▪ কিতাবঃ নূরে মুজাচ্ছাম (ﷺ)
▪ লেখক, সংকলকঃ মুফতি মােহাম্মদ আলাউদ্দিন জেহাদী
▪ Text Ready : Masum Billah Sunny

রাসূল (ﷺ) নূরের তৈরীর বিষয়টি কি?/৭
নূর ও তার প্রকারভেদ/৭
সাধারণ মানুষ কিসের তৈরী?/৮
হাদিসের দৃষ্টিতে প্রথম সৃষ্টি কি?/১৭
কলম নাকি প্রথম সৃষ্টি?/১৮
কলমের পূর্বে কি সৃষ্টি?/১৮
আকল প্রথম সৃষ্টি হওয়ার হাদিস কেমন?/১৯
আল্লাহর আরশ সৃষ্টির পূর্বে কি সৃষ্টি হয়েছে?/২১ কলম, আরশ, পানি প্রথম সৃষ্টি নাকি প্রিয় নবীজি (ﷺ) প্রথম সৃষ্টি?/২২
ফোকাহাদের দৃষ্টিতে প্রথম সৃষ্টি/৩১
রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতনা/৩৭
পবিত্র কোরআনের আলােকে রাসূল (ﷺ) নূর/৪৬

আদম (আ)'র সৃষ্টির পূর্বেই তিনি নবী ছিলেন/৫৫ তারকার সূরতে রাসূল (ﷺ)/৬২
ময়ূরের সূরতে রাসূল (ﷺ)/৬৩
হজরত জাবের (রাঃ) এর নূরের হাদিসের বিস্তারিত/৬৪
ইমাম সূয়ূতী (রহঃ) কি জাবের (রাঃ) এর নূরের হাদিসকে জাল বলেছেন?/৭০
আদম সৃষ্টির ১৪ হাজার বছর পূর্বেই তিনি নূর ছিলেন/৭৭
রাসূল (ﷺ) পৃথিবীতে নূর হয়েই এসেছেন/৮২
বিভিন্ন সময় রাসূল (ﷺ) থেকে নূর বের হয়েছে/৮৮
একটি গুরুত্বপূর্ণ নােট/৯২।
প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর ছায়া বিহীন কায়া/৯৩
ছায়া থাকার বিষয়ে কয়েকটি হাদিসের ব্যাখ্যা/৯৮
জিব্রাইল (আঃ) যেখানে যেতে পারেনা রাসূল (ﷺ) সেখানেও গেছেন/১০৫,
ফকিহ্, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ ও ইমামগণের অভিমত/১০৯

দেওবন্দী উলামাদের দৃষ্টিতে রাসূল (ﷺ) নূরের তৈরী/১১৬
কিছু আয়াতের সঠিক তাফছির/১২৪।
কিছু হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা/১৫৫
প্রিয় নবীজি (ﷺ) কি মদিনার রওজার মাটির তৈরী?/১৫৬
“আমি আবু বকর উমর একই মাটির তৈরী” এর ব্যাখ্যা/১৫৮
রাসূল (ﷺ) এর বাশারিয়্যাত বা মানবত্ত্ব/১৬৪
ছহীহ হাদিসের আলােকে রাসূল (ﷺ) আমাদের মত নয়'/১৭৩
(আনা বাশারুম মিসলুকুম) এই আয়াতের ব্যাখ্যা/১৭৮
প্রশ্ন-উত্তর পর্ব নূরের তৈরী ফেরেস্থারা কি মাটির তৈরী আদমকে সেজদা করেছিল?/১৮৪
সর্বপ্রথম নবীজির রুহ কি নূর দিয়ে তৈরী?/১৮৬
নূরের তৈরী হলে কি মানুষের মত চুল, দাড়ি, পশম থাকা, খাওয়া-দাওয়া, রক্তপাত ও নারী সম্ভোক করা থাকে?/১৮৮
নবীজি নূর হলে নূরের আলােতে সব কিছু জ্বলে গেলনা কেন?/১৯৮
নবীজির পিতা-মাতা মাটির তৈরী হলে তিনি নূরের তৈরী হল কিভাবে?/১৯৯

________________________________________
সূচী অনুযায়ী এখানে ৭-১৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আলোচিত হয়েছে।
________________________________________

প্রশ্নঃ রাসূল (ﷺ) নূরের তৈরীর বিষয়টি কি? (প-৭)

