নবী ও রাসূল দু'টি পরিভাষা। নবী অর্থ গোপন বিষয়ের সংবাদদাতা। আর রাসূল অর্থ- আল্লাহ কর্তৃক নতুন বিধান বহনকারী প্রতিনিধি। ইসলামে নবুয়তের মর্যাদা ও তার অবস্থান অতি উচ্চে। ঈমানের পূর্বশর্ত হলো রিসালাতে বিশ্বাস। তিনি যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা। শরহে আকায়েদে নছফীতে ঈমানের সংজ্ঞা এভাবে উল্লেখ আছে,
- الإيمان هو تصديق النبى بماجاء به من عند الله – অর্থাৎ-”ঈমানের সংজ্ঞা হলো- নবীকে এভাবে বিশ্বাস করা যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছু নিয়ে এসেছেন- তা সত্য”।
এখানে প্রথমেই নবীর সত্যতার উপর বিশ্বাস স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। তারপর আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নিযুক্তি ও তাঁর উপর অর্পিত বিষয়াবলীর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করাকেই ঈমান বলা হয়েছে। এই ঈমানই হলো মুক্তির পূর্বশর্ত। শুধু তাওহীদে বিশ্বাসের নাম ঈমান নয়। তাওহীদ ও রিসালাত উভয়কে বিশ্বাসের নামই ঈমান। এর ওপরই মুক্তি ও জান্নাতলাভ নির্ভরশীল। তাওহীদী জনতা যে কোন আস্তিকের বেলায় প্রযোজ্য- কিন্তু ইসলামে শুধু তাওহীদের নাম ঈমান নয় -বরং ”মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”-এর নাম ঈমান। কেননা, এখানে প্রথমে রাসূল ও পরে আল্লাহ রয়েছে।
বুঝা গেলা- আল্লাহর সাথে রাসূলের সংযোগ না হলে ঈমান হয় না। সব কিছু বিশ্বাস করা সত্ত্বেও যদি নবীর ওপর বিশ্বাস না করে, তাহলে সে মু'মিন হবেনা, বরং কাফের হবে। তার অনেক উদাহরণ ও দলীল রয়েছে। যথাঃ
(১) শয়তান খোদার যাত ও সিফাত, ফিরিস্তা, কিতাব, আখেরাত, অদৃষ্ট বা তকদীর, মৃত্যুর পর পূনরুত্থান- ইত্যাদি ৬টি বিষয়ের ওপর বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু বিশ্বাসী ছিলনা আদম নবীর নবুয়তের ওপর। তাই তার গলায় লা'নতের শিকল পড়েছিল। সে নিজেই কিয়ামত স্বীকার করে বলেছিল-
رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ - ”হে আমার রব! আমাকে পূনরুত্থান দিবস পর্যন্ত সময় দাও” (সূরা ছোয়াদ, ৭৯. আয়াত)। সে বেহেস্ত-দোযখও বিশ্বাস করতো। তাই আল্লাহ তা'য়ালা বলেছিলেন -
لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكَ وَمِمَّن تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ – “আমি তার অনুসারীদের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবো” (সূরা ছোয়াদ, ৮৫ আয়াত)। এতে বুঝা গেল- শয়তান জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কেও জ্ঞাত ছিল।
বস্তুতঃ শয়তান ঈমান (মোফাসসাল) -এর ছয়টি বিষয়ে বিশ্বাসী ছিল- কিন্তু বিশ্বাসী ছিলনা ৭ম ঈমান নবুয়তে। তাই সে কাফেরে পরিণত হলো।
নবুয়ত হলো সীলমোহরের ন্যায়। কাগজের নোটের উপর সরকারী সীলমোহর থাকলেই উহার মূল্য দাঁড়ায় শ' ও হাজারে। অনুরূপ তৌহিদের মূল্য তখনই হবে- যখন তার ওপর নবুয়তের সীলমোহর থাকবে। হাশরের ময়দানে কাফেররাও তাওহীদী শব্দ- “হে আল্লাহ” বলবে- কিন্তু নাজাত পাবেনা ৷
