নূরনবী ﷺ
মদীনায় হিজরত ও হিজরী সন
সাতাশতম অধ্যায়ঃ হিজরত ও হিজরী সনঃ
বিভিন্ন মো’জেযা প্রদর্শন- পাহাড়, জমিন ও বেহেস্তের উপর নবীজীর কর্তৃত্ব
ইসলামের ইতিহাসে হিজরত একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোরাইশদের  প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেলেও আল্লাহর  পরিকল্পনা  অনুযায়ী  হুযুর [ﷺ]-এঁর দেশত্যাগ বা হিজরত ছিল বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রাধান্য বিস্তারের প্রথম সোপান। কোরাইশদের পতন  প্রকৃতপক্ষে হিজরতের ঘটনা থেকেই শুরু হয়। হিজরতের সময় ২০/২১  বছরের যুবক হযরত আলী (رضي  الله عنه)-কে  আপন বিছানায় শুইয়ে একদিকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর জন্য তৈরী করা, পরক্ষণেই আবার আমানতের মালামাল ফেরত দেয়ার জিম্মাদারী প্রদান করার মধ্য দিয়ে  হযরত আলীর দীর্ঘ হায়াতের ইঙ্গিত প্রদান করা হয়।

একশত ঘেরাওকারীর চোখে ধূলা  নিক্ষেপ করে নিরাপদে ঘর থেকে তাদের  সামনে দিয়ে বের হয়ে যাওয়া, হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এঁর কাঁধে চড়ে ওজনশূন্য হওয়া, ছাওর গুহায় মাকড়সার জাল বুনানী, কবুতরের ডিম পাড়া,  গুহার মুখে বৃক্ষের ছত্রছায়া প্রদান, গুহার ভিতরে আবু বকর (رضي الله عنه)-কে   সর্পে   দংশন,   হুযুর  [ﷺ]-এঁর পবিত্র থুথু মোবারক দিয়ে সর্পবিষ নিবারন, পিপাসার্ত আবু বকরের জন্য বেহেস্ত হতে পানির নহর পৃথিবীতে আনয়ন, শত্রুদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কুদরতি গোপন রাস্তা তৈরী এবং সাগরকূলে কুদরতি  নৌকা  প্রস্তুত  থাকা,  পশ্চাদধাবনকারী সুরাকা ইবনে মালেকের ঘোড়ার পা সাতবার জমিনে ঢুকে যাওয়া ও জমিন  কর্তৃক গ্রাস করানোর ক্ষমতা নবী করীম [ﷺ]-কে প্রদান করা – ইত্যাদি মো’জেযা প্রদর্শন নবীপ্রেমিক ঈমানদারদের জন্য এক শিক্ষামূলক বিষয়। পাঠকদের পিপাসা নিবারণের লক্ষ্যে এক এক করে  নিম্নে  সেসবের বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।

হিজরতের পটভূমিকাঃ
মি’রাজ থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর নবী করীম  [ﷺ]-এঁর উপর কোরাইশদের  অত্যাচার আরেক মাত্রা বৃদ্ধি পেল। ঐ বছরই (দ্বাদশ বর্ষ) হজ্ব উপলক্ষে আরবের  বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকেরা হজ্বে আগমন করলো। ইয়াছরিব (মদীনা) থেকে ৭০ জন পুরুষ এবং  ২ জন মহিলা মোট ৭২ জনের একটি কাফেলা  হজ্বে আগমন করলো। এর পূর্বেও একাদশ বর্ষে ১২ জন ১০ম বর্ষে ৬ জন করে দুটি দল বিগত দু’বৎসরে হজ্ব মৌসুমে এসে ইসলাম গ্রহণ করে মদীনায় ফিরে গিয়েছিলেন।

এবারের (দ্বাদশ বর্ষ) ৭২ জনের তৃতীয় দলটি মিনাতে রাতের অন্ধকারে অতি গোপনে   নবী  করীম [ﷺ]-এঁর হাতে  ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং নবী করীম [ﷺ]-কে মদীনায় চলে যেতে আমন্ত্রণ জানালেন।  জান-মাল দিয়ে তাঁরা নবী  করীম [ﷺ] ও মোহাজির মুসলমানদেরকে রক্ষা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন। নবুয়তের দ্বাদশ  বর্ষের জিলহজ্ব মাসের প্রারম্ভে এ  চুক্তি হয়। এই বায়আতকে বাইআতে আকাবা বলা হয়। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর গুরুত্ব ছিল  অপরিসীম। কেননা, এই বায়আতের মাধ্যমেই নবী করীম [ﷺ]  এবং মক্কার সাহাবাগণের জন্য বিদেশভূমিতে  বিকল্প বাসস্থান ও রাষ্ট্র নির্ধারিত হলো।   নবী করীম [ﷺ] সাহাবাগণকে মদীনায় হিজরত করার নির্দেশ দিলেন। সাহাবাগণ পরবর্তী ২  মাসে একা একা  ও দলে  দলে মদীনায় গমন করতে লাগলেন।

মদীনায় ইসলামের প্রসার দেখে আবু  জাহল প্রমুখ কোরেশগন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। নবী করীম [ﷺ] জিলহজ্ব চাঁদের শেষ তারিখে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-কে ডেকে ইঙ্গিতে বললেন- “হে আবু বকর, তুমি হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকবে। যে কোন মুহুর্তে আল্লাহর পক্ষ হতে মক্কাভূমি ত্যাগ করার নির্দেশ আসতে পারে।" আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) খুশীতে বলে   উঠলেন- "ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি কি আপনার সঙ্গী হবো?" নবী করীম [ﷺ] বললেন, “তুমি আমার জীবনের সাথী, হিজরতের সাথী, কবরের সাথী, হাশরের সাথী এবং বেহেস্তেরও সাথী। আমি প্রথম, তুমি দ্বিতীয়।" এটাই হুযুরের ইলমে গায়েব আতায়ীর প্রমাণ।

হুযুর [ﷺ]-এঁর একথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে এবং হবে। এই গোপন ইঙ্গিত পেয়ে হযরত আবু  বকর (رضي الله عنه) পরদিন পহেলা মহররম তারিখে ওকাজ বাজার থেকে আটশত দেরহাম দিয়ে দুটি  উট ক্রয় করে  নবী করীম [ﷺ]-এঁর খেদমতে পেশ করলেন। একটির নাম রাখা হলো কাস্ওয়া এবং অপরটির নাম রাখা হলো আদ্বা। হাশরের  দিনে নবী করীম  [ﷺ]  কাস্ওয়ায় আরোহণ করে হাশরের ময়দানে যাবেন এবং আদ্বায় আরোহণ করে বিবি ফাতিমা (رضي الله  عنها) হাশরের ময়দানে উঠবেন (রুহুল বয়ান)।

