প্রশ্নঃ জানাযা কি নামায- নাকি শুধু দোয়া? জানাযার পরপর পূনঃ দোয়া করা কি নাজায়েয? যারা বলে জানাযা শুধু দোয়া এবং জানাযার পরে দোয়া করা হারাম ও মাকরূহ্- তাদের কথা কতটুকু সত্য? তাদের হুকুম কী?
জাওয়াবঃ জানাযা হলো নামায- ইহা দোয়া নয়। ইহাকে শুধু দোয়া বলা কুফরী। কেননা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) জানাযাকে নামায বলেছেন এবং নামাযের বিভিন্ন শর্ত জানাযায় বিদ্যমান। এই নামায ফরযে কেফায়া। দোয়া তো ফরযে কেফায়া নয়। এতে নামাযের সব শর্ত পাওয়া যায়। যেমন, তাহারাত, নিয়ত, কেব্লামুখী হওয়া, ইমাম হওয়া, চার তাকবীর বলা- ইত্যাদি। দোয়ার মধ্যে তো তাহারাত, নিয়ত, কিব্লামুখী হওয়া, ইমাম হওয়া, তাকবীর বলা- এগুলো শর্ত নয়। সুতরাং জানাযা দোয়া নয়। তবে নামাযের মধ্যে যেমন শেষের দিকে দোয়া আছে- তদ্রূপ জানাযা নামাযেও শেষের দিকে একটি আম দোয়া আছে। তাই বলে পাঞ্জেগানা নামাযকে যেমন কেউ দোয়া বলেনা- অনুরূপভাবে জানাযা নামাযকেও দোয়া বলা যাবেনা। বললে কুফরীর সম্ভাবনা আছে। কেননা, জানাযাকে দোয়া বললে ফরযে কেফায়াকে অস্বীকার করা হয়। দোয়া তো ফরযে কেফায়া নয়। তাই জানাযা নামায হলো ফরয- আর দোয়া হলো নফল।
(১) জানাযা শেষে খাস দোয়া করতে হয়।
=======
রাসুলকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-
عن بی ھریرۃؓ قال قال رسول اللّٰہ ﷺ اذا صلیتم علی المیت فاخلصوا لہ الدعاء (ابوداؤد وابن ماجۃ۔
অর্থঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (ﷺ) বলেন- “তোমরা যখন মৃতব্যক্তির জানাযার নামায পড়বে- তাঁর পরপরই তাঁর জন্য খাস করে আরেকটি দোয়া করবে”। এখানে ..... হরফটি “অবিলম্বে”- অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
(২) জানাযার মধ্যে চারটি অংশ আছে- (ক) চার তাকবীরের নিয়ত করা (খ) সানা বা আল্লাহর প্রশংসা করা (গ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ﷺ পড়া (ঘ) মৃত ব্যক্তিসহ অন্যান্য জীবিত, মৃত, ছোট, বড়, উপস্থিত, অনুপস্থিত- নির্বিশেষে সবার জন্য আম দোয়া করা। তাই ছালাম ফিরায়ে মূর্দারের জন্য খাস দোয়া করতে হবে। নবী করিম (ﷺ) যখন জানাযার নামায পড়তেন- তখন সবার জন্য নামাযের ভিতরে এই আম দোয়া পড়তেন-
اللھم اغفر لحینا ومیتنا وشاھدنا وغائبنا وصغیرنا وکبیرنا وذکرنا وانثانا۔ اللھم من احییتہ منا فاحیہ علی الاسلام ومن توفیتہ منا فتوفہ علی الایمان ولا تحرمنا اجرہ ۔ ولا تفتنا بعدہ (رواہ احمد وابوداؤد والترمذی والنسائی)
অর্থঃ “হে আল্লাহ্! আমাদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন অথবা ইন্তিকাল করেছেন, যারা এখানে উপস্থিত আছেন অথবা অনুপস্থিত রয়েছেন, ছোট কিংবা বড়, পুরুষ কিংবা নারী- সবাইকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ্। যাদেরকে তুমি এখনো জীবিত রেখেছো- তাঁদেরকে ইসলামী শরিয়তের উপর জীবিত রাখো। আর যাদেরকে মৃত্যু দিবে- তাঁদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দিও। আর আমাদেরকে ঈমানের পুরস্কার হতে বঞ্চিত করোনা এবং মৃত্যুর পর কবর ও হাশরের ফিত্নায় নিক্ষেপ করোনা”। (আবু দাউদ, আহমদ, তিরমিযি, নাছায়ী)।
মাসআলাঃ জানাযা নামাযের ভিতরের এই দোয়াটি সবার জন্য আম দোয়া। আর নামাযের পরের দোয়াটি হলো মুর্দারের জন্য খাছ দোয়া। এজন্যই এর তাকিদ এসেছে।