(২) যদি তৌহিদই মুক্তির জন্য গ্যারান্টি হতো- তাহলে কালেমায় উল্লেখিত রিসালাত অর্থহীন হয়ে যেতো। বুঝা গেল, মুক্তির জন্য শর্ত হলো ঈমানের, আর ঈমানের জন্য শর্ত হলো তাওহীদ ও রিসালাতের।
(৩) আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে আমাদেরকে কখনও ”তাওহিদী জনতা” বলে উল্লেখ করেন নি - বরং মুমিনীন ও মু’মিনাত বলে সম্বোধন করেছেন। বুঝা গেল- শুধু তাওহীদে বিশ্বাসীরা (মুয়াহিদুন) মো’মেন নয়। তারা মৌলবাদী। তাদের কাছে রিসালাতের গুরুত্ব খুবই নগণ্য। রাসূল তাদের মতে আল্লাহর মোকাবেলায় চামার সদৃশ। (দেখুন- তাকভিয়াতুল ঈমান)।
(৪) মুসলমান ছাড়া অনেক জাতি আছে- যারা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী বলে দাবী করে। যেমন শিখ, আর্য এবং কিছু খৃষ্টান। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তাদেরকে মু’মিন বলা যাবে না। কেননা, তারা নবুয়তে বিশ্বাসী নয়। তাই তাওহীদকে নবুয়তের দর্পনেই দেখতে হবে।
(৫) হযরত আদম (عليه السلام) থেকে শেষ নবী পর্যন্ত অনেক আসমানী ধর্ম এসেছে। কিন্তু অন্য কোন নবীর ধর্মকে ইসলাম ধর্ম বলা হয়নি। কোন উম্মতই নিজেদেরকে মুসলমান জাতি বলে পরিচয় দেয়নি। নবীর নামেই তাদের ধর্মের নাম ছিল। তাদের তাওহীদ ও ধর্ম বিশ্বাস আমাদের মতই ছিল- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, নবীর প্রতি বিশ্বাস, হাশর নশরের প্রতি বিশ্বাস, আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস, ফিরিস্তার প্রতি বিশ্বাস, তাকদীরের ওপর বিশ্বাস- সবই আমাদের মত ছিল- কিন্তু নবী ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন। তাই কারো ধর্মের নাম মুছায়ী, কারো ধর্মের নাম ঈস্থায়ী হয়েছে। ধর্ম হয় নবুয়তের দ্বারা- শুধু তাওহীদের দ্বারা নয়।
(৬) কবরে মুক্তি পাওয়ার শেষ পরীক্ষা হলো নবুয়তের পরিচয়। রব ও দ্বীন সম্পর্কে প্রশ্ন করার পর তৃতীয় প্রশ্ন করা হবে- হুযুরের নবুয়ত সম্পর্কে। নবী পরিচিতির ওপরেই কবরবাসীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে- জান্নাতী হিসাবে। যদি তাওহীদের স্বীকৃতিই যথেষ্ট হতো- তাহলে নবুয়তের প্রশ্নের প্রয়োজন হতো না। তাই বুঝা গেল,- মুক্তি শুধু তাওহীদের ওপর নির্ভরশীল নয় -বরং ঈমানের উপর, আর ঈমানের ভিত্তি হলো তাওহীদও রিসালাতের ওপর বিশ্বাস।
একটি সুক্ষ্ম তত্ত্বঃ
=========
কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে- (১) তোমার রব কে? (২) তোমার ধর্ম কি? (৩) এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা ও বিশ্বাস কি ধরণের ছিল? এখানে লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে- প্রথম দুইটি প্রশ্ন হলো থিউরিটিক্যাল এবং তৃতীয়টি হলো প্র্যাকটিক্যাল। প্রথম দুইটিতে هَٰذَا বা ”এই” শব্দ নেই।
কেননা, আল্লাহ এবং ধর্মকে কবরে দেখানো হবে না- দেখানো হবে শুধু নবীজিকে আর বলা হবে “এই ব্যক্তি” কে? তাই নবীজিকে হাযির- নাযির বলা হয়। দুনিয়ায় থাকতে তুমি কী বলতে? বড় ভাই- নাকি নিজের মত, নাকি বে-মোছাল নবী বলতে? বে-মোছাল নবী বলে বিশ্বাস করলেই মুক্তি দেয়া হবে। প্র্যাকটিকাল পরীক্ষায় পাশ করলে সব পাশ- আর ফেল করলে সব ফেল।