প্রিয় নবীর দরবারে যে দান কবুল হয়- তাই শ্রেষ্ঠ দান। নবী করীম [ﷺ] উক্ত কাস্ওয়া নামক উটে জীবদ্দশায়  আরোহণ  করতেন। হুযুরের ইনতিকালের পর উক্ত কাস্ওয়া শোকে অল্পদিনের মধ্যেই  একটি কুয়ায় ঝাঁপ দিয়ে ইনতিকাল করে। দ্বিতীয় উট আদ্বা  হযরত ওমরের খিলাফতকালে ইন্তিকাল করে। হুযুর পাক [ﷺ]-এঁর ব্যবহৃত যাবতীয় বস্তুর বিশদ তালিকা আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া এবং মাওয়াহিব গ্রন্থে উল্লেখিত রয়েছে।

দুটি উট খরিদের মাধ্যমে  হিজরতের  প্রাথমিক প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়। সেজন্যই মুহররমের পহেলা তারিখ (হিজরতের প্রস্তুতি দিবস) থেকে হিজরী সন গণনা শুরু করা হয়। হযরত আবু বকর (رضي  الله عنه)-এঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এরূপ করা হয়েছে। সুতরাং যতদিন হিজরী সন থাকবে – হযরত আবু বকরের  স্মৃতিও ততদিন অটুট থাক্বে।

মুহররম  ও সফর  মাসে কোরাইশ সর্দারগণ  মুসলমানদের ব্যাপক হারে মদীনায় যেতে দেখে নানা চিন্তা-ভাবনা করে  অবশেষে  সফর মাসের শেষ শনিবারে  দারুন নাদ্ওয়া নামক মিলনায়তনে এক পরামর্শ সভা আহবান করে। কোরাইশদের  বিভিন্ন গোত্র  ছাড়াও অন্যান্য গোত্রের সর্দারগণ উক্ত  মিলনায়তনে বা পরামর্শগৃহে একত্রিত  হলো। নবী করীম  [ﷺ]-এঁর এই ইসলামী মিশনের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা  নেয়া যায়, সে সম্পর্কে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপিত হলো। একটি হলো- হুযুর  [ﷺ]-কে আটক করে রাখা। দ্বিতীয় প্রস্তাব হলো- দেশ থেকে বহিষ্কার করা এবং তৃতীয় প্রস্তাব হলো- জীবনে শেষ করে  দেয়া। এমন সময় শয়তান নজদ দেশের এক বৃদ্ধের সুরত ধারণ করে উক্ত সভায় হাযির হলো। একারণে  শয়তানের এক উপাধী হয় শেখে নজদী।

নজদ দেশ থেকেই  পরবর্তীকালে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল  ওহাব নজদী ওহাবী আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীকালে তার বংশধরগণ  ইংরেজদের সাথে আঁতাত করে ১৯২৪ ইং সালে মক্কা ও মদীনাসহ গোটা আরবে  ওহাবী রাজতন্ত্র  প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমান শাসকগণ ওহাবী শাসক। তারা আরবের সমস্ত ধর্মীয় স্মৃতি ও মাযার ধ্বংস করে ফেলেছে। বিবি খাদিজার মাযার, বিবি ফাতিমার মাযার ও  ইমাম হাসানের মাযারসহ জান্নাতুল বাকী ও জান্নাতুল মোয়াল্লার সমস্ত মাযার ও  গম্বুজ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। এরা সারা পৃথিবীতে ওহাবী মতবাদ চালু করার লক্ষ্যে ‘রাবেতা আলমে  ইসলাম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইবনেসিনা, ইবনে তাইমিয়া, কিং খালেদ,  বাদশাহ ফয়সল- ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে এবং  এগুলোর  মাধ্যমে মানুষকে ওহাবী মতবাদে দীক্ষিত করছে। যেসব সংগঠন ওহাবী  ও মউদুদী মতবাদ প্রচার করে, উক্ত প্রতিষ্ঠান তাদেরকে প্রচুর  আর্থিক  সাহায্য দিয়ে থাকে। নবী করীম [ﷺ] চৌদ্দশত বৎসর পূর্বেই  এই শয়তানী ওহাবী ফিৎনার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। আল্লামা ইবনে আবেদীন তাঁর ফতোয়া  শামী গ্রন্থে ওহাবী ফিৎনার বিশদ আলোচনা করেছেন। [দ্রষ্টব্যঃ মিশকাত শেষ খণ্ড, ইয়েমেন ও শামের বর্ণনার অধ্যায়, হাদিস নং ৬০১৩, বুখারী শরীফ -২/১০৫১]

নবী করীম [ﷺ]-এঁর  খেদমতে জনৈক সাহাবী ঐ শনিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করলেনঃ
يوم مكر وخديعة ان قريشا ارادوا ان يمكروا فيه -
অর্থাৎ “শনিবার হচ্ছে মক্কর ও ধোকাবাজীর দিন। এই দিনে কুরাইশগণ (আমার বিরুদ্ধে) ষড়যন্ত্রমূলক  পরিকল্পনা তৈরী করেছে।" (নিহায়া)।

যাক, শয়তান শেখে নজদীর সুরতে সভায় হাযির হয়ে আবু জাহলকে লক্ষ্য করে বললো- “আবুজাহেল কর্তক শেষ প্রস্তাব- অর্থাৎ নবীকে জীবনে শেষ করে দেয়াই মঙ্গলজনক এবং বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে প্রত্যেক গোত্রকেই একাজে অংশ নিতে হবে।" আবু জাহিলসহ উপস্থিত সবাই শেখে নজদীর পরামর্শ মোতাবেক ঐ রাত্রেই নবী করীম [ﷺ]-এঁর গৃহে অভিযান পরিচালনা করার প্রস্তাব পাশ করে সভা ভঙ্গ করলো। কোরআন মজিদের সুরা আনফালে তাদের এই কু-পরামর্শের কথা এভাবে উল্লেখিত হয়েছেঃ
واذ يمكر بك الذين كفروا ليثبتوك أو يقتلوك أو يخرجوك-ويمكرون   ويمكر الله والله خير الماكرين

