মুজদালিফায় রওয়ানা
============
যখন দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে যাবে যে, সূর্য অস্ত গিয়েছে, তখন আরাফাত   শরীফ   হতে    মুজদালিফা    শরীফের    দিকে  রওয়ানা  হয়ে    যাবেন।  সারা   রাশতায়  জিকির,    দুরূদ এবং ‘লাব্বাইক’  বারবার পড়তে  থাকবেন। সারা  পথ কান্না     করে  করে   এগিয়ে    যাবেন।  কাল  আরাফাতের ময়দানে    আল্লাহর     হক      ক্ষমা    হয়ে     গেছে,      এখানে (মুযদালিফায়)      বান্দার      হক      ক্ষমা      করার      ওয়াদা  রয়েছে।(বাহারে   শরীয়াত,  ১ম    খন্ড,  ১১৩১,    ১১৩৩ পৃষ্ঠা)

এই  দেখুন!  মুজদালিফা  শরীফ এসে গেছে! চারিদিকে কিরণ       এবং     সৌন্দর্য্য      লেগে     আছে,     মুযদালিফার সম্মুখভাগে    খুব    প্রচন্ড    ভিড়    হয়।    আপনি    নির্ভয়ে  স্বাভাবিক  ভাবে    একেবারে  সামনের দিকে চলে  যান। اِنۡ شَآءَ اللہ   عَزَّوَجَلّ  ভিতরে প্রশস্ত খোলামেলা  জায়গা  পেয়ে    যাবেন।      কিন্তু     এ   ব্যাপারে   খুব    বেশী   সতর্ক থাকবেন যে, যেন আবার মীনা শরীফের সীমানায় ঢুকে না  যান। যারা   পায়ে হেঁটে যাবেন তাদের জন্য আমার  পরামর্শ     হল;     মুযাদালিফায়      প্রবেশ     করার      পূর্বেই ইস্তিঞ্জা,   অযু ইত্যাদি সেড়ে নিবেন।  অন্যথায় ভিড়ে  খুব চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

মাগরিব ও ইশা এক সাথে পড়ার পদ্ধতি
============
এখানে আপনাকে  একটি  আযান এবং একটি  ইকামত দ্বারা  (মাগরিব  ও এশা)  উভয় ওয়াক্তের নামায এশার  সময় এক সাথে আদায় করতে হবে। সুতরাং আযান ও ইকামতের  পর   প্রথমে  মাগরিবের  তিন   রাকাত  ফরয আদায়  করে  নিবেন,  সালাম  ফিরানোর    সাথে  সাথেই ইশার ফরয পড়ে নিবেন। অতঃপর মাগরিবের সুন্নাত, নফল    (আওয়াবীন)    সমূহ    এরপর    ইশারের    সুন্নাত,  নফল এবং বিতির অন্যান্য নফল নামায আদায় করুন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৩২ পৃষ্ঠা)

কংকর সমূহ বেছে নিন
============
আজকের  রাত  কোন   কোন  আকাবের   ওলামা  رَحِمَہُمُ اللہُ تَعَالٰی এর মতে, লায়লাতুল কদরের  চেয়েও উত্তম। এই  রাত    অমনোযোগীতা  এবং  খোশগল্পে   নষ্ট  করা  মানে বিরাট কিছু  থেকে   বঞ্চিত হওয়া। যদি সম্ভব  হয় তাহলে   সারারাত   ‘লাব্বাইক’    যিকির  ও  দরূদ  শরীফ  পাঠে অতিবাহিত করুন। (প্রাগুক্ত, ১১৩৩ পৃষ্ঠা) রাতের মধ্যেই    শয়তানদেরকে    মারার    জন্য    পবিত্র    জায়গা  থেকে  ৪৯টি কংকর (খেজুর বিচি পরিমাণ) বেঁচে নিন। বরং  কিছু   বেশী  পাথর  নিন।  যেন    নিশানা  ভুল   হলে  (অর্থাৎ   পাথর নির্দিষ্ট  স্থানে   গিয়ে না   পড়লে বা  হাত ফসকে   নিচে     পড়ে    গেলে)    ইত্যাদি    কাজে   আসে। এগুলোকে   তিনবার   ধুয়ে   নিন,   বড়   বড়    পাথরকে  ভেঙ্গে  কংকর  তৈরী  করবেন   না। অপবিত্র   স্থান থেকে অথবা      মসজিদ    থেকে   অথবা   ‘জামরার’পাশ   থেকে  কংকর নিবেন না।

