মাসয়ালা (১) - কুরবানি পশু নিখুঁত হতে হবে। সামান্য খুঁত থাকলে কুরবানি জায়েজ হবে। কিন্ত মাকরুহ হবে। খুব বেশি খুঁত থাকলে আদৌ কুরবানি হবেনা। জন্ম হতে শিং না থাকলে কুরবানি জায়েজ হবে। শিং সামান্য ভেঙে গেলে জায়েজ হবে কিন্ত শিং গোড়া হতে ভেঙে গেলে জায়েজ হবেনা। যদি পশু পাগল হয়ে যায় এবং চড়ে পানাহার করা ত্যাগ করে থাকে, তাহলে জায়েজ হবেনা। এই প্রকার পাগলামি না হলে জায়েজ হবে (রদ্দুল মুহতার, আলমগিরী)।
মাসয়ালা (২) - যে পশুর অণ্ডকোষ ও লিঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে সে পশুর কুরবানি জায়েজ হবে। অনুরূপ যে পশুর অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছে যে, বাচ্চা হবেনা, যে পশুর দাগ দেয়া হয়েছে, যে পশুর দুধ দেয়া বন্ধ করেছে, এইসমস্ত পশুর কুরবানি জায়েজ। যে পশুর চুলকানি হয়েছে কিন্ত খুবমোটা তাজা রয়েছে, তার কুরবানি জায়েজ। যে পশু অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে এবং হাড়ের মগজ পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছে এই প্রকার পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। (আলমগিরি ও রদ্দুলমুহতার)।
মাসয়ালা (৩) - অন্ধ পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। অনুরূপ কানা পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। যে ল্যাংড়া পশু হেঁটে কুরবানির স্থানে যেতে না পারবে, সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। অনুরূপ খুব অসুস্থ পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। যে পশুর কান অথবা লেজ একতৃতীয়াংশর বেশি অথবা তার কম কেটে গেলে কুরবানি জায়েজ হবে। যদি জন্ম হতে কান না থাকে অথবা একটি কান না থাকে, তাহলে কুরবানি জায়েজ হবেনা। কান ছোটো হলে জায়েজ হবে। (হিদায়া ও আলমগিরী) ..
মাসয়ালা (৪) – যে পশু একতৃতীয়াংশর বেশি দৃষ্টিহীন হয়ে গিয়েছে সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। দুইচক্ষুর জ্যোতি কম হলে পরীক্ষা করা সহজে সম্ভব। একটি চোখের জ্যোতি কম হলে পরীক্ষা করার নিয়মঃ- পশুটির দুয়েকদিন আহার বন্ধ করে দিবে। তারপর খারাপ চক্ষুটি বন্ধ করে দিবে এবং ভালো চক্ষুটি খুলে রাখবে। বহু দূরে খাদ্য রেখে দিবে, যা তে পশুটি তা দেখতে না পায়। তারপর খাদ্য পশুরদিকে নিকটবর্তী করবে। যেখান থেকে পশু খাদ্য দেখতে পাবে সেখানে চিহ্ন করে রাখবে। এবার ভালো চক্ষুটি বন্ধ করবে এবং খারাপটি খুলে দিবে। তারপর খাদ্য ধীরেধীরে পশুর নিকটে আনতে থাকবে। যেখান থেকে দেখতে পাবে, সেখানে চিহ্ন করে রাখবে। এবার দুইটির স্থান মেপে দেখবে। যদি এইস্থানটি প্রথমস্থানের একতৃতীয়াংশ হয় তাহলে চক্ষুর জ্যোতি একতৃতীয়াংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর যদি অর্ধেক হয় তাহলে অর্ধেক নষ্ট হয়ে গিয়েছে। (হিদায়া) .
