তাওয়াফের নিয়্যতের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাদানী ফুল
========
প্রশ্ন: আপনি দশম দিবসে “তাওয়াফে জেয়ারত” করার জন্যে   হাজির  হলেন,  তবে  ভুলে  “নফল   তাওয়াফের” নিয়্যত করে নিলেন। এখন কি করা প্রয়োজন?

উত্তর:   আপনার   “তাওয়াফে     জেয়ারত”    আদায়   হয়ে গেছে।   তবে   একথা    মনে   রাখবেন   যে,    তাওয়াফের নিয়্যত   করা  ফরয,   আর  এটা  ছাড়া  তাওয়াফ  হবেই না।    তবে   তাতে   এই   শর্ত   নেই   যে,   কোন    সুনির্দিষ্ট তাওয়াফের   নিয়্যত   করতে    হবে।   প্রত্যেক    প্রকারের তাওয়াফ সাধারণ তাওয়াফের নিয়্যত দ্বারা আদায় হয়ে যাবে। বরং যে তাওয়াফকে কোন নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংযুক্ত   করে    দেয়া  হয়েছে,    সে  সময়ে   আপনি  অন্য  তাওয়াফ করলেও তা  আদায়   হবে  না।  বরং   সুনির্দিষ্ট সময়ের   তাওয়াফ   হিসেবেই   ইহা     গণ্য      হয়ে   যাবে। যেমন:  কেউ ওমরার জন্য ইহরাম  বেঁধে  বাইরে থেকে উপস্থিত হল, আর ওমরার তাওয়াফের নিয়্যত না করে সাধারণ ভাবে  শুধুমাত্র তাওয়াফেরই নিয়্যত করে  নিল বরং     নফল    তাওয়াফে     নিয়্যত    করে    নিল,     তাহলে উপরের   প্রত্যেক   অবস্থায়   ইহাকে   ওমরার   তাওয়াফ   হিসেবেই   গণ্য  করা  হবে।   অনুরূপ  কিরানের    ইহরাম বেঁধে  কেউ হাজির হল  এবং আসার পরে সে  যে প্রথম তাওয়াফটি    করল    তা    ওমরারই    হবে,    আর    দ্বিতীয়  তাওয়াফ  ‘তাওয়াফে    কুদুম’  হিসেবে  গণ্য  হবে।(আল মাসলাকুল মুতাকাস্‌সিত লিল ক্বারী, ১৪৫ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:  যদি তাওয়াফে   জেয়ারত   করা  ছাড়া কেউ নিজ  দেশে চলে যায়, তবে তার কাফ্‌ফারা কি হবে?

উত্তর:    কাফ্‌ফারা দ্বারা তার রেহাই  নেই।  কেননা তার হজ্বও  আদায়  হল  না।   এই  ভুলের   সংশোধনের  জন্য এর  পরিপূরক  কোন  বদলা    নেই।    এখন  তার    উপর আবশ্যক    হবে   যে,  সে  পুনরায়  মক্কা  শরীফে  আসবে এবং  তাওয়াফে জেয়ারত  আদায় করবে,  আর যতক্ষণ পর্যন্ত তাওয়াফে জেয়ারত করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তার জন্য   তার স্ত্রী বৈধ  হবে  না। চাই   এভাবে  বছরের  পর বছর অতিবাহিত হয়ে যাক। যদি এই ভুল কোন মহিলা করে   তাহলে   যতক্ষণ   পর্যন্ত   সে   তাওয়াফে   জেয়ারত  করছে না, সে তার স্বামীর জন্য বৈধ হবে না। যদি এই ভুল   কোন  কুমারী  মেয়ে  করে    বসে  এবং  এ  অবস্থায় তার     বিয়েও      হয়ে    যায়,    তবুও     যতক্ষণ     পর্যন্ত    সে ‘তাওয়াফে  জেয়ারত’  করে  নিবেনা  ততক্ষণ  পর্যন্ত  সে  (তার স্বামীর জন্য) বৈধ হবে না।

বিদায়ী তাওয়াফ প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: তাওয়াফে রুখছত (বিদায়ী তাওয়াফ) করে   নিল,  তারপর  গাড়ী লেইট  হয়ে  গেল। এখন নামায পড়ার জন্যে মসজিদুল হারমে যেতে পারবে কিনা? আর চলে আসার    সময়    কি    বিদায়ী    তাওয়াফ    আবার    করতে  হবে?

