আমাদের সমাজের অনেকেই “মানুষ মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা“ এই আয়াতকে ব্যবহার করে প্রচার করে থাকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির সৃষ্টি। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক!!
কুরআন শরীফ অনুসন্ধান করে এরকম ১৪ খানা আয়াত শরীফ পাওয়া গেছে, যে আয়াত শরীফগুলোতে বলা হয়েছে, মানুষ মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।” উক্ত আয়াত শরীফ সমূহের তাফসীরে শতশত তাফসীরের কিতাব অনুসন্ধান করে দেখা গেছে “মানুষ মাটির তৈরী” জাতীয় যত আয়াত শরীফ বর্নিত হয়েছে সবগুলোতেই শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। অথচ অনেকেই সেই আয়াতগুলার তাফসীরে বিররায় বা, মনগড়া তাফসীর করে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির মানুষ বলার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে ।
আর তাফসীর বিররায় বা মনগড়া তাফসীর করা যে কত ভয়ানক সেটা হাদীস শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে–
من قال في القران برأيه فليتبوء مقعده من النار
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের ব্যাখ্যায় মনগড়া কিছু বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজ ঠিকানা বানিয়ে নেয়।”
[তিরমীযি শরীফ-কিতাবুত তাফসীর-২য় খন্ড ১২৩ পৃষ্ঠা- ২৯৫১ নং হাদীস]
সূতরাং যারা মনগড়া তাফসীর করে তাদের স্থান কোথায় হবে তা নিজেরাই চিন্তা করে দেখুন।
ইনশাআল্লাহ, আমরা ধারাবাহিকভাবে আপনাদের সামনে উক্ত ১৪ খানা আয়াত শরীফ এবং এর তাফসীর ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করবো। যেখান থেকে দিবালোকের মত প্রমাণ হবে, মাটি দ্বারা সৃষ্টি মানুষ বলতে শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে অন্য কাউকে নয়।
আজকে দুটি আয়াত ও তার তাফসীর উল্লেখ করছিঃ
★১ নং আয়াত শরীফ :
فانا خلقناكم من تراب ثم من نطفة ثم من علقة ثم من مضغة مخلقة و غير مخلقة لنبين لكم
অর্থ: (হে লোক সকল! তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দীহান হও, তবে ভেবে দেখ) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে এরপর পূর্নাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্নাকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিন্ড থেকে। তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্য।”
[সূরা হজ্জ ৫নং আয়াত শরীফ]
এবার আসুন আমরা উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে কি বলা হয়েছে সেটা উল্লেখ করি।
→ ফক্বীহুল আছর, প্রখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা আবু লাইছ সামারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ করেন–
(فانا خلقناكم….) اي خلقنا اباكم الذي هم اصل البشر يعني ادم عليه السلام (مم تراب) (ثم) خلقنا ذريته (من نطفة) وهو المني
অর্থ: (আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা যিনি মানব জাতির মূল অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর উনার সন্তানদেরকে “নুতফা” অর্থাৎ বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে সামারকান্দী ২য় খন্ড ৩৮০ পৃষ্ঠা]
→ ইমামুল মুফাসসিরীন, আল্লামা, ইমাম কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেন-
(فانا خلقناكك من تراب) يعني ادم عليه السلام من تراب
অর্থ: (নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে কুরতুবী ৬ষ্ঠ খন্ড ৬ পৃষ্ঠা]
→ বিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন, আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
(فانا خلقناكم من تراب) يعني اباكم ادم الذي هم اصل البشر (ثم من نطفة) يعني ذريته المي
অর্থ: (আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। যিনি মানব জাতির মূল। (অতঃপর নুত্ফা থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে খাযেন ৩য় খন্ড ২৮১ পৃষ্ঠা]
→ প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা হুসাইন ইবনে মাসউদ আল ফাররা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
(فانا خلقناكم) اي اباكم (من تراب ثم) خلقتم (من نطفة ثم من علقة) اي قطعة دم جامدة (ثم من مضغة) اي لحمة صغيرة قدر مايمضع
অর্থ: আমি তোমাদের অর্থাৎ তোমাদের পিতাকে (আদম আলাইহিস সালাম ) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তোমাদের সৃষ্টি করেছি নুতফা ও ছোট গোশত পিন্ড থেকে।”
[তাফসীরে বাগবী ৩য় খন্ড ২৮২ পৃষ্ঠা]
→ হাফিজ ইমাম ইবন কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
