মসজিদ সুবাশিত রাখুন (মসজিদের আদব)
একবার নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ মসজিদে নববী শরীফের ﺯَﺍﺩَﻫَﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﺷَﺮَﻓًﺎ ﻭَّﺗَﻌْﻈِﻴْﻤًﺎ কিবলার দিকে কফ পড়ে থাকতে দেখে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন।
তা দেখে এক আনসারী সাহাবীয়া ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ উঠলেন এবং তা পরিস্কার করে সেখানে সুগন্ধি লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ আনন্দচিত্তে ইরশাদ করলেন: ﻣَﺎ ﺍَﺣْﺴَﻦَ ﻫٰﺬﺍ অর্থাৎ এই মহিলা কতইনা উত্তম কাজ করলো। (নাসাঈ, ১২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৭২৫)
সায়্যিদুনা ফারুকে আযম ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ প্রতি জুমা মোবারকে মসজিদে নববী শরীফে ﺯَﺍﺩَﻫَﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﺷَﺮَﻓًﺎ ﻭَّﺗَﻌْﻈِﻴْﻤًﺎ সুগন্ধির ধোঁয়া দিতেন। (মুসনদে আবি ইয়ালা, ১ম খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ১৮৫)
ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ
উম্মুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ বর্ণনা করেন: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসূলুল্লাহ্ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মাণের ও সেগুলো পরিস্কার এবং সুবাসিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (সুনানে আবি দাউদ, ১ম খন্ড, ১৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৪৫৫)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! জানা গেলো, মসজিদকে উদ, লুবাণ ও আগর বাতি ইত্যাদি দ্বারা সুগন্ধময় রাখা সাওয়াবের কাজ। কিন্তু মসজিদে এমন দিয়াশলাই জ্বালাবেন না, যা থেকে বারুদের দূর্গন্ধ বের হয়। কেননা, মসজিদকে দূর্গন্ধ থেকে রক্ষা করা ওয়াজীব। বারুদের গন্ধযুক্ত ধোঁয়া যেন মসজিদের ভিতর আসতে না পারে এমন দূরে বাইরে থেকে লুবাণ বাতি, আগরবাতি বা মোম ইত্যাদি জ্বালিয়ে মসজিদে আনবেন। আগরবাতীকে বড় কোন থালাতে রাখতে হবে। যাতে তার ছাই মসজিদের ফ্লোর, কার্পেট ইত্যাদিতে না পড়ে। আগর বাতির প্যাকেটে যদি কোন প্রাণীর ছবি থাকে তবে তা ঘষে তুলে নিন। মসজিদ (এমনকি ঘর এবং গাড়ি ইত্যাদিতে) এয়ার ফ্রেশনারের (AIR FRESHENER)) মাধ্যমে সুগন্ধ ছড়াবেন না। এতে রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে যায় এবং শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছে ক্ষতি হয়। ডাক্তারের এক গবেষণা মতে, এয়ার ফ্রেশনারের ব্যবহারের কারণে স্কীন ক্যান্সার হতে পারে। যেখানে নিয়ম প্রচলিত আছে, সেখানে মসজিদের চাঁদা থেকে সুগন্ধি লাগানোর অনুমতি রয়েছে এবং যেখানে এই নিয়ম প্রচলিত নেই সেখানে সুগন্ধির জন্য আলাদা চাঁদা করুন।
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! ক্ষুধার চেয়ে কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন অর্থাৎ খাওয়ার চাহিদা বাকি থাকাবস্থায় হাত গুটিয়ে নিন। যদি ইচ্ছামত পেট ভরে খেতে থাকেন এবং সময়ে অসময়ে শিক কাবাব, বার্গার, আলুর চপ, পিজা, আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয় ইত্যাদি পেটে দিতে থাকেন তবে পেট খারাপ হবে এবং আল্লাহ্ না করুন যদি মুখথেকে দূর্গন্ধ আসার রোগ সৃষ্টি হয় তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। কেননা, মুখ থেকে দূর্গন্ধ বের হলে মসজিদে প্রবেশ করা হারাম। এমনকি যে সময় মুখে দূর্গন্ধ আসতে শুরু করে তখন জামাআত সহকারে নামায আদায়ের জন্যও মসজিদে আসা গুনাহ্। যেহেতু আখিরাতের চিন্তা কম হওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষের খাবারের প্রতি লোভ বেড়ে যায় আর আজকাল চারিদিকে চলছে ফুড কালচারের যুগ, এজন্য কিছু মানুষ আছে যাদের মুখ থেকে দূর্গন্ধ আসে। আমার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে, যখন কিছু মানুষ মুখ কাছে এনে কথা বলে তখন তার মুখের দূর্গন্ধের কারণে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখতে হয়। অনেক সময় ইমাম ও মুয়াজ্জিনদেরও ঐ রোগ হয়ে যায়। এ রকম হলে তার দ্রুত ছুটি নিয়ে চিকিৎসা করানো দরকার। কেননা, মুখে দূর্গন্ধ থাকা অবস্থায় মসজিদের ভিতর প্রবেশ করা হারাম। আফসোস! দূর্গন্ধযুক্ত মুখ নিয়ে কিছু লোক আল্লাহর পানাহ! মসজিদে ইতিকাফকারীও হয়ে যায়। মনে রাখবেন! শরীয়াতের নির্দেশ হলো যে, যদি ইতিকাফ চলাবস্থায়ও মুখের দূর্গন্ধ রোগ হয়ে যায় তবে ইতিকাফ ভেঙ্গে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাবে। পরে একদিনের ইতিকাফ কাযা করে নিবে। রমযানুল মোবারক মাসে কাবাব, সমুচা ও অন্যান্য তৈলাক্ত রকমারী খাবার পেট ভরে খুব বেশি করে খাওয়ার কারণে মুখের দূর্গন্ধ জাতীয় রোগ বৃদ্ধি পায়। তার উত্তম চিকিৎসা হচ্ছে, সাধারণ খাবার, তাও চাহিদার চেয়ে কম খাওয়া এবং হজম শক্তি ঠিক রাখা। তাছাড়া যখনই আহার শেষ হবে, তখন খিলাল করা ও ভালভাবে কুলি করে মুখ পরিস্কার রাখার অভ্যাস গড়ুন, অন্যথায় খাবারের অংশ বিশেষ দাঁতের ফাঁকে রয়ে যাবে, যা পঁচে দূর্গন্ধ সৃষ্টি করবে। শুধু মুখের দূর্গন্ধ নয় বরং যাবতীয় দূর্গন্ধ থেকে মসজিদকে মুক্ত রাখা ওয়াজীব।
