:-
১.আমাদের দেশে পুলিশ অন্যায়কে শেষ করতে আর ন্যায়কে প্রতিষ্ঠার জন্য যদি কোন আসামী ধরতে গিয়ে গুলি করে, এমতাবস্হায় ভুল করে গুলিটা অন্য কারো গায়ে লেগে যায় তখন এর জন্য পুলিশকে শাস্তি পেতে হয়না কারন তার সরকারী লাইসেন্স রয়েছে।আর সে অন্যায়কে শেষ করার জন্য কোন লাইসেন্সহীন কোন মানুষ যদি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে কাওকে আঘাত করে তখন সে ব্যক্তি রাইট হলেও তাকে শাস্তি পেতে হবে,কারন তার এই বিষয়ে লাইসেন্স নেই।
ঠিক তেমনিভাবে মুজতাহিদদের বিষয়ে যে লাইসেন্স নবিজী দিয়েছেন যে, তারা ভুল করলেও সাওয়াব আছে কিন্তু অন্য কোন সাধারন আলেম ওলামার জন্য এই লাইসেন্স দেয়া হয়নি।তাই নিরাপদ হলো লাইসেন্সধারীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসলামের শাষন অনুশাষন মেনে চলা।
২.ফার্মেসীতে যারা ঔষধ বিক্রি করে তাদের কাছে গেলেও তারা বিভিন্ন রোগে ঔষধ দিতে পারে, যা কখনোই নিরাপদ নয় কারন একজন সত্যিকারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মত রোগ নির্ণয় করে সে ঔষধ দিতে পারবেনা।তবে যারা সচেতন ঔষধ বিক্রেতা তারা আপনাকে পরামর্শ দিবে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার জন্য আর ভুয়া হলে বলবে বিশেষজ্ঞেরা কি জানে বলে উল্টাপাল্টা ভুয়া কোম্পানীর ঔষধ দিয়ে কোম্পানীগুলোকে প্রসিদ্ধ করে তুলবে,যা দ্বারা পর্যায়ক্রমে সম্পুর্ন জাতী অসুস্হ হয়ে পডবে। তাই নিরাপদ হলো লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।
তেমনিভাবে শরীয়তে লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞ (মাজহাবের ইমামগন) এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলা আপনার জন্য যতটুকু নিরাপদ হবে, মুজতাহিদ (লাইসেন্সধারী) নয় এমন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইসলামের বিধি নিষেধ পালন করা কখনোই নিরাপদ হবেনা কারন তার ভুলের জন্য কোন সাওয়াব নেই কিন্তু মুজতাহিদের জন্য একটা সাওয়াব হলেও আছে।
এজন্য এক সময় ইমাম আ’মাশ থেকে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিলো আর ঐ মাহফিলে ইমাম আবু হানিফা রহ: উপস্হিত ছিলেন।তখন তিনি ইমাম আবু হানিফার দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন আবু হানিফা রহ: সকল মাসয়ালার জাওয়াব দিলেন।ইমাম আ’মাশ তার থেকে দলিল তালাশ করলেন,তখন তিনি আ’মাশ রাঃ সুত্রে বর্ণিত হাদীস দিয়ে দলীল দিয়ে দিলেন।এরপর ইমাম আ’মাশ আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং ইমাম আবু হানিফার ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন-
انتم يا معْشرَ الفقهاءِ الأطْبياءُ ونحنُ الصّيادَلَةُ
হে ফুকাহা দল! আপনারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং আমরা (মুহাদ্দীসগন) ফার্মাসিষ্ট (ঔষধ বিক্রয়কারী) মাত্র।
সুত্র:-ইবনে হিব্বান-আস সিকাত ৮/৪৬৭,হাদীস ১৪৪৬৫;
সায়দাবাদী -মু’জামুশ শুয়ুখ ১/৮০;
সায়মুরী-আখবারু আবী হানিফা ওয়া আসহাবিহী,১৩পৃষ্টা;
ইবনে আদি-আল কামিল ৭/৭ পৃষ্টা।
এখন আপনারাই চিন্তা করুন লাইসেন্সধারী নিরাপদ ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলবেন নাকি অনিরাপদ লামাজহাবীদের কথা অনুযায়ী চলবেন!
এখন ভুয়া ফার্মাসিষ্টরা প্রশ্ন করতে পারে মাজহাব চারটা যদি হক হয় তাহলে এখন আমরা কোন ইমামের সিদ্ধান্ত মানবো!