সায়্যিদুল মুরছালিন, হজরত রাসূলে করিম (ﷺ) এর সৃষ্টি তত্ত্বটি আকিদার বিষয় কিনা এ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কোন আকায়েদের কিতাবে আলােচনা খুজে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ পূর্ব যুগের কোন ফকিহ-ইমাম এ বিষয়টিকে আকিদা হিসেবে আকায়েদের কিতাবে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি। বরং অনেক ফকিহ্ ও ইমামগণ এ বিষয়টিকে রাসূল (ﷺ) এর মর্যাদা হিসেবে তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন। এ হিসেবে রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি তথ্যের বিষয়টি সরাসরি আকিদার বিষয় না হলেও রাসূলে করিম (ﷺ) এর শান-মান ও মর্যাদা সম্পর্কীত বিষয়। তবে বর্তমান যুগে কোন কোন আলিম এ বিষটিকে আকিদা হিসেবে সমর্থন করে থাকেন। আমরা তাদের এই মতটিকে অমূলক মনে করিনা । যাই হােক আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর সৃষ্টি তথ্যটি আকিদার বিষয় হােক অথবা শান-মান ও মর্যাদার বিষয় হােক, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলােকে আমাদের জানতে হবে মূলত আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মাটির তৈরী নাকি নূরের তৈরী । আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর আকিদা হচ্ছে, হজরত রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার সর্ব প্রথম সৃষ্টি ও আল্লাহর খাল্কী বা সৃষ্ট নূরের তৈরী। তিনি আল্লাহর জাতের অংশও নয় এবং সিফাতের অংশও নয়, বরং তিনি আল্লাহর খাল্কী নূর বা সৃষ্ট নূর। তবে আল্লাহর জাতী নূরের জ্যোতি বলা যায়। কারণ সূর্য থেকে আলাের উৎপত্তি, কিন্তু আলাে সূর্যের অংশ নয়। ঠিক তেমনিভাবে প্রিয় নবীজি (ﷺ) আল্লাহর জাত দ্বারা হেকমতে কামেলার মাধ্যমে তাঁর নূরে সৃষ্ট কিন্তু আল্লাহর অংশ নয়।

নুর ও তার প্রকারভেদ (প-৭)

(নূর) শব্দটি ব্যাপক অর্থবােধক সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। যা একাধারে আল্লাহ পাক, রাসূলে করিম (ﷺ) ও পবিত্র কোরআনের গুণবাচক নাম। শব্দটির বিভিন্ন অর্থ পরিলক্ষিত হয়। কারণ । (নূর) এর একাধিক অর্থ রয়েছে।

যেমন:
* (light), আলো;
* (brightness), উজ্জ্বলতা, কিরণ, ঝলক, প্রদীপ, লণ্ঠন, জ্যোতি, সত্য প্রকাশ ইত্যাদি। এর বহুবচন হল (আনওয়ার)।
* নূর তাকেই বলে যে নিজে প্রকাশ ও অন্যকে প্রকাশ করে। এখানে আরেকটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়ােজন যে,
(নূর) দুই ধরণের হয়। যথাঃ
1) “চোখে অনুভূত হয় এমন নূর।” চাঁদের নূর বা আলাে, তারকার নূর বা আলাে, সূর্যের নূর বা আলাে ইত্যাদি ।
2) আরেকটি হল চোখে অনুভূত হয় না বরং আকল বা জ্ঞান দ্বারা অনুধাবন করা যায় এমন নূর। কোরআনের নূর, ইলিমের নূর, ঈমানের নূর ইত্যাদি। (মুফরাদাতে রাগেব ইস্পাহানী)।

সহজে বলা যায়, নূর দুই প্রকার যথা:-

A) মানুষের ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুধাবন করা যায় এবং আরেকটি হল যা ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুধাবন করা যায়না । প্রিয় নবীজি (ﷺ) একদিকে পবিত্র কোরআনের ঘােষনা অনুযায়ী ইন্দ্রিয় অগ্রায্য নূর, অপরদিকে একাধিক হাদিস অনুযায়ী ইন্দ্রিয় গ্ৰায্য নূর। অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) উভয় প্রকার নূর। এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলােচনা করা হবে।

সাধারণ মানুষ কিসের তৈরী?

