সোজা উঠে দাঁড়ানোর দলিল :

১. হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেন,

كان النبي صلى الله عليه وسلم ينهض في الصلاة على صدور قدميه. أخرجه الترمذي (٢٨٨) وقال: حديث أبي هريرة عليه العمل عند أهل العلم يختارون أن ينهض الرجل في الصلاة على صدور قدميه.

অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে পায়ের উপর ভর দিয়েই উঠে পড়তেন। তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৮৮; বায়হাকী, ২/১২৪ এর একজন রাবী খালিদ ইবনে ইলয়াস যঈফ। তিরমিযী র. বলেন, এ হাদীস অনুযায়ীই আলেমগণের আমল। তারা নামাযে পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানোই পছন্দ করতেন।

২. হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেন,

عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال( في المسيئ في الصلاة): إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَأَسْبِغْ الْوُضُوءَ ثُمَّ اسْتَقْبِلْ الْقِبْلَةَ فَكَبِّرْ وَاقْرَأْ بِمَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنْ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ وَتَطْمَئِنَّ جَالِسًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَسْتَوِيَ قَائِمًا ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلَاتِكَ كُلِّهَا. أخرجه البخاري (٦٦٦٧)

অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (গলদ তরীকায় নামায আদায়কারী জনৈক ব্যক্তিকে) বলেছেন, তুমি যখন নামায পড়তে ইচ্ছা কর, তখন ভালভাবে ওযু করে নাও। অতঃপর কিবলামুখী হও। আল্লাহু আকবার বলো এবং কুরআনের যতটুকু তোমার জন্য সহজ হয় পাঠ কর। অতঃপর রুকু কর এবং স্থির হয়ে রুকু কর। এরপর মাথা তোল এবং স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাক। এরপর সেজদা কর এবং সেজদায় স্থির হয়ে থাক। অতঃপর ওঠো এবং স্থির ও শান্ত হয়ে বসে পড়। এরপর আবার সেজদা কর এবং সেজদায় স্থির হয়ে থাক। অতঃপর উঠে দাঁড়াও। পুরো নামাযে এভাবেই সব কাজ কর। বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৬৬৬৭। এখানে দ্বিতীয় সেজদা থেকে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ হাদীসের কোন কোন বর্ণনায় একটু বসে পরে দাঁড়ানোর কথা আছে। কিন্তু বায়হাকী এটাকে বর্ণনাকারীর ভুল আখ্যা দিয়েছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারী ও আত তালখীস উভয় গ্রন্থে তাঁর মত সমর্থন করেছেন।

৩. হযরত রিফায়া রা. বর্ণনা করেন,

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم للمسيئ في الصلاة: ثم اركع حتى تطمئن راكعا ثم ارفع حتى تطمئن قائما ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا ثم ارفع حتى تطمئن جالسا ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا ثم قم (مختصرا)

রাসূলুল্লাহ সা. (নামাযে গলদকারী ব্যক্তিকে) বলেছেন, অতঃপর তুমি রুকু কর, স্থির হয়ে রুকু কর। এরপর ওঠো, এবং স্থির হয়ে দাঁড়াও। এরপর সিজদা কর, এবং সিজদায় স্থির হয়ে থাক। তারপর ওঠো এবং স্থিরভাবে বসে পড়। আবার সিজদা কর এবং সিজদায় স্থির হয়ে থাক। এরপর উঠে দাঁড়াও। মুসনাদে আহমদ (১৮৯৯৭), তাহাবী, মুশকিলুল আছার (৬০৭৪), তাবারানী, মুজামে কাবীর (৪৫২১)

৪. ইকরিমা র. বলেন,

صَلَّيْتُ خَلْفَ شَيْخٍ بِمَكَّةَ فَكَبَّرَ ثِنْتَيْنِ وَعِشْرِينَ تَكْبِيرَةً فَقُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ إِنَّهُ أَحْمَقُ فَقَالَ ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ سُنَّةُ أَبِي الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. أخرجه البخاري (٧٨٨)