আমি তোমাদের মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি অর্থাৎ তোমাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করেছি মাটি দ্বারা তোমরা হল তারই বংশধর। অতঃপর আমি তোমাদের তুচ্ছ পানি ফোঁটার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছি।
[তাফসীর ইবন কাসির পারা ১৭, পৃ ৪১৯, প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন]
→ কানযুল ঈমানে আছে
তোমাদের বংশের মূল অর্থাৎ তোমাদের সর্বপ্রথম পিতামহ হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে তা থেকে সৃষ্টি করে।
[কানযুল ঈমান, পারা ১৭, টীকা ১০]
সূতরাং ‘সূরা হজ্জের ৫ নং আয়াত শরীফ” এর তাফসীর শরীফ থেকে আমরা দেখতে পেলাম মানুষ মাটির সৃষ্টি তাদ্বারা মূলত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। শুধুমাত্র আদম আলাইহিস সালাম মাটি দ্বারা সৃষ্ট, আদম সন্তানগন মাটি থেকে সৃষ্টি নয়।
★২ নং আয়াত শরীফ :
ان خلقكم من تراب ثم اذا انتم بشر تنتشرون
অর্থ: তাঁর ( আল্লাহ পাক) উনার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছো।”
[সূরা রুম ২০ নং আয়াত শরীফ]
উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে মুফাসসিরানে কিরামগন কি বলেছেন সেটা এখন তুলে ধরছি–
→ ইমামুল মুফাসসিরীন, আল্লামা ইমাম বাগবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন-
(ان خلقكم) اي اباكم (من تراب ثم اذا انتم بشر) اي ادم وذريته (تنتشرون)
অর্থ: তিনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতাকে (আদম আলাইহিস সালাম) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। অতঃপর তোমরা অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও উনার সন্তান জমীনে ছড়িয়ে পড়েছে।”
[তাফসীরে বাগবী ৩য় খন্ড ৪৩১ পৃষ্ঠা]
→ বিখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
قوله تعالي (ومن اياته ان خلق كم من تراب) اي من علامته رب بيته و وحدا نيته ان من تراب اي خلق اباكم منه
অর্থ: (আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মাটির থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার রুবুবিয়্যাত ও অহদানিয়্যাত এর নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের পিতা (হযরত আদম আলাইহিস সালাম ) উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে কুরতুবী]
→ ইমামুল হুদা, আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ان خلقكم اي خلق اصلكم ادم من تراب
অর্থ: তিনি (আল্লাহ পাক) তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে মাজহারী ৭ম খন্ড ২২৯ পৃষ্ঠা]
→ আল্লামা আবুল লাইছ সমরকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
(ان خلقكم من تراب) يعني خلق ادم من تراب وانتم ولده (ثم اذا انتم) ذريته من بعده (بشر تنتشرون) يعني تبسطون
অর্থ: (তিনি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমরা হলে উনার সন্তান উনার পরে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছো।”
[তাফসীরে সামারকান্দী ৩য় খন্ড ৯ পৃষ্ঠা]
→ বিখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহিম বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন-
(ان خلقكم من تراب) اي خلق اصلكم وهو ادم من تراب -(ثم اذا انتم بشر تنتشرون) اي تبسطون في الارض
অর্থ: (তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃরর তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়েছ মানুষ হিসেবে।”
[তাফসীরে খাযেন ৩য় খন্ড ৪৩১ পৃষ্ঠা]
→ হাফিজ ইমাম ইবন কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন
আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, তাঁর ক্ষমতার নিদর্শন অনেক রয়েছে। নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি মানব জাতির পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
[তাফসির ইবন কাসির, পারা ২১, পৃ ৬৩১, বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন]
→ কানযুল ইমানে আছে
তোমাদের সর্বোচ্চ পিতৃপুরুষ ও তোমাদের মূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে তা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
[কানযুল ঈমান, পারা ২১, টীকা ৩৭]
সূতরাং, পবিত্র কুরআন শরীফের “সূরা রুম ২০ নং আয়াত শরীফের” তাফসীর দ্বারাও স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে গেল যে, মানুষ মাটির তৈরি বলতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে।
