চতুর্থ বিষয়:
জাহিলিয়াতের যুগে হানিফ সম্প্রদায়
এ মসলকের সাহায্যকারী আরো একটি বিষয় হল যে, বড় একটি জামাত থেকে প্রমাণিত যে- জাহিলিয়াতের যুগে অনেক হানিফ লোক ছিলেন   যারা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর ধর্মের অনুসারি ছিলেন এবং তারা শিরক থেকে মুক্ত ছিলেন। তাহলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতাগণ এ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে নিষেধ কোথায়? 

হাফিজ   আবুল ফারজ বিন জুযি ‘তালকীহ’ গ্রন্থে বলেছেন জাহিলিয়াতের যুগে যারা  মূর্তিপূজা থেকে বিরত ছিলেন, তাদের মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক, যায়দ বিন আমর বিন নুফাইল, উবাইদুল্লাহ  বিন জাহাশ, উসমান  বিন হুওয়াইরিছ ওয়ারাকা বিন নওফেল, রুবাব বিন বারা, আসাদ আবু কুরাইব হুমাইনী, ক্বিছ বিন সাঈদ, আল ওয়াইদী, আবু কাইছ বিন সারমাহ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। 

তাছাড়া যায়দ বিন আমর, ওয়ারাকাহ, এবং কায়ছ এর হানিফ হবার ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। 

ইবনে ইসহাক সহিহ সূত্রে আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- আমি যায়দ বিন আমর বিন নুফাইলকে দেখেছি সে কাবাশরীফে পিঠ ঠেকিয়ে বলতেছে-  হে কুরাইশ সম্প্রদায়, আজ তোমাদের মধ্যে আমি ব্যতিত অন্য কোন  লোক ইব্রাহিমী ধর্মের উপর বিদ্যমান নেই। অতঃপর বলেন- হে আল্লাহ যদি আমি জানতাম কে তোমার অধিক প্রিয়পাত্র তাহলে তার মাধ্যমে তোমার ইবাদত করতাম। কিন্তু আমি তা জানি না। 

ইমাম সুয়ুতি বলেন- উক্ত বর্ণনাটি পূর্বে উল্লেখিত প্রথম মসলকের পক্ষে সহযোগী দলিল। অর্থাৎ  সে সময় এমন কোন লোক  ছিল না  যার নিকট দাওয়াত পৌঁছেছে এবং সে এর হাকিকত অনুধাবন করেছে। 

আবু নাঈম  ‘দালাইলুন নবুয়ত’ গ্রন্থে  আমর বিন উসাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন- জাহিলিয়াত যুগে  আমার সম্প্রদায়ের ‘ইলাহ’ বা দেবতাদের প্রতি আগ্রহ  প্রকাশ পায়। অতঃপর দেখতে পাই ইহা বাতিল বা অমূলক। তারা পাথরের পূজা করে। 

ইমাম বায়হাকী ও আবু নাঈম উভয়ে  ‘দালাইল’  কিতাবে হযরত শা’বীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি জুহাইনার শায়খ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উমাইর বিন হাবিব আল জুহানী জাহিলিয়াত যুগে শিরক থেকে মুক্ত ছিল এবং আল্লাহর ইবাদত করত। সে ইসলাম আগমন পর্যন্ত জীবীত ছিল। 

আশআরী জামাতের ইমাম শায়খ  আবুল হাসান আশআরী বলেছেন-  এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উক্তির ভাবার্থ সম্পর্কে মতানৈক্য পরিলতি হয়। কেউ কেউ বলেছেন- এর অর্থ হল আবু বকর  রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম আগমনের পূর্বেও মু’মিন ছিলেন। অন্যান্যগণ বলেন বরং ইমাম আশআরী  রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কথার অর্থ হলো- আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সবসময় তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা অভিশপ্ত নয়। আল্লাহতায়ালা জানতেন যে তিনি অচিরেই মু’মিন এবং পূণ্যশীলদের দলভুক্ত হবেন। 

শায়খ তকি উদ্দিন সুবুকি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- ইমাম  আশআরীর বক্তব্যের ভাবার্থ যদি ইহা হয় তাহলে  আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্যান্য সাহাবাগণ এ ব্যাপারে  বরাবর হয়ে যাবেন। কিন্তু আশআরী রাদিয়াল্লাহু  আনহু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যাপারে যে কথা   বলেছেন অন্যান্য সাহাবীদের ব্যাপারে এ রকম কথা বলা হয়নি। 

অতএব সঠিক কথা হল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে কোন কুফুরি প্রকাশ  হয়নি। সুতরাং ইসলাম আগমন পূর্বে তিনি যায়দ বিন আমর বিন নুফাইল এবং এ রকম অন্যান্যদের মত ছিলেন। এ  জন্য ইমাম আশআরী অন্যান্য সাহাবি  ব্যতিত শুধুমাত্র সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উল্লেখ করেছেন। 

ইমাম সুয়ুতি বলেন- আমরা বলব নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাতাপিতার অবস্থা ও ঠিক তদ্রুপ ছিল। তাদের পক্ষে থেকেও কোন  কুফুরি প্রমাণিত হয়নি। তাদের অবস্থা যায়দ বিন আমর বিন নুফাইল এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মত।

Top