- الإيمان هو تصديق النبى بماجاء به من عند الله – অর্থাৎ-”ঈমানের সংজ্ঞা হলো- নবীকে এভাবে বিশ্বাস করা যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছু নিয়ে এসেছেন- তা সত্য”।
এখানে প্রথমেই নবীর সত্যতার উপর বিশ্বাস স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। তারপর আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নিযুক্তি ও তাঁর উপর অর্পিত বিষয়াবলীর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করাকেই ঈমান বলা হয়েছে। এই ঈমানই হলো মুক্তির পূর্বশর্ত। শুধু তাওহীদে বিশ্বাসের নাম ঈমান নয়। তাওহীদ ও রিসালাত উভয়কে বিশ্বাসের নামই ঈমান। এর ওপরই মুক্তি ও জান্নাতলাভ নির্ভরশীল। তাওহীদী জনতা যে কোন আস্তিকের বেলায় প্রযোজ্য- কিন্তু ইসলামে শুধু তাওহীদের নাম ঈমান নয় -বরং ”মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”-এর নাম ঈমান। কেননা, এখানে প্রথমে রাসূল ও পরে আল্লাহ রয়েছে।
বুঝা গেলা- আল্লাহর সাথে রাসূলের সংযোগ না হলে ঈমান হয় না। সব কিছু বিশ্বাস করা সত্ত্বেও যদি নবীর ওপর বিশ্বাস না করে, তাহলে সে মু'মিন হবেনা, বরং কাফের হবে। তার অনেক উদাহরণ ও দলীল রয়েছে। যথাঃ
(১) শয়তান খোদার যাত ও সিফাত, ফিরিস্তা, কিতাব, আখেরাত, অদৃষ্ট বা তকদীর, মৃত্যুর পর পূনরুত্থান- ইত্যাদি ৬টি বিষয়ের ওপর বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু বিশ্বাসী ছিলনা আদম নবীর নবুয়তের ওপর। তাই তার গলায় লা'নতের শিকল পড়েছিল। সে নিজেই কিয়ামত স্বীকার করে বলেছিল-
رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ - ”হে আমার রব! আমাকে পূনরুত্থান দিবস পর্যন্ত সময় দাও” (সূরা ছোয়াদ, ৭৯. আয়াত)। সে বেহেস্ত-দোযখও বিশ্বাস করতো। তাই আল্লাহ তা'য়ালা বলেছিলেন -
لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكَ وَمِمَّن تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ – “আমি তার অনুসারীদের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবো” (সূরা ছোয়াদ, ৮৫ আয়াত)। এতে বুঝা গেল- শয়তান জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কেও জ্ঞাত ছিল।
বস্তুতঃ শয়তান ঈমান (মোফাসসাল) -এর ছয়টি বিষয়ে বিশ্বাসী ছিল- কিন্তু বিশ্বাসী ছিলনা ৭ম ঈমান নবুয়তে। তাই সে কাফেরে পরিণত হলো।
নবুয়ত হলো সীলমোহরের ন্যায়। কাগজের নোটের উপর সরকারী সীলমোহর থাকলেই উহার মূল্য দাঁড়ায় শ' ও হাজারে। অনুরূপ তৌহিদের মূল্য তখনই হবে- যখন তার ওপর নবুয়তের সীলমোহর থাকবে। হাশরের ময়দানে কাফেররাও তাওহীদী শব্দ- “হে আল্লাহ” বলবে- কিন্তু নাজাত পাবেনা ৷
(২) যদি তৌহিদই মুক্তির জন্য গ্যারান্টি হতো- তাহলে কালেমায় উল্লেখিত রিসালাত অর্থহীন হয়ে যেতো। বুঝা গেল, মুক্তির জন্য শর্ত হলো ঈমানের, আর ঈমানের জন্য শর্ত হলো তাওহীদ ও রিসালাতের।