অর্থঃ “হে রাসূল! ঐ সময়ের কথা স্মরণ করুন, যখন কাফেররা আপনার ব্যাপারে এই দূরভিসন্ধি এঁটেছিল যে,  হয় আপনাকে বন্দী করে রাখা হবে, অথবা আপনাকে শহীদ করা হবে অথবা আপনাকে দেশান্তর করে দেয়া হবে। তারা একদিকে দূরভিসন্ধি আঁটছিল, অপর দিকে আল্লাহ তায়ালা কৌশলপূর্ণ পরিকল্পনা করছিলেন। আল্লাহই (দূরভিসন্ধির বিরুদ্ধে)  উত্তম পরিকল্পনাকারী।" (আনফালঃ ৩০)।

দারুন নাদ্ওয়া আজও কাফেরদের  দূরভিসন্ধির এসেম্বলী ও শয়তানের আস্তানার প্রতীকরূপে চিহ্নিত হয়ে আছে। লাখনো শহরে ওহাবীদের নাদ্ওয়াতুল উলামা নামক  মাদরাসাটি  আবুজাহেলের দারুন নাদওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

দারুন নাদ্ওয়ার সভা ভঙ্গ হওয়ার  পরপরই হযরত জিব্রাইল  (عليه  السلام)  নবী  করীম  [ﷺ]-এঁর খেদমতে কোরাইশদের দূরভিসন্ধি ও পরিকল্পনার সংবাদ  দিলেন এবং বললেন- আজ আপনি নিজ বিছানায় শুবেন না- অর্থাৎ হিজরত করুন।
নবী করীম [ﷺ]  হযরত আলীকে ডেকে এনে নিজের বিছানায় শুয়ে  পড়তে বললেন এবং নিজের চাদরখানা গায়ে চড়িয়ে দিলেন। হযরত আলী নির্ঘাত  মৃত্যু জেনেও  বিনাদ্বিধায়  হুযুর [ﷺ]-এঁর বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং গায়ের উপর চাদর টেনে দিলেন। পরক্ষণেই নবী করীম [ﷺ] বললেন - আমার কাছে মানুষের গচ্ছিত আমানতের মাল তিনদিনের মধ্যে  ফেরত দিয়ে তুমি মদীনাতে চলে যাবে। আমি এক্ষণই বের  হয়ে যাচ্ছি। কেননা কোরাইশদের একশজন, মতান্তরে সত্তরজন যুবক নাঙ্গা তলোয়ার নিয়ে আমার ঘর ঘেরাও করে রেখেছে- নিদ্রা যাওয়া মাত্র তারা ঘরে ঢুকে আমাকে শহীদ  করে ফেলার ফন্দি এঁটেছে। হযরত আলী (رضي الله عنه) একদিকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত-  অপরদিকে   নবী   করীম  [ﷺ]-এঁর ইঙ্গিতে বুঝে নিলেন,  আপাততঃ আজ তিনি  শহীদ হবেন না।  কেননা আমানতের মাল ফেরত দেয়ার মধ্যে তিনদিনের জন্য তাঁর বেঁচে থাকার ইঙ্গিত প্রচ্ছন্ন ছিল।

নবী করীম  [ﷺ] এবার এরশাদ করলেনঃ
يا علي أنك لن تموت حتى احمرت لحيتك البياض بالدم (البداية والنهاية)
“হে আলী,  তুমি সাধারণভাবে মৃত্যুবরণ করবে না- যতক্ষণ না তোমার সাদা দাঁড়ি রক্তে রঞ্জিত হয়ে যাবে (বেদায়া)।"

দেখা গেছে- হযরত আলী ৬৩  বৎসর বয়সে এক খারেজী মুসলমানের (?) হাতে কুফার জামে মসজিদে ফজরের নামাযে গমনের পথে শহীদ হন। হযরত আলী বৃদ্ধ হয়ে  শহীদ হবেন- এ সংবাদ  নবী করীম [ﷺ] আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবের মাধ্যমেই দিয়েছিলেন। কে কখন  মারা যাবে, নবী করীম [ﷺ] পূর্বেই তা বলে গেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েব অস্বীকারকারীদের  এ ঘটনা থেকে  শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু তারা তাদের মুরুব্বীদের কথার উপরই অটুট। তারা বলেছে, নবীজী গায়েব জানেন না। অথচ ইলমে গায়েব জানা নবুয়তের জন্য শর্ত।

গৃহত্যাগ ও ছাওর পর্বতের গুহায় আশ্রয় গ্রহণ:-
এবার হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه)-এঁর ঈমানের  পরীক্ষা  শুরু হলো।   নবী করীম [ﷺ] হযরত আলীকে বিছানায় শুইয়ে এক মুষ্টি ধুলা হাতে নিয়ে সূরায়ে  ইয়াসীনের ৯ নং আয়াতটি (وَجَعَلْنَا مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ سَدًّا وَمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَأَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لاَ يُبْصِرُونَ -) তিলাওয়াত করে তাতে ফুঁক দিয়ে শত্রুদের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে নিক্ষেপ করলেন। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকটি শত্রুর মাথায় ও চোখে সে ধুলা পৌঁছিয়ে দিলেন। তাঁরা চক্ষু রগড়াতে লাগলো। এ সুযোগে নবী করীম [ﷺ] তাদের সামনে দিয়েই বের হয়ে গেলেন- অথচ তাদের কেউই নবী করীম [ﷺ]-কে দেখতে পেলোনা। আল্লাহ রাখে তো মারে কে? নবীজির কাজে স্বয়ং আল্লাহ শরীক হয়ে গেলেন। নিজ ঘর থেকে বের হয়ে নবী করীম [ﷺ] সোজা হযরত আবু বকর (رضي  الله عنه)-এর বাড়ীতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে "লাব্বাইকা ওয়া ছা'দাইকা" বলে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه)   দরজা   খুলে দিলেন। নবী করীম [ﷺ] বললেন, "তুমি কি নিদ্রা যাওনি হে আবু বকর?" হযরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) আরয করলেনঃ-

"ইয়া  রাসূলাল্লাহ! যে দিন আপনি আমাকে প্রস্তুত থাকতে ইঙ্গিত করেছিলেন, সেদিন থেকেই প্রতিরাত্রে আমি আপনার এন্তেজারে দরজায় দন্ডায়মান ছিলাম। একদিনের জন্যও  আমি  রাত্রিতে বিছানায় পিঠ লাগাইনি।"

