ধূলিময় কপালের ফযীলত
হযরত সায়্যিদুনা ওয়াসিলাহ বিন আসকা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণিত; প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত নামায থেকে অবসর হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের কপাল থেকে যেন (মাটি) পরিস্কার না করে। কেননা, যতক্ষণ পর্যন্ত সিজদার চিহ্ন তার কপালে বিদ্যমান থাকে ফিরিশতাগণ তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে।” (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ২য় খন্ড, ৩১১ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭৬১)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! নামাযের মধ্যে কপাল থেকে মাটি ঝেড়ে ফেলা ভাল নয়, আর আল্লাহ্র পানাহ! অহংকার বশতঃ পরিস্কার করা গুনাহ্, আর নামায শেষে কারো যদি রিয়ার ভয় হয় তবে তার উচিত, নামাযের পর কপাল থেকে মাটি ঝেড়ে ফেলা।
নামায ভঙ্গকারী ২৯টি বিষয়
(১) কথাবার্তা বলা। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৪৫ পৃষ্ঠা) (২) কাউকে সালাম করা (৩) সালামের উত্তর দেয়া। (তাহতাবী পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩২২ পৃষ্ঠা) (৪) হাঁচির উত্তর দেয়া। (নামাযে নিজের হাঁচি আসলে চুপ থাকবেন।) যদি “اَلْحَمْدُ لِلّٰه” বলেও ফেলেন তবু কোন অসুবিধা নেই আর যদি ঐ সময় তা না বলে থাকেন তবে নামায শেষ করে বলবেন (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৮) (৫) সুসংবাদ শুনে উত্তরে “اَلْحَمْدُ لِلّٰه”বলা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৯) (৬) খারাপ সংবাদ (যেমন কারো মৃত্যুর সংবাদ) শুনে اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ বলা। (প্রাগুক্ত) (৭) আযানের উত্তর দেয়া। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০০) (৮) আল্লাহ তাআলার নাম শুনে উত্তরে جَلَّ جَلَا لُه ٗ বলা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪২০ পৃষ্ঠা) (৯) নবী করীম, রউফর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর মহান নাম শুনে উত্তরে দরূদ শরীফ পড়া। (যেমন- صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বলা) (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৯৯ পৃষ্ঠা) (অবশ্য যদি جَلَّ جَلَا لُه ٗ বা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এ কথা গুলো উত্তরের নিয়্যতে না বলে থাকলে নামায ভঙ্গ হবে না।)
নামাযে কান্না করা
(১০) ব্যথা বা মুসীবতের কারণে যদি এ রকম শব্দাবলী যেমন “আহ, উহ, উফ, তুফ ইত্যাদি মুখ থেকে বের হয়ে যায় অথবা কান্না করার দ্বারা শব্দ সৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি কান্নার সময় শুধু চোখের পানি বের হয়, শব্দ ও বর্ণ উচ্চারিত হয় না তাহলে কোন ক্ষতি নেই। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০১ পৃষ্ঠা) আর যদি নামাযের মধ্যে ইমামের তিলাওয়াতের কারণে কান্না করতে থাকে আর মাঝে মাঝে “আরে, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এ জাতীয় কিছু শব্দ মুখ থেকে বের হয়ে যায় তবে কোন ক্ষতি নেই। কারণ এটা হয়েছে একাগ্রতা ও বিনয়ের কারণে। যদি ইমামের সুন্দর কণ্ঠের কারণে মুগ্ধ হয়ে এসব শব্দাবলী বলে তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৫৬ পৃষ্ঠা)