একটি জরুরী সতর্কতা
============
আজ ফজরের নামায প্রথম ওয়াক্তে (ওয়াক্তের শুরুতে) আদায়  করা   উত্তম।    কিনত্মু  নামায     ঐ  সময়  আদায়  করবেন  যখন   প্রকৃত  ভাবে  সুবহে  সাদিক   হয়ে   যায়। সাধারণত  মুআল্লিমের  লোকেরা   খুব তাড়াহুড়া  করে থাকে,    আর     ফজরের     ওয়াক্ত    শুরু    হওয়ার    আগেই ‘সালাত  সালাত’   বলে  চিৎকার  শুরু  করে   দেয়।  ফলে কিছু  হাজী  ওয়াক্ত  শুরু   হওয়ার  পূর্বেই   নামায   আদায় করে      নেয়।    আপনারা     এমনটি    করবেন    না।     বরং  অন্যদেরকে  নরম সুরে নেকীর দাওয়াত  দিয়ে  বুঝিয়ে  বলুন যে,   এখনও সময় হয়নি। যখন  কামানের  গোলা  নিক্ষেপ হবে। এরপর নামায আদায় করুন।

মুজদালিফায় অবস্থান
============
মুজদালিফায় রাত অতিবাহিত করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। তবে মুযদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। মুযদালিফায় অবস্থানের  সময়  হল    সুবহে    সাদিক  থেকে  শুরু  করে  সূর্যোদয়  পর্যন্ত।  এর  মধ্যবর্তী  সময়ের  যে  কোন  এক  মুহুর্তের  জন্য সেখানে  অবস্থান করে তাহলে উকুফ   বা অবস্থান  হয়ে  যাবে।  এটা স্পষ্ট যে,  যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের সময়  সেখানে ফজরের নামায  আদায় করবে তার    উকুফ    তথা   ‘অবস্থান্তু    বিশুদ্ধভাবে    আদায়   হয়ে যাবে।   যে   ব্যক্তি   সুবহে  সাদিকের  পূর্বেই  মুযদালিফা হতে   চলে    গেল   তার    ওয়াজিব   বাদ     পড়ে    গেছে।  সুতরাং তার উপর ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে। হ্যাঁ! তবে মহিলা,   রোগী,  দূর্বল  কিংবা  শক্তিহীন   ব্যক্তি  ভিড়ের কারণে   যাদের    বাস্তবিকই   খুব    কষ্ট    পাবার   সম্ভাবনা আছে,  তারা  যদি  এরকম  লোক  একান্ত  অপারগ  হয়ে  চলে     যায়     তাহলে    কোন     অসুবিধা    নেই।     (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৩৫ পৃষ্ঠা)

মাশআরুল হারাম পাহাড়ের উপর যদি স্থান পাওয়া না যায়। তাহলে  উহার পাদদেশে, আর   যদি ইহাও সম্ভব না হয় তাহলে  ‘ওয়াদিয়ে মুহাস্‌সির’   ব্যতীত যেখানেই জায়গাপান  অবস্থান  করুন। কিন্তু  ওয়াদিয়ে  মুহাস্‌সিরে অবস্থান         করা         জায়েয         নয়,         আর        আরাফাতে অবস্থানকালীন     সময়ের     সমস্ত    নিয়মাবলী     এখানেও অনুসরণ      করবেন।    অর্থাৎ    ‘লাব্বাইক’    বেশী     বেশী  পড়বেন      এবং   যিকির,    দরূদ    এবং   দোআর    মধ্যে মশগুল  থাকবেন।  (প্রাগুক্ত, ১১৩৩ পৃষ্ঠা)  اِنۡ  شَآءَ اللہ   عَزَّوَجَلّ  যা প্রার্থনা করবেন উহা  পেয়ে যাবেন।  কারণ, কাল আরাফাত শরীফে আল্লাহর হক ক্ষমা করা হয়েছে, আর  এখানে  বান্দার  হক  ক্ষমা  করার ওয়াদা রয়েছে।  (বান্দার   হক  ক্ষমা  হওয়ার  বিশতারিত  বিবরণ  ১৬নং  পৃষ্ঠায় উলেস্নখ করা হয়েছে)

