‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’
আল্লাহ পাক কুরআনে বলছেন,
• “প্রাচুর্যের লালসা তোমাদেরকে গাফেল রাখে”, “এমনকি, তোমরা কবরস্থানে পৌছে যাও”। “এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা সত্ত্বরই জেনে নেবে”। “অতঃপর এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা সত্ত্বরই জেনে নেবে”। “কখনই নয়; যদি তোমরা নিশ্চিত জানতে”। “তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে, অতঃপর তোমরা তা অবশ্যই দেখবে প্রকাশ্য দৃষ্টি দিয়ে”, “এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে”।[সুরা ১০২ তাকাসুর: আয়াত ১-৮]।
• ‘এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে। যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা। এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা। অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যশীল’[সুরা ৫৬ ওয়াক্বিয়া: আয়াত ৭-১১]। ‘যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয়; তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিযিক এবং নেয়ামতে ভরা উদ্যান। আর যদি সে ডান পার্শ্বস্থদের একজন হয়, তবে তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্যে ডানপার্শ্বসস্থদের পক্ষ থেকে সালাম। আর যদি সে পথভ্রষ্ট মিথ্যারোপকারীদের একজন হয়, তবে তার আপ্যায়ন হবে উত্তপ্ত পানি দ্বারা। এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে অগ্নিতে। এটা ধ্রব সত্য। অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন’[সুরা ৫৬ ওয়াক্বিয়া: আয়াত ৮৮-৯৬]।
ইসলামের পথ ঠিক একটাই- যা সরলপথ 'সিরাতাল মুস্তাকিম'। কিন্তু মানুষের চাওয়া এক নয়, কেউ চায় শুধু দুনিয়ায় শান্তি(বামের কাতার), কেউ চায় দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের শান্তি(ডানের কাতার), আর কেউ চায় শুখু আখিরাতে শান্তি বা আল্লাহর নৈকট্য (দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট, সুখ-শান্তি এবং সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়ে সন্তুষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে শুধু আল্লাহর সান্নিধ্য ও আখিরাতে শান্তি কামনা করে)[আল্লাহর নৈকট্যশীল ও অগ্রগামীদের কাতার]।
হাদিস শরীফে এসেছে,
“যে যে উদ্দেশ্যে ইবাদাত ও আমল করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান সেইখানেই দিবেন। দুনিয়ার প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে দিবেন এবং যে আখিরাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদাত ও আমল করবে আল্লাহ তার উপর সবসময় সন্তুষ্ট থাকবে এবং এর প্রতিদান আল্লাহ আখিরাতে তাকে দান করবেন”।
“আল্লাহ তোমাদের চেহারা-সুরত এবং ধণ-সম্পদ দেখবেন না, তিনি দেখবেন তোমাদের অন্তর, তারপর নিয়্যত এবং অতঃপর দেখবেন তোমাদের আমল”। - সহীহ মুসলিম শরীফ।
আল্লাহ পাক কুরআনে আরও বলছেন,
• “আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে”।[সুরা আন’য়াম ৬: আয়াত ১১৬]।
• “খ্রিষ্টানদের মধ্যে অনেক ফকির-দরবেশ ও সংসার-বিরাগী আছে। যারা অহংকার করে না। এবং যখন তারা রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে এরজন্য আপনি(রাসুলাল্লাহ) তাদের চক্ষু অশ্রুবিগলিত দেখবেন। তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে তোমার পথের দলভুক্ত কর”।[সুরা ৫ মায়েদা : আয়াত ৮২-৮৩]।(এই আয়াত থেকে বুঝা যায় নির্অহংকারী মুসলিম ফকির-দরবেশ ও সংসার-বিরাগীদেরকে আল্লাহ কেমন পছন্দ করেন।)
‘মনে রেখো যারা আল্লাহর ওলী-আউলিয়া, তাদের না কোন ভয়ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে(এরাই ‘আল্লাহর প্রেমিক’; আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা)।[সুরা ১০ ইউনুস: আয়াত ৬২]।
হাদিস শরীফে এসেছে,
“যে ব্যক্তি দুনিয়ার লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠতে সক্ষম হয়েছে, তাকে অবশ্যই ভালোবাসিও। কেননা, এ ধরণের লোকই তোমাদেরকে প্রকৃত জ্ঞানের সন্ধান দিতে পারেন”। - সহীহ তিরমিজী শরীফ।
আল্লাহ ঘোষণা করেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার কোন ওলী-আউলিয়ার সাথে শত্রূতা পোষণ করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করি”। -সহহী বুখারী শরীফ খন্ড ১০, পৃঃ ৭৪, হাদীস নং-৬০৫৮।
‘যার অন্তরে অনু পরিমান অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ‘যদি কেউ সুন্দর জামা আর সুন্দর জুতা পরিধান করতে ভালবাসে? তখন তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। আর অহংকার মানে হলো- হক/ন্যায় এবং সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা’। -সহীহ্ মুসলিম; কিতাবুল ঈমান, অধ্যায়:-১, হাদীস নম্বর:-১৬৪।
‘আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের ব্যাপারে বলে দিবো? তারা প্রত্যেকেই বদমেজাজি, কৃপণ ও অহংকারী’।
। -সহীহ্ বুখারী শরীফ। [(১ পাল্লায় ‘ঈমান’ Vs ১ পাল্লায় ‘অহংকার’)]
‘এমন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে শস্যদানা পরিমাণ ঈমান থাকবে এবং এমন কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে শস্যদানা পরিমাণ অহংকার থাকবে’।(মুসলিম শরীফ-১/৬৫)।
“এই পৃথিবী এক গুপ্তধণ। এই পৃথিবী এক সাপ। কেউ কেউ গুপ্তধণ নিয়ে খেলে আর কেউ খেলে সাপ নিয়ে”
-শামস্ তাবরিজি (রহঃ)।
“সমুদ্রের পানি মুক্তা নয়, কিন্তু ঝিনুকের ভিতরে যে মুক্তা তা সমুদ্রের পানি ছাড়া অন্য কিছু নয়, পাথরের মতো শক্ত হইও না, মাটির মতো নরম হও, তবেই নানা রঙের ফুল ও ফল জন্মিবে। আজীবন নিজের উপর অত্যাচার করেছো, পরীক্ষা করার ইচ্ছায় হলেও কয়েকদিন মাটি হয়ে দেখ”।
-মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহঃ)।