একথা আজ মধ্যাহ্ন সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট যে, ওহাবী সম্প্রদায় ক্বিয়াম বিরোধী। তারা ক্বিয়ামকে হারাম ও বিদ‘আত বলে। তারা তাদের দাবীর পক্ষে কিছু হাদীসও পেশ করে; কিন্তু এখন একথাও স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা ওই হাদীসগুলোর অপব্যাখ্যাই করে থাকে।
যেমন, ওহাবীরা পেশ করে-
হাদীস নং-১
عَنْ اَنَسٍ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ لَمْ یَکُنْ شَخْصًا اَحَبَّ اِلَیْہِمْ مِّنْ رَّسُوْلِ اللّٰہِ ﷺ وَکَانُوْا اِذَا رَأَوْہُ لَمْ یَقُوْمُوْا لِمَا یَعْلَمُوْنَ مِنْ کَرَاہِیَّتِہٖ لِذٰلِکَ – رَوَاہُ التِّرْمِذِیُّ وَقَالَ ہٰذَا حَدِیْثٌ حَسَنٌ صَحِیْحٌ
অর্থাৎ হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবা-ই কেরামের নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় আর কেউ ছিলো না। যখন তাঁরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আসতে দেখতেন, তখন তাঁরা দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা অবগত ছিলেন যে, তিনি এরূপ করা অপছন্দ করতেন।
[সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ]।
অর্থাৎ হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবা-ই কেরামের নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় আর কেউ ছিলো না। যখন তাঁরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আসতে দেখতেন, তখন তাঁরা দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা অবগত ছিলেন যে, তিনি এরূপ করা অপছন্দ করতেন।
[সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ]।
হাদীস নং-২
ওহাবীরা আরো উপস্থাপন করে থাকে-
ওহাবীরা আরো উপস্থাপন করে থাকে-
وَعَنْ مُعَاوِیَۃَ بْنِ اَبِیْ سُفْیَانَ رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰہِ ﷺ مَنْ سَرَّہٗ اَنْ یَّتَمَثَّلَ لَہُ الرِّجَالُ قِیَامًا فَلْیَتَبَوَّأْ مَقْعَدَہٗ مِنَ النَّارِ رَوَاہُ التِّرْمِذِیُّ وَاَبُوْدَاوٗدَ
অর্থাৎ হযরত মু‘আভিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, লোকেরা তাঁর সামনে পুতুলের মত দাঁড়িয়ে থাকুক, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরী করে নেয়।”
[সূত্রঃ তিরমিযী, আবূ দাঊদ]।
অর্থাৎ হযরত মু‘আভিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, লোকেরা তাঁর সামনে পুতুলের মত দাঁড়িয়ে থাকুক, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরী করে নেয়।”
[সূত্রঃ তিরমিযী, আবূ দাঊদ]।
হাদীস শরীফ-৩
ওহাবীরা দলীল হিসেবে আরো উপস্থাপন করে-
ওহাবীরা দলীল হিসেবে আরো উপস্থাপন করে-
وَعَنْ اَبِیْ اُمَامَۃَ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلَ اللّٰہِ ﷺ مُتَّکِءًا عَصًا فَقُمْنَا لَہٗ فَقَالَ لاَ تَقُوْمُوْا کَمَا تَقُوْمُ الْاَعَاجِمُ یُعَظِّمُ بَعْضُہَا بَعْضًا رَوَاہُ اَبُوْدَاوٗدَ
অর্থাৎ হযরত আবূ উমামা বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম লাঠিতে ভর করে হুজরা শরীফ থেকে বের হলেন। আমরা তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে গেলাম। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘তোমরা পারস্য দেশীয় লোকদের মতো ক্বিয়াম করো না, যেভাবে তারা একজন অপরজনকে তা’যীম করে।’’
[সূত্রঃ আবূ দাঊদ]।
অর্থাৎ হযরত আবূ উমামা বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম লাঠিতে ভর করে হুজরা শরীফ থেকে বের হলেন। আমরা তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে গেলাম। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘তোমরা পারস্য দেশীয় লোকদের মতো ক্বিয়াম করো না, যেভাবে তারা একজন অপরজনকে তা’যীম করে।’’