অন্তরে মহব্বতের আগুন একবার জ্বলে উঠলে এমনি ভাবেই চোখের  ঘুম হারাম হয়ে যায়। অন্ধকারে প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা ও প্রয়োজনীয় পাথেয় তৈরি করে  দিচ্ছিলেন হযরত আবু বকর  (رضي الله عنه)-এর দুই মেয়ে হযরত আসমা ও আয়েশা (رضي الله عنهما)। হযরত আসমা (رضي الله عنها) নিজের দোপাট্টা ছিড়ে এক অংশ দিয়ে বোঝা বেঁধে দিলেন। তাঁর   এই  ত্যাগে মুগ্ধ হয়ে নবী  করীম [ﷺ] তাকে "জাতুন নাতাকাইন" বা দোপাট্টার অধিকারিনী উপাধীতে  ভূষিত করলেন। হযরত আয়েশা  (رضي الله عنها) পরবর্তী সময়ে "সিদ্দীকা" উপাধীতে ভূষিত হয়েছিলেন- যখন তাঁর  পবিত্র চরিত্রের আয়াত নাযিল হয়েছিল। একই ঘরে পিতা সিদ্দীকে আকবর, এক মেয়ে হলেন সিদ্দীকা এবং অন্য মেয়ে আসমা হলেন "জাতুন নাতাকাইন।" হযরত আবু বকরের  (رضي الله عنه) বংশের চার পূরুষ সাহাবী ছিলেন। এই গৌরব অন্য কোন সাহাবীর নসীব হয়নি। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه),  তাঁর পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে এবং  জামাই যোবাইর ও নাতী আব্দুল্লাহ ইবনে  যোবাইর সকলেই সাহাবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। সাহাবী ইবনে  সাহাবী ইবনে সাহাবী ইবনে সাহাবী- অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে আসমা বিনতে আবু বকর ইবনে আবু কোহাফা (رضي الله عنهم) সকলেই সাহাবী ছিলেন। এই দুর্লভ সৌভাগ্য হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর বংশের কথা   স্মরণ করিয়ে  দেয়। নবী  করীম [ﷺ] যখনই হযরত হযরত ইউসূফ (عليه السلام)-এর কথা উল্লেখ করতেন,  তখনই বলতেন, ইউসূফু  নবীউন, ইবনু নাবীয়্যিন, ইবনে নাবীয়্যিন, ইবনে নবীয়্যিন – অর্থাৎঃ- "ইউসূফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইব্রাহীম আলাইহিমুস সালাম।"

রাত্রির ঘন  অন্ধকার ভেদ করে   নবী করীম [ﷺ] ও হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) মক্কা শহর ত্যাগ করে দক্ষিণে অবস্থিত ছাওর পর্বতের  উদ্দেশ্যে রওনা  দিলেন। নবী করীম [ﷺ] পায়ের আঙ্গুলের উপর  ভর দিয়ে পথ চলছিলেন- যেন পাছে পদচিহ্ন বিশেষজ্ঞরা চিনে না ফেলে। কিছুদূর যাওয়ার পর কদম মোবারক পাথরের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে রক্ত ঝরে পড়তে লাগলো। এ অবস্থা দেখে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)  নবী করীম [ﷺ]-কে কাঁধে তুলে নিলেন। কিন্তু তিনি কোন ওজন অনুভব করলেন না। নবী করীম [ﷺ] একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, "আবু বকর! নূরের কোন ওজন হয়না।" সুবহানাল্লাহ!

ছাওর পর্বতের চুড়ায়  পৌঁছে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) নিজে প্রথমে একটি গুহায় নামলেন। গুহা পরিষ্কার করে চারিদিকের ছিদ্র কাপড় ছিড়ে বন্ধ করলেন। একটি ছিদ্র বন্ধ করার মত কিছু ছিলো না। তিনি নিজ পা দিয়ে সে ছিদ্রটি বন্ধ করলেন। নবী করীম [ﷺ] তাঁর কোলে মাথা মোবারক রেখে শুয়ে পড়লেন এবং চোখ মোবারক বন্ধ  করে আবু বকরকে যিকরে খফীর তাওয়াজ্জুহ দিতে  লাগলেন। "আল-হাদিকাতুন নাদিয়া ফিত্ তারিকাতিন নক্শবন্দিয়া" নামক আরবী গ্রন্থে উল্লেখ আছে-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما صب الله في صدرى إلا صببته في صدر ابي بكر -

"আমার অন্তরে আল্লাহ  যে বাতেনী নেয়ামত ঢেলে দিয়েছেন, আমি তা  আবু বকরের অন্তরে ঢেলে  দিলাম।" সে কারণে তাঁর থেকে দু'টি মশহুর তরিকা বের  হয়েছে। একটি হচ্ছে তরিকায়ে নক্শবন্দিয়া অন্যটি তরিকায়ে মোজাদ্দেদীয়া। অপরদিকে হযরত আলী (رضي الله عنه) নবীজির চাঁদর গায়ে দিয়ে  নবীজির বিছানায় শুয়ে  মৃত্যু পরীক্ষায়  উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেজন্যে  তিনিও  নবী  করীম [ﷺ]-এঁর ইলমে মারেফাতের প্রধান নেয়ামত  লাভ করেছিলেন এবং তাঁর থেকেও দু'টি প্রধান তরিকা - কাদেরিয়া ও চিশতিয়া বের হয়েছে। তাঁর শানে নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন-
انا مدينة العلم وعلي بابها -
"আমি হচ্ছি যাবতীয় ইলমের শহর, আর আলী হলো সেই শহরের প্রধান দরজা।" (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৬-১২৭; জামেউল  উসুল ৯:৪৭৩/৬৪৮৯; উসুদুল গবাহ্ ৪:২২; তারীখে বাগদাদ ১১:৪৯-৫০; আল বেদায়াহ্ ওয়ান নেহায়া ৭:৩৭২; আল জামেউস্ সাগীর ১:৪১৫/২৭০৫; মেশকাত; أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ، وَ عَلِيٌّ بَابُهَا "আমি হিকমতের গৃহ আর  আলী তার দরজা।"
(সুনানে   তিরমিযী ৫:৬৩৭/৩৭২৩, হিল্লিয়াতুল আউলিয়া  ১:৬৪,    আল জামিউস্ সাগীর ১:৪১৫/২৭০৪)

