একটি নতুন বিভ্রান্তি:
মাওলানা আব্দুস সাত্তার কালাবাগী সাহেব ‘রুকু পেলে রাকাত হবে না’ প্রমাণস্বরূপ ২৯টি দলিল’ নামক একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন। সেখানে তিন চারটি দলিলকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ২৯টি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তিন-চারটি দলিল: যা প্রকৃতপক্ষে দলিল হওয়ার উপযুক্ত নয়: ছাড়া বাকি সবই লা-মাযহাবী আলেমদের বক্তব্য। লেখক ও তার পুস্তিকার কথাও আমরা উল্লেখ করতাম না। যদি না শুরুতে মোহাম্মদীয়া আরাবিয়া যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসার মুদীর ও শাইখুল হাদীস মাও. মোস্তাফা কাসেমী ও মুহাদ্দিস মাও. বেলাল হোসেন রহমানীর অভিমত ও সত্যায়ন না থাকত।
পুস্তিকাটির ১১ ও ২৮ নং পৃষ্ঠায় আবু বাকরা রা. এর হাদীসটি (যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, নবীজী নাকি তাকে বলেছেন, واقض ما فات বা واقض ما سبقك অর্থাৎ তোমার যেটা ছুটে গেছে ওটা পড়ে নাও। হাদীসের এ অংশটুকু উদ্ধৃত করে পুস্তিকাটির ২৮ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, আবু বাকরা রা. এর হাদীস নিয়ে আর কোন ইখতেলাফ নেই। এই হাদীস থেকে পরিস্কার হয়ে গেল যে, ইমামকে রুকু অবস্থায় পেলে রাকাত হয় না। ঐ রাকাত পরে পড়ে নিতে হয়। নতুবা তার নামায হয় না।
উল্লেখ্য, হাদীসের উক্ত অংশটুকু ইমাম বুখারীর ‘জুযউল কিরাত’ ও তাবারানীর মুজামে কাবীরে উদ্ধৃত হয়েছে। কিন্তু এর পূর্বে একটি বাক্য আছে যা ইচ্ছা করেই বাদ দেওয়া হয়েছে। পুরো কথাটি এমন: صل ما أدركت واقض ما سبقك অর্থাৎ যতটুকু পাও পড়ে নাও, আর যা ছুটে যায় তা পরে পড়ে নাও। অর্থাৎ নবীজী সা. হযরত আবু বাকরা রা.কে বলেছেন, দৌড়ে আসার দরকার নেই। কাতারে পৌঁছার পূর্বেও রুকু করার প্রয়োজন নেই। বরং তুমি ধীরস্থিরে আসবে এবং ইমামের সঙ্গে যতটুকু পাবে পড়ে নেবে, আর যতটুকু ছুটে যাবে তা ইমাম সালাম ফেরানোর পর পড়ে নেবে। বলাবাহুল্য, আরবী ভাষা সম্পর্কে সামান্য জ্ঞানও যার আছে, সেই হাদীসটির এই মর্ম সহজেই বুঝতে পারবে। এ কারণেই আমাদের জানামতে কোন লা-মাযহাবী আলেম এ হাদীসকে নিজেদের দলিলরূপে উল্লেখ করেন নি। কিন্তু কালাবাগী সাহেব এই বাক্যটির প্রথম অংশ বাদ দিয়ে শেষাংশটি এমনভাবে পেশ করেছেন যাতে সাধারণ পাঠক তার ধোঁকা বুঝতে না পারে। কালাবাগী সাহেব যে মর্ম বর্ণনা করেছেন যদি তা-ই সহি হতো, তবে পুরো বাক্যটির মর্ম দাঁড়াত: তুমি যতটুকু (ইমামের সঙ্গে) পেয়েছ তা পড়ে নাও, আর যা ছুটে গেছে সেটাও পড়ে নাও। তার মানে রাসূল সা. আবু বাকরা রা.কে নির্দেশ দিচ্ছেন, আমার সঙ্গে যতটুকু নামায পেয়েছ তাও পুনরায় পড়, আর যা ছুটে গেছে সেটাও পড়!!
এ তো গেল যদি ঐ বর্ণনাটিকে সহীহ ধরা হয়। কিন্তু এ বর্ণনাটি আদৌ সহীহ নয়। এ বর্ণনাটির দু’জন রাবীই দুর্বল। একজন হলেন, মুহাম্মদ ইবনে মিরদাস আবু আব্দুল্লাহ আলবাসরী। তাকে আবু হাতেম রাযী রহ. মাজহুল (অজ্ঞাত) বলেছেন। মিযানুল ইতিদাল গ্রন্থে বলা হয়েছে, روى عن خارجة خبرا باطلا তিনি খারিজা থেকে একটি বাতিল হাদীস বর্ণনা করেছেন। লিসানুল মিযান গ্রন্থেও তাকে মাজহুল (অজ্ঞাত) বলা হয়েছে। দ্বিতীয় জন হলেন, ইবনে মিরদাসের উস্তাদ আব্দুল্লাহ ইবনে ঈসা আল খাররায। আল কাশিফ গ্রন্থে যাহাবী রহ. তার সম্পর্কে বলেছেন, ضعفوه মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। তাকরীবুত তাহযীব গ্রন্থে ইবনে হাজার বলেছেন, যয়ীফ বা দুর্বল।