★ আয়াত নং১ঃ

এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
“তিনি:‘বাশার তথা মানুষকে পানি হতে সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা ফুরকান: ৫৪ নং আয়াত)।

পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে মানুষকে আল্লাহ পাক ‘পানি' তথা শুক্রানু হতে সৃষ্টি করেছেন। এই আয়াতে ‘মাউন' এর অর্থ নুতফা বা পিতা-মাতার শুক্রানু-ডিম্বানু।
তথাপিও এই আয়াতে বর্ণিত - পানি সম্পর্কে মােফাচ্ছেরীনে কেরামের অভিমত গুলাে উল্লেখ করা হল।

(সূরা ফুরকান: ৫৪ নং আয়াত) এই আয়াতের তাফছিরে -

★ ইমাম বাগভী (রহঃ) {ওফাত ৫১৬ হিজরী} বলেন,

وهو الذي خلق من الماء من الثقة، بشرا

-“তিনি বাশার' তথা মানুষকে শুক্রানুর পানি হতে সৃষ্টি করেছেন।”
(তাফছিরে বাগভী, ৬ষ্ঠ খ-, ৯০ পৃ:)।

★ ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রহঃ) {ওফাত ৬০৬ হি.} বলেন,

أين المراد القه يقوله: ځلق من ماء دافق والطارق: 6]، من ماء مهين

-“নিশ্চয় এর দ্বারা অর্থ হচ্ছে শুক্রানু, যেমন আল্লাহ তা’লার বাণী হচ্ছে: ‘মানুষকে বেগবান পানি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আরেক আয়াতে আছে: ‘পানির নির্যাস থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।”
(তাফছিরে কাবীর, ২৪তম খণ্ড, ৪৭৫ পৃ:)।

★ ইমাম কুরতুবী (রহঃ) {ওফাত ৬৭১ হিজরী} বলেন,

وهو الذي خلق من الماء بشرة) أي خلق من الثقة إنشائا۔

-“তিনি (আল্লাহ) বাশার' তথা মানুষকে, ‘পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ মানুষকে শুক্রানু থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
(তাফছিরে কুরতুবী, ১৩তম খণ্ড, ৫৯ পৃঃ)।

★ আবুল ফিদা ইমাম হাফিজ ইবনে কাছির (রহঃ) {ওফাত ৭৭৪ হিজরী} বলেন,

وهو الذي خلق من الماء بقرة الآية، أي خلق الإنسان من ظئة

و الذي خلق من الماء بشرة

-“তিনি বাশার' তথা মানুষকে পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ মানুষকে শুক্রানু থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
(তাফছিরে ইবনে কাছির, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১০৭ পৃ:)।

★ ইমাম হাফিজ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) {ওফাত ৯১১ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন,

-“তিনি (আল্লাহ) বাশার' তথা মানুষকে পানি হতে সৃষ্টি করেছেন। তথা মানুষের ম’ থেকে সৃষ্টি করেছেন।” (তাফছিরে জালালাইন, ৪৭৭ পৃ:)।

অতএব, মহান আল্লাহ পাকের ঘােষণা অনুযায়ী মানুষকে নুতফা তথা শুক্রানু থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই কোন মানুষকে সরাসরি মাটির তৈরী বলা চরম ভ্রষ্টতা এবং কোরআনের বিপরীত কথা, যা ইসলামী শরিয়তে প্রকাশ্য কুফুরী।

আয়াত নং ২

★ এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা আরাে এরশাদ করেন, “মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে স্ববেগে নির্গত পানি থেকে।” (সূরা ত্বরেক: ৫ নং আয়াত)।

পবিত্র কোরআনের এই আয়াতদ্বয়ে স্পষ্ট বলা হয়ে, আল্লাহ পাক মানুষকে পানি তথা বেগবান নুতফা বা শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেছেন।

★ ইমাম বাগভী (রহঃ) ও ছাহেবে খাজেন আল্লামা আলাউদ্দিন আলী ইবনে মুহাম্মদ খাজেন (রহঃ) ""মাই দাফিক্ব'" তথা '"বেগবান পানি"' এর ব্যাখ্যায় বলেন: -“আর ইহা হল মনী।”
(তাফছিরে বাগভী, ৫ম খন্ড, ২৩৯ পৃ; তাফছিরে খাজেন, ৪র্থ খন্ড, ৪১৫ পৃ:)।

★ আল্লামা হাফিজ ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
-“অর্থাৎ, ইহা হল মনী যা পুরুষ ও মহিলাদের থেকে স্ববেগে প্রবাহিত হয়।”
(তাফছিরে ইবনে কাছির, ৮ম খন্ড, ৩৭৫ পৃঃ)

★ ইমাম কুরতবী (সঃ) বলেন:
-“স্ববেগে প্রবাহিত পানি অর্থাৎ মনী থেকে।” (তাফছিরে কুরতবী, ২০তম খন্ড, ৪ পৃ)

