শবে বরাত ফার্সী ভাষা, ফার্সী শব অর্থ রাত্রি

এবংবরাত অর্থ ভাগ্য বা মুক্তি। সুতরাং শবে বরাত মানে

হল ভাগ্য রজনী বা মুক্তির রাত।কোরআনে শবে কদর

নাই,লাইলাতুল কদর আছে,শবে বরাত নাই,লাইলাতুল

মোবারাকা আছে।কুরআন শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুম

মুবারাকাহ বা বরকতময় রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর হাদীস শরীফে শবে বরাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন

শা’বান বা শা’বান মাসের মধ্য রাত হিসেবে উল্লেখ করা

হয়েছে।



এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

ﻭَﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟْﻤُﺒِﻴﻦِ

ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎﻩُ ﻓِﻲ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣُّﺒَﺎﺭَﻛَﺔٍ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﻨﺬِﺭِﻳﻦَ

ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴﻢٍ

ﺃَﻣْﺮًﺍ ﻣِّﻦْ ﻋِﻨﺪِﻧَﺎ ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﺮْﺳِﻠِﻴﻦَ

অর্থঃ

” শপথ প্রকাশ্য কিতাবের! নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে

কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই

নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো

ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।”

(সূরা দু’খানঃ ২-৫)

কেউ কেউ বলে থাকে যে, “সূরা দু’খানের উল্লেখিত আয়াত

শরীফ দ্বারা শবে ক্বদর-কে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত

আয়াত শরীফে সুস্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, নিশ্চয়ই আমি

বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি……..। আর কুরআন

শরীফ যে ক্বদরের রাতে নাযিল করা হয়েছে তা সূরা

ক্বদরেও উল্লেখ আছে ।”

এ প্রসঙ্গে মুফাসসির কুল শিরোমণি রঈসুল মুফাসসিরীন

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস

রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ” উক্ত আয়াতের দুটি ব্যাখ্য

দিয়েছেন ১ লাইলাতুল কদর ২, লাইলাতুল বারায়াত।

প্রখ্যাত মুফাসসির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (), হযরত

আবু হুরায়রা () এবং হযরত ইকরামা () সহ বহু সংখ্যক সাহাবী

তাবেয়ীনদের মতে উক্ত আয়াতে লাইলাতুল মুবারাকা

দ্বারা চৌদ্দ-ই শাবান দিবাগত রাত বা শবে বারাআত

বুঝানো হয়েছে।

যেমন কয়েকজন মুফাসসিরদের মতামত দেয়া হল-

(১) ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺣﻢ ﻳﻌﻨﻰ ﻗﻀﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻛﺎﺋﻦ ﺍﻟﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ

ﻭﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤﺒﻴﻦ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ

ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ –‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস () বলেন, হা-মীম

অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করেছেন কিয়ামত

পর্যন্ত যা ঘটবে, সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ অর্থাৎ- আল কুরআন,

লাইলাতুল মুবারাকা অর্থাৎ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ

দিবাগত রাত তা হল লাইলাতুল বারাআত।’’

# ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : তাফসীরে দুররে মানসুর :

৭/৪০১পৃ

(২), ﻋﻦ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺟﺒﺮﺍﺋﻴﻞ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻰ ﺗﻠﻚ

ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺣﺘﻰ ﺍﻣﻠﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﺘﺒﺔ ﻭﺳﻤﺎﻫﺎ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ ﻻﻧﻬﺎ ﻛﺜﻴﺮﺓ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﺍﻟﺒﺮﻛﺔ ﻟﻤﺎ ﻳﻨﺰﻝ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ

ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﻳﺠﺎﺏ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﻮﺓ –

-‘‘হযরত ইকরামা () বলেন, “লাইলাতুল মুবারাকা” দ্বারা

শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতকে বুঝানো

হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল () কে ঐ রাতে

প্রথম আবৃত্তি করতে পারেন। এই রাতকে মুবারক নাম রাখার

কারণ হলো এতে কল্যাণ, বরকত ও আল্লাহর রহমত নাযিল হয়

এবং রাতে দোয়া কবুল হয়।’’

