আল্লাহর প্রতি শোকরগুযারী

আল-কুরআনুল কারীম :

1 -فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلا تَكْفُرُونِ

‘অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও ও অবিশ্বাসী হয়ো না’ (বাক্বারাহ ১৫২)।

২ -يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّباتِ ما رَزَقْناكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ

‘হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! আমি তোমাদেরকে যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পবিত্র বস্ত্তসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা তাঁরই উপাসনা করে থাক’ (বাক্বারাহ ১৭২)।

৩- قالَ يا مُوسى إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسالاتِي وَبِكَلامِي فَخُذْ ما آتَيْتُكَ وَكُنْ مِنَ الشَّاكِرِينَ

‘তিনি (আল্লাহ) বললেন, হে মূসা! আমি তোমাকেই আমার রিসালাত ও আমার সাথে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্য হ’তে মনোনীত করেছি, অতএব আমি তোমাকে যা কিছু দিয়েছি তা তুমি গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও’ (আ‘রাফ ১৪৪)।

4- إِنَّما تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثاناً وَتَخْلُقُونَ إِفْكاً إِنَّ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لا يَمْلِكُونَ لَكُمْ رِزْقاً فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

‘তোমরাতো আল্লাহর ইবাদতের পরিবর্তে মূর্তিপূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজা কর, তারা তোমাদের জীবনোপকরণের মালিক নয়। সুতরাং তোমরা জীবনোপকরণ কামনা কর আল্লাহর নিকট এবং তাঁরই ইবাদত কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আর তোমরা তারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে’ (আনকাবূত ১৭)।

৫- أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا خَلَقْنا لَهُمْ مِمَّا عَمِلَتْ أَيْدِينا أَنْعاماً فَهُمْ لَها مالِكُونَ (71)

وَذَلَّلْناها لَهُمْ فَمِنْها رَكُوبُهُمْ وَمِنْها يَأْكُلُونَ (72) وَلَهُمْ فِيها مَنافِعُ وَمَشارِبُ أَفَلا يَشْكُرُونَ

‘তারা কি লক্ষ্য করে না যে, নিজ হাতে সৃষ্ট বস্ত্তদের মধ্যে আমি তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি গৃহপালিত জন্তু এবং তারাই এগুলোর মালিক। এবং আমি এগুলোকে তাদের বশীভূত করে দিয়েছি। এগুলোর কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা আহার্য হিসাবে গ্রহণ করে। তাদের জন্য এগুলোতে আছে বহু উপকারিতা আর রয়েছে পানীয় বস্ত্ত। তবুও কি তোমরা কৃতজ্ঞ হবে না? (ইয়াসীন ৭১-৭৩)।

৬- وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخاسِرِينَ (65) بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُنْ مِنَ الشَّاكِرِينَ

‘তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি (এ মর্মে) অবশ্যই ওহী হয়েছে, তুমি আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্থ। অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদত কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও’ (যুমার ৬৫-৬৬)।

৭- وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ بِبَدْرٍ وَأَنْتُمْ أَذِلَّةٌ فَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন এবং তোমরা দুর্বল ছিলে; অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারো’ (আলে-ইমরান ১২৩)।

8- وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْماً طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُوا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُونَها وَتَرَى الْفُلْكَ مَواخِرَ فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘তিনি সমুদ্রকে অধীন করেছেন যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্য আহার করতে পার এবং আহরণ করতে পার রত্নাবলী, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর; এবং তোমরা দেখতে পাও, ওর বুক চিরে নৌযান চলাচল করে এবং তা এই জন্য যে, তোমরা যেন তার অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার’ (নাহল ১৪)।

9- وَمِنْ رَحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘তিনি তার দয়ায় তোমাদের জন্য আবির্ভাব ঘটিয়েছেন রজনী ও দিবসের, যেন তাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং তার অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার’ (ক্বাছাছ ৭৩)।

10- اللهُ الَّذِي سَخَّرَ لَكُمُ الْبَحْرَ لِتَجْرِيَ الْفُلْكُ فِيهِ بِأَمْرِهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘আল্লাহই তো সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তার আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার ও তার প্রতি কৃতজ্ঞ হও’ (জাছিয়া ১২)।

11- إِنْ تَكْفُرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنْكُمْ وَلا يَرْضى لِعِبادِهِ الْكُفْرَ وَإِنْ تَشْكُرُوا يَرْضَهُ لَكُمْ

‘তোমরা অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তার বান্দাদের অকৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন না। যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের জন্য এটাই পছন্দ করেন’ (যুমার ৭)।

12-وَما مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ ماتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلى أَعْقابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئاً وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ

‘এবং মুহাম্মাদ রাসূল ব্যতীত কিছুই নন। নিশ্চয়ই তার পূর্বে রাসূলগণ বিগত হয়েছেন, অনন্তর যদি তার মৃত্যু হয় অথবা তিনি নিহত হন, তবে কি তোমরা পশ্চাৎপদে ফিরে যাবে? এবং যে কেউ পশ্চাৎপদে ফিরে যায়, তাতে সে আল্লাহর কোনই অনিষ্ট করবে না এবং আল্লাহ কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কার প্রদান করেন’ (আলে ইমরান ১৪৪)।

