বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। 

আস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ্

কিতাবঃ নবী বংশের পবিত্রতা

লেখকঃ মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী (রহ.)

অনুবাদক - মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান হাবিবী।

Edited & posted by (Masum Billah Sunny)

প্রশ্ন- ওলামায়ে দ্বীন এ মাসয়ালার ব্যাপারে কি অভিমত প্রকাশ করেন যে, যায়েদ নামক ব্যক্তি বলে, ইসলামের মধ্যে সকল বংশ, গােত্র সমপর্যায়ের। কেউ কারাে থেকে উত্তম নয়। এ জন্য সৈয়দ, পাঠান, তেলি, নাপিত, ধােপা সবাই এক সমান। অবশ্য পরহেজগার বা খােদা ভীতির দিক দিয়ে উত্তম হতে পারে, তবে বংশের দিক দিয়ে নয়। সে এমনও বলে যে, নিজ আমল ব্যতীত বাপ-দাদার খােদা ভীরুতাও কোন কাজ দেবে না। যায়েদ দলিল হিসেবে নিম্নোক্ত আয়াতে করীমা পেশ করেছে।

★ তােমাদেরকে শাখা-প্রশাখা ও গােত্র-গােত্র করেছি, যাতে পরস্পরের মধ্যে পরিচয় রাখতে পারাে। নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তােমাদের মধ্যে অধিক সম্মানিত সেই, যে তােমাদের মধ্যে অধিক খােদাভীরু। 
[সূরা হুজরাত-১৩] 
★ এভাবে হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন‘
হে ফাতেমা! আমি তােমার থেকে আল্লাহর শাস্তি উঠিয়ে নিতে পারব না।'"

অপর দিকে ওমর নামক ব্যক্তি বলেন যে, না বরং সৈয়্যদ বংশীয়রা (আওলাদে রাসূল) সকল বংশের মধ্যে উত্তম এবং সম্মানিত (মুত্তাকী) বাপ-দাদার আমল অবশ্যই সন্তানদের কাজে আসবে। উভয়ের মধ্যে কার বক্তব্য সঠিক তা প্রমাণ সহকারে বিস্তারিত বর্ণনা করুন। 

উত্তরঃ - উপরিউক্ত উভয় বক্তব্যের মধ্যে ওমর নামক ব্যক্তির বক্তব্যই সঠিক এবং যায়েদ এর বক্তব্য ভুল এবং বাতিল। সা’দাতে কেরাম তথা আহলে বাইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা সকল বংশ ও গােত্রের চেয়ে উৎকৃষ্ট ও উত্তম। আর মুমিনদের মধ্যে যাঁরা সৎকর্মশীল তাঁদের আমলও ইনশা আল্লাহ্ তাঁদের সন্তানদের কাজে আসবে। উভয় মাসয়ালা কুরআনুল করীম, বিশুদ্ধ হাদীস এবং যুক্তির নিরিখে প্রমাণিত।

কুরআনে পাকের প্রামাণ্য দলিলঃ 

১. নম্বর দলিল
আল্লাহ্ পাক বলেন, আমি জান্নাতের মধ্যে মু'মিনদেরকে তাদের সন্তানদের সাথে মিলিয়ে দেব এবং তাদের নেক আমলে কোন ঘাটতি করা হবে না। [সূরা নূর-২১]

নবী বংশের পবিত্রতা এ আয়াতের মাধ্যমে বুঝা গেল যে, কিয়ামত দিবসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মু'মিন আওলাদগণ নবী আকরামের সাথেই থাকবেন। এর দ্বারা আওলাদে রাসূলের শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণিত হল। এবং নেককারদের আমল যে কাজে আসবে তাও জানা গেল। 

২.নম্বর দলিল।
"হে মাহবুব! আপনি বলে দিন, আমি এ (পথ প্রদর্শন ও ধর্ম প্রচার)'র বিনিময়ে তােমাদের নিকট হতে আমার আহলে বাইত এর ভালােবাসা ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না। 
[সূরা শুরা-২৩] "

এ আয়াতের এক তাফসীরে এমনও আছে যে, নবী আকরাম ইরশাদ করেন, “হে উম্মতগণ! আমার হকের কারণে আমার আওলাদকে ভালবাস।' তাহলে বুঝা গেল যে, নবী আকরামের কারণেই আহলে বাইতে রাসূলকে ভালবাসা অপরিহার্য, যা অন্য কোন বংশের মধ্যে নেই। 

৩ নম্বর দলিল
"জেনে রাখ, গণিমতের সম্পদ হিসেবে তোমরা যা কিছু পাবে তার পাঁচটি অংশ আল্লাহ্, রাসূল, আহলে বাইতে রাসূল, এতিম এবং মিসকিনদের জন্য।" [সূরা আনফাল-৪১]

তাহলে প্রতীয়মান হলাে যে, নবী-ই আকরামের জামানায় গণিমতের মালের মধ্যে আওলাদে রাসূলের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটা অংশ ছিল।

ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর মতে, "শুধু সে সময় নয় বরং অদ্যবধি আওলাদে রাসূলগণ তাঁদের অংশ পাবেন, সে সম্মান অন্য কোন বংশের প্রাপ্তি হয় নি।"
৪.নম্বর দলিল।
অনুবাদ: হযরত খাদ্বির আলায়হিস্ সালাম হযরত মূসা আলায়হিস্ সালামকে বললেন, এই দেয়ালের নিচে দুটো ছেলের গুপ্ত ধনভান্ডার রয়েছে। তাঁদের উভয়ের পিতা সৎ কর্মপরায়ণ ছিলেন, সে জন্য আপনার রবের ইচ্ছা যে, উভয় ছেলে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক হবে এবং তারা তাদের সম্পদ বের করবে।
[সূরা কাহফ-৮২]

এ আয়াতের মাধ্যমে জানা গেল যে, এ দুই এতিম শিশুর প্রতি আল্লাহ তাআলা এ কারণে দয়া পরবশ হয়েছেন যে, তাদের পিতা মুত্তাকী-পরহেযগার ছিলেন। প্রমাণিত হলাে যে, নেককার ব্যক্তির নেক আমলের কারণে সন্তানরা উপকৃত হয়। সে কারণে নবী-ই আকরামের নেক আমলের কারণে আওলাদে রাসূলগণ অবশ্যই উপকৃত হবেন।

৫. নম্বর দলিল
অনুবাদ: আমি নূহ ও ইব্রাহীম এর সন্তানৰ্দের মধ্যে নুবুয়্যত ও কিতাব রেখেছি।
[সূরা হাদীদ-২৬] 