[সূত্রঃ আবূ দাঊদ]।
সুপ্রিয় পাঠক, আসুন উপরোক্ত মুবারাক হাদিসগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা জেনে নিই।
খণ্ডন-
উপরোক্ত তিনটি হাদীস মেশকাত শরীফেও আছে। ইমাম তিরমিযী ও ইমাম আবূ দাঊদ উক্ত হাদীসগুলো নিজ নিজ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। বস্তুতঃ এগুলোতে বিশেষ ধরনের ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়েছে। মূল ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি। মূল ক্বিয়াম যে সুন্নাত, তার প্রমাণ বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
উপরোক্ত তিনটি হাদীস মেশকাত শরীফেও আছে। ইমাম তিরমিযী ও ইমাম আবূ দাঊদ উক্ত হাদীসগুলো নিজ নিজ গ্রন্থে সংকলন করেছেন। বস্তুতঃ এগুলোতে বিশেষ ধরনের ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়েছে। মূল ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি। মূল ক্বিয়াম যে সুন্নাত, তার প্রমাণ বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
মিশকাত শরীফে ক্বিয়ামের পক্ষে হযরত আবূ হোরায়রা ও হযরত সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমার হাদীস এবং হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরীর হাদীসও বর্ণিত হয়েছে, যা ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন, যা একটু আগে উদ্ধৃত হয়েছে।
সুতরাং ক্বিয়ামের পক্ষে ও বিপক্ষে বর্ণিত হাদীস শরীফ গুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান না করে নির্বিচারে ‘ক্বিয়ামকে নিষিদ্ধ’ বলা নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার প্রমাণ বৈ-কিছু হবে না।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ক্বিয়ামের বৈধতা ও উৎকৃষ্টতা সম্বলিত হাদীসগুলো প্রাধান্যের দাবীদার। আর বিপক্ষে বর্ণিত হাদীসগুলো ব্যাখ্যার অবকাশ ও দাবী রাখে। যেমন, হাদীস শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্দারের সম্মানে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং অন্য হাদীসে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানে সাহাবীগণের দীর্ঘ ক্বিয়ামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে হুযূরের পক্ষ থেকে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
সুতরাং ওহাবীদের পেশকৃত তিনটি হাদীসে তিনি কি কারণে ক্বিয়াম নিষেধ করলেন, কোন্ পরিবেশে তিনি সাহাবীদের দাঁড়ানো অপছন্দ করেছেন এবং কোন্ ধরনের ক্বিয়ামকে তিনি নিষিদ্ধ করেছেন তা খতিয়ে দেখলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।
সুতরাং ক্বিয়ামের পক্ষে ও বিপক্ষে বর্ণিত হাদীস শরীফ গুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান না করে নির্বিচারে ‘ক্বিয়ামকে নিষিদ্ধ’ বলা নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার প্রমাণ বৈ-কিছু হবে না।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ক্বিয়ামের বৈধতা ও উৎকৃষ্টতা সম্বলিত হাদীসগুলো প্রাধান্যের দাবীদার। আর বিপক্ষে বর্ণিত হাদীসগুলো ব্যাখ্যার অবকাশ ও দাবী রাখে। যেমন, হাদীস শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্দারের সম্মানে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং অন্য হাদীসে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানে সাহাবীগণের দীর্ঘ ক্বিয়ামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে হুযূরের পক্ষ থেকে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