মাসআলাঃ এখানে “শাহিদিনা” শব্দটির অর্থ “উপস্থিত বা হাযির নাযির”। নবীজীর এক নাম শাহিদুন বা শাহীদুন- যার অর্থ “হাযিরনাযির বা প্রত্যক্ষ সাক্ষী”। যারা শাহিদুন -এর অর্থ করে শুধু সাক্ষী- তারা ভুল করে। কেননা, সাক্ষী হতে হলে উপস্থিত বা হাযির নাযিরও হতে হয়। তা না হলে স্বাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয়না। তদ্রুপ- নবীজীও হাযির-নাযির বা প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তিনি পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং নিজ উম্মতের কার্যাবলীর চাক্ষুস উপস্থিত সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী। নবীপাকের জন্য আল্লাহ্পাক এই নাম নির্ধারন করেছেন এবং নিজের জন্যও “শাহিদুন” এবং “শাহীদুন” দুইটি নিফাতি নাম ধারন করেছেন। নবীজী যেহেতু নূর- সেহেতু যেকোন সময় এবং যেকোন স্থানে হাযির নাযির হওয়া এবং থাকা খুবই স্বাভাবিক। ইথার সর্বত্র বিরাজ করছে। এটার সাহায্যে বর্তমানে সারাবিশ্বে মুহুর্তের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। এনিয়ে তো কারো আপত্তি নেই। রাসুল (ﷺ) তো আরো শক্তিশালী নূর। তিনি আপাদমস্তক নূর। এটা থানবী সাহেবও স্বীকার করেছে- তাঁর “শুক্রে নিয়ামত” গ্রন্থের ৩৯ পৃষ্ঠায়। তাহলে নবীজীকে আল্লাহর নূর মানতে তাঁর অনুসারীদের এত আপত্তি কেন? নবীজীকে নূর মেনে নিলেই হাযির নাযির, ইল্মে গাযেব ও হায়াতুন্নবী মানার পথে আর কোন বিতর্ক থাকেনা। ঈমানদারেরাবিনা দ্বিধায় হাযির নাযির মেনে নেয়।
(৩) বিরূদ্ধবাদীদের ভুল ফতোয়া :
======
জানাযার পর পুনরায় দোয়া করাকে একশ্রেণীর আলেম মাকরূহ্ বলে। তাঁরা ফিকাহ্ গ্রন্থের কতিপয় ইবারত উদ্ধৃত করে বলে-
لادعاء بعدا لتکبیرۃ الرابعۃ
অর্থাৎ “চতুর্থ তাকবীরের পর নামায হিসাবে আর কোন দোয়া নেই”। সাথে সাথে সালাম ফিরাতে হবে।
জওয়াব হলো- তারা পরবর্তী একটি শব্দ বাদ দিয়েছে- তাই অর্থ বেশকম হয়ে গেছে। পূর্নবাক্য হলোঃ
ولیس بعد التکبیر الرابع قبل السلام دعاء ۔
অর্থঃ “চতুর্থ তাকবীরের পরে এবং ছালামের পূর্বে (এই মধ্যবর্তী সময়ে) অন্য কোন দোয়া নেই” (আলমগীরী)। পরে দোয়া হতে পারে।
উল্লেখ্যঃ জানাযার নামাযে প্রত্যেক তাকবীরের পর কিছু দোয়া পড়তে হয়। কিন্তু চতুর্থ তাকবীরের পর কিছু পড়তে হয়না- শুধু সালাম ফিরাতে হয়। ইহাই ফতোয়ায়ে আলমগীরীর মূল ভাষ্য -অথচ তারা পূর্ণবাক্য উদ্ধৃত না করে অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করে প্রমাণ করতে চাইছে যে, জানাযা নামাযের পর আর কোন দোয়া-ই নেই। ইহা তথ্য গোপনের পর্যায়ভুক্ত। ইহা ইহুদীদের স্বভাব। যেখানে হাদীসে রয়েছে- “জানাযার পরপর খাস দোয়া করতে হবে”- সেখানে ফকিহ্গণ কি করে তার খেলাফ ফতোয়া দিতে পারেন? ইহা সম্ভব নয়।
ফিকাহ্র কিতাবের জবাবঃ বাহরুর রায়েকসহ অন্যান্য কিতাবে যেসব ইবারত লিখা হয়েছে-তাহলোঃ
(ক) لایقوم داعیا لہ
(খ) لایقوم بلدعاء بعد صلوۃ الجنازۃ ۔
(গ) لا یدعوا بعدہ فی ظاھر المذھب ۔
(ঘ) ولا یقوم بالدعاء بعد صلوۃ الجنازۃ لانہ یشبہ الزیادۃ ۔
(ঙ) ولا یدعوا للمیت بعد صلوۃ الجنازۃ لانہ یشبہ الزیادۃ فی صلوۃ الجنازۃ ۔
এগুলোর প্রকাশ্য অর্থ হলো- ধারাবাহিক ভাবে- (ক) জানাযার পর দোয়া পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবেনা (খ) জানাযার পর পুনরায় দাঁড়িয়ে দোয়া করবেনা (গ) প্রকাশ্য মতানুযায়ী- জানাযার পর দোয়া করবেনা (ঘ) জানাযার পর মৃতব্যক্তির জন্য দাঁড়িয়ে পুনরায় দোয়া করবেনা- কেননা, ইহা জানাযার মধ্যে অতিরিক্ত কিছু করার সদৃশ। (ঙ) জানাযার পর দোয়া করবেনা। কেননা, ইহা অতিরিক্ত কাজ সদৃশ- ইত্যাদি।
