দরূদ পাঠের হাকিকত ও নূরানিয়ত
আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাজির ও নাজির বিশ্বাস রেখে নিয়মিত দরূদশরীফ পাঠ করার অভ্যাস করে নেয়া এবং সাথে সাথে মাহবুবে মতলক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভক্তি ভরে সালাম পেশ করার মাধ্যমেই মদিনা মুনাওয়ারার নূর লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করার রাস্তা উম্মুক্ত করে নেওয়া সম্ভব।
একাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় مدارج النبوة ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক কিতাবের ১/৩৮৩ পৃষ্ঠায় দরূদশরীফের ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন,
و شيخ اجل واكرم قطب الوقت عبد الوهاب متقى رحمة الله عليه ونفعنا ببركاته وبركات علومه میفرمود باید .... وآخر بعد خوض وغوص درین بحارنامتناھی محروم ومایوس آمدن چہ صورت دارد
ভাবার্থ: শায়খে আজল ও আকরম কুতবে জমান আব্দুল ওয়াহহাব মুত্তাকী আলাইহির রহমত বলেন, ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি দরূদশরীফ প্রেরণের সময়ে এ খেয়াল রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা’য়ালার রহমত ও বরকতের সমুদ্রের কোন এক সমুদ্রে ডুব দেওয়া হচ্ছে।
اللهم ‘আল্লাহুম্মা’ বলার সময় মনে করতে হবে যে, রহমতে এলাহির সমুদ্রে প্রবেশ করা হলো। হযরত হাসান বসরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী প্রেমিক বান্দা যখন اللهم ‘আল্লাহুম্মা’ বলে, তখন সে যেন আল্লাহ তা’য়ালার সকল নাম স্মরণ করল। আর যখন صل على سيدنا محمد ‘সাল্লি আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন’ বলে, তখন সে যেন নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফজল ও করমের সমুদ্রে ডুব দিল।
আর যখন وعلى اله واصحابه ‘ওয়া আ’লা আলীহি ওয়া আসহাবিহী’ বলে তখন সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাজাইল ও কামালাত তথা তাঁর মহান মর্যাদার সমুদ্রে ডুব দিল।
অতঃপর বলেন, একজন নবী প্রেমিক সুন্নি আক্বীদায় বিশ্বাসী মুসলমান আল্লাহ তা’য়ালার এ অন্তহীন রহমতের সমুদ্রে এরূপ ডুব দেওয়ার পর আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত ও হতাশ হওয়ার কোন কারণই থাকতে পারে না।’
بسنن ابى داؤد আবু দাউদ শরীফের প্রথম জিলদের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নূরানী ফরমান, যে ব্যক্তি আমাদের আহলে বাইতের প্রতি দরূদশরীফ পাঠ করে পূর্ণ ওজনে নেকি পরিমিত করায়ে খুশি হতে চায়, সে যেন এভাবে দরূদশরীফ পাঠ করতে থাকে,
اللهم صل على محمد النبى وازواجه امهات المؤمنين وذريته واهل بيته كما صليت على ال ابراهيم انك حميد مجيد ( مرقاة الصعود الى سنن ابى داؤد ص ۱/۳۵۷)
নবী প্রেমিক সুন্নি আক্বীদায় বিশ্বাসী পাঠকবৃন্দ! الله جميل ويحب الجمال আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে মহব্বত করেন। এজন্য তাঁর হাবিব আমাদের আকা ও মাওলা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টির মধ্যে অতুলনীয় সুন্দর ও মর্যাদাসম্পন্ন করে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন।
