নামাযে নিমস্বরে আমীন বলা সুন্নত

আমীন সম্পর্কেও কিছু লোক বাড়াবাড়ি করে। তারা বলে নামাযে আমীন জোরে বলতে হবে। আস্তে বলা সুন্নতের পরিপন্থী। তাদের একথা সঠিক নয়। হাদীস শরীফ, অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী’র আমল দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, আমীন আস্তে বলাই সুন্নত।

নিমস্বরে আমীন বলা অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী র. (মৃ.৩১১ হি.) তাঁর তাহযীবুল আছার গ্রন্থে বলেছেন,

وروي ذلك عن ابن مسعود وروي عن النخعي والشعبى وابراهيم التيمى كانوا يخفون بآمين والصواب ان الخبر بالجهر بها والمخافتة صحيحان وعمل بكل من فعليه جماعة من العلماء وان كنت مختارا خفض الصوت بها إذكان اكثر الصحابة والتابعين على ذلك . (شرح البخاري لابن بطال المتوفى ৪৪৯ه باب جهر المأموم بالتأمين، والجوهر النقى

অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা., ইবরাহীম নাখায়ী র. শা’বী র. ও ইবরাহীম তায়মী র. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা আমীন আস্তে বলতেন। সঠিক কথা হলো আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলার উভয় হাদীসই সহীহ। এবং দুটি পন্থা অনুযায়ী এক এক জামাত আলেম আমলও করেছেন। যদিও আমি আস্তে আমীন বলাই অবলম্বন করি, কেননা অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী এ অনুযায়ীই আমল করতেন। (দ্রঃ শারহুল বুখারী লিইবনে বাত্তাল,মৃত্যু ৪৪৯হিজরী; আল জাওহারুন নাকী, ২খ, ৫৮পৃ,)

ইবনে জারীর র. এর এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হলো যে, অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল ছিল আমীন আস্তে বলা। তিনি নিজেও একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস হওয়া সত্ত্বেও আস্তে আমীন বলাকেই অবলম্বন করেছেন।

মদীনাবাসীর আমল:

মদীনা শরীফে ইমাম মালেক র. এর নিবাস ছিল। তিনিও ফতোয়া দিয়েছেন,

ويخفي من خلف الإمام آمين. المدونة-فى الركوع والسجود

অর্থাৎ মুকতাদী আস্তে আমীন বলবে। (আল-মুদাওয়ানা, ১খ.৭১ পৃ.)

মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা আহমদ আদ দরদের র. লিখেছেন,

وندب الاسرار به اى بالتأمين لكل من طلب منه.

অর্থাৎ ‘মুকতাদীর জন্য আস্তে আমীন বলাই মুস্তাহাব।’

কুফাবাসীর আমল:

এমনিভাবে কূফায় পনের শত সাহাবী বসবাস করতেন। এই কূফার সাধারণ আমল ছিল আমীন আস্তে বলা। ইবনে মাসউদ, তাঁর শিষ্যবর্গ, ইবরাহীম নাখায়ী, ইবরাহীম তায়মী ও শা‘বী প্রমুখ কূফার বড় বড় ফকীহ ও মুহাদ্দিস সকলে আমীন আস্তে বলার পক্ষপাতি ছিলেন।

মজার ব্যাপার হলো ওয়াইল রা. এর মাধ্যমে বর্ণিত জোরে আমীন বলার হাদীসটি সুফিয়ান ছাওরী রা. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সুফিয়ান ছাওরী ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীস অর্থাৎ হাদীস সম্রাট। অথচ তিনি নিজেও ছিলেন আস্তে আমীন বলার পক্ষে।

বোঝার সুবিধার্থে এখানে আমরা আলোচনাকে দুটি ভাগে ভাগ করব। এক. ইমামের আস্তে আমীন বলা। দুই. মুকতাদীর আস্তে আমীন বলা।

Top