ফযরের নামাযের পূর্বে কিন্তু সুবহে সাদিক হওয়ার পর কেউ  যদি  এখান    থেকে  চলে  যায়   অথবা   সূর্য  উদিত হওয়ার পরে এখান থেকে বের হল তাহলে সে খুব মন্দ কাজই    করল।    কিন্তু    এর    কারণে    তার    উপর    ‘দম’  ইত্যাদি ওয়াজিব হবে না। (প্রাগুক্ত)

মুযদালিফা হতে মীনায় যাওয়ার সময় রাশতায় পড়ার দোআ
============
যখন সূর্য  উদয়  হতে আর দুই  রাকাত  নামায  পড়তে যতটুকু  সময়  লাগে  তৎপরিমাণ  সময়   অবশিষ্ট  থাকে  তখনই  মিনা  শরীফের  দিকে  রওয়ানা  হয়ে  যান  এবং  সারা   রাশতায়    ‘লাব্বাইক’  যিকির   এবং  দুরূদ  শরীফ  বারবার পড়তে থাকুন, আর এ দোআ পড়ুন:

اَللّٰھُمَّ  اِلَيْكَ    اَفَضْتُ   وَمِنْ   عَذَابِكَ  اَشْفَقْتُ  وَ   اِلَيْكَ  رَجَعۡتُ  وَمِنْكَ  رَهِبْتُ   فَاقْبَلْ نُسُكي   وَعَظِّمْ  اَجْرِي    وَارْحَم تَضَرُّعِي وَاقْبَل تَوْبَتِي  وَاسْتَجِبْ دُعَآئِي ،

অনুবাদ:  হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রতি ফিরে  এসেছি এবং   তোমার   শাসিন্তর   ব্যাপারে   ভীত   এবং   তোমার  প্রতি   মনোনিবেশ  করেছি   এবং   তোমাকে     ভয়  করি। তুমি  আমার ইবাদত  কবুল  কর এবং  আমার  প্রতিদান বাড়িয়ে দাও,   আর  আমার  অক্ষমতার উপর দয়া কর এবং     আমার     তাওবাকে     কবুল     কর     এবং     আমার  দোআকে কবুল কর।

মীনা দৃষ্টিগোচর হতেই এই দোআ পড়ুন
============
মীনা   শরীফ   দৃষ্টিতে   পড়লে   (প্রথমেও   শেষে   দরূদ  শরীফ  সহকারে)    ঐ  দোআই   পড়ুন;  যা  মক্কা  শরীফ থেকে  আসার  সময়  মীনা  শরীফ   দেখে পড়েছিলেন। দোআটি হল এই:
اَللّٰھُمَّ ھٰذِهٖ مِنًی  فَامْنُنْ    عَلَیَّ بِمَا  مَنَنْتَ  بِہٖ   عَلٰی اَوْلِیَآئِکَ    ط

অনুবাদ: হে  আল্লাহ! এটা মীনা, আমার উপর ঐ দয়াই কর   যা  তুমি    তোমার   আউলিয়াদের  (বন্ধুদের)   উপর করেছ।

ইয়া ইলাহী! ফজল কর তুঝ কো মীনা কা ওয়াসিতা,
হাজীয়োঁ কা ওয়াসিতা কুল আউলিয়া কা ওয়াসিতা।

صَلُّوْا عَلَی  الۡحَبِیۡب!                              صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد

Top