▪ কিতাবঃ নূরে মুজাচ্ছাম (ﷺ)
▪ লেখক, সংকলকঃ মুফতি মােহাম্মদ আলাউদ্দিন জেহাদী
▪ Text Ready : Masum Billah Sunny
♣ আল্লামা মজিদুদ্দিন আবু তাহের মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব ফিরুজাবাদী (রঃ) (ওফাত ৮১৭ হিজরী} রইছুল মােফাচ্ছেরীন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর অভিমত উল্লেখ করেন,
-“আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর’ তিনি রাসূল অর্থাৎ মুহাম্মদ (ﷺ) আর সু-স্পষ্ট কিতাব' হল হালাল ও হারাম।”
★ (তানভিরুল মিকবাছ মিন তাফছিরে ইবনে আব্বাস রা:, ১ম খন্ড, ৯০ পৃঃ)।
♣ হানাফী মাজহাবের নির্ভরযােগ্য আরেকটি কিতাব হচ্ছে ‘তাফছিরে রুহুল মাআনী’ সেই কিতাবে আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী (রঃ) বলেন,
-“নিশ্চয় আল্লাহর তরফ থেকে তােমাদের কাছে এসেছে নূর’: তিনি সবচেয়ে বড় নুর এবং তিনি সকল নূরের নূর, তিনি নবী মুখতার ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম। এই অভিমত হল হজরত কাতাদা (রঃ) এর, এবং হজরত জুযায (রঃ) সহমত পােষণ করেছেন।”
★ (তাফছিরে রুহুল মাআনী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৪ পৃঃ)।
♣ বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হাফিজুল হাদিস আল্লামা হাফিজ ইবনে কাছির (রঃ) (ওফাত ৭৭৪ হিজরী) তদীয় কিভাবে বলেন,
-“নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) সবকিছুর মধ্যে সু-প্রকাশিত, সবচেয়ে বড় নূর ও অধিক সম্মানিত নূর।”
★ (ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১ম খন্ড, ৩২৪ পৃ) সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর নবী () জিব্রাইল, মিকাঈল, ইস্রাফিল (আঃ) ও সকল নূরের ফেরেস্থার চেয়েও বড় ও শ্রেষ্ঠ নূর। সুতরাং প্রিয় নবী হজরত
♣ এ বিষয়ে আরাে দুটি নির্ভরযােগ্য কিতাবে আছে,
-“অবশ্যই আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে নূর: এই নূর দ্বারা অর্থ হচ্ছে হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) এবং কিতাব দ্বারা অর্থ হচ্ছে আল-কুরআন।”
★ তাফছিরে আবু সাউদ, ২য় ভ, ৪৪৭ পৃঃ;
★ তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খভ, ৪২৯ পৃঃ
★ তাফছিরে আবু সাউদ, ২য় ভ, ৪৪৭ পৃঃ;
★ তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খভ, ৪২৯ পৃঃ
♣ এ সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ ও হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দির মােজদ্দেদ, আল্লামা ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) {ওফাত ৬০৬ হি.} বলেন,
-“অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর এসেছেন এবং সুস্পষ্ট কিতাব এই ব্যাপারে একাধিক বক্তব্য রয়েছে।
প্রথমতঃ নিশ্চয় নূর দ্বারা অর্থ হচ্ছে হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) আর কিতাব দ্বারা অর্থ হচ্ছে কোরআন।
দ্বিতীয়ত: নূর দ্বারা অর্থ হচ্ছে ইসলাম এবং কিতাব দ্বারা কুরআন।
তৃতীয়ত: নূর ও কিতাব একই, কিন্তু ইহা দুর্বল অভিমত, কারণ মাতুফ এবং মা'তুফ আলায়হি ভিন্ন জাত হওয়া আবশ্যক।”
★ ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (রহঃ) : তাফছিরে কবীর, ১১তম খন্ড, ১৬৩ পৃঃ
♣ এ সম্পর্কে আল্লামা আলাউদ্দিন আলী ইবনে ইব্রাহিম খাজেন (রঃ) বলেন,
“অবশ্যই আল্লাহর তরফ থেকে তােমাদের কাছে এসেছে নূর এর অর্থ হচ্ছে, হজরত মুহাম্মদ (ﷺ), কেননা আল্লাহ তাঁর নামও রেখেছেন নূর।”
★ তাফছিরে খাজেন শরীফ, ২য় খন্ড, ২৪ পৃঃ)।
♣ আল্লামা আহমদ ইবনে মুস্তফা মারাগী (রঃ) (ওফাত ১৩৭১ হি.) বলেন,