উত্তর: হ্যাঁ! যেতে পারবে। বরং যতবার সুযোগ পাবেন আরো অতিরিক্ত ওমরা ও তাওয়াফ ইত্যাদি করে নিতে পারবেন। দ্বিতীয়বার তাওয়াফ করা ওয়াজিব নয়, কিন্তু করে নেয়া মুশতাহাব। সদরুশ শরীয়াহ  رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: ফিরে যাওয়ার (অর্থাৎ সফরের) ইচ্ছা ছিল কিন্তু   কোন   কারণে   অবস্থান   করতে   হল;   এখন   যদি  ইকামতের    (অর্থাৎ    ১৫দিনের    বেশী    সময়    থাকার)  নিয়্যত   না  করে,  তাহলে   ঐ  তাওয়াফই    যথেষ্ট,   কিন্তু মুশতাহাব  হচ্ছে,  পূনারায় আবার তাওয়াফ করা  যাতে সর্বশেষ কাজ  তাওয়াফই  হয়।  (বাহারে  শরীয়াত,  ১ম খন্ড, ১১৫১ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২৩৪ পৃষ্ঠা)

বিদায়ী তাওয়াফের গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
========
প্রশ্ন:   যদি    হজ্ব   শেষে   ফেরার   দুই    দিন    পূর্বে    জিদ্দা শরীফে   যে  কোন আত্মীয়ের কাছে  থাকার  ইচ্ছা আছে  এবং  এরপর   মদীনা   শরীফ    যাওয়ার   ইচ্ছাকরে  তবে তাওয়াফে রুখছত কখন করবে?

উত্তর: জিদ্দা  শরীফ গমন করার   আগেই করে  নিবেন। তাওয়াফে জেয়ারতের পরে যদি কেউ নফলী তাওয়াফ আদায় করে নেয়,   তবে  তাই  হবে তাওয়াফে  রুখছত। কেননা (মীকাতের বাইরের)  বহিরাগত  হাজীদের জন্য তাওয়াফে জেয়ারত করার পরেই তাওয়াফে  রুখছতের সময় আরম্ভ হয়ে যায়, আর আগেই বর্ণনা  করা হয়েছে যে,      প্রত্যেক      প্রকারের    তাওয়াফ    সাধারণ    নিয়্যতে আদায়  হয়ে   যায়।   সারকথা  হল;  নিজ    দেশে   ফেরত আসার    পূর্বে  তাওয়াফে   জেয়ারতের   পরে  যদি    কেউ ‘নফলী   তাওয়াফ’  করে  নেয়   তখনই   তার   তাওয়াফে  রুখছত আদায় হয়ে যাবে।

প্রশ্ন:  বিদায়  হওয়ার সময় আফাকী (অর্থাৎ   মীকাতের  বাইরের) মহিলার হায়েজ চলে আসল, তখন তাওয়াফে রুখছত   এর   ব্যাপারে   কী   করবে?   এখন   কি   সেখান  অবস্থান করবে নাকি সে দম দিয়ে চলে যাবে?

উত্তর:    তার    উপর      এখন       আর     তাওয়াফে    রুখছত ওয়াজিব রইল না।  সে নিজ দেশে চলে যেতে পারবে। দম দেওয়ারও   তার আর প্রয়োজন  হবে না।   (বাহারে  শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৫১ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:   যারা   মক্কায়ে    মুকাররমা   কিংবা     জিদ্দা   শরীফে  অবস্থান  করে,  তাদের   উপরও  কি   তাওয়াফে  রুখছত  (বিদায়ী তাওয়াফ) ওয়াজিব?

উত্তর:   জ্বি    না।    যারা   মীকাতের    বাহির    থেকে    হজ্বে আসে,  তাদেরকে   ‘আফাকী  হাজী’    বলা  হয়।  শুধুমাত্র তাদের উপরই তাওয়াফে রুখছত ওয়াজিব।

প্রশ্ন: মদীনাবাসীরা যদি হজ্ব  করে বিদায় কালে তাদের তাওয়াফে রুখছত করা ওয়াজিব, নাকি নয়?

উত্তর: ওয়াজিব। কেননা তারা আফাকী হাজী; মদীনায়ে মুনাওয়ারা মীকাত থেকে বাইরে অবস্থিত।

প্রশ্ন:   ওমরাকারীদের   উপরও    কি   তাওয়াফে     রুখছত ওয়াজিব?