এ প্রেক্ষাপটে হযরত ফারুকে আ’জম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বংশের অমূল্যরত্ন বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওলী উল্লাহ আলাইহির রহমত তদীয় الدر الثمين ‘দুররুস সামিন’ নামক কিতাবের দশম নাম্বার হাদিসে উল্লেখ করেন, তিনি (শাহ ওলি উল্লাহ) বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত আমাকে অবগত করিয়েছেন, তিনি বলেন, আমার নিকট আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একখানা হাদিসশরীফ পৌঁছেছে। হাবিবে খোদা নিজেই এরশাদ করেন, انا املح واخى يوسف اصبح অর্থাৎ ‘আমি লাল ও হলুদ বর্ণ এবং আমার ভাই ইউসুফ আলাইহিস সালাম উজ্জ্বল বা ফর্সা।’
তিনি (শাহ আব্দুর রহিম) বলেন, আমি আল্লাহর হাবিবের জবান মোবারক থেকে ইহা শ্রবণ করে এর সঠিক ভাবার্থ নির্ণয় করতে অপারগ হয়ে গেলাম। এজন্য যে, ملاحت ‘মালাহাত’ বা লাল ও হলুদ বর্ণ। صباحت ‘ছাবাহাত’ বা উজ্জ্বল (ফর্সা) বর্ণ থেকে প্রেমিকের জন্য মালাহাত অধিক টেনশন ও আশক্ত হওয়ার কারণ। অথচ হাদিসশরীফ দ্বারা প্রমাণিত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৌন্দর্য দেখে মিশরের কতেক মহিলা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল এবং কতেক লোক তাঁকে দেখে মৃত্যুবরণও করছিল।
অপরদিকে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার পর এমন মর্মান্তিক ঘটনার কোন রেওয়ায়েত পাওয়া যায় নাই।
অতঃপর তিনি (আমার শ্রদ্ধেয় পিতা) বলেন, আমি হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখে এর সঠিক ভাবার্থ জানতে আরজি পেশ করলে, আল্লাহর হাবিব উত্তরে বলেন,
(فقال جمالى مستور عن اعين الناس غيرة من الله عز وجل ولو ظهر لفعل الناس اكثر مما فعلوا حين راو يوسف)
ভাবার্থ: আল্লাহতা’য়ালা আমার সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি থেকে সূক্ষ্ম মর্যাদা বোধের কারণে গোপন করে রেখেছেন এবং যদি আমার এ নূর বা সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে যেত, তবে মানুষের অবস্থা ইউসুফ আলাইহিস সালামকে দেখে যা হয়েছিল, তার চেয়েও ভয়াবহ হতো। অর্থাৎ হুজুরের সৌন্দর্য দেখে অগণিত মানুষ প্রাণ হারাতো।’
এ জন্যইতো চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজাখাঁন বেরেলী আলাইহির রহমত কতইনা সুন্দর বর্ণনা করেছেন,
حسن یوسف پہ کٹیں مصر میں انگشت زنان
سر کٹا تے ہیں ترے نام پہ مردان عرب
আ’লা হযরত বলেন, মিশরের মহিলাগণ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৌন্দর্য দেখে হাত কেটেছিল। ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার পবিত্র নামের উপরে আরবের জলিলুল কদর সাহাবায়ে কেরামগণ নিজের মাথা কাটিয়ে দিয়েছেন।
আহ! আমাদের নবী যে কত সুন্দর তা একমাত্র মহান আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লাই অধিক জানেন।
সেই নবীর প্রতি প্রাণঢালা সালাত ও সালাম প্রেরণ করতে থাকুন। যেন মরণের বিছানায় আল্লাহর হাবিবের নূরানী চেহারা মোবারক দুনয়নের সামনে ভেসে উঠে এবং হাবিবে খোদার এ নূরানী চেহারা মোবারক দেখে দেখে যেন ফানাফির রাসূলের দর্জায় পৌঁছে বেহুশ হয়ে সাকরাতের মউত যেন টেরই না পাওয়া যায়। আমাদের জবান দ্বারা যেন শেষ ঈমানী কালেমা জারি হয়ে পড়ে لا اله الا الله محمد رسول الله এটাই আশেকে জামালে মোস্তাফা তথা নবীজির সৌন্দর্য দেখার প্রত্যাশীদের একমাত্র কামনা।