অর্থাৎ- হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম ও হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম-এর পরে যত নবী এসেছেন সবাই তাঁদের সন্তানদের মধ্যেই হয়েছেন এবং সকল কিতাব সহীফা। তাঁদের উপরই এসেছে। হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম ও হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম-এর কারণেই তাঁদের সন্তানদের এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন হয়েছে। 

৬. নম্বর দলিল।
অনুবাদঃ হে ইয়াকুবের সন্তানগণ! ঐ সকল নে'মাতকে স্মরণ কর, যা আমি তােমাদের দান করেছি। এবং সে সময়ে পৃথিবীর মধ্যে তােমাদেরকেই শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। 
(সূরা বাকারা-৪৭)। 

এ আয়াতে কারীমা দ্বারা স্পষ্ট হলাে যে, সে সময়ে হযরত ইয়াকুব আলায়হিস সালাম-এর কারণে তাঁর বংশধরকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্মান দান করেছিলেন আর আজ বিশ্বে হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কারণেই আওলাদে রাসূল সকল বংশের উপর উঁচু মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। 

৭. নম্বর দলিল
অনুবাদঃ এবং যখন হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম বললাে স্বীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে, হে আমার সম্প্রদায়! তােমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করাে যে, তিনি তােমাদের মধ্য হতে পয়গাম্বর করেছেন, তােমাদেরকে বাদশাহ করেছেন এবং তােমাদেরকে তাই দিয়েছেন যা আজ সমগ্র জাহানের মধ্যে কাউকেও দেননি। (সূরা মাইদাহ-২০) 

এ আয়াতের মাধ্যমে প্রতীয়মান হলাে যে, কোন গােত্রের মধ্যে নবীর আগমন হওয়া এটা আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ নে'মাত। যার থেকে অন্যান্য গােত্র বঞ্চিত। এ কারণে আওলাদে রাসূলের উপর বিশেষ রহমত হচ্ছে নবীজী তাশরীফ এনেছেন। 

৮.নম্বর দলিল
নবী বংশের পবিত্রতা আনুবাদঃ হে নবীর বিবিগণ! যদি তােমরা খােদাভীরুতাকে অর্জন করাে, তাহলে তােমরা অন্য নারীর সমতুল্য নও। (সূরা আহযাব-৩২) 

প্রমাণিত হলাে যে, নবী-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নেক্কার বিবিগণ পৃথিবীর সকল নেককার বিবিগণের চেয়ে উত্তম। কেননা তাঁরা নবীর বিবি। এ কারণেই আহলে বাইতে রাসূলের মধ্যে যারা মুত্তাকী-পরহেযগার তাঁরা পৃথিবীর সকল নেককার পরহেযগার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কেননা তাঁরা নবী-ই আকরামের আওলাদ। 

৯.নম্বর দলিল
অনুবাদঃ হে আমার আহলে বাইত! আল্লাহ্ তা'আলা তােমার্দেরকে সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত ও পূতঃপবিত্র রাখতে চান। (সূরা আহযাব-৩৩) 

এ আয়াতে কারীমা দ্বারা জানা গেল যে, আল্লাহ পাক রাব্বল আলামীন আহলে বাইতে রাসূলকে পূতঃপবিত্র বলে ঘােষণা দিয়েছেন কেননা তাঁদের সম্পর্ক রাহমাতুল্লিল আলামীনের সাথে হয়েছে। এ বৈশিষ্ট্য অন্য কারাে ভাগ্যে জুটেনি এবং জুটবেও না। অন্যথায় আওলাদে রাসূলের বৈশিষ্ট্যই বা কি রইলাে। 

১০. নম্বর দলিল
অনুবাদ: হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছিলেন হে মাবুদ! আমার সন্তানদের মধ্যে এক দলকে তােমারই অনুগত কর।
(সূরা বাকারা-১২৮) 

এ দোয়ার মাধ্যমে বুঝা গেল যে, নবীর আওলাদগণ কখনাে পথভ্রষ্ট হবে না। পক্ষান্তরে, ইসলামের অন্যান্য গােত্র সমূহ পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। 

১১. নম্বর দলিল
অনুবাদঃ হে মাহবুব! আমি ঐ শহরের শপথ করছি, যে শহরে আপনি তাশরীফ এনেছেন। আর আপনার পিতা (পূর্ব পুরুষ) ইব্রাহীমের এবং তাঁর সন্তানের শপথ।
(সূরা বালাদ-১-৩)
"হাসান ও হুসাইন জান্নাতী যুবকদের এবং ফাতেমা জান্নাতী রমণীদের সরদার।" 
এ ধরনের কিছু হাদীস শরীফ নিম্নে পেশ করা হল। 
হাদীস-১
অনুবাদ: হযরত রাসূলে মাকবুল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা ইসমাঈল আলায়হিস্ সালাম-এর সন্তানদের মধ্যে কানানাকে নির্বাচিত করেছেন এবং বনী কানানা-এর মধ্যে কুরাইশকে এবং কুরাইশদের মধ্যে বনী হাশেমকে বেছে নিয়েছেন আর বনী হাশেম থেকে আমাকে মনােনীত করেছেন। 
★ মুসলিম, 
★ তিরমিযী ও 
★ মিশকাত শরীফঃ (ফাযায়েলে সৈয়্যদিল মুরসালিন অধ্যায়) 

প্রতীয়মান হল যে, উল্লেখিত বংশগুলাে পৃথিবীর অন্যান্য সকল বংশ অপেক্ষা উত্তম ও সম্মানিত। 

হাদীস-২
নবী করীম  (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-
"আমি তােমাদের মাঝে দুটি ভারী ও সর্বোত্তম জিনিস রেখে যাচ্ছি। 
এক, আল্লাহ তা'আলার কিতাব যার মধ্যে হেদায়াত এবং নূর রয়েছে। একে ভালভাবে ধারণ কর। কিতাবুল্লাহর উপর মানুষদিগকে উৎসাহ দিয়েছেন। 
দ্বিতীয় হচ্ছে, আমার আহলে বাইত। আমি তােমাদেরকে আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহর ভীতি প্রদর্শন করছি। তােমরা আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর।
(মুসলিম শরীফ) 

এ হাদীসে পাকের মাধ্যমে একথা দিবালােকের ন্যায় স্পষ্ট হল যে, হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বংশধর তথা আহলে বাইতে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা কুরআনে কারীমের মতই। যেমনিভাবে ঈমানের জন্য কুরআনকে মানা অপরিহার্য তেমনি নবী বংশের পবিত্রতা মানা অপরিহার্য, তেমনিভাবে নবীজীর আহলে বাইতকেও মানা অপরিহার্য। দ্বিতীয় কোন বংশ এ মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। 

