প্রথম মসলকের স্বপক্ষে বর্ণিত আয়াতসমূহ
আয়াত- ১. 
=====
আল্লাহতায়ালার বাণী- 
وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا   

অর্থ: কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি প্রদান করি না। (সূরা বনি ইসরাইল- ১৫) 

এ আয়াত দ্বারা আহলে সুন্নাতের ইমামগণ দলিল পেশ করেন যে, নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে কোন আযাব নেই এবং এ আয়াত দ্বারা  সুন্নি ইমামগণ মু’তাজিলা ও তাদের অনুগামী সম্প্রদায়ের  মতবাদ খণ্ডন করেন। তাদের দাবি হলো আকল তথা বুদ্ধিমত্তার  উপর ফয়সালা করা হবে।   

ইবনে জারির এবং ইবনে আবি হাতিম স্ব-স্ব তাফসির গ্রন্থে  উক্ত  আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 
قال ان الله ليس بمعذب احدا حتى يسبق اليه من الله خبر او تأتيه من الله بينة-   

অর্থ: তিনি বলেন- আল্লাহতায়ালা ততণ পর্যন্ত কাউকে শাস্তি প্রদান করেন না যতণ পর্যন্ত তার নিকট আল্লাহর পক্ষে থেকে কোন সংবাদ বা কোন প্রমাণ না পৌঁছবে।   

আয়াত- ২. 
=====
আল্লাহর বাণী-  
ذلك ان لم يكن ربك مهلك القرى بظلم واهلها غفلون-   

অর্থ: এটা এজন্য যে আপনার  প্রতিপালক কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে জুলুমের কারণে  ধ্বংস করেন না এমতাবস্থায় যে তথাকার অধিবাসীরা অজ্ঞ থাকে। (আনআম- ১৩১)   

ইমাম যারকাশী এ আয়াতটিকে তাঁর شرح جمع الجوامع কিতাবে ঐ মূলনীতির দলিল হিসেবে পেশ করেছেন যে, আকলী তথা বুদ্ধিভিত্তিক দলিল দ্বারা নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব হয় না। বরং ছেমায়ী বর্ণিত দলিল প্রয়োজন।   

আয়াত- ৩. 
=====
আল্লাহর বাণী- 
ولو لا ان تصيبهم مصيبة بما قدمت ايديهم فيقولوا ربنا لو لا ارسلت الينا رسولا فنتبع  ايتك ونكون  من المؤمنين-   

অর্থ: আর এজন্য যে, তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের কোন বিপদ হলে তারা বলতো  হে  আমাদের পালনকর্তা আপনি আমাদের কাছে কোন রাসূল প্রেরণ করলেন না  কেন? করলে আমরা   তোমার আয়াতসমূহের অনুসরণ করতাম এবং আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়ে যেতাম। (সূরা কাসাস- ৪৭)   

উক্ত আয়াতটিও  ইমাম  যারকাশী রেওয়ায়েত করেছেন।  তাছাড়া   ইবনে আবি হাতিম স্বীয় তাফসিরগ্রন্থে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হাসান সনদে আবু সাঈদ খুদরী  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الها لك فى الفترة يقول رب لم يأتنى كتاب ولا رسول- ثم قرء هذه الاية-   

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম বলেছেন-  ফাতরাতের যুগে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি বলবে-  হে প্রতিপালক আমার কাছে কোন কিতাব কিংবা কোন রাসূল আগমন করেননি। অতঃপর নবীজী উক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।   

আয়াত- ৪. 
=====
আল্লাহর বাণী- 
ولو انا اهلكنهم بعذاب من قبله لقالوا ربنا لولا ارسلت الينا رسولا فنتبع ايتك من قبل ان نذل ونخزى-   

অর্থ: যদি আমি এদেরকে ইতোপূর্বে কোন শাস্তি দ্বারা ধ্বংস  করতাম, তবে  এরা বলত হে আমাদের পালনকর্তা আপনি আমাদের কাছে  একজন রাসূল প্রেরণ করলেন না কেন? তাহলেতো আমরা অপমানিত ও হেয় হবার  পূর্বেই আপনার নির্দেশসমূহ মেনে চলতাম। (ত্ব-হা- ১৩৪)   

ইবনে আবি হাতিম স্বীয় তাফসির গ্রন্থে এ আয়াতের অধীনে আতিয়্যাহ আল উফি থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال- الهالك فى الفترة يقول رب لم يأتنى كتاب ولا رسول   

