আরাফাতের রাতের দোআ
===============
নবী   করীম   صَلَّی   اللہُ   تَعَالٰی     عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم   ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তি  আরাফাতের   রাতে এই   দোআটি হাজার  বার  পড়বে,  তবে সে যা কিছু আল্লাহ তাআলা থেকে  চাইবে   তা   পাবে।  যদি  (দোআর  মধ্যে)  গুনাহ  অথবা   বন্ধন   ছিন্ন   করার   আবেদন   না   করে   থাকে।”  দোআটি হল এই:

سُبْحٰنَ     الَّذِیْ  فِی   السَّمَآءِِ عَرْشُہٗ ط  سُبْحٰنَ الَّذِیْ فِی  الْاَرْضِ   مَوْطِئُہٗ  ط   سُبْحٰنَ الَّذِیْ  فِی   الْبَحْرِ سَبِیْلُہٗ ط   سُبْحٰنَ الَّذِیْ   فِی النَّارِ سُلْطَانُہٗ  ط سُبْحٰنَ  الَّذِیْ فِی  الْجَنَّۃِ  رَحْمَتُہٗ    ط سُبْحٰـنَ  الَّذِیْ فِی   الْقَـبْرِ قَضَائُہٗ   ط  سُبْحٰنَ الَّذِیْ  فِی  الْھَوَآءِ رُوْحُہٗ  ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ رَفَعَ السَّـمَآءَ ط سُبْحٰنَ الَّذِیْ وَضَعَ الْاَرْضَطسُبْحٰنَ الَّذِیْ لَامَلْجَـاءَ وَلَا مَنْجٰی مِنْہُ  اِلَّا  اِلَیْہِ ط

অনুবাদ:  ঐ    সত্তা  পবিত্র  যার   আরশ  সুউচ্চ।  ঐ  সত্তা পবিত্র   যার রাজত্ব যমিনের মধ্যে।  ঐ সত্তা পবিত্র  যার রাশতা  সমুদ্রের   মধ্যে।  ঐ  সত্তা  পবিত্র  যার   বাদশাহী আগুনের  মধ্যে।  ঐ  সত্তা  পবিত্র  যার  দয়া  বেহেসেন্তর  মধ্যে।  ঐ    সত্তা  পবিত্র  যার  হুকুম   কবরের  মধ্যে।   ঐ সত্তার   পবিত্র  যার  মালিকানায়   ঐ  প্রাণ   যা    বাতাসের মধ্যে আছে।

ঐ  সত্তা  পবিত্র  যিনি  আসমানকে  সুউচ্চ  করেছেন।  ঐ  সত্তা পবিত্র যিনি জমিনকে বিসত্মৃত করেছেন। ঐ  সত্তা পবিত্র   যার   আযাব   থেকে   মুক্তি   এবং   আশ্রয়   পাবার  কোন স্থান নেই, তাঁর নিকট ব্যতীত।

৯ম       তারিখের       রাত         মীনাতে       কাটানো        সুন্নাতে মুআক্কাদা
============
রাতেই মুআল্লিমদের বাস আরাফাত শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা  হয়ে   যায়,  আর   ৯ম  তারিখের  রাত   মীনাতে কাটানো সুন্নাতে মুআক্কাদাটি  লক্ষ্য লক্ষ হাজীদের হাত ছাড়া হয়ে যায়।   বাহারে শরীয়াতে রয়েছে: যদি রাতে মীনাতে   থাকল   কিন্তু     সুবহে   সাদিক   হওয়ার   পূর্বেই   অথবা    ফজরের     নামাযের    পূর্বে    অথবা    সূর্য    উদিত  হওয়ার  পূর্বে  আরাফাতে  চলে  গেল,  তাহলে   সে  মন্দ  (কাজ)   করল।   (বাহারে   শরীয়াত,   ১ম   খন্ড,   ১১২০  পৃষ্ঠা)   জ্ঞান   না   থাকার    কারণে    অসংখ্য  হাজী  সুবহে সাদিকের   পূর্বে   ফজরের   নামায  আদায়  করে   ফেলে! তাড়াহুড়া    না    করে    হাজী   সাহেবরা   আপন   আপন  মুআল্লিমের    সাথে    সাক্ষাৎ     করে   মীনা   শরীফে    রাত কাটানোর   ব্যবস্থা   করে   নিন।   اِنۡ   شَآءَ    اللہ       عَزَّوَجَلّ সকালে সূর্যোদয়ের পরে আপনার  জন্য বাসের  ব্যবস্থা  হয়ে যাবে।

