মোরাকাবা
======
مراقبه ‘মোরাকাবা’ একাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় اخبار الاخيار مع مكتوبات নামক কিতাবের ২০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
وجہ تسمیۃ مراقبہ آنست المراقبہ مشتق من الرقیب ھو الحافظ یعنی مادام المرید مشتغلا بالمراقبہ محفوظ من شواغل اللذات الجسمانیۃ والخواطر الخناسیۃ والھوالات النفسانیۃ ویکون متوجھا الی الحضرۃ الصمدیۃ فارغا عن غیرہ وانہ قیل الفکر افضل من الذکر لانہ شغل الباطن لایطلع علیہ غیرہ یعنی مراقبہ آنراگویند کہ نگاھبانی دل کند ودل را متوجہ بحق دارد وہرچہ غیر حق است اورا در باطن جای ندھد پس اینچنیں صوفی را صاحب دل گویند-
ভাবার্থ: مراقبه ‘মোরাকাবা’ (আল্লাহ তা’য়ালার সিফাতি বা গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম নাম হচ্ছে رقيب ‘রাকিব’ যার অর্থ হলো তীক্ষ্ণদৃষ্টিকারী সংরক্ষণকারী ও হেফাযতকারী।
رقيب ‘রাকিব’ শব্দ থেকে مراقبه ‘মোরাকাবা’ শব্দটি উৎকলিত। ইলমে তাসাউফের পরিভাষায় ‘মোরাকাবা’ বলা হয় সালেক বা তরিকতপন্থী আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি এমনভাবে মুতাওয়াজ্জিহ বা ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকবে, যা দ্বারা নফসের কুপ্রবৃত্তি, শয়তানি ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা, শারীরিক কর্মকাণ্ড قلب ক্বলবের মন্দ খেয়াল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি মনোনিবেশ করা। কথিত আছে, ‘জিকির’ বা আল্লাহর ধ্যানমগ্ন থাকা হচ্ছে উত্তম। এটা এজন্য যে, জিকিরতো একটা বাতেনি শুগল বা কাজ, যার কোন খবর অন্য কেউই অবগত হতে পারে না।
مراقبه ‘মোরাকাবা’ হচ্ছে এমন একটা কাজ যা স্বীয় ক্বলব বা দিলের দিকে খেয়াল রেখে আল্লাহ তা’য়ালার দিকে মুতাওয়াজ্জিহ বা আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা এবং সাথে সাথে আল্লাহ তা’য়ালার সৃষ্ট যত বস্তু রয়েছে, ঐ সকল বস্তুকে অন্তরে স্থান না দেয়া। সুতরাং এসকল লোকদেরকে সুফিয়ায়ে কেরামের পরিভাষায় আহলেদিল নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
پس اینچنیں صوفی را صاحب دل گویند-
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বংশের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওলী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় القول الجميل مع شفاء العليل ‘আল কাউলুল জামিল’ নামক কিতাবের ৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
واما المراقبة فهى عندهم على انواع كثيرة تجمعها امر وهو ان يتلفظ باية او كلمة باللسان او يتخيلها فى الجنان ويفهم معناها فهما جيدا ثم يتصور كيف هذا المعنى وما صورة تحققه ثم يجمع الخاطر على تلك الصورة بحيث لايخطر خطرة سواها حتى يتحقق الاستغراق فيها ونوع دهول عما سواها-
শাহ ওলি উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত এর বড় সাহেবজাদা ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত ‘আল কাউলুল জামিল’ নামক কিতাবের পাদটীকায় উর্দুভাষায় এর ভাবার্থের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করেন,
اور مراقبہ تو بزرگان طریقت کے نزدیک بہت اقسام پرہے اور جامع ان اقسام کثیرہ کا ایک امر ہے وہ یہ ہے کہ ایک آیت قرآنی را کوئ کلمہ زبان سے کہے یا اسکادل میں خیال کرے اور اسکے معنی کو خوب طرح بوجھے پھر تصور کرے کہ یہ مدعا کیونکر ہے اور اسکی تحقیق اور ثبوت کی صورت ہے پھر اسی صورت پر خاطر کو جمع کرے اس طرح پرکہ سوائے اسکے کوئ خطرہ نہ آوے یہاں تک کہ اسمیں استغراق محقق ہو اور ایک طرح کی ربودگی اور غفلت اس کے ما سواسے حاصل ہو-
