পবিত্র হাদিসভিত্তিক দলিল
নিম্নে সে সমস্ত হাদিস উল্লেখ করা হল যা প্রমাণ করে যে,  কিয়ামতের  দিবসে ফাতরাতের যুগের  লোকদেরকে পরীক্ষা করা হবে। তখন যারা আনুগত্য প্রকাশ করবে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর যারা নাফরমানী করবে তাদেরকে  জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে।   

হাদিস- ১. 
=====
ইমাম আহমদ বিন  হাম্বল রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং ইসহাক বিন রাহওয়ায় স্বীয় মসনদ গ্রন্থে এবং ইমাম বায়হাকী  ‘কিতাবুল ইতেকাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বায়হাকী ইহাকে সহীহ বলেছেন- 

عن الاسود بن سريع- ان النبى صلى الله عليه وسلم قال اربعة يمتحنون يوم القيامة- رجل اصم لايسمع شيأ- ورجل احمق ورجل هرم ورجل مات فى فترة فاما الاصم فيقول رب لقد جاء الاسلام وما اسمع شيأ- واما الاحمق فيقول رب لقد جاء الاسلام والصبيان يحذفونى بالبعر- واما الهرم فيقول رب لقد جاء الاسلام وما اعقل شيأ- واما الذى مات فى الفترة فيقول رب ما اتانى لك رسول فيأخذ مواثيقهم ليطيعنه فيرسل اليهم ان ادخلوا النار فمن دخلها  كانت عليه بردا وسلاما ومن لم يدخلها يسحب اليها-   

অর্থ: আসওয়াদ বিন সারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত  নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কিয়ামদের দিন চার প্রকার লোকের কাছ থেকে পরীা নেয়া  হবে। ১. বধির ব্যক্তি, যে কিছুই শুনতে পায় না। ২. বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি ব্যক্তি। ৩. অতিশয় বৃদ্ধ ব্যক্তি। ৪. এবং ফাতরাতের যুগে নিহত ব্যক্তি। 

অতএব বধির ব্যক্তি বলবে হে প্রভু, ইসলাম এসেছিল কিন্তু আমি কিছুই শুনতে পাইনি। বোকা ব্যক্তি বলবে, প্রভূ  ইসলাম এসেছিল কিন্তু আমি অনুধাবন করতে পারিনি। অতিশয় বৃদ্ধ ব্যক্তি বলবে হে প্রভূ এব্যাপারে আমার কোন জ্ঞান ছিল না।  ফাতরাতের  যুগে মৃত্যুবরণকারী বলবে, হে প্রভু আমার কাছে তোমার কোন রাসূল আগমন করেননি। অতঃপর তাদেরকে পরীা করা হবে এবং বলা হবে জাহান্নামে প্রবেশ কর। তখন যে ব্যক্তি আগুনে প্রবেশ করবে তার প্রতি শীতল শান্তি বর্ষিত হবে। আর যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে  না তাকে জাহান্নামে নিপে করা হবে।   

হাদিস-২. 
=====
ইমাম আহমদ, ইসহাক বিন রাহ্ওয়ায় তাদের মসনাদ গ্রন্থে,  ইবনে মারদুভীয়াহ স্বীয় তাফসির গ্রন্থে এবং ইমাম বায়হাকী ‘কিতাবুল ইতেক্বাদ’ গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

ان النبى صلى الله عليه وسلم قال اربعة يمتحنون   

অর্থ: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- চার শ্রেণির লোকদেরকে পরীা করা হবে। হাদিসের বাকী অংশ পূর্বে বর্ণিত আসওয়াদ বিন সারি কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ।   

হাদিস- ৩. 
=====
ইমাম বাযযার স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول  الله صلى الله عليه وسلم يؤتى بالهالك فى الفترة والمعتوه والمولود- فيقول الها لك فى الفترة لم يأتنى كتاب ولا رسول ويقول المعتوه اى رب لم تجعل لى عقلا اعقل به خيرا ولا شرا ويقول  المولود لم ادرك العمل- قال فيرفع  لهم نار فيقال لهم ردوها او قال ادخلوها فيدخلها من كان فى علم الله سعيدا لو ادرك العمل- ويمسك عنها من كان فى علم الله شقيا لو ادرك العمل- فيقول تبارك وتعالى اياى عصيتم فكيف برسلى بالغيب-   

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ফাতরাতের যুগে মৃত্যুপ্রাপ্ত, মস্তিষ্ক বিকৃত এবং   শিশুকালে নিহত ব্যক্তিদেরকে উপস্থাপন করা হবে। ফাতরাতের যুগে নিহত ব্যক্তি  বলবে আমার কাছে কোন কিতাব বা কোন রাসূল আগমন করেননি। মস্তিষ্ক বিকৃত ব্যক্তি বলবে হে প্রভু, আমার ভাল মন্দ বুঝার মত  কোন জ্ঞান বুদ্ধি ছিল না। শিশুকালে মৃত্যুপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলবে আমি আমল করার মত অবকাশ পাইনি।   