সুতরাং ওহাবীদের পেশকৃত তিনটি হাদীসে তিনি কি কারণে ক্বিয়াম নিষেধ করলেন, কোন্ পরিবেশে তিনি সাহাবীদের দাঁড়ানো অপছন্দ করেছেন এবং কোন্ ধরনের ক্বিয়ামকে তিনি নিষিদ্ধ করেছেন তা খতিয়ে দেখলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বর্ণিত হাদীস প্রসঙ্গ ক্বিয়াম বিরোধীদের পেশকৃত এ প্রথম হাদীসে বুঝা যায় যে, সাহাবীগণ হুযূরের আগমনে ক্বিয়াম করতেন না। কেননা তিনি ‘এরূপ ক্বিয়াম’ করা পছন্দ করতেন না।
‘এরূপ ক্বিয়াম’-এর ধরন সম্বন্ধে মোল্লা আলী ক্বারী আলায়হির রাহমাহ্ মিরক্বাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-
‘এরূপ ক্বিয়াম’-এর ধরন সম্বন্ধে মোল্লা আলী ক্বারী আলায়হির রাহমাহ্ মিরক্বাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-
قَوْلُہٗ لِذٰلِکَ اَیْ لِقِیَامِہِمْ تَوَاضُعًا لِّرَبِّہٖ مُخَالِفَۃً لِّعَادَۃِ الْمُتَکَبِّرِیْنَ
অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের এ ধরনের ক্বিয়ামকেই অপছন্দ করতেন- মহান রব আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশার্থে এবং অহংকারী ব্যক্তিদের প্রথা বা অভ্যাসের বিরোধিতার নিমিত্তে।
[সূত্রঃ মিরক্বাত]।
অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের এ ধরনের ক্বিয়ামকেই অপছন্দ করতেন- মহান রব আল্লাহর জন্য বিনয় প্রকাশার্থে এবং অহংকারী ব্যক্তিদের প্রথা বা অভ্যাসের বিরোধিতার নিমিত্তে।
[সূত্রঃ মিরক্বাত]।
অন্য একটি জবাব হলো- হাদীসখানা সাহাবীর ব্যক্তিগত অভিমত। এটা হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষ্য নয়।
হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমোদিত ক্বিয়াম হলো, যা হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন।
হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমোদিত ক্বিয়াম হলো, যা হযরত আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন।
তৃতীয় জবাব হলো- এ অপছন্দ ছিল বিনয়মূলক; নিষেধ মূলক নয়। মোল্লা আলী ক্বারীর ব্যাখ্যা দ্বারা একথা সুস্পষ্ট হয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মূল ক্বিয়ামকে অপছন্দ করতেন না; বরং বিনয়বশতঃ দরবারের নিয়মে কৃত অথবা অহংকারীদের ক্বিয়ামকেই তিনি অপছন্দ করতেন। আর সাহাবীগণ ওই ধরনের ক্বিয়াম থেকে বিরত থাকতেন। হযরত আনাসের বর্ণনার উদ্দেশ্যও তাই। হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সাথে তিনিও মসজিদে হুযূরের সম্মানে ক্বিয়াম করতেন। সুতরাং হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অহঙ্কারমূলক ক্বিয়ামকেই অপছন্দ করতেন। তা’যীমী ও বিনয়মূলক ক্বিয়াম সাহাবীগণের আমল ছিলো। এটিই সঠিক ব্যাখ্যা।
হযরত মু‘আভিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর হাদীস প্রসঙ্গ ক্বিয়াম বিরোধীদের পেশকৃত দ্বিতীয় হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, কারো সম্মানে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকাকেই হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিষিদ্ধ করেছেন, মূল ক্বিয়ামকে নয়। এ হাদীস শরীফে মূর্তিবৎ ক্বিয়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, মূল ক্বিয়ামকে নয়।
হযরত আবূ ঊমামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর হাদীস প্রসঙ্গ ক্বিয়াম বিরোধীদের পেশকৃত তৃতীয় হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে- পারস্যবাসীদের ন্যায় নতজানু হয়ে রাজার সামনে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকার মত ক্বিয়াম অবশ্যই নিষিদ্ধ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাদের অনুরূপ মূর্তিবৎ নতজানু ক্বিয়ামকেই নিষিদ্ধ করেছেন, মূল ক্বিয়ামকে নিষিদ্ধ করেননি। তিনি একথা বলেননি, ‘তোমরা ক্বিয়াম করোনা’ বরং বলেছেন, ‘পারস্যবাসী অগ্নি-পূজারীদের ন্যায় ক্বিয়াম করো না।’ যেমন কেউ বললো, ‘গরুর মত পানি পান করো না’। এর অর্থ হলো, ‘পানি পান করো, তবে গরুর মতো না’। অনুরূপ, হাদীসের অর্থ হবে ‘ক্বিয়াম করো, তবে পারস্যবাসী অগ্নি উপাসকদের মত নতজানু হয়ে না।’