হাদীস-৩
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূলে খােদা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, 
আল্লাহর ভালােবাসার কারণে আমাকে ভালবাসো আর আমার কারণে আমার আহলে বাইআতকে ভালবাসো। [তিরমিযী শরীফ]
হাদীস-৪
হযরত আবু যর গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত হরত রাসূলে আকদাস  (ﷺ)  ইরশাদ ফরমানতােমাদের মধ্যে আমার আহলে বাইত হচ্ছে হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম-এর কিস্তির মত। যে তাতে আরােহণ করবে সে মুক্তি পাবে আর যে দূরে থাকবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। 
(মুসনাদে ইমাম আহমদ শরীফ) 
হাদীস-৫
হযরত যায়েদ বিন আরকম রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলে আরাবী (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-আমি তােমাদের মাঝে ওই বস্তু রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে পরে তােমরা কখনাে পথভ্রষ্ট হবে না। এদের মধ্যে একটি অপরটির চাইতে বড়। এক, আল্লাহর কিতাব যা প্রশস্ত রশি। অপরটি আমার আহলে বাইত। এই উভয়টা একটা অপরটা হতে পৃথক হবে না। এমনকি আমার হাউজের উপরও আমার। পাশে থাকবে। অতঃপর তােমরা ভেবে দেখাে এ দুটির ব্যাপারে তােমরা কিভাবে অনুসরণ করবে। 
[তিরমিযী শরীফ]
হাদীস-৬
আল্লাহর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান এই সদকাহ (যাকাত) লােকদের মধ্যে বিলিয়ে দাও। এটা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরদের জন্য হালাল নয়।
[মুসলিম শরীফ] 

প্রতীয়মান হল, এ সমস্ত বরকত অর্জিত হয়েছে একমাত্র নবীজীর আওলাদ হওয়ার কারণে। আওলাদে রাসূল ব্যতীত অন্যরা যতই পরহেজগার হােক না কেন এ মহত্মতা কখনাে সৌভাগ্য হবে না। তাহলে বুঝা গেল, নবীজীর আওলাদগণ কতই উত্তম। 

হাদীস-৭
রাসূলে খােদা  (ﷺ) এরশাদ ফরমান-
"কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক বংশীয় ও আত্মীয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, তবে আমার বংশ ও আত্মীয়ের সম্পর্ক কাজে আসবে।" (দুররে মুখতার) 

উপরিউক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত কুলসুম বিনতে ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে শাদী করেছেন, যাতে মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। পক্ষান্তরে, 

আল্লাহ্ তা'আলা কালামে পাকে ঘােষণা করেন- 
অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে কোন বংশ পরিচয় কাজে আসবে না।[সূরা মুমিন-১০] 

এর ব্যতিক্রম হচ্ছে নবীজীর আহলে বাইত উক্ত আয়াতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। যেখানে হুজুর করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত দিবসে সকল উম্মতকে ক্ষমা করে দেবেন। সেখানে নিজের আওলাদকে ক্ষমা করবেনা এ কেমন করে হতে পারে? 

হাদীস-৮
অনুবাদ: রাসূল  (ﷺ)  এরশাদ ফরমান- সমস্ত মানবজাতি কুরাইশদের অনুসারী। সাধারণ মুসলমান মুসলিম কুরাইশের অনুসারী। আর কাফেরগণ কাফের কুরাইশের অনুসারী। (বুখারী, মুসলিম ও মিশকাত-মানকেৰে কুরাইশ অধ্যায়)
হাদীস-৯
অনুবাদ: নবী-এ দোজাহ  (ﷺ) এরশাদ ফরমান-এই প্রতিনিধিত্ব কুরাইশদের মধ্যেই বিরাজমান থাকবে। যতক্ষণ দু'জন ব্যক্তিও অবশিষ্ট থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম) 

এ হাদীস দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হল যে, পৃথিবীর সকল মুসলিম কুরাইশদের অনুসারী এবং ইসলামী প্রতিনিধিত্ব কুরাইশদের জন্যই নির্ধারিত।

যুক্তিনির্ভর দলিলঃ

যুক্তির দাবিও এই যে, হুযূর নবী-এ দোজাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বংশ পৃথিবীর সকল বংশ ও গােত্র অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মর্দাদা সম্পন্ন হওয়া। নিম্নে কয়েকটি যুক্তিনির্ভর দলিল পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছি: 

দলিল-১ 

যেখানে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সম্পর্ক হওয়ার কারণে কংকর, পাথর এবং জীব জন্তুরাও সম্মানের অধিকারী হয়। এমনকি নবীজীর নাক্কা শরীফ (উট) পৃথিবীর সকল উট থেকে উত্তম। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র শহর মদীনা মুনাওয়ারার ধুলি-কণা রাজা-বাদশাহর মুকুট থেকেও শ্রেয়। যেমন- 

আল্লাহ্ পাক রাব্বল আলামীন কুরআনে করীমে নবীজীর সেই শহরের শপথ করে বলেন-
সেখানে আল্লাহর নবীর প্রাণপ্রিয় আওলাদগণ অবশ্যই অন্যান্য সকল বংশ ও গােত্র অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান হবেনই । 

দলিল-২ 

পৃথিবীর অন্য মানুষ যাকাত ফিতরা খেতে পারবে, কিন্তু আওলাদে রাসূলগণ তা গ্রহণ করতে পারবে না। কেননা যাকাত হচ্ছে সম্পদের আবর্জনা। আওলাদে। রাসূল ব্যতীত অন্যরা উচু বংশীয় হলেও যাকাত গ্রহণ করতে পারবে, যদি তা গ্রহণের উপযােগী হয়। তাহলে বুঝা গেল নবীজীর আওলাদ শুধু উচু বংশীয়ই নয়; বরং তাঁরা পুতঃপবিত্র এবং উচু মর্যাদাসম্পন্নও। 

দলিল-৩ 

আওলাদে রাসূলগণ এমন সম্মানের পাত্র যে, নামাযের মধ্যেও দুরূদে ইব্রাহীমীতে হুযূর করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দুরূদ পড়ার সাথে সাথে আহলে বায়তে রাসূলের উপরও দুরূদ পাঠ করতে হয়। যেমন-

অথচ অন্য কোন গােত্র বা বংশকে দুরূদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ বিরল সম্মান একমাত্র আওলাদে রাসূলের জন্য নির্দিষ্ট। তাহলে প্রতীয়মান হয় যে, জাহানের সকল বংশ ও গােত্র অপেক্ষা আওলাদে রাসূলগণই সর্বশ্রেষ্ঠ। 