# তাফসীরে কাশফুল আসরার, ৯/৯৮.পৃ.

৩,মুবারাকা বা বরকতময় বলার কারণ কি এ প্রসঙ্গে

আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী () বলেছেন,

ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻛﺜﻴﺮﺓ ﺧﻴﺮﻫﺎ ﻭﺑﺮﻛﺘﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻥ ﺑﺮﻛﺎﺕ ﺟﻤﺎﻟﺔ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺗﺼﻞ ﺍﻟﻰ

ﻛﻞ ﺫﺭﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺜﺮﻯ ﻛﻤﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ –

-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা বলা হয় এ রাতে অনেক খায়ের ও

বরকত নাযিল হয়। সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর সৌন্দর্যের বরকত

আরশের প্রতি কণা থেকে ভূতলের গভীরে পৌঁছে যেমনটি

শবে কদরের মধ্যে হয়ে থাকে।’’

# আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৮/১০১

পৃ.

(৪) আল্লামা ইমাম সুয়ূতি (রহ.) আরও বলছেন,

ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻗﻄﻊ

ﺍﻻﺟﺎﻝ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻟﻰ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺣﺘﻰ ﺍﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﻨﻜﺢ ﻭﻳﻮﻟﺪ ﻟﻪ ﻭﻗﺪ ﺧﺮﺝ ﺍﺳﻤﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻮﺗﻰ –

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা () হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ () ইরশাদ

করেছেন, এক শাবান থেকে অপর শাবান পর্যন্ত মানুষের

হায়াত চূড়ান্ত করা হয়। এমনকি একজন মানুষ বিবাহ করে

এবং তার সন্তান হয় অথচ তার নাম মৃতের তালিকায় উঠে

যায়।’’

# আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : তাফসীরে দুররে

মানসুর : ৭/৪০১ পৃ

(৫) আল্লামা ইমাম কুরতুবী () তাফসীরে কুরতুবীতে এই

আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন-

ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻟﻬﺎ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﺍﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻭﻭﺻﻔﻬﺎ

ﺑﺎﻟﺒﺮﻛﺔ ﻟﻤﺎ ﻳﻨﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺮﻛﺎﺕ ﻭﺍﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﻭﺍﻟﺜﻮﺍﺏ –

-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শাবান (শবে বরাত) এর

রাতকে বুঝানো হয়েছে। এই ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে

বরাতের চারটি নাম রয়েছে, যেমন. ১. লাইলাতুল মুবারাকা

বা বরকত পূর্ণ রাত, ২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা

ভাগ্যের রাত. ৩। লাইলাতুল ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতি

দানের রাত ৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী।’’

আর শবে বরাতকে বরকতের সঙ্গে এই জন্য সম্বন্ধ করা হয়েছে

যেহেতু আল্লাহ পাক এই শবে বরাতে বান্দাদের প্রতি

বরকত, কল্যাণ এবং পূণ্য দানের জন্য দুনিয়ায় কুদরতীভাবে

নেমে আসেন অর্থাৎ- খাস রহমত নাযিল করেন।

(৬) ইমাম কুরতবী () আরও বলেন,

ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻫﻬﻨﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ –

-‘‘বিখ্যাত সাহাবী হযরত ইকরামা () তিনি বলেন,

লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা এখানে অর্ধ শাবান (শবে

বরাতকে) এর রাতকেই বুঝানো হয়েছে।’’

প্রখ্যাত মুফাসসির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (), হযরত

আবু হুরায়রা () এবং হযরত ইকরামা () সহ বহু সংখ্যক সাহাবী

তাবেয়ীনদের মতে উক্ত আয়াতে লাইলাতুল মুবারাকা

দ্বারা চৌদ্দ-ই শাবান দিবাগত রাত বা শবে বারাআত

বুঝানো হয়েছে।

# ইমাম কুরতুবী : তাফসীরে কুরতবী : ৮/১২৬ পৃ.

৭) ইমাম কুরতুবী () আরও বলেন, ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ

ﺍﻳﻀﺎ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻘﻀﻰ ﺍﻻﻗﻀﻴﺔ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻳﺴﻠﻤﻬﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﺭﺑﺎ ﺑﻬﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ –

-‘‘প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস () থেকে

বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা অর্ধ

শাবান (শবে বরাতে) এর রাত্রিতে যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য

তালিকা প্রস্তুত করেন। আর কদরের রাত্রিতে ঐ ভাগ্য

তালিকা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে পেশ

করেন।’’

#ইমাম কুরতুবী: তাফসীরে কুরতুবী : ৯/১৩০ : পৃ:

(৮) আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী () “তাফসীরে রুহুল

মায়ানীতে’’ সূরা দুখানের উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,

ﻭﻭﺻﻒ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺑﺎﻟﺒﺮﻛﺔ ﻟﻤﺎ ﺍﻥ ﺍﻧﺰﺍﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻣﺴﺘﺘﺒﻊ ﻟﻠﻤﻨﺎﻓﻊ ﺍﻟﺪﻳﻨﻴﺔ ﻭﺍﻟﺪﻧﻮﻳﺔ ﺑﺄﺟﻤﻌﻬﺎ ﺍﻭ ﻟﻤﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ

ﻧﻨﺰﻝ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﻭﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﺍﺟﺎﺑﺔ ﺍﻟﺪﻋﻮﺓ ﻭﻓﻀﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺒﺎﺩﺓ ﺍﻭ ﻟﻤﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ ﻭﺗﻘﺪﻳﺮ ﺍﻻﺭﺯﺍﻕ ﻭﻓﻀﻞ

ﺍﻻﻗﻀﻴﺔ ﻻﺟﺎﻝ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ ﻭﺍﻋﻄﺎﺀ ﺗﻤﺎﻡ ﺍﻟﺸﻔﺎﻋﺔ ﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﻫﺬﺍ ﺑﻨﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﺍﻧﻬﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻓﻘﺪ

ﺭﻭﻯ ﺍﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺳﺄﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﻋﺸﺮ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻰ ﺃﻣﺘﻪ ﻓﺄﻋﻄﻰ ﺍﻟﺜﻠﺚ ﻣﻨﻬﺎ ﺛﻢ

ﺳﺄﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺮﺍﺑﻊ ﻋﺸﺮ ﻓﺄﻋﻄﻰ ﺍﻟﺜﻠﺜﻴﻦ ﺛﻢ ﺳﺄﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻋﺸﺮ ﻓﺄﻋﻄﻰ ﺍﻟﺠﻤﻴﻊ ﺍﻻ ﻣﻦ ﺷﺮﺩ ﻋﻠﻰ

ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺷﺮﺍﺩ ﺍﻟﺒﻌﻴﺮ –

-‘‘লাইলাতুল মুবারাকা বরকতের রাত হিসেবে এবং

দুনিয়াবী বহুবিদ কল্যাণের জন্য নাযিলের সিদ্ধান্ত দেয়া

হয়েছে। ঐ রাতে সমস্ত ফেরেশতারা অবতরণ করেন এবং

রহমত নাযিল হয়, বান্দাদের দোয়াকবুল করা হয়। বান্দাদের

রিযিক বন্টন করা হয় এবং সমস্ত কিছুর ভাগ্য সমূহ পৃথক করা

হয়। যেমন মৃত্যু এবং অন্যান্য সব বিষয়ের। এবং রাসূল () এর

সমস্ত বিষয়ের সুপারিশ কবুল করা হয়। আর এই বরকতের

রাতকে বরাতের রাত হিসেবেও নাম করণ করা হয়। যেহেতু

এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, আখিরী রাসূল

() তিনি শাবান মাসের ১৩ তারিখ রাতে স্বীয় উম্মতের

ক্ষমার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে প্রার্থনা করেন। অতঃপর

অনুরূপভাবে ১৪ই শাবান তথা শবে বরাতেও মহান আল্লাহ

পাকের কাছে হুযুর পাক () স্বীয় উম্মতের জন্য ক্ষমা

প্রার্থনা করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি শবে

বরাতে তার উম্মতের দুই তৃতীয়াংশ উম্মতকে ক্ষমা করেন।

অতঃপর অনুরূপভাবে ১৫ই শাবান তথা শবে বরাতেও মহান

আল্লাহ পাকের কাছে হুযুর পাক () স্বীয় উম্মতের জন্য ক্ষমা

প্রার্থনা করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই শবে

বরাতে তার সমস্ত উম্মতগণকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই

সমস্ত উম্মত ব্যতীত যারা মহান আল্লাহ পাক এর ব্যাপারে

চরম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে।’’