এছাড়া উক্ত দুই খানা আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে পূর্বেকার নির্ভরযোগ্য সকল তাফসীরের কিতাবে “মানুষ মাটির তৈরি” বলতে শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে ।
কুরআন শরীফ অনুসন্ধান করে এরকম ১৪ খানা আয়াত শরীফ পাওয়া গেছে, যে আয়াত শরীফগুলোতে বলা হয়েছে, মানুষ মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।” উক্ত আয়াত শরীফ সমূহের তাফসীরে শতশত তাফসীরের কিতাব অনুসন্ধান করে দেখা গেছে “মানুষ মাটির তৈরী” জাতীয় যত আয়াত শরীফ বর্নিত হয়েছে সবগুলোতেই শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। অথচ অনেকেই সেই আয়াতগুলার তাফসীরে বিররায় বা, মনগড়া তাফসীর করে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির মানুষ বলার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে ।
আর তাফসীর বিররায় বা মনগড়া তাফসীর করা যে কত ভয়ানক সেটা হাদীস শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে–
من قال في القران برأيه فليتبوء مقعده من النار
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের ব্যাখ্যায় মনগড়া কিছু বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজ ঠিকানা বানিয়ে নেয়।”
[তিরমীযি শরীফ-কিতাবুত তাফসীর-২য় খন্ড ১২৩ পৃষ্ঠা- ২৯৫১ নং হাদীস]
সূতরাং যারা মনগড়া তাফসীর করে তাদের স্থান কোথায় হবে তা নিজেরাই চিন্তা করে দেখুন।
ইনশাআল্লাহ, আমরা ধারাবাহিকভাবে আপনাদের সামনে উক্ত ১৪ খানা আয়াত শরীফ এবং এর তাফসীর ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করবো। যেখান থেকে দিবালোকের মত প্রমাণ হবে, মাটি দ্বারা সৃষ্টি মানুষ বলতে শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে অন্য কাউকে নয়।
আজকে দুটি আয়াত ও তার তাফসীর উল্লেখ করছিঃ
★১ নং আয়াত শরীফ :
فانا خلقناكم من تراب ثم من نطفة ثم من علقة ثم من مضغة مخلقة و غير مخلقة لنبين لكم
অর্থ: (হে লোক সকল! তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দীহান হও, তবে ভেবে দেখ) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে এরপর পূর্নাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্নাকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিন্ড থেকে। তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্য।”
[সূরা হজ্জ ৫নং আয়াত শরীফ]
এবার আসুন আমরা উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে কি বলা হয়েছে সেটা উল্লেখ করি।
→ ফক্বীহুল আছর, প্রখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা আবু লাইছ সামারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ করেন–
(فانا خلقناكم….) اي خلقنا اباكم الذي هم اصل البشر يعني ادم عليه السلام (مم تراب) (ثم) خلقنا ذريته (من نطفة) وهو المني
অর্থ: (আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা যিনি মানব জাতির মূল অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর উনার সন্তানদেরকে “নুতফা” অর্থাৎ বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে সামারকান্দী ২য় খন্ড ৩৮০ পৃষ্ঠা]
→ ইমামুল মুফাসসিরীন, আল্লামা, ইমাম কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেন-
(فانا خلقناكك من تراب) يعني ادم عليه السلام من تراب
অর্থ: (নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে কুরতুবী ৬ষ্ঠ খন্ড ৬ পৃষ্ঠা]
→ বিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন, আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
(فانا خلقناكم من تراب) يعني اباكم ادم الذي هم اصل البشر (ثم من نطفة) يعني ذريته المي
অর্থ: (আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। যিনি মানব জাতির মূল। (অতঃপর নুত্ফা থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে খাযেন ৩য় খন্ড ২৮১ পৃষ্ঠা]
→ প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা হুসাইন ইবনে মাসউদ আল ফাররা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
(فانا خلقناكم) اي اباكم (من تراب ثم) خلقتم (من نطفة ثم من علقة) اي قطعة دم جامدة (ثم من مضغة) اي لحمة صغيرة قدر مايمضع
অর্থ: আমি তোমাদের অর্থাৎ তোমাদের পিতাকে (আদম আলাইহিস সালাম ) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তোমাদের সৃষ্টি করেছি নুতফা ও ছোট গোশত পিন্ড থেকে।”
[তাফসীরে বাগবী ৩য় খন্ড ২৮২ পৃষ্ঠা]
→ হাফিজ ইমাম ইবন কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