দলিল-৪
হযরত তালহা রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শরীরের রক্ত মােবারক মাটিতে পড়লে বেআদবী হওয়ার ভয়ে পান করে ফেলেছিলেন। এটা দেখে নবীজী ফরমালেন, তােমার কখনাে পেট ব্যাথা হবে না। এবং আল্লাহ তা'আলা তােমাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। 

রাসূলে খােদা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর রক্ত মােবারক পেটে পৌছলে যদি এ অবস্থা হয় তাহলে যে আওলাদে পাক তাঁর নূরানী রক্ত মােবারকেরই অংশ তাঁদের মর্যাদা কেমন হবে। তা আর বলার অবকাশ রাখে না। 


দলীল- ৫ 


হুযূর করীম  (ﷺ)  সমস্ত নবীদের সর্দার তেমনিভাবে হুযূরের প্রতিটি কাজ-কর্ম সকল নবী-রাসূলের কাজ-কর্ম অপেক্ষা উত্তম। 

নবী করীম  (ﷺ) এর উম্মত অন্যসব নবীর উম্মতদের থেকে উত্তম। 

আল্লাহ পাক বলেন,  - 
অর্থাৎ তােমরা সকল উম্মত অপেক্ষা উত্তম। 
নবীজীর বিবিগণ পৃথিবীর সকল বিবি থেকে উত্তম।
 
আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-
অর্থাৎ হে নবীর বিবিগণ! তােমরা অন্য নারীদের মত নও।"

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবায়ে কেরাম অন্যান্য নবীর সাহাবীদের থেকে উত্তম। 

উক্ত নিয়মের ভিত্তিতে নবীজীর আওলাদগণ অন্য সব নবী-রাসূলের আওলাদগণ অপেক্ষা উত্তম হওয়া আবশ্যক। 


কেননা, হুযূর-ই আকৃদাস সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সম্পর্কিত সকল বস্তু যদি উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হয়ে যায়, তবে আওলাদে রাসূল কেমন সম্মানের অধিকারী তা ভেবে দেখা দরকার।

এ প্রসঙ্গে কিছু আপত্তির খণ্ডনঃ এ পর্যন্ত প্রশ্নকারীর উত্তর প্রদান করা হয়েছে। এখন যায়েদের উত্থাপিত আপত্তির উত্তর দেয়া হচ্ছে।

আপত্তি -১ যায়েদ আয়াত পেশ করেছে
"অর্থাৎ আমি তােমাদেরকে গােষ্ঠী ও গােত্র গােত্র করেছি, যাতে তােমরা একে অপরকে চিনতে পারাে, নিশ্চয় তােমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট বেশী সম্মানিত হচ্ছে তােমাদের মধ্যে বেশী পরহেযগার বা খােদা ভীরুরাই।"

সুতরাং আওলাদে রাসূলের শ্রেষ্ঠত্বকে আলাদা করার যুক্তি কি? এর উদ্দেশ্য এই নয় যা যায়েদ বুঝেছে। কেননা ইসলামের মধ্যে যে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব আওলাদে রাসূলের জন্য রয়েছে তা অন্য কোন বংশের মধ্যে নেই। যদি এ আয়াতের উদ্দেশ্য ওটা হত তাহলে অন্যান্য আয়াতের সাথে দ্বন্ধ লেগে যেত। যেগুলাে আমি (লেখক) নিবেদন করেছি। এই আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে সমস্ত মুসলিমই সম্মানিত, সে যে বংশেরই হােক না কেন। কোন ইসলামী গােত্রকে অসম্মানী বা ছােট মনে করাে না। যে রকম আরবদের মধ্যে রীতি ছিল যে, কিছু গােত্রকে তারা হীন মনে করত। অথচ মুসলমানদের মধ্যে কেউ হীন নেই। হ্যাঁ কেউ কারাে অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। 

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-
অর্থাৎ সম্মান আল্লাহ্ তাআলা, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্য।"

এর মধ্যে সকল মুসলিম অন্তর্ভুক্ত। সাদৃশ্য ব্যতীরেকে এটা বুঝানাে হয়েছে যে, সকল নবী সম্মানী ও আল্লাহর প্রিয়। কোন নবীর প্রতি সামান্যতম বেআদবী প্রদর্শন করলেও কুফরী। তবে নবীগণ একজন অপরজন অপেক্ষা উত্তম। 


আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেন,
(তারা হলেন রাসূল ! তাঁদের এককে অপরের উপর অধিক শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।) 

এর মর্মার্থ এও হতে পারে, আল্লাহ্ কাউকে সম্মানিত করার পর অহংকার বশত যাতে তাক্ওয়া পরহেযগারী ছেড়ে না দেয়। এটা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর নিকট সেই-ই বেশী উচু মর্যাদার যে যত বেশী মুত্তাকী। সুতরাং বড় মাপের জাতি হওয়ার জন্য বেশী বেশী খােদাভীরুতার প্রয়ােজন। অথবা এর মর্মার্থ এটাও হতে পারে, যেন কোন মুসলমান কোন মুসলমানকে জাতিগত কারণে ভৎসনা না করে, কাউকে ছােট মনে না করে। প্রত্যেক মুসলমান সম্মান পাবার দাবীবার।

আপত্তি-২ 
কেউ কেউ এ আয়াত উত্থাপন করে-
(অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে তােমাদের কোন আত্মীয়তা এবং সন্তান-সন্তুতি কখনাে কোন কাজে আসবে না।) 

এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, কিয়ামত দিবসে না কোন সম্পর্ক কাজে আসবে, না কোন সন্তান। এ আত্মীয়তা ও সন্তান বলতে সকলই এখানে অন্তর্ভুক্ত। চাই সে নবীদের সন্তান হােক বা অলীদের সন্তান হােক। এর জবাব হচ্ছে- এ আয়াতে কারীমায় সমস্ত মুসলিমকে সম্বােধন করা হয়েছে, যাদের সন্তান ও আত্মীয়-স্বজন কাফের ছিল এবং ওই মুসলিম-আত্মীয়তার উপর ভিত্তি করে জোর খাটিয়েছিল। তিনি এরশাদ ফরমান- তােমরা ইসলামের মােকাবেলায় ওই কাফের আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তা করবে না। এ আয়াতে নবীগণের আত্মীয় ও সুসন্তানদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কেননা নিম্ন লিখিত আয়াতে 

আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেছেন-
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তােমরা আমার এবং তােমাদের শত্রু তথা কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করাে না। (সূরা মুমতাহিনা-১) 

এ আয়াত হযরত হাতেব বিন বালতা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। 