#আল্লামা আলুসী বাগদাদী: তাফসীরে রুহুল মায়ানী :

১৩/১১২ পৃ:

(৯) ইমাম খাযেন () রচিত তাফসীরে লুবাবুত তাভীল” এ উক্ত

আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ আছে-

( ﻓﻴﻬﺎ ‏) ﺍﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ‏(ﻳﻔﺮﻕ ‏) ﻳﻔﺼﻞ ‏( ﻛﻞ ﺍﻣﺮ ﺣﻜﻴﻢ ‏) —— ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ

ﻋﻨﻪ ﻫﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻳﻘﻮﻡ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻣﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﺗﻨﺴﺦ ﺍﻻﺣﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻻﻣﻮﺍﺕ ﻓﻼ ﻳﺰﺍﺩ ﻓﻴﻬﻢ ﻭﻻ

ﻳﻨﻘﺺ ﻣﻨﻬﻢ ﺍﺣﺪ ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺗﻘﻄﻊ ﺍﻻﺟﺎﻝ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻟﻰ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺣﺘﻰ ﺍﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻴﻨﻜﺢ

ﻭﻳﻮﻟﺪ ﻟﻪ ﻭﻟﻘﺪ ﺍﺧﺮﺝ ﺍﺳﻤﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻮﺗﻰ ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻀﻰ

ﺍﻻﻗﻀﻴﺔ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭﻳﺴﻠﻤﻬﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﺭﺑﺎﺑﻬﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ –

-‘‘ওই মুবারক তথা বরকত পূর্ণ রাত্রিতে অর্থাৎ- শবে বরাতের

প্রত্যেক হিকমত পূর্ণ যাবতীয় বিষয় সমূহের ফায়সালা করা

হয়। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইকরামা () তিনি বলেন,

লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবান

তথা (শবে বরাত) এর রাত। এই শবে বরাতে আগামী এক

বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়

এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবীতদের। ওই

তালিকা থেকে কোন কম বেশি করা হয় না অর্থাৎ-

পরিবর্তন হয় না।





#ইমাম খাজেন: তাফসীরে লুবাবুত তাভীল : ১৭/৩১০-৩১১পৃ

১০, মালেকী মাযহাবের আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী বলেন,

( ﻗﻮﻟﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ‏) ﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﻋﻜﺮﻣﺔ ﻭﻃﺎﺋﻔﺔ ﻭﻭﺟﻪ ﺑﺎﻣﻮﺭ ﻣﻨﻬﺎ ﺍﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ

ﻟﻬﺎ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﺍﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻛﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺒﺮﺃﺓ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺼﻚ ﻭﻣﻨﻬﺎ ﻓﻀﻞ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ ﻓﻴﻬﺎ –

অর্থঃ ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি

(মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির) বিশিষ্ট

তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)ও অন্যান্য

তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি

কারণও উল্লেখ করেছেন। শাবানের চৌদ্দ তারিখের

দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন- ১।

লাইলাতুম মুবারাকাহ- বরকতময় রজনী। ২। লাইলাতুল

বারাআত- মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি। ৩। লাইলাতুর

রহমাহ- রহমতের রাত্রি। ৪। লাইলাতুছ ছাক- সনদপ্রাপ্তির

রাত্রি ইত্যাদি।

#(তাফসীরে ছাভী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪০)

১১, তাফসীরে বাগভী শরীফে বর্ণিত আছে,…

ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻀﻰ ﺍﻷﻗﻀﻴﺔ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ, ﻭﻳﺴﻠﻤﻬﺎ ﺇﻟﻰ

ﺃﺭﺑﺎﺑﻬﺎ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ –

অর্থঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল

বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা

সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন ।

# (তাফসীরে বাগভী, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা ২২৮)

= অনেকেই বলে থাকে পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ

হয়েছে রমাদ্বান শরীফ-এর মাসে লাইলাতুল ক্বদরে। এ

প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা বাক্বারায় উল্লেখ

করেন-

(১২৯) ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺍﻟﺬﻯ ﺍﻧﺰﻝ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ

পবিত্র কুরআন শরীফ রমাদ্বান মাসে অবতীর্ণ করা হয়েছে।

আর সূরা আদ দুখানেও আল্লাহ পাক তিনি বলেন-

(১৩০)

ﺍﻧﺎ ﺍﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﺒﺎﺭﻛﺔ

নিশ্চয়ই আমি উহা তথা কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করেছি

মুবারকময় রজনীতে। এখানে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা

যদি শবে বরাতের রাতকে গণনা করা হয় তাহলে উভয়

রাতের সমাধান কি?

উল্লেখ্য যে, এ ব্যাপারে অসংখ্য তাফসীর ও হাদীছ শরীফ-

এর উদ্ধৃতির মাধ্যমে সমাধান দেয়া হয়েছে যে, লাইলাতুম

মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতকেই

বুঝানো হয়েছে। আর এই রাতে কুরআন শরীফ অবতীর্ণের

কথা যে বলা হয়েছে তা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক তিনি

প্রথম যখন পবিত্র কুরআন শরীফ লওহে মাহফূযে অবতীর্ণ

করেন সেই রাতটি ছিলো লাইলাতুম মুবারাকা তথা অর্ধ

শাবানের রাত্রি অর্থাৎ শবে বরাতের রাত্রি। আর লওহে

মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে একই সঙ্গে অবতীর্ণ করা

হয়। সেখান থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার

মাধ্যমে সুদীর্ঘ তেইশ বৎসরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে

খ- খ-ভাবে তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম-উনার উপর নাযিল করা হয়।

===> বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে খাযিন-এর ৪র্থ খ-ে

র (সূরা ক্বদরের তাফসীরে) ২৯৫ পৃৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৩১-১৩৫)

ﺍﻧﺎ ﺍﻧﺰﻟﻨﺎﻩ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ‏(ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺍﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺍﻟﻌﻈﻴﻢ ﺟﻤﻠﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻣﻦ

ﺍﻟﻠﻮﺡ ﺍﻟﻤﺤﻔﻮﻅ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﻓﻮﺿﻌﻪ ﻓﻰ ﺑﻴﺖ ﺍﻟﻌﺰﺓ ﺛﻢ ﻧﺰﻝ ﺑﻪ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ

ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻧﺠﻮﻣﺎ ﻣﺘﻔﺮﻗﺔ ﻓﻰ ﻣﺪﺓ ﺛﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻨﺔ ﻓﻜﺎﻥ ﻳﻨﺰﻝ ﺑﺤﺴﺐ

ﺍﻟﻮﻓﺎﺋﻊ ﻭﺍﻟﺤﺎﺟﺔ ﺍﻟﻴﻪ .

অর্থ: নিশ্চয়ই আমি উহা তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ক্বদরের

রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। এই বাণী মুবারক-এর দ্বারা

ইহা বুঝানো হয়েছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা

পবিত্র কুরআনুল কারীম একই সঙ্গে লাওহে মাহফূয থেকে

দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ করেন লাইলাতুল ক্বদরে। অতঃপর

ওই পবিত্র কুরআন শরীফ বাইতুল ইযযতে রাখা হয়। সেখান

থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে

আস্তে আস্তে সুদীর্ঘ তেইশ বছরে বিভিন্ন অবস্থার

প্রেক্ষিতে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে খ- খ-ভাবে হুযূর পাক

ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপর অবতীর্ণ

করেন।

(সূরা আদ দুখান এর তাফসীরে তাফসীরে খাযিন ৪র্থ খন্ড

১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বাগবী ৪র্থ/১১২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রহুল

মায়ানী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, দুররুল মানছুর, ইত্যাদি

তাফসীরে সমূহ)