★ লা-মাজহাবীদের ইমাম কাজী শাওকানী তার কিতাবে বলেন:
-“(উক্ত বর্নিত) পানি হচ্ছে মনী।”
(কাজী শাওকানী: তাফছিরে ফাতহুল কাদির, ৫ম খন্ড, ৫০৮ পৃঃ)।

বর্তমানে বিজ্ঞানের গবেষণার মাধ্যমে স্পষ্টই জানা যায়, মানব দেহে প্রায় ৭০ ভাগ পানি রয়েছে। সুতরাং মানুষ তার পিতা-মাতার মনী বা শুক্রানু ডিম্বানু থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

পবিত্র কোরআনের ঘােষণা অনুযায়ী আদম (আঃ) ব্যতীত পরবর্তী কোন মানুষই সরাসরি মাটির তৈরী নয়, বরং নুতফা বা শুক্রানু-ডিম্বানুর তৈরী।

আয়াত নং ৩

★ এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক আরেক আয়াতে বলেছেন,

ا خلقنا الإنسان من ظفة أمشاج تليه فجعلناه سييع بصيرة

-“মানুষকে মিলিত শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি, তাকে পরিক্ষা করার জন্য শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছি।
(সূরা: ইনছান/দাহর: ২ নং আয়াত)।

লক্ষ্য করুন! এই আয়াতে মানুষকে নুতফা দ্বারা সৃষ্টি করার কথা রয়েছে যা স্পষ্ট করেই উল্লেখ আছে।

★ এই আয়াত সম্পর্কে ইমাম আবু জাফর আত-ত্বাবারী (রঃ) {ওফাত ৩১০ হিজরী} তদীয় তাফছির গ্রন্থে বলেন,

إنا لفتاة

آدم من ظقة، يعني: من ماء الرجل وماء المرأة

-“নিশ্চয় আদম (আঃ) এর সন্তানদেরকে শুক্রানু থেকে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর পানি তথা শুক্রানু-ডিম্বানু থেকে।”
(তাফছিরে তাবারী, ২৩তম খণ্ড, ৫৩১ পৃ:)।

বিজ্ঞানও ইহা প্রমাণ করেছেন, পুরুষের শুক্রানু ও স্ত্রীর ডিম্বানু মিলিত হয়েই মানুষের দেহের গঠন শুরু হয়। অতএব পবিত্র কোরআনের ঘােষণা অনুযায়ী সাধারণ মানুষ সরাসরি মাটির তৈরী নয় বরং নুতফার তৈরী।

আয়াত নং ৪

যেমন আল্লাহ তায়ালা অপর আয়াতে এরশাদ করেন:-

ألم خلفم من ماء مهين (20) فجعلناه في قرار ميين

-“আমি কি তােমাদেরকে পানির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করিনি? অত:পর তাকে নিরাপদ স্থানে রাখিনি?" (সূরা মুরছালাত: ২০-২১ নং আয়াত)।

দেখুন এই আয়াতে ‘পানির নির্যাস থেকে মানুষ সৃষ্টির কথা আছে।

★ "অতএব, আল্লাহ তা'য়ালা মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছেন আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) কে।
(যা পবিত্র কোরআন সূরা মু'মীনুন এর ১২ নং আয়াতে বলা হয়েছে)
★ "এবং তথা পানির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছেন আদম সন্তানদেরকে।"

★ ইমাম আবু জাফর আত্-তাবারী (রহঃ) {ওফাত ৩১০ হিজরী} তদীয় তাফছির গ্রন্থে উল্লেখ করেন,

“বিখ্যাত তাবেয়ী হজরত দ্বাহ্হাক ইবনে মুজাহিম (রহঃ) বলেন,
আদম (আঃ) কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে আল্লাহ পানির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
(ইমাম তবারী, তাফছিরে তাবারী, ৯ম খণ্ড, ১৫০ পৃ:)।

★ ইমাম আবু জাফর আত্-তাবারী (রহঃ) {ওফাত ৩১০ হিজরী} আরো বলেন,

-“নিশ্চয় আদম (আঃ) এর সন্তানদেরকে শুক্রানু থেকে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর পানি তথা শুক্রানু-ডিম্বানু থেকে।”
(তাফছিরে তাবারী, ২৩তম খন্ড, ৫৩১ পৃ:)।

