ইহরাম বাঁধার পদ্ধতি
============
হজ্ব হোক কিংবা ওমরা, উভয়ের ইহরাম বাঁধার পদ্ধতি একই   তবে   নিয়্যত   ও    শব্দাবলীতে    সামান্য   পার্থক্য আছে।  নিয়্যতের   বর্ণনা  اِنۡ    شَآءَ  اللہ    عَزَّوَجَلّ  সামনে আসছে।  প্রথমে ইহরাম বাঁধার  পদ্ধতি:  ﴾১﴿  নখ কেটে নিবেন। ﴾২﴿ বগল  ও নাভীর নিচের চুল  পরিষ্কার করে নিবেন।  বরং  পিছনের  লোমও পরিষ্কার করে নিবেন।  ﴾৩﴿ মিস্‌ওয়াক করবেন। ﴾৪﴿  ওজু  করবেন।    ﴾৫﴿  খুব ভালভাবে  গোসল  করবেন।  ﴾৬﴿  শরীরে  ও  ইহরামের  কাপড়ে সুগন্ধি লাগাবেন, আর ইহা সুন্নাত। হ্যাঁ; এমন খুশবু   (যেমন   শুকনা   আতর)    লাগাবেন   না  যার  চিহ্ন কাপড়ে  লেগে  যায়।  ﴾৭﴿  ইসলামী  ভাইয়েরা  সেলাই  যুক্ত   কাপড়  খুলে   একটি    নতুন  কিংবা  ধোলাই   করা সাদা চাদর  উপরে(গায়ে) পরিধান   করবেন, আর হুবহু এক  রঙ্গের   কাপড়  দিয়ে  তাহবন্দ  (লুঙ্গি)  পড়বেন।  (লুঙ্গির   জন্য    মোটা   সুতির   কাপড়,    আর   (উপরের) উড়নার   জন্য  (বড়)   তোয়ালে  জাতীয়  কাপড়  হলে সুবিধা হয়। তাহবন্দের কাপড়   মোটা  হতে হবে   যেন শরীরের    অবয়ব    রং     ইত্যাদি     দেখা    না    যায়,    আর তোয়ালেও     বড়     সাইজের      হলে      ভাল     হয়।      ﴾৮﴿ পাসপোর্ট  কিংবা টাকা  ইত্যাদি রাখার জন্য পকেটযুক্ত বেল্ট  হওয়া চাই যা বাঁধতে  পারবেন। রেক্সিনের বেল্ট অধিকাংশ সময় ফেটে যায়। সম্মুখ অংশে চেইন বিশিষ্ট নীলেন   কাপড়ের   বেল্ট   অথবা   চামড়ার   বেল্ট   খুব  বেশী   মজবুত  হয়ে   থাকে  এবং  তা  বছরের  পর  বছর ধরে কাজে আসবে।

ইসলামী বোনদের ইহরাম
==============
ইসলামী    বোনেরা   নিয়মানুযায়ী     সেলাইযুক্ত   কাপড়  পরবেন। হাতা  পর্দা ও মোজাও পরতে পারবেন। আর তারা মাথাও ঢেকে নিতে পারবেন,    তবে মুখের   উপর চাদর   ঢেকে   দিতে    পারবেন     না।    পর    পুরুষ    থেকে মুখমন্ডল   গোপন   রাখতে   হাত   পাখা   কিংবা   কোনো  কিতাব  ইত্যাদি দ্বারা প্রয়োজনে আড়াল  করে নিবেন। ইহরাম অবস্থায়   মহিলাদের  জন্য এমন  কোন  ধরনের  বস্থ দ্বারা চেহারা ঢাকা সম্পূর্ণ হারাম, যা চেহারার সাথে একেবারে লেগে থাকে।

ইহরামের নফল কাজ সমূহ
===============
যদি   মাকরূহ  সময়   না    হয়,   তবে   দুই   রাকাত  নফল নামাজ      ইহরামের     নিয়্যতে     আদায়       করে     নিবেন। (পুরুষেরাও তখন মাথা  ডেকে নিবেন) উত্তম   এই    যে, প্রথম     রাকাতে   সুরা    ফাতিহা   শরীফের    পর    সুরায়ে  কাফিরুন,     আর  দ্বিতীয়   রাকাতে   সুরা  ইখলাস   শরীফ পড়বেন।

ওমরার নিয়্যত
========
এখন  ইসলামী  ভাইয়েরা   মাথা   খোলা  রাখবেন,  আর  ইসলামী     বোনেরা     মাথার     উপর    নিয়ম     মত    চাদর পরিহিত  রাখবেন।    (যদি   সাধারণ  দিনের)  ওমরা  হয় তখনও, আর যদি   ‘হজ্বে তামাত্তু’  করতে যান  তখনও,  আর এভাবেই ওমরার নিয়্যত করবেন:

اَللّٰھُمَّ   اِنِّیْٓ   اُرِیْدُ   الْعُمْرَۃَ   فَیَسِّرْھَا   لِیْ   وَتَقَبَّلْھَا   مِنِّیْ   وَاَعِنِّیْ  عَلَیْہَا  وَبَارِکْ  لِیْ  فِیْہَا    ط  نَوَیْتُ  الْعُمْرَۃَ   وَاَحْرَمْتُ  بِھَا  لِلّٰہِ تَعَالٰی ط

