ক তাওয়াফে কুদুম বা আগমনী তাওয়াফ
=====================
ইফরাদ হজ্বকারীর জন্য এই তাওয়াফ, তাওয়াফে কুদুম অর্থাৎ দরবারে উপস্থিতির অভিবাদন হয়ে গেল। হজ্জ্বে কিরানকারী এর পরে তাওয়াফে কুদুমের নিয়্যতে অতিরিক্ত একটি তাওয়াফও সাঈ করবে। তাওয়াফে কুদুম হজ্জ্বে কিরানকারী এবং হজ্জ্বে ইফরাদকারী উভয়ের জন্য সুন্নাতে মুআক্কাদা। যদি ছেড়ে দেন তাহলে অন্যায় করেছেন, তবে দম ইত্যাদি ওয়াজিব হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১১১ পৃষ্ঠা)
মাথা মুন্ডানো বা চুলকাটা
============
এখন পুরুষেরা হলক করবে অর্থাৎ মাথা মুন্ডন করাবে অথবা তাকছীর করবে অর্থাৎ চুল কাটাবে। তবে হলক করে নেয়াটা উত্তম। হুযুর পুরনূর, নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হুজ্জাতুল ওয়াদা (বিদায় হজ্ব) এর সময় হলক করিয়েছেন, আর মাথা মুন্ডনকারীদের জন্য তিনবার রহমতের দোআ করেন, আর চুল কর্তনকারীদের জন্য একবার (রহমতের দোআ) করেন।(বুখারী, ১ম খন্ড, ৫৭৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৭২৮)
তাকছীর তথা চুলকাটার সংজ্ঞা
============
কমপক্ষে মাথার এক চতুর্থাংশের চুল আঙ্গুলের গিরা পরিমাণ কাটা। এখানে এ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে, আঙ্গুলের এক গিরার চেয়ে একটু বেশী কাটতে হবে। যাতে মাথার মধ্যখানের ছোট ছোট যে চুল আছে তাও যেন এক গিরা পরিমাণ কাটা হয়। অনেকে কাঁচি দ্বারা মাথার দুই তিন জায়গা থেকে কিছু চুল কেটে নেয়, হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্য ইহা সম্পূর্ণ ভুল পদ্ধতি। আর এভাবে ইহরামের নিয়মনীতির বাধ্যবাধকতাও শেষ হবে না।
ইসলামী বোনদের চুলকাটা
============
ইসলামী বোনদের জন্য মাথা মুন্ডানো হারাম। তারা শুধুমাত্র চুল কাটবে। ইহার সহজ পদ্ধতি হল, নিজের মাথার ঝুটির চুলকে আঙ্গুলের সাথে মিলিয়ে এক গিরার চেয়ে একটু বেশী কেটে নিবে। কিনত্মু এই সতর্কতা অবশ্যই থাকতে হবে যে, কমপক্ষে মাথার এক চতুর্থাংশের চুল এক গিরা সমপরিমাণ পর্যন্ত কাটা যেতে হবে।
লাগাওঁ দিল কো না দুনিয়া মে হার কিছি শায় ছে
তাআলস্নুক আপনা হো কা’বা ছে ইয়া মদীনে ছে। (সামানে বখশিশ)
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
তাওয়াফে কুদুমকারীদের (মক্কা শরীফে প্রবেশের পর সর্বপ্রথম তাওয়াফ) জন্য নির্দেশনা
============
তাওয়াফে কুদুমে ইজতিবা রমল এবং সাঈ আবশ্যক নয়। কিনত্মু এ তাওয়াফে যদি তা করা না হয় তাহলে এ সকল কাজ তাওয়াফে জেয়ারতে করতে হবে। হতে পারে সে সময় ক্লানিন্ত ইত্যাদির কারণে কষ্ট হতে পারে, ভারী মনে হতে পারে। তাই আমি এগুলোকে সাধারণভাবে নিয়মের অন্তর্ভূক্ত করে দিয়েছি। যাতে তাওয়াফে জিয়ারতে সেগুলোর আর প্রয়োজন না হয়।
তামাত্তোকারীদের জন্য নির্দেশনা
============