مترجم کھتا ہے خلاصہ یہ ہے کہ لفظ کے مفھوم میں اس طرح ڈوب جانا کہ سوائے اسکے کوئ چیز دھیان میں نہ رھے اسکو مراقبہ کھتے ہیں-
ভাবার্থ: ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত হাশিয়ায় উল্লেখ করেন, তরিকতপন্থী বুজুর্গানে দ্বীনদের মতে مراقبه ‘মোরাকাবা’ অনেকভাগে বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও সকল প্রকারের সারাংশ একত্রে একই জিনিস প্রমাণিত হয়। তা হলো এই, কোরআনের পাকের যে কোন একখানা আয়াতে কারীমা অথবা এক কালিমা বা শব্দ মুখে উচ্চারণ করে দিলে দিলে খেয়াল করবে এবং এর সঠিক ভাবার্থ ভাল করে বুঝে নিবে এবং তাসাওউর বা গভীরভাবে মনযোগের সাথে এর তাহকিক এবং সুবুত কি হৃদয়ঙ্গ করে দিলের মধ্যে এমনভাবে স্থান দিবে যেন অন্য কোন খেয়াল বা ধারণা না আসতে পারে। অর্থাৎ আয়াতে কারীমার সঠিক ভাবার্থের প্রতি এমনভাবে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে যাতে অন্য কোন খেয়াল না আসতে পারে। এর নামই মোরাকাবা।
অনুবাদক বলেন, মোদ্দাকথা হলো আয়াতে কারীমা অথবা এর কালিমা বা শব্দের সঠিক ভাবার্থের মধ্যে এমনভাবে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া যেন এর বিপরীত কোন ধ্যান বা খেয়াল না থাকে, এর নামই হলো মোরাকাবা।
শাহ সাহেব আলাইহির রহমত مراقبه ‘মোরাকাবা’ যে কোরআন সুন্নাহসম্মত এর দলিল হিসেবে একখানা হাদিসশরীফ উপস্থাপন করে উক্ত কিতাবে উল্লেখ করেন,
والاصل فيها قوله صلى الله عليه وسلم الاحسان ان تعبد الله كانك تراه فان لم تكن تراه فانه يراك-
মোরাকাবার আছল বা দলিল হলো এ হাদিসে কারীমা। হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এরশাদ করেন, احسان ‘ইহসান’ হলো তুমি এভাবে আল্লাহ তা’য়ালার এবাদত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। যদি তুমি দেখতে না পার তবে এ আক্বীদা রাখবে যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।
প্রথম মোরাকাবা হলো, সালেক (যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’য়ালার রাস্তায় চলে) স্বীয় জবান দ্বারা বলবে الله حاضرى الله ناظرى الله معى ‘আল্লাহু হাজিরী, আল্লাহু নাজিরী, আল্লাহু মায়ী’ অথবা দিলে দিলে এর সঠিক ভাবার্থ খেয়াল করবে মুখে উচ্চারণ করবে না। অতঃপর আল্লাহতা’য়ালা যে ইলিম ও কুদরতে বান্দার কাছে হাজির রয়েছেন এবং চক্ষু ব্যতিরেকে বান্দাকে দেখছেন এবং আল্লাহতা’য়ালা নিরাকার ও বেমিসাল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কুদরতে কামেলা দ্বারা বান্দার কাছে সদা-সর্বদায় মওজুদ রয়েছে এটাকে শক্তভাবে تصور ‘তাসাওউর’ বা এ ধ্যানে নিমজ্জিত থাকতে হবে। এর নামই হলো মোরাকাবা।
দ্বিতীয় مراقبه ‘মোরাকাবা’ হলো, وهو معكم اينما كنتم তোমরা যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে আছেন। এ ধ্যান ও খেয়ালকে দাঁড়ানো, বসা, ঘুমন্ত অবস্থায়, একা একা থাকা অবস্থায়, মানুষের সাথে সাক্ষাতের সময়, কাজে লিপ্ত ও অবসর সময়ে এভাবে ধ্যান ও খেয়ালে নিমজ্জিত থাকতে হবে যে, আল্লাহতা’য়ালা আমাদের যাবতীয় অবস্থা সম্বন্ধে সর্বদাই অবগত আছেন। আল্লাহ তা’য়ালার যাত যেহেতু নিরাকার ও বেমিসাল তাই ওয়াজিবুল ওজুদ আজালি আবাদি আল্লাহতা’য়ালা বান্দার সঙ্গে মিশে আছেন এ খেয়াল রাখবেন না। কারণ নিরাকার সাকারের সঙ্গে একিভুত হতে পারে না বা মিশতে পারে না। مراقبه মোরাকাবাকারী ব্যক্তি মনে করবে আমার দিল আল্লাহর সঙ্গে সস্পর্কিত। এভাবে প্রতিটি আয়াতে কারীমা ও হাদিসশরীফের মোরাকাবা রয়েছে।