নামাযে কাঁশি দেয়া
(১১) রোগীর মুখ থেকে যদি অনিচ্ছায় আহ্! শব্দ বের হয় তবে নামায ভঙ্গ হবে না। এভাবে হাঁচি, হাই, কাঁশি ও ঢেকুর ইত্যাদিতে যত অক্ষর অপারগ অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে বের হয় তা ক্ষমাযোগ্য। (দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ৪১৬ পৃষ্ঠা) (১২) ফুঁক দিতে যদি শব্দ বের না হয় তবে তার হুকুম নিঃশ্বাসের মতই, তাতে নামায ভঙ্গ হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ফুঁক দেয়া মাকরূহ আর যদি এর ফলে দু’টি শব্দ বের হয় যেমন-উফ, তুফ তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (গুনিয়াহ, ৪২৭ পৃষ্ঠা) (১৩) গলা পরিস্কার করার সময় যদি দু’টি অক্ষর প্রকাশ হয় যেমন (আখ) তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। অবশ্য যদি তা অক্ষমতা বা কোন উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, যেমন শরীরের চাহিদা বা আওয়াজ পরিস্কার করার জন্য অথবা ইমামকে লুকমা দেয়ার জন্য হয় অথবা কেউ সামনে দিয়ে অতিক্রম করার সময় তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হয়, তবে এসব কারণে কাঁশি দিলে কোন ক্ষতি নেই। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৫৫ পৃষ্ঠা)
নামাযের মধ্যে দেখে তিলাওয়াত করা
(১৪) কুরআন শরীফ থেকে কোন আয়াত কিংবা কোন কাগজ বা মেহরাব ইত্যাদিতে লিখিত স্থান হতে দেখে দেখে কুরআন তিলাওয়াত করা। (অবশ্য যদি এমন হয় যে, মুখস্থ তিলাওয়াত করছে, এ সময় কুরআনের আয়াত বা মেহরাব ইত্যাদির উপর শুধু দৃষ্টি থাকে তবে কোন ক্ষতি নেই। যদি এমন হয়, কোন কাগজ ইত্যাদির উপর আয়াত লিখা রয়েছে কেউ তা দেখলো এবং বুঝে ফেললো, কিন্তু পড়ল না তবে এমতাবস্থায় কোন ক্ষতি নেই।) (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা) (১৫) ইসলামী কিতাব কিংবা ইসলামী বিষয়াদি নামাযের মধ্যে ইচ্ছাকৃত দেখা এবং ইচ্ছাকৃত পড়া মাকরূহ। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০১ পৃষ্ঠা) যদি দুনিয়াবী বিষয়াদি হয়ে থাকে তাহলে আরো বেশি মাকরূহ। সুতরাং নামায অবস্থায় নিজের কাছে কিতাবাদী বা লেখাবিশিষ্ট পেকেট ও শপিং ব্যাগ, মোবাইল ফোন বা ঘড়ি ইত্যাদি এমনভাবে রাখবেন যেন এর উপর দৃষ্টি না পড়ে অথবা দৃষ্টিগোচর না হওয়ার জন্য সেগুলোর উপর রুমাল ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে দেবেন। অনুরূপভাবে, নামাযের সময় দেয়াল ইত্যাদির গায়ে লাগানো ষ্টিকার, বিজ্ঞাপন ও ফ্রেম ইত্যাদির প্রতি দৃষ্টি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
আমলে কসীরের সংজ্ঞা
(১৬) আমলে কসীর নামায ভঙ্গ করে দেয়। যদি তা নামাযের আমলগুলোর মধ্যকার না হয়, বা নামাযকে সংশোধন করার জন্য করা না হয়। যে কাজ সম্পাদনকারীকে দূর থেকে দেখতে এমন মনে হয় যে, সে নামাযের মধ্যে নেই, বরং যদি ধারণাও প্রবল হয় যে, সে নামাযে নেই তবে তাই হবে আমলে কসীর। আর যদি দূর থেকে দেখা ব্যক্তির এমন সন্দেহ হয় যে, সে নামাযের মধ্যে আছে কিংবা নেই তবে তা হবে আমলে কালীল। এর জন্য নামায ভঙ্গ হবে না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা)