চলো আরাফাত চলতে হে ওয়াহা হাজী বনেগে হাম
গুনাহ    ছে   পাক   হোগে   লোট     কে    জিছ    দম   চলেগে হাম।

আরাফাত শরীফে রওয়ানা
============
আজ  যুলহিজ্জার ৯ তারিখ। ফজরের নামায মুশতাহাব সময়ে  আদায়  করে  লাব্বাইক  এর  যিকির  ও  দোআর  মধ্যে    মশগুল     থাকুন,    যতক্ষণ    না     সূর্য    উদয়     হয়ে মসজিদে  খাইফ   শরীফের  সামনে   ‘সাবির  পাহাড়ের’ উপর       চমকাবে,      এখন       আপনি      কম্পমান      অন্তরে আরাফাত       শরীফের      দিকে     চলুন।     সারা     রাশতায় লাব্বাইকা  ও   যিকির   এবং   দরূদ  শরীফ     বেশী  বেশী পড়তে   থাকুন।   অন্তরকে   অন্য   সব   ধরনের   খেয়াল  থেকে পবিত্র  করার চেষ্টা করুন। কেননা আজ  ঐ দিন,  যে   দিন     কিছু   লোকের     হজ্ব   কবুল   করা    হবে,   আর কিছুকে   ঐ মকবুল হাজীদের সদকায়  ক্ষমা করে দেয়া  হবে।   বঞ্চিত  সেই   যে   আজকে   বঞ্চিত  থাকবে।  যদি কুমন্ত্রণা   আসে  তাহলে   তাদের  সাথেও   যুদ্ধে  নামবেন না। কেননা এটাও শয়তানের এক প্রকারের বিজয় যে, সে আপনাকে অন্য এক কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।

তাই ব্যাস! আপনার একটাই যেন ধ্যান হয় যে, আমার সাথে  আমার    আল্লাহ   তাআলার   আজ  কাজ   রয়েছে।  এভাবে (মনমানসিকতা তৈরী) করার দ্বারা اِنۡ شَآءَ اللہ   عَزَّوَجَلّ শয়তান ব্যর্থ, পরাজীত এবং দূর হয়ে যাবে।

মুহাব্বত মে আপনি গুমা ইয়া ইলাহী!
না   পাওঁ  মেঁ  আপনা   পাতা   ইয়া   ইলাহী!(ওয়াসায়িলে   বখশিশ, ৭৮ পৃষ্ঠা)

আরাফাতের রাশতার দোআ
============
(মীনা শরীফ থেকে বের হয়ে এই দোআ পড়ুন)

اَللّٰھُمَّ     اجْعَلْھَا   خَیْرَ   غُدْوَۃٍ   غَدَوْتُھَا   قَطُّ   وَ      قَرِّبْھَا    مِنْ رِضْوَانِکَ  وَ  اَبْعِدْھَا مِنْ سَخَطِکَ  ط اَللّٰھُمَّ  اِلَیْکَ  تَوَجَّھْتُ وَ عَلَیْکَ  تَوَکَّلْـتُ  وَوَجْھَکَ  اَرَدْتُّ  فَاجْعَلْ  ذَنْبِیْ  مَغْفُوْرًا  وَّحَجِّیْ  مَبْرُوْرًا  وَّارْحَمْنِیْ    وَلَاتُخَیِّبْنِیْ  وَبَارِکْ    لِیْ  فِیْ  سَفَـرِیْ   وَاقْضِ  بِعَرَفَاتٍ حَاجَتِیْ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ ط