★ ইমাম বাগভী (রহঃ) এভাবে তাফছির করেছেন “আমি তােমাদেরকে পানির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করিনি? অর্থাৎ নূতফা বা শুক্রানু থেকে।”
(ইমাম বাগভী: তাফছিরে বাগভী, ৫ম খণ্ড, ১৯৭ পৃ:)

★ বিশিষ্ট তাবেঈ হজরত মুজাহিদ (রহঃ) আল্লাহর বাণী ‘মিম মাইম মাহিন এর ব্যাখ্যায় বলেন:
"আর ইহা হল পুরুষের নুতফা।”
(তাফছিরে মুজাহিদ, ১ম খন্ড, এ পৃ;
তাফছিরে তাবারী, ১৮তম খন্ড, ৬০১ পৃঃ)

অতএব, স্পষ্ট প্রমাণিত হল আদম সন্তানরা পানির নির্যাস বা নুতফা থেকে সৃষ্টি। এটাই পবিত্র কোরআন মােতাবেক সঠিক বর্ণনা ও সঠিক আকিদা। এর বিপরীত আকিদা রাখা কুফুরী এবং স্পষ্ট গােমরাহী ।

আয়াত নং ৫ ঃ

★ এ সম্পর্কে আরেক জায়গায় আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

-“যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর আকৃতি প্রদান করেছেন এবং মাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অত:পর পানির নির্যাস হতে তার বংশ বিস্তার করেছেন।”
(সূরা সাজদা: ৭-৮ নং আয়াত)।

এই আয়াতে পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির শুরুর কথা বয়ান করা হয়েছে। আর পৃথিবীর মানব সৃষ্টির প্রথম হল হজরত আদম (আঃ)।

★ ইমাম বাগভী (রহঃ) এভাবে তাফছির করেছেন,

-“মানব সৃষ্টির শুরুকে আমি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি অর্থাৎ আদম আ: অত:পর তার সন্তান তথা বংশধরকে পানির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছি।”
(তাফছিরে বাগভী, ৩য় খন্ড, ৫৯৫ পৃ:)

★ বিখ্যাত তাফছিরের কিতাব তাফছিরে জালালাইনে আছে: –
- “মানব সৃষ্টির শুরু আদমকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি।”
(তাফছিরে জালালাইন, উক্ত আয়াতের তাফছিরে)।

★ অনুরূপ তাফছিরে করেছেন ইমাম আবু জাফর তাবারী (রহঃ) তদীয় ‘তাফছিরে তাবারী' গ্রন্থে। ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহঃ) অপর তাফছিরে একটি রেওয়াত উল্লেখ করেছেন যেমন,

-“ইমাম ফিরইয়াবী (রহঃ)
- ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ (রহঃ)
- ইমাম ইবনে জারির তাবারী (রহঃ) এবং
- ইমাম ইবনে মুনজির (রহঃ) বর্ণনা করেছেন,

"তাবেয়ী হজরত মুজাহিদ এই আয়াত
“মাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন" এর ব্যাখ্যায় বলেন: তিনি হলেন হজরত আদম (আঃ)।”
(ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) তাফছিরে দুরে মানছুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫৪০ পৃ:)।

★-“তাবেয়ী হজরত কাতাদা (রহঃ) বলেন:
মানব সৃষ্টি শুরুটা হল মাটি থেকে আর তিনি হলেন আদম (আঃ)। অত:পর তার পরবর্তীদের অর্থাৎ তার বংশধরদেরকে পানির নির্যাস আর ইহা হল স্পষ্ট দুর্বল পানির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
(তাফছিরে তাবারী, ১৮তম খণ্ড, ৬০০ পৃঃ)

★ ইমাম আবুল বারাকাত আন-নাছাফী (রহঃ) বলেন:
-“মানব সৃষ্টির শুরু আদম কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
(তাফছিরে নাছাফী, ৩য় খণ্ড, ৬ পৃঃ)

★ আল্লামা হাফিজ ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন,

-“মাটি হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন” অর্থাৎ মানব জাতির বাবা আদম (আঃ) কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
(তাফছিরে ইবনে কাছির, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৬০ পৃঃ)

★ ইমাম কাজী নাছিরুদ্দিন বায়জাবী (রহঃ) বলেন,
-“মানব সৃষ্টির প্রথম আদম (আঃ) কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
(তাফছিরে বায়জাবী, ৪র্থ খণ্ড, ২২০ পৃঃ)