ফতোওয়ায়ে রযবীয়ার ৭ম খন্ডের ৩৮৪ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে; মুখে দূর্গন্ধ থাকাবস্থায় (ঘরে আদায়কৃত) নামাযও মাকরূহ। আর এমতাবস্থায় মসজিদে যাওয়া হারাম, যতক্ষণ পর্যন্ত মুখ পরিস্কার করা না হয়। আর অপর নামাযীকেও কষ্ট দেয়া হারাম। আর অন্য নামাযী না থাকলেও দূর্গন্ধের কারণে ফেরেশতাদের কষ্ট হয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে: যেই সব জিনিস দ্বারা মানুষ কষ্ট পায় এতে ফেরেশতারাও কষ্ট পায়। (সহীহ মুসলিম, ২৮২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৫৬৪)
আমার আক্বা আ‘লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বর্ণনা করেন: “যার শরীরের দূর্গন্ধের কারণে (অপরাপর) নামাযীদের কষ্ট হয় যেমন; মুখ থেকে দূর্গন্ধ বের হওয়া, বগল থেকে দূর্গন্ধ ছড়ানো, ঘা, খোশপাঁচড়ার কারণে গন্ধক মালিশ করা বা অন্য কোন দূর্গন্ধযুক্ত মলম বা লোশন লাগায় তাকেও মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন।” (সংশোধিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৮ম খন্ড, ৭২ পৃষ্ঠা)
কাঁচা মূলা, কাঁচা পিয়াজ, কাঁচা রসুন ও ঐ সমস্ত জিনিস যার গন্ধ অপছন্দনীয়, সেগুলো খেয়ে মসজিদে ততক্ষণ পর্যন্ত যাওয়া জায়েজ নেই যতক্ষণ পর্যন্ত হাত, মুখ ইত্যাদিতে গন্ধ অবশিষ্ট থাকে। কেননা, এর দ্বারা ফেরেশতাদের কষ্ট হয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: প্রিয় আক্বা, উভয় জাহানের দাতা, রাসূলুল্লাহ্ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি পিয়াজ, রসুন বা গিনদানা (রসুনের মতো এক তরকারী) খেয়েছে, সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তীও না আসে।” (সহীহ মুসলিম, ২৮২ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৫৬৪)
আরো ইরশাদ করেন: “যদি খেতেই চাও তবে রান্না করে তার গন্ধ দূর করে নাও।’ (আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ৫০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৩৮২৭)
সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বর্ণনা করেন: মসজিদে কাঁচা রসুন ও পিয়াজ খাওয়া বা খেয়ে যাওয়া জায়িজ নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত দূর্গন্ধ অবশিষ্ট থাকে এবং একই হুকুম ঐ সমস্ত জিনিসের ব্যাপারে যেগুলোতে গন্ধ হয় যেমন- “গিন্দানা” (এটা রসূনের মতো তরকারী), মূলা, কাঁচা মাংস, কেরোসিন, ঐ দিয়াশলাই যাতে ঘষা দিলে গন্ধ ছড়ায়, বায়ু বের করা ইত্যাদি। যার মুখ থেকে দূর্গন্ধ বের হওয়ার রোগ আছে বা কোন দূর্গন্ধযুক্ত ক্ষত থাকে বা দূর্গন্ধযুক্ত কোন ঔষধ লাগালো, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত দূর্গন্ধ চলে না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তার মসজিদে আসা নিষেধ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৬৪৮ পৃষ্ঠা) কাঁচা মাংস ইত্যাদি পবিত্র বস্তু যদি এমন ভাবে প্যাকিং করা হয় যে, এর থেকে সামান্যতমও গন্ধ বের হচ্ছে না, তবে এরূপ বস্তু নিয়ে মসজিদে গেলে সমস্যা নাই।
কাঁচা পিয়াজ বিশিষ্ট চনা, দধির তৈরী বিশেষ আচার এবং কাঁচা পিয়াজ বিশিষ্ট ভর্তা এমনকি কাঁচা রসূনের আচাঁর ও চাটনি ইত্যাদি নামাযের সময় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অনেক সময় কাবাব চমুচা ইত্যাদিতেও কাঁচা পিয়াজ ও কাঁচা রসুনের গন্ধ অনুভুত হয়, এজন্য নামাযের আগে এগুলোও খাবেন না। এমন গন্ধযুক্ত খাবার মসজিদে আনারও অনুমতি নেই।
মুসলমানের ইজতিমায় সুগন্ধি ছড়ানোর নিয়্যতে আগর বাতি ইত্যাদি জ্বালানো সাওয়াবের কাজ। যদি লুবান বা আগরবাতির ধোঁয়ায় কারো সমস্যা হয় তবে সুগন্ধি জ্বালাবেন না, এভাবে সমাবেশে অতিরিক্ত গোলাপ জল (সুগন্ধি পানি) ছিটানো থেকেও বাঁচুন। কেননা, সাধারণত এতে লোকেরা বিরক্ত হয়।
প্রসিদ্ধ মুফাসসীর, হাকীমূল উম্মত, হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বর্ণনা করেন: মুসলমানদের সমাবেশে, দরসে কুরআনের মজলিশে, ওলামায়ে কিরাম ও আউলিয়ায়ে কামিলিনের দরবারে দূর্গন্ধযুক্ত মুখ নিয়ে যাবেন না। তিনি আরো বলেন: যতক্ষণ পর্যন্ত মুখে দূর্গন্ধ থাকবে ততক্ষণ ঘরেই থাকুন। মুসলমানের সভা সমাবেশে যাবেন না। হুক্কা পানকারী, তামাক পাতা যুক্ত পান খেয়ে যারা কুলী করেন না এর থেকে তাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। ফোকাহায়ে কিরাম ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ বর্ণনা করেন: যার মুখে দূর্গন্ধের রোগ আছে, তার মসজিদে উপস্থিত হওয়া ক্ষমাযোগ্য। (মিরাতু মানাজিহ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৫,২৬ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন : মুখের দূর্গন্ধ বিশিষ্ট লোকের মসজিদে উপস্থিত হওয়া ক্ষমাযোগ্য। তাহলে কাঁচা পিয়াজ বিশিষ্ট আচার, চাটনি ইত্যাদি বা এমন কাবাব সমুচা যাতে পিয়াজ রসুন ভালভাবে রান্না করে দেয়া হয় না, যার কারণে ওগুলোর গন্ধ ছড়ায়, বা ঐ (শস্যদানার) রুটি যেখানে কাঁচা রসুন দেয়া হয় এই ধরণের খাবার জামাআতের কিছুক্ষণ পূর্বে এই নিয়্যতে খেল, যেন মুখ দূর্গন্ধ হয়ে যায়, যার কারণে জামাআত ওয়াজীবই হবে না! তার হুকুম কি?