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমার এই সকালকে সমস্ত সকাল থেকে     উত্তম     বানিয়ে      দাও      এবং    ইহাকে    তোমার সনত্মুষ্টির নিকটবর্তী করে দাও এবং তোমার অসনত্মুষ্টি থেকে  দূরবর্তী   করে  দাও।  হে  আল্লাহ!  আমি  তোমার  প্রতি মনোনিবেশ করেছি। তোমার উপর নির্ভর করেছি এবং     তোমার      সম্মানিত     মনোযোগ    ইচ্ছা    করেছি।  সুতরাং আমার গুনাহ     সমূহকে  ক্ষমা করে দাও আমার হজ্বকে   কবুল   করে     নাও।   আমার   উপর   দয়া     কর। আমাকে বঞ্চিত করো  না। আমার  সফরে আমার  জন্য বরকত দান কর এবং আরাফাতে আমার প্রয়োজন পূর্ণ করে দাও। নিশ্চয় তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

আরাফাত শরীফে প্রবেশ
============
এই     দেখুন!     এখন     আপনি     সম্মানিত     আরাফাতের  ময়দানের নিকটে এসে পৌঁছেছেন। কেঁপে উঠুন    এবং চক্ষুকে অশ্রুসিক্ত হতে দিন। কারণ  অতি সত্ত্বর আপনি ঐ       সম্মানিত      ময়দানে      প্রবেশ       করবেন,      যেখানে আগমনকারী বঞ্চিত  হয়ে   ফিরে না। দৃষ্টি যখন ‘জবলে রহমতকে’ চুম্বন করবে  তখন  ‘লাব্বাইক’এবং  দোআর  মধ্যে  খুব বেশী করে মগ্ন  হয়ে  যান। কারণ এখানে যে দোআ    করবেন,اِنۡ    شَآءَ    اللہ        عَزَّوَجَلّ    কবুল    হবে।  অন্তরকে সংযত রাখুন এবং দৃষ্টিকে নত করে লাব্বাইক ধ্বনি       অনবরত      পড়তে       পড়তে       কেঁদে       কেঁদে  আরাফাতের  পবিত্র  ময়দানে  প্রবেশ  করুন।  سُبۡحٰنَ  اللہ  عَزَّوَجَلَّ!  ইহা  ঐ  পবিত্র  স্থান,  যেখানে  আজ  লক্ষ  লক্ষ  মুসলমান     একই     পোশাক    (ইহরাম)     পরিধান    করে একত্রিত     হয়েছেন।   চারিদিকে    লাব্বাইক    এর   ধ্বনি  প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।  দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস  করুন, নিঃসন্দেহে  অসংখ্য   আউলিয়ায়ে   কেরাম    رَحِمَہُمُ   اللہُ    تَعَالیٰ   এবং আল্লাহ এর দুইজন নবী হযরত সায়্যিদুনা  খিজির এবং হযরত   সায়্যিদুনা    ইলিয়াছ عَلَیۡہِمَا   السَّلَام আরাফাত দিবসে  আরাফাত  ময়দান  মুবারকে  উপস্থিত  থাকেন।  এখন    আপনি খুব গভীরভাবে  আজকের  দিনের গুরুত্ব  অনুধাবন    করতে     পারেন।    হযরত   সায়্যিদুনা    ইমাম জাফর সাদিক رَحۡمَۃُ اللہِ  تَعَالٰی عَلَیْہِ থেকে বর্ণিত: কিছু গুনাহ  এমন   আছে;   যার   কাফ্‌ফারা  উকুফে  আরাফাই (অর্থাৎ   তা   কেবল   আরাফাতের   ময়দানে   অবস্থানের  মাধ্যমেই  ক্ষমা   হয়।)  (কুতুল     কুলুব,  ২য়  খন্ড,  ১৯৯ পৃষ্ঠা)

আরাফাতের দিবসের দু’টি মহান ফযীলত
============
﴾১﴿  আরাফাতের দিনের চেয়ে বেশী অন্য কোন  দিনে    আল্লাহ  তাআলা  আপন   বান্দাদেরকে  জাহান্নাম  থেকে  মুক্ত     করেন     না।     অতঃপর     তাদের     সাথে     (নিয়ে)  ফেরেশতাদের উপর গর্ব করেন। (মুসলিম, ৭০৩ পৃষ্ঠা, হাদীস:   ১৩৪৮)   ﴾২﴿   আরাফাতের   দিন   ছাড়া   অন্য  কোন      দিন      শয়তানকে      খুব    বেশী    তুচ্ছ,    লাঞ্চিত, অপমানিত, আর  খুব  বেশী রাগে ভরপূর দেখা  যায়নি, আর  তার  কারণ  এটাই  যে,  ঐ  দিনে   রহমতের    বর্ষণ এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে  বান্দাদের (অনেক)  বড় বড় গুনাহকে ক্ষমা  করে দেয়াটা শয়তান  দেখে। (মুআত্তা  ইমাম  মালিক,  ১ম খন্ড,  ৩৮৬ পৃষ্ঠা,  হাদীস: ৯৮২)