★ অনুরূপ তাফছিরে কুরতবীতে উল্লেখ রয়েছে।
এই আয়াতে স্পষ্ট করেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির সূচনা তথা আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) কে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, এবং এর পরবর্তী আদম সন্তানদেরকে পানির নির্যাস বা শুক্রানু-ডিম্বানু হতে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং পবিত্র কোরআন অনুযায়ী সকল আদম সন্তান পানির নিল। শুক্রানু-ডি হতে সৃষ্টি, সরাসরি মাটি হতে সৃষ্টি নয়।

আয়াত নং ৬ :

এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক আরেক আয়াতে বলেন,

-“মানুষ কি ভাবেনা তাকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি? ফলে সে বিতর্ককারী হয়।”
(সূরা: ইয়াছিন: ৭৭ নং আয়াত)।

★ এ ব্যাপারে যা আছে ইমাম বাগভী (রহঃ) বলেন,

-“অর্থাৎ নিশ্চয় সে (মানুষ) নুতফা থেকে সৃষ্টি হয়েছে।” (তাফছিরে বাগভী, ৪র্থ খন্ড, ২৩ পৃঃ)

সুতরাং আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) ব্যতীত পরবর্তী বাকী সকল মানুষকে আল্লাহ পাক নুতফা বা শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেছেন। যা বর্তমানে বিজ্ঞানও অকপটে স্বীকার করেছে।

আয়াত নং ৭ ঃ

★ এ বিষয়ে আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,

-“তিনি নারী-পুরুষের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, স্থলিত শুক্রবিন্দু থেকে।”
(সূরা নাজম: ৪৫-৪৬ নং আয়াত)

আয়াত নং ৮ঃ

★ এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে,
-“কোথা হতে তাকে সৃষ্টি করলেন? শুক্রবিন্দু হতেই সৃষ্টি করে পরিমিত করলেন।”
(সূরা আবাসা: ১৮-১৯ নং আয়াত)।

আয়াত নং ৯ ঃ

★ এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে রয়েছে,

-“আমি মানুষকে শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা নাহল: ৪ নং আয়াত)।

আয়াত নং ১০ঃ

★ যেমনটি অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
-“আমি ইনছান তথা মানুষকে রক্তপিন্ড তথা শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেছি।”
(সূরা আলাক: ২ নং আয়াত)।

[Note : শুক্রানু আর ডিম্বানু মিলে প্রথমে ফার্টিলাইজড হয় তারপর জাইগোট তৈরি হয়। অতঃপর তা রক্ত , গোশত ও হাড়ে রূপ নেয়। সূরা মুমিনুন ১১-১৪, সূরা কিয়ামাহ ৩৬-৩৮ আয়াতের মধ্যে এর ধারাবাহিকতা বিস্তারিত পাবেন।→(Masum Billah Sunny)]

এই আয়াতে ‘ইনছান’ বলতে আদম (আ) এর বংশধরদেরকে বুঝানাে হয়েছে। কারণ আদম (আ) কে রক্তপিন্ড থেকে সৃষ্টি করা হয়নি।

★ যেমন ইমাম বাগভী (দাঃ) বলেন,
-“ইনছান সৃষ্টি করেছি অর্থাৎ আদমের সন্তানদেরকে রক্তপিন্ড থেকে!
(তাফছিরে বাগভী, ৫ম খন্ড, ২৮১ পৃ:)।

আয়াত নং ১১:

★ এ বিষয়ে আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“মানুষ কিভাবে ভাবে যে, তাকে এমনিতেই ছেড়ে দেয়া হবে? সে কি স্থলিত শুক্রবিন্দু ছিল না? পরে সে জমাট রক্ত পিণ্ডে পরিণত হয়েছিল, তিনি তাকে মানব আকৃতিতে সৃষ্টি করেন।”
(সূরা: কিয়ামা: ৩৬-৩৭-৩৮ নং আয়াত)।

অতএব, উল্লেখিত পবিত্র কোরআনের ১১টি আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়,
- হজরত আদম (আঃ)
- হযরত হাওয়া (আঃ),
- হযরত ঈসা (আঃ) ও
- হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতীত পরবর্তী সকল মানুষই নুতফা বা শুক্রবিন্দু হতে তৈরী, সরাসরি মাটির তৈরী নয়।

কেননা বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে স্বামীর শুক্রানু ও স্ত্রীর ডিম্বানু মিলিত হয়েই স্ত্রীর রেহেম বা জড়ায়ুতে পর্যায়ক্রমে মানব দেহ গঠিত হয়।

Top