তিনি নিজের সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য ইসলামের বিজয়কে নিশ্চিত জেনে, মুসলমানদের কিছু গােপন তথ্য তাদের কাছে লিখে পাঠিয়েছিলন। কেননা তাঁর সন্তান মক্কায় কাফেরদের নিকট ছিল। তিনি মনে করেছিলেন জয় অবশ্যই মুসলমানদের হবে, তবে এ খবর পাচারের বিনিময়ে হয়ত তারা তাঁর সন্তানদের প্রতি জোরজুলুম, চালাবে না। 

আর উপস্থাপিত আয়াতের শেষ ভাগে রয়েছে 

"অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামত দিবসে তােমাদের এবং তােমাদের সেই আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে ফয়সালা করবেন যে, তােমাদের জান্নাতে এবং তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।"

এ আয়াতের পরক্ষণেই আল্লাহ্ তা'আলা হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম-এর ঘটনা মুসলমানদের। অবহিত করেছেন, তারা ইসলামের মােকাবেলায় নিজেদের কাফের গােত্র থেকে সম্পূর্ণ পৃথকতা অবলম্বন করেছেন। উপরিউক্ত নিদর্শনাবলী থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উপরােল্লিখিত আয়াতে কাফের আত্মীয়তারই কথা বলা হয়েছে। এ আয়াতের তাফসীর হিসেবে নিম্নোক্ত আয়াতে কারীমাও পেশ করা যায়।

অর্থাৎ তােমরা মুমিনদের এ অবস্থায় পাবে না যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দুশমনদের সাথে ভালবাসা স্থাপন করবে যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, সন্তান অথবা আত্মীয় হােক না কেন। (সূরা মুযাদালা-২২)

আল্লাহ্ তা'আলা আরাে এরশাদ ফরমান-

অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তােমাদের কতেক বিবি এবং সন্তান তােমাদের শত্রু, তােমরা তাদেরকে ছেড়ে দাও ।[সুরা তাগাবুন-১৪]

উল্লিখিত আয়াতসমূহ দ্বারা কাফের আত্মীয় ও তাদের সন্তানই উদ্দেশ্য।

আপত্তি-৩
আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন-
"অর্থাৎ- অতঃপর যখন শিংগায় ফুৎকার করা হবে, তখন না তাদের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে, না একে অপরের কথা জিজ্ঞাসা করবে।
[সূরা মু'মিন-১০১]

এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, কিয়ামত দিবসে সমস্ত সম্পর্কই বৃথা। চাই সেটা নবীদের সাথে হােক অথবা অলীদের সাথে হােক, কিয়ামতের ময়দানে কোন কাজে আসবে না। সুতরাং নবী বংশ আর সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এ আপত্তির জবাবউক্ত আয়াতে কারীমায় কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা ও তার সূচনা লগ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যখন আল্লাহ্ তা'আলা আদল-ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার প্রকাশ করবেন তখন কোন বংশ পরিচয়, বন্ধু তু ও আত্মীয়তার সকল সাহায্য-সহযােগিতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সবাই স্ব-স্ব চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে। কেউ কাউকে নিয়ে ভাববে না।

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-
অর্থাৎ সে দিন (কিয়ামত দিবসে) মানুষ নিজের ভাই, পিতা, মাতা, স্ত্রী, সন্তান ও বন্ধু-বান্ধব থেকে পালিয়ে যাবে।"

সবারই অবস্থা একই হবে। একে অপর থেকে দূরে থাকবে। এ আয়াতে কারীমায় কতেক বংশের সম্মানকে অস্বীকার করা হয়নি। বংশ মর্যাদা এক জিনিস আর কিয়ামত দিবসে ভয়াবহতা অন্য জিনিস। এমনকি কিয়ামত দিবসের প্রারম্ভে অন্যান্য নবী-রাসূল আলায়হিমুস সালাম-এর সুপারিশও গ্রহণ করা হবে না। শুধু গ্রহণযােগ্য হবে আমাদের আকা ও মওলা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ। তাহলে কি কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলার মহত্বের সামনে সম্মানী ব্যক্তিদের কোন সম্মান থাকবে না? না এমন কখনাে নয়। কেননা মনে রাখতে হবে যে, কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা সাধরণ মানুষের জন্য। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলার কিছু বিশেষ বান্দা এমন রয়েছে, যাঁরা এর ভয়াবহতা থেকে মুক্ত।

এ ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন-
অর্থাৎ তাদের কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতায় বিষন্ন করবে না এবং ফেরেশতারা তাঁদেরকে সম্ভাষণ জানাবেন। (সূরা আম্বিয়া-১০৩)


আল্লাহ্ তা'আলা আরাে বলেন-
অর্থাৎ সাবধান! সে দিন নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলার বন্ধুদের জন্য কোন ভীতি ও পেরেশানী থাকবে না। (সূরা ইউনুস-৬২)।

বরং কুরআনে কারীম থেকে একথা প্রমাণিত হয় যে, সে দিন আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে এবং অন্যান্য সকল বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হবে।

আল্লাহ্ তা'আলা আরাে বলেন,
অর্থাৎ- কিয়ামত দিবসে কতেক বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হবে। তবে খােদাভীরুদের অবস্থা ভিন্ন। (সূরা জুখরুফ-৬৭)

আপত্তিকারকের উত্থাপিত আয়াতে করীমা দ্বারা না এটা সাব্যস্ত হয় যে, দুনিয়ায় আওলাদে রাসূলের কোন মর্যাদা নেই, না কিয়ামত দিবসে নবী বংশ কোন কাজে আসবে না। আপত্তি-৪ হাদীস শরীফে আছে যে, পৃথিবীর সকল মানব হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম থেকে সৃষ্টি। আর হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম -এর সৃষ্টি মাটি থেকে। তাহলে প্রতীয়মান হল যে, সকল মানব মর্যাদার দিক দিয়ে বরাবর এবং কেউ কারাে উপর মর্যাদাবান বা সম্মানী নয়।

এ আপত্তির জবাব উক্ত হাদীস শরীফেরও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ কোন বংশ অন্য কোন বংশকে মন্দ বা হীন মনে না করে। কেননা মৌলিক দিক দিয়ে সকলেই মাটি থেকে। আর মাটির মধ্যে রয়েছে অনুনয় ও বিনয়। এই বিনয়ের কারণেই মাটি থেকে ফুল-ফল, ক্ষেত-খামার ও বাগান ইত্যাদি হয়। পক্ষান্তরে, আগুনের মধ্যে রয়েছে গর্ব ও অহংকার। অথচ আগুন থেকে ও রকম কিছুই হয় না।