-“অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর এবং সু-স্পষ্ট কিতাব এখানে নূর হচ্ছে নবী করিম (ﷺ)।”
★ (তাফছিরে মারাগী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৮০ পৃঃ)।
♣ এ সম্পর্কে ইমাম কুরতবী (রঃ) (ওফাত ৬৭১ হিজরী} তদীয় গ্রন্থে বলেন,
-“কেউ কেউ বলেছেন: হজরত জুযায (রহঃ) হতে বর্ণিত, নূর হচ্ছে মুহাম্মদ (ﷺ)।”
★ (তাফছিরে কুরতবী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১০৬ পৃঃ)।
♣ ইমাম কুরতবী (রহঃ) অন্যত্র আরাে বলেছেন,
-“আল্লাহ তার হাবীব (ﷺ) এর নাম রেখেছেন নূর। যেমনঃ আল্লাহ তা'লা বলেন: আল্লাহর তরফ থেকে তােমাদের কাছে এসেছে নূর ও সুস্পষ্ট কিতাব।”
★ (তাফছিরে কুরতবী, সূরা নূর এর ৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়)।
♣ তাছাড়া আল্লামা আলুছী বাগদাদী (রহ) তাফছির দ্বারা প্রমাণ হয়, আল্লাহর নবী (ﷺ) কোন সাধারণ নূর নয়, বরং তিনি সকল নূরের নূর।
আয়াত নং ২
-“আল্লাহ আসমান ও জমীনের নূর দাতা, তাঁর নূরের উপমা হল চেরাগের মত।”
(সূরা নূর ৩৫ নং আয়াত)। ........।
তাফছির কারকগণ এর ব্যাখ্যাঃ
♣ আল্লামা আবুল হাছান মাকাতিল ইবনে সুলাইমান ইবনে বাশির বলখী (রহঃ) (ওফাত ১৫০ হি.) বলেন,
“তার নূরের উদাহরণ হল: মুহাম্মদ (ﷺ) এর উদাহরন।”
★ (তাফছিরে মাকাতিল ইবনে সুলাইমান, ৩য় খন্ড, ১৯৯ পৃঃ)
♣ ইমাম আবু জাফর তাবারী (রহঃ) ও
♣ আল্লামা আবু মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে মুহাম্মদ আর-রাজী ইবনে আবী হাতেম (রহঃ) (ওফাত ৩২৭ হিজরী} উল্লেখ করেন,
"হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কা'ব আল-আহবার (রাঃ) এর কাছে আসলেন ও বললেন, 'আল্লাহ আসমান জমীনের দাতা এবং তার নূরের উদারহণ সম্পর্কে আমাকে বর্ণনা করুন। জবাব তিনি ব্যখ্যা করলেন,
তার নূরের উদাহরণ হল মুহাম্মদ (ﷺ) এর উদাহরণ যেমন চেরাগ (বা আলো)।
★ ইবনে আবী হাতেম, ৮ম খন্ড, ২৫৯৬ পৃঃ হাদিস নং ১৪৫৭১
★'তাফছিরে তাবারী, ১৭তম খ, ২১৭ পৃঃ
♣ আল্লামা আবু মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে মুহাম্মদ আল-রাজী ইবনে আবী হাতেম ওফাত ৩২৭ হি) আরো উল্লেখ করেন,
“হজরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেন: তার নূরের উদারণ হল মুহাম্মদ (ﷺ) এর উদাহরণ। এমনটি হজরত কা'ব আহবার (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে।"
★(তাফছিরে ইবনে আবী হাতেম, হাদিস নং ১৪৫৫৭)
♣ এ সম্পর্কে আল্লামা ইমাম বাগভী (রহঃ) ও
♣ ছাহেবে খাজেন (রহঃ) বলেন,
-“হজরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রহঃ) ও দ্বাহ্হাক (রহঃ) বলেন: এই নূর হল মুহাম্মদ (ﷺ)।”
★ তাফছিরে বাগভী, ৪র্থ খন্ড, ১১৫ পৃঃ;
★ তাফছিরে খাজেন, ৩য় খন্ড, ২৯৭ পৃঃ
★ তাফছিরে রুহুল মাআনী, ১৮তম খন্ড, ৪৮২ পৃঃ
♣ “হজরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (রহঃ) হতে বর্ণিত,
(মাছালু রিহী) সম্পর্কে তিনি বলেন নূর হল মুহাম্মদ (ﷺ)।”
★(তাফছিরে তাবারী, ১৮তম খন্ড, ১৪৫ পৃঃ)।
♣ এ বিষয়ে আল্লামা মাহমুদ আলুছী বাগদাদী হানাফী (রহঃ) উল্লেখ করেন,
“তার নূর দ্বারা মুরাদ বা অর্থ হল আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মদ (ﷺ)। আর অবশ্যই তােমাদের কাছে নূর এসেছে, যেমনটি আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেনঃ "ক্বাদ জা আকুম মিনাল্লাহি নূরু ওয়া কিতাবুম মুবিন”। কেউ কেউ বলেছেন: এখানে জমীর নবী পাক (ﷺ) দিকে এসেছে, এরূপ একদল বর্ণনা করেছেন,
→ হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ),
→ উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) ও
→ আবু হাইয়ান হযরত ইবনে জুবাইর (রাঃ)
থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন।” ★ (তাফহিরে রুহুল মাআনী, ১৮তম খন্ড, ৪৮২পৃঃ)"
উল্লেখিত তাফছির সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আল্লাহর নূর তথা নূরের সৃষ্টি। স্বয়ং আল্লাহ পাক প্রিয় নবীজি (ﷺ) কে নূর বলে আখ্যায়িত করেছেন। পবিত্র কোরআনের কোথাও রাসূল (ﷺ) কে স্পষ্টভাবে মাটি বলে আখ্যায়িত করেননি।
হযরত আদম (আঃ)'র সৃষ্টির পূর্বেই তিনি নবী ছিলেন
পবিত্র হাদিস শরীফ থেকে জানা যায়, হজরত রাসূলে করিম (ﷺ) আল্লাহর নূরে সৃষ্টি। এ ব্যাপারে একাধিক ছহীহ-হাছান রেওয়াত রয়েছে। কোন কোন জায়গায় ‘দুরী' এবং কোন কোন জায়গায় কেনায়া' হিসেবে দলিল গুলাে উল্লেখ আছে। যেমন:
♣ একটি ছহীহু রেওয়াতে বলা হয়েছে,
“সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ”।
তাই রাসূলে পাক (ﷺ) তখন থেকেই নবী ছিলেন যখন আদি পিতা আদম (আঃ) এর সৃষ্টিই হয়নি।
নিচে এ বিষয়ে রাসূল (ﷺ) এর হাদিস সমূহ উল্লেখ করছি,
সূত্র ১ :
♣ “হজরত মাইছারা আল-ফাজর (রাঃ) বলেন,
আমি রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনি কখন থেকে নবী ছিলেন? তিনি বললেন: আদম (আঃ) যখন রুহু ও দেহের মাঝামাঝি ছিলেন তখনাে আমি নবী ছিলাম।”
Reference :
★ ইমাম আহমদ (রহঃ) : মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২০৫৯৬
★ ইমাম তাবারানী (রহঃ) : মু'জামুল কবীর, হাদিস নং ৮৩৩;
★ ইমাম বায়হাকী (রহঃ) : দালায়েলুন্নবুওয়াত : ২ খন্ড, ৯০ প
★ ইমাম আবু নুয়াইম (রহঃ) : হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৯ম খন্ড, ৫৩ পৃঃ
★ ইমাম আবু নুয়াইম (রহঃ) : দালায়েলুন্নবুয়াত-এ, ৫৮ পূ;
★ ইমাম তাহাবী (রহঃ) : শরহে মুশকিলুল আহার, ৫৯৭৬ নং হাদিস;
★ ছহীহ্ সিরাতে নববিয়া, ১ম খন্ড, ৫৪ পৃঃ
★ ইমাম হাকিম (রহঃ) : মুস্তাদরাক আল-হাকেম, ৪র্থ খন্ড, ১৫৭৫ পৃ: হাদিস নং ৪২০৯;
★ ইমাম বাগভী (রহঃ) : শরহে সুন্নাহ, ১ম খন্ড, ২০৭ পৃ;
★ ইবনে কাছির (রহঃ) : আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ২য় খন্ড, ৬২৬ পৃঃ
★ ইমাম আবু বকর ইবনে যিলাল (রহঃ) : আস-সুন্নাহ, হাদিস নং ২০০;
★ ইমাম ছিয়তী (রহঃ) : খাছায়েছুল কোবরা, ১ম খন্ড, ২১ পৃঃ;
★ ইমাম কুস্তালানী (রহঃ) : মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৫৮ পৃঃ;
★ ইমাম শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিদে দেহলভী (রহঃ) : মাদারেজুন্নবুয়াত, ১ম খন্ড, পৃঃ
সূত্র ২ :
♣ হাদিসটি হজরত মুয়াজ (রাঃ)ও বর্ণনা করেছেন।
এই হাদিস উল্লেখ করে দালায়েলুন্নবুয়াত কিতাবের হাশিয়ায় লিখা হয়েছে:
-“এই হাদিসের সনদ ছহীহঃ ইহা বর্ণনা করেছেনঃ
→ ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে,
→ ইবনে আবী আছেম (রঃ) তার ‘আস সুন্নাহ' কিতাবে এবং
→ ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ (রঃ) তার মুসনাদে।”
হাদিসের সনদ মান পর্যালোচনাঃ
♣ ইমাম হাকেম নিছাপুরী (রঃ) ও
♣ ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী (রঃ) হাদিসটিকে
ছহীহ্ বলেছেন।
♣ এই হাদিসের সনদে -
→ (আব্দুল্লাহ ইবনে শাকিক)' ও
→ (বুদাইল ইবনে মাইছারা)
উভয় ছহীহ মুসলীমের রাবী।
→ (ইব্রাহিম ইবনে তাহমান)' ও
→ (মুহাম্মদ ইবনে ছিনান)
উভয়ে বুখারী-মুসলীমের রাবী।
→ (উছমান ইবনে সাঈদ দারেমী),
→ (আবু নাছ ফকিহ) ও
→ (আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সালামা) সকলেই বিশ্বস্ত হাদিসের ইমাম।
অতএব, হাদিসটি সম্পূর্ণ ছহীহ।