অর্থ: আমি মক্কা শরীফে এক শায়খের পেছনে নামায পড়লাম। তিনি নামাযে ২২ বার আল্লাহু আকবার বললেন। আমি হযরত ইবনে আব্বাস রা.কে বললাম, লোকটি আহমক। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, এটা তো আবুল কাসেম (রাসূল) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৭৮৮।

এ হাদীস থেকে বোঝা যায়, ১ম ও ৩য় রাকাতের পরে না বসেই উঠে পড়বে। অন্যথায় বসাই যদি সুন্নত হতো তাহলে তাকবীর ২৪ বার হওয়া উচিৎ ছিল। কেননা একথা স্বীকৃত এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক উঠানামায় তাকবীর বলতেন।

৪. হযরত আব্বাস ইবনে সাহল আস-সাইদীর বর্ণনা:

أَنَّهُ كَانَ فِى مَجْلِسٍ فِيهِ أَبُوهُ وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- وَفِى الْمَجْلِسِ أَبُو هُرَيْرَةَ وَأَبُو حُمَيْدٍ السَّاعِدِىُّ وَأَبُو أُسَيْدٍ فذكر الحديث وفيه: ثُمَّ كَبَّرَ فَسَجَدَ ثُمَّ كَبَّرَ فَقَامَ وَلَمْ يَتَوَرَّكْ. أخرجه أبو داود (٩٦٦) وإسناده صحيح.

অর্থ: তিনি একটি মজলিসে ছিলেন যেখানে তার পিতাও ছিলেন। তার পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ছিলেন। উক্ত মজলিসে আবূ হুরায়রা রা., আবূ হুমায়দ আসসাইদী রা. ও আবূ উসায়দ রা.ও উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর যে হাদীস উল্লেখ করেছেন, তাতে একথাও আছে- পরে তিনি তাকবীর বললেন এবং সেজদা করলেন। এরপর আবার তাকবীর বলে দাঁড়িয়ে গেলেন, বসেন নি। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭৩৩, ৯৬৬; মুসনাদে সাররাজ ১০০, ১৯২৬; তাহাবী মুশকিলুল আছার ৬০৭২; তাহাবী শরীফ ৭৩১০; ইবনে হিব্বান ১৮৬৬; বায়হাকী ২৬৪২। এর সনদ সহীহ।

ইবনে রজব হাম্বলী রহ. তার বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেছেন,

وهذه الرواية صريحة في أنه لم يجلس بعد السجدة الثانية .ويدل عليه : أن طائفة من الحفاظ ذكروا أن حديث أبي حميد ليس فيه ذكر هذه الجلسة .

অর্থাৎ এ বর্ণনাটি খুবই স্পষ্ট যে, তিনি দ্বিতীয় সেজদার পর বসেন নি। এটা এভাবেও বোঝা যায়, হাফেযে হাদীসগণের এক জামাত বলেছেন, আবু হুমায়দের বর্ণনায় এই বৈঠকের কথা নেই। (৪/৩০১)

৫. আব্দুর রহমান ইবনে গানম র. বলেন,

أن أبا مالك الأشعري جمع قومه فقال يا معشر الأشعريين اجتمعوا واجمعوا نساءكم وأبناءكم أعلمكم صلاة النبي صلى الله عليه و سلم صلى لنا بالمدينة فاجتمعوا وجمعوا نساءهم وأبناءهم فتوضأ وأراهم كيف يتوضأ فأحصى الوضوء إلى أماكنه حتى لما أن فاء الفيء وانكسر الظل قام فأذن فصف الرجال في أدنى الصف وصف الولدان خلفهم وصف النساء خلف الولدان ثم أقام الصلاة فتقدم فرفع يديه فكبر فقرأ بفاتحة الكتاب وسورة يسرهما ثم كبر فركع فقال سبحان الله وبحمده ثلاث مرار ثم قال سمع الله لمن حمده واستوى قائما ثم كبر وخر ساجدا ثم كبر فرفع رأسه ثم كبر فسجد ثم كبر فانتهض قائما فكان تكبيره في أول ركعة ست تكبيرات وكبر حين قام إلى الركعة الثانية فلما قضى صلاته أقبل إلى قومه بوجهه فقال احفظوا تكبيري وتعلموا ركوعي وسجودي فإنها صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم التي كان يصلي لنا كذا الساعة من النهار. أخرجه أحمد ٥/٣٤٣ (٢٣٢٩٤) قال النيموي: إسناده حسن

অর্থ: হযরত আবূ মালেক আল আশআরী রা . তার গোত্রের লোকদের একত্রিত করে বললেন, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের নারী ও সন্তানরা একত্রিত হও। আমি তোমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায শেখাব, তিনি আমাদেরকে নিয়ে মদীনায় পড়েছিলেন। তারা সবাই একত্রিত হলেন। স্ত্রী ও সন্তানদেরকেও একত্রিত করলেন। পরে তিনি ওযু করলেন এবং সবাইকে তার ওযু দেখালেন। তিনি ওযুর স্থানগুলো ভাল করে ধৌত করলেন। অতঃপর যখন বেলা গড়ে গেল তখন তিনি দাঁড়িয়ে আযান দিলেন। এরপর পুরুষদেরকে তার কাছের কাতারে দাঁড় করালেন। ছেলেদেরকে তার পরের কাতারে এবং নারীদেরকে তার পরের কাতারে দাঁড় করালেন। এরপর ইকামত দিয়ে সামনে গেলেন। অতঃপর হাত তুলে আল্লাহু আকবার বললেন। পরে সূরা ফাতেহা এবং অন্য একটি সূরা নিঃশব্দে পাঠ করলেন। অতঃপর তাকবীর বলে রুকু করলেন। রুকুতে তিনবার বললেন, سبحان الله وبحمدهএরপর বললেন, سمع الله لمن حمده এবং সোজা দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর তাকবীর বলে সেজদায় চলে গেলেন। পরে তাকবীর বলে মাথা তুললেন। এরপর পুনরায় তাকবীর বলে সেজদা করলেন। অতঃপর তাকবীর বলে সোজা দাঁড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রথম রাকাতে তার তাকবীর হলো ছয়টি। দ্বিতীয় রাকাত থেকে তিনি যখন দাঁড়ালেন, তখনও তাকবীর বললেন। নামায শেষ করে গোত্রের লোকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, আমার তাকবীর (সংখ্যা) ভালভাবে স্মরণ রাখ এবং আমার রুকু ও সেজদা শিখে নাও। কেননা দিনের এই সময়ে আমাদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নামায পড়েছিলেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই নামায।

(মুসনাদে আহমদ, ৫খ,৩৪৩পৃ, হাদীস নং ২৩২৯৪)। এর সনদ হাসান।

ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন, আবুন নদর (أبو النضر )থেকে, তিনি আব্দুল হামীদ ইবনে বাহরাম আল ফাযারী থেকে, তিনি শাহর ইবনে হাওশাব থেকে, তিনি ইবনে গানম থেকে।

এ হাদীসে তিনি প্রথম রাকাতের পর না বসে সোজা দাঁড়িয়ে গেছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তেমনটি করেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস থেকে আরেকটি বিষয় জানা গেল যে, নামাযে প্রথম তাকবীর ছাড়া কোথাও রফয়ে ইয়াদাইন নেই।

৬. নুমান ইবনে আবূ আয়্যাশ র. বলেন,

أدركت غير واحد من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم فكان إذا رفع رأسه من السجدة في أول ركعة والثالثة قام كما هو ولم يجلس . أخرجه ابن أبي شيبة (٤٠١١) وإسناده حسن ، قاله النيموي رحمه الله.

অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক সাহাবীকে দেখেছি, তারা ১ম ও ৩য় রাকাতে সেজদা থেকে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে যেতেন, বসতেন না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৪০১১। নীমাবী র. বলেছেন, এটির সনদ হাসান।

৭. আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ র. বলেন,

رمقت عبد الله بن مسعود رض في الصلاة فرأيته ينهض ولا يجلس قال : ينهض على صدور قدميه في الركعة الاولى والثالثة. أخرجه عبد الرزاق (٢٩٦٦-٢٩٦٧) وابن أبي شيبة (٣٣٩٩) والطبراني في الكبير والبيهقي في السنن الكبرى (٢/١٢٥) وصححه. وقال الهيثمي في مجمع الزوائد: رجاله رجال الصحيح. (آثار السنن صـ ١٥٢)

অর্থ: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.কে নামাযে ভালভাবে লক্ষ্য করলাম, আমি লক্ষ্য করলাম , তিনি সোজা উঠে পড়লেন, বসলেন না। তিনি আরো বলেন, তিনি ১ম ও ৩য় রাকাতে পায়ের উপর ভর দিয়েই দাঁড়িয়ে যেতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ২৯৬৬,২৯৬৭। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৩৯৯,৪০০১। তাবারানী র. আলকাবীর গ্রন্থে, বায়হাকী আস সুনানুল কুবরা গ্রন্থে (২/১২৫), তিনি এটিকে সহীহ বলেছেন। হায়ছামী র. ‘মাজমাউয যাওয়াইদ’ গ্রন্থে বলেছেন, এর রাবীগণ সহীহ হাদীসের রাবী। (দ্র, আছারুস সুনান,পৃ ১৫২)।

৮. আবু আতিয়্যা র. বর্ণনা করেছেন,

ابن عباس وابن عمر كانا يفعلان ذلك. أخرجه عبد الرزاق (٢٩٦٨)

অর্থ: ইবনে আব্বাস রা. ও ইবনে উমর রা.ও অনুরূপ করতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, হাদীস নং ২৯৬৮।

৯. ইবনে জুরায়জ র. বর্ণনা করেন,

أخبرني عطاء : أنه رأى معاوية إذا رفع رأسه من السجود لم يتلبث قال : ينهض وهو يكبر في نهضته للقيام. أخرجه عبد الرزاق (٢٩٦٠) وإسناده صحيح

অর্থ: আতা র. আমাকে বলেছেন, মুআবিয়া রা.কে দেখেছি, তিনি সেজদা থেকে উঠে দেরী করতেন না। তাকবীর বলেই দাঁড়িয়ে যেতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, হাদীস নং ২৯৬০। এর সনদ সহীহ।

১০. ওয়াহব ইবনে কায়সান র. বলেন,

رأيت ابن الزبير إذا سجد السجدة الثانية قام كما هو على صدور قدميهأخرجه ابن أبي شيبة (٤٠٠٥) وإسناده صحيح.

অর্থ: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র রা.কে দেখেছি, তিনি যখন দ্বিতীয় সেজদা থেকে উঠতেন তখন পায়ের উপর ভর দিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে যেতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৪০০৫। এর সনদ সহীহ।

১১. উবায়দ ইবনে আবুল-জা’দ র. বলেছেন,

كان على ينهض في الصلاة على صدور قدميه . أخرجه ابن أبي شيبة (٤٠٠٠)

অর্থ: আলী রা. নামাযে পায়ের উপর ভর দিয়েই দাঁড়িয়ে যেতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৪০০০।

১২. হযরত ইবনে উমর রা. সম্পর্কে খায়ছামা র. বলেন,

ينهض في الصلاة على صدور قدميه . أخرجه ابن أبي شيبة (٤٠٠٢) وعن نافع كذلك (٤٠٠٧)

অর্থ: আমি তাঁকে নামাযে পায়ের উপর ভর দিয়ে উঠে পড়তে দেখেছি। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৪০০২। নাফে’ থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে, (দ্র. হাদীস নং ৪০০৭)।

১৩. শা’বী র. বর্ণনা করেন,

أن عمر وعليا وأصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم كانوا ينهضون في الصلاة على صدور أقدامهم . أخرجه ابن أبي شيبة (٤٠٠٤)

অর্থ: উমর রা., আলী রা. ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ নামাযে পায়ের উপর ভর দিয়েই উঠে পড়তেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৪০০৪।

১৪. ইমাম যুহরী র. বলেন,

كان أشياخنا لا يمايلون يعني إذا رفع أحدهم رأسه من السجدة الثانية في الركعة الاولى والثالثة ينهض كما هو ولم يجلس . أخرجه ابن أبي شيبة (٤٠٠٩)

অর্থ: আমাদের উস্তাদগণ যখন ১ম ও ৩য় রাকাতে ২য় সেজদা থেকে উঠতেন তখন তাঁরা সোজা দাঁড়িয়ে যেতেন, বসতেন না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৪০০৯।

১৫. আবুয যিনাদ (একজন তাবেয়ী) রহ. বলেছেন, تلك السنة অর্থাৎ এটাই সুন্নত। (দ্র. ইবনে বাত্তাল রহ. কৃত বুখারীর ভাষ্য)

১৬. আইয়্যুব সাখতিয়ানী রহ. বলেন,

كَانَ يَفْعَلُ شَيْئًا لَمْ أَرَهُمْ يَفْعَلُونَهُ كَانَ يَقْعُدُ فِي الثَّالِثَةِ وَالرَّابِعَةِ

অর্থাৎ আমি আমর ইবনে সালামা রহ.কে দেখেছি, তিনি এমনভাবে নামায পড়তেন, যেভাবে নামায পড়তে আমি অন্য কাউকে দেখিনি। তিনি তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে বৈঠক করতেন। (বুখারী, ৮১৮)

লক্ষ করার বিষয় হলো, আইয়্যুব সাখতিয়ানী রহ. নিজেও তাবেয়ী ছিলেন এবং বড় বড় অনেক তাবেয়ীকে তিনি দেখেছেন। কিন্তু এ বৈঠক করতে তিনি অন্য কাউকে দেখেননি। উল্লেখ্য, এখানে চতুর্থ কথাটি বর্ণনাকারীর ভুল। কারণ চতুর্থ রাকাতের পর বৈঠক হয় তাশাহহুদের জন্য। সুতরাং সঠিক কথা হবে প্রথম ও তৃতীয়।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের আমলের ভিত্তিতেই পরবর্তী যুগে প্রায় সকল আলেম একমত ছিলেন যে, ১ম ও ৩য় রাকাতের পরে না বসে সোজা দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

ইমাম মালেক, সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ, ইমাম আহমদ, ইসহাক প্রমুখ সকলের মত হলো, উক্ত বৈঠক করবে না।

আল্লামা আলাউদ্দীন আল মারদীনী র. আল জাওহারুন-নাকী গ্রন্থে লিখেছেন,

أجمعوا على أنه إذا رفع رأسه من آخر سجدة من الركعة الأولى والثالثة نهض ولم يجلس إلا الشافعي.( ٢/١٢٦)

অর্থাৎ ইমাম শাফেয়ী র. ছাড়া সকল ইমাম ও আলেমই এ বিষয়ে একমত যে, প্রথম ও তৃতীয় রাকাতে দ্বিতীয় সেজদার পর সোজা দাঁড়িয়ে যাবে, বসবে না। (দ্র, ২খ, ১২৬পৃ) হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেছেন, لم يستحبها الأكثر অর্থাৎ অধিকাংশ আলেম এটাকে মুস্তাহাবও বলেননি। (২/৩৫২)

Top