আল্লামা ইবনে হজর মক্বী আলাইহির রহমত তদীয় ‘আদ দুররূল মানদুদ’ নামক কিতাবের ২২ পৃষ্ঠায় দরূদশরীফের যে ফজিলতের বর্ণনা দিয়েছেন তা নিুরূপ,
الامر الثالث : الشفقة على الامة بتحريضهم على ما هو حسنة فى حقهم وقربة لهم- بل الصلوة ليست حسنة واحدة بل قربات؟
۱) اذ فيها : تجديد الايمان بالله تعالى اولا
۲) ثم برسوله صلى الله عليه وسلم ثانيا
۳) ثم بتعظيمه ثالثا
٤) ثم بالعناية بطلب الكرامات له رابعا
۵) ثم تجديد الايمان باليوم الاخر وانواع كراماته خامسا
٦) ثم بذكر اله سادسا وعند ذكر الصالحين تنزل الرحمة
۷) ثم بتعظيم الله بسبب نسبة اليه تعالى سابعا
٨) ثم باظهار المودة لهم ثامنا ولم يسال صلى الله عليه وسلم من امته اجرا الا المودة فى القربى
٩) ثم بالاجتهاد والتضرع فى الدعاء تاسعا والدعاء مخ العبادة
۱۰) ثم بالاعتراف عاشرا بان الامر كله اليه-
অর্থাৎ ‘তৃতীয় বিষয়, আল্লাহর হাবিবের উম্মতকে দরূদশরীফ পাঠের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা মুলত নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের প্রতি সদয় হওয়া, এ সদয়তা হচ্ছে তাদের প্রাপ্য নেকি লাভ এবং তাদের নৈকট্য অর্জন। যেহেতু দরূদশরীফ কেবল একটিমাত্র নেকআমলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এতে অনেক নৈকট্য বিদ্যমান রয়েছে, তন্মধ্যে,
১. আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি তাসদিকে ঈমান বা ঈমানের নবায়ন অর্জিত হওয়া।
২. দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের নবায়ন অর্জিত হওয়া।
৩. তৃতীয়টি হচ্ছে, তাঁর প্রতি তা’জিম বা সম্মান প্রদর্শন।
৪. চতুর্থটি হলো দরূদশরীফ পাঠ দ্বারা মূলত হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কারামত বা অধিক সুমহান মর্যাদা লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা।
৫. পঞ্চমটি হচ্ছে পরকালের প্রতি ঈমানকে নবায়ন করা এবং ঐ দিনের যাবতীয় করুণা লাভের উপায় হাসিল হওয়া।
৬. ষষ্ঠটি হচ্ছে, আলে রাসূল তথা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের আলোচনা বা স্মরণ করা। কেননা সালেহীন বা আল্লাহর নেকবান্দাদের স্মরণে রহমতে খোদাওন্দি নাজিল হয়ে থাকে।
৭. সপ্তমত আল্লাহর হাবিবের নিসবত বা সম্পর্ক আল্লাহ তা’য়ালার দিকে থাকার কারণে মূলত মহান আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি তা’জিম বা সম্মান প্রদর্শন হয়।
৮. অষ্টমত দরূদশরীফ পাঠের বদৌলতে বান্দার প্রতি আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুয়াদ্দত বা ভালবাসা প্রকাশ পেয়ে থাকে। কেননা হুজুরেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম مودة فى القربى ‘মুয়াদ্দাত ফিল কুরবা’ অর্থাৎ আপনজনদের প্রতি ভালবাসা ব্যতীত অন্য কোন বিনিময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন না।
৯. নবমটি হচ্ছে, দোয়াতে সাধ্যমত চেষ্টা করা ও বিনয়ী হওয়ার প্রতি রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক উৎসাহ প্রদান। কেননা দোয়া হচ্ছে ইবাদতের সার বা মগজ।
১০. দশমটি হচ্ছে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদশরীফ পাঠের মা’রেফত তথা পরিচিতি লাভের উৎসাহ প্রদান। মুদ্দাকথা হলো, ইহকাল ও পরকালের সবকিছুই তাঁর (আল্লাহ তা’য়ালার) করুণার অধীনে নিয়োজিত।
আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাজির ও নাজির বিশ্বাস রেখে নিয়মিত দরূদশরীফ পাঠ করার অভ্যাস করে নেয়া এবং সাথে সাথে মাহবুবে মতলক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভক্তি ভরে সালাম পেশ করার মাধ্যমেই মদিনা মুনাওয়ারার নূর লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করার রাস্তা উম্মুক্ত করে নেওয়া সম্ভব।
একাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয় مدارج النبوة ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক কিতাবের ১/৩৮৩ পৃষ্ঠায় দরূদশরীফের ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন,
و شيخ اجل واكرم قطب الوقت عبد الوهاب متقى رحمة الله عليه ونفعنا ببركاته وبركات علومه میفرمود باید .... وآخر بعد خوض وغوص درین بحارنامتناھی محروم ومایوس آمدن چہ صورت دارد
ভাবার্থ: শায়খে আজল ও আকরম কুতবে জমান আব্দুল ওয়াহহাব মুত্তাকী আলাইহির রহমত বলেন, ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি দরূদশরীফ প্রেরণের সময়ে এ খেয়াল রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা’য়ালার রহমত ও বরকতের সমুদ্রের কোন এক সমুদ্রে ডুব দেওয়া হচ্ছে।
اللهم ‘আল্লাহুম্মা’ বলার সময় মনে করতে হবে যে, রহমতে এলাহির সমুদ্রে প্রবেশ করা হলো। হযরত হাসান বসরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী প্রেমিক বান্দা যখন اللهم ‘আল্লাহুম্মা’ বলে, তখন সে যেন আল্লাহ তা’য়ালার সকল নাম স্মরণ করল। আর যখন صل على سيدنا محمد ‘সাল্লি আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিন’ বলে, তখন সে যেন নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফজল ও করমের সমুদ্রে ডুব দিল।
আর যখন وعلى اله واصحابه ‘ওয়া আ’লা আলীহি ওয়া আসহাবিহী’ বলে তখন সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফাজাইল ও কামালাত তথা তাঁর মহান মর্যাদার সমুদ্রে ডুব দিল।
অতঃপর বলেন, একজন নবী প্রেমিক সুন্নি আক্বীদায় বিশ্বাসী মুসলমান আল্লাহ তা’য়ালার এ অন্তহীন রহমতের সমুদ্রে এরূপ ডুব দেওয়ার পর আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত ও হতাশ হওয়ার কোন কারণই থাকতে পারে না।’
بسنن ابى داؤد আবু দাউদ শরীফের প্রথম জিলদের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নূরানী ফরমান, যে ব্যক্তি আমাদের আহলে বাইতের প্রতি দরূদশরীফ পাঠ করে পূর্ণ ওজনে নেকি পরিমিত করায়ে খুশি হতে চায়, সে যেন এভাবে দরূদশরীফ পাঠ করতে থাকে,
اللهم صل على محمد النبى وازواجه امهات المؤمنين وذريته واهل بيته كما صليت على ال ابراهيم انك حميد مجيد ( مرقاة الصعود الى سنن ابى داؤد ص ۱/۳۵۷)
নবী প্রেমিক সুন্নি আক্বীদায় বিশ্বাসী পাঠকবৃন্দ! الله جميل ويحب الجمال আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে মহব্বত করেন। এজন্য তাঁর হাবিব আমাদের আকা ও মাওলা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টির মধ্যে অতুলনীয় সুন্দর ও মর্যাদাসম্পন্ন করে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন।