জাওয়াব হলো-
১.আমরা অসুস্হ হলে যেকোন একজন লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞের কাছে যাই এবং ওনার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলি কিন্তু ওনার ঔষধ সেবন করা অবস্হায় যেমন অন্য কোন লাইসেন্সধারীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে একি সময় ঔষধ সেবন করা যায়না,যদিও বিশেষজ্ঞ লাইসেন্সধারী হয়। তেমনিভাবে এক মাজহাব অনুসরন করা অবস্হায় অন্য মাজহাবও একি সময় অনুসরন করা যায়না।
২.যদি একজনের ঔষধ সেবন করার পর যদি আপনার মনে হয় যে ঔষধগুলো আপনার সেবনে কষ্টকর মনে হচ্ছে,তাহলে আপনি ঐ বিশেষজ্ঞের প্রেসক্রিপশন ও ঔষধ বাদ দিয়ে আপনি অন্য লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ গ্রহন করতে পারেন অর্থাৎ আপনার জন্য যে বিশেষজ্ঞের ঔষধ সেবন সহজ হয় আপনি সেটা গ্রহন করুন।
ঠিক এমনিভাবে যেহেতু একি সময় সমস্হ লাইসেন্সধারী বিশেষজ্ঞের ঔষধ একি সময় সেবন করা যায়না একই ভাবে চারমাজহাবকে একসাথে অনুসরন করা যায়না,যদিও চার মাজহাব হকের উপর রয়েছে।প্রয়োজনে শরীয়তের বিধি নিষেধ পালনে আপনার সুবিধা মত চার মাজহাবের যেকোন একটিতে মাজহাব পরিবর্তন করতে পারবেন অর্থাৎ চারটা (লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান) মাজহাবকে হক জেনে যেকোন একটি মাজহাবে (প্রতিষ্ঠানে) ভর্তি হতে হবে ।অন্যথায় ভুয়া MLM কোম্পানীর ফাঁদে পডে আপনার সর্বস্ব (ঈমান ও আমল) খোয়াতে হবে এবং আপনার মাধ্যমে আপনার পরিচিতদেরকেও শেষ করে ছাডবে।মনে রাখবেন এই ভুয়া কোম্পানীর এড খুব তাডাতাডি আপনাকে আকর্ষন করবে কিন্তু কখন যে আপনাকে স্বর্বহারা করে দিবে আপনি নিজেও টের পাবেননা।
৩.এরপর আরেকটি বিষয় হলো যদি কোন
ক্যান্সার অপারেশন রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা দেখে কেউ যদি বলে কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার দরকার নাই আমি তোমাকে ক্যান্সার চিকিৎসার এই বইটি দিলাম এটা পডে তুমি তোমার চিকিৎসা করাও এটাতে সব দেয়া আছে এবং সে যদি এটা মেনে নিয়ে নিজের অপারেশন নিজে করতে যায় এটা তার জন্য মরনঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
ঠিক তেমনিভাবে একজন সাধারনের কাছে বোখারী মুসলিম ইত্যাদি তুলে দিয়ে তদানুযায়ী আমল করার কথা বলা এটা ঈমানঘাতী পরামর্শ কারন সাধারন মানুষ বাংলা পডতে পারবে সত্য কিন্তু কোরআন হাদীসের মুল এমন অনেক বিষয় বা রহস্য জানেনা যা মুজতাহীদ মাজহাবের ইমামগন জানেন।এজন্য নিরাপদ হলো চার মজহাবের যেকোন একটি ফলো করা।
এখন তারা জাওয়াব পাওয়ার পরও বলবে নবিজীর কোন সাহাবী কি এমন ইজতিহাদী পন্হার অনুসরন করেছেন!
আমাদের জাওয়াব হাঁ করেছেন-
হযরত মুআয ইবনে জাবাল রাঃ কে যখন ইয়ামেনের শাষনকর্তা হিসেবে প্রেরন করা হচ্ছিলো তখন ওনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো হে মুআয মাসআলা বা মুকাদ্দামাগুলো কিভাবে সমাধান করবে?
তিনি বলেন আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী।
নবিজী বললেন যদি তাতে না পাও ?
সাহাবী বললেন সুন্নাহ অনুযায়ী।
নবিজী বললেন যদি দুটোতেই না পাও?
তখন তিনি বললেন-اَجْتَهِدُ رأيِي ولا آلو অর্থাৎ আমি আমার মতামতের ভিত্তিতে ইজতেহাদ করবো আর বাস্তব মিমাংসায় পৌছাতে কোন প্রকার কার্পন্য করবোনা।
এই জাওয়াব শুনে নবিজী হযরত মুআয রাঃ এর বক্ষে মৃদু চাপড মেরে বললেন-
الحمد لله الَّذي وفَّقَ رسولَ رسولِ اللّٰه لِما يُرْضِي رسولَ اللّٰه
প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার, যিনি আল্লাহর রাসুকের দুতকে এমন তৌফিক দান করেছেন,যা আল্লাহর রাসুলকে সন্তুষ্ট করে।
সুত্র:-আবু দাউদ-কিতাবুল আকযিয়া,বাবু ইজতিহাদী রায় ফিল কাযা ৩:২৯৫, হাদীস নং ৩৫৯২;
আফসোস! নবিজী যে ইজতিহাদী বিষয়ের রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন আজ নবিজীর উম্মত দাবী করে সেই ইজতিহাদী বিষয়কে অস্বীকার করতে গিয়ে মাজহাবের ইমামদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে মুসলিম মিল্লাতকে ধ্বংস করা অপচেষ্টা চালাচ্ছে এক শ্রেণীর নামদারী মুসলমানেরা।
পরিশেষ হলো:-চার মাজহাবের ইমামগন হলো মুজতাহিদ আর মুজতাহিদরা হলেন নবিজী কতৃক লাইসেন্সধারী শরীয়তের ভিবিন্ন বিষয়ে সমাধানকারী, তাই তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া নিরাপদ।এজন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন-يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ অর্থাৎ আমি (আল্লাহ) হাশরের ময়দানে প্রত্যেক মানুষকে তাদের ইমামের নামে ডাক দিবো।এজন্য আমরা আল্লাহ তাআলার ভাষায় বলবো-
فمَن شاء فليؤمن ومن شاءَ فليَكفُر
অতঃপর যার ইচ্ছা ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করুক (কাহাফ ২৯)।