জানাযার নামাযের পদ্ধতি

দরূদ শরীফের ফযীলত

নবীদের                সুলতান,                  রহমতে                আলামিয়ান, সরদারেদো-জাহান,   মাহবূবে   রহমান   صَلَّی   اللّٰہُ   تَعَالٰی   عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  ইরশাদ  করেছেন:“যে (ব্যক্তি)  আমার উপর একবার দরূদ শরীফ পাঠ  করে  আল্লাহ্  তাআলা তার জন্য এক  ক্বীরাত  সাওয়াব  লিখে দেন। আর এক ক্বীরাত  হচ্ছে   ওহুদ  পাহাড়   সমপরিমাণ।”  (মুসান্নফে আব্দুর রাজ্জাক, ১ম  খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৫৩)

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                صَلَّی اللهُ تَعَالٰی  عَلٰی  مُحَمَّد

আল্লাহর ওলীর জানাযায় অংশগ্রহণ করার বরকত

এক  ব্যক্তি হযরত সায়্যিদুনা  সারী সাকতী  رَحْمَۃُ     اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ  এর   জানাযার  নামাযে অংশগ্রহণ করলেন। রাতে  ঐ ব্যক্তির  স্বপ্নে হযরত সায়্যিদুনা সারী   সাকতী  رَحْمَۃُ اللّٰہِ  تَعَالٰی عَلَیْہِ এর  যিয়ারত  নসীব হলো। তখন তিনি  জিজ্ঞাসা  করলেন:مَافَعَلَ  اللهُ  بِكَ؟  অর্থাৎ-আল্লাহ্  তাআলা আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন?উত্তর দিলেন: আল্লাহ্ তাআলা আমাকে এবং আমার জানাযার নামাযে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ঐ   ব্যক্তি    আরয    করলো:   ইয়া   সায়্যিদী!    আমিওতো আপনার   জানাযায়   অংশগ্রহণ   করে   জানাযার   নামায  আদায় করেছিলাম।  তখন তিনি   رَحْمَۃُ اللّٰہِ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  একটি তালিকা বের করলেন কিন্তু এতে ঐ ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত  ছিলো  না,  যখন  গভীরভাবে  পর্যবেক্ষণ  করে  দেখলেন    তখন   দেখা    গেলো,     তার   নাম    তালিকার  পার্শ্বটিকাতে      ছিলো।      (তারিখে     দামেশক      লিইবনে আসাকির,  ২০তম খন্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা)  আল্লাহ্ তাআলার রহমত   তাঁর   উপর   বর্ষিত   হোক,   আর   তাঁর   সদকায়  আমাদের  বিনা হিসেবে ক্ষমা হোক।  اٰمِين   بِجا  هِ   النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم!

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                 صَلَّی  اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد


ভালবাসা পোষণকারীদেরও ক্ষমাপ্রাপ্তি

হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর ইন্তেকালের  পর  কাসিম  বিন  মুনাব্বিহرَحْمَۃُ  اللّٰہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ                স্বপ্নের        মধ্যে        তাঁকে        দেখে        জিজ্ঞাসা  করলেন:مَافَعَلَ       اللهُ       بِكَ؟       অর্থাৎ-আল্লাহ       তাআলা  আপনার     সাথে       কিরূপ    আচরণ     করেছেন?    উত্তরে বললেন: আল্লাহ তাআলা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং ইরশাদ করেছেন:  “হে  বিশর!   শুধু তোমাকে নয়  বরং    তোমার   জানাযাতে   অংশগ্রহণকারী    সবাইকেও  আমি ক্ষমা করে  দিয়েছি।”তখন আমি আরয করলাম: হে মালিক!  আমাকে  যারা ভালবাসে তাদেরকেও ক্ষমা করে    দাও।   তখন    আল্লাহ্   তাআলার     দয়ার   সাগরে   জোয়ার আসল  আর ইরশাদ করলেন:  কিয়ামত    পর্যন্ত যারা তোমাকে ভালবাসবে তাদের সবাইকে আমি ক্ষমা করে  দিলাম।  (তারিখে  দামেশক  লিইবনে  আসাকির,  ১০তম খন্ড, ২২৫ পৃষ্ঠা) আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর  বর্ষিত হোক, আর  তাঁর   সদকায়  আমাদের বিনা হিসেবে  ক্ষমা হোক।اٰمِين  بِجا  هِ النَّبِيِّ الْاَمين   صَلَّی اللہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

আ’মাল না    দেখে ইয়ে দেখা, হে  মেরে ওলীকে  দরকা গদা, খালিক নে  মুঝে য়ূ বখশ দিয়া, سُبْحٰنَ اللّٰہ  عَزَّوَجَلَّ ।

