❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (০৭)]
○ অধ্যায়ঃ [ كتاب الايمان : ঈমান পর্ব ]
[ وعن قال قال رسول الله ﷺ ثلث من كن فيه وجدبهن حلاوة الايمان من كان الله ورسوله احب اليه مما سواهما ومن احب عبدا لايحبه الا الله ومن يكره ان يعود فى الكفر بعد ان انقذه الله منه كما يكره ان يلقى فى النار .]
: (متفق عليه)
অর্থাৎঃ তাঁরই (হযরত আনাস رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ "যার মধ্যে তিনটি স্বভাব থাকবে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে-(টীকাঃ ৩৯) যার নিকট আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল অন্য সবকিছু থেকে অধিক প্রিয়, (টীকাঃ ৪০) যে ব্যক্তি বান্দার সাথে শুধু আল্লাহ্'র সন্তুষ্টির জন্যই ভালবাসা রাখে (টীকাঃ ৪১) এবং যাকে আল্লাহ্ কুফর থেকে মুক্তি দেবার পর সে কুফরে পুনরায় ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার ন্যায় মন্দ মনে করে।" (টীকাঃ ৪২)
[ বোখারী ও মুসলিম ]
□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ #MustShAre
___________________________________
◇ টীকাঃ ৩৯.
শারীরিক খাবারসমূহে যেমন- বিভিন্নরকম স্বাদ রয়েছে, তেমনিভাবে রুহানী খাবারসমূহ ঈমান এবং আ'মালেও বিভিন্ন রকম স্বাদ বিদ্যমান। যেমনিভাবে ওই খাবারসমূহের স্বাদ ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারে, যার প্রকাশ্য ইন্দ্রীয় সঠিক থাকে, তেমনিভাবে এ ঈমানী খাবারগুলোর স্বাদ ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারে, যার রুহ্ বিশুদ্ধ থাকে।
আর যেমনিভাবে প্রকাশ্য ইন্দ্রীয়গুলো দুরস্ত করার জন্য বিভিন্ন রকম ঔষধ রয়েছে, তেমনি ওই ইন্দ্রীয়ের অনুভূতি দুরস্তকারী রুহানী ঔষধপত্রও রয়েছে।
এ হাদীস শরীফে ওই ঔষধগুলোর উল্লেখ রয়েছে। হুযূর [ﷺ] হলেন শারীরিক ও আত্মিক উভয় দিকের চিকিৎসাকারী।
যে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ অর্জন করতে পারে, সে বড় কঠিন কাজের কষ্টও আনন্দের সাথে সহ্য করতে পারে। সে শীতকালের নামায ও জিহাদ সানন্দে সম্পন্ন করতে পারে। কারবালার ময়দান এ হাদীসের জীবন্ত তাফসীর। এ স্বাদই সমস্ত মুশকিলকে সহজ করে দেয়। এর দ্বারাই 'রেদ্বা বিল ক্বাদ্বা' (তাক্বদীরের উপর সন্তুষ্টি) ভাগ্যে জুটে।
◇ টীকাঃ ৪০.
মাল-দৌলত, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি সবই দুনিয়াবী নি'মাত। এতে ক্বোরআন, কা'বা, মদীনা মুনাওয়ারাহ্ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত নয়। যেহেতু এগুলোর প্রতি ভালোবাসা রাখা মানে স্বয়ং আল্লাহ্-রসূলকে মুহাব্বত করা।
এ হাদীস থেকে বুঝা গেলো যে, হুযূরের প্রতি ওই ধরনের ভালোবাসা রাখা চাই যে থরনের ভালবাসা আল্লাহ্'র প্রতি রাখতে হয়।
'মুহাব্বত'র বহু প্রকার রয়েছেঃ
মায়ের প্রতি মুহাব্বত এক রকম, স্ত্রীর প্রতি অন্য রকম, সন্তানের প্রতি এক ধরনের, ভাইবোনের প্রতি অন্য ধরনের। হুযূরের প্রতি মুহাব্বত ওই ধরনের হওয়া চাই, যে ধরনের আল্লাহ্'র প্রতি রাখা চাই। অর্থাৎ মুহাব্বত-ই ঈমানী ও ইরফানী। هما (সর্বনাম) এরশাদ করা থেকে বুঝা গেলো যে, আল্লাহ্-রসূলের জন্য একটিমাত্র দ্বিবচন-সর্বনাম আসতে পারে, যেখানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানে সমকক্ষতার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকার কারণেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সুতরাং হাদীসগুলোর মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই।
স্মর্তব্য যে, এখানে মহব্বত দ্বারা 'মুহাব্বত-ই তব'ঈ' বা স্বভাবগত মহব্বত বুঝানো উদ্দেশ্য, শুধু মুহাব্বত-ই আক্বলী (বিবেকগত মহব্বত) নয়।★
★ [যেমন তিক্ত ঔষধ সেবন করতে স্বভাব না চাইলেও আক্বল বা বিবেক তা সেবন করতে রোগমুক্তির স্বার্থে বাধ্য করে। এমন মহব্বত হুযূরের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমনঃ কেউ যদি নিছক বেহেশত লাভের উদ্দেশ্যে বিবেক খাটিয়ে হুযূরকে ভালবাসে, অন্তর দিয়ে নয়, তবে এমন ভালবাসা কোন মু'মিন থেকে কাম্য নয়।]
◇ টীকাঃ ৪১.
অর্থাৎ বান্দাদেরকে শুধু এ জন্যই মুহাব্বত করবে যে, আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য এতে শামিল হবে না। উস্তাদ, শায়খ, এমনকি মাতাপিতা ও সন্তানদেরকে এ জন্য মুহাব্বত করবে যে, তা আল্লাহ্'র সন্তুষ্টির মাধ্যম এবং ইসলামের তরীক্বা। এটা সার্বক্ষণিক (স্থায়ী) মুহাব্বত। দুনিয়াবী মুহাব্বত দ্রুত ছিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ ফরমায়েছেনঃ
[ الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ ]
অর্থাৎ "অন্তরঙ্গ বন্ধু সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, পরহেযগারগণ ব্যতীত।" [৪৩:৬৭]
◇ টীকাঃ ৪২.
অর্থাৎ কুফর ও কাফিরদের প্রতি স্বভাবগত ঘৃণা জন্মে যায়। ইসলামের তাওফীক্বকে মহান রবের নি'মাত মনে করে। কাফিরদের নিকট থেকে এমনভাবে নিজেকে রক্ষা করবে যেমনিভাবে সাপের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করে। কারণ, সাপ হচ্ছে জানের দুশমন এবং এসব লোক ঈমানের দুশমন।
প্রচারেঃ facebook.com/SunniAqidah
□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ
f/Ishq-E-Mustafa ﷺ
[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ১ম খন্ড, পৃ. ২৬,২৭, হাদীস নং-০৭ এর টীকাঃ (৩৯-৪২) দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম। সবুজ ভবন, খাজা রোড, কুলগাঁও, ডাকঘর-জালালাবাদ-৪২১৪, বায়েজীদ, চট্টগ্রাম। ফোনঃ ০৩১-৬৮৪২২৪, মোবাইলঃ ০১১৯৯-২২৪৪০৩, ০১৮৬৮-০৩১৬২১]