এ প্রেক্ষাপটে হযরত ফারুকে আ’জম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বংশের অমূল্যরত্ন বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওলী উল্লাহ আলাইহির রহমত তদীয় الدر الثمين ‘দুররুস সামিন’ নামক কিতাবের দশম নাম্বার হাদিসে উল্লেখ করেন, তিনি (শাহ ওলি উল্লাহ) বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত আমাকে অবগত করিয়েছেন, তিনি বলেন, আমার নিকট আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একখানা হাদিসশরীফ পৌঁছেছে। হাবিবে খোদা নিজেই এরশাদ করেন, انا املح واخى يوسف اصبح অর্থাৎ ‘আমি লাল ও হলুদ বর্ণ এবং আমার ভাই ইউসুফ আলাইহিস সালাম উজ্জ্বল বা ফর্সা।’
তিনি (শাহ আব্দুর রহিম) বলেন, আমি আল্লাহর হাবিবের জবান মোবারক থেকে ইহা শ্রবণ করে এর সঠিক ভাবার্থ নির্ণয় করতে অপারগ হয়ে গেলাম। এজন্য যে, ملاحت ‘মালাহাত’ বা লাল ও হলুদ বর্ণ। صباحت ‘ছাবাহাত’ বা উজ্জ্বল (ফর্সা) বর্ণ থেকে প্রেমিকের জন্য মালাহাত অধিক টেনশন ও আশক্ত হওয়ার কারণ। অথচ হাদিসশরীফ দ্বারা প্রমাণিত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৌন্দর্য দেখে মিশরের কতেক মহিলা তাদের হাত কেটে ফেলেছিল এবং কতেক লোক তাঁকে দেখে মৃত্যুবরণও করছিল।
অপরদিকে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার পর এমন মর্মান্তিক ঘটনার কোন রেওয়ায়েত পাওয়া যায় নাই।
অতঃপর তিনি (আমার শ্রদ্ধেয় পিতা) বলেন, আমি হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখে এর সঠিক ভাবার্থ জানতে আরজি পেশ করলে, আল্লাহর হাবিব উত্তরে বলেন,
(فقال جمالى مستور عن اعين الناس غيرة من الله عز وجل ولو ظهر لفعل الناس اكثر مما فعلوا حين راو يوسف)
ভাবার্থ: আল্লাহতা’য়ালা আমার সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি থেকে সূক্ষ্ম মর্যাদা বোধের কারণে গোপন করে রেখেছেন এবং যদি আমার এ নূর বা সৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে যেত, তবে মানুষের অবস্থা ইউসুফ আলাইহিস সালামকে দেখে যা হয়েছিল, তার চেয়েও ভয়াবহ হতো। অর্থাৎ হুজুরের সৌন্দর্য দেখে অগণিত মানুষ প্রাণ হারাতো।’
এ জন্যইতো চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজাখাঁন বেরেলী আলাইহির রহমত কতইনা সুন্দর বর্ণনা করেছেন,
حسن یوسف پہ کٹیں مصر میں انگشت زنان
سر کٹا تے ہیں ترے نام پہ مردان عرب
আ’লা হযরত বলেন, মিশরের মহিলাগণ হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সৌন্দর্য দেখে হাত কেটেছিল। ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার পবিত্র নামের উপরে আরবের জলিলুল কদর সাহাবায়ে কেরামগণ নিজের মাথা কাটিয়ে দিয়েছেন।
আহ! আমাদের নবী যে কত সুন্দর তা একমাত্র মহান আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লাই অধিক জানেন।
সেই নবীর প্রতি প্রাণঢালা সালাত ও সালাম প্রেরণ করতে থাকুন। যেন মরণের বিছানায় আল্লাহর হাবিবের নূরানী চেহারা মোবারক দুনয়নের সামনে ভেসে উঠে এবং হাবিবে খোদার এ নূরানী চেহারা মোবারক দেখে দেখে যেন ফানাফির রাসূলের দর্জায় পৌঁছে বেহুশ হয়ে সাকরাতের মউত যেন টেরই না পাওয়া যায়। আমাদের জবান দ্বারা যেন শেষ ঈমানী কালেমা জারি হয়ে পড়ে لا اله الا الله محمد رسول الله এটাই আশেকে জামালে মোস্তাফা তথা নবীজির সৌন্দর্য দেখার প্রত্যাশীদের একমাত্র কামনা।