উপরোক্ত ফিকাহ্র ইবারাতের সারমর্ম হলো- (ক) কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করবেনা, (খ) “কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া করলে জানাযায় অতিরিক্ত সংযোজন বলে ধারণা হবে”। এভাবে দোয়া করা মাকরূহ্।
বুঝা গেল- দোয়া করা নিষেধ নয়- কাতারবন্দী হওয়া নিষেধ। কেননা, কাতারবন্দী হলে জানাযার সদৃশ মনে হবে। ঐ যুগে কাতারবন্দী হয়ে দোয়া করার প্রচলন ছিল বলে ঐরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে- ইহা সামাজিক সংস্কারের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহর মেহেরবানীতে মুসলমানরা ফকিহ্দের কথামতই সতর্কতা অবলম্বন করে কাতার ভেঙ্গে গোল হয়ে দোয়া করছে এবং খাস দোয়ার হাদীসের উপর আমল বহাল রেখেছে। হাদীসের উপরই আমল হয় এবং ফেকাহ্র উপর হয় পারিপার্শিক সতর্কতা অবলম্বন। ইহাই ফেকাহ্রে উদ্দেশ্য। ফকিহ্গণ কখনও হাদীসের আমলের বিরূদ্ধে মতামত দিতে পারেন না। ফিকাহ্র নীতিমালা ওহাবীরা ভালভাবে জানেনা বলেই বর্তমানে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
(৪) পাঞ্জেগানা নামায ও জানাযা নামাযের পরপর দোয়া করলে শীঘ্র কবুল হয়
জানাযার নামায ফরযে কেফায়া। পঞ্জেগানা নামায ফরযে আইন। তাহাজ্জুদের নামায সুন্নাতে যায়েদাহ্। ফরয নামায এবং তাহাজ্জুদের নামাযের পর দোয়া করলে তা শীঘ্র কবুল হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একখানা হাদীস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই হাদীসখানা তিরমিযি শরীফে আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) সুত্রে সংগৃহীত এবং মিশকাত শরীফে সংকলিত হয়েছে।
عن ابی امامۃ الباھلیؓ قیل یا رسول اللّٰہ ﷺ ای الدعاء اسمع ؟ قال جوف اللیل الاخر ودبر الصلوات المکتوبات
অর্থঃ “হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বর্ণনা করেন- রাসুলেপাকের দরবারে আরয করা হলো- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! কোন্ সময়ের দোয়া সবচেয়ে শীঘ্র কবুল হয়? নবীজি (ﷺ) এরশাদ করলেন- “শেষ রাত্রের দোয়া এবং ফরয নামাযের পরপর যে দোয়া করা হয়-তা শীঘ্র কবুল করা হয়”। (তিরমিযি ও মিশকাত)।
ফায়েদাঃ অত্র হাদীসখানা সহীহ। এর দ্বারা দুটি জিনিস প্রমানিত হয়েছে (ক) শেষরাত্রে তাহাজ্জুদের সময় দোয়া করলে শীঘ্র কবুল হয় (খ) ফরয নামাযের পরপর- অর্থাৎ সালাম ফিরানোর পর দোয়া করলে শীঘ্র কবুল হয়। ফরয নামাযের মধ্যে পাঞ্জেগানা ও জানাযার নামায- সবই অন্তর্ভূক্ত। কাজেই পাঞ্জেগানা নামাযের সালাম ফিরিয়ে যেভাবে দোয়া করতে হবে- তদ্রুপ জানাযার নামাযের সালাম ফিরিয়েও দোয়া করতে হবে। এখন আর সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
যারা হাদীসের খেলাফ করে শুধু ফিকাহ্র ইবারত পেশ করে- তাঁরা ফিকাহ্ই বুঝেনা। ফিকাহ্র মূল ভিত্তি হলো কোরআন এবং হাদীস। তাই হাদীস বিরোধী কোন ফিকাহ্ হতে পারেনা। ফিকাহ্র ইবারত বুঝতে হলে হিল্ম -এর প্রয়োজন হয়। ফিকাহ্র ইবারত ও হুকুম সবসময় শর্তসাপেক্ষ হয়ে থাকে। জানাযার পর শর্ত সাপেক্ষে দোয়া করা জায়েয। তা হলো গোল হয়ে দোয়া করা।
(৫) প্রশ্নঃ জানাযার পর দোয়া করার কোন প্রমাণ রাসুল (ﷺ) বা সাহাবাগণের যুগে ছিল কিনা?
