প্রসঙ্গঃ মদীনা থেকে ষড়যন্ত্রকারী ইহুদীদের বিতাড়ন
মদীনা মনোওয়ারার শহরতলীতে ইহুদীদের তিনটি গোত্র বাস করতো। তারা হলোঃ- বনু কাইনুকা, বনু নযির ও বনু কোরায়যা। নবী করীম [ﷺ]-এঁর সাথে এ গোত্রগুলো চুক্তিবদ্ধ ছিল যে, মুসলমান বা ইহুদীদের মধ্যে কেও যদি অন্য গোত্রের কোন লোককে হত্যা করে, তবে উভয়ে মিলে তার ক্ষতিপূরণ আদায় করবে।
মুসলমানদের মধ্যে আমর ইবনে উমাইয়া দামারী (رضي الله عنه) বনু আমের গোত্রের দু’জন লোককে অন্যায়ভাবে হত্যা করে ফেলে। ঐ নিহত ব্যক্তিদের উত্তরাধিকারীদের ক্ষতিপূরণ দানের জন্য চুক্তি মোতাবেক মুসলমান ও ইহুদী উভয় পক্ষকেই অর্থ বহন করতে হবে। তাই ৪র্থ হিজরী সনের রবিউল আউয়াল মাসে নবী করীম [ﷺ] হযরত আবু বকর, ওমর ও আলী (رضي الله عنهم) প্রমুখ সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বনু নযির পল্লীতে গমন করেন এবং ক্ষতিপূরণ দানের কাজে তাদের সহযোগিতা চান।
বনু নযির এই সুযোগে নবী করীম [ﷺ]-কে শহীদ করার চক্রান্ত করে। নবী করীম [ﷺ] ও তাঁর সাহাবীগণকে একটি প্রাসাদের প্রাচীরের ছায়ায় বসতে দিয়ে তারা দূর্গের ভিতরে চলে যায় এবং ছাদের উপর থেকে একটি বড় পাথর নিক্ষেপের ব্যবস্থা করে। তাদের মধ্যে ছালাম ইবনে মিশকাম নামক জনৈক ইহুদী তাদেরকে পূর্ব চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে একাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয় এবং বলেঃ- তোমাদের দূরভিসন্ধি সম্পর্কে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁকে গোপনে জানিয়ে দেবেন। এমন সময়ই আকাশ থেকে ওহী এসে তাদের গোমরফাঁক করে দিল। নবী করীম [ﷺ] তৎক্ষনাৎ সাথী সাহাবীগণকে নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করেন।
নবী করীম [ﷺ] ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের সংবাদ দিয়ে তৎক্ষনাৎ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের দূর্গ অবরোধ করেন। ছয়দিন, মতান্তরে পনের দিন পর্যন্ত এই অবরোধ চলে। বনু নযির দূর্গ অবরোধের ফলে ইহুদীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অবশেষে হত্যার পরিবর্তে তারা স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। রহমতের নবী তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং তাদের অস্থাবর সম্পত্তি ও ধন-দৌলতসহ ইহুদী অঞ্চল খায়বরে আশ্রয় গ্রহণের অনুমতি প্রদান করেন। তারা ছয়শত উট বোঝাই করে ধন-দৌলত সরিয়ে নেয় এবং ঘর-দুয়ার নিজেদের হাতে বিনষ্ট করে দিয়ে যায়। এতেও নবী করীম [ﷺ] তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। নবী করীম [ﷺ]-কে হত্যা পরিকল্পনা প্রমাণিত হওয়া সত্বেও পাল্টা কোন হত্যা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। এতেও ইহুদীরা বিশ্বাসঘাতকতা এবং ষড়যন্ত্রের মাত্রা একটুও কমায়নি। বনু নযির মদীনা ত্যাগ করার পর নবী করীম [ﷺ] ঐ স্থানে মুহাজির মুসলমানগণকে পুনর্বাসিত করেন।