মাসয়ালা (৫) - যে পশুর দাঁত নেই অথবা যার থানকাটা অথবা শুকিয়ে গিয়েছে সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। ছাগলের একটি থান শুকিয়ে গেলে কুরবানি জায়েজ হবে। গরু ও মহিষের দুইটি থান শুকিয়ে গেলে কুরবানি নাজায়েজ হবে। নাককাটা পশু অথবা ঔষধের দ্বারায় যে পশুর দুধ শুকিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা দুই লিঙ্গ বিশিষ্ট হিজড়া পশু অথবা যে পশু অত্যন্ত পেশাব ও পায়খানা খায়, সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয় (দুর্রে মুখতার)।
মাসয়ালা (৬) - ভেড়া অথবা দুম্বার পশম কেটে নিলে কুরবানি জায়েজ হবে। যে পশুর একটি পা কেটে নেওয়া হয়েছে তার কুরবানি জায়েজ নয় (আলমগিরী)
মাসয়ালা (৭) - পশু ক্রয় করার সময় এমন কোনো দোষ ছিলোনা, যাতে কুরবানি নাজায়েজ হয়ে যায়। কিন্ত পরে পশুর মধ্যে ঐপ্রকার দোষ পাওয়া গিয়েছে। এখন ক্রেতা যদি মালেকে-নিসাব (ধনীব্যক্তি) হয়, তাহলে অন্য পশু কুরবানি করবে। ক্রেতা মালিকে-নিসাব নাহলে ঐ দোষযুক্ত পশুটি কোরবানি করবে। যদি কোনো গরীব মানুষ কুরবানি মান্নত করে থাকে এবং নির্দোষ পশু ক্রয় করে থাকে, পরে পশুর মধ্যে দোষ পাওয়া গেলে অন্য পশু কুরবানি করতে হবে (হিদায়া, রদ্দুল-মুহতার)
মাসয়ালা (৮) - গরীব মানুষ এমন দোষযুক্ত পশু ক্রয় করেছে, যার কুরবানি জায়েজ নয়। যদি কুরবানির দিন পর্যন্ত এপ্রকার দোষ থেকে যায় তাহলে গরীব তার কুরবানি করতে পারবে। যদি কোনো ধনীমানুষ দোষযুক্ত পশু ক্রয় করে থাকে এবং কুরবানি দিনপর্যন্ত ঐ প্রকার দোষ থেকে যায়, তাহলে ধনীর জন্য তার কুরবানি জায়েজ হবেনা। দোষযুক্ত পশু ক্রয় করার পর কুরবানি করার পূর্বে যদি পশু নির্দোষ হয়ে যায়, তাহলে গরীব ও ধনী উভয়জন্য তার কুরবানি জায়েজ হবে (দুর্রে-মুখতার ও রদ্দুল-মুহতার)।
মাসয়ালা (৯) - যদি কোনো নির্দোষ পশু কুরবানি করার সময় লাফালাফি করার কারণে দোষযুক্ত হয়ে যায়, তাহলে তার কুরবানি জায়েজ হবে (রদ্দুল-মুহতার)।
মাসয়ালা (১০) - কুরবানি পশু মারা গেলে ধনী ব্যক্তির জন্য অন্য পশু কুরবানি করা ওয়াজিব। কিন্ত গরীবের জন্য ওয়াজিব নয় (দুর্রে-মুখতার)।
মাসয়ালা (১১) - ধনী ব্যক্তির কুরবানি পশু হারিয়ে গিয়েছে অথবা চুরী হয়ে যাবার পর পুনরায় পশু ক্রয় করার পর পশুটি পাওয়া গেলে দুইটির মধ্যে যেকোনো একটি কুরবানি করতে পারে। কিন্ত এই অবস্থা গরীবের হলে দুইটির কুরবানি করা ওয়াজিব হবে (দুর্রে-মুখতার)
মাসয়ালা (১২) - ধনী ব্যক্তির পশু হারিয়ে যাবার পর পুনরায় পশু ক্রয় করার পর যদি প্রথমটি পাওয়া যায়, তাহলে প্রথমটি কুরবানি করলে তার মূল্য দ্বিতীয় টির অপেক্ষায় কম হলে কোনো দোষ নেই। যদি দ্বিতীয়টি কুরবানি করে থাকে এবং তার মূল্য প্রথমটি অপেক্ষা কম হয়, তাহলে যত টাকা কম হবে ততটাকা সদকা করতে হবে। অবশ্য দুইটি কুরবানি করে দিলে কোনো টাকা সাদকা করতে হবেনা (রদ্দুলমুহতার)।