সে জন্যেই হযরত আলীর (رضي الله عنه) মা'রেফাত বিদ্যা প্রাধান্য পেয়েছে।  তবে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এর ইলমে বাতেনকে ও অস্বীকার করা যাবেনা। যেমন,  শিয়া সম্প্রদায় হযরত আলী (رضي الله عنه) কে ইলমে বাতেনের একমাত্র দরজা বলে আকিদা পোষণ করে থাকে; এটা গলদ। আহলে সুন্নাতের  কেহই হযরত আলী (رضي الله عنه) কে ইলমে বাতেনের একক উৎস বলে দাবী করেনা, বরং প্রধান উৎস বলেন। কেউ একক উৎস বা দরজা দাবী করলে সেও শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত হবে এবং হাদীসের ভূল ব্যাখ্যা করা হবে। বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে (বাবুহা) শব্দটির ব্যাখ্যা করা হয়েছে "বিশেষ ও প্রধান দরজা হিসেবে" একক হিসেবে নয়। কেননা, তাহলে অন্য সাহাবীদের ইলমে বাতেনকে অস্বীকার করা হয়। এটা আহলে সুন্নাতের আকিদার পরিপন্থী ও  বাস্তবের বিপরীত। (মেশকাত এবং মেশকাত হাশিয়া)

যা  হোক - হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) নবী করীম [ﷺ]-কে নিয়ে গুহায় প্রবেশ করার সাথে সাথে "উম্মে গায়লান" নামক এক লতা বৃক্ষ অন্যস্থান থেকে এসে গুহার মূখ ঢেকে ফেললো। মাকড়সা এসে জাল বুনলো এবং এক জোড়া কবুতর এসে বাসা বাঁধলো এবং ডিম পাড়লো। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) যে ছিদ্রে পা রেখেছিলেন, তার ভিতর ছিল একটি সাপ। এই সাপটি এক হাজার বছর ধরে নবীজীর দীদারের আশায় এই  গুহায় অবস্থান করছিল। সাপটি ছিল আশেকে রাসূল! সাপটি তিন বার ফোঁস ফোঁস করে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) কে  পা সরিয়ে নিতে হুশিয়ারী দিচ্ছিল। অবশেষে সাপটি আবু বকরের  পায়ে দংশন করলো। সর্পবিষ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়লো। এমতাবস্থায়ও তিনি নড়াচড়া  করলেন  না-  নবী  করীম  [ﷺ]-এঁর আরামের ব্যাঘাত হবে মনে করে। হঠাৎ করে তাঁর দু'ফোটা তপ্ত অশ্রু নবী করীম [ﷺ]-এঁর পবিত্র  চেহারায় ঝড়ে পড়লো।   অমনি   নবী   করীম  [ﷺ]-এঁর ধ্যান ভঙ্গ হলো। জিজ্ঞেস করলেন, আবু বকর! কি হয়েছে? আবু বকর বললেন, সাপে  দংশন  করেছে।  নবী  করীম  [ﷺ] একটু থুথু মোবারক দংশিত স্থানে মালিশ করে দিলেন। সাথে সাথে বিষক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলো। আশেকের বিচার করা কি সম্ভব? সাড়ে বার বৎসর পর যখন হযরত আবু  বকর (رضي الله عنه)-এঁর ইনতিকালের অসুখ দেখা দিল, তখন সাপের পুরানো বিষ পুনরায় ক্রিয়াশীল হলো। এভাবে তিনি শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করলেন। আল্লামা আব্দুল গনি নাবলুসী (র:) 'হাদিকা' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আবু বকরের মৃত্যু ছাওর গুহায় অবধারিত ছিল, নবী করীম [ﷺ] তাঁকে  সাড়ে বার বৎসর পিছিয়ে  দিলেন।  এটা  নবী  করীম  [ﷺ]-এঁর  বিশেষ মো'জেযা ও ইখতিয়ার। শিফা শরীফে কাযী আয়ায (রহ:) উল্লেখ করেছেন-  "আল্লাহ  পাক  নবী  করীম  [ﷺ]-কে মউতের উপর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন।   আমরা  মউতের নিয়ন্ত্রণাধীন, কিন্তু  মউত  হচ্ছে নবী  করীম [ﷺ]-এঁর  ইখতিয়ারাধীন।  পাহাড়-পর্বত, আসমান-জমিন,  বেহেস্ত-দোযখ, চন্দ্র-সূর্যকে নবী  করীম [ﷺ]-এঁর নিয়ন্ত্রণাধীন করে রেখেছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।"
ان الله  جعل الشمس والقمر والسماء والأرض والجبال مطيعا للنبي  صلى الله عليه وسلم (شفاء قاضى عياض)

অর্থঃ- "আল্লাহ তায়ালা সূর্য, চন্দ্র, আসমান, জমীন, পাহাড়-পর্বত নবী করীম [ﷺ]-এঁর অধীন  ও অনুগত করে দিয়েছেন।" (শেফা কাযী আয়ায)

এদিকে নবী করীম [ﷺ]-এঁর ঘরে ঢুকে কোরাইশ যুবকরা বিছানায় হযরত আলী (رضي الله  عنه)  কে শায়িত দেখে  নবী  করীম [ﷺ] কোথায় গিয়েছেন- তা জিজ্ঞেস করলো। হযরত  আলী [ﷺ]  নির্ভয়ভাবে  উত্তর দিলেন- "কোথায় গিয়েছেন- তা জানিনা। তবে ঘর থেকে বের হয়ে  গেছেন।"  কোরাইশরা চতুর্দিকে অনুসন্ধানের  জন্য  লোক পাঠালো।  উমাইয়া ইবনে খালফ একদল যুবক ও পদরেখা বিশেষজ্ঞ নিয়ে পদচিহ্ন ধরে ছাওর পর্বতে এসে উপস্থিত হলো। এখানে  এসে পদচিহ্ন মুছে গেছে। সবাই অনুমান করলো নিশ্চয়ই এই গুহাতেই নবী করীম [ﷺ] আশ্রয় নিয়েছেন। উমাইয়া ইবনে খালফ বললো, গুহার  মূখে লতা, মাকড়সার জাল আর কবুতরের বাসা দেখা যাচ্ছে। এখানে প্রবেশ করলে তো এসব থাকার কথা নয়। এ বলে সে দলবল  সহ অন্যদিকে ছুটে গেল। এভাবে আল্লাহ তায়ালা আপন হাবীবকে রক্ষা করলেন।

