সূত্রঃ http://kalerkantho.com/online/world/2018/03/29/619141
যে ওয়াহাবিবাদকে এখন বিশ্ব সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে দেখছে পশ্চিমারা, তারাই এক সময় সমাজতন্ত্র ঠেকাতে এর প্রচারে উৎসাহিত করেছিলেন বলে দাবি করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
যুক্তরাষ্ট্রে সফরে ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই দাবি করেন।
সৌদি আরবে ক্ষমতাধর হয়ে উঠে সংস্কার কর্মসূচিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচিত যুবরাজ মোহাম্মদ গত ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরুর পর ২২ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টকে ওই সাক্ষাৎকার দেন।
তিনি বলেন, গত শতকের ৭০ এর দশকে স্নায়ু যুদ্ধের সময় পশ্চিমারাই ওয়াহাবিবাদের প্রচারে অর্থ ঢালতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল। তার ভাষায়, মুসলিম দেশগুলো যেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে চলে না যায়, সেজন্যই পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধে বিভিন্ন দেশে মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থ ঢেলে ওয়াহাবি মতাদর্শের বিস্তারে কাজ শুরু করে সৌদি আরব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব; ৯০ এর দশকে সোভিয়েতের পতনের পর স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে সোভিয়েতবিরোধী লড়াইয়ে উগ্র মুসলিম গোষ্ঠীগুলোতে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে মদদ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী; যাদের অধিকাংশই ওয়াহাবি দর্শনে দীক্ষিত, যাদের সালাফিও বলা হয়।
মুসলিমদের প্রধান দুটি ধারার অন্যতম সুন্নিদের মধ্যে ওয়াহাবিবাদের গোড়াপত্তন অষ্টাদশ শতকে আরবের নজদ থেকে মোহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহাবের মাধ্যমে। ওয়াহাব ছিলেন বার শতকের ইবনে তায়মিয়াহ দ্বারা প্রভাবিত; যিনি মনে করতেন, রাষ্ট্র হবে ধর্মের অনুগামী।
ইবনে তায়মিয়াহ ছিলেন মুক্ত মত চর্চার ঘোর বিরোধী।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপে সৌদি আরব গঠন করে মসনদে বসে সউদ পরিবার; তখন তাদের সঙ্গে গাঁটছাড়া হয় ওয়াহাবিদের। রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ছড়াতে থাকে ওয়াহাবিদের উগ্র মত।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে এক পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ জানায়, পরমতসহিষ্ণু সুন্নিদের উগ্র ওয়াহাবিবাদে দীক্ষিত করতে ১৯৭০ থেকে চার দশকে ১ হাজার কোটিরও বেশি ডলার ঢালে সৌদি আরব। এই অর্থের ২০ শতাংশের মতো আল কায়দাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে যায় বলে ইউরোপের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় টেলিগ্রাফ।
২০১৩ সালে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ওয়াহাবিবাদকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
ওয়াহাবিবাদের প্রচার যেভাবে শুরু হয়েছিল, তা পরে আর সৌদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি বলে যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের ভাষ্য। তিনি বলেন, এখন সরকারের বদলে সৌদি আরবভিত্তিক বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই অর্থায়ন হচ্ছে। যে কাজটি শুরু হয়েছিল সৌদি আরব থেকে, তাতে এখন বিক্ষত হচ্ছে তারাও। আইএস এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল তারাও হচ্ছে।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, আরটি, স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল