প্রশ্নঃ হাশরে পুনরুত্থান ও একত্রিত হওয়ার কতদিন পর এবং কার সুপারিশে বিচার শুরু হবে? বিচারের এই বিলম্বের উদ্দেশ্য কী? কার কার হিসাব নিকাশ হবে এবং কার কার হবে না? মিযান কী? পুল্সিরাত কেমন? হাউযে কাউছার  কী এবং কত বড়? এ সম্পর্কে খোলাসা তাফসীর জানতে চাই। উত্তরঃ পুনরুত্থানের পর পঞ্চাশ হাজার বছর  বিনা বিচারে হাশরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। পঞ্চাশ হাজার বছর পর নবীজীর কাছে হাশরবাসীগণ বিপদমুক্তির জন্য সাহায্য  চাইবে। তখন নবীজী আল্লাহ্পাকের দরবারে সিজদায় পড়ে কাঁদতে থাকবেন এবং তাদের ফয়সালার জন্য সুপারিশ করবেন। আল্লাহ্পাক তাঁকে সিজদা হতে মাথা তুলে সুপারিশ করার নতুন অনুমতি দিবেন। আল্লাহ্পাক ঐ সময় নবীজীর মাথা তোলার জন্য তিনটি ওয়াদা করবেন। (ক) আপনি যা বলবেন, আমি তা শুনবো (খ) যা চাইবেন, তা দিবো। (গ) যার জন্য সুপারিশ করবেন- তা কবুল করবো”। (বোখারী শরীফ)। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিচার  অনুষ্ঠানের জন্য সুপারিশ করবেন। হুযুরের সুপারিশক্রমেই  বিচার শুরু হবে- এর পূর্বে নয়। আল্লাহরও ইচ্ছা- নবীজীর শান প্রদর্শন করা। আল্লাহ্ হবেন হাকীম- আর নবীজী  হবেন উকিল। হাকীম উপস্থিত- কিন্ত উকিলের  সুপারিশ  নেই- তাই পঞ্চাশহাজার বছরের এই বিলম্ব। নবীজীর প্রথম সুপারিশ হবে বিচারানুষ্ঠান শুরু করার জন্য। দ্বিতীয়  সুপারিশ হবে- বিনা   হিসাবে ৭০,০০০ী৭০,০০০= ৪৯০,০০০,০০০০ (চার শত নব্বই কোটি) লোককে জান্নাতে প্রবেশ করানোর  জন্য। তৃতীয় সুপারিশ হবে- জান্নাতে মর্যাদাবৃদ্ধি বা সিট পুনঃ  বন্টনের জন্য। চতুর্থ  সুপারিশ হবে- জাহান্নামীদের তালিকা হতে কিছু সংখ্যক লোককে মাফ করার জন্য। পঞ্চম সুপারিশ হবে- দোযখ থেকে গুনাহ্গার মুমিনদেরদের বের করে আনার জন্য। ষষ্ট সুপারিশ হবে চাচা আবু তালেবের শাস্তি হাল্কা করার জন্য” (বুখারী)। সপ্তম   সুপারিশ হবে খাস করে মদিনাবাসীদের জন্য। (দেখুন মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া ৪র্থ খন্ড ৬৫৪-৬৫৫  পৃষ্ঠা- শাফাআত অধ্যায়)। শাফাআতের বিস্তারিত বিবরণ পরে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হবে- ইন্শা আল্লাহ্। বিচার অনুষ্ঠান ====== প্রথমে কবর হতে হাশরের ময়দানে সকলকে একত্রিত করা হবে। তখন এই যমীনের পরিবর্তে অন্য একখণ্ড সাদা উজ্জল যমীন সৃষ্টি করা  হবে। উক্ত ময়দানকে আটা বা ময়দার মত টেনে এই পরিমান লম্বা ও বিস্তৃত করা হবে- যাতে  সব মানব, জ্বীনও ঘেরাওকারী ফিরিস্তা দাঁড়াবার জায়গা পায়। সেদিন এত ঠাসাঠাসি করে লোকেরা দাঁড়াবে যে,  শুধুমাত্র কদম রাখার জায়গাটুকু পাবে। মাথার এক মাইল উপর সূর্য দশগুন বেশী তাপ দিবে এবং  যমীন হবে তামার। শরীরের ঘাম ও মাথার মগজ বের হয়ে গুনাহ্গারদের গলা ও অর্ধ কান পর্য্যন্ত ডুবে  যাবে। এভাবে ঠেলাঠেলি ও ধাক্কাধাক্কীতে একজন আরেকজনের উপর সাগরের ঢেউয়ের ন্যায়  হুম্ড়ী খেয়ে   পড়বে। এভাবে পঞ্চাশহাজার বছর  কেটে যাবে- কোন ফায়সালা হবেনা। অবশেষে মানুষের খেয়াল হবে-  নবীগণের সাহায্য ছাড়া আজ উপায় নেই। তাঁদের কাছে গিয়ে আল্লাহর সাহায্যের জন্য প্রার্থনা জানাতে হবে। কিন্তু কে প্রকৃত উপকারী- সে কথা সেদিন কারুরই স্মরণে থাকবেনা। এমনকি- কোন নবীরও স্মরণ থাকবেনা; একমাত্র হযরত ইছা (আঃ) ছাড়া। যারা দুনিয়াতে একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় এবং নবী,ওলীদের কাছে সাহায্য  প্রার্থনা করাকে শিরক বলে, তারাও সেদিন নবীগণের কাছে সাহায্যের জন্য ধর্না দিতে বাধ্য হবে। ইহাই আল্লাহর ইচ্ছা। তাই তারা সর্বপ্রথম যাবে হযরত   আদম আলাইহিস সালামের কাছে এবং বিপদমুক্তির জন্য তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করবে। এভাবে একে একে একলক্ষ তেইশ হাজার নয়শত নিরানব্বই জন নবীর  কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। কিন্তু সাহায্য পেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে  আসবে এবং নিরাশার চরম মূহুর্তে হযরত  ইছা  আলাইহিস সালামের ইঙ্গিতে আমাদের প্রিয়নবীর  নিকট এসে হুম্ড়ি খেয়ে পড়বে এবং বিপদমুক্তির জন্য হুযুরের  সাহায্যপ্রার্থী হবে। নবী  করীম   (ﷺ) তাদেরকে অভয়বাণী শুনিয়ে বলবেন- “আমিই একাজের জন্য তোমাদের  পাশে আছি”। (বিস্তারিত হাদীস এখনই বর্ণনা করা হবে)। একটি প্রশ্নঃ এখানে একটি প্রশ্ন জাগে।  হাশরের ময়দান হবে  বিচারের জন্য। আল্লাহ্পাক সরাসরি বিচার আরম্ভ  না  করে পঞ্চাশহাজার বছর পরে নবীগণের কাছে  হাশরবাসীকে  পাঠাবেন কোন্ উদ্দেশ্যে?  বাতিলপন্থীদের মতে তো নবীগণ কোন সাহায্যই সেদিন করতে পারবেন না। তাহলে তাঁদের কাছে হাশরবাসীকে পাঠানোর হেতু কী? উত্তরঃ এই বিলম্ব, নবীগণের দ্বারস্থ হওয়া ও অবশেষে নবীজীর দরবারে আশ্রয় পাওয়ার গোপন রহস্য বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম উদঘাটন করেছেন একটি কবিতার মাত্র দুই লাইনে, فقط اتنا سبب ہے انعقاد بزم محشر کا کہ انکی شان محبوبی دکھائی جانیوالی ہے অর্থঃ “হাশর ময়দানে বিচারের এই মঞ্চ সাজানোর একমাত্র উদ্দেশ্য হবে প্রিয়  নবীজীর মাহবুবী শান প্রদর্শন করা”। (দিওয়ানে ছালেক)। আল্লাহর দরবারে  আমাদের প্রিয়নবীর মর্যাদা হলো মাহবুব বা প্রিয়তম -এর মর্যাদা। যাঁর  প্রেমে পড়ে আল্লাহ্ সমগ্রজগত  সৃজন করেছেন- তাঁর মর্যাদা প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যেই বিচারানুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরী করা হবে।  সমগ্র বিশ্ববাসীকে সেদিন প্রিয়নবীর মুখাপেক্ষী করে দেয়া হবে। তাঁরই দয়ার উপর সেদিন হাশরবাসীদের মুক্তি নির্ভর করবে। সমস্ত নবীগণ হবেন সেদিন আপন আপন উম্মতের কান্ডারী- কিন্ত এমন একটি ভয়াবহ সময় আসবে- যখন কোন নবীরই সাহস হবে না মুখ খোলার। ঐ সময়  আল্লাহ্পাক প্রথমে হাশরবাসীদের মনে  অন্যান্য নবীদের সাহায্যপ্রার্থী হওয়ার খেয়াল পয়দা করে দিবেন- যারা মূলতঃ কোন সাহায্য তো করবেন-ই না- বরং নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে রাব্বি নাফ্সী বলতে থাকবেন। একলক্ষ তেইশ হাজার নয়শত নিরানব্বইজন  পয়গাম্বরের দরবারে ব্যর্থ হওয়ার পর যখন হাশরবাসীগণ চরম হতাশায় চোখে অন্ধকার দেখবে, তখনই তাদেরকে নেয়া হবে নবীপাকের দরবারে। গিয়ে দেখবে, দয়ার সাগর  দয়াদানের জন্য  প্রস্তুত, কিন্ত প্রার্থী নেই। অবশেষে তারা হুযুরের দয়াপ্রার্থনা করবে। সাথে সাথে হুযুর (ﷺ) অভয়বাণী শুনাবেন বলে। “আমিই শুপারিশের একমাত্র  অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি” (বুখারী)। দুনিয়াতে সব নবীই জানতেন- নবী করীম (ﷺ)  হাশরে সুপারিশকারী হবেন। কিন্তু তাঁরা সেদিন ভুলে যাবেন একথা। তাই একজন অন্য জনের কাছে প্রেরণ করবেন।  আসল কথা মনে থাকবেনা। বিঃ দ্রঃ এমন  কথা অগ্রীম কে বলতে পারেন? এই অভয়বাণী ও  মুক্তিবাণী কে শুনাতে পারেন? যিনি পারেন-  তিনিই বিপদের কাণ্ডারী হয়ে এখন শুয়ে আছেন সোনার মদিনায়। হাশরে  থাকবেন তিনি আল্লাহর ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে, আরশকুরছি- তথা মাক্বামে মাহমুদে উপবিষ্ট। মাক্বামে মাহমুদ হলো শাফাআতে কুবরা’র মাকাম বা মর্যাদা- যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে হাশরবাসীগণ (মাওয়াহিব ৪র্থ খন্ড ৬৪১ পৃষ্ঠা)। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশেই সেদিন বিচার আরম্ভ  হবে। উপমাস্বরূপ বলা যায়- মাহফিলের আয়োজন প্রস্তুত, শুধু উদ্ধোধন বাকী।  সেদিন বিচার মাহফিলের সমস্ত আয়োজন সমাপ্ত- শুধু উদ্ধোধন বাকী থাকবে। আল্লাহ্পাক বিচারানুষ্ঠানের উদ্ধোধন করাবেন আপন প্রিয় হাবীবকে দিয়ে। একেই বলে শানে মাহবুবী! কি ধন আছে কি দিয়ে আপনার- মন যোগাবো দয়ার বিনিময় শুধু প্রাণ সঁপিব। শাফাআতে কুবরা ======= ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে- হাশরে বিচারের পূর্বে প্রথমে সংঘটিত  হবে   সুপারিশ। নবীজীর সুপারিশক্রমেই হাশরের কার্যক্রম শুরু  হবে। যারা নবীজীর শাফাআতকে শিরিক বলে  তাক্ভিয়াতুল ঈমান- প্রভৃতি কিতাব  রচনা করেছে, তাদের মতে কথিত শিরিক দিয়েই বিচারানুষ্ঠান  শুরু  করে আল্লাহ্পাক  বুঝিয়ে   দিবেন-নবীদের কাছে সাহায্যপ্রার্থণা করা শিরিক নয়- বরং ঈমানের অঙ্গ ও মুক্তির প্রধান শর্ত। দুনিয়ায় থাকতে যারা নবীপাকের রওযায় গমন করাকে শিরিক বলেছিল  (ওহাবী)- হাশরের দিনে তারাই প্রথমে  দৌঁড়ে যাবে নবীদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে। “চোরের মায়ের  বড় গলা” হবে সেদিন তাদের।  আহা! তারা দুনিয়ায় থাকতে যদি নবী ওলীগণের শাফাআতের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখতো- তাহলে পরকালে এত পস্তাতে হতো না। এখন  প্রশ্ন হচ্ছে- নবীজী কি এই দুশমনদের জন্য সত্যিই খাস সুপারিশ করবেন? জওয়াব হচ্ছে- যারা শাফাআত বিশ্বাসই করেনা- তাদের ব্যাপারে পৃথক শাফাআতের প্রশ্নই আসেনা। কেননা, তারা বেয়াদব। হ্যাঁ, বা,আদব গুনাহ্গার হলে সে হুযুরের শাফাআত অবশ্যই  লাভ  করবে।  নবী  করীম  (ﷺ) এরশাদ করেছেন- شفاعتی لاھل الکبائر من امتی অর্থাৎঃ “আমার শাফাআত পাবে আমার  বড় বড় গুনাহ্গার উম্মতেরা- বেয়াদবরা নয়”।  (মিশকাত, মাওয়াহিব, তাযকিরাহ্ প্রভৃতি)। বাতিল ৭২ ফিরকা সম্পর্কে  নবীজী বলেছেন- ”কুল্লুহুম ফিন্নারি” অর্থাৎ ”তারা সবাই শাফাআত বঞ্ছিত জাহান্নামী”। (তিরমিযি শরীফ) হাশরের ময়দানে কি পরিস্থিতিতে নবীজীর শাফাআতে কুবরা হবে- তার দীর্ঘ বর্ণনা হযরত আনাছ ও হযরত আবু হোরায়রা  (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায়। হযরত আনাছ (রাঃ) বর্ণনা করেন, عن انس۔ ان النبیﷺ قال: یحبس المؤمنون یوم القیامۃ۔ حتی  یھموا بذالک  ۔ فیقولون: لواستشفعنا الی ربنا فیریحنا من مکاننا۔ فیأتون آدم ۔فیقولون: انت آدم ابو الناس۔ خلقک اللّٰہ بیدہ۔ واسکنک جنتہ۔ واسجد لک ملائکتہ۔ وعلمک اسماء کل شئی ۔ اشفع لنا عند ربک حتی یریحنا من مکاننا  ھذا ۔ فیقول:  لست ھناکم۔ ویذکر خطیئتہ التی اصاب  اکلہ من الشجرۃ۔ وقد نھی عنھا ۔ ولکن ائتوا نوحا اول نبی بعثہ اللّٰہ الی اھل الارض۔ فیأتون نو حا ۔ فیقول: لست ھناکم۔ ویذکر خطیئتہ سوالہ ربہ بغیر علم ۔ ولکن ائتوا ابراھیم خلیل الرحمٰن۔ قال: فیأتون ابراھیم۔ فیقول: انی لست ھناکم۔ ویذکر ثلٰث کذبات کذبھن ۔ ولکن ائتوا موسی  عبدا اتاہ اللّٰہ التوراۃ ۔وکلمہ وقربہ نجیا۔ قال: فیأتون موسٰی۔ فیقول: انی لست ھناکم۔ ویذکر خطیئتہ التی اصاب قتلہ النفس۔ ولکن ائتوا عیسٰی۔ عبد اللّٰہ ورسولہ وروح اللّٰہ وکلمتہ قال: فیأتون  عیسٰی۔ فیقول: لست ھناکم۔ ولکن ائتوا محمدا۔ عبد اغفر اللّہ لہ ما تقدم من ذنبہ وما تأخر ۔ قال: فیأتونی۔  فاستأذن علی ربی فی دارہ۔ فیأذن لی علیہ۔ فاذا رأیتہ۔ وقعت ساجدا ۔فیدعنی ما شاء اللّٰہ ان یدعنی۔ فیقول: ارفع محمد: وقل تسمع۔ واشفع تشفع۔ وسل تعطہ۔ قال: فارفع رأسی۔ فاثنی علی ربی بثناء وتحمید یعلمنیہ۔ ثم اشفع فیحد لی حدا فاخرج۔ فاخرجھم من النار۔ وادخلھم الجنۃ۔ ثم اعود الثانیۃ۔ فاستأذن علی  ربی فی دارہ۔ فیؤذن لی علیہ۔ فاذا رأیتہ وقعت ساجدا۔ فیدعنی اللّٰہ ما شاء ان یدعنی۔ ثم یقول: ارفع محمد۔ وقل تسمع۔ واشفع تشفع۔ وسل تعطہ۔ قال: فارفع رأسی۔ فاثنی علی ربی بثناء وتحمید یعلمنیہ۔ ثم اشفع فیحد لی حدا فاخرج ۔ فاخرجھم من النار۔ وادخلھم الجنۃ۔ ثم اعود  الثالثۃ۔ فاستأذن علی ربی فی دارہ۔ فیؤذن لی علیہ۔ فاذا رأیتہ۔ وقعت ساجدا۔ فیدعنی ماشاء اللّٰہ ان یدعنی۔ ثم یقول: ارفع محمد۔ وقل تسمع۔ واشفع تشفع۔ وسل تعطہ ۔ قال: فارفع رأسی۔ فاثنی علی ربی بثناء وتحمید یعلمنیہ  ثم اشفع۔ فیحد لی حدا فاخرج۔ فاخرجھم من النار۔ وادخلھم الجنۃ۔ حتی ما یبقی فی النار الامن حبسہ القراٰن۔ ای وجب علیہ الخلود ۔ ثم  تلا ھذہ الاٰیۃ ۔ عسی ان یبعثک ربک مقاما محمودا۔ قال: وھذا المقام المحمود  الذی وعدہ  نبیکم۔ متفق علیہ ۔ অনুবাদঃ হযরত আনাছ (রাঃ) শাফাআত সম্পর্কে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বাণী  এভাবে  বর্ণনা  করেছেনঃ  নবী  করীম  (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “মোমেনগণ দীর্ঘদিন হাশরের ময়দানে আটকাবস্থায় থাকবে। এতে তারা  চিন্তিত হয়ে পড়বে। অতঃপর তারা বলতে থাকবে- যদি আমরা  কাউকে  আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশকারী পেতাম- তাহলে তিনি আমাদেরকে আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে মুক্তি দিতেন। অতঃপর  তারা হযরত আদম আলাইহিস সালামের নিকট যাবে এবং আবেদন করবে- আপনি আদম- আদি মানবপিতা। আপনাকে আল্লাহ্ আপন কুদ্রতি  হাতে তৈরী করেছেন, জান্নাতে আপনাকে বসবাসের স্থান দিয়েছেন, ফিরিস্তা  দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন, সমস্ত বস্তুর নাম ও  গুনাবলী আপনাকে শিক্ষা  দিয়েছেন। আপনি আল্লাহর কাছে আমাদের মুক্তির জন্য  সুপারিশ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে আমাদের এই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি দেন। হযরত  আদম (আঃ) বলবেন, আমি বর্তমানে এই অবস্থায় নেই যে, তোমাদের জন্য শাফাআত করবো। তিনি তাঁর ঐ অনুত্তম কাজের কথা স্মরণ করবেন- যা তিনি  নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে করেছিলেন। তিনি তাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলবেন, বরং তোমরা নূহ্ নবীর কাছে  যাও- কেননা তিনি  এই পৃথিবীতে (শরিয়তের) প্রথম নবী হয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন। (তাঁর পূর্বে হযরত ইদ্রিছ ও হযরত শীষ (আঃ) শরিয়তের নবী ছিলেন না। ) অতঃপর হাশরবাসীরা হযরত  নূহের কাছে গমন করবে। তিনিও বলবেন, তোমাদের ধারণা অনুযায়ী আমি সুপারিশ করার মত অবস্থানে এখন নেই। এই কথা বলে তিনি নিজের একটি অনুত্তম কাজের কথা উল্লেখ করবেন।  তিনি নিজ অবাধ্যপুত্র কিন্আনের নাজাতের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করে না জেনে একটি অনুত্তম  কাজ করেছিলেন। তিনি তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে বলবেন, বরং তোমরা হযরত ইব্রাহীমের কাছে যাও। কেননা, তিনি আল্লাহর  একান্ত বন্ধু, খলীল। অতঃপর লোকেরা হযরত ইবরাহীম  আলাইহিস সালামের কাছে গমন করে সুপারিশের দরখাস্ত করবে। তিনি বলবেন, আমি বর্তমানে ঐ পজিশনে নেই যে, তোমাদের জন্য সুপারিশ করবো। একথা বলে তিনি বাহ্যিক দৃষ্টিতে  তিনটি অনুত্তম কাজের কথা স্মরণ করবেন (একটি ছিল, আমি অসুস্থ, তোমাদের সাথে পূজায় যেতে পারবোনা।  ২য়টি ছিল -তোমাদের মূর্তিগুলো কে ভেঙ্গেছে- তা তোমাদের বড় দেবমূর্তির কাছে জিজ্ঞেস করো, ৩য়টি ছিল, হযরত সারা আমার বোন)। বিঃ দ্রঃ বাহ্যিকদৃষ্টিতে এগুলো সত্যের ব্যতিক্রম বলে মনে হলেও ব্যাখ্যা সাপেক্ষে এগুলো ছিল সত্য কথা। এ ধরণের কথাকে আরবীতে “তা’রীযে কালাম” বলা হয়। তিনি হাশরবাসীদেরকে পরামর্শ দিবেন হযরত মুছা নবীর কাছে যাওয়ার জন্য। কেননা, আল্লাহ্ তাঁর সাথে সরাসরি কথা বলতেন এবং তাঁর উপর মহাগ্রন্থ তৌরাত অবর্তীণ করেছেন। তারা হযরত মুছা (আঃ)-এর কাছে  এসে সাহায্যের আবেদন জানাবে।  হযরত মুছা (আঃ) ঐরূপ জবাব দিয়ে বলবেন, আমি বর্তমানে তোমাদের জন্য সুপারিশ করার মত পজিশনে নেই। তিনি ঐসময় নিজের একটি অনুত্তম কাজের কথা স্মরণ করবেন যে, তিনি শাসনের নিয়তে একজন যালেম কিব্তী যুবককে একটি ঘুষি মেরেছিলেন। এতে  সে মারা যায়। তিনি পরামর্শ দিবেন হযরত ইছা নবীর কাছে যাওয়ার জন্য। কেননা, তিনি সরাসরি রূহের পয়দা, তিনি আল্লাহর খাসবান্দা ও রাসুল। নবী করীম (ﷺ)  বলেন, অতঃপর হাশরবাসীরা হযরত  ইছা (আঃ) -এর কাছে গমন করবে। ইছা (আঃ) বলবেন, আমি বর্তমানে সুপারিশ করার মত অবস্থানে নেই। (কেননা,  খৃষ্টানরা তাঁকে আল্লাহরপুত্র বলতো, এই লজ্জায়)। তিনি বলবেন, বরং তোমরা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) -এর কাছে যাও। কেননা, তাঁর উছিলায় পূর্বাপর সকলের গুনাহ্ আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন। তিনি নিজেও  মাসুম। (সুতরাং আল্লাহর দরবারে যেতে তাঁর কোন বাধা নেই, অন্যান্যদের কিছু না  কিছু খেলাফে আওলা কাজ রয়েছে)। হুযুর (ﷺ) বলেন, তাঁর পরামর্শক্রমে হাশরবাসীরা সর্বশেষ  আমার কাছে এসে ফরিয়াদ করবে। আমি  আমার প্রতিপালকের ঘরে (আরশের নীচে) যাওয়ার জন্য তাঁর অনুমতি প্রার্থনা করবো।  অতঃপর আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। ওখানে গিয়ে যখন আমি আমার প্রভূকে দেখতে পাবো, তখন আমি সিজদায়  পড়ে যাবো। অতঃপর  আল্লাহ্ যতক্ষণ চাইবেন, আমি সিজদায় পড়ে থাকবো।  তারপর আল্লাহ্ বলবেন, হে প্রিয় মোহাম্মদ! “সিজদা হতে মাথা তুলুন এবং প্রার্থনা করুন, তা শুনবো, সুপারিশ করুন, তা কবুল করবো এবং যা চান, তা দিবো”। নবী করীম (ﷺ) বলেন,  অতঃপর আমি মাথা তুলে আমার প্রতিপালকের  প্রশংসা ও সানা,বন্দনা করবো, যা তিনি আমাকে ঐদিন গোপনে শিক্ষা দিবেন। এরপর সুপারিশ করবো। তিনি আমাকে একটি  সীমা নির্ধারিত করে দিবেন। অতঃপর আমি জাহান্নামের উদ্যেশ্যে বের হবো এবং  তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে বেহেস্তে প্রবেশ করাবো। অতঃপর দ্বিতীয়বার ফিরে আসবো এবং আল্লাহর ঘর, আরশের নীচে এসে অনুমতিক্রমে সিজদায় পড়বো- যখন তাঁকে দেখতে পাবো। আল্লাহর যতক্ষণ ইচ্ছা- ততক্ষণ আমাকে সিজদায় পড়ে   থাকার সুযোগ দিবেন। এরপর বলবেন,  মাথা উত্তোলন করুন, হে প্রিয় মোহাম্মদ! যা বলার বলুন, শুনা হবে। যার জন্য সুপারিশ করার- করুন, কবুল করা হবে এবং যা চান, তা দেয়া হবে”। নবী করীম  (ﷺ) বলেন, অতঃপর   আমি সিজদা হতে মাথা তুলে আল্লাহর হাম্দ ও সানা পাঠ করবো, যা তিনি আমাকে ঐদিন শিক্ষা দিবেন। অতঃপর গুনাহ্গারদের  জন্য সুপারিশ করবো। এবারও সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। অতঃপর জাহান্নামের উদ্যেশ্যে বের হবো এবং গুনাহ্গারদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। এরপর তৃতীয়বার আবার ফিরে আসবো এবং আল্লাহর ঘরে  প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করবো। আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। যখন আমি আমার পালনকর্তাকে দেখবো, তখন পুনরায় সিজদায় পড়ে যাবো। আল্লাহর যতক্ষণ ইচ্ছা  আমাকে সিজদায় থাকতে দিবেন। এরপর আমাকে ডেকে বলবেন, “হে প্রিয় মোহাম্মদ! মাথা তুলুন এবং প্রার্থনা করুন, শুনা হবে। শাফাআত করুন, গ্রহণ করা হবে এবং যা চান, তা দেয়া হবে”। অতঃপর আমি সিজদা হতে মাথা  উত্তোলন করে আমার রবের হাম্দ ও সানা করতে থাকবো, যা তিনি আমাকে ঐদিন শিক্ষা দিবেন। এরপর আমি সুপারিশ করবো। এবারও আমার জন্য সীমা নির্ধারন করে দেয়া হবে। অতঃপর আমি জাহান্নামের উদ্দেশ্যে বের হবো এবং তাদেরকে বের করতে থাকবো জাহান্নাম থেকে। তাদেরকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবো”। এভাবে সুপারিশ করতে করতে  একমাত্র কোরআন যাদেরকে চির জাহান্নামী সাব্যস্থ করে আটকিয়ে  দিয়েছে- তাদের ছাড়া আর কেউ জাহান্নামে থাকবে না”। বর্ণনাকারী  আনাছ  (রাঃ)  বলেন, নবী করিম (ﷺ) আপন এই  বড় সুপারিশের প্রমাণস্বরূপ কোরআন মজিদের সূরা বণী ইসরাঈলের ৭৯ নম্বর  আয়াতাংশ তিলাওয়াত করলেন, عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا অর্থাৎঃ  নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাক্বামে মাহমুদ বা প্রশংসিত স্থানে  প্রেরণ  করবেন।  নবী  করীম  (ﷺ) এরশাদ করেন- ”ইহাই সেই মাক্বামে মাহমুদ, যার  প্রতিশ্রুতি তিনি তোমাদের নবীকে  দান করেছেন”। (বুখারী ও মুসলিম,  মিশকাত)। ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসে উল্লেখিত শাফাআত হলো বিচার শুরু করার  জন্য। হযরত আনাছ (রাঃ) কর্তৃক আর একটি হাদীসে বর্ণিত  হয়েছে,  নবী  করীম (ﷺ) সিজদা হতে মাথা তুলে বলবেন, یا  رب ۔ امتی امتی “হে আল্লাহ্! আমার উম্মতকে রক্ষা করো”। এতে বুঝা যায়,  প্রথম হাদীসটি হলো সকল হাশরবাসীর বেলায় বিচারানুষ্ঠানের  জন্য  সুপারিশ। ইহাকে শাফাআতে কুবরা বলা হয়। আর দ্বিতীয় হাদীসখানা  খাস করে উম্মতের মুক্তির জন্য সুপারিশ। সুতরাং হুযুরের  সুপারিশ বিভিন্ন ধরণের হবে। (সাত প্রকার)। হযরত  আবু হোরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণনায় হুযুরের সুপারিশ হবে এ ধরণের, امتی یا رب۔ امتی یا رب۔ امتی یا رب ۔ فیقال: یا محمد۔ ادخل من امتک من لا حساب علیھم من الباب الا یمن من ابواب الجنۃ ۔ অর্থাৎঃ নবীজী বলবেন- “আমার উম্মত রক্ষা করো হে আল্লাহ্! আমার উম্মত রক্ষা করো হে আল্লাহ্! আমার উম্মত রক্ষা করো হে আল্লাহ্! তখন বলা হবে, “হে প্রিয় মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের  মধ্যে বিনা  হিসাবে (বিচারের পূর্বেই) কিছু লোককে জান্নাতের ডান দিকের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিন”। (মুসলিম ও মিশকাত)। এটা হবে বিচার শুরু হওয়ার পূর্বে। উক্ত শাফাআত হবে  দ্বিতীয় পর্যায়ে। ৪৯০ কোটি উম্মতকে তিনি এভাবে বিনা  হিসাবে জান্নাতে নিয়ে যাবেন (মাওয়াহিব)।  এর থেকেই প্রমাণিত হলোঃ হুযুরের সুপারিশে বিচার কাজ শুরু হবে। তা না হলে “বিনা হিসাবের” প্রশ্ন আসতোনা। এটাকেই শাফাআতে কুবরা  বলা হয় এবং আরবীতে বলা হয় “ফসলুল কাযা”। আল্লামা কুরতুবী (রহঃ) বলেন- “হযরত আনাছ (রাঃ) এবং হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) কর্তৃক  উপরে উল্লেখিত তিনটি হাদীসে  সমস্ত হাশরবাসীর জন্য শাফাআতের উল্লেখ রয়েছে। এই শাফাআত একমাত্র আমাদের প্রিয়নবীর জন্য খাস। অন্য কোন নবী সমস্ত হাশরবাসীর জন্য সুপারিশ করার অধিকারী নন। তাই তাঁরা সাহায্যপ্রার্থী লোকদেরকে ফিরত দিবেন। এই শাফাআত হবে শীঘ্র শীঘ্র  বিচার শুরু করার জন্য। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এই শাফাআতের প্রতি ইঙ্গিত করেই অন্য একটি হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ لکل نبی دعوۃ مستجابۃ۔ فتعجل کل نبی دعوتہ وانی اختبأت دعوتی۔ شفاعۃ لامتی অর্থাৎঃ “প্রত্যেক নবীই  দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় তাঁদের একটি দোয়া কবুল  করা হয়েছে, তাঁরা  তাড়াহুড়া করে  সে দোয়া করে ফেলেছিলেন। কিন্ত আমি আমার একটি দোয়া পরকালের জন্য সংরক্ষিত করে রেখে দিয়েছি। তাহলো আমার উম্মতের জন্য শাফাআত”। আর হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসের একটি অংশে বলা হয়েছে- فیقال: یا محمد ادخل الجنۃ من امتک  لا حساب علیہ অর্থাৎঃ “হাশরে  আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনার ঐসব উম্মতদেরকে জান্নাতে নিয়ে যান- যাদের কোন হিসাব হবে না”  -একথা দ্বারা  বুঝা  যায় যে, নবী  করিম  (ﷺ) যখন হাশরবাসীদের জন্য শীঘ্র হিসাব শুরু করার আবেদন   জানাবেন- তখন আল্লাহ্পাক বলবেন, যাদের হিসাবের প্রয়োজন নেই, তাদেরকে আগেই জান্নাতে নিয়ে যান। একথার দ্বারাই প্রমাণিত হয়ে গেলো- “অন্যান্যদের হিসাব শুরু হবে পরে”। এই সুপারিশ হবে আল্লাহর ইঙ্গিতে। সেদিন প্রকাশিত হয়ে যাবে মাক্বামে মাহমুদের মর্মবাণী। মাক্বামে মাহমুদঃ ======= পবিত্র কোরআন মজিদের সূরা বনী ইসরাঈলের ৭৯ আয়াতে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেন, وَمِنَ اللَّيْلِ  فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا “অর্থাৎঃ “হে প্রিয় হাবীব,  আপনি রাত্রের একাংশে কোরআন পাঠসহ তাহাজ্জুদ আদায় করুন, (ঘুম হতে উঠে)। ইহা আপনার জন্য অতিরিক্ত ফরয। নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা আপনাকে প্রেরণ করবেন মাক্বামে মাহমুদে। ” মাক্বামে মাহমুদ অর্থ কী  এবং তার স্বরূপ কী, সে সম্পর্কে ৫টি মতামত রয়েছে, (১) প্রথম অভিমতঃ মাক্বামে মাহমুদ অর্থ- প্রশংসিত অবস্থান। এই প্রশংসিত অবস্থানটির অর্থ হলোঃ  যে অবস্থায় সবাই নবীজীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে। ইহা তখনকার অবস্থা, যখন নবীজী সকল হাশরবাসীর জন্য সুপারিশ করে বিচার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন।  ইহাকে পরিভাষায় শাফাআতে উয্মা বা শাফাআতে কুবরা বলা হয়। ইহার অধিকারী অন্য কোন নবী হবেন না। ইহা হযরত হোযায়ফা ইবনে ইয়ামান  (রাঃ) ও হযরত ইবনে  ওমর (রাঃ) সাহাবীদ্বয়ের অভিমত। ইবনে জাওযী বলেন, অধিকাংশ তাফসীর বিশারদের ইহাই অভিমত। তাফসীর বিশারদ ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী ও ইমাম ওয়াহেদী বলেন, ইহা সকল তাফসীর বিশারদদের ঐক্যমত্য। (কুরতুবীর তাযকিরাহ্ ২৬৯ পৃষ্ঠা  এবং কাসতুলানীর  মাওয়াহিব ৬৪৯-৬৪১ পৃষ্ঠা)। (২)  দ্বিতীয় অভিমত হলোঃ হাশরের ময়দানে নবী করিম (ﷺ) -এর পবিত্র  হাতে  “লিওয়াউল হামদ” নামক বিরাট পতাকা প্রদান করা হবে, যে  পতাকার নীচে ও অধীনে সমস্ত পয়গাম্বর অবস্থান করবেন। প্রশংসিত ঐ পতাকার নাম “মাক্বামে মাহমুদ”। ইমাম র্কুতুবী বলেন, মূলতঃ  প্রশংসিত পতাকা ও  শাফাআত একই কাজের দুইটি অংশ, একটি জবানে, অপরটি হাতে। সুতরাং উভয়টির মর্মার্থ এক। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য। হযরত আনাছ (রাঃ) থেকে ইমাম তিরমিযি রেওয়ায়াত করেন, عن انس۔ قال: قال رسول اللّٰہ ﷺ: انا اول الناس خروجا اذا بعثوا ۔وانا خطیبھم اذا وفدوا۔ وانا مبشرھم اذا یئسوا ۔ لو اء  الحمد بیدی۔ فانا اکرم الناس علی ربی۔ ولا فخر۔ وفی روایۃ۔ انا اول الناس خروجا اذا  بعثوا وانا قائدھم اذا وفدوا۔ وانا خطیبھم اذا انصتوا۔ وانا شفیعھم اذا یئسوا۔ وانا مبشرھم اذا یئسوا لوء الحمد بیدی۔ وانا اکرم ولد آدم علی ربی۔ یطوف علی الف خادم۔ کانھم لؤلؤ مکنون۔ অর্থাৎঃ হযরত আনাছ (রাঃ) বলেন, নবী  করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন-  “যেদিন কবরবাসীগণ কবর থেকে বের হয়ে  হাশরে যাবে- সেদিন আমিই হবো  রওযা মোবারক থেকে প্রথম বহির্গত ব্যক্তি। যখন লোকেরা প্রতিনিধি হয়ে আল্লাহর কাছে আসবে- সেদিন আমিই হবো তাদের পক্ষে প্রথম বক্তব্য প্রদানকারী বা ভাষণদানকারী। যেদিন তারা নিরাশ হয়ে পড়বে, সেদিন  হবো  তাদের প্রথম সুসংবাদ প্রদানকারী। ঐদিন লিওয়াউল হামদ বা  প্রশংসার মহান পতাকা থাকবে আমার হাতে (সবাই থাকবে আমার অধীনে)। সেদিন আমিই হবো আদম সন্তানের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত ব্যক্তি। এতে আমার কোন অংকার নেই (ইহা বাস্তব ঘটনা)। হযরত আনাছের অন্য বর্ণনায় এরূপ বর্ণিত হয়েছে, নবীজী  (ﷺ) বলেছেন- “যেদিন লোকেরা কবর থেকে বের হবে- সেদিন আমিই হবো প্রথম বহির্গত ব্যক্তি। যেদিন লোকেরা প্রতিনিধি হয়ে আসবে- সেদিন  আমিই হবো    তাদের পক্ষেনেতৃত্বদানকারী। যেদিন তারা কোন কথা বলতে সাহস  করবেনা- সেদিন আমিই হবো তাদের পক্ষে বক্তব্যপ্রদানকারী। যেদিন তারা নিরাশ হয়ে পড়বে- সেদিন আমিই হবো তাদের জন্য সুপারিশকারী।  যেদিন মানুষ হতাশ হয়ে পড়বে- সেদিন আমিই হবো প্রথম সুসংবাদ প্রদানকারী। সম্মানের পতাকা থাকবে ঐ দিন আমার হাতে। আর আমি হবো আদমসন্তান বা মানবজাতির মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আমার চতুর্পার্শে  ঘুরাঘুরি করবে এক হাজার খাদেম-  যেন তারা এক একটি সংরক্ষিত মুক্তা”। (তিরমিযি শরীফ আনাছ সুত্রে)। (৩) তৃতীয় অভিমত হলো- “মাক্বামে মাহমুদ” এমন একটি  স্থান বা মাক্বাম- যার শেষ পরিনাম হবে  প্রশংসার  যোগ্য। ইমাম ফখরউদ্দীন রাযী  এই অভিমতকে দূর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন (মাওয়াহিব ৪র্থ খন্ড ৬৪২ পৃষ্ঠা)। (৪) চতুর্থ অভিমত হলো- আরশ অথবা কুরছির উপরে নবী করীম (ﷺ) -এর আসন গ্রহণ। হযরত আবদুল্লাহ্  ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- “আল্লাহ্পাক হাশরের  দিনে নবী  করীম (ﷺ) কে আরশের উপরে  বসিয়ে দিবেন”। মুজাহিদ বলেন- “আল্লাহ্ নিজের  সাথে রাসুলে  করিম (ﷺ) কে আরশের উপরে বসাবেন”। আরবী এবারত নিম্মরূপ, (۱)  روی عن ابن مسعود۔ انہ قال : یقعد اللّٰہ تعالی محمدا ﷺ علی العرش۔ (۲) عن مجاھد۔ انہ قال : یجلسہ معہ علی العرش ۔ অর্থ (১) ইবনে মাসউদ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-   “আল্লাহ্তায়ালা মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামকে আরশের উপর বসিয়ে দিবেন”। (২)  মুজাহিদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- “আল্লাহ্ তাঁকে নিজের সাথে আরশে বসিয়ে দিবেন”। (মাওয়াহিব ৪র্থ খন্ড ৬৪২  পৃষ্ঠা আল মাকতাবুল ইসলামী)। (৫) পঞ্চম মত হলো- মাক্বামে  মাহমুদ প্রশংসিত অবস্থার নাম। নবী করিম  (ﷺ) একদল জাহান্নামীকে দোযখ থেকে   বের করে আনবেন। এতে তিনি  প্রশংসিত মর্যাদার অধিকারী হবেন। সুতরাং اخراجہ طائفۃ من النار “দোযখ থেকে একদল গুনাহ্গারকে বের করে আনার কার্যক্রমকেই মাক্বামে মাহমুদ বলা হয়”। বিঃদ্রঃ ৫টি অভিমতের মধ্যে প্রথমটির উপরই সকলের ঐক্যমত্য রয়েছে অর্থাৎঃ “শাফাআতে কুবরা”। কিন্তু ৪র্থ অভিমতটি অধিক প্রসিদ্ধ। মতামতঃ  ৪র্থ ব্যাখ্যার ব্যাপারে ওয়াহেদী বলেন- “আরশের উপর নবীজীর আসন গ্রহণ” কে মাক্বামে মাহমুদ বলা সঠিক নয়- কারণ আয়াত  পাকে বলা হয়েছে, عسی ان یبعثک অর্থাৎঃ “আপনাকে পাঠানো হবে”। পাঠানো হয় বসা লোককে। কিন্তু নবীজী তো হাশরে বসা থাকবেন না, বরং মিযানে, পুলসিরাতে এবং হাউযে কাউছারে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে থাকবেন। তদুপরি- “আরশের উপর আল্লাহ্  উপবেশন করলে তিনি সাকার ও সীমিত বলে প্রমাণিত হন। যা সাকারও সীমিত- তা চিরস্থায়ী  হতে পারে না। অথচ আল্লাহ্ হচ্ছেন চিরস্থায়ী বা ক্বাদীম”। অতএব, ওয়াহেদীর মতে মাক্বামে মাহমুদের ৪র্থ ব্যাখ্যা সঠিক নয়। ওয়াহেদী আর একটি যুক্তি পেশ করে বলেন- আয়াতে বলা হয়েছে ‘মাক্বাম’। এ শব্দটি ইছমে  জারফ। এর অর্থ হচ্ছে দাঁড়াবার স্থান।  আল্লাহ্পাক নবীজীকে হাশরে দাঁড়াবার জন্য সম্মানিত স্থানে প্রেরণ করবেন- বলে ঘোষণা দিয়েছেন। “মাক্আদ” বা “বসারস্থানে” প্রেরণ করবেন-  এমন কথা বলেন নি। বুঝা গেল, আরশের উপর নবীজীর বসা সঠিক নয়। মতামত খন্ডনঃ (১)  শাইখুল ইসলাম আবুল ফযল আসকালানী (রহঃ) ওয়াহিদীর ব্যাখ্যা নাকচ করে দিয়ে বলেন- তাফসীর বিশারদ মুজাহিদ এবং হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত মতামত একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মত নয়।  “আরশের উপর নবীজীকে বসানো বা আল্লাহর সাথে নবীজীকে বসানো”, এই বিষয়টি আকল ও নকল- অর্থাৎ যুক্তি ও উক্তি- উভয়দিক  দিয়েই ফেলে দেবার মত নয়। ইবনে আতিয়া বলেছেন, وھو کذلک اذا احمل علی ما یلیق بہ অর্থাৎঃ “উপযুক্ত ব্যাখ্যা সাপেক্ষে বিষয়টি মূলতঃ তাই, যা ইবনে  মাসউদ (রাঃ) ও মুজাহিদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন”। আল্লাহ্পাক আপন কুদরতে নিজ শান  অনুযায়ী সেদিন আরশে বিরাজ করবেন (সশরীরে নয়) এবং নবী করিম (ﷺ) কে সশরীরে তাঁর শান অনুযায়ী আরশে বসানো হবে।  এটাকে “মুতাশাবিহি” বলা হয়- অর্থাৎ দূর্বোধ্য বিষয়। এরূপেই ব্যাখ্যা করতে হবে। (২) নাক্কাশ ইমাম আবু দাউদ  -এর একটি মন্তব্য এভাবে উল্লেখ করেছেনঃ انہ قال: من انکرھذا فھو متھم۔ وقد جأ عن ابن مسعود عن الثعلبی وعن ابن عباس عند ابی الشیخ قال : ان محمدا یوم القیامۃ یجلس علی کرسی  الرب بین یدی الرب ۔ فیحتمل ان تکون الاضافۃ اضافۃ تشریف ۔ وعلی ذلک یحمل ما جاء عن مجاھد وغیر ہ  یحتمل ان یکون المراد بالمقام المحمود الشفاعۃ ۔کما ھو المشھور ۔ وان یکون الاجلاس ھی المنزلۃ المعبرعنھا بالوسیلۃ۔ کذا قال بعضھم ۔ ویحتمل ان  یکون  الاجلاس علامۃ الاذن فی الشفاعۃ۔ অর্থাৎঃ ইমাম আবু দাউদ বলেন- যারা আরশের উপর নবীজীর উপবেশনকে অস্বীকার করে- সে ব্যক্তি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। কেননা, সা’লাবী সুত্রে হযরত ইবনে মাসউদ থেকে এবং আবুশ শাইখ সুত্রে হযরত ইবনে আব্বাস  থেকে বর্ণিত হাদীস হলো- “নিশ্চয়ই মোহাম্মদ (ﷺ)  কিয়ামত দিবসে  আল্লাহর কুরছির  উপর আল্লাহর সামনে বসবেন”। একথার অনেক অর্থ  হতে পারে। (১) উক্ত বর্ণনাটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ- সম্মানিত সত্বার সাথে বসার যে সম্মান, নবীজীরও অনুরূপ সম্মান হবে সেদিন”। এটাকে “ইজাফাতে তাশ্রিফী” বলা হয়। আবু দাউদ বলেন- মুজাহিদের বর্ণিত “আল্লাহর সাথে  উপবেশনের হাদীসটি” এই অর্থেই গ্রহণ করা যেতে পারে। (২) উক্ত বর্ণনার আর একটি ব্যাখ্যা এমনও হতে  পারে যে, ইবনে মাসউদ ও মুজাহিদ বর্ণিত ‘মাক্বামে মাহমুদ’ দ্বারা শাফাআতকেই বুঝানো হয়েছে- ইহাই মশহুর মতবাদ। (৩) এ ব্যাখ্যাও হতে পারে, “আরশে বা কুরছিতে উপবেশনের অর্থ হলো এমন  একটি মর্তবা- যা আযানের দোয়ায়, وسیلۃ ওয়াছিলা বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। (৪) অথবা আরশে আসন গ্রহণ দ্বারা শাফাআতের অনুমতির প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে- প্রকৃত অর্থে আসন গ্রহণ করা নয়। “মাক্বামে মাহমুদ” এর মধ্যে “মাহমুদ” শব্দের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ======== আল্লামা আবু আবদুল্লাহ্ কুরতুবী (কর্ডোবা) “মাহমুদ” শব্দটির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ  করতে গিয়ে বলেছেন -“মাহমুদ” শব্দটি ইছমে মাফউল- যার অর্থ প্রশংসিত বা পদমর্যাদাবান। ইহার ক্রিয়া হলো- “হামদ”  বা প্রশংসা করা। তাহলে তার কর্তা হবেন “হামিদুন” বা প্রশংসাকারী।  তাহলে  “মাক্বামে মাহমুদ” -এর প্রশংসাকারী  কে বা কারা? কেননা, হামদ বলতে তিনটি বস্তুর প্রয়োজন হয় (১) ক্রিয়া হামদ (২) কর্তা বা ফায়েল হামিদ (৩) কর্ম বা মাফউল محمود । তাহলে ঐদিন প্রশংসাকারী হবে কে বা কারা কারা? এ ব্যাপারে বিভিন্ন পন্ডিতের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। (১) অধিকাংশ তাফসীর বিশারদের মতে প্রশংসাকারী হবে হাশরবাসী, দোস্ত  দুশমন নির্বিশেষে সকলে। ইহাই প্রশিদ্ধ ও মশহুর অর্থ। (২) কারো  কারো মতে প্রশংসাকারী স্বয়ং নবীজী। কেননা, উক্ত আয়াতে তাহাজ্জুদ নামাযের উল্লেখ করে আল্লাহ্পাক বলেন- وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ  أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا অর্থাৎঃ “হে প্রিয় হাবীব,  আপনি রাত্রের কিয়দাংশে কোরআন পাঠসহ রাত্রি জাগরণ করে নামায পড়ুন- ইহা আপনার জন্য অতিরিক্ত ফরয নামায। নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক (এর কারণে) আপনাকে প্রশংসিত স্থানে প্রেরণ করবেন”। তাহলে আয়াতের মর্মে বুঝা যায়- তাহাজ্জুদের শেষ পরিনাম হচ্ছে প্রশংসিত মর্তবা লাভ করা। আর এই প্রশংসার কর্তৃকারক  হলেন পরোক্ষভাবে নবী মোস্তফা। শাফাআত কত প্রকার ও কি কি? ======== আল্লামা ইবনে  হাজর আহমদ কাস্তুলানী মাওয়াহিব গ্রন্থের ৪র্থ খন্ড ৬৫৪ পৃষ্ঠায় বলেনঃ ইমাম নওয়াবী এবং তাঁর পূর্বেকার মুহাদ্দিস কাযী আয়ায বলেছেন- নবীজীর শাফাআত ছয় প্রকার। যথা, (۱) الاولی : فی الاراحۃ  من ھول الموقف وفصل القضاء (১) হাশরের ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তিদান ও বিচার অনুষ্ঠানের জন্য সুপারিশ করা, শাফাআতে কুবরা। (۲) الثانیۃ : فی ادخال قوم الجنۃ بغیر حساب (২) বিনা হিসাবে কিছু লোককে জান্নাতে  প্রেরণ ও প্রবেশ করানোর সুপারিশ। (۳) الثالثۃ: فی رفع الدرجات فی الجنۃ ۔ (৩) জান্নাতে পদমর্যাদা বৃদ্ধি করনের সুপারিশ। (۴) الرابعۃ: فی ادخال قوم الجنۃ۔ حوسبوا  واستحقوا العذاب۔ ان لا یعذبوا۔ (৪) হিসাব,নিকাশে জাহান্নামের উপযুক্ত বলে প্রমানিত ও তালিকাভূক্ত কিছু সংখ্যক লোককে শাস্তি না দিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুপারিশ। (۵) الخامسۃ : فی اخراج من ادخل النار من العصاۃ ۔ (৫) জাহান্নামে প্রেরিত গুনাহ্গারদেরকে দলে দলে বের করে আনার জন্য সুপারিশ। (মাওয়াহিব ৬৫৪ পৃষ্ঠা, আত তাযকিরাহ্ ২৭১ পৃষ্ঠা)। (۶) السادسۃ : الشفاعۃ لعمہ ابی طالب  فی التخفیف عنہ (৬) ইমাম কুরতুবী বলেন, (চাচার জন্য সুপারিশ) کما رواہ مسلم۔ عن ابی سعید الخدری ص ان رسول اللّٰہ ﷺ ذکر عندہ عمہ ابو طالب۔ فقال : لعلہ تنفعہ شفاعتی یوم القیامۃ۔ فیجعل فی ضحضاح من نار۔ یبلغ کعبیہ یغلی منہ دماغہ ۔ অর্থাৎঃ মুসলিম শরীফে আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্নিত আছে- রাসুলকরিম (ﷺ) -এর নিকট তাঁর চাচা আবু তালেবের প্রসঙ্গ আলোচিত হবার পর তিনি এরশাদ করলেন-  “নিশ্চয় হাশরের দিনে আমার সুপারিশ আমার চাচার বিশেষ  উপকারে আসবে। তাহলো- তাকে পায়ের গিরার নীচে আগুনের জুতা পরিয়ে  দেয়া হবে। এতেই তার মাথার মগজ উপচে পড়বে” (মুসলিম শরীফ)। প্রশ্নঃ  এখানে কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, কোরআনে আল্লাহ্পাক বলেছেন, فما تنفعھم شفاعۃ الشافعین ۔ অর্থাৎঃ “যারা কাফের- তাদের  কোনই উপকারে আসবেনা শাফাআতকারীদের সুপারিশ”। তাহলে আবু তালেবের উপকারে আসবে কি  করে? এর ব্যাখ্যা হলোঃ ای لا تنفع فی الخروج من النار کعصاۃ الموحدین الذین یخرجون منھا ویدخلون الجنۃ۔ অর্থাৎঃ উক্ত “আয়াতের মর্মার্থ  হলো- তৌহিদপন্থী গুনাহ্গারগণ শাফাআত লাভ করে জাহান্নাম থেকে  বের হয়ে যেভাবে জান্নাতে প্রবেশের উপকার পাবে- কাফেরগণ তদ্রুপ উপকার পাবে না। অন্য রকমে শাস্তি লাঘবের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবে। আবু তালেবের ব্যপারটিও তদ্রুপ। ছয় প্রকার শাফাআতের প্রমাণঃ ======= (১) প্রথম প্রকারের শাফাআতঃ (শাফাআতে কুবরা) -এর  প্রমাণ হলো- হযরত আনাছ ও আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণিত দীর্ঘ হাদীস। এটাকে শাফাআতে কুবরা বলা হয়।  বিচারানুষ্ঠান  আরম্ভ করার জন্য এই শাফাআত করা হবে। (লি ফাছলিল কাযা)। (২) দ্বিতীয় প্রকারের  শাফাআতঃ (لادخل الجنۃ  بلاحساب) অর্থাৎ বিচারানুষ্ঠানের পূর্বে বিনা হিসাবে অসংখ্য লোকের জান্নাতে গমন করা। এর  প্রমাণ হযরত আবু হোরায়রা বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসের শেষাংশে আছে। (ক) فارفع رأسی۔ فاقول: یا رب امتی۔ یا رب امتی۔ فیقال: یا محمد ادخل من امتک من لا حساب علیھم۔ من الباب الایمن من ابواب الجنۃ ۔ (بخاری ومسلم ) অর্থাৎঃ  নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেন- “হাশরের ময়দানে যখন  আমি লোকদের অনুরোধে শাফাআত করার জন্য দীর্ঘ সিজদা থেকে মাথা  তুলে বলবো- হে রব, আমার উম্মত, হে রব, আমার উম্মত। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মত হতে বিনা  হিসাবে কিছু লোককে জান্নাতের ডানদিকের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিন”। (বুখারী ও মুসলিম) (খ) অন্য রেওয়ায়াতে আছে-  চার লক্ষ উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতী وعن انسص قال: قال رسول اللّٰہ ﷺان اللّٰہ عزوجل  وعدنی ان یدخل الجنۃ من  امتی اربعماءۃ الف بلا حساب۔ رواہ فی شرح السنۃ (مشکوۃ با ب الشفاعۃ) অর্থঃ হযরত আনাছ (রাঃ) বলেন- আল্লাহর প্রিয়রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “আল্লাহ্পাক আমার সাথে এই প্রতিশ্রুতি  দিয়েছেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে চার লক্ষ লোককে তিনি বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ” (শরহে সুন্নাহ  হতে মিশকাত)। (গ) সত্তর হাজার উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতীঃ বোখারী ও মুসলিম শরীফে ইবনে আব্বাসের বর্ণনায় আছে, عن ابن عباس قال: قال رسول اللّٰہ ﷺ یدخل من امتی الجنۃ سبعون الفا بغیر حساب۔ অর্থাৎঃ “রাসুল করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে  প্রবেশ করবে”। (বুখারী ও মুসলিম)। (ঘ) হযরত আনাছ (রাঃ) -এর অন্য এক রেওয়ায়াতে একথাও আছে, ومع کل واحد سبعون الفا۔ অর্থাৎঃ “উক্ত সত্তর হাজারের প্রত্যেকের সাথে আরো সত্তর হাজার লোক  থাকবে। এরা সবাই নবীজীর শাফাআতে হিসাব নিকাশের পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করবে”। এভাবে গ ও ঘ -তে বর্ণিত হিসাব মতে বিনা হিসাবে জান্নাতীর সংখ্যা দাঁড়াবে- ৭০,০০০ x৭০,০০০ = ৪৯০,০০০০০০০ চারশত নব্বই কোটি। এ প্রসঙ্গে হযরত আনাছ ইবনে মালেক, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রাঃ) এবং আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) -এর বর্ণিত আরো ৩টি হাদীস পাঠকদের অবগতির জন্য নিম্নে পেশ করা হলো। (ঙ) আবু বকর বাজজার হযরত আনাছ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন- হযরত আনাছ (রাঃ) বলেন- রাসুল মাকবুল (ﷺ) এরশাদ করেছেন- لیدخلن الجنۃ من امتی سبعون الفا ۔ مع کل واحد من السبعین الف۔ سبعون الفا ۔ অর্থাৎঃ রাসুল করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- ”আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোক জান্নাতে (বিনা হিসাবে)  প্রবেশ করবে।  আবার প্রত্যেকের সাথে সত্তর হাজার করে লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে”। এ হিসাবে ৭০,০০,০০০ x  ৭০,০০,০০০  = ৪৯০,০০০০০০০ চারশত নব্বই কোটি হয়। (চ) বাজজার ও আবু আবদুল্লাহ্ হাকীম তিরমিযি (আবু ইছা তিরমিযি নন) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর  (রাঃ) থেকে অন্য  একখানা হাদীস নকল করেছেন। البزار وابو عبد اللّٰہ الحکیم الترمذی عن عبد الر حمٰن بن ابی   بکر ص قال:  قال رسول اللّٰہ ﷺ: ان اللّٰہ اعطانی سبعین  الفا یدخلون الجنۃ بغیر حساب۔ فقال عمر: یا رسول اللّٰہ: فھل لا استزدتہ؟ قال: استزدتہ فاعطانی مع کل من السبعین الفا ۔ فقال عمر: یا رسول اللّٰہ: فھل  لا استزدتہ؟ قال: استزدتہ۔ فاعطانی ھکذا۔ অর্থাৎঃ “হযরত আবদুর  রহমান ইবনে আবু বকর (রাঃ) বর্ণনা করেন- নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- আল্লাহ্পাক আমাকে আমার সত্তর হাজার উম্মত দিয়েছেন- যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে”।  একথা শুনে হযরত ওমর (রাঃ)  আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আরো বেশী চাইলেন না কেন? হুযুর (ﷺ) এরশাদ করলেন- ”আমি বেশী প্রার্থনা করেছি। আল্লাহ্পাক আমাকে ঐ সত্তর হাজারের প্রত্যেকের সাথে সত্তর হাজার করে দান করেছেন”।  হযরত ওমর (রাঃ) আবার আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি আরো বেশী চাইলেন না কেন?   হুযুর (ﷺ) বললেন- ”চেয়েছি- আল্লাহ্ আমাকে পুনঃ ঐ   হিসাবে দান করেছেন। ” এই বর্ণনায় দেখা যায় ৭০,০০০ x ৭০,০০০ x  ৭০,০০০= ৩৪ ৩০ ০০০, ০,০০,০০,০০০ লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। সুবহানাল্লাহ্। (ছ) হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বর্নিত হাদীস- যা ইমাম তিরমিযি সংকলন করেছেনঃ خرج الترمذی عن ابی امامۃ۔ قال: سمعت رسول اللّٰہ ﷺ یقول: وعدنی ربی ان یدخل الجنۃ من امتی سبعین الفا۔ অর্থাৎঃ ইমাম তিরমিযি হযরত আবু উমামা বাহেলী সূত্রে নবী করিম (ﷺ) -এর একখানা হাদীস সংকলন করেছেন। আবু উমামা (রাঃ) বলেন- আমি নিজে নবী করিম (ﷺ)  কে বলতে শুনেছি- “আল্লাহ্পাক  আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্য হতে সত্তর হাজার উম্মতকে  বিনা হিসাবে এবং বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আবার প্রত্যেক হাজারের অধীনে সত্তর  হাজার করে বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”। এ বর্ণনায়  দেখা যায়- প্রথম সত্তর হাজারের মধ্যে প্রত্যেক এক হাজারের সাথে সত্তর হাজার করে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। এ হিসাবে ৭০,০০০ x৭০ = ৪৯০,০০০০ (উনপঞ্চাশ লাখ) হয়। (জ) জান্নাতুল বাক্বী হতে সত্তর হাজার বিনা হিসাবে জান্নাতীঃ হযরত নাফে’ (রাঃ)  হযরত উম্মে কায়েছ সাহাবীয়া থেকে বর্ণনা করেছেনঃ وخرج الترمذی الحکیم ایضا عن نافع ان ام قیس حدثتہ ان رسول اللّٰہ ﷺ ۔ خرج آخذا بیدھا فی سکۃ من سکک المدینۃ۔ حتی انتھا بھا الی بقیع الغرقد فقال: یبعث من ھاھنا سبعون الفا یوم القیامۃ فی صورۃ القمر لیلۃ لبدر یدخلوں الجنۃ بغیر حساب۔ فقام رجل فقال: یارسول اللّٰہ ادع اللّٰہ ان یجعلنی منھم۔ فقال: انت منھم۔ فقام آخر فقال:  یا رسول اللّٰہ ادع اللّٰہ ان یجعلنی منھم ۔ فقال: سبقک عکاشۃ۔ فال ابو عبد اللّٰہ: فھذا العدد من مقبرۃ واحدۃ۔ فکیف بسائرمقابر امتہ ؟ وانما قال رسول اللّٰہ ﷺ: انت منھم۔ کانہ رأی فیہ انہ منھم۔ والاٰخر لم یرہ بموضع ذلک۔ فقال: سبقک عکاشۃ ۔ وام قیس ھی بنت محصن الاسدی اخت عکاشۃ  بن محصن ۔ خرجہ مسلم فی صحیحہ بمعناہ۔ অর্থাৎঃ হাকীম তিরমিযি হযরত নাফে’ থেকে বর্ণনা করেছেন। উম্মে কায়েছ নাম্মী  জনৈকা সাহাবীয়া হযরত  নাফে’ কে  বলেছেন যে,  রাসুলকরিম (ﷺ) তাঁর হাত ধরে মদিনার একটি গলি দিয়ে বাক্বীউল র্গাক্বাদে (জান্নাতুল বাক্বী) গিয়ে পৌঁছলেন এবং বললেন- “এই কবরস্থান থেকেই সত্তর হাজার লোক কেয়ামতের দিন উত্থিত হবে-  যাদের চেহারা হবে পূর্নিমাশশীর ন্যায়। তাঁরা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি (ওকাশা) আরয করলেন- ইয়া  রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন- যেন আমাকে ঐ সত্তর হাজারের  দলভূক্ত করেন। হুযুর (ﷺ) বললেন- ”তুমি তাদের সাথী হবে”। আর একজন লোক দাঁড়িয়ে আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আপনি আমার জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া করুন- যেন আমাকে উনাদের অন্তর্ভূক্ত করেন। এবার  নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করলেন- “তোমার আগে ওকাশা ঐস্থান দখল করে নিয়েছে”। রাবী আবু আবদুল্লাহ্ (হাকীম তিরমিযি) বলেন- একটি কবরস্থান থেকেই এই  সত্তর হাজার জান্নাতী লোক বেরুবে-  যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। তাহলে হুযুর (ﷺ)  -এর সমস্ত উম্মতের কবরস্তানের অবস্থা কি হতে পারে? আর-  ওকাশার ব্যাপারে বিনা হিসাবে জান্নাতী হওয়া এবং জান্নাতুল বাক্বী গোরস্তানের লোকদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার বিষয়টি নবী  করিম (ﷺ) নিজ  চোখে দেখেছেন। কিন্তু অন্য লোকটির স্থান ওখানে দেখতে পাননি। তাই বলেছেন- ”তোমার  আগেই ওকাশা ঐস্থান দখল করে নিয়েছে”। সুবহানাল্লাহ্! হুযুর  আছেন দুনিয়াতে- কিন্ত তিনির দৃষ্টি রয়েছে হাশরের দিনে সত্তরহাজার জান্নাতুলবাক্বী বাসীদের দিকে। একেই বলে  সূদূরপ্রসারী দৃষ্টি বা  ইলমে গায়েব। হাকীম তিরমিযি বলেন- উম্মে  কায়েছ ও ওকাশা ছিলেন ভাইবোন- তাঁদের  পিতার নাম  মাহসান”। (ইমাম কুরতুবীর আত্ তাযকিরাহ্ ৪০৫, ৪০৬, ৪০৭ পৃষ্ঠা)। নোটঃ এই ওকাশা (রাঃ)- জঙ্গে বদরে তাঁর তারবারী ভেঙ্গে গেলে হুযুর (ﷺ) তাঁকে একটি খেজুরডাল   দিয়ে বলেছিলেন- ইহাই তোমার তলোয়ার। সত্যিসত্যি  ঐ খেজুরডালা তলোয়ারে পরিণত হয়েছিল।  নবীজী ঐ তলোয়ারের  নাম রেখেছিলেন “আউন”। তিনি পরবর্তীকালে অনেক যুদ্ধে ঐ মোজেযাপূর্ন  তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। (দেখুন-  আমার রচিত নূরনবী- জঙ্গে বদর অধ্যায়। এম.এ. জলিল)। (৩) তৃতীয় শাফাআত হবে জান্নাতে পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্যঃ ======= এই শাফাআত হবে জান্নাতীদের  পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।  রাসুলেকরিম (ﷺ) যাদের বিশেষ কোন কাজে বা ﷺ শরীফে সন্তষ্ট হয়েছেন- তাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করবেন। আল্লাহ্পাক নবীজীর সুপারিশে ঐব্যক্তিদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি  করে  দেবেন। নবী  করিম (ﷺ) এরশাদ করেন- ”যে  ব্যক্তি আমার উপর বেশী দরুদ পড়বে সে জান্নাতে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে” (মিশকাত)। ইমাম নাওয়াবী (রহঃ) ‘রওযা’  নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- “এই মর্যাদাবৃদ্বির শাফাআত রাসুলেপাকের জন্য খাস। অন্য কোন নবী বা ওলী এ ধরণের  শাফাআত করতে পারবেন না”। (মাওয়াহিব ৬৫৫ পৃঃ) (৪)   চতুর্থ  প্রকারের শাফাআতের  প্রমাণ (তালিকাভূক্ত): হযরত হোযায়ফা  (রাঃ) হতে বর্ণিত- রাসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- ونبیکم علی الصرط یقول رب سلم رب سلم ۔ অর্থাৎঃ  “নবী  করিম (ﷺ)  পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে  বলতে থাকবেন- হে পরওয়ারদিগার।  আমার গুনাহ্গার উম্মতকে রক্ষা করো- রক্ষা করো” (মাওয়াহিব ৬৫৫ পৃষ্ঠা)। (৫) পঞ্চম প্রকারের শাফাআতের প্রমাণঃ (দোযখী) এ ব্যাপারে  অসংখ্য হাদীস রয়েছে। হযরত আবু হোরায়রা ও আনাছ (রাঃ) বর্ণিত শাফাআতের হাদীসে উল্লেখ আছে-  আল্লাহ্পাকের দরবারে রাসুলকরিম (ﷺ) বারবার সিজদা করে বলবেন- হে আল্লাহ্,  আমার গুনাহ্গার উম্মত দোযখ থেকে আমাকে আহ্বান করে কাঁদছে। তাদেরকে রক্ষা করো। তখন আল্লাহ্পাক বলবেন, انطلق الی جھنم واخرج من کان فی قلبہ مثقال ذرۃ من ایمان ۔ وقد روی عمران بن حصین مرفوعا یخرج قوم من النار  بشفاعۃ محمد ﷺ فیدخلون  الجنۃ ویسمون الجھنمیین۔  رواہ البخاری۔ অর্থাৎঃ “হে প্রিয় মুহাম্মদ! আপনি জাহান্নামে প্রবেশ করুন এবং যার অন্তরে বিন্দু পরিমান বা অনু পরিমান ঈমান পাবেন- তাকে বের করে নিয়ে আসুন”। হযরত হোযায়ফা ইবনে ইয়ামান -এর রেওয়ায়াতে বর্ণিত  আছে- “রাসুলকরিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “একদল লোক জাহান্নাম থেকে তোমাদের নবী মোহাম্মদ (ﷺ) -এর সুপারিশে বের হয়ে আসবে- তাদেরকে   জাহান্নামী বা  “জাহান্নামমূক্ত” নাম রাখা হবে”। (বুখারী শরীফ)। নবী করিম (ﷺ) শাফাআতঃ ======= (১) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) বর্ণনা করেন- হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইছা আলাইহিস সালাম আপন আপন উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে যেভাবে দোয়া করেছিলেন- রাসুলে করিম (ﷺ) একদিন সেসব আয়াত তিলাওয়াত করে নিজ উম্মতের জন্য রোদন করছিলেন- আর দু’হাত তুলে  বলছিলেন- আমার উম্মত- আমার উম্মত। এমন সময় আল্লাহ্পাক হযরত জিবরাইলকে বললেন, اذھب الی  محمد وربک اعلم فسلہ ما یبکیہ؟ فاتاہ جبراء  یل۔  فسألہ  فاخبرہ  رسول  اللّٰہ ﷺ بما قال: فقال اللّٰہ لجبرائیل۔  اذھب الی محمد۔ فقل: انا سنرضیک فی امتک۔ ولا نسوک۔ رواہ مسلم۔ অর্থাৎঃ   “আল্লাহ্ বললেন- হে জিবরাঈল! তুমি মোহাম্মদ (ﷺ)-এর খেদমতে যাও- আর এ ব্যাপারে তোমার পালনকর্তা ভাল  জানেন- তবুও তুমি গিয়ে আমার হাবীবকে জিজ্ঞেস করো- তিনি কিজন্য কাঁদছেন। অতঃপর জিবরাঈল এসে নবীজীকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। নবী  করীম  (ﷺ) জিবরাঈলকে বললেন- “আমি দুইহাত তুলে “আমার উম্মত- আমার উম্মত” বলে  কেঁদেছি। আল্লাহ্পাক একথা শুনে  জিবরাইলকে পুনরায় পাঠালেন এবং বললেন- তুমি গিয়ে  বলো- “নিশ্চয়ই আমি আপনার উম্মতের ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই খুশী  করবো এবং  আপনাকে চিন্তাগ্রস্থ রাখবোনা”। (মুসলিম শরীফ)। ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাওয়াবী (রহঃ) অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন- প্রথমতঃ “এই হাদীসে উম্মতের জন্য নবীজীর স্নেহ ও ভালবাসার একটি চুড়ান্তরূপ ফুটে  উঠেছে। দ্বিতীয়তঃ উম্মতে মোহাম্মদীর মুক্তির জন্য সুসংবাদ এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে। তৃতীয়তঃ আল্লাহর দরবারে নবীজীর বিরাট মর্যাদার সুসংবাদ রয়েছে”। অন্য রেওয়ায়াতে আছে- আল্লাহর প্রতিশ্রুতি শুনে নবী করীম (ﷺ) বলেছিলেন, واللہ  انی لاارضی حتی احدا من امتی یخلد فی النار۔ অর্থাৎঃ “আল্লাহর শপথ। আমার একজন (সুন্নী) উম্মত দোযখে থাকা পর্য্যন্ত আমি খুশী হবো না”। (৭২ ফের্কা সম্পর্কে বলেছেন- ”তারা প্রত্যেকেই  জাহান্নামী” তিরমিযী)। (২) হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন, قال رسول اللّٰہ  ﷺ: اذا دخل اھل الجنۃ الجنۃ۔واھل النارالنار۔ یقول اللّٰہ تعالی: من کان فی قلبہ مثقال حبۃ من  خردل من ایمان فاخرجوہ۔  فیخرجون قد امتحشوا وعادوا حمیما۔ فیلقون فی نھر الحیوۃ۔ فینبتون کما تنبت الحبۃ فی حمیل السیل۔ الم تروا انھا تخرج صفراء ملتویۃ۔ متفق علیہ ۔ অর্থঃ “রাসুলকরিম (ﷺ)  এরশাদ করেছেন- যখন জান্নাতীরা জান্নাতে এবং দোযখীরা দোযখে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ্পাক বলবেন-  যাদের অন্তরে সরিষার দানা বরাবর ঈমান  রয়েছে- তাদেরকে তোমরা বের করে নিয়ে আস। তারা তখন জ্বলেপুড়ে  জ্বলন্ত কয়লার ন্যায় হয়ে বের  হবে। অতঃপর তাদেরকে নহরে হায়াতে নিক্ষেপ করা হবে। তারা পুনরায় সজিব হয়ে গঁজিয়ে উঠবে- যেভাবে বৃষ্টির পানি পেয়ে বীজ গঁজিয়ে উঠে। তোমরা কি দেখনি- বীজ কেমন হলুদ রং ধারণ করে খোলসযুক্ত অবস্থায় অঙ্কুরিত হয়”? (বুখারী ও মুসলিম)। ব্যাখ্যাঃ এসব লোক হবে আমলবিহীন শুধু ঈমানদার। তারা প্রথমে দোযখে জ্বলে কয়লার মত ছাঁই হয়ে  যাবে। পরে  ঈমানের বদৌলতে নহরে হায়াতের পানিতে পুনরায় সজীব হবে। হযরত আবু সায়ীদ খুদরীর অন্য রেওয়ায়াতে আছে- ”যখন ফিরিস্তা, আম্বিয়া ও  মোমেনে কামেলগনের শাফাআত শেষ হয়ে যাবে- তখন একমাত্র বাকী  থাকবেন মহান দয়ালু আল্লাহ্। তিনি জাহান্নাম থেকে একমুষ্ঠি লোককে বের করে আনবেন-  যারা কোন আমল করেনি এবং  অন্যকোন ভাল কাজও করেনি ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য। তাদের শাস্তির অবস্থা এমন হবে যে- তাতে তারা জ্বলে কয়লার রং ধারণ করবে। পরে তাদেরকে নহরুল হায়াতে ফেলা হবে। তারা  নতুন বীজের মত পুনরায় তরুতাজা হয়ে মুক্তার ন্যায় গঁজিয়ে  উঠবে। তাদের কাঁধে একটি বিশেষ চিহ্ন থাকবে। এটা দেখে জান্নাতীরা বলবে- এরা হচ্ছে  আল্লাহ্ কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত। এরা বিনা আমলে ও বিনা পূন্যে জান্নাতে এসেছে। তাদেরকে বলা হবে- ”দেখ! তোমাদের জন্য কিকি  রেখেছি। এর সাথে অনুরূপ আরো কিছু আছে”। (বুখারী মুসলিম ও মিশকাত ৪৯১ পৃঃ)। বুঝা গেল- নবী, ওলী ও ফিরিস্তাদের সুপারিশ যেখানে শেষ- সেখান থেকে আল্লাহর একক দয়া শুরু। এটা আল্লাহর ইচ্ছাধীন মেহেরবাণী। এরা আমলবিহীন শুধু ঈমানদার ছিল। নবীজীর সুপারিশ শেষ হয়ে গেলেই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্মরণ রাখা দরকার- হুযুর (ﷺ) -এর সুপারিশ   হবে গুনাহ্গাদের জন্য- ৭২  ফের্কার বেয়াদব   ও গোস্তাখদের জন্য নয়। তারা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (৩) হযরত ইমরান  ইবনে হোসাইন (রাঃ) বর্ণনা করেন, عن عمران  بن  حصین قال:  قال رسول اللّٰہ ﷺ: یخرج قوم من النار بشفاعۃ محمد فیدخلون الجنۃ یسمون الجھنمیین۔ رواہ البخاری۔ অর্থাৎঃ রাসুলে মকবুল (ﷺ) এরশাদ করেছেন-  “একদল  লোক  মোহাম্মদ  (ﷺ)  -এর সুপারিশক্রমে দোযখ থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদেরকে জাহান্নামী নাম  রাখা হবে- অর্থাৎঃ জাহান্নাম থেকে “মূক্তিপ্রাপ্ত জান্নাতী” (বুখারী শরীফ)।  এখানে হুযুর (ﷺ) নিজের নাম মোবারক উল্লেখ করেছেন। (৪)  হযরত  আবদুল্লাহ্ ইবনে  মাস্উদ (রাঃ) কর্তৃকবর্ণিত, عن عبد اللّٰہ بن مسعود ص قال: قال رسول اللّٰہ  ﷺ: انی لا علم اٰخر اھل النار خروجا منھا۔ وآخر اھل الجنۃ دخولا۔  رجل یخرج من النارحبوا۔  فیقول اللّٰہ: اذھب  فادخل الجنۃ۔ فیأتیھا۔ فیخیل  الیہ انھا ملائی۔ فیقول: یا رب۔ وجدتھا  ملائی۔ فیقول اللہ: اذھب۔ فادخل الجنۃ۔ فیأتیھا، فیخیل الیہ انھا ملائی، فیقول: یارب ۔ وجدتھا ملائی۔ فیقول اللّہ: اذھب فادخل الجنۃ ۔ فان لک مثل الدنیا وعشرۃ امثالھا۔ فیقول: اتسخرمنی۔ اوتضحک منی اوانت الملک؟َ فلقد رأیت رسول اللّٰہ ﷺ ضحک۔  حتی بدت نواجذہ۔ وکان یقال:ذلک ادنی اھل الجنۃ منزلۃ ۔ (متفق علیہ ) অর্থাৎঃ ইবনে মাস্উদ (রাঃ) বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- আমি ভাল করেই জানি- কোন্ ব্যক্তি সর্বশেষ দোযখ থেকে বের হয়ে আসবে এবং সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে জাহান্নাম থেকে হাতের উপর ভর  করে হামাগুঁড়ি দিয়ে বের হয়ে আসবে। আল্লাহ্পাক বলবেন- যাও  জান্নাতে প্রবেশ কর। অতঃপর সে জান্নাতের নিকটে আসলে তার মনে হবে- যেন জান্নাত লোকে পূর্ণ হয়ে গেছে। সে বলবে-  হে প্রতিপালক- আমি তো দেখতে পাচ্ছি- জান্নাত লোকে পূর্ণ হয়ে গেছে। এভাবে তিনবার যাবে এবং তিনবার ফিরে আসবে। ৪র্থ বার আল্লাহ্ বলবেন- “যাও জান্নাতে প্রবেশ করে দেখো- দুনিয়া এবং তার দশগুন  অতিরিক্ত জায়গা তোমার জন্য বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে”। সে বলবে- “হে প্রভূ! তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা বা মশকারী করছো? তুমি তো শাহেনশাহ! রাবী ইবনে মাস্উদ (রাঃ) বলেন- একথা বর্ণনা করে রাসুলকরিম (ﷺ) এমন উচ্চ  হাসি হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির পাশের দন্ত মোবারকগুলো প্রকাশ  হয়ে পড়লো। বর্ণিত আছে-  ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতের সর্বনিম্ন  মর্তবাধারী লোক বলে গণ্য করা হবে”। (বুখারী  ও মুসলিম সূত্রে মিশকাত ৪৯২ পৃঃ আরবী হাশিয়াযুক্ত)। -সোবহানাল্লাহ্! সর্বনিম্ন ও সর্বশেষ জান্নাতীর জন্য যদি এত বিশাল জায়গা দেয়া হবে- তাহলে প্রথম শ্রেণীর জান্নাতীদের অবস্থা ও শান কি ধরণের  হতে পারে?  (আত্ তাযকিরাহ্ ৪৬৬ পৃষ্ঠা) (৫) সাহাবীগণও নবীজীর শাফাআতপ্রার্থী ছিলেন ====== হযরত আনাছ ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন- عن انس۔  قال: سألت النبی ﷺ ان یشفع لی یوم القیامۃ۔ فقال: انا فاعل۔  قلت: یارسول اللّٰہ۔ فاین اطلبک؟ قال: اطلبنی اول ما تطلبنی علی الصراط۔ قلت: فان لم القک علی الصراط؟ قال: فاطلبنی عند المیزان۔ قلت فان لم اکن القک عند المیزان؟ قال فاطلبنی عند  الحوض۔ فانی لا اخطئی ھذہ الثلث المواطن۔ رواہ الترمذی۔ অর্থঃ হযরত আনাছ ইবনে মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন- “আমি একদিন রাসুলেপাকের দরবারে হাশরের দিনে আমার জন্য সুপারিশ করার আরয পেশ  করলাম। তিনি আমাকে নিশ্চয়তা দিয়ে এরশাদ করলেন- “আমি অবশ্যই সুপারিশ করবো”। বিশাল হাশরের ময়দানের কথা চিন্তা করে আমি আরয করলাম- ইয়া রাসুলাল্লাহ্। তাহলে আমি আপনাকে  বিশাল ময়দানের কোথায় অনুসন্ধান করবো? হুযুর  (ﷺ) বললেন- “যখনই তুমি আমাকে তালাশ করতে নামবে- তখন প্রথমেই পুলসিরাতে আমাকে তালাশ করবে”। আনাছ (রাঃ) বলেন- আমি পূনঃ আরয করলাম- যদি সেখানে আপনাকে না পাই- তাহলে কি করবো? হুযুর (ﷺ)  এরশাদ করলেন- “তাহলে আমাকে  তালাশ করবে মিযানের কাছে”। হযরত আনাছ (রাঃ) পুনরায় আরয করলেন- যদি সেখানেও না   পাই-   তাহলে কি করবো?  হুযুর (ﷺ) এরশাদ  করলেন-“ তাহলে হাউযে কাউসারের কাছে  তালাশ করবে”। কেননা, আমি এই তিন  জায়গায় থাকতে ভুল করবো না”। (তিরমিযি)। ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসখানায় বুঝা যায়- হাশরের ময়দান হুযুরের  নখদর্পনে। হযরত আনাছ (রাঃ) রাসুলে পাকের খেদমতে ও সান্নিধ্যে থেকেও পরকালে হুযুরের শাফাআত প্রত্যাশী- আর ইসমাঈল দেহলভী ও খলীল আহমদ আম্বেটি মউদূদী- গংরা হুযুরের সুপারিশের ব্যাপারে বিভিন্নভাবে কটাক্ষকারী। হাশরের ময়দান এত বিশাল হবে যে- কে কোথায় থাকবে- তার কোন হদীস থাকবে না। সেজন্যই হযরত  আনাছ (রাঃ) পরকালে  হুযুর (ﷺ) -এর সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে  প্রশ্ন করতে করতে তিনটি ঠিকানা নবীজীর জবানে পাক থেকে  শুনে নিলেন। গভীর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত লোকেরা এভাবেই গোপনীয় অনেক কিছু অর্জন করে নেয়- নবী, ওলী ও  নিজ পীর-মুরশিদ থেকে।  এজন্যই লেক্চার শুনার চেয়ে সান্নিধ্যপ্রাপ্ত লোকরা বেশী জ্ঞানী হয়ে থাকে। এখানে আর একটি বিষয় লক্ষ্য করার মত- নবী করীম (ﷺ)  প্রথমে পুলসিরাত, তারপর মিযান, সর্বশেষ হাউযে কাউসার উল্লেখ করাতে বুঝা গেল- নবী করীম (ﷺ) অধিকাংশ  সময়ই পুলসিরাতে থাকবেন উম্মতকে তরাবার জন্য। হায়! আমরা এমন দয়ালনবীকে কিভাবে ভুলে রয়েছি? পুলসিরাতে নবীজীর একমাত্র প্রার্থনা হবে رب سلم رب سلم “হে প্রতিপালক! শান্তি  দাও-শান্তি দাও,” পার করো-পার করো,  উদ্ধার করো-উদ্ধার করো”। (হে রাসুল! আমরাও ঐদিন আপনার দয়া ও সুপারিশপ্রার্থী। গুনাহ্গারদের  জন্য রয়েছে নবীজীর শাফাআত- বেয়াদবদের জন্য নয়-জলিল)। (৬) সুন্নী গুনাহ্গারগণ নবীজীর শাফাআত পাবে ======== হযরত আনাছ (রাঃ) বর্ণনা করেন, عن انس۔ ان النبی ﷺ قال: شفاعتی لاھل الکبائر من امتی (رواہ الترمذی ۔ مشکوۃ) অর্থঃ হযরত আনাছ (রাঃ)  বলেন-  রাসুলকরিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- আমার  শাফাআত পাবে আমার কবিরা গুনাহ্গার উম্মাতেরা”। (তিরমিযি সুত্রে মিশকাত)। অত্র হাদীসখানার বাচনভঙ্গি দ্বারা অনেক মাসআলার সমাধান পাওয়া যায়। যথাঃ (ক) কবিরা গুনাহ্কারীরা কাফির নয়- বরং বড় বড় গুনাহ্ করা সত্বেও মুমিনই থাকে। তার জানাযা পড়া, মুসলমান হিসাবে  তাকে গণ্য করা, সর্বোপরি- তার নাজাতের   গ্যারান্টিও   রাসুলেপাক  (ﷺ) প্রদান করেছেন। (খ) কবিরা গুনাহ্গার ব্যক্তি চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়- নবীজীর দয়ায় শেষ পর্য্যন্ত   সে ক্ষমা পাবে এবং জান্নাতে যাবে।  সুতরাং, শাফাআত পাওয়ার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া  করতে হবে। সেজন্য দৈনন্দিন পাঁচবার আযানের মুনাজাতে নবীজীর  শাফাআত প্রার্থনা করার বিধান রাখা হয়েছে। (ছগিরী শরহে মুনিয়াতুল মুসল্লী কৃত  আল্লামা  ইবরাহীম হালাবী)। কিন্ত দেওবন্দীরা  আযানের দোয়া থেকে وارزقنا شفاعتہ یوم القیامۃ বাদ দিয়ে বিটিভি, রেডিওতে সংক্ষিপ্ত আকারে দোয়া প্রচার করে। তারা বলে- সিহাহ্ সিত্তায় এই শব্দটি নেই- তাই এটা বাদ দিতে হবে। আমরা বলবো- হাদীস কি সিহাহ সিত্তায় সীমাবদ্ধ? হাদীস তো রাছুলের বাণী। যেকোন  সংকলক তা সংগ্রহ করে কিতাব লিখতে পারেন। ”সিহাহ্সিত্তার বাইরে অন্য সহীহ হাদীস মানা যাবে না”- এমন কথা একমাত্র জাহেল ও নবী  বিদ্বেষীরাই বলতে পারে। শাফাআতের উক্ত শব্দাবলী হুবহু ছগীরী গ্রন্থে আছে। তাবরাণী শরীফেও উক্ত শব্দাবলী আছে। (দেখুন  বাহারে শরিয়াত)। যারা রাসুলপাকের  শাফাআতে বিশ্বাসী নয়- বরং নিজের আমলের উপর আস্থাশীল- তারা বেহেস্তে প্রবেশ  করতে পারবে না- কেননা, আমলের দ্বারা শুধু বেহেস্তে উচ্চ মর্যাদা লাভ করা যায়- কিন্ত প্রবেশধিকার পাওয়া যায় না। دخول الجنۃ بالایمان এবং نیل الدرجات  باالاعمال অর্থাৎ বেহেস্তে প্রবেশের চাবি হলো ঈমান এবং মর্যাদা লাভ করার উপায় হলো আমল। (দেখুন মাওয়াহিবও আত্ তাযকিরাহ্)। (গ) আরো বুঝা গেল- গুনাহ্গার শাফাআত পাবে- কিন্ত বেয়াদব ও বাতিলপন্থীরা সুপারিশ পাবে না। দেখুন- ইমামে রাব্বানীর মকতুবাত শরীফ ৭৩ ফের্কা অধ্যায়। তিনি  বলেন- ”গুনাহ্গারদের জন্য শাফাআতের গ্যারান্টি আছে- কিন্ত বাতেলফের্কার জন্য  গ্যারান্টি নেই। দলীল  স্বরূপ  তিনি বলেন- নবী করীম (ﷺ) বলেছেন- کلھم فی النار الاملۃ واحدۃ “একটি দল (সুন্নী) ছাড়া সব দলই জাহান্নামী। তারা জাহান্নামে বসবাস করবে। আল্লাহর ইচ্ছার উপর তাদের নাজাত নির্ভরশীল। নবীজীর শাফাআত তারা পাবে না। কেননা, তারা নবীজীকে “চামার ও বড় ভাই তুল্য” মনে করে। নাউযু বিল্লাহ্! (ঘ) খারেজী সম্প্রদায় বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে ওহাবী ও কওমী নামে পরিচিত। তাদের মূল মুরব্বী খারেজী সম্প্রদায় এবং তাদের নেতা  হলো ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়েম, ইবনে আবদুল ওহাব নজদী এবং ভারতীয় আহ্লে হাদীস নেতা ইসমাঈল দেহলভী ও সৈয়দ আহমদ বেরলভী। তাদের আক্বিদা বিশ্বাস হলো- “কবিরা গুনাহ্গার মুশরিক ও   কাফির”। “তাক্ভিয়াতুল ঈমান” গ্রন্থে ইসমাঈল গুনাহ্কে শির্ক বলেছে। সুতরাং সে খারেজী। নবীজী বলেন- গুনাহ্ করলে মুশরিক বা  কাফির হয় না; আর ইসমাঈল দেহলভী বলছে মুশরিক হয়ে যায়। নাউযুবিল্লাহ্। (৭) হযরত আউফ ইবনে  মালেক (রাঃ)  থেকে শাফাআতের হাদীস বর্ণিত- عن  عوف  بن مالک۔ قال:  قال  رسول اللّہ ﷺ اتانی آت من عند ربی فخیر لی بین ان یدخل نصف امتی الجنۃ۔ وبین الشفاعۃ۔ فاخترت الشفاعۃ۔ وھی لمن مات لایشرک باللّٰہ شیأ رواہ الترمذی وابن ماجۃ ۔ অর্থঃ আউফ ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন- রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “আমার পালনকর্তার পক্ষ হতে  একজন (ফিরিস্তা) আমার কাছে এসে দুটি বিষয়ের  মধ্যে একটি গ্রহণ করার  প্রস্তাব দিলেন। উক্ত প্রস্তাব দুটি হলো- (১) “আমার উম্মতের অর্দ্ধেককে জান্নাতে নেয়া হবে, (২) অথবা আমি  সুপারিশ করে যা নিতে পারি”। “আমি শাফাআত গ্রহণ করলাম”। আমার এই সুপারিশ হবে তাদের জন্য -যারা আল্লাহর ইবাদতের সাথে কাউকে শরিক করেনি”। (তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ)। ব্যাখ্যাঃ বুঝা গেলো- শিরিককারী ও বেয়াদব ছাড়া সব উম্মত নবীজীর শাফাআতক্রমে জান্নাতে যাবে। (৮) উম্মতে মোহাম্মদীর এক ব্যক্তির সুপারিশে অসংখ্য লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে عن عبد اللّٰہ  بن ابی الجدعاء قال: سمعت رسول اللّہ ﷺ یقول: یدخل الجنۃ بشفاعۃ رجل من امتی  اکثر من بنی تمیم۔ رواہ  الترمذی والدارمی وابن ماجۃ ۔ অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আবিল জাদ্আ (আঃ) বলেন- আমি রাসুলকরিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- “আমার উম্মতের মধ্যে এক ব্যক্তির সুপারিশে বনী তামীম  গোত্রের সমসংখ্যক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (তিরমিযি, দারমী ও ইবনে মাজাহ্)। ব্যাখ্যাঃ বিজ্ঞ হাদীস বিশারদদের কেহ কেহ বলেছেন- উক্ত ব্যক্তি হযরত ওসমান ইবনে আফফান  (রাঃ)। আবার কেহ কেহ বলেছেন- হযরত ওয়ায়েছ করনী (রাঃ)। বনী তামীমগোত্র আরবের উত্তর-পূর্ব এলাকায় বসবাস করে। তাদের সংখ্যা কয়েক লক্ষ বা বর্তমানে কয়েক কোটি। (৯) শাফাআতকারী উম্মতগণ নিজ  নিজ মর্যাদা  অনুযায়ী সুপারিশের অনুমতি পাবে, عن ابی سعید ان رسول اللّٰہ ﷺ قال: ان من امتی من یشفع للفئام۔ ومنھم من یشفع للقبیلۃ ومنھم من یشفع للعصبۃ۔ ومنھم  من یشفع للرجل۔ حتی یدخلوا الجنۃ ۔ رواہ الترمذی অর্থঃ হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহ্ আলাইহি ওয়া  সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “আমার উম্মতের মধ্যে কোন কোন লোক সুপারিশ করার অধিকার পাবে একদল লোকের জন্য। কোন কোনজন অধিকার পাবে আপন গোটা বংশের জন্য। কোন কোন লোক অধিকার পাবে দশ  হতে চল্লিশ জনের (উছবা) জন্য সুপারিশ করার। কেহ কেহ অধিকার পাবে একজনের জন্য। অতঃপর ঐসব লোক তাদের সুপারিশে   জান্নাতে প্রবেশ করবে”।  (তিরমিযি)। ব্যাখ্যাঃ বুঝা  গেল- উম্মতের মধ্যে কিছু কিছু লোক এমন রয়েছেন- যারা হাশরের দিনে তাদের  মর্যাদা অনুযায়ী সুপারিশ করার অধিকার লাভ  করবেন। যেমন, গাউসুল আযম, খাজা গরীব নাওয়ায- প্রমুখ আল্লাহর ওলীগণ বা নেক্কার লোকজন। তাঁরা সুপারিশ করে গুনাহ্গারদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। (১০) বিনা হিসাবে চারলক্ষাধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে শুধু নবীজীর শাফাআতে عن انس قال : قال رسول اللّٰہ ان اللّٰہ عزوجل وعدنی ان یدخل الجنۃ من امتی اربعماءۃ الف  بلا حساب فقال ابو بکر زدنا یا رسول اللّٰہ قال: وھکذا ۔ فحثا بکفیہ وجمعھما۔ فقال ابوبکر: زدنا یارسول اللّٰہ ﷺ قال وھکذا۔ فقال عمر: دعنا یا ابا بکر۔فقال ابوبکر وما علیک۔ ان یحلنا اللّٰہ کلنا الجنۃ ؟ فقال عمر: ان اللّٰہ عزوجل ان شاء ان یدخل خلقہ  الجنۃ  بکف  واحد لفعل۔ فقال النبی ﷺ صدق عمر ۔ رواہ فی شرح السنۃ ۔ অর্থঃ হযরত আনাছ (রাঃ) বলেন- রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম এরশাদ করেছেন “মহিয়ান আল্লাহ্ আমার সাথে ওয়াদা  করেছেন-  “আমার উম্মতের মধ্যে চারলক্ষ উম্মতকে বিনা হিসাবে জান্নাতে নিবেন”। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন- আরো বৃদ্ধি করে নিন ইয়া রাসুলাল্লাহ্! হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন “হ্যাঁ, তাই। এই বলে নবী করীম (ﷺ) দুই মুষ্টি খুলে আবার একসাথ করলেন”। হযরত আবু বকর (রাঃ)  পুনরায় আরয করলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! উক্ত  সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করুন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন- “হ্যাঁ, তাই হবে”। এবার হযরত ওমর (রাঃ) বললেন “হে আবু বকর! আপনার কথা বন্ধ করুন এবং আমাদেরকে আল্লাহর ভয় ও আমলের সুযোগ দিন- আমরা যেন অলস হয়ে বসে না থাকি”। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন- হে ওমর! আল্লাহ্ পাক আমাদের সবাইকে জান্নাতে নিয়ে  গেলে তাতে তোমার ক্ষতি কী? হযরত ওমর (রাঃ) বললেন “হ্যাঁ, আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে দু মুষ্ঠি কেন- এক মুষ্ঠিতেই তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম। তাঁদের এই তর্ক শুনে রাসুলকরিম (ﷺ) বললেন- “ওমর সত্য বলেছে” (শরহে সুন্নাহ)। ব্যাখ্যাঃ (ক) চারলক্ষ লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে নেয়ার জন্য আল্লাহর ওয়াদার পরেও রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করার আবেদন করতে পারেন। বারেবারে  সংখ্যা বৃদ্ধির অধিকারী  হচ্ছেন আমাদের  প্রিয়রাসুল (ﷺ)। ইতিপূর্বে ২নং এ চারশ নব্বই কোটি বা তার চেয়েও বেশী লোক  বিনা হিসাবে নবীজীর সুপারিশক্রমে জান্নাতে প্রবেশ করার  কথা বর্ণনা করা হয়েছে। (খ) হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর- দু’জনের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন নবীজীর শাফাআতের উপর নির্ভরশীল- আর হযরত ওমর ছিলেন আমলের উপর বেশী আস্থাশীল। অবশেষে হযরত আবু বকরের কথায় তিনি আল্লাহর দয়ার উপর আস্থাশীল হলেন। নবী  করীম (ﷺ) হযরত ওমরকে সমর্থন করে বললেন- “আমার সুপারিশে আল্লাহ্ দয়া করলে এক মুষ্ঠিতেই সকল গুনাহ্গার বান্দাকে দোযখ থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারেন”। নবীজীর কথা অবশ্যই ফলবে। (গ)  হযরত আবু বকর (রাঃ)  নবীজীর সীমাহীন সুপারিশের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। কিন্ত কিছুলোক এমনও রয়েছে- যারা বলে- শুধু আমলের দ্বারা নাজাত পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে- ঈমানের দ্বারা হবে বেহেস্তে প্রবেশের অধিকার লাভ এবং আমলের দ্বারা হবে মর্যাদা লাভ। (কুরতুবী ও মাওয়াহিব)। বেহেস্তে প্রবেশের মূল চাবি হলো ঈমান। যার ঈমান নেই-তার জান্নাত নেই। শুধু আমল ও তৌহিদে জান্নাত পাওয়া যাবেনা। (১১) কাউকে শরবত পান করালে অথবা ওযুর পানি যোগান দিলে সেও হাশরে সুপারিশ করবে انس قال: قال رسول اللّہ ﷺ یصف اھل النار فیمر بھم الرجل من اھل  الجنۃ فیقول الرجل منھم اما تعرفنی؟ انا الذی سقیتک شربۃ ۔ وقال بعضھم  انا الذی وھبت لک وضوء فیشفع لہ فیدخلہ الجنۃ۔ (رواہ ابن ماجۃ) অর্থঃ হযরত আনাছ (রাঃ) বলেন- আল্লাহর প্রিয়রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “দোযখবাসীদেরকে কাতারবন্দী করে দাঁড় করানো হবে। এমন সময় জান্নাতী একব্যক্তি তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে জাহান্নামীদের মধ্য  হতে এক ব্যক্তি তাঁকে বলবে- “হে অমুক! আপনি কি আমাকে চিনেন না? আমি তো আপনাকে শরবত পান করিয়েছিলাম”। আরেক ব্যক্তি বলবে-“ আমি তো আপনার ওযুর পানি যোগান দিয়েছিলাম”। তখন জান্নাতী  ব্যক্তি  ঐ লোকদের জন্য সুপারিশ করবে এবং  তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবে” (ইবনে মাজাহ্ শরীফ)। বুঝা গেল- নেককাজে কাউকে  সহযোগিতা করলে অথবা কারও পিপাসা নিবারন করলে  ঐব্যক্তি তার জন্য সুপারিশ করে গুনাহ্ মাফ করিয়ে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে। (১২) বেহেস্তে প্রবেশের জন্য আল্লাহর রহমত ও দয়া পূর্বশর্ত عن ابی ھریرۃ ان رسو اللّٰہ ﷺ قال: ان رجلین ممن دخل النار اشتد صیاحھما فقال الرب تعالی اخرجوھما۔  فقال لھما لای شئی اشتد  صیاحکما؟ قال: فعلنا ذلک  لترحمنا۔ قال: فان رحمتی لکما ان انطلقا فتلقیا انفسکما حیث کنتما من النار۔ فیلقی احدھما نفسہ۔ فیجعلھا اللّٰہ بردا وسلاما۔ ویقوم الاٰخر: فلا یلقی نفسہ فیقول لہ الرب تعالی۔ ما منعک ان تلقی نفسک کما القی صاحبک؟ فیقول: رب انی لارجوا ان لا تعیدنی فیھا بعد ما اخرجتنی منھا۔ فیقول لہ الرب تعالی: لک رجائک۔ فیدخلان جمیعا الجنۃ برحمۃ اللّٰہ رواہ الترمذی অর্থঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, আল্লাহর প্রিয়রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-  “দোযখে প্রবেশকারী দুইব্যক্তি সাহায্যের জন্য জোরে জোরে চিৎকার করে কান্না করতে থাকবে। আল্লাহ্ ফিরিস্তাদের বলবেন- তাদের উভয়কে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। এরপর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন- কি জন্য তোমরা এত জোরেজোরে কান্নাকাটি করছিলে? তারা বলবে- আমরা এরূপ করেছিলাম- যাতে আপনি আমাদের প্রতি সদয় হন। আল্লাহ্পাক  বলবেন- “আমার রহমত তোমাদের উভয়ের জন্য অবধারিত”। পরীক্ষার ছলে আল্লাহ্ বলবেন- এখন তোমরা উভয়ে জাহান্নামের যেখানে ছিলে- সেখানে নিজেদেরকে পূনঃ নিক্ষেপ করো- দেখি। তাদের  একজন নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ্পাক নিজ কুদরতে জাহান্নামকে  তার উপর ঠান্ডা  ও শান্তিময় করে দেবেন। অন্যজন দাঁড়িয়ে থাকবে- নিজেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে না। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন- তুমি তোমার সাথীর ন্যায় নিজেকে নিক্ষেপ করোনি কেন? সে বলবে- হে আমার প্রতিপালক! আমি এই আশায় নিজেকে নিক্ষেপ করিনি যে, তুমি আমাকে বের করে  আনার পর দ্বিতীয়বার দোযখে নিক্ষেপ করবে না। তখন আল্লাহ্পাক বলবেন- হ্যাঁ, “তোমার এই ভরসাই তোমার উপকারে আসবে”।  অতঃপর উভয়কেই আল্লাহর দয়ায় জান্নাতে প্রবেশ করানো  হবে”। (তিরমিযি)। (আল্লাহর দয়ার উপর কোন প্রশ্ন করা যাবে না)। ব্যাখ্যাঃ  যাদের ঈমান আছে- তাদের বেলায়ই এই ব্যবস্থা  হবে। কেননা, ঈমান  হচ্ছে ভয় ও ভরসা উভয়ের সমন্বয়ের নাম। প্রথমজন আল্লাহর ভয়ে নিজেকে পূনরায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছিল, আর দ্বিতীয়জন আল্লাহর রহমতের ভরসায় নিজেকে নিক্ষেপ করেনি। তাই উভয়কেই দুই কারনে  জান্নাতে নেয়া হবে। (মিশকাতের হাশিয়া দেখুন ৪৯৪ পৃষ্ঠায়)। (১৩) পুলসিরাত অতিক্রমের গতি  হবে আমলের পরিমান অনুযায়ী عن ابن مسعود قال: قال رسول اللّٰہ ﷺ یرد الناس النار۔ثم یصدورن باعمالھم۔  فاولھم کلمح البرق۔ ثم کالریح۔ ثم کحضر الفرس۔  ثم کالراکب فی رحلہ۔ ثم کشد الرحل ثم کمشیہ۔رواہ الترمذی والدارمی ۔ অর্থঃ হযরত  আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-  “প্রত্যেক  মানুষকেই জাহান্নামের উপর প্রতিষ্ঠিত পুলসিরাতের উপর দিয়ে গমন করতে হবে। এরপর নিজ নিজ আমল পরিমানে গতিসম্পন্ন  হয়ে তারা পুলসিরাত অতিক্রম করবে। কেউ অতিক্রম করবে বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে, কেউ ঘোড় সওয়ার গতিতে, কেউ যানবাহনের গতিতে, কেউ উটের পিঠে আরোহীর গতিতে, কেউ পায়ে চলার গতিতে”। (তিরমিযি ও দারমী)। ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসখানা কোরআন মজিদের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা স্বরূপ। আয়াতটি হলোঃ وان منکم الاواردھا “তোমাদের মধ্যে এমন কেউ  নেই যে, জাহান্নামের উপর  পৌঁছবে না”। (সূরা মরিয়ম ৭১ আয়াত)।  কেননা, জাহান্নামের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে পুলসিরাত। আর  সে পুলসিরাত  পার হতে হবে সকলকে। তারপর অপর পাড়ে হবে হাউযে কাউছার ও    জান্নাত। সুতরাং জাহান্নামের উপর দিয়ে প্রত্যেককেই  অতিক্রম করতে হবে। এটা হবে শেষ অগ্নিপরীক্ষা স্বরূপ। হাশরের হিসাবের পর মিযানের ওজন, তারপর জাহান্নাম অতিক্রম করে জান্নাতে যেতে হবে।  তিনটি পরীক্ষাই অতি ভয়াবহ।  নেক্কাররা অতিক্রম করতে পারবে যার যার আমলের গতিতে। আর জাহান্নামী ও গুনাহ্গাররা জাহান্নামে পতিত হবে। পুলসিরাতের অনেক কড়া বা বড়শী থাকবে। কাফের ও গুনাহ্গারদেরকে ঐগুলি টেনে টেনে নীচে নামিয়ে ফেলবে। নেক্কারদের মধ্যে আবার তারতম্য হবে। যাদের আমল ও আক্বিদা পূর্ন বিশুদ্ধ  হবে- তারা অতিক্রম করবে চোখের পলক বা বিদ্যুৎ গতিতে। তারপর বাতাসের গতিতে, তারপর ঘোড় সাওয়ার  গতিতে, তারপর সাধারণ যানবাহনের গতিতে, তারপর উটের গতিতে, তারপর পায়ে হেঁটে।   ঐসময় নবী  করীম (ﷺ) পুলসিরাতের উপর  দাঁড়িয়ে “রাব্বি সাল্লিম, রাব্বি-সাল্লিম”- বলে কাঁদতে থাকবেন। ইহাই নবীজীর শাফাআত। (১৪) তিনশ্রেণীর লোক হাশরে শাফাআত করবেন عن عثمان بن  عفان۔ قال: قال  رسول اللّٰہ  ﷺ  یشفع یوم القیامۃ ثلاثۃ۔ الانبیاء ثم العلماء ثم الشھداء رواہ ابن ماجۃ ۔ অর্থঃ হযরত ওসমান ইবনে আফফান  (রাঃ) বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ্  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “তিনশ্রেণীর লোক কিয়ামত দিবসে শাফাআত করবেন- (১) আম্বিয়ায়ে কেরাম (২) জাহেরী বাতেনী জ্ঞানসম্পন্ন উলামায়ে    কেরাম- তথা অলিআল্লাহ্।   (৩) শোহাদায়ে কেরাম। (ইবনে মাজাহ্)। ব্যাখ্যাঃ সমস্ত নবীগণ, সমস্ত আউলিয়ায়ে কেরাম এবং সমস্ত শহীদান হাশরের দিনে সুপারিশ করবেন এবং অসংখ্য  গুনাহ্গারকে ক্ষমা করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। উনারা আল্লাহর অনুমোদিত আপনজন। কিন্তু ওহাবী মউদূদীরা বলে- তখন আল্লাহর অনুমতি পেলে তাঁরা সুপারিশ করতে পারবেন- তা না হলে পারবেন না। তাদের এই ব্যাখ্যা ভুল। বরং অত্র হাদীস দ্বারাই প্রমানিত হলো যে,  তারা  এখনই অনুমোদন ও অনুমতিপ্রাপ্ত। নবীজীর কথায়  সন্দেহ্ পোষন করা কুফরী। শরহে আকায়েদে নসফীতে উল্লেখ আছে- الشفاعۃ المقبولۃ ثابتۃ بالکتاب والسنۃ۔ অর্থাৎঃ “অনুমোদিত শাফাআত কুরআন সুন্নাহ্ দ্বারা প্রমাণিত”। বিঃ দ্রঃ তিনশ্রেণী ছাড়াও  আরো অনেকে সুপারিশ করবেন। যেমন অত্র অধ্যায় ৮, ৯ ও ১১ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়াও কোরআন,  সিয়াম, নেক আমল, মাতৃগর্ভে মৃতশিশু, হাফিযুল কোরআন- প্রমূখের সুপারিশ  হাদীস দ্বারা  প্রমাণিত। মোটকথা-  কোরআনতুল্য   হাদীসে  মোতাওয়াতির দ্বারা অকাট্যভাবে শাফাআত প্রমাণিত। যারা বিশ্বাস করে না- বা বিভিন্ন শর্ত  আরোপ করে-  তারা মূলতঃ বাতিলপন্থী। তাদের কথায় বিশ্বাস করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। (উল্লেখ্য- মিশকাত শরীফে সংকলিত ও সংগৃহীত সিহাহ  ও বিভিন্ন সুনান হাদীসগ্রন্থ হতে উপরের ১৪টি প্রমাণ পেশ করা হলো)। (১৫) হাশরের ময়দানে কাফেরগণ শয়তানের কাছে সুপারিশ প্রার্থনা করবে। বিরাট হাদীসের একাংশ عن عقبۃ  بن  عامر  ص۔  قال رسول اللّٰہ ﷺ: فیقول  عیسی علیہ السلام ادلکم علی  النبی ﷺ الامی  فیأتونی۔  فیأذن اللّٰہ لی ان اقوم۔ فیثور مجلسی اطیب ریح شمھا احد۔ حتی آتی ربی۔ فیشفعنی۔ ویجعل لی نورا۔  من شعر رأسی الی ظفر قدمی ۔ ثم یقول الکافر: قد وجد المؤمنون من یشفع لھم۔ فمن یشفع لنا؟ فیقولون: ما ھو غیر ابلیس۔ ھو الذی اضلنا۔ فیأتونہ۔ فیقولون: قد وجد المؤمنون  من یشفع لھم۔ فقم انت۔ فاشفع لنا۔ فانک قد اضللتنا۔ فیقوم۔ فیثور من مجلسہ انتن ریح  شمہ احد۔ثم یعظم لجھنم۔ ویقول عند ذلک ۔ ’’وقال الشیطان لما قضی الامر ان  اللّٰہ وعدکم وعد الحق۔ ووعدتکم فاخلفتکم وماکان لی علیکم  من سلطٰن، الا ان دعوتکم فاستجبتم لی ولا تلومو نی۔ ولوموا انفسکم ۔ অর্থঃ হযরত ওক্বা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত- নবী করিম (ﷺ) শাফাআতের দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করার পর শেষাংশে এসে হযরত ইছা আলাইহিস সালামের পথনির্দেশনা এভাবে  বর্ণনা করেছেন- যখন হাশরবাসীরা হযরত ইছা (আঃ) -এর নিকট এসে সাহায্য প্রার্থনা করবে- তখন হযরত ইছা (আঃ) বলবেন- “আমি তোমাদেরকে মহান উম্মি নবীর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করার পরামর্শ দিচ্ছি। ওখানে গেলে কাজ হবে”। (শুধু তাঁরই স্মরণে থাকবে)। হুযুর (ﷺ) বলেন- “অতঃপর লোকেরা আমার কাছে আসবে এবং সাহায্য প্রার্থনা  করবে। আল্লাহ্পাক আমাকে  ঐ কাজের জন্য তৈরী হতে অনুমতি দিবেন। আমার বসার স্থান থেকে উঠার পর ঐ স্থান থেকে এমনভাবে মিশ্কের খুশবু ছড়িয়ে পড়বে যে, যেকোন লোক ঐ সুগন্ধি পাবে। আমি আমার রবের কাছে গিয়ে সুপারিশ করবো  এবং তিনি আমার  সুপারিশ গ্রহণ করবেন এবং আমার মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্য্যন্ত সমস্ত শরীর নূরে পরিণত করবেন”। হুযুর (ﷺ) পুনঃ এরশাদ করেন- ”আর কাফেরগণ এ অবস্থা দেখে বলবে- মোমেনরা তো তাদের সুপরিশকারীর সন্ধান  পেয়ে গেছে। আমাদের জন্য সুপারিশ করবে কে?  তারা বলবে -ইবলিছ ছাড়া তো আমাদের আর কেউ নেই। সে-ই তো আমাদেরকে গোমরাহ্ করেছিল। তারা ইবলিসের কাছে এসে  বলবে -মুমিনরা তো তাদের কাংখিত সুপারিশকারী পেয়ে গেছে। তুমি উঠো, আমাদের জন্য সুপারিশ করো। তুমিই  তো আমাদেরকে ভুলপথে চালিয়েছিলে। অতঃপর শয়তান বসা থেকে উঠবে এবং সেখান থেকে মারাত্মক দূর্গন্ধ (বায়ূ) ছড়িয়ে পড়বে। যে কেহ ঐ দুর্গন্ধ পাবে। অতঃপর  জাহান্নামের দিকে যেতে যেতে সে বলবে- “যখন সব কাজের ফয়সালা হয়ে যাবে- তখন শয়তান বলবে- সত্যই  আল্লাহ্ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিলোনা। শুধু এতটুকু  ছিল যে,  আমি তোমাদেরকে ডেকেছি- আর তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছো। এখন আমাকে দোষারোপ না করে বরং নিজেদেরকে দোষারোপ করো”। (সূরা ইবরাহীম ২২ আয়াতাংশ)। (তাযকিরাহ্ ২৭৩ পৃষ্ঠা)। ১৬। নবীজীর শাফাআতে সবচেয়ে  বেশী ভাগ্যবান ব্যক্তি কে হবেন? عن ابی ھریرۃ ص انہ قال : قلت یا رسول اللّٰہ من اسعد الناس بشفاعتک یوم القیامۃ؟ فقال: ظننت یا ابا ھریرۃ ان لایسألنی عن ھذا الحدیث احد اول منک۔ لما رأیت من حرصک علی الحدیث ۔  اسعد الناس بشفاعتی یوم القیامۃ من قال لا الہ الا اللّٰہ خالصا من قبل نفسہ ( رواہ البخاری) অর্থঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন- আমি আরয করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের  দিনে  আপনার সুপারিশে কোন্ ব্যক্তি অধিক ভাগ্যবান হবে? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- হে আবু হোরায়রা! আমি মনে করি- তোমার পূর্বে অন্য কেউ আমাকে  একথা জিজ্ঞাসা করেনি। কেননা, আমার হাদীস সম্পর্কে তোমার আগ্রহ-ই সবচেয়ে বেশী। শুন- কিয়ামতের দিনে আমার শাফাআতে সবচেয়ে বেশী ভাগ্যবান হবে ঐব্যক্তি- যে অন্তর দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছে “লা  ইলাহা ইল্লাল্লাহু” পূর্ণ  কালেমা। (বুখারী)। ব্যাখ্যাঃ “যেব্যক্তি সর্বান্তকরনে তাওহীদ ও রিসালাত -এর  কলেমা পাঠ করেছে, সেব্যক্তিই  নবীজীর সুপারিশে অধিক ভাগ্যবান হবে”-একথার মূল ইঙ্গিত হলো- বিনা আমলে যে ব্যক্তি শুধু  ঈমানের কারণে নবীজীর শাফাআত পাবে- সেব্যক্তিই অধিক ভাগ্যবান বলে বিবেচিত হবে। এখানে নবীজীর দয়া, মায়া ও উম্মতের জন্য নবীজীর দরদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এরা শুধু ঈমান  ও নবীজীর শাফাআতের মাধ্যমে জান্নাতে যাবে-আমলের  দ্বারা নয়। ঈমানের দ্বারা জান্নাতের প্রবেশাধিকার পাওয়া  যায় এবং নেক আমলের দ্বারা জান্নাতের ভিতরে উচ্চ মর্যাদা লাভ করা যায়। অবশ্য এরা  প্রথম প্রবেশাধিকার পাবেনা। সর্বশেষে জান্নাত পাওয়াও কম সৌভাগ্যের কথা নয়। নিজের   আমল ছাড়া শুধু ঈমানের দ্বারা জান্নাতে যাওয়াই সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। এখানে একটি  প্রশ্ন জাগতে পারে। তাহলো বুখারী শরীফের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে অর্থাৎ- من قال لا الہ الااللّٰہ دخل الجنۃ “যারা তাওহীদ স্বীকার করবে- তারা জান্নাতে প্রবেশ   করবে”। এ হাদীসে তো শাফাআতের উল্লেখ নেই। এতে তো বুঝা যায়- বিনা শাফাআতেই সে জান্নাতী হবে”। এ উভয় হাদীসের মর্ম কী? জওয়াব হলোঃ জান্নাতের প্রবেশ দু প্রকার (১) دخول اولی বা প্রথম সুযোগে জান্নাতে প্রবেশ। (২) শাস্তি  ভোগ  করার পর জান্নাতে প্রবেশ। যারা শাফাআত থেকে বঞ্চিত থাকবে- তারা সর্বশেষ আল্লাহর ইচ্ছায় জাহান্নাম থেকে  বের হয়ে আসবে। তাদের রং হবে কয়লার মত কালো। তাদেরকে নহরে হায়াতে ফেলে ময়লা সাফ করে জান্নাতে নেয়া হবে। কিন্ত জান্নাতীরা তাদেরকে ডাকবে “জাহান্নামী” বলে। আর নবীজীর শাফাআত পেলে এর পূর্বেই বের হয়ে আসবে। সুতরাং এটাই হবে তাদের জন্য বড় ধরণের সৌভাগ্য। সুতরাং প্রথম হাদীসটি শাফাআতপ্রাপ্তদের বেলায় প্রযোজ্য এবং দ্বিতীয় হাদীসটি আল্লাহর করুণা প্রাপ্তদের বেলায় প্রযোজ্য। মনে রাখতে হবে- শুধু তাওহিদ বিশ্বাসীরা জান্নাতী হবে না-  বরং ঈমানদারেরা  জান্নাতী হবে। জান্নাতে প্রবেশের জন্য ঈমান শর্ত- শুধু তাওহীদ নয়। ঈমান হলো তাওহীদ ও রিসালাতে বিশ্বাসের নাম। অতএব, যেসব হাদীসে শুধু তাওহীদের কথা উল্লেখ আছে, তার প্রকৃত অর্থ হবে- ইমাম আবু হানিফার  মতে-  “লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্” পূর্ণ কলেমা পাঠ করা। যেমন  কুল হুয়াল্লা  বলতে পূর্ন সূরা ইখলাছকে বুঝায়। (দেখুন শরহে মুসনাদে  ইমামে আযম- মোল্লা আলী ক্বারী)। (১৭) রাসুলেপাকের  ﷺ শরীফের উছিলায় নেকীর পাল্লা ভারী হবে (হাদীসে বাত্বাকা) اخرج ابن ابی الدنیا ۔ اذا خفت حسنات المؤمن اخرج رسول  اللّٰہ ﷺ  بطاقۃ کالانملۃ۔ فیلقیھا فی کفۃ المیزان۔ التی فیھا الحسنات فترجح الحسنات، فیقول ذلک  العبد المؤمن للنبی ﷺ بابی انت وامی۔ ما احسن وجھک۔ واما احسن خلقک۔ فمن انت؟ فیقول النبی: انانبیک محمد۔ وھذہ صلاتک علی۔ وقد وفیتک ایاھا۔ احوج ماتکون الیھا ۔ ذکرہ القشیری فی تفسیرہ ۔ অর্থঃ ইবনু আবি দুনিয়া ইমাম কোশায়রীর তাফসীরে কোশায়রী থেকে একটি  হাদীস  এভাবে বর্ণনা করেছেন- “হাশরের দিনে যখন একজন  মুমিনের নেকীর  পাল্লা হাল্কা হয়ে যাবে- তখন আল্লাহর  প্রিয়রাসুল  (ﷺ) ছোট পিপিলিকার ন্যায় এক টুকরা কাগজ বের করে তার নেকীর পাল্লায় রাখবেন। এতে নেকীর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। (এবং সে জান্নাতী সাব্যস্ত হবে)। তখন ঐ মোমেন বান্দা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে বলবে-আমার পিতামাতা আপনার উপর কোরবান হোক-আপনার এত সুন্দর চেহারা ও উক্তম চরিত্র! আপনি কে? নবী করীম  (ﷺ)  বলবেন- আমি তোমার নবী মোহাম্মদ (ﷺ) এবং এই কাগজের টুকরায় আমার উপর তোমার  ﷺ শরীফ সংরক্ষিত।  আমি  তোমাকে তোমার সেই ﷺ শরীফ আদায় করে দিলাম-যার জন্য  তুমি  আজ অধিক মুখাপেক্ষী  ছিলে”। (সুবহানাল্লাহ্)। বিঃদ্রঃ যেখানে নেকী অপর্যাপ্ত-  সেখানে নবীজীর ﷺ  কাজে  আসে। তখন  ﷺ শরীফই নাজাতের উছিলা হয়ে যাবে। ইহাই নবীজীর মূল্যবান শাফাআত। অত্র হাদীস দ্বারা আর  একটি বিষয় প্রমাণিত হলো- নবীজী উম্মতের ﷺ সংরক্ষণকারী  এবং তিনি প্রত্যেক উম্মতের ﷺ পৃথক পৃথকভাবে সংরক্ষণ করেন। তা না হলে কিয়ামতে তা পেশ  করবেন কি ভাবে?  যে  যত  বেশী ﷺ পড়বে- সে তত বেশী আশেকে রাসুল হবে। ------ 
Top