নামাযের মধ্যে পোশাক পরিধান করা
(১৭) নামাযের মধ্যে জামা বা পায়জামা অথবা লুঙ্গি পরিধান করা। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৬৫ পৃষ্ঠা) (১৮) নামাযের মধ্যে সতর খুলে যাওয়া আর এমতাবস্থায় নামাযের কোন রুকন আদায় করা অথবা এমতাবস্থায় তিনবার সুবহানাল্লাহ বলার পরিমাণ সময় অতিবাহিত হওয়া। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৬৭ পৃষ্ঠা)
নামাযের মধ্যে কিছু গিলে ফেলা
(১৯) স্বল্প পরিমাণ খাদ্য বা পানীয় (যেমন তিল না চিবিয়ে) গিলে ফেলা। কিংবা মুখে ফোটা পড়লো আর গিলে ফেললো। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪১৮ পৃষ্ঠা) (২০) নামায শুরু করার আগে দাঁতের মধ্যে কোন বস্তু আটকানো ছিলো তা গিলে ফেলল তবে তা যদি চনার সমপরিমাণ কিংবা তদপেক্ষা বড় হয়ে থাকে তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি তা চনার চেয়ে ছোট হয়ে থাকে তবে তা মাকরূহ হবে। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩৪১ পৃষ্ঠা) (২১) নামাযের পূর্বে কোন মিষ্টি জাতীয় জিনিস খেয়েছিল এখন তার কোন অংশ এখন আর মুখে অবশিষ্ট নেই, কিন্তু মুখের লালায় কিছু স্বাদ রয়েছে মাত্র। এ অবস্থায় তা গিলে ফেললে নামায ভঙ্গ হবে না। (খুলাসাতুল ফতোওয়া, ১ম খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা) (২২) মুখে চিনি ইত্যাদি রয়েছে, তা মিশে কণ্ঠনালীতে পৌঁছে গেলো, নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (প্রাগুক্ত) (২৩) দাঁত থেকে যদি রক্ত বের হয় আর এতে থুথুর পরিমাণ বেশি হয়, এমতাবস্থায় তা গিলে ফেললে নামায ভঙ্গ হবে না। অন্যথায় নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা) (উল্লেখ্য যে, অধিক পরিমাণের চিহ্ন হচ্ছে কণ্ঠনালীতে রক্তের স্বাদ অনুভব হওয়া। তাহলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। নামায ভঙ্গের জন্য স্বাদের বিষয়টি বিবেচ্য আর অযু ভঙ্গের জন্য রংয়ের বিষয়টি বিবেচ্য; সুতরাং অযু ঐ সময় ভঙ্গ হবে যখন থুথু লাল বর্ণ ধারণ করে আর যদি থুথু হলুদ বর্ণের হয় তবে অযু ভঙ্গ হবে না।)
নামাযের মাঝখানে কিবলার দিক পরিবর্তন করা
(২৪) বিনা কারণে বক্ষকে (সীনা) কা’বার দিক থেকে ৪৫০ ডিগ্রী বা এর চাইতেও বেশি ফিরালে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (হ্যাঁ! যদি ওযরের কারণে হয়ে থাকে তবে নামায ভঙ্গ হবে না। যেমন হাদস্ অর্থাৎ অযু ভেঙ্গে গেছে বলে ধারণা হলো আর মুখ ফেরালো, এ অবস্থায় তার ধারণা ভুল বলে সুস্পষ্ট হলো তবে সে এ সময়ের মধ্যে মসজিদ থেকে বের না হলে নামায ভঙ্গ হবে না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৬৮ পৃষ্ঠা)
নামাযে সাপ মারা
