মক্কা মোয়াযযমায় খানায়ে কা’বা আছে, হাজরে আসওয়াদ আছে, জমজম আছে, সাফা-মারওয়া আছে, মাকামে ইব্রাহিমও আছে, মিনা-মোজদালেফা ও আরাফাত সবকিছুই মক্কা শরীফে অবস্থিত। কিন্তু মদীনা মোনাওয়ারাতে শুধু রাসূলে পাক [ﷺ]-এঁর রওযা মোবারক আছে। এ দুয়ের মধ্যে কোনটি উত্তম এ নিয়ে ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
ইমাম আবু (رَحۡمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ), ইমাম মালেক (رَحۡمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ) ও ইমাম শাফেয়ী (رَحۡمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ) এই তিন ইমামের মতে শহর হিসেবে মক্কা শহর, মদীনা শহর থেকে উত্তম। কেননা, আল্লাহ পাক মক্কা শহরের শপথ করেছেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رَحۡمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ)'র মতে মদীনা শহরই উত্তম। তাঁর যুক্তি হলো, মক্কাতে নবী করীম [ﷺ]-এঁর অবস্থানের কারণেই আল্লাহ্ তায়ালা মক্কা শহরের শপথ করেছেন, সূরা বালাদে। সুতরাং নবী করীম [ﷺ]-এঁর অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঐ হুকুমেরও পরিবর্তন হওয়া যুক্তিযুক্ত। তদুপরি, তাবরানী শরীফে আছে, 'মক্কা হতে মদীনা উত্তম'। (শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীর 'জযবুল কুলুব' সূত্রে তাবরানী)
ইমামগণের এই মত কেবল শহরের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। কিন্তু রওযা মোবারকের পবিত্র স্থানটুকু সম্পর্কে সকল ইমামই একমত যে, রওযা মোবারকের যে স্থানটুকু হুযুর [ﷺ]-এঁর পবিত্র দেহের সাথে সংযুক্ত, তা সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এমনকি বাইতুল্লাহ্, বাইতুল মামুর, আরশ-কুরছি-লাওহ-কলম থেকেও উত্তম। (ফতোয়ায়ে শামী যিয়ারত অধ্যায়)
জনৈক আশেক কবি বলেনঃ
عرش سى زيَاده مرتبه والا روضه رسول الله كا
أسي روضه انوار په غلامون كى لا كهون سلام-
কাব্যানুবাদ:
আরশ হতে অধিক উত্তম দয়াল নবীর রওযা পাক,
সেই রওযাতে গোলামদের-ই লক্ষ কোটি সালাম যাক।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, আইনের চোখে যাই হোক না কেন, প্রেমের চোখে কিন্তু মদীনার মূল্যই আলাদা। প্রেমিকজনের কাছে প্রেমাষ্পদের শহরই সর্বোত্তম। ইমাম মালেক (رَحۡمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ) মদীনাবাসী হয়েও জীবনে মাত্র একবার ফরয হজ্ব আদায় করতে মক্কা শরীফ এসেছিলেন। তিনি মদীনা ছেড়ে জীবনে আর কোথাও ভ্রমণ করেন নি। তিনি জীবনে কখনো জুতা পায়ে দিয়ে মদীনার গলিতে চলতেন না এবং প্রস্রাব পায়খানার কাজও মদীনার বাইরে গিয়ে সেরে আাসতেন। রূহানী জগতে বিচরণকারী আশেকান মদীনার জমিনে সেই প্রশান্তি লাভ করেন, মক্কার জমিনে সেই প্রশান্তি পান না। মদীনাতে হায়াতুন্নবী-জিন্দানবী [ﷺ] শুয়ে আরাম করছেন। সুতরাং প্রেমিকজনের দিলের কা’বা হচ্ছে মদীনা। মক্কা হচ্ছে 'কপালের কা’বা' কিন্তু মদীনা হচ্ছে 'রূহের কা’বা' (খাজা আজমেরী)। সত্যি বলতে কি, কা’বারও কা’বা হচ্ছে সোনার মদীনা। এ জন্যই কা’বা ঘর মদীনার দিকে ঝুঁকে আছে। জনৈক কবি বলেন-
روئى حمارا سوئى كعبه-روئى كعبه سوئى محمد
كعبه كا كعبه روئى محمد—صلى الله عليه وسلم
অর্থ- “আমাদের মুখ কা’বার দিকে, কিন্তু কা’বার মুখ মদীনার দিকে। সত্যিই নবী করীম করীম [ﷺ] হচ্ছেন কা’বারও কা’বা।
তাবরানী শরীফের একটি হাদীস উদ্ধৃত করে শাইখ আব্দুল হক মোহাদ্দিস দেহলভী (رَحۡمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ) তাঁর রচিত 'জযবুল কুলুব' গ্রন্থে বলেছেন, হিজরতের পূর্বে মক্কা শরীফ ছিল উত্তম। হিজরতের পর মদীনা শরীফই উত্তম। নবীজির অবস্থানের কারণেই মদীনা শরীফের ফযিলত বেশী। হাদীসখানা হলোঃ
اَلْمَدْيْنةٌ خَيْرٌ مِّنْ مَّكَّةَ-
অর্থঃ “মক্কা থেকে মদীনা উত্তম।" (তাবরানী শরীফ, জযবুল কুলুব ও মাওয়াহিব)।
মক্কা হলো নবীজির প্রিয় মাতৃভূমি আর মদীনা হলো আল্লাহর প্রিয় হাবীবের রওযা ভূমি। আমাদের আক্বিদা হলো ফতোয়ায়ে শামী বর্ণিত ফতোয়া এবং তাবরানী বর্ণিত হাদীস।