অতঃপর তাদের জন্য আগুন প্রস্তুত করা হবে। এবং বলা হবে এতে প্রবেশ কর। তখন আল্লাহর ইলমে যারা সৌভাগ্যশীল অর্থাৎ অবকাশ পেলে আমল করত তারা আগুনে প্রবেশ করবে। কিন্তু আল্লাহর  ইলমে যারা দূর্ভাগা সময় পেলেও আমল করত না, তারা প্রবেশ করবে না। তখন আল্লাহতায়লা বলবেন-  তোমরা সরাসরি আমার হুকুম অমান্য করেছ। অতএব আমাকে না দেখে কিভাবে আমার রাসূলের আনুগত্য করবে?   

উল্লেখিত  হাদিসের সনদে ‘আতিয়্য আল উফি’  বর্ণনাকারী রয়েছেন। তার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। তবে ইমাম তিরমিজি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।   

এ হাদিসের পে আরো অনেক হাদিস রয়েছে যা  এ হাদিসটিকে হাসান এবং শক্তিশালী হবার প্রমাণ বহন করে।   

হাদিস- ৪. 
=====
ইমাম বাযযার ও আবু ইয়ালা তাদের মুসনাদ  গ্রন্থে হযরত আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে  বর্ণনা করেছেন- 

قال رسول الله صلى الله  عليه وسلم يؤتى باربعة يوم القيامة- بالمولود والمعتوه ومن مات فى الفترة وبالشيخ الفانى كلهم يتكلم  بحجته- فيقول الله تعالى لعنق من جهنم ابرزى فيقول لهم انى كنت ابعث الى عبادى رسلا من انفسهم وانى رسول نفسى اليكم ادخلوا هذه- فيقول من كتب الله عليه الشفاء- يا رب اتدخلناها ومنها كنا نفرق ومن كتب له السعادة فيمضى فيقتحم فيها مسرعا- فيقول الله قد  عصيتمونى فانتم لرسلى اشد تكذيبا ومعصية فيدخل هؤلاء الجنة وهؤلاء النار-   

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- কিয়ামতের দিন চার  শ্রেণির লোকদেরকে আনয়ন করা হবে। ১. নাবালেগ সন্তান।  ২. মস্তিষ্ক বিকৃত ব্যক্তি। ৩. ফাতরাতের সময় মৃত্যুবরণকারী ও ৪. অতিশয়  বৃদ্ধ ব্যক্তি।  তখন আল্লাহতায়ালা জাহান্নামকে আদেশ করবেন উত্তপ্ত হবার জন্য।  অতঃপর বলবেন আমি আমার বান্দাদের প্রতি তাদের মধ্যে থেকে রাসূল প্রেরণ  করেছি। আমি  স্বয়ং তোমাদের প্রতি রাসুল হয়ে হুকুম  দিচ্ছি জাহান্নামে প্রবেশ কর। তখন যারা দুর্ভাগা তারা বলবে- হে প্রভু আপনি কি আমাদেরকে আগুনে প্রবেশ করাবেন?  আমরা তো আগুনকে ভয় করি। আর যাদের নসিবে কল্যাণ নিহিত রয়েছে সে আগুনের দিকে দ্রুত গমন করবে। তখন  আল্লাহ  বলবেন- তোমরা আমার অবাধ্যতা করেছ অতএব তোমরা  আমার রাসূলের অধিক অবাধ্যতা করতে। তখন তাদেরকে জাহান্নামে এবং এদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।   

হাদিস- ৫. 
=====
আব্দুর রাজ্জাক ইবনে জারির ইবনুল মুনজির এবং  ইবনে আবি হাতিম প্রত্যেকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 

قال اذا كان يوم القيامة جمع الله اهل الفترة والمعتوه والاصم والابكم والشيوخ الذين لم يدركوا الاسلام ثم ارسل اليهم رسولا ان ادخلوا النار- فيقولون كيف ولم تأتنا رسل؟ قال وايم الله لو دخلوها لكانت عليهم بردا وسلاما ثم يرسل اليهم فيطيعه من كان يريد ان يطيعه- قال ابوهريرة  اقرؤوا ان شئتم (وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا)   