হাদীছে নববী থেকে :

13- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ إن لِلطَّاعِمِ الشَّاكِرِ مِثْلُ مَا لِلصَّائِمِ الصَّابِرِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী খাদ্যগ্রহণকারী ব্যক্তির প্রতিদান ধৈর্যধারণকারী ছায়েমের ন্যায়’(মুসনাদে আহমাদ হা/৭৮৭৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২১৭৯)।

14- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى بِطَرِيقٍ وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ عَلَى الطَّرِيقِ فَأَخَّرَهُ فَشَكَرَ اللَّهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ. وَقَالَ الشُّهَدَاءُ خَمْسَةٌ الْمَطْعُونُ وَالْمَبْطُونُ وَالْغَرِقُ وَصَاحِبُ الْهَدْمِ وَالشَّهِيدُ فِى سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ -

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি পথ চলাকালে একটি কাঁটাযুক্ত গাছের ডাল রাস্তায় পেয়ে তা সরিয়ে দিল এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিদানে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। তিনি আরোও বললেন, শহীদ পাঁচ প্রকার। যথা ১. প্লেগরোগাক্রান্ত ২. উদরাময়গ্রস্থ ৩. ডুবন্ত ৪. কোন কিছু চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং ৫. আল্লাহর পথে জীবনদানকারী শহীদ’ (ছহীহ মুসলিম হা/৫০৪৯; মুয়াত্ত্বা হা/৪৩১)।

15- عَنْ صُهَيْبٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ-

ছুহায়ব (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া এ বৈশিষ্ট্য কেউ লাভ করতে পারে না। তারা সুখের অবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-মুছীবতে আক্রান্ত হ’লে ধৈর্যধারণ করে, তখন এটাই তার জন্য কল্যাণকর হয় (ছহীহ মুসলিম হা/৭৬৯২; মিশকাত হা/৫২৯৭)।

16- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ مَنْ أُعْطِىَ عَطَاءً فَوَجَدَ فَلْيَجْزِ بِهِ فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيُثْنِ بِهِ فَمَنْ أَثْنَى بِهِ فَقَدْ شَكَرَهُ وَمَنْ كَتَمَهُ فَقَدْ كَفَرَهُ-

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কাউকে কিছু দান করা হলে সে যেন সামর্থ্য থাকলে তার প্রতিদান দেয়। যদি সেই সামর্থ্য না থাকে তবে সে যেন তার প্রশংসা করে। সে তার প্রশংসা করল তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি তা গোপন রাখল সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল (আবুদাঊদ হা/৪৮১৩, সনদ হাসান)।

17- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَدْخُلُ أَحَدٌ الْجَنَّةَ إِلاَّ أُرِىَ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ لَوْ أَسَاءَ لِيَزْدَادَ شُكْرًا وَلاَ يَدْخُلُ النَّارَ أَحَدٌ إِلاَّ أُرِىَ مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ لَوْ أَحْسَنَ لِيَكُونَ عَلَيْهِ حَسْرَةً-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে তাকে অপরাধ করলে জাহান্নামে তার ঠিকানাটা কোথায় হত তা দেখানো হবে, যেন সে অধিক অধিক শোকর আদায় করে। আর যে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে তাকে নেক কাজ করলে জান্নাতে তার স্থান কোথায় হত তা দেখানো হবে, যেন এতে তার আফসোস হয়’ (ছহীহ বুখারী হা/৬৫৬৯; মিশকাত হা/৫৫৯০)।

18- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لاَ يَشْكُرُ اللَّهَ مَنْ لاَ يَشْكُرُ النَّاسَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না’ (আবুদাঊদ হা/৪৮১১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪১৬, হাদীছ  ছহীহ)।

19- عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ كُنْ وَرِعًا تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ وَكُنْ قَنِعًا تَكُنْ أَشْكَرَ النَّاسِ وَأَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُؤْمِنًا وَأَحَسِنْ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَكَ تَكُنْ مُسْلِمًا وَأَقِلَّ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيتُ الْقَلْبَ -

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, হে আবু হুরায়রা!  আল্লাহভীরুতা অর্জন কর, তাহলে মানুষদের মধ্য থেকে সর্বাধিক ইবাদতগুযার হবে। অল্পে তুষ্ট থাক, তাহলে তুমি মানুষদের মধ্যে সর্বাধিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হবে। তুমি তোমার নিজের জন্য যা পছন্দ কর অন্য মানুষের জন্য তা-ই পছন্দ কর, তাহ’লে তুমি মু’মিন হবে। তুমি তোমার প্রতিবেশীর নিকট উত্তম প্রতিবেশী হও, তাহ’লে তুমি প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে। আর কম হাসো, কেননা অধিক হাসিতে অন্তর মরে যায়’ (ইবনু মাজাহ হা/৪২১৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫০৬)।