আল্লামা ইবনে হজর মক্বী আলাইহির রহমত তদীয় ‘আদ দুররূল মানদুদ’ নামক কিতাবের ২২ পৃষ্ঠায় দরূদশরীফের যে ফজিলতের বর্ণনা দিয়েছেন তা নিুরূপ,
الامر الثالث : الشفقة على الامة بتحريضهم على ما هو حسنة فى حقهم وقربة لهم- بل الصلوة ليست حسنة واحدة بل قربات؟
۱) اذ فيها : تجديد الايمان بالله تعالى اولا
۲) ثم برسوله صلى الله عليه وسلم ثانيا
۳) ثم بتعظيمه ثالثا
٤) ثم بالعناية بطلب الكرامات له رابعا
۵) ثم تجديد الايمان باليوم الاخر وانواع كراماته خامسا
٦) ثم بذكر اله سادسا وعند ذكر الصالحين تنزل الرحمة
۷) ثم بتعظيم الله بسبب نسبة اليه تعالى سابعا
٨) ثم باظهار المودة لهم ثامنا ولم يسال صلى الله عليه وسلم من امته اجرا الا المودة فى القربى
٩) ثم بالاجتهاد والتضرع فى الدعاء تاسعا والدعاء مخ العبادة
۱۰) ثم بالاعتراف عاشرا بان الامر كله اليه-
অর্থাৎ ‘তৃতীয় বিষয়, আল্লাহর হাবিবের উম্মতকে দরূদশরীফ পাঠের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা মুলত নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের প্রতি সদয় হওয়া, এ সদয়তা হচ্ছে তাদের প্রাপ্য নেকি লাভ এবং তাদের নৈকট্য অর্জন। যেহেতু দরূদশরীফ কেবল একটিমাত্র নেকআমলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এতে অনেক নৈকট্য বিদ্যমান রয়েছে, তন্মধ্যে,
১. আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি তাসদিকে ঈমান বা ঈমানের নবায়ন অর্জিত হওয়া।
২. দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমানের নবায়ন অর্জিত হওয়া।
৩. তৃতীয়টি হচ্ছে, তাঁর প্রতি তা’জিম বা সম্মান প্রদর্শন।
৪. চতুর্থটি হলো দরূদশরীফ পাঠ দ্বারা মূলত হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কারামত বা অধিক সুমহান মর্যাদা লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা।
৫. পঞ্চমটি হচ্ছে পরকালের প্রতি ঈমানকে নবায়ন করা এবং ঐ দিনের যাবতীয় করুণা লাভের উপায় হাসিল হওয়া।
৬. ষষ্ঠটি হচ্ছে, আলে রাসূল তথা রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের আলোচনা বা স্মরণ করা। কেননা সালেহীন বা আল্লাহর নেকবান্দাদের স্মরণে রহমতে খোদাওন্দি নাজিল হয়ে থাকে।
৭. সপ্তমত আল্লাহর হাবিবের নিসবত বা সম্পর্ক আল্লাহ তা’য়ালার দিকে থাকার কারণে মূলত মহান আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি তা’জিম বা সম্মান প্রদর্শন হয়।
৮. অষ্টমত দরূদশরীফ পাঠের বদৌলতে বান্দার প্রতি আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুয়াদ্দত বা ভালবাসা প্রকাশ পেয়ে থাকে। কেননা হুজুরেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম مودة فى القربى ‘মুয়াদ্দাত ফিল কুরবা’ অর্থাৎ আপনজনদের প্রতি ভালবাসা ব্যতীত অন্য কোন বিনিময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন না।
৯. নবমটি হচ্ছে, দোয়াতে সাধ্যমত চেষ্টা করা ও বিনয়ী হওয়ার প্রতি রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক উৎসাহ প্রদান। কেননা দোয়া হচ্ছে ইবাদতের সার বা মগজ।
১০. দশমটি হচ্ছে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদশরীফ পাঠের মা’রেফত তথা পরিচিতি লাভের উৎসাহ প্রদান। মুদ্দাকথা হলো, ইহকাল ও পরকালের সবকিছুই তাঁর (আল্লাহ তা’য়ালার) করুণার অধীনে নিয়োজিত।