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ্র ওলীদের সাথে সম্পর্ক রাখা সৌভাগ্য লাভের মাধ্যম। তাদের প্রশংসা করা ও  জীবনী আলোচনা করা রহমত অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যম, তাঁদের     সংস্পর্শ     উভয়    জগতের    জন্য    বরকতময়,    তাঁদের     মাযারে     পাকের    যিয়ারত      করাটা     গুনাহের রোগের ঔষধ এবং তাঁদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করা আখিরাতে  মুক্তির   সনদ।اَلْحَمْدُ  لِلّٰہِ       عَزَّوَجَلَّ  আমরাও সমস্ত      আওলিয়ায়ে     কিরাম     رَحِمَہُمُ     اللہُ      تَعَالٰی      কে ভালবাসি এবং ওলীয়ে কামিল হযরত সায়্যিদুনা বিশর হাফী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর প্রতি  আমাদের অফুরন্ত ভালবাসা           রয়েছে।       হে       আল্লাহ্!       তাঁর       সদকায় আমাদেরকেও ক্ষমা করে দাও। اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

বিশরে হাফী ছে হামেতো পেয়ার হে اِنْ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ আপনা বেড়া পার হে।

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                صَلَّی  اللهُ تَعَالٰی  عَلٰی مُحَمَّد

কাফন চোর

এক  মহিলার   জানাযার  নামাযে  একজন   কাফন   চোর অংশগ্রহণ করলো এবং কবরস্থানে সবার সাথে গিয়ে ঐ মহিলার    কবরের   নিশানাও   জেনে    নিল।   যখন    রাত গভীর হলো তখন সে কাফন চুরি করার উদ্দেশ্যে কবর খনন  করলো। তৎক্ষণাৎ মরহুমা বলে  উঠল: سُبْحٰنَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ!   একজন  ক্ষমাপ্রাপ্ত   ব্যক্তি   আরেক   ক্ষমাপ্রাপ্তা মহিলার   কাফন   চুরি   করছে!   শুনো:   আল্লাহ্   তাআলা  আমাকেও  ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং  আমার  জানাযার নামাযে অংশগ্রহণকারী সবাইকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন আর তুমিও তাতে অংশগ্রহণ করেছিলে। এটা শুনে  সে তৎক্ষণাৎ   কবরে  মাটি  ঢেলে  দিল   এবং    সত্য  অন্তরে তাওবা  করে নিল। (শুয়াবুল ঈমান, ৭ম খন্ড,  ৮ পৃষ্ঠা, নং- ৯২৬১) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক, আর তাঁর সদকায়  আমাদের বিনা  হিসেবে ক্ষমা হোক। اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

صَلُّوْا  عَلَی الْحَبِیْب!               صَلَّی اللهُ تَعَالٰی  عَلٰی مُحَمَّد

জানাযায় অংশগ্রহণকারী সকলের ক্ষমা

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো!  নেক বান্দাদের     জানাযার      নামাযে    অংশগ্রহণ     করা    কত  সৌভাগ্যের  বিষয়! যখনই  সুযোগ হয় বরং  সময়   বের করে মুসলমানদের জানাযাতে  অংশগ্রহণ করা  উচিত। হতে পারে কোন নেক বান্দার জানাযায় অংশগ্রহণ করা আমাদের জন্য  ক্ষমার মাধ্যম হয়ে যাবে।  পরম  দয়ালু আল্লাহ্     তাআলার     রহমতের     উপর     আমাদের    জান কতাওবান, যখন  তিনি  কোন মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা  করে দেন   তখন     তার   জানাযাতে   অংশগ্রহণকারীদেরকেও ক্ষমা করে দেন। এ প্রসঙ্গে হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে   আব্বাস    رَضِیَ   اللہُ    تَعَالٰی    عَنۡہُمَا   থেকে   বর্ণিত আছে; সুলতানে মদীনা, হুযুর পুরনূরصَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم  ইরশাদ  করেছেন:  “মু’মিন  বান্দাকে  মৃত্যুর  পর সর্বপ্রথম পুরস্কার (প্রতিদান) এটাই দেয়া হবে  যে, তার  জানাযাতে    অংশগ্রহণকারী  সবাইকে    ক্ষমা  করে দেয়া হবে।” (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ৪র্থ খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ১৩)