উত্তর: জ্বি না। ইহা  শুধুমাত্র ‘আফাকী হাজীদেরই’ জন্য বিদায়কালে ওয়াজিব।

তাওয়াফ প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: যে কোন  তাওয়াফকালীন  সময়ে ভিড়ের কারণে কিংবা     অসতর্কতাবশতঃ    কিছুক্ষণের    জন্য    যদি   বুক অথবা পিঠকে কা’বা শরীফের দিকে হয়ে যায় তখন কি করবে?

উত্তর: তাওয়াফে বুক কিংবা পিঠ কা’বা শরীফের দিকে করে যতটুকু স্থান আপনি অতিক্রম করিয়েছেন, ঐ স্থান সমূহ পুনরায় তাওয়াফ করে দেয়া ওয়াজিব, আর উত্তম এই যে; ঐ চক্করটি আবার নতুনভাবে করে নেয়া।

হাজরে আসওয়াদকে ইসতিলাম করার সময়
হাত কতটুকু উঠাবেন?
========
প্রশ্ন: তাওয়াফে হাজরে আসওয়াদের সামনে হাত কাঁধ পর্যন্ত  উঠানো  সুন্নাত,  নাকি  নামাযী  ব্যক্তির  মত  কান  পর্যন্ত?

উত্তর: এ ব্যাপারে  ওলামায়ে  কেরামের ভিন্ন    ভিন্ন মত রয়েছে।  “ফতোওয়ায়ে  হজ্ব  ও  ওমরা” নামক কিতাবে  আলাদা  আলাদা মতামত গুলো  উলেস্নখ  করতে   গিয়ে লিখেছে: কান পর্যন্ত হাত উঠানো এটা পুরুষদের জন্য। কেননা  তারা নামাযের জন্যও    কান পর্যন্ত  হাত উঠিয়ে থাকে,  আর    মহিলারা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে।  কেননা তারা নামযের জন্য এতটুকু পর্যন্ত হাত   উঠিয়ে   থাকে। (ফতোওয়ায়ে হজ্ব ও ওমরা, ১ম খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন: নামাযের মত হাত বেঁধে তাওয়াফ করা কেমন?
উত্তর:   (এরূপ    করা)    মুশতাহাব    নয়,   বিরত    থাকাই যুক্তিযুক্ত।

তাওয়াফকালীন  চক্করের সঠিক সংখ্যা মনে না থাকলে  তবে?
========
প্রশ্ন: যদি তাওয়াফকালীন চক্করের সংখ্যার গণনা ভুলে যায় কিংবা সংখ্যার ব্যাপারে সন্দেহ চলে  আসে, তখন এই অবস্থার সমাধান কি?

উত্তর:  যদি  এই  তাওয়াফ  ফরজ  হয়  (যেমন:  ওমরার  তাওয়াফ  অথবা  তাওয়াফে জেয়ারত) কিংবা  ওয়াজিব হয়     (যেমন:   তাওয়াফে   বিদা    বা   বিদায়   তাওয়াফ), তাহলে  পুনরায়  নতুনভাবে  শুরু    করবেন।     যদি  কোন একজন ন্যায়পরায়ণ  ব্যক্তি বলে দেয় যে, একটি চক্কর হয়েছে,  তাহলে    তার   কথার  উপর  আমল  করে  নেয়া উত্তম,  আর যদি দুইজন ন্যায়পরায়ণ  ব্যক্তি  বলে  দেয় তাহলে  তাদের  কথার  উপর অব্যশই আমল  করবেন। আর যদি এই তাওয়াফ ফরয কিংবা ওয়াজিব এমন না হয়,   যেমন:   তাওয়াফে   কুদুম     (কেননা   ইহা      কিরান হজ্বকারী        ও       ইফরাদ        হজ্বকারীর       জন্য        সুন্নাতে মুআক্কাদাহ)  কিংবা অন্য কোন  নফলী তাওয়াফ, তখন এমতাবস্থায়   নিজের   প্রবল   ধরণার   ভিত্তিতেই   আমল  করবেন।

তাওয়াফের  মাঝখানে  যদি  অযু  ভেঙ্গে  যায়  তখন  কী  করবে?
========
প্রশ্ন:  যদি   তৃতীয়  চক্করে  অযু  নষ্ট  হয়ে  যায়,    আর  সে নতুন   অযু   করতে  চলে  গেল,  তখন  অযু   করে   ফিরে  এসে সে কিভাবে তাওয়াফ আরম্ভ করবে?