ঐ সময়ে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) নবীজীর জীবনের আশংকায় সন্ত্রস্ত্র  হয়ে পড়েছিলেন। হুযুর পুরনূর [ﷺ]  অটল ও শান্ত স্বরে জবাব দিলেন "চিন্তাগ্রস্ত  হয়োনা - আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন"। (সূরা তাওবা)

[তাফসীরে নাঈমীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, 'আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন'  বাক্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, এই বাক্যটিতে কোন কাল বা সময়ের উল্লেখ নেই। এটি জুমলায়ে ইছমিয়া। সর্বকাল অর্থে এটি  ব্যবহৃত হয়। সুতরাং আল্লাহ সব সময়ই তাঁর রাসূল ও হযরত আবু বকরের সাথে আছেন এবং থাকবেন। (তাফসীরে নাঈমী) ]

সাওর গুহায় আরও দুটি মো'জেযা:-
১) শত্রুরা চলে যাওয়ার পর হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) আরয করলেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি তারা তাদের পায়ের গোঁড়ালীর দিকে  নজর করতো, তাহলে তো আমাদেরকে দেখতে পেতো এবং ধরে ফেলতো"। নবী করীম [ﷺ] বললেন- لو جاؤونا من هنا  لذهبنا الى ههنا "তাঁরা এখান দিয়ে আসলে আমরা ওখান  দিয়ে চলে যেতাম"। একথা বলেই গুহার একদিকে ইশারা করলেন। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সেখানে  গিয়ে দেখেন- বিরাট এক  সমূদ্র দেখা যাচ্ছে। তার তীরে একটি সাজানো নৌকা বাঁধা আছে। এই মো'জেযা  দেখে হযরত আবু বকর (رضي الله  عنه) হতবাক হয়ে গেলেন। (বর্ণনাটি অনেক বড়)

২) আরো  একটি আশ্চর্য্য মো'জেযা তিনি প্রত্যক্ষ করলেন। সাপের বিষে তাঁর পানির পিপাসা লাগলো। নবী করীম [ﷺ]-এঁর কাছে পানির দরখাস্ত  পেশ  করলেন।  নবী  করীম  [ﷺ] গুহার এক দিকে ইশারা করে বললেন, ওখানে গিয়ে পানি পান করে এস। হযরত আবু বকর (رضي الله  عنه) গিয়ে দেখলেন, একটি পানির নহর প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি প্রাণভরে পানি পান করলেন- যা ছিল মধুর চেয়ে মিষ্ট, দুধের চেয়ে সাদা এবং বরফের চেয়েও  ঠান্ডা। কোথা হতে এ নহর প্রবাহিত  হলো- জিজ্ঞাসা করলে নবী   করীম [ﷺ] এরশাদ করলেনঃ-

ان الله أمر الملك الموكل بانهار الجنة ان يخرق نهرا من جنت الفردوس إلى صدر الغار لتشرب يا ابابكر -

"আল্লাহ তায়ালা বেহেস্তের নহরের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে নির্দেশ করেছেন- যেন   জান্নাতুল ফেরদাউস থেকে একটি নহর গুহার মাথায় প্রবাহিত করে দেয়। হে  আবু বকর! তোমাকে  পানি পান করানোর উদ্দেশ্যেই এরূপ করা হয়েছে।"(তাফসীরে রুহুল বয়ান—সূরা তাওবা)

উক্ত ঘটনা দুটি শুনে ঈমানদারের ঈমান আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে এবং বক্রহৃদয়ের লোকদের হৃদয় আরও বাঁকা হবে- এতে  আশ্চর্য হবার কিছু নেই। ইবনে কাছির  তাঁর তাফসীরে এই ঘটনা ও রেওয়ায়াতকে মোনকার   বলেননি। তরিকতে সিদ্দিকিয়াতের মর্তবাধারীগণের   জন্য   নবী  করীম [ﷺ]-এঁর মাধ্যমে গায়েবী নেয়ামত এভাবেই পৌঁছে থাকে। আ'লা হযরত বলেন:-

خالق کل نے آپ  کو مالک کل بنا دیا -دونون جھان ھیں اپکے قبضہ واختيار مین -

"কুল জাহানের সৃষ্টিকর্তা  আপনাকে  সব কিছুর মালিকানাস্বত্ব দান করেছেন, সত্যিই উভয় জাহানই আপনার ইখতেয়ারাধীন। আপনি যাকে যেভাবে ইচ্ছা- দান করতে  পারেন।" তাফসীরে রুহুল মাআনী সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াত "ক্বাদ জাআকুম"- আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন- "নবী করীম [ﷺ] হলেন  মুখতার বা  ইখতিয়ার প্রাপ্ত নবী।" যারা নবীজীকে মুখতার মানবেনা তাঁরা পথভ্রষ্ট।

ঐ মদীনার পথে রে আমার, ঐ মদীনার পথেঃ
তিন রাত্র এভাবে সওর পর্বতের গুহায় অবস্থান করে নবী করীম [ﷺ] হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) কে সাথে নিয়ে মদীনা শরীফের পথে রওয়ানা হলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নবী করীম [ﷺ] কাসওয়া নামক উটে সওয়ার হলেন। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) আরোহণ করলেন আদ্বা নামক উটে। সাথে নিলেন পথপ্রদর্শক হিসেবে আব্দুল্লাহ ইবনে আরিকত নামক  জনৈক অমুসলিম ব্যক্তিকে। হযরত আবু  বকর (رضي الله عنه)-এঁর আশ্রিত গোলাম আমের ইবনে ফোহায়রা পূর্ব নির্দেশ মোতাবেক দুটি উট নিয়ে গারে সাওরে এলেন এবং দ্বিতীয় উটের পিঠে পেছনে আরোহণ করলেন। লোহিত সাগরের উপকূল ধরে তিনজনের এই কাফেলা মদীনার  পথে চললো। বিদায়ের বেলায় নবী করীম [ﷺ] বাইতুল্লাহর দিকে নযর করে বলে উঠলেন –

والله أنك أحب ارض الله إلى والى الله ولولا أن اهلك اخر جوني منك ما خرجت -

"হে পবিত্র  মক্কা! খোদার শপথ! তুমি আমার কাছে এবং  আল্লাহর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় ভূমি। তোমার স্বদেশবাসী যদি আমাকে বাধ্য না করতো, তাহলে আমি তোমায় ছেড়ে যেতাম না!" কত করুণ এ আবেদন!

