নূরনবী ﷺ
কোরায়েশদের শত্রুতা
উনবিংশ অধ্যায়ঃ কোরইশদের শত্রুতাঃ
প্রসঙ্গঃ আবু লাহাব ও উম্মে জামিলের পরিণতি
যখন কোরআন মজিদের وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الأَقْرَبِينَ (سورة  الشعراء - الآية 214) আয়াত নাযিল হলো তখন নবী  করীম   [ﷺ] কোরাইশদেরকে ডেকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে এক  লা-শরীক আল্লাহর ইবাদত করার আহবান জানালেন। সকলে চুপ রইলো। কিন্তু চাচা আবু লাহাব অগ্রসর হয়ে দুই হাত নেড়ে বললোঃ
تبا لك الهذا دعوتنا يا محمد؟

অর্থঃ- "হে মুহাম্মদ! তোমার সর্বনাশ হোক! এজন্যই কি তুমি আমাদেরকে ডেকেছো"?

তার এই বেয়াদবীপূর্ণ উক্তি আল্লাহর সহ্য হলোনা। তার বিরুদ্ধে ছুরা লাহাব নাযিল হলো।  তার  স্ত্রী নবীজীকে গালাগাল দিত এবং নবীজীর যাতায়াত পথে কাঁটা গেড়ে রাখতো। ছুরা লাহাবে আল্লাহ তায়ালা উভয়ের বিরূদ্ধে নিম্নোক্ত শাস্তি ঘোষণা করলেন,

"আবু লাহাবের উভয়  হাত ধ্বংস হোক এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক। তার মালদৌলত ও জনবল কোন উপকারে আসবেনা। সে লেলিহান অগ্নিশিখায় অচিরেই পৌঁছে  যাবে এবং তার স্ত্রীও তার সহগামিনী হবে। লাকড়ী বহন কালে তার গলায় রশি পড়বে" (সুরা লাহাব)।

মূলতঃ নবী করীম [ﷺ]-এঁর সাথে বেয়াদবী করে কেউ রক্ষা পায়নি। আবু লাহাবের দুই ছেলে ওতবা   ও ওতাইবা-এর নিকট নবীজীর [ﷺ]  দু’কন্যা রোকাইয়া ও উম্মে কুলসুম (رضي الله عنهما)-এঁর বাল্য বিবাহ হয়েছিল। ছুরা লাহাব নাযিল হওয়ার পর তারা পিতার নির্দেশে দু’বোনকে বিবাহ বাসরের পূর্বেই তালাক প্রদান করে। এক  পর্যায়ে  ওতায়বা  নবী  করীম  [ﷺ]-এঁর জামা ছিড়ে ফেলে। নবী করীম [ﷺ] এতে মনে বড় আঘাত পেলেন এবং বদদোয়  করলেন, "হে আল্লাহ! তুমি ওতায়বার ওপর তোমার  পক্ষ থেকে একটি কুকুর লেলিয়ে দাও।"

নবীজীর বদদোয় অক্ষরে  অক্ষরে ফলে গেলো। সিরিয়ায় এক বাণিজ্য সফরে  একটি বাঘ এসে  বহুলোকের মধ্যখান থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় ওতায়বার ঘাড় মটকে রক্ত চুষে চলে গেলো।

নবীজীর সাথে বেয়াদবী করে আপন চাচা-চাচী  ও চাচাত ভাইয়েরা বাঁচতে পারেনি।  আল্লাহর গযবে পতিত হতে হয়েছে তাদের। যারা রাসূলের আত্নীয় নয়- তারা বেয়াদবী করলে আল্লাহ কি  তাদেরকে ছেড়ে দেবেন? কখনই নয়।
বাতিল এবং বিদ’আতিরা তাদের  কিতাবে নবীজীর শানে বেয়াদবীমূলক যেসব উক্তি করেছে, তার সাজা তারা দুনিয়াতেই পেয়েছে  এবং পরকালেও পাবে। তাদের কেউ অন্ধ হয়েছে, কেউ লেংড়া হয়েছে, কেউ মৃত্যুর পূর্বে নিজের পায়খানা নিজে ভক্ষণ করেছে। তাদের বড়  নেতা ইসমাঈল দেহলভী নিকৃষ্টভাবে বালাকোটে সুন্নী মুসলমানদের হাতে নিহত হয়েছে। এটা পৃথিবীর অপমান। আখেরাতে  আরও জঘন্য অপমান তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কবি বলেছেনঃ

خدا جسکو پکڑے چہوڑالے محمد
محمد جو پکڑے چہوڑا کوی نہین سکتا -

"খোদা কাউকে পাকড়াও  করলে  মুহাম্মদ  [ﷺ] শাফায়াত করে তাকে ছাড়িয়ে আনবেন বলে প্রমাণ আছে। কিন্তু    মুহাম্মদ [ﷺ] কাউকে পাকড়াও  করলে তাকে ছাড়িয়ে নেয়ার কেউ নেই।"

এজন্যই ফতোয়া শামীতে উল্লেখ আছে নবীজীর সাথে কেউ বেয়াদবী করলে তার ক্ষমা নেই - তাকে কতল করা ওয়াজিব। অন্য কেউ ক্ষমা করার অধিকারী নয়। যার  কাছে অপরাধী - তিনি ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমা করতে পারে না। এ ব্যাপারে অনেক কাহিনী কিতাবে উল্লেখ আছে। হযরত ওমর (رضي الله عنه) জনৈক বেয়াদব  হাফেয   ইমামকে কতল করে  ফেলেছিলেন—সে ফজরের নামাযে সব  সময় ছুরা আবাছা পাঠ করতো নবীজীকে হেয় করার উদ্দেশ্যে।

Top