হাদীসে নবী বংশের পবিত্রতা মর্মার্থ এই নয় যে, এক বংশ অপর বংশ থেকে উত্তম নয়। কেননা মানবজাতি সবারই মূল হচ্ছে মাটি এবং মাটির ক্ষেত্রেও কিন্তু সে রকম অর্থাৎ এক মাটি অপর মাটি থেকে উত্তম। 

যেমনঃ
মদীনা শরীফের মাটি পৃথিবীর সকল মাটি থেকে উত্তম।

মসজিদের মাটি বাজারের মাটি থেকে উত্তম। 
"""হযরত জিব্রাঈল আমিনের ঘােড়ার পদধুলি ফিরআউনের ঘােড়ার পদধুলি থেকে উত্তম।""" (আল কুরআন)।

ক্ষার জাতীয় মাটি থেকে উর্বর জমির মাটি উত্তম। কেননা ক্ষার জমিতে কোন ফসল উৎপাদন হয় না। তেমনিভাবে নবী-রাসূলগণের সাথে সম্পর্কিত মাটি অন্যদের সাথে সম্পর্কিত মাটি থেকে উত্তম। আওলাদে রাসূলের এ বিরল সম্মান সত্তাগত নয়। বরং এ জন্য যে, নবুয়তই তাঁদের সম্মান বৃদ্ধি করে দিয়েছে।

'আপত্তি নং-৫

হাদীসে পাকে রয়েছে, আল্লাহর প্রিয় হাবীব  (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
অর্থাৎ হে ফাতেমা! আমার সম্পদ থেকে তােমার যা ইচ্ছা চাও। তথাপি তােমার থেকে আমি আল্লাহর শাস্তি রহিত করতে পারব না।"

এ হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয় যে, স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কলিজার টুকরা মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তাকে কোন উপকার করতে পারছেন না। সেখানে অন্য আওলাদে রাসূলদের কি কাজে আসবে। তাহলে বুঝা গেল, অন্য বংশের যে অবস্থা নবী বংশেরও সে অবস্থা।

উক্ত আপত্তির জবাব

এ হাদীস শরীফ ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকের। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমান এর আদেশ দিচ্ছেন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, হে ফাতেমা! ঈমান গ্রহণ কর। যদি তুমি ঈমান গ্রহণ না করাে তাহলে বংশ কোন কাজেই আসবে না। আর যে ব্যক্তি নবী বংশের কিন্তু ঈমান গ্রহণ করেনি। তাহলে সে আওলাদে রাসূলের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা সেততা মুসলমানই হয়নি। 

আল্লাহ্ তা'আলা নূহ (আ.) কে সম্বােধন করে বলেন-
অর্থাৎ হে নূহ! নিশ্চয়ই এ কেনান তােমার বংশের নয়। কেননা সে বেঈমান।[সূরা হুদ-৪৫]

তাই কোন রাফেযী, খারেজী, ওহাবী, জামাআতী সৈয়্যদ তথা আওলাদে রাসূল নয়। কেননা সৈয়্যদ হওয়ার জন্য ঈমান আবশ্যক। আর তারা তাে ঈমান থেকে বঞ্চিত। কুফুরীর কারণে সকল প্রকার সম্পর্ক ও বংশ নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্যে কাফেরের সাথে না মু'মিনের বিবাহ হতে পারে না। মু'মিনের সম্পত্তির অংশীদার

হয় না শুধুমাত্র মুমিনের কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। যেখানে কাফের সন্তানগণ মু'মিন পিতার সম্পদের অংশ পায় না, সেখানে কাফেররা বংশীয় মান-মর্যাদা কিভাবে পাবে? আবু লাহাব হাশেমী বংশের কিন্তু তার কোন মর্যাদা নেই। সে কারণেই আওলাদে রাসূলগণ শুধুমাত্র মুমিন হলেই নবী বংশের কারণে অবশ্যই উপকারে আসবে। নবীজির সাথে সম্পর্ক হওয়ার কারণে সকল মুসলমান উপকার লাভ করবে অর্থাৎ জাহান্নামীরা জান্নাত এবং অপরাধীরা ক্ষমা লাভ করবে। যেই নবীর সাথে সম্পর্ক হওয়ার কারণে এত লাভ! তবে কি বংশ কোন কাজে আসবে না?

আল্লাহ্ তা'আলা কালামে মাজীদে এরশাদ ফরমান-

"অর্থাৎ হে মাহবুব! যদি তারা নিজেদের উপর জুলুম করার পর আপনার দরবারে আসে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তাহলে আপনি তাদের জন্য সুপারিশ করবেন এবং তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে। [সূিরা নিসা-৬৪]

আল্লাহ্ তা'আলা আরাে বলেন-

অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে শাস্তি দেবেন না। কেননা আপনি নবী তাদের মধ্যে রয়েছেন। (আনফাল-৩৩)

স্বয়ং নবীয়ে আকরাম  (ﷺ)  ফরমান-

অর্থাৎ আমার সুপারিশ আমার উম্মতের বড় বড় গুনাহগারদের জন্য। "

আল্লাহর প্রিয় হাবীব  (ﷺ)  এরশাদ ফরমান-

"অর্থাৎ হুযূর  (ﷺ) এর সুপারিশে অনেক বড় দল দোযখ থেকে বের হবে, যাদেরকে জাহান্নামী বলা হয়।"

শাফায়াতে মােস্তফা নিয়ে কুরআন পাকের অনেক আয়াত ও হাদীসে পাক রয়েছে। যেগুলাে থেকে প্রতিয়মান হয় যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই নবীজীর শাফায়াত নসীব হবে। যদি সে ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করে। সুতরাং সাব্যস্ত হল, আওলাদে রাসূলগণ নবীজির শাফায়াতের বিশেষ উপকার লাভ করবে।

নবী বংশের পবিত্রতা পরিশিষ্ট এবং আবশ্যকীয় উপদেশঃ

আওলাদে রাসূল সম্পর্কিত কিছু জরুরী পর্যালােচনা এবং বিশেষ উপদেশাবলী স্মরণ রাখা আবশ্যক।

প্রথম উপদেশঃ

মাওলা আলী শেরে খােদা (রা.) এর সন্তানগণ যারা মা ফাতেমাতুজু জাহরা (রা.) এর সাথে সম্পর্কিত, তাদেরকে সৈয়্যদ তথা আওলাদে রাসূল বলে। আর যারা হযরত আলী (রা.) এর অন্যান্য বিবির সন্তানগণ, তাদেরকে আলভী বলে সৈয়্যদ নয়। যেমন মুহাম্মদ বিন হানাফিয়্যাহ প্রমুখ। এ সকল মান-মর্যাদা সেই সন্তানদের জন্য যারা মা। ফাতেমা (রা.) এর উদর মােবারক থেকে ভূমিষ্ট হয়েছে। কেননা মা ফাতেমা (রা.) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বংশের প্রস্রবণ।