উত্তর:  ইচ্ছা  হলে   সাতটি  চক্কর  আবার নতুনভাবে শুরু করবে, আর এটারও অনুমতি আছে যে, যে স্থান থেকে ছুটেছে    (অর্থাৎ     অযু    ভঙ্গ    হয়েছে)    সেখান     থেকেই পুনরায় শুরু  করবে। চক্কর   এর  সংখ্যা চার কিংবা  তার কমে  হল এই  হুকুম,  আর   যদি  চার কিংবা  তার বেশী চক্কর আদায় করে   নেয়ার পরে      হয়, তখন আর  নতুন ভাবে করতে পারবে না। যে স্থান থেকে ছুটেছে, সেখান থেকেই     আদায়     করতে     হবে।    ‘হাজরে    আসওয়াদ’ থেকেও আরম্ভ করার   প্রয়োজন  নেই।  (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৫৮২ পৃষ্ঠা)

প্রস্রাবের ফোঁটা পড়তে থাকা রোগীর
তাওয়াফের গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা
========
প্রশ্ন: যদি কোন   ব্যক্তি    প্রস্রাবের   ফোঁটা পড়তে থাকা ইত্যাদি রোগের কারণে ‘শরয়ী মাজুর’ বলে সাব্যস্থ হয়, তাহলে     তাওয়াফের   জন্য    তার     অযু   কতক্ষণ    পর্যন্ত কার্যকর হবে?

উত্তর: যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ (ওয়াক্তের) নামাযের সময়সীমা বাকী থাকবে (ততক্ষণ পর্যন্ত তার অযু কার্যকর  ভূমিকা রাখবে)। সদরুশ শরীয়া رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: মাজুর ব্যক্তি  তাওয়াফ কালীন  সময়ে চার চক্কর  করার পর যদি নামাযের সময় চলে  যায়,  তাহলে   এখন তার জন্য (শরয়ী)  নির্দেশ হচ্ছে অযু করে তাওয়াফ করবে। কেননা   নামাযের  সময়   চলে     যাওয়ার  কারণে   মাজুর ব্যক্তির  অযু  ভেঙ্গে  যাবে,  আর  অযু  ব্যতিত  তাওয়াফ  করা  হারাম।  এখন  (সে)  অযু  করে  বাকী  চক্কর  গুলো  পরিপূর্ণ     করবে,   আর    যদি   চার   চক্কর   করার   পূর্বেই (নামযের)  ওয়াক্ত   শেষ   হয়ে   যায়  তখনও   অযু   করে  বাকী   (চক্কর)  গুলো  পূর্ণ  করবে।   আর  এক্ষেত্রে  উত্তম হচ্ছে    যে,  শুরু  থেকে  পুনরায়   (আবার  তাওয়াফ)   শুরু করা।

(বাহারে    শরীয়াত,      ১ম    খন্ড,        ১১০১    পৃষ্ঠা।    আল মাসলাকুল মুতাকায্যিত, ১৬৭ পৃষ্ঠা)।

শুধুমাত্র   প্রস্রাবের   ফোঁটা    চলে   আসার     কারণে    কেউ ‘শরয়ী  মাজুর’   হয়ে  যায়   না,  এ  ব্যাপারে    বিশতারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। এর বিশতারিত জানার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর    প্রকাশনা      প্রতিষ্ঠান    মাকতাবাতুল    মদীনা কর্তৃক  প্রকাশিত  কিতাব  ‘নামাযের  আহকাম’  অধ্যয়ন  করুন।

মহিলারা তাদের ঋতুবর্তীকালীণ সময়ে
‘নফল তাওয়াফ’করে ফেললে তবে?
========
প্রশ্ন:  কোন  মহিলা  যদি  ঋতুবর্তীকালীন  সময়ে  ‘নফল  তাওয়াফ’ করে ফেলে তাহলে এর হুকুম কি?