তাছাড়াও সমাধানে আরো উল্লেখ আছে যে, লাইলাতুম

মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাতকে

আর নির্ধারিত ভাগ্যসমূহ চালুকরণের রাতকে লাইলাতুল

ক্বদর তথা শবে ক্বদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে।

যেমন এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে রুহুল

মায়ানী ১৫তম খ-ের ২২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১৩৬) ﻭﺍﻟﺜﺎﻧﻰ ﺍﻇﻬﺎﺭ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻤﻘﺎﺩﻳﺮ ﻟﻠﻤﻼﺋﻜﺔ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺗﻜﺘﺐ ﻓﻰ ﺍﻟﻠﻮﺡ ﺍﻟﻤﺤﻔﻮﻅ ﻭﺫﻟﻚ ﻓﻰ ﻟﻴﻠﺔ

ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻨﺸﻌﺒﺎﻥ ﻭﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﺍﺛﺒﺎﺕ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻤﻘﺎﺩﻳﺮ ﻓﻰ ﻧﺴﺦ ﻭﺗﺴﻠﻴﻤﻬﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﺭﺑﺎﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺪﺑﺮﺍﺕ

অর্থ: লাইলাতুল ক্বদরের অনেক অর্থ রয়েছে তন্মধ্যে

দ্বিতীয় একটি অর্থ হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে

বরাতে যেসব বিষয়ের তালিকা লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ

করা হয়েছে সেসব ভাগ্য তালিকা ফেরেশ্তা আলাইহিমুস

সালামগণ উনাদের মাধ্যমে যে রাত্রিতে প্রকাশ তথা চালু

করা হয় সেই রাতকেই লাইলাতুল ক্বদর তথা ভাগ্য

নির্ধারণের রাত বা মহান মর্যাদাবান রাতও বলে।

তৃতীয়ত: অপর একটি অর্থ হচ্ছে নির্ধারিত ভাগ্যসমূহ যা

তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তা চালু করার জন্য কার্যকারী

ফেরেশতাদের হাতে যে রাতে পেশ করা হয় সেই রাতকে

লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর বলে।

==মাওলানা মাহিউদ্দীন খান তার মাসিক মদীনায়

জুলাই/২০১১ এর ৪১পৃষ্ঠায় “আল-কুরআনে শব-ই-বরাত: একটি

বিশ্লেষন” শিরোনামে লিখেছে-

সুরা দুখানের লাইলাতুম মুবারকা শব্দের সংখ্যাতাত্ত্বিক

বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে, সুরা দুখান কুরআনের ১ম

থেকে ৪৪নং সুরা। ৪৪ এর অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টি ৪+৪=৮; ৮দ্বারা

বুঝায় ৮ম মাস অর্থাৎ শাবান মাসে লাইলাতুম মুবারকা

অবস্থিত। আবার কুরআনের শেষ থেকেও সুরা দুখান ৭১ নং

সুরা। ৭১ অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টি ৭+১=৮, পুনরায় ৮ম মাসের দিকেই

ইঙ্গিত করে। আবার এ সুরার প্রথম থেকে ১৪টি হরফ শেষ

করে ১৫তম হরফ থেকে লাইলাতুম মুবারকায় কুরআন নাযিল

সংক্রান্ত আয়াত শুরু হয়েছে। এটা ইঙ্গিত করে যে, ঐ ৮ম

মাসের ১৪ তারিখ শেষ হয়ে ১৫তারিখ রাতেই লাইলাতুম

মুবারকা। এই সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষন প্রমান করে, সুরা

দুখানে বর্নিত লাইলাতুম মুবারকা ১৪ই শাবান দিবাগত ১৫ই

শাবানের রাত। অর্থাৎ লাইলাতুল বারাআত বা শব-ই-

বারাআত। এছাড়া মুফাসিসরীনদের বিশাল এক জামাত

দাবী করেছেন, সুরা দুখানে বর্নিত যে রাতকে লাইলাতুম

মুবারকা বলা হয়েছে তা অবশ্যই শব-ই-বরাত। (ইমাম কুরতবী,

মোল্লা আলী কারী (রহ), বুখারী শরীফের সর্বশ্রেষ্ঠ

ভাষ্যকার হাফিজুল হাদীস আল্লামা ইবনে হাজার

আসকালানী রহ; এবং হাম্বলী মাজহাবের অন্যতম ইমাম

বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমাতুল্লাহি সহ আরো

অনেকে এ বিষয়ে একমত)

কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো,

“আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করি।”

অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে

বরাতে” কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন আর শবে

ক্বদরে তা নাযিল করা শুরু করেন। এজন্যে মুফাসসিরীনে

কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শবে বরাতকে ﻟﻴﻠﺔ

ﺍﻟﺘﺠﻮﻳﺰ অর্থাৎ ‘ফায়সালার রাত।’ আর শবে ক্বদরকে ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺘﻨﻔﻴﺬ

অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা

শবে বরাতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘সূরা

দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ

হয়েছে-

ﻓﻴﻬﺎ ﻳﻔﺮﻕ ﻛﻞ ﺍﻣﺮ ﺣﻜﻴﻢ

অর্থাৎ- “উক্ত রজনীতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের

ফায়সালা করা হয়।”

হাদীছ শরীফেও উক্ত আয়াতাংশের সমর্থন পাওয়া যায়।

যেমন ইরশাদ হয়েছে-

ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻛﻞ ﻣﻮﻟﻮﺩ ﻣﻦ ﺑﻨﻰ ﺍﺩﻡ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺍﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻛﻞ ﻫﺎﻟﻚ ﻣﻦ ﺑﻨﻰ ﺍﺩﻡ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ

ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺗﺮﻓﻊ ﺍﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﺗﻨﺰﻝ ﺍﺭﺯﺍﻗﻬﻢ

অর্থাৎ- “বরাতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন

সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান

মৃত্যু বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে

উঠানো হয় অর্থাৎ আল্লাহ পাক-উনার দরবারে পেশ করা হয়

এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা

হয়।” (বায়হাক্বী, মিশকাত)

===> লাইলাতুম মুবারাকাহ দ্বারা শবে বরাতকে বুঝানো

হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ সূরা দু’খানের ৪ নম্বর আয়াত

শরীফ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻳُﻔْﺮَﻕُ ﻛُﻞُّ ﺃَﻣْﺮٍ ﺣَﻜِﻴﻢٍ । এই আয়াত শরীফের ﻳُﻔْﺮَﻕُ শব্দের অর্থ

ফায়সালা করা।প্রায় সমস্ত তাফসীরে সকল মুফাসসিরীনে

কিরামগণ ﻳُﻔْﺮَﻕُ (ইয়ুফরাকু) শব্দের তাফসীর করেছেন ইয়ুকতাবু

অর্থাৎলেখা হয়, ইয়ুফাছছিলু অর্থাৎ ফায়সালা করা হয়,

ইয়ুতাজাও ওয়াযূ অর্থাৎ বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়,

ইয়ুবাররেমু অর্থাৎ বাজেট করা হয়, ইয়ুকদ্বিয়ু অর্থাৎ

নির্দেশনা দেওয়া হয়

কাজেই ইয়ুফরাকু -র অর্থ ও তার ব্যাখার মাধ্যমে আরো

স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, লাইলাতুম মুবারাকাহদ্বারা শবে

বরাত বা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে। যেই রাত্রিতে

সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বছরের জন্য

লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্যলিপি অনুসারে রমাদ্বান

মাসের লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদরে তা চালু হয়। এজন্য

শবে বরাতকে লাইলাতুত্ তাজবীজ অর্থাৎ ফায়সালার

রাত্র এবং শবে ক্বদরকেলাইলাতুল তানফীয অর্থাৎ

নির্ধারিত ফায়সালার কার্যকরী করার রাত্র বলা হয়।

(তাফসীরে মাযহারী,তাফসীরে খাযীন,তাফসীরে ইবনে

কাছীর,বাগবী, কুরতুবী,রুহুল বয়ান,লুবাব)

==যে বিষয় টি লক্ষ্যনীয়- শবে কদর হাজার বছরের চেয়ে

শ্রেষ্টরাত এবং সেইদিন হল বন্ঠনের রাত কিন্তু শবে বরাত

হল ফয়সালার রাত,সেহেতু সুরা দুখুানে এসছে—“ আমারই

নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো

ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সুরা

দুখান-৫)এবং হাদিসেও ১৫ই শাবান কে ফয়সালার রাত

হিসেবে উল্লেখ অাছে যেটি শবে কদর সর্ম্পকে নাই।



Top