দ্বিতীয় উপদেশঃ
হয়ূর নবী-এ আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূরানী সন্তানদের সৈয়্যদ বলা হয় দুটি কারণে। 

এক, নবীজী  (ﷺ)  উভয় শাহজাদাকে তথা ইমাম হাসান ও হােসাইন (রা.) কে উদ্দেশ্য করে ফরমান-
"অর্থাৎ আমার হাসান ও হােসাইন (রা:) বেহেশতী যুবকদের সরদার।"
এমনিভাবে নবীজি  (ﷺ)  এরশাদ ফরমান-
অর্থাৎ আমার এই সন্তান সৈয়্যদ তথা সর্দার। মহান আল্লাহর নিকট প্রত্যাশা তার মাধ্যমেই মুসলিম সম্প্রদায় আত্মশুদ্ধি লাভ করবে। "

এ কারণেই যেহেতু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসনাইনে কারীমাইনকে সৈয়্যদ বলে আখ্যায়িত করেছেন, সেহেতু তাদের সন্তানদেরকেও সৈয়্যদ বলা হয়। দুই. আওলাদে রাসূলকে এ জন্য সৈয়্যদ বলা হয় যে, নবী আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপাধি হচ্ছে সৈয়্যদুল মুরসালিন তথা নবীকুল ম্রাট। যেহেতু তিনি সমস্ত নবী-রাসূলদের সর্দার। সেহেতু তাঁর নূরানী সন্তানগণ মুসলিমদের সর্দার। সুবহানাল্লাহ! হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নবীদের সরদার। মাওলা আলী শেরে খােদা (রা.) সকল অলীদের সরদার। হযরত মা ফাতেমা যাহরা (রা.) সকল মুসলিম রমণীর সরদার তার হাসনাইন কারীমাঈন বেহেশতের সকল যুবকদের সরদার এবং সকল শইদেরও সরদার।

তৃতীয় উপদেশঃ

সৈয়্যদ তিনিই হবেন, যাঁর পিতা সৈয়্যদ। যদি মাতা সৈয়্যদ হয় কিন্তু পিতা সৈয়দ নয়, তাহলে তাকে সৈয়্যদ বলা যাবে না। এবং তার উপর সৈয়্যদ এর বিধানও প্রবর্তিত হবে না। অর্থাৎ সে যাকাত গ্রহণ করাও বৈধ হবে। কেননা বংশ পরিচয় বাবার দিক থেকে মায়ের দিক থেকে নয়। আর যদি পিতা-মাতা উভয়ই সৈয়্যদ হয় তাহলে দু' দিক থেকেই নজীবুত তরফাইন’ তথা অভিজাত সৈয়্যদ। যেমনবড়পীর হযরত গাউসুল আজম আব্দুল কাদের জিলানী (রা.)। যার পিতা হাসানী এবং মাতা হােসাইনী । ইমাম মাহদী (আ.) ও হাসানী এবং হােসাইনী ।

চতুর্থ উপদেশঃ

আওলাদে রাসুলের সে সমস্ত ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে এর মর্মার্থ এই নয় যে, তারা নেক আমল করবে না তথা নামায পড়বে না, রােযা রাখবে না। শুধু বংশীয় কারণে তারা স্বতন্ত্র সম্মানের অধিকারী হয়েছেন। কোন আমলের প্রয়ােজন নেই, এটা ভুল ধারণা। আওলাদে রাসুলের জন্য প্রযােজ্য যে, তারা অন্যদের থেকে আরাে বেশি নেক আমল করবে। যাতে সকলের জন্য তা দৃষ্টান্ত হয়। প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদেরকে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের চাইতে বেশি টাকা খরচ করতে হয়। তাই তাদের জন্য আবশ্যক যে, তাঁরা তাঁদের পূর্ব পুরুষদের নমুনা হওয়া। ইমাম হােসাইন (রা.) কারবালার মরু প্রান্তরে যুদ্ধের ময়দানে তলােয়ারের নিচে নামায আদায় করেছেন আর তাঁর সন্তানগণ যদি বিনা কারণে নামায ছেড়ে দেন। তাহলে তা অবশ্যই আফসােসের বিষয়।

পঞ্চম উপদেশঃ

নবী বংশের যে পবিত্রতা বা মহাত্ত্বতা বর্ণনা করা হয়েছে, তা সেই সকল সৈয়্যদের জন্য প্রযােজ্য যারা সত্যিকার বংশীয় সৈয়্যদ। অর্থাৎ হযরত মা ফাতেমা (রা.) থেকে নিয়ে সে পর্যন্ত তার বংশে কোন ব্যক্তি গায়রে সৈয়্যদ তথা সৈয়্যদ নয়, এমন যেন না হয়। তবে আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে বর্তমান সময়ে নকল সৈয়্যদের আধিক্যতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সৈয়্যদ না হয়ে যারা সৈয়্যদ দাবী করে এটা শুধু হারামই নয় বরং জঘন্যতম মহাপাপ।। রাসূলে খােদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সমস্ত গােলাম তথা দাসকে অভিসম্পাত দিয়েছেন যারা নিজেদেরকে অন্য মুনিবের দিকে সম্পর্কিত করে। আর সে সমস্ত ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন যারা নিজেদের অন্য ৰংশের দাবীদার সাব্যস্ত করে। সুতরাং যারা সৈয়্যদ নয় তবে সৈয়্যদ দাবী করে তারা নবীজীর পক্ষ থেকে অভিসম্পাত প্রাপ্ত। তেমনি সে নিজে সৈয়্যদ না হয়েও সৈয়্যদ দাবী করে,সে তার মাকে গালি খাওয়ানাের সমান। কেননা সে তার মায়ের স্বামী তথা বাবাকে সৈয়্যদ বানালাে।

অথচ দেখুন! হযরত জায়েদ বিন হারেছা (রা.) তথা হারেছের পুত্রকে নবীজি নিজের ছেলে বলেছেন। এটা দেখে লােক সকল তাকে জায়েদ বিন মুহাম্মদ তথা নবীজির সন্তান বলতে লাগল। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরােপ করে আয়াত নাযিল করেন।

আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ ফরমান-
অর্থাৎ আল্লাহ্ আপনার পালক পুত্রকে আপনার পুত্র বানায়নি। এটা শুধু আপনার মুখের কথা। (সুরা আহযাব-৪)