যতদিন নবী করীম [ﷺ]  মক্কায় অবস্থান করছিলেন- ততদিন মক্কা ভূমিই সর্বশ্রেষ্ট ছিল। হিজরত করার পর মদীনা শরীফের রওযা মোবারকের যে অংশটুকু নবী করীম [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকের সাথে মিশে  আছে- তা বাইতুল্লাহ শরীফ, এমন কি- আরশে আযীম থেকেও উত্তম। চার মাযহাবের  ইমামগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। সুতরাং এটা সর্বসম্মত  ইজমা (ফতোয়ায়ে শামী- যিয়ারত অধ্যায়)। তাবরানী শরীফের একটি হাদীসে নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন- المدينة خير من مكة অর্থঃ-"এখন থেকে মদীনা শরীফ মক্কার চেয়ে উত্তম"('জযবুল ক্বুলূব'-শাইখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ:)।

বকরীর শুকনো বাঁটে দুধের নহরঃ
মদীনা শরীফ গমনকালে পথে তিনটি  আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো। সাওর পর্বত থেকে বের হয়ে নবী করীম [ﷺ] সকাল বেলা সাগর কুল ধরে রওনা দিলেন। পথিমধ্যে কোদাইদ নামক স্থানে উম্মে মা'বাদ  আতিকা নামী  জনৈকা বেদুঈন মহিলার বাড়ীতে  পৌঁছে নবী করীম [ﷺ] কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেন। মহিলার  বাড়ীতে দুধ বা গোস্ত বিক্রি হয় কিনা- জানতে চাইলেন। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলনা। নবী করীম  [ﷺ] তাঁবুতে একটি ক্ষিণকায় ছাগী দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন- এটা দুধ দেয় কিনা? মহিলা বললেন, না। নবী করীম [ﷺ] উক্ত ছাগী দোহন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে মহিলা বললেন, চেষ্টা করে দেখতে পারেন। নবী করীম [ﷺ] পাত্র নিয়ে  ছাগীর দুধের বাঁটে পবিত্র হাত মুবারক লাগানো মাত্র দুধের নহর বইতে শুরু করলো। উপস্থিত লোকজন তৃপ্তি সহকারে উক্ত দুধ পান  করলো। অতঃপর নবী করীম [ﷺ] ও হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) সহ পূর্ণ কাফেলা এ দুধ পান  করে  তৃপ্ত হলেন। নবী   করীম  [ﷺ]-এঁর পবিত্র  হাতের বরকতে পরবর্তীকালে উক্ত ছাগী সব সময় এভাবে দুধ দিতে থাকে। এভাবে আতিকা ও তাঁর স্বামীর অভাব দূর হয়ে গেলো। উক্ত ছাগী হযরত ওমর (رضي الله عنه)-এঁর খেলাফতকাল পর্যন্ত জীবিত ছিল এবং একইভাবে দুধ দিত।  নবী করীম [ﷺ] যার কাছ থেকেই কিছু চেয়ে খেতেন, তাঁর ঘরে বরকতের ঢল নেমে আসতো।  প্রকৃতপক্ষে  নবী  করীম  [ﷺ] কারও ঘরে খেতে যান না- বরং দিতে যান!

পথিমধ্যে আর একজন রাখালের কাছে এমনিভাবে দুধ চাইলে সে বললো, আমার পালে বাচ্চা ওয়ালা কোন ছাগী   নেই। নবী করীম [ﷺ] বাচ্চবিহীন একটি ছাগী এনে দুধ দোহন করে নিজেরা পান করলেন এবং রাখালকেও  দুধ পান করালেন। রাখাল এ মো'জেযা দেখে সাথে সাথে মুসলমান হয়ে গেল। সম্ভবতঃ উক্ত সাহাবী ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)। ('বেদায়া-নেহায়া', ৭ম-খন্ড, ১৫৩ পৃঃ)

জমিন কর্তৃক সুরাকার ঘোড়ার পা গ্রাসঃ
কুদাইদ নামক আর একটি ঘটনা সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ভাবে ঘটে গেলো। সুরাকা ইবনে মালেক কেনানী  নামক জনৈক ব্যক্তি একশত উট পুরষ্কারের লোভে নবী করীম  [ﷺ]-এঁর তালাশে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে লাগলো। আবু জাহল নবী করীম [ﷺ]-কে জীবিত বা মৃত অবস্থায় ধরে আনতে পারলে উক্ত  পুরষ্কার প্রদানের ঘোষণা  দিয়েছিল। সুরাকা নবী করীম [ﷺ] কে দেখে চিৎকার করে বলে  উঠলো- হে মুহাম্মদ [ﷺ],  এবার তোমায় কে রক্ষা করবে? নবী করীম [ﷺ] প্রশান্তভাবে উত্তর দিলেন- يمنعنى الجبار الواحد القهار "শক্তি প্রয়োগকারী ও চরম শাস্তি প্রদানকারী আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন।"

হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) এসে সংবাদ দিলেন, হে আল্লাহর রাসূল  [ﷺ]! আল্লাহ তায়ালা জমিনকে  আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন  করে দিয়েছেন। আপনি জমিনকে যা ইচ্ছা- নির্দেশ করুন! নবী করীম [ﷺ] জমিনকে লক্ষ্য করে বললেনঃ- يا أرض خذيه অর্থাৎ- "হে জমিন, তাকে গ্রাস করো।" সাথে সাথে জমিন সুরাকার ঘোড়ার হাঁটু পর্যন্ত গ্রাস করে ফেললো। সুরাকা কাতর স্বরে বললো, 'আল- আমান' অর্থাৎ- আমাকে রক্ষা করুন! নবী করীম [ﷺ]  পুনরায় জমিনকে নির্দেশ দিলেন:- يا أرض اطلقيه অর্থাৎ- "হে জমিন, তাকে ছেড়ে দাও।" জমিন তাকে ছেড়ে দিল। কিন্তু  সে প্রতিশ্রুতি   ভঙ্গ   করে  নবী  করীম [ﷺ]-কে আবার ধরতে উদ্যত হলে পুনরায় নবী করীম [ﷺ] জমিনকে নির্দেশ দিলেন তাকে গ্রাস করতে। এভাবে সাত বার জমিন তাকে গ্রাস করলো এবং ছাড়লো। এবার সে তাওবা করলে এবং অন্য অনুসন্ধানকারীকে নবী করীম [ﷺ] থেকে ফিরিয়ে রাখার শর্তে  মুক্তি লাভ করে মক্কায় ফিরে আসলো। এসময় নবী করীম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, পারস্য সম্রাট কিসরার কংকনে তাকে কেমন দেখাবে! এটি ছিল নবী করীম [ﷺ]-এর  ইলমে গায়েবের  বহিঃপ্রকাশ। হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর সময়ে পারস্য মুসলমানদের অধিকারে এলে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের সাথে কিসরার কংকন এলে সুরাকা তা পরিধান  করেছিলেন।  আর  তখন  নবী  করীম  [ﷺ]-এর ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে ঘটে গেলো।