ক্বিয়াম বিরোধীরা হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা দেয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
ক্বিয়াম বিরোধীরা হাদীসকে ঢাল স্বরূপ ব্যবহার করে মাত্র। যদি তারা সত্য গ্রহণ করতো এবং সঠিক জিনিষ মেনে নিতো, তাহলে হযরত সা’দ ও হযরত আবূ হুরায়রার হাদীস দু’টিও বর্ণনা করতো; কিন্তু তারা তা করে না। এ দু’টিকে গোপন করে অন্য তিনটি হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রচার করে। এটা আমানতদারী নয় বরং রসূলে পাকের হাদীস গোপন করার মতো জঘন্য অপরাধ।
এ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের ক্বিয়ামের ধরন দেখেই ওই ধরনের ক্বিয়াম না করার পরামর্শ দিয়েছেন; কিন্তু ওহাবীরা বলেছে- তিনি নাকি সব ধরনের ক্বিয়ামকেই নিষেধ করেছেন। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ক্বিয়াম বিরোধীরা হাদীসকে ঢাল স্বরূপ ব্যবহার করে মাত্র। যদি তারা সত্য গ্রহণ করতো এবং সঠিক জিনিষ মেনে নিতো, তাহলে হযরত সা’দ ও হযরত আবূ হুরায়রার হাদীস দু’টিও বর্ণনা করতো; কিন্তু তারা তা করে না। এ দু’টিকে গোপন করে অন্য তিনটি হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রচার করে। এটা আমানতদারী নয় বরং রসূলে পাকের হাদীস গোপন করার মতো জঘন্য অপরাধ।
এ হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের ক্বিয়ামের ধরন দেখেই ওই ধরনের ক্বিয়াম না করার পরামর্শ দিয়েছেন; কিন্তু ওহাবীরা বলেছে- তিনি নাকি সব ধরনের ক্বিয়ামকেই নিষেধ করেছেন। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
৪. মুস্তাহাব ক্বিয়াম ছয় প্রকারঃ
ক্বিয়ামের মধ্যে ৪র্থ হলো মুস্তাহাব ক্বিয়াম। নফল নামাযে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। বসে পড়লেও জায়েয; কিন্তু দাঁড়িয়ে পড়লে দ্বিগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত
صَلٰوۃُ الْقَاعِدِ نِصْفُ الْقَاءِمِ
অর্থাৎ বসে নামায আদায়কারীর সাওয়াব দণ্ডায়মান হয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক। তবে বিতরের পরের দু’ রাক‘আত (শফী‘উল বিতর) নফল বসে পড়া ও দাঁড়িয়ে পড়া উভয় ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ উভয় প্রকারের বর্ণনার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়েছে এভাবে যে, দাঁড়িয়ে পড়ার মধ্যে সাওয়াব বেশী অর্থাৎ পূর্ণ সাওয়াব যাওয়া যাবে, আর বসে পড়ার মধ্যে আল্লাহ্ ও রসূলের নৈকট্য বেশী অর্জিত হয়।
[সূত্রঃ মিরআত শরহে মিশকাত ইত্যাদি]
আগমনকারীর সম্মানে দাঁড়ানোও মুস্তাহাব।
[সূত্র- দুররে মোখতার]।
ক্বিয়ামের মধ্যে ৪র্থ হলো মুস্তাহাব ক্বিয়াম। নফল নামাযে দাঁড়ানো মুস্তাহাব। বসে পড়লেও জায়েয; কিন্তু দাঁড়িয়ে পড়লে দ্বিগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত
صَلٰوۃُ الْقَاعِدِ نِصْفُ الْقَاءِمِ
অর্থাৎ বসে নামায আদায়কারীর সাওয়াব দণ্ডায়মান হয়ে নামায আদায়কারীর অর্ধেক। তবে বিতরের পরের দু’ রাক‘আত (শফী‘উল বিতর) নফল বসে পড়া ও দাঁড়িয়ে পড়া উভয় ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ উভয় প্রকারের বর্ণনার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়েছে এভাবে যে, দাঁড়িয়ে পড়ার মধ্যে সাওয়াব বেশী অর্থাৎ পূর্ণ সাওয়াব যাওয়া যাবে, আর বসে পড়ার মধ্যে আল্লাহ্ ও রসূলের নৈকট্য বেশী অর্জিত হয়।
