আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) হতে বর্নিত,
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার সামনে এমন একটি জন্তু আনা হলো যা আকারে গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট এবং যার কদম পড়ত দৃষ্টির শেষ সীমায়। আমি তার উপর আরোহণ করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা সফর করলাম (মদীনা পর্যন্ত)। জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি নেমে সালাত আদায় করুন। আমি সালাত আদায় করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি কোথায় সালাত আদায় করেছেন তা কি জানেন? আপনি সালাত আদায় করেছেন তায়বায়। এ শহরেই আপনি হিজরত করবেন।
আবার জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি অবতরণ করে সালাত আদায় করুন। আমি তখন নেমে সালাত আদায় করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি কি জানেন কোন জায়গায় সালাত আদায় করেছেন? আপনি ‘তূরে সায়ন’ নামক স্থানে সালাত আদায় করেছেন। যেখানে আল্লাহ পাক মূসা (আঃ) -এর সাথে কথা বলেছিলেন। তারপর আবার এক স্থানে গিয়ে জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, অবতরণ করে সালাত আদায় করুন। আমি তা-ই করলাম। জিব্রাঈল (আঃ) বললেন, আপনি কি জানেন, আপনি কোথায় সালাত আদায় করেছেন? আপনি ‘বায়ত লাহম’ নামক স্থানে সালাত আদায় করেছেন। যেখানে হয়রত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারপর আমি ‘বায়তুল মাকদিস’-এ প্রবেশ করলাম এবং সমস্ত নবীকে আমার নিকট একত্র করা হলো এবং জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে সম্মুখে এগিয়ে দিলেন আমি সকলের ইমামতি করলাম।
তারপর আমাকে নিয়ে প্রথম আসমানে উঠলেন। সেখানে আদম (আঃ) -এর সাক্ষাত লাভ করলাম। পরে আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। সেখানে পরপর দু’খালাত ভাই ঈসা (আঃ) ও ইয়াহইয়া (আঃ) -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে উঠলেন, সেখানে ইউসুফ (আঃ) -এর সাথে দেখা হলো। এরপর আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানে উঠলেন এবং সেখানে হারুন (আঃ) -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানে উঠলেন সেখানে ইদ্রিস (আঃ) -এর সাথে সাক্ষাত হলো। তারপর আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানে উঠলেন। সেখানে মূসা (আঃ) -এর সাক্ষাত হলো।
তারপর আমাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে ইবরাহীম (আঃ) -এর সাথে সাক্ষাত হলো। এরপর আমাকে নিয়ে সপ্তম আসমানের উপরে উঠলেন। তখন আমরা সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হলাম। সেখানে একখন্ড ধুঁয়াশা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল-আমি সিজদায় পড়ে গেলাম। তখন আমাকে বলা হলো-যেদিন আমি এ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি, সেদিন আপনার উপর ও আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। সুতরাং আপনি এবং আপনার উম্মত এই সালাত কায়েম করুন। তখন আমি ইবরাহীম (আঃ) -এর নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম। তিনি আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না। পরে মূসা (আঃ) -এর নিকট আসলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললাম পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তখন মূসা (আঃ) বললেন, নিশ্চয়ই আপনি এবং আপনার উম্মত পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত যথাযথ আদায় করতে সক্ষম হবেন না। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং কমানোর জন্য আরয করুন। আমি প্রতিপালকের নিকট ফিরে গেলাম। তিনি আমার থেকে দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর আবার মূসা (আঃ) -এর নিকট আসলাম। তিনি আমাকে পুনরায় ফিরে যেতে বললেন। আমি ফিরে গেলাম। তখন তিনি আরো দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন।
তারপর মূসা (আঃ) -এর নিকট আসার পর তিনি আমাকে পুনরায় ফিরে যেতে বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। তিনি দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর সর্বশেষ সালাতকে পাঁচ ওয়াক্তে পরিণত করা হলো। মূসা (আঃ) বললেন, আপনি পুনরায় প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং সালাত আরও কমানোর আবেদন করুন। কেননা আল্লাহ বনী ইসরাঈলের উপর শুধু দুই ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছিলেন। তারা এই দুই ওয়াক্তও আদায় করেনি। তখন আমি আবার আল্লাহর নিকট ফিরে গিয়ে সালাত কমিয়ে দেয়ার জন্য আরয করলাম। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি যেদিন এই আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি সেদিন আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান বলে গণ্য হবে। আপনি ও আপনার উম্মত এটা আদায় করুন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহ পাকে পক্ষ হতে অবশ্য পালনীয়। এরপর আমি মূসা (আঃ) -এর নিকট ফিরে আসলাম। এবারও তিনি আমাকে ফিরে যেতে বললেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম যে পাঁচ ওয়াক্ত আল্লাহ্র পক্ষ হতে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাই আমি আর ফিরে গেলাম না।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৪৫০