উত্তর : এ রকম করা জায়েজ নেই। যেমন-যেখানে ইশার জামাআত প্রথম ওয়াক্তেই আদায় করা হয়, সেখানে মাগরিবের নামাযের পর এমন আচার বা সালাদ খাবেন না যাতে কাঁচা মূলা, বা কাঁচা পিয়াজ বা কাঁচা রসুন থাকে। কেননা, এতে দ্রুত মুখ পরিস্কার করে মসজিদে যাওয়াও কষ্টকর। তবে হ্যাঁ, দ্রুত মুখ পরিস্কার করা যদি সম্ভব হয় বা অন্য কোন কারণে মসজিদের উপস্থিতি রহিত হয় যেমন-মহিলা, বা নামাযের এখনো যথেষ্ট দেরী আছে, নামাযের সময় আসার পূর্বে গন্ধ চলে যাবে তাহলে খাওয়াতে কোন ক্ষতি নেই। আমার আক্বা আ‘লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বর্ণনা করেন: কাঁচা পিয়াজ, রসুন খাওয়া নিঃসন্দেহে জায়েয (হালাল)। কিন্তু তা খেয়ে গন্ধ না যাওয়া পর্যন্ত মসজিদে যাওয়া নিষেধ। কিন্তু যে সমস্ত হুক্কা এমন গাঢ় যে, আল্লাহ্ তাআলার পানাহ! দূর্গন্ধ বেশীক্ষণ অবশিষ্ট থাকে, জামাআতের সময় কুলি করলেও পুরোপুরি দূর্গন্ধ যায় না। তাহলে জামাআতের পূর্বে তা পান করা শরীয়াত মতে জায়িয নেই। যেহেতু তা জামাআত ছেড়ে দেয়া বা সিজদা তরক করা বা দূর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশের কারণ বলে গণ্য হচ্ছে। আর এই দুটি কাজই নাজায়িজ ও নিষিদ্ধ। আর (এটা শরয়ী নিময় যে) প্রত্যেক মুবাহ কাজ (তথা ঐ সমস্ত কাজ যা মূলত জায়েজ) যদি নিষিদ্ধ কাজের দিকে ধাবিত করে এমন কাজ করা নিষেধ ও অবৈধ। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৫তম খন্ড, ৯৪ পৃষ্ঠা)
“ফতোওয়ায়ে ফযযুর রাসূল” এর ২য় খন্ডের ৫০৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে; হুক্কা, বিড়ি, সিগারেট পান করা এবং (কাঁচা) রসূন ও পিয়াঁজের মতো বস্তু খাওয়ার সময় এবং নাপাকীর স্থানে ﺑِﺴۡﻢِ ﺍﻟﻠّٰﮧِ পাঠ করা মাকরূহ।
যদি মুখে দূর্গন্ধ হয় তাহলে যতবার মিসওয়াক ও কুলি দ্বারা সেই দূর্গন্ধ দূর করা সম্ভব ততবার কুলি ইত্যাদি করে তা দূর করা আবশ্যক। এর জন্য কোন সীমা নির্ধারণ নেই। দূর্গন্ধযুক্ত গাঢ় হুক্কা পানকারীদের তা অবশ্যই স্মরণ রাখা উচিত। এর চেয়ে আরো বেশি স্মরণ রাখতে হবে তাদেরকে যারা সিগারেট পান করে যেহেতু তার দূর্গন্ধ তামাকের চেয়ে আরো অনেক বেশি ও দূর্গন্ধ বেশীক্ষণ স্থায়ী। আর এই সমস্ত কথা আরো বেশি মনে রাখতে হবে ঐ সমস্ত তামাক ভক্ষণকারীদেরকে, যারা ধোঁয়ার পরিবর্তে সরাসরি তামাক পাতা চিবিয়ে চিবিয়ে খায়। আর নিজের মুখ দূর্গন্ধে ভরে রাখে। এই সকল ব্যক্তিরা ততক্ষণ পর্যন্ত মিসওয়াক ও কুলি করবে যতক্ষণ না মুখ পরিপূর্ণ পরিস্কার হয়ে যায় এবং গন্ধের নাম নিশানাও না থাকে। আর (গন্ধ আছে কি না) তা পরীক্ষা এইভাবে করুন, হাত নিজ মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে মুখ খুলে কন্ঠনালী থেকে জোরে জোরে তিনবার হাতে শ্বাস নিন এবং তা সাথে সাথে শুকে নিন। এছাড়া তার ভিতরের দূর্গন্ধ নিজের খুব কমই অনুভুত হয়। আর যদি মুখে দূর্গন্ধ হয় তবে মসজিদে যাওয়া হারাম, নামাযে শরীক হওয়া নিষিদ্ধ। আল্লাহ্ই হেদায়েতদানকারী। (সংশোধিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৬২৩ পৃষ্ঠা)
যদি কোন কিছু খাওয়ার কারণে মুখে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয় তবে কাঁচা ধনিয়া চিবিয়ে খেয়ে নিন। এছাড়া গোলাপের তাজা অথবা শুকনো পাপড়ি দ্বারা দাঁত মাঁজুন ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ উপকার হবে। আর যদি পেটের সমস্যার কারণে দূর্গন্ধ আসে, তাহলে কম খাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে ক্ষুধার বরকত অর্জনের মাধ্যমে ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ পা এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যথা, বুকের জ্বালা-পোড়া, মুখের চামড়া খসা, বার বার সর্দি কাশি হওয়া এবং গলা ব্যথা, মাড়ীতে রক্ত আসা ইত্যাদি সহ অনেক রোগের সাথে মুখের দূর্গন্ধও চলে যাবে। ক্ষুধা অবশিষ্ট রেখে খাওয়াতে ৮০ ভাগ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। (বিস্তারিত জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাতের অধ্যায় ‘পেটের কুফলে মদীনা’ অধ্যয়ন করুন) যদি নফসের লোভের চিকিৎসা হয়ে যায় তাহলে অনেক শারীরিক ও মানসিক রোগ এমনিতেই চলে যাবে।
রযা নফসো দুশমন হে দমমে না আ-না,
কাহা তুমনে দেখে হে চান্দারানে ওয়ালে।
(হাদায়িকে বখশীশ শরীফ)
মুখের দূর্গন্ধের মাদানী চিকিৎসা
ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺻَﻞِّ ﻭَﺳَﻠِّﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟﻄَّﺎﻫِﺮ
উল্লেখিত দরূদ শরীফটি সময় সুযোগ মত এক নিশ্বাসে ১১বার পড়ে নিন। ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ মুখের দূর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে। একই নিঃশ্বাসে পড়ার উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, মুখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে শুরু করুন। যথাসাধ্য ফুসফুসে বাতাস জমা করে নিন। এবার দরূদ শরীফ পড়তে শুরু করুন। কয়েকবার এইভাবে চেষ্টা করলে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার পূর্বে পরিপূর্ণ ১১বার দরূদ শরীফ পড়ার অভ্যাস হয়ে যাবে। উল্লেখিত পদ্ধতিতে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে যথাসাধ্য শ্বাস ধরে রেখে মুখ দিয়ে বের করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সারাদিন যখনই সুযোগ হয় বিশেষতঃ খোলা ময়দানে দৈনিক কয়েকবার এই রকম করা দরকার। আমাকে (সগে মদীনা ( ﻋُﻔِﻰَ ﻋَﻨْﻪُ ) এক বয়স্ক অভিজ্ঞ হাকীম সাহেব বলেছেন: আমি নিঃশ্বাস নেওয়ার পর আধঘন্টা পর্যন্ত (অথবা) ২ ঘন্টা পর্যন্ত নিঃশ্বাসকে ধরে রাখি এবং ঐ সময় নিজের ওযীফা পাঠ করে নিই। ঐ হাকীম সাহেবের কথা মতে শ্বাস বন্ধকারী এমন এমন অভিজ্ঞ পরীক্ষিত মানুষ দুনিয়াতে রয়েছে, যারা সকালে শ্বাস নিয়ে সন্ধ্যায় বের করেন।
আ‘লা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এর দরবারে প্রশ্ন করা হয়: নামাযীদের জন্য ইস্তিঞ্জাখানা মসজিদ থেকে কতটুকু দূরে তৈরী করা উচিৎ? এর উত্তরে আমার আক্বা আ‘লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: মসজিদকে দূর্গন্ধ থেকে রক্ষা করা ওয়াজীব। এজন্য মসজিদে কেরোসিন তেল জ্বালানো হারাম। মসজিদে দিয়াশলাই (অর্থাৎ দূর্গন্ধযুক্ত বারুদ বিশিষ্ট ম্যাচের কাঠি) জ্বালানো হারাম। এমনকি হাদীস পাকে বর্ণিত রয়েছে: মসজিদে কাঁচা মাংস নিয়ে যাওয়া জায়েজ নেই। (ইবনে মাজাহ্, ১ম খন্ড, ৪১৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৭৪৮)
অথচ কাঁচা মাংসের দূর্গন্ধ খুবই হালকা। অতএব যেখান থেকে মসজিদে দূর্গন্ধ পৌঁছে সেখান পর্যন্ত টয়লেট, প্রস্রাবখানা তৈরী করাতে নিষেধ করা হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১৬তম খন্ড, ২৩২ পৃষ্ঠা)
কাঁচা মাংসের গন্ধ হালকা হয়ে থাকে। এরপরও যেহেতু মসজিদে তা নিয়ে যাওয়া জায়েজ নেই সেহেতু কাঁচা মাছ নিয়ে যাওয়া আরো বেশি না জায়েজ হবে। কেননা, তার গন্ধ মাংসের চেয়ে বেশি গাঢ় হয়ে থাকে। বরং কোন কোন সময় রান্নাকারীর অসতর্কতার কারণে মাছের তরকারী খাওয়ার পর হাত ও মুখ খুবই দূর্গন্ধময় হয়ে যায়। এ অবস্থায় গন্ধ দূর না করে মসজিদে যাবেন না। যখন প্রস্রাবখানা পরিস্কার করা হয় তখন যথেষ্ট দূর্গন্ধ ছড়ায় এজন্য (শৌচাগার ও মসজিদের মধ্যে) এতটুকু দূরত্ব রাখা দরকার, যাতে পরিস্কার করার সময়ও মসজিদে দূর্গন্ধ প্রবেশ না করে। প্রস্রাবখানা মসজিদের বাউন্ডারীতে করতে হলে প্রয়োজনে দেয়াল ভেঙ্গে বাইরের দিকে দরজা করেও মসজিদকে দূর্গন্ধ মুক্ত রাখা যায়।
মসজিদে দূর্গন্ধ নিয়ে যাওয়া হারাম। এমনকি দূর্গন্ধ বিশিষ্ট লোকের প্রবেশ করাও হারাম। মসজিদে কোন খড়-খুটা দিয়ে খিলাল করবেন না, কারণ; প্রত্যেকবার খাওয়ার পর নিয়মিত ভাবে খিলাল করায় যে অভ্যস্থ নয়, তার দাঁত খিলাল করাতেও দূর্গন্ধ বের হয়। ইতিকাফকারী মসজিদের বারান্দায়ও এতুটুকু দূরে গিয়ে খিলাল করবে যাতে মসজিদের মূল অংশে দূর্গন্ধ না পৌছে। দূর্গন্ধযুক্ত ক্ষত নিয়ে অথবা এমন রোগী যার প্রস্রাব বা পায়খানার (Urine bag & Stool bag) ব্যাগ লাগানো আছে এমন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে না, এমনি ভাবে ল্যাবরেটরি টেষ্ট করার জন্য নেওয়া রক্ত বা প্রস্রাবের শিশি, যবেহ করার সময় যবেহকৃত পশুর বের হওয়া রক্তে রঞ্জিত পোশাক ইত্যাদিও কোন বস্তু দ্বারা ঢেকে মসজিদের ভিতর নেয়া যাবে না।
যেমনিভাবে- ফোকাহায়ে কিরাম ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ বলেন: মসজিদে নাপাকী নিয়ে যাওয়া যদিও তা দ্বারা মসজিদ দুষিত না হয় অথবা যার শরীরে নাপাকী লেগেছে তার মসজিদে যাওয়া নিষেধ। (রদ্দে মুহতার, ২য় খন্ড, ৫১৭ পৃষ্ঠা)
মসজিদে কোন পাত্রে প্রস্রাব করা অথবা রক্ত নেওয়াও (যেমন টেষ্ট করানোর জন্য সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নেয়া) জায়িয নেই। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫১৭ পৃষ্ঠা) পাক দূর্গন্ধ যদি লুকায়িত থাকে যেমন অধিকাংশ লোকের শরীরে ঘামের দূর্গন্ধ হয়ে থাকে কিন্তু তা পোষাকের কারণে ঢেকে থাকে এবং অনূভব হয় না, তাহলে এমতাবস্থায় মসজিদের ভিতর প্রবেশ করাতে কোন ক্ষতি নেই। একইভাবে যদি রুমালে ঘাম ইত্যাদির দূর্গন্ধ হয় যেমন গরমে মুখের ঘাম পরিস্কার করার দ্বারা অনেক সময় হয়ে থাকে, তাহলে তা মসজিদে বের করবেন না, পকেটের মধ্যেই রাখবেন। ইমামা (পাগড়ী) অথবা টুপি মাথা থেকে খুলে রাখার দ্বারা যদি ঘাম অথবা ময়লা, খুশকী ইত্যাদির দূর্গন্ধ আসে তবে তা মসজিদে খুলবেন না। সুতরাং এরূপ উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রসিদ্ধ মুফাসসীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: হ্যাঁ, তবে যদি কোন উপায়ে কেরোসিন তেলের দূর্গন্ধ দূর করা যায় অথবা এমন ভাবে ল্যাম্প, বাতি ইত্যাদিতে আবদ্ধ করা যায় যাতে এর দূর্গন্ধ না ছড়ায়, তবে তা মসজিদে আনা জায়িয। (ফতোওয়ায়ে নঈমীয়া, ৪৯ পৃষ্ঠা)
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, নিজের মুখ, শরীর, পোশাক, রুমাল এবং জুতা ইত্যাদির প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি রাখা, যাতে এর কোন কিছু থেকে দূর্গন্ধ না আসে। আর এমন ময়লা যুক্ত কাপড় পরিধান করে মসজিদে আসবে না, যা দেখে লোকদের ঘৃনা আসে। আফসোস! আমরা দুনিয়ার বড় বড় অফিসারদের সাথে দেখা করার সময় উন্নতমানের দামী পোশাক পরিধান করি কিন্তু আমাদের প্রিয় মাওলা আল্লাহ্ তাআলার দরবারে উপস্থিত হওয়ার সময় অর্থাৎ নামাযে পবিত্রতা, সৌন্দর্যতার প্রতি কোন গুরুত্ব দিই না। মসজিদে আসার সময় মানুষের কমপক্ষে ঐ পোশাক পরিধান করা উচিত, যা কোন অনুষ্ঠানে পরিধান করে যায়, সর্বোপরি এটা খেয়াল রাখতে হবে, পোশাক যেন শরীয়াত ও সুন্নাত অনুযায়ী হয়।
তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবূয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেছেন: “মসজিদকে শিশু ও পাগল, বেচা-কেনা এবং ঝগড়া-বিবাদ, উচ্চস্বরে আওয়াজ করা ও শরয়ী শাস্তি প্রয়োগ করা ও তলোয়ারের আঘাত থেকে বাঁচাও।” (ইবনে মাযাহ, ১ম খন্ড, ৪১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৭৫০)
এমন শিশু যার নাপাকীর (অর্থাৎ প্রস্রাব ইত্যাদি করে দেয়ার) সম্ভাবনা থাকে এবং পাগলকে মসজিদের ভেতর নিয়ে যাওয়া হারাম। যদি নাপাকীর সম্ভাবনা না থাকে তাহলে মাকরুহ্। যে সকল লোক জুতা মসজিদের ভিতরে নিয়ে যায় তাদের এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিৎ, যদি অপবিত্রতা লাগে তবে তা পরিস্কার করে নিন এবং জুতা পরিধান করে মসজিদে চলে যাওয়া বেয়াদবী। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৫১৮ পৃষ্ঠা)
ছোট শিশু অথবা পাগলকে (অথবা বেঁহুশ বা যাকে জ্বিনে ধরেছে তাকে) ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ নেওয়ার জন্য “প্যাম্পাস” পড়িয়েও মসজিদে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শরীয়াতের পক্ষ থেকে অনুমতি নেই। যদি আপনি এমন ব্যক্তি বা শিশুদের মসজিদে নেয়ার মত ভুল করে থাকেন তবে দয়া করে দ্রুত তাওবা করে নিন, ভবিষ্যতে না নেওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন। হ্যাঁ, ফিনায়ে মসজিদ যেমন ইমাম সাহেবের হুজরায় নিয়ে যেতে পারেন, যখন মসজিদের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের প্রয়োজন না হয়।
মাছ বা মাংস বিক্রেতাদের পোষাকে খুবই দূর্গন্ধ হয়ে থাকে, তাই তাদের উচিত তাদের কাজ শেষ করে ভালভাবে গোসল করা, পরিস্কার কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি লাগানো, এসব কিছুর পরেই মসজিদে আসা। গোসল করা ও সুগন্ধি লাগানো শর্ত নয়। এটা শুধু অনুরোধের সুরে পরামর্শ দিয়েছি মাত্র। এমন কোন ব্যবস্থা করুন যাতে দূর্গন্ধ একেবারে দূর হয়ে যায়।
ঘুমালে পেটের নোংরা বাতাস উপরের দিকে উঠে যায়, সুতরাং ঘুম থেকে উঠার পর মুখ অধিকাংশ সময় দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ‘ফতোওয়ায়ে রযবীয়া‘র ২৩ তম খন্ডের ৩৭৫ থেকে ৩৭৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত “প্রশ্নোত্তর” লক্ষ্য করুন:
প্রশ্ন : ঘুম থেকে উঠে আয়াতুল কুরছি পাঠ করা কেমন? অনেক উস্তাদ সাহেব হুক্কা পান করেন এবং ছাত্রদের (কোরআন) পড়াতে যান।
উত্তর : ঘুম থেকে উঠে হাত ধুয়ে তারপর কুলি করুন এরপর আয়াতুল কুরছি পাঠ করুন, যদি মুখে হুক্কা ইত্যাদির দূর্গন্ধ থাকে বা কোন খাবারের বস্তু থাকে তবে কুলি করা ছাড়া তিলাওয়াত করবে না। যে উস্তাদ এরূপ করে তা সঠিক নয়। ﻭَﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟﻰ ﺍَﻋْﻠَﻢُ (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৩৭৫-৩৭৬ পৃষ্ঠা)
আমাদের প্রিয় আক্বা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর পবিত্র শরীর মোবারক সর্বদা সুবাসিত থাকতো, স্বভাব মোবারক খুবই পরিচ্ছন্ন ছিলো, মিসওয়াক ঘুমানোর সময় মাথার পাশে থাকতো, ঘুম থেকে উঠার পর সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ ঘুমানোর সময় মাথার পাশে মিসওয়াক রাখা এবং ঘুম থেকে উঠেই মিসওয়াক করা সুন্নাতে মোবারাকা। রাসূলুল্লাহ্ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ যখনই ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন তখনই মিসওয়াক করতেন। (আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৫৪ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৫৭)
এমন কিছু খাদ্য আছে, যা খাওয়ার ফলে দূর্গন্ধযুক্ত ঘাম বের হয়। এরকম খাদ্য পরিহার করা চাই।
যারা মিসওয়াক ও খাওয়ার পর খিলাল করে না এবং দাঁত পরিস্কার করার ক্ষেত্রে অলসতা করে তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুখে দূর্গন্ধ হয়ে থাকে। শুধু মাত্র নিয়ম আদায় করার জন্য মিসওয়াক ও খিলাল দাঁতের উপর স্পর্শ করিয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়। মাড়িতে যাতে আঘাত না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে যথাসাধ্য খাদ্যের প্রতিটি কণা দাঁত থেকে বের করতে হবে। তা না হলে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যের কণা জমে জমে পঁচে যায় এবং প্রচুর দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। দাঁত পরিস্কার রাখার একটি পদ্ধতি হলো, কিছু খাওয়ার পর বা চা ইত্যাদি পান করার পর এবং তাছাড়াও যখনই সুযোগ হয় যেমন বসে বসে কোন কাজ করছেন তখন অল্প পানি মুখে নিয়ে নাড়তে থাকুন, এতে মুখের ময়লা পরিস্কার হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে সাদা পানি হলেও চলবে আর যদি লবণ সহ হালকা গরম পানি হয় তবে ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ তা খুবই উত্তম “মাউথ ওয়াশ” হিসেবে গন্য হবে।
দাঁড়িতে অধিকাংশ সময় খাদ্যের কণা আটকে থাকে, ঘুমানোর সময় মুখের দূর্গন্ধযুক্ত লালা অনেক সময় দাঁড়িতে গিয়ে পড়ে আর এই ভাবে দাঁড়ি দূর্গন্ধময় হয়ে যায়। সুতরাং যদি সম্ভব হয় তবে কখনো কখনো সাবান দিয়ে দাঁড়ি ধুয়ে নেয়া উচিত। এভাবে মাথার চুলও সাবান দিয়ে মাঝে মাঝে ধৌত করুন।
ফরমানে মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ : “যার (মাথায়) চুল আছে সে যেনো সেগুলোর যত্ন নেয়।” (আবু দাউদ শরীফ, ৪র্থ খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৪১৬৩) অর্থাৎ সেগুলো ধৌত করে, তেল ব্যবহার করে এবং আঁচড়ায়। (আশিয়্যাতুল লমহাত, ৩য় খন্ড, ৬১৭ পৃষ্ঠা)
মাথায় সরিষার তেল ব্যবহারকারী যখন মাথা থেকে টুপি বা ইমামা শরীফ খুলে তখন অনেক সময় মারাত্মক দূর্গন্ধ বের হয়। তাই যাদের সম্ভব হয় উন্নত মানের সুগন্ধি তেল ব্যবহার করবেন। সুগন্ধিময় তেল তৈরী করার একটি সহজ পদ্ধতি হচ্ছে; নারিকেল তেলের বোতলের মধ্যে আপনার পছন্দের আতর থেকে কয়েক ফোঁটা আতর ঢেলে ভালভাবে মিশিয়ে নিন, সুগন্ধিময় তেল তৈরী হয়ে গেলো। (সুগন্ধি তেল তৈরীর বিশেষ এসেন্সও সুগন্ধি দ্রব্যের দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন) মাথার চুলকে মাঝে মাঝে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
যাদের পক্ষে সম্ভব প্রতিদিন গোসল করে নিন। এতে যথেষ্ট পরিমাণে শরীরের বাহ্যিক দূর্গন্ধ দূর হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। (তবে ইতিকাফকারীরা যেন মসজিদের গোসলখানায় একান্ত প্রয়োজন ছাড়া গোসল না করেন। কারণ নামাযীদের জন্য অযুর পানির অভাব দেখা দিতে পারে এবং বার বার মোটর চালানোর কারণে মোটর নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তাও গোসলখানা ফিনায়ে মসজিদে (মসজিদের বাউন্ডারিতে) হলে গোসল করা যাবে আর যদি গোসলখানা মসজিদের বাউন্ডারির বাইরে হয় তবে জুমার দিনের গোসলেরও অনুমতি নাই, শুধুমাত্র ফরয গোসল ছাড়া)