[সূত্রঃ মিরআত শরহে মিশকাত ইত্যাদি]
আগমনকারীর সম্মানে দাঁড়ানোও মুস্তাহাব।
[সূত্র- দুররে মোখতার]।
কোন প্রিয়জনের আলোচনা শুনে অথবা কোন শুভ সংবাদ শুনে দাঁড়ানোও মুস্তাহাব এবং সাহাবা-ই কেরাম ও সল্ফে সালেহীনের আমল।
মিশকাত কিতাবুল ঈমান তৃতীয় পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে- হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, হযরত সিদ্দীক্বে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আমাকে কোন একটি শুভ সংবাদ শুনালেন। আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম, ‘‘আমার পিতা-মাতা আপনার উপর ক্বোরবান হোন; বরং আপনিই উক্ত শুভ সংবাদের প্রকৃত উপযুক্ত ব্যক্তি।’’
[সূত্রঃ মিশকাত, কিতাবুল ঈমান]।
হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের সুসংবাদ শুনে ক্বিয়াম করা মুস্তাহাব।
[সূত্রঃ মিশকাত, কিতাবুল ঈমান]।
হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের সুসংবাদ শুনে ক্বিয়াম করা মুস্তাহাব।
৫. ক্বিয়াম-ই মাকরূহঃ
কয়েক অবস্থায় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো মাকরূহ। যেমন-যমযম পানি ও অজুর অবশিষ্ট পানি ব্যতীত অন্যান্য পানীয় পান করার সময় দাঁড়ানো মাকরূহ্। কোন ওযর থাকলে মাক্বরূহ নয়। অনুরূপ, কোন বিত্তশালীর জন্য কিছু পাওয়ার লোভে দাঁড়ানো অথবা কোন দুনিয়াদার লোকের সম্মানে দাঁড়ানো মাকরূহ্।
কয়েক অবস্থায় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো মাকরূহ। যেমন-যমযম পানি ও অজুর অবশিষ্ট পানি ব্যতীত অন্যান্য পানীয় পান করার সময় দাঁড়ানো মাকরূহ্। কোন ওযর থাকলে মাক্বরূহ নয়। অনুরূপ, কোন বিত্তশালীর জন্য কিছু পাওয়ার লোভে দাঁড়ানো অথবা কোন দুনিয়াদার লোকের সম্মানে দাঁড়ানো মাকরূহ্।
৬. ক্বিয়াম-ই হারামঃ
কারো সম্মানে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকা হারাম। নতজানু হয়ে কারো সম্মান করা হারাম। এরূপ সম্মান গ্রহণকারীর সম্মান করাও হারাম।
[সূত্রঃ শামী, আলমগীরী]।
কারো সম্মানে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকা হারাম। নতজানু হয়ে কারো সম্মান করা হারাম। এরূপ সম্মান গ্রহণকারীর সম্মান করাও হারাম।
[সূত্রঃ শামী, আলমগীরী]।
কাফিরদের সম্মানে দাঁড়ানো হারাম।
হযরত মু‘আভিয়া ও হযরত আবূ উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত (পুর্বালোল্লিখিত) ২ ও ৩ নং হাদীস মোতাবেক মূর্তিবৎ ও অহংকারী লোকদের জন্য দাঁড়ানো সম্পর্কে উপস্থাপিত বর্ণনা দেখুন।
উপরোক্ত ছয় প্রকার ক্বিয়ামের ৪র্থ প্রকারের ক্বিয়াম- অর্থাৎ মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম মুস্তাহাব ও মুস্তাহাসান।
মিলাদ শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বেলাদত বর্ণনাকালে ক্বিয়াম করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহ্সান।
হযরত মু‘আভিয়া ও হযরত আবূ উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত (পুর্বালোল্লিখিত) ২ ও ৩ নং হাদীস মোতাবেক মূর্তিবৎ ও অহংকারী লোকদের জন্য দাঁড়ানো সম্পর্কে উপস্থাপিত বর্ণনা দেখুন।
উপরোক্ত ছয় প্রকার ক্বিয়ামের ৪র্থ প্রকারের ক্বিয়াম- অর্থাৎ মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম মুস্তাহাব ও মুস্তাহাসান।
মিলাদ শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বেলাদত বর্ণনাকালে ক্বিয়াম করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহ্সান।
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে বোঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।