জওয়াবঃ হ্যাঁ আছে। যথাঃ-
(ক) জঙ্গে মূতার তিন শহীদের জানাযা ও জানাযা শেষে দোয়া
عن عبد اللّٰہ بن ابی بکر بن عمرو بن حزم قال لما التقی الناس بموتہ جلس رسول اللّٰہ ﷺ علی المنبر وکشف لہ ما بینہ وبین الشام فھو ینظر الی معرکتھم ۔ فقال اخذ الرائیۃ زید بن حارثہ ۔۔۔ فمضی قدما حتی استشھد فصلی علیہ رسول اللّہ ﷺ وقال استغفروا لہ فقد دخل الجنۃ وھو شھید ۔ فلما قتل زید اخذ الرایۃ جعفر بن ابی طالب ۔۔۔۔۔۔۔ ثم مضی قدما حتی استشھد فصلی علیہ رسول اللّٰہ ﷺ وقال استغفروا لہ لاخیکم فانہ شھید دخل الجنۃ وھو یطیر فی الجنۃ بجنا حین من یاقوت حیث یشار فی الجنۃ قال ثم اخذ الرأیۃ عبد اللّٰہ بن رواحۃ فاسشھد ثم دخل الجنۃ (البدایۃ والنھایۃ ج ۴ صفح ۳۴۲ وفتح القدیر)
অর্থঃ আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু বকর ইবনে আমর ইবনে হাযম থেকে ওয়াকেদী বর্ণনা করেছেন- “ইবনে হাযম বলেন-
যখন মূতায় মুসলমান-খৃষ্টান দুইপক্ষ মিলিত হলো এবং যুদ্ধ শুরু হলো- তখন রাসুলকরিম (ﷺ) মদিনা শরীফে মসজিদে নববীতে বসা ছিলেন। আল্লাহ্ তায়ালা মদিনা ও মূতার মধ্যখানের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা বা পর্দা সরিয়ে দিলেন। হুযুরপাক (ﷺ) যুদ্ধ অবলোকন করছিলেন। তিনি এরশাদ করলেন- ”যায়েদ ইবনে হারেছা পতাকা হাতে নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে”। হুযুর (ﷺ) যুদ্ধের ধারাবিবরণী দিতে দিতে এক পর্যায়ে বললেন- “সে শহীদ হয়ে গেছে”। নবী করীম (ﷺ) সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তাঁর জানাযার নামায পড়ালেন এবং বললেন- “তোমরা সম্মিলিতভাবে তাঁর জন্য দোয়া ইসতিগ্ফার পড়ো”। তিনি সুসংবাদ দিয়ে বললেন- “যায়েদ শহীদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করেছে”।
ওয়াকেদী বর্ণনা করেন- নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেন- “যায়েদের শাহাদাতের পর এবার পতাকা হাতে নিয়েছে জা’ফর ইবনে আবু তালেব। তিনি পতাকা নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছেন। এক পর্যায়ে বললেন- “জাফর শহীদ হয়ে গেছে”। একথা বলে নবী করীম (ﷺ) তাঁর জানাযা পড়ালেন এবং এরশাদ করলেন -“তোমাদের ভাই জাফরের জন্য দোয়া ইসতিগফার পড়ো। সে শাহাদাত বরণ করে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। সে জান্নাতের যেথায় ইচ্ছা উড়ে বেড়াচ্ছে। আল্লাহ্ তাঁকে দুটি ইয়াকুতের পাখা দান করেছেন”।
এরপর এরশাদ করলেন- “এবার পতাকা হাতে নিয়েছে আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা। সেও শাহাদাত বরণ করে জান্নাতে প্রবেশ করেছে” (বেদায়া নেহায়া ৪র্থ খণ্ড ২৪৩ পৃষ্ঠা)।