কেউ যখন মহিলাদেরকে দেখল......
============
এক  ব্যক্তি  আরাফাতের  দিনে   মহিলাদের  দিকে  দৃষ্টি   দিল, তখন রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم    ইরশাদ   করলেন:   “আজ   ঐ   দিন,     (যে   দিনে)   কোন ব্যক্তি (আপন) কান, চোখ ও জিহ্বাকে আয়ত্তে (সংযত) রাখবে,  তার  ক্ষমা  হয়ে  যাবে।”  (শুআবুল  ঈমান,  ৩য়  খন্ড, ৪৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪০৭১)

ইয়া ইলাহী! হজ্ব করো তেরী রিজাকে ওয়াসিতে
কর কবুল ইছ কো মুহাম্মদ মুস্তফা কে ওয়াসিতে

اٰمِين  بِجا  هِ  النَّبِيِّ  الْاَمين          صَلَّی  اللہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم

আরাফাতের ময়দানে কংকর গুলোকে

সাক্ষী বানানোর ঈমান তাজাকারী ঘটনা
============
হযরত  সায়্যিদুনা  ইবরাহীম ওয়াসিতী رَحۡمَۃُ اللہِ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ  হজ্বের  সময়  আরাফাতের   ময়দানে  ৭টি   কংকর হাতে     তুলে    নিলেন     আর    তাদের     (উদ্দেশ্য       করে) বললেন:   ওহে   কংকরেরা!   তোমরা   সাক্ষী    হয়ে    যাও আমি  বলছি: لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللہُ  وَ اَنَّ مُحَمَّدًا  عَبْدُہٗ   وَرَسُوْلُہٗ ؕ   অনুবাদ:  ‘আল্লাহ  তাআলা  ব্যতীত  কোন  উপাস্য  নেই  এবং  মুহাম্মদ  صَلَّی  اللہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم         তাঁর বিশেষ     বান্দা      ও    রাসুল।’     অতঃপর    যখন    (রাতে) ঘুমালেন তখন   স্বপ্নে  দেখলেন   যে, কিয়ামত  সংঘটিত হয়ে   গেছে!   হিসাব    নিকাশ   চলছে!    ফয়সালা   শুনিয়ে দেয়া   হচ্ছে!   এখন   ফিরিশতারা   (তাকে)   জাহান্নামের  দিকে  নিয়ে  যাচ্ছে।  যখন  জাহান্নামের  দরজায়  পৌঁছে  তখন   ঐ  কংকর  গুলো  থেকে  একটি   কংকর  দরজায়   এসে    বাধাঁ    হয়ে   দাঁড়ায়।    অতঃপর   দ্বিতীয়   দরজায় পৌঁছলে    অপর    একটি    কংকর     একইভাবে    দরজার  সামনে এসে   যায়।  এমন (অবস্থা)  জাহান্নামের সাতটি দরজায়   ঘটল।  এরপর  ফিরিশতারা  আরশে   মুআল্লার সামনে   নিয়ে উপস্থিত  হলেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করলেন: ওহে ইবরাহীম! তুমি  কংকরগুলোকে তোমার ঈমানের   উপর   সাক্ষী  (বানিয়ে)   রেখেছিলে,   আর    ঐ নিষ্প্রাণ   পাথরগুলো   তোমার    হক   নষ্ট   করেনি,   আমি  কিভাবে    তোমার    সাক্ষীর    হক    বিনষ্ট    করতে    পারি!  অতঃপর    আল্লাহ    তাআলা    ইরশাদ    করলেন:     একে   জান্নাতের     দিকে  নিয়ে  যাও।  সুতরাং  যখন  জান্নাতের দিকে  নিয়ে  যাওয়া    হল    তখন  জান্নাতের  দরজা    বন্ধ  অবস্থায় পেল। (তখনই) কলেমা পাকের সাক্ষ্য আসল, আর   তিনি    رَحۡمَۃُ   اللہِ    تَعَالٰی    عَلَیْہِ   জান্নাতে       প্রবেশ করলেন। (দুররাতুল নাসেহীন, ৩৭ পৃষ্ঠা)

