শাফায়াত : শাফায়াতের শাব্দিক অর্থ জোড়া ও যুগল; দোয়া, সুপারিশ, মধ্যস্থতা ইত্যাদি। সুপারিশকারীকে শাফি এবং এর বহুবচন শুফায়া বলা হয়।শাফায়াত সাধারণত দ্বীনি বিষয়। বিশেষ করে কেয়ামত প্রসঙ্গে হয়ে থাকে। এভাবেই কোরআন ও হাদিসে এর ব্যবহার পরিদৃষ্ট হয়।
শাফায়াতের প্রকার :
এক. শাফায়াতে কুবরা বা মহাসুপারিশ।
কেয়ামতের ভয়াবহ ও সঙ্কটময়কালে সাধারণ মানুষ যখন আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে, তখন কেবল নুরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলবেন, হে আল্লাহ পাক! আপনি আমার উম্মতকে মাফ করুন”। তিনিই সর্বপ্রথম শাফায়াত করার অনুমতিপ্রাপ্ত হবেন। এটাই শাফায়াতে কুবরা। যেমন মহান আল্লাহ পাক বলেন, “কে সে, যে তার অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে।” (২:২৫৫)।
আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কিয়ামতের দিন কোন্ ব্যক্তি আপনার শাফায়াতের বেশী হকদার হবে? হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার হাদীছ শেখার আগ্রহ দেখে আমার ধারণা ছিল যে, আপনার পূর্বে এ বিষয় সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ “পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি আমার শাফায়াতের সবচেয়ে বেশী হকদার হবে” ( বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।)
দুই. আম্বিয়া, আউলিয়া, শুহাদা,বুযুর্গ,পীর দরবেশ, সাধারণ মোমিনদের শাফায়াত। উনারাও আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে শাফায়াত করার অনুমতিপ্রাপ্ত হবেন। এটাকে শাফায়াতে সুগরা বা শাফায়াতে আম্মা বলা হয়।
কুরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“সেদিন শাফায়াত কার্যকর হবে না, অবশ্য স্বয়ং রহমান কাউকে উহার অনুমতি দিলে এবং তার কথা শুনতে পছন্দ করলে অন্য কথা।” (সূরা ত্বাহা, ২০-১০৯)
“সুপারিশ বা শাফায়াতকারী কেউ নেই, তবে যদি আল্লাহর অনুমতির পর শাফায়াত করে (তাহলে অন্য কথা)” (সূরা ইউনুস, ১০-৩)
“তিনি যার উপর সন্তুষ্ট তিনি ছাড়া আর কেউ তাঁর নিকট সুপারিশ করতে সক্ষম নয়। (সূরা, আম্বিয়া, ২১-২৮)
“যেদিন ‘রূহ’ ও ফিরিস্তারা কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াবে, কেহই কোন কথা বলবে না- সে ব্যতীত, যাকে পরম দয়াময় অনুমতি দিবেন এবং যে যথাযথ কথা বলবে। “(সূরা, নাবা, ৭৮-৩৮)
“দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না।” (সূরা ত্বো-হাঃ ১০৯)
উবাদা বিন সামিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন,হুযুর পাক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একজন শহীদ আল্লাহর পক্ষ থেকে সাতটি পুরষ্কার লাভ করেন;
১) তাঁর রক্তের প্রথম ফোটা পতনের সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে
২) তিনি জান্নাতে তাঁর মর্যাদা দেখতে পারেন
৩) ঈমানের পোশাকে তাকে আচ্ছাদিত করা হয়ে থাকে
৪) তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেয়া হয়
৫) হাশরের ময়দানের ভয়াবহ চিন্তা-উৎকন্ঠা থেকে তিনি নিরাপদে থাকবেন
৬) তাঁর মাথায় একটি সম্মানের মুকুট স্থাপন করা হবে
৭) তিনি তাঁর পরিবারের সত্তর জন সদস্যের জন্য শাফায়াত করার সুযোগ পাবেন”
(মুসনাদে আহমাদ, তাবারানী, আত তারগিব ওয়া তাহরিব, পৃ ৪৪৩, খন্ড ২)
আবার কুরআনে হাফিয, মাসুম বাচ্ছারাও সুপারিশ করতে পারবে।
তবে শাফায়াতের জন্য ৩টি শর্ত রয়েছে।
১- শাফায়াতকারীর উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা।
২- যার জন্য সুপারিশ করা হবে, তার উপরও আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকা।
৩- শাফায়াতকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফায়াত করার অনুমতি থাকা।
যা আল্লাহ পাক কুরয়ানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন।
তাহলে যারা বলে ওলি আউলিয়া,পীর দরবেশ, বুযুর্গ,শহীদ,নেককার মুমিন বান্দাগন সুপারিশ করতে পারবেননা তারা গন্ডমুর্খ,জাহিল,বকলম,বাতিল ফিরকার অন্তর্ভুক্ত ।