(২৫) সাপ-বিচ্ছু মারলে নামায ভঙ্গ হয় না যতক্ষণ না, তিন কদম যেতে হয়, অথবা তিন আঘাতের প্রয়োজন হয়। তবে যদি তিন কদম যেতে হয় বা তিন আঘাতের প্রয়োজন হয় তবে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪২৩ পৃষ্ঠা) সাপ বিচ্ছু মারা তখনই বৈধ হবে, যখন তা সামনে দিয়ে অতিক্রম করে এবং দংশন করার ভয় থাকে, যদি দংশন করার ভয় না থাকে, তবে মারা মাকরূহ। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা) (২৬) পরপর তিনটি চুল বা লোম উপড়ে ফেললে, অথবা তিনটি উকুন মারলে অথবা একটি উকুনকে তিনবার মারলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি পর পর না হয় তবে নামায ভঙ্গ হবে না তবে মাকরূহ হবে। (প্রাগুক্ত)
নামাযে চুলকানো
(২৭) এক রুকনে তিনবার চুলকালে নামায ভঙ্গ হয়ে যায় অর্থাৎ এভাবে যে, চুলকানোর পর হাত সরিয়ে নিলো। অতঃপর আবার চুলকাল পুনরায় হাত সরিয়ে নিলো। দু’বার হলো। এখন যদি এভাবেই তৃতীয়বার করে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি একবার হাত রেখে কয়েকবার নাড়া দিলো (চুলকাল) তবে একবার চুলকাল বলে ধরে নেয়া হবে এক্ষেত্রে নামায ভঙ্গ হবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা। গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৪২৩ পৃষ্ঠা)
اَللهُ اَكْبَرُ বলার ক্ষেত্রে ভুল-ভ্রান্তি
(২৮) রুকন পরিবর্তনকালীন তাকবীর বলার সময় اَللهُ اَكْبَرُ শব্দের الف কে দীর্ঘ করে পড়লে। اَللهُ এর (আলিফ) কে দীর্ঘস্বরে অর্থাৎ اٰللهُ বললো অথবা اٰكْبَرُ বললো অথবা ب এরপর الف কে অতিরিক্ত করলো অর্থাৎ اَكْبَا رُ বললো, তবে নামায ভঙ্গ হয়ে গেলো। আর যদি তাকবীরে তাহরীমাতে এমনি করলো তাহলে তো তার নামাযই শুরু হলো না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা) অধিকাংশ মুকাব্বির (অর্থাৎ যারা জামাআত চলাকালীন ইমামের তাকবীর সমূহকে উঁচু আওয়াজে পেছন পর্যন্ত পৌঁছায়) ঐ ভুলগুলো অধিক করে থাকে আর এভাবে নিজের ও পরের নামাযগুলোকে বিনষ্ট করে দেয়। সুতরাং যারা এসব আহকাম ভালভাবে জানেনা, তাদের মুকাব্বির হওয়া উচিত নয়। (২৯) কিরাত অথবা নামাযের যিকিরগুলোতে এমন ভুল করা যাতে অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, তাহলে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৭৩ পৃষ্ঠা)
নামাযের ৩২টি মাকরূহে তাহরীমা
(১) নামাযরত অবস্থায় দাঁড়ি, শরীর কিংবা কাপড় ইত্যাদি নিয়ে খেলা করা। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা)
(২) কাপড় গুটিয়ে নেয়া (যেমন-আজকাল কিছু কিছু লোক সিজদাতে যাওয়ার সময় পায়জামা ইত্যাদি সামনে অথবা পিছনের দিকে উঠিয়ে নেয়। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৭ পৃষ্ঠা) হ্যাঁ! যদি কাপড় শরীরের সাথে লেগে যায় তবে এক হাতে ছাড়িয়ে নিলে কোন ক্ষতি নেই।
কাঁধের উপর চাদর ঝুলানো
(৩) সাদল অর্থাৎ কাপড় ঝুলানো। যেমন- মাথা অথবা কাঁধে এমনভাবে চাদর বা রুমাল ইত্যাদি রাখা যে উভয় পার্শ্ব ঝুলতে থাকে। অবশ্য যদি এক পার্শ্বকে অপর কাঁধের উপর তুলে দেয় এবং অপরটি ঝুলতে থাকে, তবে ক্ষতি নেই। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠা) (৪) আজকাল কিছু সংখ্যক লোক এক কাঁধের উপর এভাবে রুমাল রাখে যে, তার এক প্রান্ত পেটের উপর অপর প্রান্ত পিঠের উপর ঝুলতে থাকে এভাবে নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমী। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ১৬৫ পৃষ্ঠা) (৫) উভয় আস্তীন হতে একটি আস্তীনও যদি অর্ধ কব্জি অপেক্ষা বেশি উঠে থাকে তবে নামায মাকরূহে তাহরীমী হবে। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯০ পৃষ্ঠা)
প্রাকৃতিক হাজতের তীব্রতা
(৬) প্রস্রাব, পায়খানা অথবা বাতাস তীব্রভাবে আসা। যদি নামায শুরু করার পূর্বেই এ প্রয়োজন তীব্র হয়, তাহলে সময় বেশি থাকা অবস্থায় নামায শুরু করা গুনাহ। হ্যাঁ! যদি অবস্থা এমনি হয় যে, প্রয়োজন সেরে অযু করতে করতে নামাযের সময় শেষ হয়ে যাবে, তাহলে নামায আদায় করে নিন। আর যদি নামাযের মধ্যখানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং সময়ের অবকাশ থাকে তবে নামায ভঙ্গ করে দেয়া ওয়াজীব। যদি এইভাবে আদায় করে নেওয়া হয়, গুনাহগার হবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৯২ পৃষ্ঠা)
নামাযে কঙ্কর ইত্যাদি সরানো
(৭) নামাযের সময় কঙ্কর ইত্যাদি সরানো মাকরূহে তাহরীমী। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৮ পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা জাবির رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ বলেন: আমি নামাযের ভিতর পাথর ইত্যাদি স্পর্শ করার ব্যাপারে বারিগাহে রিসালাতে صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আরয করলাম, ইরশাদ হলো: “একবার, আর যদি তুমি এটা থেকে বেঁচে থাকো তবে কালো চোখ বিশিষ্ট একশত উটনী থেকে উত্তম।” (সহীহ ইবনে খুযাইমা, ২য় খন্ড, ৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস-৮৯৭) হ্যাঁ! যদি সুন্নাত অনুযায়ী সিজদা করা সম্ভব না হয় তবে একবার সরানোর অনুমতি রয়েছে। আর যদি সরানো ছাড়া ওয়াজীব আদায় করা সম্ভব না হয়, তবে সরানোই ওয়াজীব, চাই একাধিকবার সরানোর প্রয়োজন হয়।
আঙ্গুল মটকানো
(৮) নামাযে আঙ্গুল মটকানো। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠা) খাতিমুল মুহাক্কিকীন হযরত আল্লামা আবেদীন শামী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: “ইবনে মাজাহ শরীফের বর্ণনা মতে, সুলতানে মদীনা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “নামাযে নিজের আঙ্গুল মটকাবে না।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, ৫১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৯৬৫) “মুজতাবা”র বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন: “রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নামাযের জন্য অপেক্ষাকালীন সময়েও আঙ্গুল মটকাতে নিষেধ করেছেন।”আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে; “নামাযের জন্য যেতে যেতে আঙ্গুল মটকাতে নিষেধ করেছেন।”এই হাদীস সমূহ থেকে এ তিনটি বিধান প্রমাণিত হয় যে, (ক) নামায আদায়কালীন ও নামাযের আনুসাঙ্গিক বিষয় যেমন নামাযের জন্য গমন, নামাযের জন্য অপেক্ষাকালীন সময়ে আঙ্গুল মটকানো মাকরূহে তাহরীমী। (খ) নামাযের বাইরে (অর্থাৎ নামাযের আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো ছাড়া) বিনা প্রয়োজনে আঙ্গুল মটকানো মাকরূহে তানযিহী। (গ) নামাযের বাইরে (অন্য যে কোন সময়) প্রয়োজনবশত যেমন: আঙ্গুলগুলোকে আরাম দেয়ার জন্য আঙ্গুল মটকানো মুবাহ (অর্থাৎ মাকরূহবিহীন