আমি তোমাদের মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি অর্থাৎ তোমাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করেছি মাটি দ্বারা তোমরা হল তারই বংশধর। অতঃপর আমি তোমাদের তুচ্ছ পানি ফোঁটার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছি।
[তাফসীর ইবন কাসির পারা ১৭, পৃ ৪১৯, প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন]
→ কানযুল ঈমানে আছে
তোমাদের বংশের মূল অর্থাৎ তোমাদের সর্বপ্রথম পিতামহ হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে তা থেকে সৃষ্টি করে।
[কানযুল ঈমান, পারা ১৭, টীকা ১০]
সূতরাং ‘সূরা হজ্জের ৫ নং আয়াত শরীফ” এর তাফসীর শরীফ থেকে আমরা দেখতে পেলাম মানুষ মাটির সৃষ্টি তাদ্বারা মূলত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। শুধুমাত্র আদম আলাইহিস সালাম মাটি দ্বারা সৃষ্ট, আদম সন্তানগন মাটি থেকে সৃষ্টি নয়।
★২ নং আয়াত শরীফ :
ان خلقكم من تراب ثم اذا انتم بشر تنتشرون
অর্থ: তাঁর ( আল্লাহ পাক) উনার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছো।”
[সূরা রুম ২০ নং আয়াত শরীফ]
উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে মুফাসসিরানে কিরামগন কি বলেছেন সেটা এখন তুলে ধরছি–
→ ইমামুল মুফাসসিরীন, আল্লামা ইমাম বাগবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন-
(ان خلقكم) اي اباكم (من تراب ثم اذا انتم بشر) اي ادم وذريته (تنتشرون)
অর্থ: তিনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতাকে (আদম আলাইহিস সালাম) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। অতঃপর তোমরা অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও উনার সন্তান জমীনে ছড়িয়ে পড়েছে।”
[তাফসীরে বাগবী ৩য় খন্ড ৪৩১ পৃষ্ঠা]
→ বিখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
قوله تعالي (ومن اياته ان خلق كم من تراب) اي من علامته رب بيته و وحدا نيته ان من تراب اي خلق اباكم منه
অর্থ: (আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মাটির থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার রুবুবিয়্যাত ও অহদানিয়্যাত এর নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের পিতা (হযরত আদম আলাইহিস সালাম ) উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে কুরতুবী]
→ ইমামুল হুদা, আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
ان خلقكم اي خلق اصلكم ادم من تراب
অর্থ: তিনি (আল্লাহ পাক) তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে মাজহারী ৭ম খন্ড ২২৯ পৃষ্ঠা]
→ আল্লামা আবুল লাইছ সমরকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
(ان خلقكم من تراب) يعني خلق ادم من تراب وانتم ولده (ثم اذا انتم) ذريته من بعده (بشر تنتشرون) يعني تبسطون
অর্থ: (তিনি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমরা হলে উনার সন্তান উনার পরে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছো।”
[তাফসীরে সামারকান্দী ৩য় খন্ড ৯ পৃষ্ঠা]
→ বিখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহিম বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন-
(ان خلقكم من تراب) اي خلق اصلكم وهو ادم من تراب -(ثم اذا انتم بشر تنتشرون) اي تبسطون في الارض
অর্থ: (তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃরর তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়েছ মানুষ হিসেবে।”
[তাফসীরে খাযেন ৩য় খন্ড ৪৩১ পৃষ্ঠা]
→ হাফিজ ইমাম ইবন কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন
আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, তাঁর ক্ষমতার নিদর্শন অনেক রয়েছে। নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি মানব জাতির পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
[তাফসির ইবন কাসির, পারা ২১, পৃ ৬৩১, বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন]
→ কানযুল ইমানে আছে
তোমাদের সর্বোচ্চ পিতৃপুরুষ ও তোমাদের মূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে তা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
[কানযুল ঈমান, পারা ২১, টীকা ৩৭]
সূতরাং, পবিত্র কুরআন শরীফের “সূরা রুম ২০ নং আয়াত শরীফের” তাফসীর দ্বারাও স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে গেল যে, মানুষ মাটির তৈরি বলতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে।
এছাড়া উক্ত দুই খানা আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে পূর্বেকার নির্ভরযোগ্য সকল তাফসীরের কিতাবে “মানুষ মাটির তৈরি” বলতে শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে ।