মাসআলা
উলামায়ে কেরামদের প্রথম মসলক বা অভিমত
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين - والصلوة والسلام على اشرف الانبياء والمرسلين- وعلى اله واصحابه اجمعين-
মাসআলা
=====
নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানিত পিতা-মাতা সম্বন্ধে শরয়ি হুকুম হল তাঁরা উভয়ে নাজাতপ্রাপ্ত এবং তাঁরা জাহান্নামী নন। অনেক উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারটি সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন। এ মাসআলার উপর আলোচনাকারীদের পক্ষ থেকে কয়েকটি মসলক বা অভিমত প্রকাশ পেয়েছে।
এ মাসআলার উপর উলামায়ে কেরামদের প্রথম মসলক বা অভিমত
==================
প্রথম মসলক বা অভিমত হল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতা নবুয়ত প্রকাশের পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন। সুতরাং তাদের উপর কোন আযাব হবে না। যেমন আল্লাহর বাণী-
وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا
অর্থ: কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি প্রদান করি না। (সূরা বনি ইসরাইল- ১৫)
আমাদের আশআরী ইমামদের মধ্যে আকাইদ ও উসুলবিদগণ এবং শাফেয়ী মাযহাবের ফোকাহাগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, দাওয়াত পৌঁছার পূর্বে যদি কেউ মুত্যুবরণ করে তাহলে সে নাজাতপ্রাপ্ত হবে। এবং ইসলামের দাওয়াত না দেওয়া পর্যন্ত কাউকে হত্যা করা যাবে না। এমতাবস্থায় যদি তাকে হত্যা করা হয় তাহলে এর রক্তপণ ও কাফ্ফারা প্রদান করতে হবে।
ইমাম শাফেয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু সহ তাঁর অনুসারীবৃন্দ এর উপর দলিল প্রয়োগ করেছেন। বরং কোন কোন অনুসারীগণ বলেছেন এমতাবস্থায় কিসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা প্রয়োগ করতে হবে। তবে বিশুদ্ধ মত হল এক্ষেত্রে কিসাস প্রয়োগ করা যাবে না। কারণ সে প্রকৃত অর্থে মুসলমান নয়। এবং কিসাসের জন্য শর্ত হলো উভয় ব্যক্তি সমপর্যায়ের হতে হবে।
এজন্য কোন কোন ফোকাহাগণ বলেছেন- এমতাবস্থায় কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার শাস্তি হবে না। কারণ সে ফিতরাতের উপর ছিল এবং তার প থেকে কোন শত্র“তা প্রকাশ পায়নি। এবং তার কাছে এমন কোন রাসূল আগমন করেননি যাকে সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
এই মসলক বা অভিমতের মধ্যে সর্বপ্রথম যার অভিমত শুনেছি তিনি হচ্ছেন শাইখুল ইসলাম শরফুদ্দিন আল মানাওয়ী। তাকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হল ‘তিনি কি জাহান্নামী?’ এতে তিনি প্রশ্নকারীকে কঠোরভাবে ধমক দিলেন। অতঃপর প্রশ্নকারী বললেন- তাঁর ইসলাম সম্বন্ধে কোন প্রমাণ আছে কি? জবাবে তিনি বললেন- নবীজীর পিতা ফাতরাতের যুগে ইন্তেকাল করেছেন এবং নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে কোন শাস্তি নেই।
সিবত ইবনুল জুযি তাঁর কিতাব ‘মিরআতুয যামানে’ একটি জামাত থেকে এ মতটি বর্ণনা করেছেন। তিনি তার দাদার সূত্রে নবীজীর মায়ের পুনর্জীবনসংক্রান্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেন- এ ব্যাপারে দলিল হল আল্লাহতায়ালার বাণী-
وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا
অর্থ: কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি প্রদান করি না।
অতএব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতার নিকট দাওয়াত পৌঁছে নেই। সুতরাং তাদের কোন গোনাহ নেই। এ বিষয়টি উবাই তাঁর ‘শরহে মুসলিম’ কিতাবে শক্তভাবে বর্ণনা করেছেন। তার ইবারতটুকু আমি অচিরেই উল্লেখ করব।
আহলে ফাতরাত বা ফাতরাতের অধিবাসীদের সম্বন্ধে অনেকগুলো হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, কিয়ামত দিবসে তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে। আর আয়াতে কারীমাগুলোও ইঙ্গিত বহন করে যে তাদের কোন শাস্তি হবে না।
এ মতটিই গ্রহণ করেছেন তৎকালীন যুগের হাফিজুল হাদিস শাইখুল ইসলাম আবুল ফদল বিন হাজর। তিনি তাঁর কোন একটি কিতাবে উল্লেখ করেছেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার-পরিজন যারা নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে ইন্তেকাল করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটাত্মীয় হবার দরুণ তাঁর সম্মানার্থে সে পরীায় আনুগত্য প্রকাশ করবেন।
অতঃপর তাকে দেখেছি তিনি ‘ইসাবা’ গ্রন্থে বলেছেন- এ ব্যাপারে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, অধিক বৃদ্ধ ব্যক্তি, ফাতরাতের যুগে মৃত্যুবরণকারী, জন্ম থেকে অন্ধ, বোবা ও বধির ব্যক্তি, জন্ম থেকে পাগলব্যক্তি, অথবা নাবালিগ অবস্থায় পাগলব্যক্তি এ রকম অন্যান্য সকল ব্যক্তিবর্গ দলিল হিসেবে দাবি করবে যে, যদি আমি সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন হতাম অথবা যদি আমাকে স্মরণ করানো হতো তবে আমি ঈমান আনয়ন করতাম।
তখন তাদের জন্য অগ্নি প্রজ্বলিত করে বলা হবে এতে প্রবেশ কর। তখন যে ব্যক্তি আগুনে প্রবেশ করবে সে শান্তি ও শীতলতা লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রেওয়ায়েতগুলোর ইহাই ভাবার্থ।
তিনি বলেন- এ সমস্ত রেওয়ায়েতগুলো আমি স্বতন্ত্রভাবে সন্নিবেশিত করেছি। আমরা আশা করি আব্দুল মোত্তালিব ও তার পরিবারবর্গ তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন যারা আনুগত্য প্রকাশ করে মুক্তিপ্রাপ্ত হবেন। তবে আবু তালিব ব্যতিত। কারণ তিনি নবুয়ত প্রকাশ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। কিন্তু ঈমান আনয়ন করেননি। সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে তিনি জাহান্নামের লেলিহান শিখার মধ্যে থাকবেন।
কিয়ামতের দিন পরীা নেওয়ার বিষয়টি আমি প্রথম মসলকের অন্তর্ভুক্ত করেছি। যদিও বাহ্যিকভাবে ইহা স্বতন্ত্র মসলকের দাবিদার। কিন্তু আমি ইহাকে এমন সুক্ষ্ণ অর্থবিশিষ্ট পেয়েছি যা জ্ঞানবানদের নিকট অস্পষ্ট নয়।