উক্ত তিনটি ঘটনায় দুটি আকিদার প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ
একঃ নবী করীম [ﷺ]-কে আল্লাহ তায়ালা গায়েবী ধন ভান্ডারের মালিক বানিয়েছেন। স্রষ্টার  সম্মানে নবী করীম [ﷺ] উপাদান ছাড়া কোন কিছু করতেন না। কোন সামান্য বস্তু বা দ্রব্যকে উপলক্ষ করে তিনি তাতে গায়েবীভাবে প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতেন। যেমন, হযরত জাবের (رضي الله  عنه)-এঁর সামান্য খাসী ও রুটি দিয়ে তিনি দেড় হাজার সাহাবীকে পেট ভর্তি করে খানা খাইয়ে জাবেরের মূল  বকরী ও রুটি ফেরত দিয়েছিলেন। হযরত সালামান ফারসী (رضي الله عنه) ৪০ উকিয়া স্বর্ণমুদ্রা আদায় করার শর্তে তাঁর মনিবের সাথে মুক্তিপণ নির্ধারণ করেছিলেন।  নবী করীম [ﷺ] কবুতরের ডিমের ন্যায় ছোট একখন্ড স্বর্ণ  সংগ্রহ করে উক্ত ৪০  উকিয়া বা ১৬০০(ষোল শত) দীনার আদায় করে দিলেন। উক্ত সামান্য পরিমাণ স্বর্ণ ওজন  করা  হলে ষোলশত স্বর্নমুদ্রার সমান হয়ে গেলো।

হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)  কর্তৃক জঙ্গে তাবুকের সময় সংগৃহীত ২১টি খুরমা দিয়ে নবী করীম [ﷺ] তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ত্রিশ হাজার লোককে খাওয়ানোর  পর উক্ত ২১টি খুরমা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)-কে ফেরত দিয়ে বললেন- "থলের মূখ না খুলে দু-হাত দিয়ে প্রয়োজনীয় খুরমা বের করে খাবে  এবং   বন্ধু-বান্ধব ও ফকির-মিছকিনকে খাওয়াবে।"  নবীজীর কথামত হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) উক্ত খুরমা ৯ হিজরী থেকে ৩৫ হিজরী পর্যন্ত নিজে খেয়েছেন এবং বন্ধু-বান্ধব ও ফকির-মিছকিনকে বিলিয়েছেন। হযরত ওসমান (رضي الله عنه) যেদিন শহীদ হন, সেদিন উক্ত থলেটি লুট হয়ে যায়। হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) বলেন, "আমি উক্ত ২৬ বৎসরে আনুমানিক ১২০০ (বার শত) মণ খুরমা নিজে খেয়েছি এবং ৩০০ (তিন শত) মণ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছি।" এই যে খুরমা তিনি খেলেন এবং খাওয়ালেন- এগুলো কোন বৃক্ষের খেজুর? নবী করীম [ﷺ]-এঁর পবিত্র হাতের ছোঁয়ায়ই আল্লাহ তায়ালা গায়েবীভাবে বরকত  দিয়েছেন। (তরজুমআনুস্ সুন্নাহ ও যিকরে জামীল গ্রন্থদ্বয় দ্রষ্টব্য)।

উম্মে মা'বাদ-এঁর ছাগী ও  রাখালের ছাগ-পালের শুকনো বাঁটে দুধের নহর প্রবাহিত হওয়াও  অনুরূপ মো'জেযা। নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ اوتيت  مفاتيح خزائن الأرض অর্থাৎ: "আমাকে জমিনের যাবতীয় ধন ভান্ডারের চাবি প্রদান করা হয়েছে।" [সহীহ  বুখারীঃ ৩৩৪১ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), মেশকাত]

ইমামে আহলে সুন্নাত আ'লা হযরত আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله عليه) লিখেছেন—

ھاتھ جس طرف اٹھا غنی کر دیا + موج بحر سخاوت پہ لاکھون سلام -

অর্থাৎঃ- "হুযুর [ﷺ]-এঁর পবিত্র হাত যে  দিকেই উঠেছে- তাকে ধনী বানিয়ে দিয়েছে। বদন্যতা সমুদ্রের তরঙ্গ সদৃশ এমন হাতের প্রতি লক্ষ লক্ষ সালাম।" (খাদায়েকে বখশিষ)

[সুরাকার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহর এই জমিন  নবী  করীম [ﷺ]-এঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি জমিনকে যখন যে হুকুম করেন, জমিন তা পালন করে। শুধু জমিন কেন- আকাশের চাঁদ হুযুরের ইশারায় এদিক-সেদিক হেলে দুলে তাঁর সাথে খেলাধুলা করতো এবং কথা  বলতো। গ্রন্থের শুরুতে  হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)-এঁর  এ সম্পর্কিত রেওয়ায়াত বর্ণনা করা হয়েছে। মক্কায় আবু জাহল কর্তৃক আকাশের চাঁদ বিদীর্ণ করার চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় চাঁদকে দু'টুকরো করে দেখিয়েছেন। ৭ম হিজরীতে খায়বারের যুদ্ধ হতে ফেরত আসার সময় পথিমধ্যে সাহবা নামক স্থানে আকাশের ডুবন্ত সূর্যকে পুনরায় ফিরিয়ে এনে হযরত আলী (رضي الله عنه) কে আসরের  নামায  আদায় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه), হযরত আনাস (رضي الله عنه) ও হযরত  আসমা বিনতে ওমায়েছ (رضي الله عنها) কর্তৃক উক্ত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। সালতানাতে মুস্তাফা নামক গ্রন্থে মুফতী আহমদ ইয়ার  খান নাঈমী (রহ:) বিস্তারিতভাবে নবীজীর বিভিন্ন কর্তৃত্বের ঘটনা লিখেছেন।

Top