উত্তর:    গুনাহগার    হবে    এবং    দমও    ওয়াজিব    হবে।  সুতরাং  আল্লামা শামী  رَحۡمَۃُ  اللہِ تَعَالٰی  عَلَیْہِ বলেছেন:  নফল  তাওয়াফ  যদি  অপবিত্র  অবস্থায়  (বিনা  গোসলে  অথবা  মহিলারা  ঋতুবর্তীকালীণ সময়ে)  করে, তাহলে  দম ওয়াজিব হবে, আর যদি বিনা অযুতে  করে তাহলে সাদ্‌কা  (ওয়াজিব   হবে)।   (রদ্দুল    মুহতার,  ৩য়    খন্ড, ৬৬১ পৃষ্ঠা) যদি গোসল অনাদায়ী ব্যক্তি পবিত্র হওয়ার পর  এবং অযু  বিহীন  ব্যক্তি     অযু করার  পর তাওয়াফ পুনরায় করে নেয়, তাহলে (তার) কাফ্‌ফারা রহিত হয়ে যাবে।   কিন্তু  যদি  ইচ্ছাকৃত   ভাবে  এরূপ    করে  থাকে,  তাহলে   তাওবা    করতে  হবে।    কেননা  ঋতুবর্তী  সময় এমনকি অযু ছাড়া তাওয়াফ করা গুনাহ।

প্রশ্ন: তাওয়াফে ৮ম চক্করকে ৭ম মনে করল পরে স্মরণ আসল যে, ইহা ৮ম চক্করই, তখন কি করবে?

উত্তর:   এখানেই    (ঐ   চক্করেই)    তাওয়াফ    শেষ    করে নিবেন।  হ্যাঁ!   যদি  জেনে  বুঝে  (সে)  ৮ম   চক্কর   করে, তাহলে   এটা    একটি   নতুন   তাওয়াফ  শুরু  হয়ে  গেল।  এখন   এটারও সাত চক্কর  পূর্ণ   করতে   হবে। (প্রাগুক্ত, ৫৮১ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:  ওমরার  তাওয়াফের   এক  চক্কর  ছুটে    গেলে    কী কাফ্‌ফারা আদায় করতে হবে?

উত্তর: ওমরার তাওয়াফ ফরয। ইহার এক চক্করও যদি ছুটে   যায়,    তাহলে  দম    ওয়াজিব  হবে।  যদি  মোটেও তাওয়াফ না করে থাকে কিংবা অধিকাংশ চক্কর (অর্থাৎ চার চক্কর) ছেড়ে দেয় তাহলে কাফ্‌ফারা দিতে হবে না বরং  তা  আদায়   করে  দেয়া  আবশ্যক   হবে।  (লুবাবুল মানাসিক, ৩৫৩ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:    কিরানকারী    কিংবা      মুফরিদ    হাজী     তাওয়াফে কুদুমকে ছেড়ে দিল, তখন তার কী শাসিন্ত?

উত্তর: তার উপর কোন   কাফ্‌ফারা  নেই। তবে  সুন্নাতে মুআক্কাদা ত্যাগকারী  হল এবং খুবই মন্দ কাজ  করল। (লুবাবুল   মানাসিক    ওয়াল   মাস   লাকুল  মুতাকায্যিত, ৩৫২ পৃষ্ঠা)

মসজিদুল হারামের ১ম অথবা ২য় তলা থেকে
তাওয়াফ করার মাসআলা
========
প্রশ্ন:   মসজিদুল   হারামের   ছাদে   উঠে   তাওয়াফ   করা  যাবে কি যাবে না?

উত্তর: যদি মসজিদুল হারামের ছাদে উঠে পবিত্র কা’বা ঘরের তাওয়াফ  করে,  তাহলে  ফরয তাওয়াফ   আদায় হয়ে    যাবে।    যদি     মাঝখানে     কোন    দেয়াল    ইত্যাদি আড়াল বা  পর্দা  হিসাবে না  দাঁড়ায়। কিন্তু যদি    নিচে মাতাফে তাওয়াফ করতে পারার কোন সম্ভাবনা সুযোগ থাকে  তাহলে ছাদে উঠে তাওয়াফ  করা  মাকরূহ, আর তা   এ   কারণে   যে,   এ   ভাবে   তাওয়াফ    করলে   বিনা  প্রয়োজনে    মসজিদের   ছাদে   উঠা    ও     চলাচল   করার  ব্যাপারটি প্রকাশ পাচ্ছে যা  মাকরূহ।  এরই  সাথে  এই অবস্থায়    তাওয়াফ   করলে  কা’বা   শরীফের  নিকটবর্তী  হওয়ার  স্থলে  অনেক   দূরবর্তী   হওয়াটা  প্রকাশ  পাচ্ছে, আর বিনা কারণে নিজেকে খুব কষ্ট এবং ক্লানিন্তর মাঝে ফেলাও হচ্ছে। যেহেতু অধিকতর  নিকটবর্তী স্থান দিয়ে তাওয়াফ করা উত্তম, আর বিনা কারণে নিজেকে নিজে কষ্টের    মাঝে      পতিত   করা    নিষেধ।   হ্যাঁ!   যদি   নিচে জায়গা    পাওয়ার    সম্ভাবনা    না   থাকে    অথবা    সুযোগ পাওয়া     পর্যন্ত     অপেক্ষা      করার      ক্ষেত্রে     যদি      কোন প্রতিবন্ধকতা এসে যায়, তবে ছাদে উঠে তাওয়াফ করা কোন  ধরণের মাকরূহ ছাড়া জায়েয। وَ اللهُ تَعَالٰى أَعْلَمُ (মাহানামা আশরাফিয়্যা, জুন সংখ্যা ২০০৫ইং, ১১তম ফকীহ সেমিনার, ১৪ পৃষ্ঠা)