অর্থ: আবু  হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু  বলেন- কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা  ফাতরাতের যুগের অধিবাসী,  পাগল, বধির, বোবা ও অতিশয় বৃদ্ধ যে ইসলাম সম্বন্ধে কিছুই অনুধাবন করতে  পারেনি, তাদের প্রত্যেককে একত্রিত করবেন। অতঃপর তাদের প্রতি একজন ফেরেশতা পাঠাবেন   তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর জন্য। তখন তারা বলবে এটা  কিভাবে সম্ভব? অথচ আমাদের কাছে কোন রাসূল আসেননি। আবু  হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আল্লাহর কসম যদি  তারা তখন জাহান্নামে প্রবেশ করত তাহলে তাদের প্রতি শান্তি ও শীতলতা অবতীর্ণ হত। অতঃপর তাদের কাছে আবার পাঠনো হবে। তখন যারা আনুগত্যকারী তারা আনুগত্য প্রকাশ করবে। অতঃপর আবু হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- যদি তোমরা চাও তবে এ আয়াতটি পড়ে নাও। وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا অর্থ: কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি প্রদান  করি না। (বনি ইসরাইল-১৫) 

এ হাদিসটির সনদ বুখারী মুসলিমের  শর্তানুযায়ী সহিহ।   

হাদিস- ৬. 
=====
ইমাম বাযযার এবং ইমাম হাকিম স্বীয় মুস্তাদরাক গ্রন্থে হযরত ছাওবান  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে  বর্ণনা করেছেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- কিয়ামতের দিন জাহিলিয়াত যুগের লোকগণ তাদের গোনাহসমূহ পিঠে নিয়ে আগমন করবে। তখন আল্লাহতায়ালা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন। জবাবে তারা বলবে হে আমাদের রব আমাদের কাছে কোন রাসূল কিংবা আপনার কোন বিধান আগমন করেনি। যদি আমাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করতেন  তাহলে আমরা আপনার অনুগত বান্দা হতাম।   

অতঃপর আল্লাহতায়ালা বলবেন- তোমরা কি জান যে, আমার নির্দেশ অবশ্যই পালনীয়? তারা বলবে হ্যাঁ। 

অতঃপর  তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে জাহান্নামে প্রবেশ করার জন্য। তখন তারা জাহান্নামের  দিকে গমন করবে। যখন জাহান্নামের নিকটবর্তী হবে তখন তারা এর ভয়াবহ গর্জন ও হুংকার শুনতে পাবে। তখন সবাই তাদের প্রভুর কাছে ফিরে আসবে এবং বলবে হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করুন। 

তখন  তিনি বলবেন- তোমরা কি জাননা যে আমার নির্দেশ অবশ্যই  পালনীয়? অতঃপর এ ব্যাপারে তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে। আল্লাহ বলবেন- যাও জাহান্নামে প্রবেশ কর। তখন  সবাই সেদিকে গমন করবে।  যখন তারা জাহান্নাম দর্শন করবে তখন প্রত্যাবর্তন করে আসবে এবং বলবে- হে আমাদের রব আমাদেরকে রা কর। আমরা এতে  প্রবেশ করতে পারব না। তখন আল্লাহ বলবেন-  যাও অপমানিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ কর।   

অতঃপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যদি  তারা প্রথমেই জাহান্নামে প্রবেশ করত তাহলে তাদের উপর শান্তি ও শীতলতা বর্ষিত হত। 

ইমাম হাকিম বলেন এ হাদিসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহিহ।   

হাদিস- ৭. 
=====
ইমাম তাবরানী ও  আবু নঈম হযরত মায়াজ বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম বলেন- কিয়ামতের দিন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি, ফাতরাতের সময় নিহত এবং বাল্যকালে নিহত ব্যক্তিদেরকে আনয়ন  করা হবে।   

তখন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি ব্যক্তি বলবে, হে প্রভু, যদি আমাকে বুদ্ধি প্রদান করতেন। যাদেরকে বুদ্ধি প্রদান করেছেন তারা আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যশীল হয়েছে। ঠিক এমনিভাবে ফাতরাতের সময় নিহত  ও বাল্যকালে নিহত ব্যক্তি আপত্তি করবে।   

তখন আল্লাহতায়ালা  বলবেন- আমি তোমাদেরকে আদেশ  করব তোমরা তা মান্য করবে তো? তারা বলবে হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেন তবে যাও  জাহান্নামে প্রবেশ কর। নবীজী বলেন- যদি তারা প্রবেশ  করে তাহলে তাদের কোন তি হবে না। অতঃপর তাদের জন্য জাান্নামের উত্তপ্ত পানি প্রস্তুত করা হবে। তখন তাদের মনে হবে যেন আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টিরাজি ধ্বংস হয়ে গেছে। তখন তারা দ্রুতগতিতে ফিরে আসবে। অতঃপর তাদেরকে দ্বিতীয়বার নির্দেশ দেয়া  হবে। তথাপি তারা প্রত্যাবর্তন করবে। তখন প্রভূ বলবেন- তোমাদের সৃষ্টির পূর্বেই আমি জানতাম তোমরা কি আমল করবে  এবং তোমাদের কি পরিণতি হবে। অতঃপর তাদেরকে পাকড়াও করা হবে।

Top