জায়েয) (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪০৯ পৃষ্ঠা) (৯) তাশবীক করা (অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়া) । (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৮ পৃষ্ঠা) প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যদি মসজিদের নিয়্যতে কেউ (ঘর থেকে) বের হয় সে যেন তাশবীক্ব অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ না করায়, নিশ্চয়ই সেটা নামাযের (হুকুমের) মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।” (মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৮১২৬) নামাযের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ও নামাযের জন্য অপেক্ষাকালীন সময়েও এ দু’টি বিষয় অর্থাৎ আঙ্গুল মটকানো ও তাশবীক করা মাকরূহে তাহরীমী। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩৪৬ পৃষ্ঠা)
কোমরে হাত রাখা
(১০) কোমরের উপর হাত রাখা। (প্রাগুক্ত, ৩৪৭ পৃষ্ঠা) নামায ছাড়াও (বিনা কারণে) কোমরের উপর (অর্থাৎ উভয় পার্শ্বের মাঝখানে) হাত রাখা উচিত নয়। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্র মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “কোমরে হাত রাখা জাহান্নামীদের প্রশান্তি (অভ্যাস) ।” (আস্সুনানুল কুবরা, ২য় খন্ড, ৪০৮ পৃষ্ঠা, হাদীস-৩৫৬৬) অর্থাৎ এটা ইহুদীদের কাজ। কেননা, তারা তো জাহান্নামী, অন্যথায় জাহান্নামীদের জন্য জাহান্নামে অপর কী প্রশান্তি রয়েছে! (বাহারে শরীয়াতের পাদটিকা, ৩য় অংশ, ১১৫ পৃষ্ঠা)
আসমানের দিকে দেখা
(১১) আসমানের দিকে দৃষ্টি দেয়া। (আল বাহরুর রাইক, ২য় খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা) আল্লাহর মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “কী অবস্থা হবে ঐসব লোকদের? যারা নামাযের মধ্যে আসমানের দিকে দৃষ্টি উঠায়, এটা থেকে বিরত থাকো। তা না হলে তাদের দৃষ্টি শক্তি ছিনিয়ে নেয়া হবে। (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ১০৩ পৃষ্ঠা)
(১২) এদিক সেদিক মুখ ফিরিয়ে দেখা। চাই সম্পূর্ণ মুখ ফিরিয়ে দেখুক বা সামান্য। মুখ ফিরানো ব্যতীত শুধু চোখ ফিরিয়ে এদিক সেদিক বিনা কারণে দেখা মাকরূহে তানযীহী। আর যদি কোন প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে হয় তবে ক্ষতি নেই। (বাহারে শরীয়াত, ৩য় অংশ, ১৯৪ পৃষ্ঠা) নবী করীম, রউফুর রহীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি নামাযে রত থাকে, আল্লাহ্ তাআলার বিশেষ রহমত তার প্রতি বর্ষণ হতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে এদিক সেদিক না দেখে। যখন সে আপন মুখ ফেরায় তখন তার রহমতও ফিরে যায়।” (আবূ দাউদ, ১ম খন্ড, ৩৩৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-৯০৯) (১৩) পুরুষের সিজদারত অবস্থায় হাত দু’টি বিছিয়ে দেয়া। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠা)
নামাযীর দিকে দেখা