অর্থ: তিনি বলেন ফাতরাতের যুগে নিহত ব্যক্তি বলবে হে রব আমার কাছে কোন কিতাব কিংবা কোন রাসূল আগমন করেননি। অতঃপর তিনি  উক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।   

আয়াত- ৫. 
=====
আল্লাহর বাণী- 
وما كان ربك  مهلك القرى حتى يبعث فى امها رسولا يتلوا عليهم ايتنا- 

অর্থ: আপনার পালনকর্তা জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্থলে  কোন রাসূল প্রেরণ না করেন। যিনি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন। (কাসাস- ৫৯)   

ইবনে আবি হাতিম উক্ত আয়াতের  ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু ও  কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন- 

قال لم يهلك الله ملة حتى يبعث اليهم محمدا صلى الله عليه وسلم فلما كذبوا وظلموا بذالك هلكوا-   

অর্থ: তারা উভয়ে  বলেন- আল্লাহতায়ালা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ না করা পর্যন্ত তার জাতিকে ধ্বংস করেননি। অতঃপর যখন তারা নবীকে মিথ্যা  প্রতিপন্ন করল এবং তাঁর উপর যুলুম করল তখন তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো।   

আয়াত- ৬. 
=====
আল্লাহর বাণী- 
وهذا  كتاب  انزلنه مبرك فاتبعوه واتقوا لعلكم ترحمون- ان تقولوا انما انزل الكتاب على طائفتين من قبلنا- وان كنا عن دراستهم لغفلين-   

অর্থ: ইহা এমন একটি গ্রন্থ যা আমি অবতীর্ণ করেছি খুব বরকতপূর্ণ। অতএব তোমরা এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর যাতে তোমরা করুণা প্রাপ্ত হও। এ জন্য যে কখনো তোমরা বলতে শুরু কর, গ্রন্থতো কেবল আমাদের পূর্ববর্তী দু’সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছে এবং আমরা সেগুলোর পাঠ ও পঠন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। (আনআম- ১৫৫-১৫৬)   

আয়াত- ৭. 
=====
আল্লাহর বাণী- 
وما اهلكنا من قرية الا لها منذرون- ذكرى وما كنا ظلمين- 

অর্থ: আমি কোন জনপদ ধ্বংস করিনি, কিন্তু   এমতাবস্থায় যে, তার সতর্ককারী ছিল। স্মরণ করানোর জন্য এবং আমার কাজ অন্যায় আচরণ নয়। (সূরা- শুআরা, ২০৮-২০৯)   

হযরত আব্দ বিন হুমাইদ, হযরত ইবনুল মুনজির এবং ইবনে আবি হাতিম প্রত্যেকে তাদের  তাফসিরগ্রন্থে হযরত কাতাদাহ  রাদিয়াল্লাহু  আনহু থেকে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেছেন- 

ما اهلك الله من قرية الا من بعد الحجة والبينة والعذر حتى يرسل الرسل وينزل الكتب تذكرة لهم وموعظة  وحجة لله ذكرى وما كنا ظالمين-   

অর্থ: আল্লাহতায়ালা ততণ পর্যন্ত কোন জনপদকে ধ্বংস করেন না যতণ পর্যন্ত তাদের নিকট কোন রাসূল সুস্পষ্ট প্রমাণ ও কিতাবাদীসহ আগমন করে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন না করেন। যেমন  আল্লাহর  বাণী- স্মরণ করানোর জন্য এবং আমার কাজ অন্যায় আচরণ নয়।   

আয়াত- ৮. 
=====
আল্লাহর বাণী- 
وهم يصطرخون فيها- ربنا اخرجنا نعمل صالحا غير الذى كنا نعمل- او لم نعمركم ما يتذكر فيه من تذكر وجاء كم النذير-   

অর্থ: সেখানে তারা আর্ত চিৎকার করে বলবেন হে  আমার রব আমাদেরকে বের করুন, আমরা সৎকাজ করব। পূর্বে যা করতাম তা করব না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদের এতটা বয়স দেইনি যাতে যা চিন্তা করার বিষয় চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। (ফাতির- ৩৭)   

মুফাসসিরীনে কিরামগণ বলেন- উক্ত আয়াতে নাযির বা সতর্ককারী বলতে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে।

Top