তাওয়াফ     চলাকালে     উঁচু    আওয়াজে    মুনাজাত     করা কেমন?
========
প্রশ্ন:   তাওয়াফ    করার   সময়    উঁচু    আওয়াজে    দোআ, মুনাজাত অথবা না’ত শরীফ ইত্যাদি পড়া কেমন?

উত্তর:     এতটুকু     আওয়াজে      পড়া,     যা      দ্বারা     অন্য তাওয়াফকারী অথবা নামাযী ব্যক্তির সমস্যা হয়, তবে তা  মাকরূহে   তাহরীমি।  না-জায়েয  ও  গুনাহ।   অবশ্য কারো  কষ্ট  না  হয়   এমন  ধরনের  গুনগুন  করে  অর্থাৎ  নিন্মস্বরে পড়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা  নেই।  এক্ষেত্রে ঐ সকল  সাহেবরা খুব   গভীর  ভাবে  চিন্তা   করে দেখুন যাদের  মোবাইল  ফোন    থেকে   তাওয়াফ  করার  সময়  রিংটোন সর্বদা বাজতেই থাকে, আর এইদিকে ইবাদত কারীদের   খুবই   বিরক্ত    ও    পেরেশান   করতে   থাকে। তাদের সকলের   উচিত   তারা যেন তাওবা  করে  নেয়। স্মরণ  রাখবেন! এই হুকুম (বিধান) শুধুমাত্র  ‘মসজিদুল হারামের’ ক্ষেত্রে নয় বরং সকল মসজিদ এমনকি সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য, আর মিউজিক্যার টোন  মসজিদ ছাড়াও (সর্বদা) না-জায়েয।

ইজতিবা ও রমল প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: যদি সাঈ এর পূর্বে কৃত তাওয়াফের  প্রথম চক্করে রমল করা ভুলে যায় তখন কি করতে হবে?

উত্তর:   রমল     শুধু   প্রথম   তিন   চক্করেই   সুন্নাত।    সাত চক্করেই    (রমল)  করা   মাকরূহ।  তাই  যদি  প্রথমটিতে করা     না   হয়,   তাহলে    দ্বিতীয়   কিংবা   তৃতীয়তে   করে নিবেন, আর যদি  প্রথম   দুই চক্করে  করা না  হয়, তখন শুধু তৃতীয়টিতে করে নিবেন এবং যদি প্রথম তিনটিতে না    করা    হয়,    তখন    অবশিষ্ট    চার    চক্করেও    করতে  পারবেন  না।   (দুরের    মুখতার  ও   রদ্দুল   মুহতার,  ৩য় খন্ড, ৫৮৩ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন: যে   তাওয়াফে ইজতিবা ও রমল করার কথা  ছিল তাতে করল না, তখন তার কাফ্‌ফারা কি হবে?

উত্তর: কোন কাফ্‌ফারা নেই। অবশ্য একটি মহা সুন্নাত (আদায়) থেকে আপনি বঞ্চিত হলেন।

প্রশ্ন: যদি কেউ সাত চক্করেই রমল করে নেয় তবে?

উত্তর:  মাকরূহে  তানযিহী। (রদ্দুল   মুহতার,   ৩য় খন্ড, ৫৮৪ পৃষ্ঠা) কিন্তু কোন জরিমানা ইত্যাদি নেই।

Top