ঊনত্রিশতম অধ্যায়ঃ ১৪০০ বৎসর পূর্বে নির্মিত নিজগৃহে হুযুরের অবস্থানঃ
প্রসঙ্গঃ হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه)’র গৃহে অবস্থান- ইলমে গায়েবের প্রকাশ।
==========
নবী করিম [ﷺ] মদীনায় প্রবেশ করলে আউছ ও খাযরাজ বংশের প্রত্যেকেই তাঁদের গৃহে নবীজিকে মেহমান হওয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। নবী করিম [ﷺ]-এঁরশাদ করলেন, “আমার কাস্ওয়া উট আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত। সে নিজেই ঠিক করে নেবে আমি কার গৃহের মেহমান হবো।”

উট চলতে চলতে বনী নাজ্জার গোত্রের দুই ইয়াতিম শিশু সাহল ও সোহায়েল-এঁর খেজুরের আড়তে এসে বসে পড়লো। এখানেই বর্তমানে মসজিদে নববী অবস্থিত। পুনরায় উট চলতে লাগলো এবং হযরত আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه)’র গৃহাংগনে গিয়ে বসে পড়লো। নবী করিম [ﷺ] বললেন, ‘এখানেই আমার অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে’। আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) মালসামানা নিজ গৃহে তুলে নিলেন। তিনি নবী করিম [ﷺ]-এঁর নানার বংশ বনু নাজ্জারের লোক ছিলেন। মদিনাবাসীদের মধ্যে তাঁর মর্যাদাই ছিল আলাদা। এভাবে উট হুযুরের বাসস্থান ও মসজিদে নববীর স্থান নির্ধারিত করে দিল। হুযুরের পরশে উট ও আল্লাহর এলহাম প্রাপ্ত হয়। সুবহানআল্লাহ!

এই গৃহ সম্পর্কে আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হুযুর [ﷺ]’র ১৪০০ বৎসর পূর্বে ইয়েমেন-এর বাদশাহ আবু কোরাব তিব্বা কর্তৃক ইয়াছরিব (মদীনা) শহর ধ্বংস করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তথাকার ইয়াহুদী আলেমগণ তাকে বলেছিল - আপনি এই শহর ধ্বংস করতে পারবেন না। কেননা, শেষ যুগের নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা [ﷺ] হিজরত করে এখানে স্থায়ীভাবে বাসস্থান বানাবেন। একথা শুনে তিব্বা বাদ্শাহ সাথে সাথে নবীজীর উপর গায়েবী ঈমান আনেন। তাঁর এই না দেখা অগ্রিম ঈমান আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। তিব্বা বাদশাহ নবী করিম [ﷺ]’র শানে একটি কবিতা লিখে হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর পূর্বপুরুষগণের নিকট হস্তান্তর করেন এবং বলেন - আমার এই কবিতা বা পত্রখানা তোমরা ঐ নবীজীর খেদমতে পৌঁছিয়ে দিও। ঐ কাব্যপত্রখানা হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর পূর্বপুরুষগণ সযত্নে সংরক্ষণ করতে থাকেন। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) উত্তরাধিকার সূত্রে ঐ কাব্যপত্রের মালিক হোন। নবী করিম [ﷺ] হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه)-এর গৃহে অবস্থান করে ঐ কাব্যপত্রখানি তলব করেন। ঐ পত্র সম্পর্কে হযরত আবু আইয়ুব আনসারীর কিছু জানা ছিলনা। নবী করিম [ﷺ] নিজে পুরাতন কাগজপত্রের মধ্য হতে উক্ত পত্রখানা বের করলেন। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) নবী করিম [ﷺ]’র ইলমে গায়েব দেখে হতবাক হয়ে যান। নবী করিম [ﷺ]-এঁর উট সেই ঘরের সন্ধান করে এখানে এসে বসে পড়লো। নবীজীর সংশ্রবে এসে উটের যে বিদ্যা অর্জিত হলো - তার খানিকটুকু আমাদের নসীব হলে জীবন ধন্য হতো।

তিব্বা বাদশাহ কর্তৃক লিখিত কাব্যপত্রের কিয়দাংশ বেদায়া গ্রন্থে উদ্ধৃত করা হয়েছে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে তা উদ্ধৃত করা হলো-
شهدت على احمد انه + رسول من الله بارى النسم -
فلو مد عمري إلى عمره + لكنت وزير إله وابن عم -
وجاهدت بالسيف أعدائه + وفرجت عن صدره كل هم -
অর্থঃ- আমি (তিব্বা একথার উপর স্বাক্ষ্য দিচ্ছি এবং ঈমান আনছি যে, আহমাদ মুজতবা [ﷺ] মানবজাতির প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্বাচিত রাসূল। আমাদের হায়াত যদি তাঁর যুগ পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতো - তাহলে আমি অবশ্যই তাঁর পরামর্শক হতাম ও জ্ঞাতি ভাইয়ের ন্যায় তাঁর দুশমনদের বিরোদ্ধে তরবারী দ্বারা যুদ্ধ করতাম এবং তাঁর মনের ব্যাথা দূর করে দিতে চেষ্টা করতাম।” বেদায়া ও নেহায়া ২য় খন্ড ১৬ পৃষ্ঠা পুরাতন সংস্করণে)।

নবী করিম [ﷺ]-এঁরশাদ করেছেন, لا تسبوا تبعا فإنه كان قد اسلم অর্থঃ- তোমরা তিব্বা বাদশাহকে মন্দ বলোনা! কেননা, সে অনেক পূর্বেই আমার উপর ঈমান এনে মুসলমান হয়েছে।” নবী করিম [ﷺ] আরও এরশাদ করেছেন, -
لا تسبوا اسعد الحميري -فإنه اول من كسى الكعبة -
অর্থঃ- “তোমরা আছআদ হিমইয়ারী (তিব্বা) কে মন্দ বলো না। কেননা, সে-ই সর্বপ্রথম কা’বা ঘরকে উত্তম চাদর দ্বারা আবৃত করেছে।”

যাক- নবী করিম [ﷺ] যে বৎসর মদিনায় হিজরত করেন, সে বৎসরের মুহররম থেকেই হিজরী সন গণনা করা হয়। কেননা, সে তারিখ হতেই হিজরতের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) মুহররমের পহেলা তারিখে ৮০০ দিরহাম দিয়ে দুটি উট কিনে নবীজীর খেদমতে পেশ করেছিলেন, যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। ১৭ বৎসর পর হযরত উমর (رضي الله عنه)-’র খেলাফতযুগে মুহররম মাস থেকে সন প্রবর্তন করা হয়। এটি মুসলমানদের নিজস্ব সন। ইংরেজী সন খ্রিস্টানদের জন্য। বাংলা সন বাঙ্গালীদের জন্য। নওরোজ অগ্নি উপাসক ইরানিদের জন্য। কিন্তু হিজরী সন মুসলমানদের জন্য। ধর্মীয় যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান চান্দ্রমাসকে ঘিরেই পালিত হয়। চাঁদের তারিখ ধরা হয় - পূর্ব রাত হতে পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত। সুতরাং মুসলমানদের মূল ক্যালেন্ডার হলো হিজরী সন।

Top