২০- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ إِنَّ اللَّهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا-

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দার উপর সন্তুষ্ট, যে খাদ্য গ্রহণের পর তার জন্য ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ পড়ে এবং পানীয় পান করার পরে তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে’ (ছহীহ মুসলিম হা/৭১০৮; মিশকাত হা/৪২০০)।

21- عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفٌ فَقَالَ لِفَاعِلِهِ جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا فَقَدْ أَبْلَغَ فِى الثَّنَاءِ-

উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে, ‘জাযাকাল্লাহ খায়রান’ (তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা কল্যাণকর প্রতিদান দিন) তবে সে যথার্থ প্রশংসা করল’ (তিরমিযী হা/২০৩৫; মিশকাত হা/৩০২৪)।

22- عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِى بَكْرَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَجُلاً ذُكِرَ عِنْدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ فَأَثْنَى عَلَيْهِ رَجُلٌ خَيْرًا، فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسلَّمَ وَيْحَكَ قَطَعْتَ عُنُقَ صَاحِبِكَ يَقُولُهُ مِرَارًا إِنْ كَانَ أَحَدُكُمْ مَادِحًا لاَ مَحَالَةَ فَلْيَقُلْ أَحْسِبُ كَذَا وَكَذَا إِنْ كَانَ يُرَى أَنَّهُ كَذَلِكَ وَحَسِيبُهُ اللَّهُ وَلاَ يُزَكِّى عَلَى اللَّهِ أَحَدًا-

আব্দুর রহমান ইবনু আবু বাকরাহ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর সম্মুখে এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হল। তখন এক লোক তার খুব প্রশংসা করলো। নবী (ছাঃ) বললেন, আফসোস তোমার জন্য! তুমি তো তোমার সাথীর গলা কেটে ফেললে। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। (তারপর তিনি বললেন) যদি কারো প্রশংসা করতেই হয়, তবে সে যেন বলে, আমি তার ব্যাপারে এমন এমন ধারণা পোষণ করি, যদি তার এরূপ হবার কথা অনুমান করা হয়। তার প্রকৃত হিসাব গ্রহণকারী হলেন আল্লাহ। আর আল্লাহর তুলনায় কেউ কারো পবিত্রতা বর্ণনা করবে না’ (ছহীহ বুখারী হা/৬০৬১; মিশকাত হা/৪৮২৭)।

মনীষীদের বক্তব্য থেকে :

১. মুত্বাররিফ (রহঃ) বলেন,  لأن أعافى فأشكر، أحبّ إليّ من أن أبتلى فأصبر   ‘অসুস্থ অবস্থা থেকে সেরে উঠে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা আমার কাছে অধিকতর প্রিয়তর, বিপদে পড়ে ধৈর্যধারণ করার চেয়ে’।

২. আলী ইবনু আবী ত্বালেব (রাঃ) বলেন, নে‘আমত শুকরিয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর শুকরিয়া প্রবৃদ্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত। একটি অপরটির সাথে সংযুক্ত। প্রবৃদ্ধির দ্বার কখনো বন্ধ হয় না, যতক্ষণ না বান্দার পক্ষে শুকরিয়া প্রকাশ বন্ধ না হয়।

৩. আয়েশা (রাঃ) বলেন, কোন মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান করে, অতঃপর তা কোন রকম সমস্যা ছাড়াই পেটে প্রবেশ করে এবং যখন কষ্ট দূরীভূত হয়ে যায় তখন তার উপর শুকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

৪. মুহাম্মাদ ইবনু কা‘ব আল-কুরাযী (রহঃ) বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা হল আল্লাহকে ভয় করা ও সৎকর্ম করা। আর কৃতজ্ঞ সেই যে এই কাজে জড়িত থাকে’।

৫. আবু আব্দুর রহমান আস-সুলামী (রহঃ) বলেন, ‘ছালাত, ছিয়াম এবং আল্লাহর জন্য যে সমস্ত ভাল কাজ সম্পাদন করা হয় সবই শুকরিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আর সর্বোত্তম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হল ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলা’।

সারবস্ত্ত :

1.    শুক্র বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হল ইমানের পূর্ণতা ও ইসলামের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ কেননা এটা হল তার অর্ধেক আর বাকি অর্ধেক হল ছবর।
2.   শুকরিয়া হল অনুগ্রহ ও অনুগ্রহকারীর প্রতি স্বীকৃতি।
3.   আল্লাহর নিআমত অক্ষুণ্ণ থাকা বা বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যম হল শুকরিয়া।
4.   আল্লাহ সন্তুষ্টি ও ভালবাসা প্রাপ্তির মাধ্যম।
কৃতজ্ঞ ব্যক্তি মানুষের কাছে অধিকতর প্রিয়তর। কৃতজ্ঞ ব্যক্তি চক্ষু শীতলকারী। সে অন্যের কল্যাণপ্রাপ্তিতে মুগ্ধ হয় এবং কারো নেআমতে হিংসাবোধ করে না।

From : tawheederdak

Top