ফতহুল ক্বাদির গ্রন্থে একথাও উল্লেখ আছে- اسغفروا لہ অর্থাৎ “নবীজী তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং সাহাবীগণকেও দোয়া করতে বললেন”।
বুঝা গেল- জানাযার পর দোয়া করা রাসুলুল্লাহ্র সুন্নাত।
(খ) সাহাবী আবদুল্লাহ্ ইবনে আবি আওফা জানাযার পর দোয়া করেছিলেনঃ
মোন্তাখাব কান্যুল ওম্মাল নামক হাদীস গ্রন্থের কিতাবুল জানায়েযে উল্লেখ আছে-
عن ابراھیم الھجری قال رأیت ابن ابی اوفی ۔ وکان من اصحاب الشجرۃ ماتت ابنتہ الی ان قال ثم کبر علیھا ارب عا ثم قام بعد ذلک قدر ما بین التکبیر تین وقال رأیت رسول اللّٰہ ﷺ کان یصنع ھکذا ۔
অর্থঃ ইব্রাহীম হাজুরী বর্ণনা করেছেন- হোদায়বিয়ার ময়দানে বাবলা বা ছামুরা গাছের নীচে নবীজির হাতে বায়আত গ্রহণকারী সাহাবীদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আবি আওফা (রাঃ) ছিলেন অন্যতম। তিনি তাঁর একটি মেয়ে মারা যাওয়ার পর কিভাবে জানাযা পড়েছেন, তা আমি নিজে দেখেছি। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবি আওফা প্রথমে চার তাকবীরের সাথে জানাযা পড়ালেন। এরপর মেয়ের জন্য দোয়া করলেন- দুই তাকবীরের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ দাঁড়িয়ে। এরপর তিনি বললেন- জানাযার পর নবী করীম (ﷺ) এরূপেই দোয়া করতেন। আমি স্বয়ং তা দেখেছি”। (মোন্তাখাব কানযুল ওম্মাল)। বুঝা গেল- জানাযা পড়ে কাতার ভঙ্গ করে দাঁড়িয়ে পুনরায় দোয়া করা নবীজীর সুন্নাত, সাহাবীগণেরও সুন্নাত।
(গ) মাবসুত গ্রন্থ ২য় খন্ড ৬৭ পৃষ্ঠা ‘বাবু গোসলিল মাইয়েত’ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে- ”হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) এক জানাযায় শরিক হওয়ার উদ্দেশ্যে গমন করেন। কিন্তু গিয়ে জানাযায় শরিক হতে পারেন নি। অত:পর তিনি উপস্থিত সকলকে সম্বোধন করে বললেন,
ان سبقتمونی بالصلوۃ علیہ فلا تسبقونی بالدعاء
অর্থাৎ “তোমরা আমার পূর্বেই জানাযা পড়ে ফেলেছো। এখন আমাকে ফেলে দোয়া করোনা” (মাব্সুত- কৃত আল্লামা সামছুল আইম্মা ছারাখ্ছী, ২য় খণ্ড ৬৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।
উক্ত বর্ণনায় প্রমাণ পাওয়া যায় যে- সাহাবায়ে কেরাম জানাযার পর পুনরায় দোয়া করতেন। এটা তাঁদের সম্মিলিত আমল ছিল। অতএব জানাযার পর পুনরায় দোয়া করা সুন্নাত। যারা বেদআত বলে- তারা উল্লেখিত হাদীসগুলো দেখে নিলে কোন সমস্যা থাকে না। কিন্তু তারা দেওবন্দের উর্দু কিতাবে যেভাবে দেখেছে- সেভাবেই বুলি আওড়াচ্ছে।
হাদীসের দ্বারা সুপ্রমাণিত বিষয়কে অস্বীকার বলা মারাত্মক অন্যায়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জাআল হক্ক ও আমার লিখিত ফতোয়া ছালাছা পাঠ করুণ।
-----