★১.ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)বলেন:
” خرق العادة قد يقع للزنديق بطريق الإملاء والإغواء ، كما يقع للصديق بطريق الكرامة والإكرام ، وإنما تحصل التفرقة بينهما باتباع الكتاب والسنة “
অর্থ: কখনও যিন্দিক বা ধর্মদ্রোহীদের থেকে ভেল্কিবাজীর মাধ্যমে বিভন্ন অপ্রাকৃতিক বিষয় প্রকাশিত হতে পারে।একইভাবে সত্যবাদী বুজুর্গদের থেকে কারামত প্রকাশিত হয়। তবে উভয়ের মাঝে পার্থক্য করা হয় কুরআন ও সুন্নাহের অনুসরণ দ্বারা। (অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহের অনুসারী হলে, সেটি কারামত, নতুবা সেটি পরিত্যাজ্য)।[ফাতহুল বারী,খ:১২, ৩৮৫পৃ:]
♦এবার দেখুন! এ বিষয়ে সালাফীদের ঈমাম ইবনে তাইমিয়া কি বলেন:
★২.অনেককে দেখতে পাবে, তাদের নিকট কেউ ওলী বা বুজুর্গ হওয়ার মানদন্ড হল, তাদের কাছ থেকে কিছু কাশফ প্রকাশিত হওয়া।অস্বাভাবিক ও অপ্রাকৃতিক ঘটনা সংঘঠিত হওয়া। যেমন, কারও দিকে ইঙ্গিত করলে সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করা। অথবা বাতাসে উড়ে মক্কায় বা অন্য কোথাও যাওয়া । অথবা কখনও পানির উপর হাটা।
★বাতাস থেকে পাত্র পানি দ্বারা পূর্ণ করা। অদৃশ্য থেকে টাকা-পয়সা এনে খরচ করা। অথবা হঠাৎ মানুষের চোখ থেকে অদৃশ্য হওয়া। অথাব তার অনুপস্থিতে কিংবা তার মৃত্যুর পরে তাকে কেউ ডাক দিলে উপস্থিত হওয়া এবং ঐ ব্যক্তির প্রয়োজন পুরণ করা।মানুষের চুরি হয়ে যাওয়া জিনিসের সংবাদ বলে দেয়া। অদৃশ্য কোন বিষয়ের বর্ণনা দেয়া। অসুস্থ কারও সম্পর্কে সংবাদ দেয়া। ইত্যাদি।এগুলোর কোনটি সংগঠিত হওয়া কখনও এটা প্রমাণ করে না যে, এ ব্যক্তি আল্লাহর ওলী।
♦বরং সমস্ত ওলী-বুজুর্গ এ বিষয়ে একমত যে, কেউ যদি বাতাসে উড়ে, পানির উপর চলে তাহলে দেখতে হবে, সে রাসূল(দঃ) এঁর প্রকৃত অনুসারী কি না? শরীয়তের প্রকাশ্য বিধি-বিধান সে অনুসরণ করছে কি না? যদি এগুলো না থাকে তাহলে তার মাধ্যমে ধোঁকায় পড়া যাবে না।
♦ওলীদের কারামত এসব বিষয় থেকে অনেক বড়।এধরনের অস্বাভাবিক বিষয় যার থেকে প্রকাশিত হয়, সে কখনও আল্লাহর ওলী হতে পারে, আবার আল্লাহর শত্রুও হতে পারে। কেননা এধরনে বিষয় অনেক কাফের, মুশরিক, আহলে কিতাব ও মুনাফিক থেকে প্রকাশিত হয়ে থাকে।
অনেক বিদয়াতী থেকে এগুলো প্রকাশিত হয়। কখনও এগুলো শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং এই ধারণা করা সমীচিন নয় যে, এধরনের কোন ঘটনা কারও থেকে প্রকাশিত হলেই সে আল্লাহর ওলী।
♥বরং কোন ব্যক্তিকে তার গুণাবলী, কুরআন-সুন্নাহের অনুসরণের দ্বারা আল্লাহর ওলী গণ্য করা হবে। ইমানের নূর ও কুরআনের নূর দ্বারা তাদেরকে চেনা সম্ভব। এবং বাতেনী ইমানের হাকিকত দ্বারা তাদের বাস্তবতা অনুধাবন করা হয়। সেই সাথে প্রকাশ্য শরীয়তের বিধি-বিধান ওলী হওয়ার অপরিহার্য অংশ।
[মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া,খ:১১, পৃ.২১৩]
★উদাহরণ হিসেবে নিজের ঘটনাগুলো লক্ষ্য করুন।
(১.) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(দঃ) বলেন, “তোমরা বনী ইসরাইলদের ঘটনা বর্ণনা করো। কেননা তাদের মাঝে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এরপর রাসূল(দঃ) একটি ঘটনা বর্ণনা করলেন:
★একদা বনী ইসরাইলের কয়েকজন বন্ধু ভ্রমণে বের হল। তারা একটি কবরস্থান দিয়ে অতিক্রম করছিল । তারা একে -অপরকে বলল, “আমর যদি, দু’রাকাত নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে দুয়া করি, তাহলে আল্লাহ তায়ালা হয়তো কবরের কোন ব্যক্তিকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবেন। সে মৃত্যু সম্পর্কে আমাদেরকে বলবে।তারা দু’রাকাত নামায আদায় করল। এরপর আল্লাহর কাছে দুয়া করল। হঠাৎ এক ব্যক্তি মাথা থেকে মাটি পরিষ্কার করতে করতে কবর থেকে বের হয়ে এল।
★তার কপালে সিজদার চিহ্ন ছিল। সে বলল, তোমরা কী চাও? আমি একশ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছি। এখনও আমার দেহ থেকে মৃত্যুর যন্ত্রনা উপশমিত হয়নি। আল্লাহর কাছে দুয়া করো, যেন তিনি আমাকে পূর্বের স্থানে (কবরে) ফেরত পাঠিয়ে দেন”
★যেসব বিখ্যাত মুহাদ্দিসগন হাদীসটি তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন:
১. ইবনে আবিদ দুনিয়া( রহ.) মান আশা বা’দাল মাউত। হাদীস নং ৫৮
২. মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমাইদ, হাদীস নং ১১৬৪
৩.ফাওয়াইদু তামাম আর-রাজী, হাদীস নং ২১৭
৪. আল-জামে লি আখলাকির রাবী, খতীব বাগদাদী, হাদীস নং ১৩৭৮
৫.আজ-জুহদ, ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ, হাদীস নং৮৮
৬. আজ-জুহদ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)
৭. মাজালিস মিন আমালি ইবনে মান্দাহ, ইবনে মান্দাহ, হাদীস নং ৩৯৩
৮. আল-মাতালিবুল আলিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী রহ. হাদীস নং ৮০৭
৯. ফুনুনুল আজাইব, হা.১৯
১০. শরহুস সুদুর, জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. পৃ.৪২-৪৩
★ঘটনাটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত। তামাম আর-রাজী এটি সরাসরি রাসূল (দঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
★ইবনে হাজার আসকালানী( রহঃ) হযরত জাবির (রাঃ) থেকে মওকুফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যেটি মরফু এর হুকুমে। সুতরাং ঘটনার প্রামাণ্যতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
♦মৃত্যুর পর কথোপকথন♦
ঘটনা ১ :
ইমাম বাইহাকী(রহঃ) হযরত সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত উসমান (রাঃ) এর সময় যায়েদ ইবনে খারিজা আল-আনসারী (রাঃ) ইন্তেকাল করেন।
তাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি কথা বলে উঠেন। এবং বলেন, রাসূল( দঃ) এঁর কথা পূর্ববতী আসমানী কিতাবে রয়েছে। আবু বকর সত্য বলেছেন। উমর সত্য বলেছেন। উসমান সত্য বলেছেন।
*ঘটনার সনদ বা সূত্র বিশুদ্ধ।*
১. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর রহ. খ.৬, পৃ.২৯৩
২.দালাইলুন নুবুওয়াহ, ইমাম বাইহাকী রহ.। হাদীস নং ২৩০৫
৩.আল-ইস্তেয়াব, ইবনে আব্দুল বার রহ. বর্ণনা নং ৮৪৪ ।
৪. ত্ববরানী ফিল কাবীর, বর্ণনা নং ৫১৪৪
৬.তাহজীবুল কামাল।
৭. আস-সিকাত, ইবনে হিব্বান রহ.।
৮. ইমাম আবু হাতিম, মাশাহিরু উলামায়িল আমসার।
★★ইবনে আব্দুল বার (রহ:) উক্ত ঘটনা বর্ণনায় লিখেছেন,
وهو الذي تكلم بعد الموت لا يختلفون في ذلك
যায়েদ ইবনে খারিজা (রাঃ) যিনি মৃত্যুর পর কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ মতবিরোধ করেননি।