(৩) আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে আমাদেরকে কখনও ”তাওহিদী জনতা” বলে উল্লেখ করেন নি - বরং মুমিনীন ও মু’মিনাত বলে সম্বোধন করেছেন। বুঝা গেল- শুধু তাওহীদে বিশ্বাসীরা (মুয়াহিদুন) মো’মেন নয়। তারা মৌলবাদী। তাদের কাছে রিসালাতের গুরুত্ব খুবই নগণ্য। রাসূল তাদের মতে আল্লাহর মোকাবেলায় চামার সদৃশ। (দেখুন- তাকভিয়াতুল ঈমান)।
(৪) মুসলমান ছাড়া অনেক জাতি আছে- যারা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী বলে দাবী করে। যেমন শিখ, আর্য এবং কিছু খৃষ্টান। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তাদেরকে মু’মিন বলা যাবে না। কেননা, তারা নবুয়তে বিশ্বাসী নয়। তাই তাওহীদকে নবুয়তের দর্পনেই দেখতে হবে।
(৫) হযরত আদম (عليه السلام) থেকে শেষ নবী পর্যন্ত অনেক আসমানী ধর্ম এসেছে। কিন্তু অন্য কোন নবীর ধর্মকে ইসলাম ধর্ম বলা হয়নি। কোন উম্মতই নিজেদেরকে মুসলমান জাতি বলে পরিচয় দেয়নি। নবীর নামেই তাদের ধর্মের নাম ছিল। তাদের তাওহীদ ও ধর্ম বিশ্বাস আমাদের মতই ছিল- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, নবীর প্রতি বিশ্বাস, হাশর নশরের প্রতি বিশ্বাস, আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস, ফিরিস্তার প্রতি বিশ্বাস, তাকদীরের ওপর বিশ্বাস- সবই আমাদের মত ছিল- কিন্তু নবী ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন। তাই কারো ধর্মের নাম মুছায়ী, কারো ধর্মের নাম ঈস্থায়ী হয়েছে। ধর্ম হয় নবুয়তের দ্বারা- শুধু তাওহীদের দ্বারা নয়।
(৬) কবরে মুক্তি পাওয়ার শেষ পরীক্ষা হলো নবুয়তের পরিচয়। রব ও দ্বীন সম্পর্কে প্রশ্ন করার পর তৃতীয় প্রশ্ন করা হবে- হুযুরের নবুয়ত সম্পর্কে। নবী পরিচিতির ওপরেই কবরবাসীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে- জান্নাতী হিসাবে। যদি তাওহীদের স্বীকৃতিই যথেষ্ট হতো- তাহলে নবুয়তের প্রশ্নের প্রয়োজন হতো না। তাই বুঝা গেল,- মুক্তি শুধু তাওহীদের ওপর নির্ভরশীল নয় -বরং ঈমানের উপর, আর ঈমানের ভিত্তি হলো তাওহীদও রিসালাতের ওপর বিশ্বাস।
একটি সুক্ষ্ম তত্ত্বঃ
=========
কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে- (১) তোমার রব কে? (২) তোমার ধর্ম কি? (৩) এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা ও বিশ্বাস কি ধরণের ছিল? এখানে লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে- প্রথম দুইটি প্রশ্ন হলো থিউরিটিক্যাল এবং তৃতীয়টি হলো প্র্যাকটিক্যাল। প্রথম দুইটিতে هَٰذَا বা ”এই” শব্দ নেই।
কেননা, আল্লাহ এবং ধর্মকে কবরে দেখানো হবে না- দেখানো হবে শুধু নবীজিকে আর বলা হবে “এই ব্যক্তি” কে? তাই নবীজিকে হাযির- নাযির বলা হয়। দুনিয়ায় থাকতে তুমি কী বলতে? বড় ভাই- নাকি নিজের মত, নাকি বে-মোছাল নবী বলতে? বে-মোছাল নবী বলে বিশ্বাস করলেই মুক্তি দেয়া হবে। প্র্যাকটিকাল পরীক্ষায় পাশ করলে সব পাশ- আর ফেল করলে সব ফেল।
এখানেও ভিজিট করুন ইসলামী জীবন