এবং তাকেও নিষেধ করে আল্লাহ্ বলেন-
অর্থাৎ তাদেরকে তাদের পিতার নামেই আহ্বান করাে। আল্লাহর নিকট এটাই পছন্দনীয়। যদি তাদের পিতার নাম জানা না থাকে তাহলে ধর্মে তারা তােমাদের ভাই। (সুরা আহযাব-৫)

যেখানে নবীজী স্বয়ং হযরত জায়েদ (রা.) কে লালন পালন করেছেন, সেখানে তাঁকে পুত্র বলা হারাম করে দিয়েছেন। তাহলে যারা সৈয়্যদ না হয়েও নিজেদের সৈয়্যদ দাবী করে তারা কত বড় অপরাধী তা উক্ত আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায়। তেমনিভাবে যে সমস্ত ব্যক্তি রাগান্বিত অবস্থায় নিজেদের স্ত্রীকে মা সম্বােধন করে, তাদের ব্যাপারে

কোরআন মজীদে এরশাদ হচ্ছে-
অর্থাৎ আর তােমরা যে সমস্ত স্ত্রীগণকে নিজের মায়ের সমতুল্য কর, আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে তােমাদের মা বানায়নি। (সূরা আহযাব-৪)


কুরআন করীমের অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা জিহারকারীদের ব্যাপারে ইরশাদ করেন-
অর্থাৎ তােমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে মায়ের সমতুল্য বলে দেয় তারা তাদের মা নয়। তাদের মা তাে তিনি যার থেকে তারা ভূমিষ্ট হয়েছে। নিঃসন্দেহে তারা মন্দ ও মিথ্যা বলে। (সূরা মুজাদালা-২)

যেখানে নিজেদের বিবিকে মায়ের সাথে তুলনা করাকে কুরআন করীম মন্দ ও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সেখানে অন্যকে নিজের পিতা সম্বােধনকারী ও কুরআনে মজীদের ফয়সালা অনুযায়ী বড় মিথুক ও দোযখে কঠিন শাস্তির উপযােগী হবে। তাহলে স্পষ্ট হয়ে গেল, যারা সৈয়্যদ না হয়েও নিজেদের সৈয়্যদ বলে বেড়ায় তারা তাদের মাকে গালি দেয়। এবং তারা সরকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অভিশপ্ত আর আল্লাহ তা'আলার নিকট মিথুক, থােকাবাজ এবং জাহান্নামের খােরাক।

মুসলিম শরীফের কিতাবুল ঈমানে আছে-
অর্থাৎ "যে ব্যক্তি নিজেকে অন্যের পিতার দিকে সম্পর্কিত করে অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়। তাহলে তার জন্য বেহেশত হারাম।" (মুসলিমঃ কিতাবুল ইমান)
অন্য রেওয়ায়েতে আছে-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে অস্বীকার করল, সে কাফির। "

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-

"অর্থাৎ কোনাে মুসলিম ব্যক্তি জেনে-বুঝে নিজেকে যদি অন্য পিতার দিকে সম্পর্কিত করে তার উপর জান্নাত হারাম।"
ষষ্ঠ উপদেশঃ

যদি কোন সৈয়্যদ বংশের ব্যক্তি ইসলাম পরিত্যাগ করে হিন্দু, শিখ, কাদিয়ানী, ওহাবী, রাফেযী ইত্যাদি হয়ে যায় তাহলে সে না সৈয়্যদ থাকবে না এ মর্যাদার অধিকারী হবে। যা ইতােপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা কুফুরীর কারণে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার সমস্ত সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে গেছে এবং শরীয়তের ফয়সালা অনুযায়ী সে পিতৃপরিচয়ও দিতে পারবে না। 


কুরআনে করীমে নূহ (আ.) এর পুত্র কেনানের বিষয়ে স্পষ্ট ঘােষণা করা হয়েছে-
অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা বলল, হে নূহ! এই কেনান তােমার পরিবারের কেউ নয়। নিশ্চয়ই তার আমল বিনষ্ট । (সুরা হুদ-৪৫)

যদি নূহ (আ.) এর পুত্র কেনান কুফুরির কারণে সন্তান না থাকে। তাহলে সে সমস্ত বে-দ্বীনরা কিভাবে নবীজীর আওলাদ হতে পারে? তেমনিভাবে

কোরআন করীমে আস বিন ওয়ায়েল এর ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন-
"অর্থাৎ হে মাহবুব। নিশ্চয়ই আপনার সাথে বেআদবীকারী নির্বংশ।"

দেখুন! আস বিন ওয়াসেল সন্তানের পিতা ছিল অথচ আল্লাহ্ তা'কে সন্তানহীন বলল। কেননা তার সকল সন্তান মুসলমান হয়ে গেল আর সে কাফের থেকে গেল। ফলে সে তাদের পিতা রইল না আর তারা তার সন্তান রইল না। অতএব, জানা গেল যে, ধর্মের ভিন্নতার কারণে বংশ পরিচয় নষ্ট হয়ে যায়। তাই বংশ ও ধর্ম এক হওয়া শর্ত। শুধু তাই নয় তাদের উপর শরীয়তের বিধি-বিধানও আরােপ করা যায় না। কেননা মুসলিম পিতার কাফের সন্তানরা মিরাস তথা উত্তরাধিকারী অংশ থেকে বঞ্চিত হয়। ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে কাফের সন্তানকে পিতার কবরস্থানে দাফন করা যায় না। পিতা তার কাফের সন্তানের কাফন-দাফনের ব্যবস্থাও করতে পারে না। বরং অনেক মু'মিন মা আছেন যারা কাফের সন্তান থেকে পর্দা করে চলেন। কাফের সন্তানের সাথে মু'মিনা নারীর বিবাহ পর্যন্ত দূরস্ত নয়। অতএব, একথা প্রতিয়মান হল যে, মুসলিম পিতার কাফের সন্তানরা জানাযা, উত্তরাধিকার অংশ, বিবাহ, কাফন-দাফন ইত্যাদিসহ শরীয়তের সকল বিধান থেকে বঞ্চিত। এমনিভাবে যে ব্যক্তি সৈয়্যদ না হয়েও নিজেকে সৈয়্যদ দাবী করে সে মুরতাদ তাে মুসলমানও নয়। সৈয়্যদ হওয়া তাে অনেক দূরের কথা! আলহামদু লিল্লাহ! আল্লাহপাক রাব্বল আলামীনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। যিনি শত ব্যস্ততার মধ্যেও এই ফতােয়া পরিপূর্ণ করার তাওফিক দান করেছেন। পরিশেষে আল্লাহ্ তা'আলা আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে কবুল করুন। আমিন। বেহুরমতে সৈয়্যদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

Top