অনেক ইসলামী ভাই খুব বড় সাইজের পাগড়ী বাঁধার আগ্রহতো রাখেন, কিন্তু পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অবহেলা করে থাকেন। আর এ কারণে অনেক সময় তারা অজ্ঞতাবশত মসজিদের ভিতর “দূর্গন্ধ” ছড়ানোর অপরাধে ফেঁসে যান। তাই মাদানী আবেদন হচ্ছে, ইমামা পাগড়ী, সারবন্দ ও চাদর ব্যবহারকারী ইসলামী ভাইয়েরা যথা সম্ভব প্রতি সপ্তাহে আর মৌসুম অনুযায়ী বা প্রয়োজনবশতঃ আরো তাড়াতাড়ি এগুলো ধোয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় ময়লা-আবর্জনা, ঘাম ও তেল ইত্যাদির কারণে এসব কিছু দূর্গন্ধময় হয়ে যায়। যদিও নিজের অনুভব না হয় কিন্তু দূর্গন্ধের কারণে অন্যদের প্রচন্ড ঘৃণা সৃষ্টি হয়। নিজে বুঝতে না পারার কারণ হচ্ছে, যার কাছে সবসময় কোন বিশেষ ধরনের সুগন্ধি বা দূর্গন্ধ লেগেই থাকে তার নাক সেটাতে অভ্যস্থ হয়ে যায়।
শক্ত টুপির উপর বাঁধা পাগড়ী ব্যবহারেও এর ভিতর দূর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। যদি সম্ভব হয় তবে পাতলা মসৃন কাপড়ের পাগড়ী শরীফ ব্যবহার করুন আর এ জন্য কাপড়ের এমন টুপি পরিধান করুন যেটা মাথার সাথে সম্পূর্ণ লেগে থাকে। কেননা, এ ধরণের টুপি পরিধান করা সুন্নাত। রেডিমেট পাগড়ী শরীফ পরিধান করা ও খুলে রাখার পরিবর্তে বাঁধার সময় এক এক প্যাচ করে বাঁধুন এবং একই নিয়মে খোলার অভ্যাস করুন। এরূপ বার বার বাতাস লাগার কারণে ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ দূর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
পাগড়ী ও সারবন্দ শরীফ, চাদর ও পোশাক ইত্যাদি খুলে রোদে শুকালেও ঘামের দূর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। তাছাড়া এতে ভাল ভাল নিয়্যতে উন্নত মানের আতর লাগালেও দূর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। প্রাসঙ্গিকভাবে আতর লাগানোর নিয়্যতগুলো লক্ষ্য করুন:
রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেছেন: “মুসলমানের নিয়্যত তার আ‘মল থেকে উত্তম।” (মুজামুল কবীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং: ৫৯৪২)
(১) সুন্নাতে মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ পালনের জন্য সুগন্ধি লাগাব।
(২) লাগানোরপূর্বে ﺑِﺴۡﻢِ ﺍﻟﻠّٰﮧِ (৩) লাগানোর সময় দরুদ শরীফ ও (৪) লাগানোর পরে নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে ﺍَﻟۡﺤَﻤۡﺪُ ﻟِﻠﮧِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟۡﻌٰﻠَﻤِﯿۡﻦَ পাঠ করব (৫) ফেরেশতাগণ ও (৬) মুসলমানদের আনন্দ দান করব। (৭) জ্ঞান বৃদ্ধি পেলে শরীয়াতের নির্দেশনাবলী মুখস্থ করা ও সুন্নাত শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য শক্তি অর্জন করব (ইমাম শাফেয়ী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: উৎকৃষ্ট সুগন্ধি লাগানোতে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। (ইহইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ২৩৩ পৃষ্ঠা))
(৮) পোশাক ইত্যাদি থেকে দূর্গন্ধ দূর করে মুসলমানদেরকে গীবতের গুনাহ্ থেকে রক্ষা করব। (কেননা কোন মুসলমানের পোশাক ইত্যাদি দূর্গন্ধযুক্ত হলে শরীয়াতের অনুমতি ছাড়া তার অনুপস্থিতিতে এরূপ বলা যে, “তার পোশাক বা হাত অথবা মুখ থেকে দূর্গন্ধ আসছিল” এটা গীবত)
(৯) অবস্থা অনুযায়ী এ নিয়্যতও করা যায়, যেমন;
(১০) নামাযের জন্য সাজ-সজ্জা করব (১১) মসজিদ (১২) তাহাজ্জুদের নামায (১৩) জুমা (১৪) সোমবার শরীফ (১৫) রমযানুল মোবারক (১৬) ঈদুল ফিতর (১৭) ঈদুল আযহা (১৮) মিলাদ শরীফের রাত ১৯) ঈদে মিলাদুন্নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ (২০) জুলূসে মিলাদ (২১) শবে মি‘রাজুন্নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ (২২) শবে বরাত (২৩) গিয়ারভী শরীফ (২৪) রযা দিবস (আ‘লা হযরতের পবিত্র ওরশের দিন) (২৫) দরসে কুরআন ও (২৬) হাদীস অধ্যায়ন (২৭) তিলাওয়াত (২৮) ওযীফা (২৯) দরূদ শরীফ (৩০) দ্বীনি কিতাব অধ্যয়ন (৩১) ইলমে দ্বীন শিক্ষা প্রদান (৩২) ইলমে দ্বীন শিক্ষা অর্জন (৩৩) ফতোয়া লিখন (৩৪) দ্বীনী রিসালা প্রণয়ন ও সংকলন (৩৫) সুন্নাতে ভরা ইজতিমা (৩৬) ইজতিমায়ে যিকির ও নাত (৩৭) কুরআন খানী (৩৮) দরসে ফয়যানে সুন্নাত (৩৯) নেকীর দা'ওয়াত (৪০) সুন্নাতে ভরা বয়ান করার সময় (৪১) আলিম (৪২) মাতা (৪৩) পিতা (৪৪) নেককার মু’মিন (৪৫) পীর সাহেব (৪৬) পবিত্র দাঁড়ি শরীফ যিয়ারত (৪৭) মাযার শরীফে উপস্থিতির সময়ও সম্মান প্রদর্শনের নিয়্যতে সুগন্ধি লাগাতে পারেন। যত ভাল ভাল নিয়্যত করবেন তত সাওয়াবও পাওয়া যাবে। যেন নিয়্যতের পরিবেশও হয় এবং সেই নিয়্যত শরীয়াত সম্মতও হওয়া চাই। যদি বেশী মনে না থাকে কমপক্ষে দু‘তিনটি নিয়্যত করে নেওয়া উচিত।
হে আমাদের প্রিয় আল্লাহ্! আজ পর্যন্ত আমাদের যত বারই মসজিদে দূর্গন্ধ নিয়ে যাওয়ার গুনাহ্ হয়েছে, তা থেকে তাওবা করছি আর এটা নিয়্যত করছি, ভবিষ্যতে কখনো মসজিদে কোন রূপ দূর্গন্ধ নিয়ে যাব না।
ইয়া রব্বে মুস্তফা! আমাদেরকে মসজিদ সুবাসিত রাখার সৌভাগ্য দান করো। হে আল্লাহ্! আমাদেরকে সকল প্রকারের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিন দূর্গন্ধ থেকে পবিত্র হয়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার তাওফীক দান করো।
হে আল্লাহ্ ! আমাদের সুগন্ধিময় প্রিয় নবী, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর সদকায় আমাদেরকে গুনাহের দূর্গন্ধ থেকে মুক্তি দাও আর সুগন্ধি ছড়ানো জান্নাতুল ফেরদৌসে তোমার সুবাসিত প্রিয় মাহবুব, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর প্রতিবেশী হওয়ার সৌভাগ্য প্রদান করো। ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
ওয়াল্লাহ্ জু মাল জায়ে মেরে গুল কা পসীনা,
মাঙ্গে না কভী ইতর না ফির চাহে দুলহান ফুল। (হাদায়িখে বখশিশ শরীফ)
মঙ্গল কামনার আগ্রহে সাওয়াব অর্জনের আশায় আরয করছি যে, যদি আপনার দাঁত ময়লাযুক্ত বা হলদে রঙ্গের হয়ে থাকে তবে সাচ্ছন্দ মনে সগে মদীনা ﻋُﻔِﻰَ ﻋَﻨْﻪُ এর পক্ষ থেকে কিছু মাদানী ফুল গ্রহণ করুন, ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ খুবই উপকৃত হবেন।
۞ ময়লা দাঁত অপরের জন্য বিরক্তি ও ঘৃণার কারণ
۞ সাক্ষাৎ ইত্যাদিতে ময়লা দাঁত বিশিষ্টদের ব্যক্তিত্বের ভাল প্রভাব পড়ে না
۞ অধিকহারে পান, তামাক পান কারী মুলত টাকা দিয়ে দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট করে, মুখের চামড়া খসা ও ক্যান্সার কিনে নেয়
۞ মিসওয়াক সুন্নাত অনুযায়ী ভালভাবে ঘষে ঘষে করুন
۞ খাবারের পর দাঁতে খিলাল করার অভ্যাস গড়ে নিন
۞ যখনই কিছু খাবেন বা চা ইত্যাদি পান করবেন, মুখে পানি নিয়ে কয়েক মিনিট মুখের ভেতর পানিকে নড়াচড়া করতে থাকুন, এতে মুখের ভিতরের অংশ এবং দাঁত অনেকাংশে ধুয়ে যাবে
۞ ঘুমানোর সময় ভালভাবে কন্ঠনালী ও দাঁত পরিস্কার হওয়া চাই, নয়তো গলা ব্যথা এবং দাঁতের ময়লা শক্তভাবে জমে যায়, আর বন্ধ মুখের ভেতর খাদ্যকণা পঁচে মুখ দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায় এবং জীবাণু পেটে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হতে পারে
۞ ঘুমালে পেটের নোংরা বাতাস উপরের দিকে উঠে আসে, সুতরাং মূখ দূর্গন্ধময় হয়ে যায়, জাগ্রত হয়েই হাত ধুয়ে মিসওয়াক করে কুলি করে নিন, ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ মুখের দূর্গন্ধ চলে যাবে।
পরিমান মতো খাওয়ার সোডা এবং পরিমান মতো লবণ মিশিয়ে বোতলে ঢেলে রাখুন, উত্তম মাজন তৈরী হয়ে গেলো। যদি সম্ভব হয় তবে প্রতিদিন তা দ্বারা দাঁত মাজুন ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ সাথেসাথেই দাঁতের ময়লা চলে যাবে। অবশ্য দাঁতের মাড়ী বা মুখের কোন অংশে জ্বালা পোড়া ইত্যাদি অনুভুত হলে মাজনের পরিমান কমিয়ে দেখুন, এতেও কষ্ট হলে পরিস্কার করার অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহন করুন। কেননা, দাঁত সর্বাবস্থায় পরিস্কার হওয়া চাই।
মাদানী ফুল: সর্বপ্রকার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সুন্নাত এবং শরীয়াতের চাহিদা।
বদবু না দেহেন মে হো, দাঁতোঁ কি সাফাই হো
মেহকাঈ দরূদোঁ কি মুহ মে তরী ভাই হো
ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ
বিঃদ্রঃ: এই রিসালা ১২ই শাবানুল মুয়াজ্জম ১৪২৭ হিজরী (০৬-০৯- ২০০৬ ইংরেজী) প্রথমবার সংকলিত হয় এবং কয়েকবার প্রকাশিত হয়, অতঃপর ৫ই রবিউল গাউস ১৪৩৩ হিজরী (২৮-০২-২০১২ ইংরেজি) তা দ্বিতীয়বার সম্পাদনা করা হয়।
লিখাটি মসজিদের আদব সম্পর্কিত ৩২ পৃষ্ঠার "মসজিদ সুবাশিত রাখুন " নামক রিসালা থেকে সংগ্রহীত।