সৌভাগ্যবান হাজী সাহেব-সাহেবাগণ
============
আপনিও আরাফাতের ময়দানে ৭টি কংকর তুলে নিয়ে উলেস্নখিত  কলেমা   অথবা  কলেমায়ে শাহাদাত পড়ে  সেগুলোকে সাক্ষী বানিয়ে পুনরায় ঐ স্থানে  রেখে দিন। এমনটি    পৃথিবীর    যেখানেই    থাকুন    না   কেন   সুযোগ পেলেই গাছপালা, পাহাড়ুপর্বত, সমূদ্রমালা,  নদীনালা এবং    বৃষ্টিমালা     ইত্যাদি    ইত্যাদিকে     কলেমা    শরীফ শুনিয়ে নিজ ঈমানের সাক্ষী বানাতে থাকুন।

আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করার ৯টি মাদানী ফুল
============
﴾১﴿  যখন  দ্বিপ্রহর  নিকটবর্তী  হবে  তখন  গোসল  করে  নিন। ইহা সুন্নাতে  মুয়াক্কাদা।   যদি   গোসল না   করেন, তাহলে     কমপক্ষে    ওযু     অবশ্যই     করবেন।    (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড,  ১১২৩ পৃষ্ঠা) ﴾২﴿  আজ  অর্থাৎ ৯ই যুলহিজ্জা    এর      দ্বিপ্রহর      ঢলে     পড়া    থেকে    (অর্থাৎ যোহরের  নামাযের  ওয়াক্ত   শুরু  হওয়া)  শুরু   করে   ১০ তারিখের  সুবহে সাদিক পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়টুকুতে যে কেউ    ইহরামের    সাথে   এক   মুহুর্তের    জন্যও      পবিত্র আরাফাতের   ময়দানে   প্রবেশ   করল   সে   ‘হাজী’   হয়ে  গেল।  আজকের   দিনে এখানে অবস্থান  করাটা  হজ্জের সবচেয়ে  বড় রুকন।  ﴾৩﴿  আরাফাত শরীফে যোহরের সময়ে যোহর ও আসরের নামাযকে মিলিয়ে এক সাথে পড়া   হয়।   কিনত্মু   এর  কিছু  শর্ত  আছে।   (আপনারা  নিজ   নিজ   তাবুতে   যোহরের   নামায   যোহরের   সময়ে এবং    আসরের   নামায    আসরের   সময়ে   জামাআতের সাথে আদায় করুন।)     ﴾৪﴿ আজ হাজীদেরকে  রোজা বিহীন  অবস্থায়  থাকা  এবং   সর্বদা  ওযু   অবস্থায়   থাকা সুন্নাত।  ﴾৫﴿  জবলে  রহমতের  নিকটে  যেখানে  কালো  পাথরের  কার্পেট  রয়েছে  সেখানে অবস্থান করা উত্তম। ﴾৬﴿   কিছু   কিছু    লোক     ‘জবলে    রহমতের’   একেবারে উপরে উঠে যায় এবং সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রুমাল নাড়াতে   থাকে,  আপনি  এই   রকম  করবেন   না  এবং তাদের ব্যাপারেও  অন্তরে   খারাপ  ধারণা আনবেন  না। আজকের দিন অন্যের দোষ-ত্রুটি দেখার দিন নয় বরং নিজের      দোষ-ত্রুটির      উপর       লজ্জিত      হওয়া      এবং  কান্নাকাটি করার দিন। ﴾৭﴿ উকুফ তথা অবস্থানের জন্য দাঁড়িয়ে     থাকা      উত্তম।    (অর্থাৎ    দাঁড়িয়ে    দাঁড়িয়ে আরাফাতে  অবস্থান   করা   উত্তম।)    কিন্তু   এটা  শর্ত  বা ওয়াজিব   নয়।   বসে  থাকলেও  উকুফ    (অবস্থান)  হয়ে  যাবে।    উকুফের   ক্ষেত্রে    নিয়্যত    করা    ও   ক্বিবলামুখী হওয়া উত্তম। ﴾৮﴿ নামাযের পর পরই উকুফ (অবস্থান) করা সুন্নাত। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১২৪ পৃষ্ঠা) ﴾৯﴿ মওকিফে (অবস্থান স্থলে) সর্বপ্রকারের ছায়া থেকে এমনকি      (ছায়া      লাভের     উদ্দেশ্যে)     ছাতা     লাগানো থেকেও  বিরত  থাকুন।  হ্যাঁ    যে   একান্তভাবে  অপারগ, বাস্তবে   সে   অক্ষমই।    (প্রাগুক্ত,     ১১২৮     পৃষ্ঠা)    ছাতা লাগালে  পুরুষেরা   এ    ব্যাপারে   সতর্ক    থাকবেন,  যেন মাথার    সাথে    স্পর্শ    না     হয়।    অন্যথায়     কাফ্‌ফারার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