♦♦কবরে প্রথম উপহার

মদীনার    সরদার,   দো-আলমের    মালিক   ও   মুখতার,  শাহানশাহে আবরার,  হুযুর  পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم  এর  দরবারে  কেউ   আরয  করলো:   মু’মিন   বান্দা    যখন   কবরে   প্রবেশ   করে,    তখন    তার    প্রথম উপহার  হিসাবে   কি দেয়া হয়?তখন ইরশাদ  করলেন: “তার  জানাযার  নামায  আদায়কারীদেরকে  ক্ষমা  করে  দেয়া হয়।” (শুয়াবুল ঈমান, ৭ম খন্ড, ৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯২৫৭)

জান্নাতী ব্যক্তির জানাযা

প্রিয়  আকা,  মাদানী   মুস্তফা    صَلَّی    اللّٰہُ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ وَسَلَّم   ইরশাদ  করেছেন:   “যখন   কোন  জান্নাতী  ব্যক্তি মৃত্যুবরণ      করে     তখন     আল্লাহ্     তাআলা      ঐ      সমস্ত লোকদেরকে শাস্তি দিতে  লজ্জাবোধ  করেন যারা   তার  জানাযা  নিয়ে  চলে,  যারা  জানাযার  পিছনে  চলে  এবং  যারা   তার   জানাযার  নামায   আদায়  করেছে।”    (আল  ফিরদাউস বিমা  সুরিল খিতাব,  ১ম খন্ড,  ২৮২   পৃষ্ঠা,  হাদীস নং- ১১০৮)

জানাযার সঙ্গে চলার সাওয়াব

হযরত সায়্যিদুনা দাঊদعَلٰی نَبِیِّنَاوَعَلَیْہِ الصَّلوٰۃُ وَالسَّلام আল্লাহ  তাআলার   মহান   দরবারে আরয করলেন: “হে  আল্লাহ্!   যে    ব্যক্তি   শুধু  তোমার  সন্তুষ্টি  অর্জনের   জন্য জানাযার    সঙ্গে    চলে     তার    প্রতিদান     কি?”     আল্লাহ  তাআলা ইরশাদ করেন: “যে দিন সে মৃত্যু বরণ করবে সে   দিন  ফিরিস্তাগণ    তার   জানাযার  সঙ্গে  চলবে  এবং আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” (শরহুস সুদূর, ৯৭ পৃষ্ঠা)

ওহুদ পাহাড় সমপরিমাণ সাওয়াব

হযরত  সায়্যিদুনা     আবু  হুরাইরা   رَضِیَ    اللہُ  تَعَالٰی   عَنۡہُ থেকে বর্ণিত; তাজেদারে মদীনা, হুযুর পুরনূর صَلَّی   اللّٰہُ تَعَالٰی   عَلَیْہِ    وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم   ইরশাদ   করেছেন:  “যে   ব্যক্তি  (ঈমানের      দাবীর     ভিত্তিতে        ও     সাওয়াব     অর্জনের  নিয়্যতে)  আপন  ঘর  থেকে  বের  হয়ে  জানাযার  সাথে  চলে,    জানাযার নামায আদায় করে এবং  দাফন পর্যন্ত  জানাযার  সঙ্গে  থাকে  তার  জন্য  দুই  ক্বীরাত  সাওয়াব  রয়েছে।যার           প্রত্যেক          ক্বীরাত          ওহুদ         পাহাড় সমপরিমাণ।  আর যে ব্যক্তি শুধু মাত্র জানাযার  নামায  আদায়     করে    ফিরে   আসে   তাহলে   সে   এক   ক্বীরাত  সাওয়াব  পাবে।”   (মুসলিম, ৪৭২  পৃষ্ঠা, হাদীস-৯৪৫)

জানাযার নামায শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম

হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী  رَضِیَ  اللہُ تَعَالٰی  عَنۡہُ বলেন;    আমাকে     সুলতানে     দো-আলম,    শাহে     বনী  আদম, রাসূলে মুহতাশাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ      করেছেন:       “কবর      যিয়ারত      করো      যাতে  আখিরাতের কথা স্মরণ হয়ে  যায়, মৃত  ব্যক্তির  গোসল দাও,   কেননা   ধ্বংসশীল   দেহ   (অর্থাৎ-মৃতের   শরীর)  স্পর্শ  করাটা  অনেক    বড়   নসীহত,  জানাযার   নামায  আদায়  করো যাতে  এটা  তোমাকে চিন্তিত  করে  দেয়,   কেননা চিন্তাগ্রস্থ   ব্যক্তি  আল্লাহ্ তাআলার   আশ্রয়ে  হয়ে থাকে  এবং নেক কাজ করতে প্রেরণা  যোগায়।” (আল  মুসতাদরাক  লিল হাকিম, ১ম খন্ড, ৭১১ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৪৩৫)
Top