অনুবাদ: হে আল্লাহ!  আমি ওমরা করার ইচছা করেছি। আমার   জন্য  তা  সহজ   করে  দাও।  আর  আমার  পক্ষ  থেকে তা কবুল কর। আর তা পালন করতে আমাকে     সাহায্য    কর।     আর   তাকে    (ওমরাকে)   আমার   জন্য  বরকতময়    করে    দাও।    আমি    ওমরা    পালন    করার  নিয়্যত করছি, আর আল্লাহর জন্য এর ইহরাম বেঁধেছি।

হজ্বের নিয়্যত
========
মুফরিদ        ব্যক্তিও        এভাবে       নিয়্যত       করবে         আর তামাত্তুকারীও জুলহিজ্জার ৮ম তারিখ কিংবা তার পূর্বে হজ্বের   ইহরাম    বেঁধে    নিন্মের   শব্দাবলী   দ্বারা    নিয়্যত করবে:

اَللّٰھُمَّ   اِنِّیْٓ  اُرِیْدُ  الْحَجَّ  فَیَسِّرْہُ  لِیْ   وَتَقَبَّلْہُ  مِنِّیْ  وَاَعِنِّیْ  عَلَیْہِ وَبَارِکْ لِیْ فِیْہِط نَوَیْتُ الْحَجَّ وَاَحْرَمْتُ بِہٖ لِلّٰہِ تَعَالٰیط

অনুবাদ:   হে   আল্লাহ!  আমি  হজ্বের  ইচ্ছা    করেছি।  তা আমার জন্যে সহজ করে দাও। আর আমার পক্ষ থেকে তা কবুল কর। আর তাতে  আমাকে  সাহায্য কর। আর এটাকে    আমার     জন্য    বরকতময়   করে    দাও।   আমি হজ্বের নিয়্যত করেছি এবং আল্লাহর জন্যে এর ইহরাম বেঁধেছি।

কিরান হজ্বের নিয়্যত
============
কিরান হজ্বকারী ব্যক্তি হজ্ব ও ওমরা উভয়ের জন্য এক সঙ্গে নিয়্যত করবে। আর সে এভাবেই নিয়্যত  করবে:

اَللّٰھُمَّ اِنِّیْٓ اُرِیْدُ الْعُمْرَۃَ وَالْحَجَّ فَیَسِّرْھُمَا لِیْ وَتَقَبَّلْ ھُمَا مِنِّیْ ط نَوَیْتُ الْعُمْرَۃَ وَالْحَجَّ وَاَحْرَمْتُ بِھِمَا مُخْلِصًا لِّلّٰہِ تَعَالٰیط

অনুবাদ: হে আল্লাহ!   আমি ওমরা ও হজ্ব উভয়ের জন্য ইচ্ছা   করেছি।  তুমি উভয়কে আমার জন্যে  সহজ করে দাও।   আর  উভয়কে  আমার   পক্ষে   কবুল   কর।  আমি ওমরা  ও হজ্ব   উভয়ের   নিয়্যত করেছি।  আর একমাত্র  আল্লাহর জন্যই উভয়ের ইহরাম বেঁধেছি।

লাব্বাইক:

আপনি ওমরার নিয়্যত করুন কিংবা হজ্বের কিংবা হজ্বে কিরানের     জন্য     তিনটি     পদ্ধতিতেই     নিয়্যতের     পর  কমপক্ষে     একবার    লাব্বাইক    বলা    আবশ্যক।     আর তিনবার বলা উত্তম। আর লাব্বাইক হল এই:-

لَبَّیْکَ ط اَللّٰھُمَّ لَبَّیْکَ ط لَبَّیْکَ لَا شَرِ یْکَ لَکَ لَبَّیْکَ ط
اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَۃَ لَکَ وَالْمُلْکَ ط لَاشَرِ یْکَ لَکَ  ط

অনুবাদ: আমি হাজির হয়েছি। হে আল্লাহ! আমি হাজির হয়েছি। হ্যাঁ, আমি হাজির হয়েছি। তোমার কোন শরীক নেই। আমি  হাজির হয়েছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা এবং  নেয়ামত  সমুহ  তোমারই।  আর  তোমারই  জন্য সকল  ক্ষমতা। তোমার কোন অংশীদার নেই।

ওহে  মদীনার    মুসাফিররা!   আপনার  ইহরাম  শুরু  হয়ে গেছে,          এখন         লাব্বাইকই            আপনার         ওজিফা। চলতে-ফিরতে,    উঠতে-বসতে   এটা   খুব    বেশী     করে যপতে থাকুন।

নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর       দু’টি      বানী:     ﴾১﴿     যখন      লাব্বাইক     পাঠকারী   লাব্বায়িক  বলে,   তখন   তাকে   সুসংবাদ  শুনিয়ে   দেয়া  হয়।  আরজ  করা   হল,  ইয়া   রাসুলাল্লাহ  صَلَّی  اللہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم  !  কি জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়ে দেয়া হয়?    ইরশাদ  করলেন:  হ্যাঁ!   (মু’জাম   আওসাত,  ৫ম  খন্ড, ৪১০  পৃষ্ঠা, হাদীস: ৭৭৭৯) ﴾২﴿  মুসলমান যখন লাব্বাইক বলে,  তখন  তার ডানে বামে  জমিনের শেষ   সীমানা   পর্যন্ত    যত   পাথর,     গাছ    এবং    ঢিলা   রয়েছে সবগুলো  লাব্বাইক  বলে।   (তিরমিযী, ২য়   খন্ড, ২২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮২৯)

Top