ইমাম আহলে  সুন্নাত  رَضِیَ  اللہُ تَعَالٰی   عَنۡہُ  এর  বিশেষ  উপদেশ
============
কুদৃষ্টি  সবসময়   হারাম।  ইহরাম   অবস্থায়,   মাওকিফে  (হজ্বের অবস্থান স্থলে) কিংবা  মসজিদে হারমে, কা’বার সামনে, বায়তুল্লাহ এর  তাওয়াফরত    অবস্থায়া  জায়েয নয়।  মূলত কখনও   কোনো  অবস্থায়  কুদৃষ্টি দেয়া  বৈধ নয়।   ইহা   আপনাদের   পরীক্ষার   স্থান।   মহিলাদেরকে  আদেশ  করা  হয়েছে   যে, এখানে মুখ  আবৃত  করিওনা এবং  আপনাদেরকে  আদেশ  করা  হয়েছে  যে,  তাদের  প্রতি দৃষ্টি দিওনা।  দৃঢ়ভাবে জেনে  রাখবেন, এরা বড় মর্যাদাবান   বাদশার   বাঁদি   এবং   এই   সময়   আপনারা  এবং তারা সবাই (আল্লাহর) বিশেষ দরবারে উপস্থিত। নিঃসন্দেহে যার বগলের     নিচে বাঘের বাচ্চা থাকে,  ঐ সময়   কে   তার  প্রতি  দৃষ্টি   উঠিয়ে   কথা     বলার  সাহস রাখে?       তাহলে       একক       মহাপরাক্তমশালী       আল্লাহ তাআলার     বাদীরা     তাঁর      বিশেষ     দরবারে      উপস্থিত হয়েছেন,    আর    (এমতাবস্থায়)    তাদের    উপর    কুদৃষ্টি  দেয়ার   শাসিন্ত   কতইনা  কঠিন   হবে!  وَلِلهِ  المَثَلُ  الْاَعْلٰي কানযুল  ঈমান   থেকে     অনুবাদ:  “আর  আল্লাহর  জন্য   রয়েছে  উচ্চ  মর্যাদা।”  হ্যাঁ!    হ্যাঁ!  সাবধান!  ঈমান   কে   বাঁচিয়ে,   অন্তর     ও   দৃষ্টিকে  সংযত  করে   (পথ  চলুন)। হেরম  (স্মরণ   রাখবেন!   আরাফাত   হেরমের  সীমানার  বাইরে    অবস্থিত।)   ঐ    জায়গা    যেখানে   গুনাহর   ইচ্ছা করলেও   পাকড়াও    করা   হবে,    আর   এখানে   একটি গুনাহ   লক্ষ    গুনাহের   সমান    গণ্য     করা   হয়।    আল্লাহ তাআলা  (আমাদেরকে) কল্যাণের তাওফিক দান  কর। اٰمِين  بِجا  هِ  النَّبِيِّ  الْاَمين          صَلَّی  اللہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১০ম খন্ড, ৭৫০ পৃষ্ঠা)

গুনাহো ছে মুঝকো বাঁচা ইয়া ইলাহী!
বুরী      আদতী     ভী      ছুড়া     ইয়া     ইলাহী!(ওয়াসায়িলে   বখশিশ, ৭৯ পৃষ্ঠা)

Top