(১৪) কারো মুখের সামনে (মুখোমুখী হয়ে) নামায আদায় করা। অন্যের জন্যও নামাযীর মুখোমুখী দাঁড়ানো নাজায়েজ ও গুনাহ্। কেউ প্রথম থেকেই মুখ করে বসে আছে আর এখন কেউ যদি তার চেহারার দিকে মুখ করে নামায আরম্ভ করে দেয়, তাহলে নামায আরম্ভকারী গুনাহ্গার হবে এবং ঐ নামাযীর জন্য মাকরূহ হবে। নামাযীর দিকে মুখ করে বসা ব্যক্তির কোন গুনাহ হবে না এবং তা মাকরূহও হবে না। (রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠা) যে ব্যক্তি জামাআতের সালাম ফেরানোর পর নিজের ঠিক পিছনে নামায আদায়কারীর দিকে মুখ করে তাকে দেখে বা পিছনে যাওয়ার জন্য তার দিকে মুখ করে এই জন্য দাঁড়িয়ে থাকে যে, সালাম ফেরানোর পর বের হয়ে যাবে কিংবা নামাযীর ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বা বসে এলান করে, দরস দেয়, বয়ান করে তাদের সকলের তাওবা করে নেয়া উচিত। (১৫) নামাযের মধ্যে নাক ও মুখ ঢেকে নেয়া। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা) (১৬) বিনা প্রয়োজনে কফ ইত্যাদি বের করা। (গুনিয়াতুল মুসতামলা, ৩৩৯ পৃষ্ঠা) (১৭) ইচ্ছাকৃত ভাবে হাই তোলা। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ৩৫৪ পৃষ্ঠা) (যদি এমনিতেই এসে যায় তবে অসুবিধা নেই, কিন্তু থামিয়ে দেয়া মুস্তাহাব) । রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন কারো নামাযে হাই আসে তখন সে যেন যতটুকু সম্ভব তা থামিয়ে রাখে। কেননা, তখন শয়তান মুখে প্রবেশ করে।” (সহীহ মুসলিম, ৪১৩ পৃষ্ঠা) (১৮) কুরআন মাজীদকে উল্টো দিক থেকে পাঠ করা। (যেমন প্রথম রাকাতে “সূরাহ লাহাব” পড়ল ও দ্বিতীয় রাকাতে “সূরা নসর”পাঠ করা) (১৯) কোন ওয়াজীব বাদ দেয়া। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাক্বিউল ফালাহ, ৩৪৫ পৃষ্ঠা) (যেমন- কওমা ও জালসাতে পিঠ সোজা হওয়ার পূর্বেই রুকূ বা দ্বিতীয় সিজদাতে চলে যাওয়া) (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১০৭) এ গুনাহের মধ্যে বহু সংখ্যক মুসলমানদেরকে লিপ্ত হতে দেখা যায়। স্মরণ রাখবেন! যত নামাযই এভাবে আদায় করা হয়েছে সবগুলো নামাযকে পুনরায় আদায় করে দেয়া ওয়াজীব। (২০) ‘কিয়াম’ ব্যতীত অন্য কোন অবস্থায় (রুকন তথা রুকূ, সিজদা, বৈঠক ইত্যাদিতে) কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা। (তাহতাবীর পাদটিকা সম্বলিত মারাকিউল ফালাহ, ৩৫১ পৃষ্ঠা) (২১) কিরাত রুকূতে গিয়ে শেষ করা। (প্রাগুক্ত) (২২) ইমামের আগে মুকতাদী রুকূ সিজদা ইত্যাদিতে চলে যাওয়া কিংবা তিনি উঠার পূর্বেই মাথা উঠিয়ে নেয়া। (রদ্দুল মুহতার খন্ড ২য়, ৫১৩পৃষ্ঠা) হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মালিক رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ থেকে বর্ণনা করেন; হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় ও ঝুঁকায় তার কপালের চুল শয়তানের হাতে।” (মুওয়াত্তায়ে ইমাম মালিক, ১ম খন্ড, ১০২ পৃষ্ঠা, হাদীস-১২) হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরায়রা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُথেকে বর্ণিত;আল্লাহ মাহবুব, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় সে কি এটাকে ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তার মাথাকে গাধার মাথা করে দেবেন!” (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ১৮১ পৃষ্ঠা)