সকল আম্বিয়ায়ে কেরামদের জননীগণ ছিলেন মুসলমান
ইমাম সুয়ুতি বলেন- অতঃপর আমি সমস্ত আম্বিয়া কেরামদের জননী সম্বন্ধে গবেষণা করেছি এবং তাদের সবাইকে মু’মিনাত হিসেবে পেয়েছি।
অতএব হযরত ইসহাক, হযরত মুসা, হযরত হারুন ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাদের মাতাগণ এবং শীষ আলাইহিস সালাম এর মা হাওয়া তাদের সম্বন্ধে কুরআনে বর্ণনা রয়েছে। বরং কেউ কেউ তাদেরকে নবী বলেছেন।
আবার ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর মা হাজেরা. ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর মা এবং তাঁর সন্তানদের মাতাগণ, এবং দাউদ আলাইহিস সালাম, সুলাইমান আলাইহিস সালাম, যাকারিয়া আলাইহিস সালাম, ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম, শামাভীল আলাইহিস সালাম, শামাউন আলাইহিস সালাম ও যুলকিফল আলাইহিমুস সালাম তাদের মাতাগণের ঈমান সম্বন্ধে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
আবার কোন কোন মুফসসিরীনগণ হযরত নূহ ও ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর মায়ের ঈমান সম্বন্ধে দলিল পেশ করেছেন। যেমন আবু হাইয়ান স্বীয় তাফসিরগ্রন্থে ইহাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ইতোপূর্বে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে নূহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত কারো পিতা কাফির ছিলেন না। এজন্য নূহ আলাইহিস সালাম বলেছেন-
رب اغفرلى ولوالدى ولمن دخل بيتى مؤمنا-
অর্থ: হে প্রভূ আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করেছে তাদেরকে মা কর। (নূহ- ২৮)
ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বলেছেন-
ربنا اغفرلى ولوالدى وللمؤمنين يوم يقوم الحساب-
অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল মু’মিনকে মা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। (ইব্রাহিম-৪১)
কুরআনুল কারীমে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে শুধুমাত্র পিতার জন্য দোয়ার ব্যাপারে আপত্তি করা হয়েছে। মাতার জন্য আপত্তি করা হয় নাই। ইহা প্রমাণ করে যে তিনি মুমিনাহ ছিলেন।
ইমাম হাকিম মুস্তাদরাক গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করে ইহাকে সহিহ বলেছেন-
قال كانت الانبياء من بنى اسرائيل الاعشرة- نوح وهود وصالح ولوط- وشعيب وابراهيم- واسماعيل واسحاق ويعقوب ومحمد عليهم السلام-
অর্থ: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- দশজন নবী ব্যতিত অন্যান্য সবাই ছিলেন বনী ইসরাইল বংশের। এ দশজন হলেন নূহ আলাইহিস সালাম, হুদ আলাইহিস সালাম, সালিহ আলাইহিস সালাম, লুৎ আলাইহিস সালাম, শুয়াইব আলাইহিস সালাম, ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম, ইসমাইল আলাইহিস সালাম, ইসহাক আলাইহিস সালাম, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
বনু ইসরাইলের প্রত্যেকেই মু’মিন ছিলেন। ঈসা আলাইহিস সালাম এর আগমনের পূর্ব পর্যন্ত তাদের মধ্যে কেউ কাফির ছিল না। অতঃপর যে কুফুরি করার সে কুফুরি করল। অতএব বনি ইসরাইলী সমস্ত নবীদের মাতাগণ মুমিনাহ ছিলেন।
তাছাড়া বনী ইসরাইলের অধিকাংশ নবীগণই ছিলেন কোন নবীর সন্তান অথবা তাদের সন্তানদের সন্তান। অতএব নবুয়ত তাদের সন্তানদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে জারি ছিল, ইহাই প্রসিদ্ধ।
বনি ইসরাইলের বাহিরে যে দশজন নবীর কথা উল্লেখিত হয়েছে তাদের মধ্যে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম, হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম, হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম ও হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাদের মাতাগণের ঈমান প্রমাণিত।
এখন অবশিষ্ট রইল হযরত হুদ, হযরত সালেহ, হযরত লুত ও হযরত শুয়াইব আলাইহিমুস সালামগণ তাদের মাতাগণের ব্যাপারটি। এ ব্যাপারে দলিল প্রমাণের প্রয়োজন। তবে প্রকাশ্য অভিমত হল তারা ঈমানদার ছিলেন।
এমনিভাবে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মায়ের ব্যাপারটিও প্রমাণিত। এ ব্যাপারে সুক্ষ কথা হল তাঁকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারক দেখানো হয়েছে। এ হাদিসটি ইমাম আহমদ, ইমাম বাযযার, তাবরানী, হাকিম, এবং ইমাম বায়হাকী হযরত ইরবাদ বিন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال- انى عند الله لخاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينة وسأخبركم عن ذلك- دعوة ابى ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت-
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটির সাথে মিশ্রিত ছিলেন তখন আমি আল্লাহর নিকট খাতামুন নাবিয়্যিন মনোনীত ছিলাম। এ ব্যাপারে অচিরেই আমি তোমাদেরকে সংবাদ দেব। আমি হচ্ছি আমার পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর দোয়া ও ঈসা আলাইহিস সালাম এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের দর্শন, যখন তিনি নূর দেখেছিলেন। এমনিভাবে সমস্ত নবীগণের মাতাগণ সে নূর দেখেছেন। রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মা আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহা বেলাদতের সময় এমন একটি নূর দেখতে পেলেন যার রশ্মিতে সিরিয়ার প্রাসাদগুলো আলোকিত হয়ে গেল।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মা আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা গর্ভকালীন সময়ে এবং বেলাদতের সময় সে কুদরতি নিদর্শন অবলোকন করেছেন তা অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামদের জননীর দর্শনের চেয়ে অধিক আশ্চর্যজনক ছিল। এ ব্যাপারে আমি অনেকগুলো বর্ণনা ‘মুজিজার’ কিতাবে উল্লেখ করেছি।
নবীজীর দুধমাতাগণ ইসলাম গ্রহণ করেছেন
==========
কোন কোন উলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন- যে সমস্ত মাতাগণ নবীজীকে দুধপান করিয়েছিলেন তারাও ইসলাম গ্রহণ করেছেন-
قال ومرضعاته اربع- امه وحليمة السعدية وثويبة- وام ايمن-
অর্থ: চারজন মহিলা নবীজীকে দুধপান করিয়েছিলেন। মা আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা হালিমা সাদিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা, সুয়াইবা রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং উম্মে আয়মন রাদিয়াল্লাহু আনহা।