ইফরাদ হজ্বকারী ও কিরান হজ্বকারীতো হজ্বের রমল ও সাঈ থেকে তাওয়াফে কুদুমেই তা আদায় করার মাধ্যমে অবকাশ পেয়ে গেল। কিনত্মু তামাত্তোকারী যে তাওয়াফ এবং সাঈ করেছে উহা ওমরার জন্য এবং তার জন্য তাওয়াফে কুদুম সুন্নাত নয়, যাতে করে সে এ তাওয়াফের মধ্যে এগুলো আদায় করে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। তাই যদি তামাত্তোকারীও যদি হজ্বের প্রথমেই এ কাজগুলো আদায় করে কিছুটা অবকাশ নিতে চায় তাহলে যখন সে হজ্বের ইহরাম বাঁধবে তখনই একটি নফল তাওয়াফ আদায়ের মাধ্যমে তাতে রমল ও সাঈ করে নিবে। তখন তার জন্যও তাওয়াফে জেয়ারতে রমল ও সাঈর প্রয়োজন হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১১২ পৃষ্ঠা)৬ অথবা ৭ অথবা ৮ই জুলহিজ্জায় যদি আপনি হজ্বের ইহরাম বাঁধেন, তাহলে সাধারণত এ সময়ে প্রচন্ড ভিড় হয়। তাই চাইলেও হজ্বের রমল ও সাঈ এর জন্য এখন নফল তাওয়াফের নিয়্যত করবেন না। তাওয়াফে জেয়ারতেই (এ সমস্ত কাজ) করে নিবেন। অন্যথায় ইহরামও হবে না, আর আশা করা হচ্ছে ভিড়ও কম পাবেন। ১০ তারিখে পুনরায় খুব ভিড় হয়। অবশ্য ১১ ও ১২ তারিখ ভিড়ের মাত্রা যথেষ্ট পরিমাণে কম হতে থাকে।
সমস্ত হাজীদের জন্য মাদানী ফুল
============
এখন সমস্ত হাজীগণ চাই কিরানকারী হোক কিংবা তামাত্তোকারী হোক কিংবা ইফরাদকারী সকলেই মিনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফে ৮ই জিলহজ্জের অপেক্ষায় নিজের জীবনের সুন্দর সময়গুলো অতিবাহিত করবে।
আশিকানে রাসুল! ইহা ঐ সম্মানিত গলিসমূহ যেখানে আমাদের প্রিয় আক্বা মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নিজের পবিত্র জীবনের কম-বেশী ৫৩ বৎসর অতিবাহিত করেছেন। এখানকার প্রতিটি স্থানে মাহবুবে আকরাম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর স্মৃতিময় কদমে পাকের ছোঁয়া রয়েছে। তাই এই সম্মানিত গলি সমূহের আদব করুন। সাবধান এখানে গুনাহতো দূরের কথা গুনাহের কল্পনাও যেন না আসে। কেননা এখানকার এক নেকী যেমন লাখের সমান, তেমনি এক গুনাহও লক্ষ গুনাহের সমান। গালি গালাজ, গীবত, চোগলখোরী, মিথ্যা, কু-দৃষ্টি, খারাপ ধারণা ইত্যাদি সর্বাবস্থায় হারাম। কিনত্মু এখানকার গুনাহতো লক্ষগুণ বেশী, আর কখনও এমন বোকামী করে গুনাহের দুঃসাহস দেখাবেন না যে, মাথা মুন্ডানোর সাথে সাথে (আল্লাহ তাআলা হেফাজত করুন) দাঁড়িও মুন্ডায়ে ফেলবেন। সাবধান! দাঁড়ি মুন্ডানো অথবা দাঁড়ি কেটে একমুষ্টির চেয়ে ছোট করে ফেলা উভয়টি সমপর্যায়ের হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। এখানে তো একবার দাঁড়ি মুন্ডালে কিংবা একবার দাঁড়ি কেটে এক মুষ্টির চেয়ে ছোট করলে লক্ষবার হারামের গুনাহ হবে। বরং হে খোশ নছীব আশেকানে রাসুল! এখনতো আপনাদের চেহারাকে মক্কা মদীনার হাওয়া চুমু দিচ্ছে।
তাই এই মোবারক চুল (দাঁড়ি) সমূহকে বাড়তে দিন, আর এতদিন পর্যন্ত যতবার দাঁড়ি মুন্ডিয়েছেন অথবা ছেটে এক মুষ্টি থেকে কম করে নিয়েছেন, এর জন্য তাওবা করে নিন এবং সব সময়ের জন্য প্রিয় আক্বা صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর পবিত্র সুন্নাত দাঁড়ি মোবারককে নিজের চেহারায় সাজিয়ে নিন।
ছরকার কা আশিক ভি কিয়া দাড়ি মুন্ডাতা হে?
কিউ ইশক কা চেহরা ছে ইজহার নেহী হুতা।(ওয়াসায়িলে বখশিশ, ২৩৪ পৃষ্ঠা)
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد