১০ই জুলহিজ্জার প্রথম কাজ হল রমী করা
============
মুযদালিফা   শরীফ    হতে  মিনা  শরীফে  পৌঁছে     সোজা জামরাতুল  আকাবা অর্থাৎ বড় শয়তানের দিকে   চলে যাবেন। আজ  শুধুমাত্র  এই একটিকেই কংকর   মারতে  হবে। প্রথমে কাবার দিক জেনে নিন, অতঃপর জামরাহ হতে  কমপক্ষে ৫ হাত   (অর্থাৎ  কমপক্ষে  প্রায় আড়াই গজ) দূরে (বেশীর  কোন সীমা  নির্ধারিত  নেই) এভাবে দাঁড়ান  যেন  মিনা  আপনার   ডান    হাতের  দিকে  এবং কা’বা শরীফ আপনার   বাম     হাতের দিকে থাকে, আর মুখ   যেন  জামরাহ    এর  দিকে    থাকে।   সাতটি  কংকর আপনার  বাম  হাতে  রাখবেন  বরং  দুই  তিনটি  কংকর  অতিরিক্ত  রাখবেন।  এখন  ডান  হাতের  চিমটি  কাটার  স্থানে  শাহাদাত  আঙ্গুল  এবং  বৃদ্ধা  আঙ্গুলের  অগ্রভাগে  নিয়ে    ডান    হাত    এমনভাবে    উঠাবেন    যেন    বগলের  শুভ্রতা প্রকাশ পায়,  প্রতিবার                   بِسۡمِ   اللہِ، اَللہُ اَکَبَر বলতে বলতে একটি একটি করে সাতটি কংকর এমনভাবে নিক্ষেপ করবেন যেন সমস্ত কংকর জামরাহ পর্যন্ত পৌছে, নতুবা  কমপক্ষে  (জামরাহ)  তিন  হাতের  দুরত্বে   গিয়ে  পড়ে।    প্রথম   কংকর   নিক্ষেপ  করতেই  ‘লাব্বাইক’    পড়া    বন্ধ    করে    দিবেন।    যখন    সাতটি  কংকর    নিক্ষেপ   পূর্ণ   হয়ে    যাবে   তখন   সেখানে   আর দাঁড়াবেন    না।    না    সোজা    সামনে    না    ডানে    বামে  কোথাও,   বরং  তৎক্ষণাৎ  জিকির  এবং  দোয়া পড়তে পড়তে পিছনে ফিরে আসবেন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড,   ১১৯৩  পৃষ্ঠা)    (দ্রুত   পিছন  ফিরে   চলে  আসাই  সুন্নাত।  কিন্তু  বর্তমানে  নতুন  স্থাপত্যের  কারণে  পিছন  ফিরে আসা সম্ভব নয়। তাই কংকর নিক্ষেপ করে  কিছু দূর    সামনে     এগিয়ে    “ইউটান”      এর    ব্যবস্থা    করতে হবে।)

রমী   করার   সময়   সতর্কতা   অবলম্বনের   ৫টি   মাদানী  ফুল
============
সৌভাগ্যবান      হাজী      সাহেবান!      জামারাতে         পাথর  নিক্ষেপের সময় বিশেষতঃ দশ তারিখের সকাল বেলায় হাজী  সাহেবানদের  বিরাট  জমায়েত  হয়ে  থাকে,  আর অনেক সময়  সেখানে লোকেরা চাপা পড়ে যায়। সগে মদীনা    عُفِىَ    عَنْهُ     (লিখক)     ১৪০০    হিজরীতে      দশ তারিখের সকাল বেলায় মীনা শরীফে  নিজ  চোখে এই  হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখেছি যে,  লাশ  সমূহকে  উঠিয়ে উঠিয়ে      এক      সারিতে     শোয়ায়ে    রাখা     হচ্ছে।    কিন্তু বর্তমানে  স্থানকে    অনেক  প্রশস্থ  করা  হয়েছে।    নিচের  অংশ ছাড়াও  উপরে  আরো  ৪তলা   বিল্ডিং তৈরী করা  হয়েছে। তাই ভীড় এখন বহুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। নিন্মে কিছু সতর্কতা উপস্থাপন করছি। ﴾১﴿  ১০   তারিখ সকাল   বেলা  খুব  বেশী    ভীড়  থাকে।   দুপুর  ৩/৪  টা  বাজে ভীড় অনেকাংশে কমে যায়। এখন যদি ইসলামী বোনেরাও সাথে থাকে, তারপরও কোন অসুবিধা নেই। উপর  তলা  থেকে   রমী   করলে  ভীড়  আরো  খুব   কম  পাবেন   এবং খোলা বাতাসও  মিলবে। ﴾২﴿  রমী করার সময় লাঠি, ছাতা আরো অন্যান্য জিনিসপত্র সাথে নিয়ে যাবেন না। কর্তৃপক্ষের লোকেরা তা কেড়ে নিয়ে রেখে দেয়। পরে তা ফিরে পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। হ্যাঁ! ছোট   স্কুল   ব্যাগ   যদি   কোমরে   বাঁধা   অবস্থায়   থাকে,  তাহলে  অনেক  সময়  তা  নিয়ে  যেতে  দেয়।  কিন্তু  ১০  তারিখের    রমীতে   এগুলোও   না   নিয়ে   যেতে    পারলে ভাল। কারণ যদি আটকে ফেলে, তবে আপনি সমস্যায় পড়তে  পারেন।  ১১    ও  ১২  তারিখের    রমীতে  ছোট  খাটো  জিনিস  নিয়ে  যাওয়ার   ক্ষেত্রে       প্রশাসনের  পক্ষ থেকে বাঁধা তুলনামূলক কম থাকে। ﴾৩﴿ হুইল  চেয়ারে  করে যারা রমী করবেন তাদের জন্য উপযুক্ত সময় হল তিনো    দিন    আসরের    নামাযের    পর।      ﴾৪﴿      কংকর নিক্ষেপের  সময়   যদি কোন  জিনিস  হাত  থেকে পড়ে  যায়, অথবা আপনার   সেন্ডেল বা জুতা যদি   পা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বলে অনুভব হয়, তাহলে ভীড়ের মধ্যে কখনও ঝুঁকবেন না। ﴾৫﴿ যদি কিছু বন্ধু মিলে রমী তথা কংকর নিক্ষেপ  করতে চান, তাহলে পূর্ব থেকেই ফিরে  এসে  একত্রিত   হওয়ার  জন্য  নিকটবর্তী   কোন  একটি  স্থান   নির্ধারণ   করে   উহার   চিহ্ন   স্মরণ    রাখুন।    নতুবা বন্ধুদের   থেকে   পৃথক   হয়ে   গেলে   পেরেশানীর   সীমা  থাকবে না। ভিড়ের অন্যান্য সকল স্থানে এই কথাটির খুব     বেশী    স্মরণ   রাখবেন!   সগে      মদীনা    عُفِىَ   عَنْهُ (লিখক) এমন এমন বৃদ্ধ হাজী সাহেব সাহেবানদেরকে হারিয়ে   যেতে  দেখেছি   যে,  এ  অসহায়দের  নিজেদের মুয়াল্লিমের   নামও   জানা    থাকে    না।   অতঃপর      তারা পরীক্ষায় পড়ে যায়।

রমী করার ৮টি মাদানী ফুল
============
নবী  করীম  صَلَّی  اللہُ   تَعَالٰی   عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ    وَسَلَّم  এর    দুটি  ইরশাদ: ﴾১﴿ আরজ করা হল;  রমীয়ে   জিমার’এ  (তথা কংকর নিক্ষেপে)   কী  সাওয়াব রয়েছে? তিনি  صَلَّی  اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم    ইরশাদ করলেন: “তুমি তোমার রব    এর    নিকট    এর     সাওয়াব    তখনই   পাবে,    যখন তোমার   এর   (অর্থাৎ   সাওয়াবের)   খুব  বেশী   দরকার পড়বে।”(মু’জাম   আউসাত,   ৩য়    খন্ড,   ১৫০     পৃষ্ঠা,  হাদীস: ৪১৪৭) ﴾২﴿ “জামরাতে রমী করা তোমার জন্য কিয়ামতের           দিন           নূর           হবে।”           (আত্‌তরগীব  ওয়াত্‌তারহীন,  ২য় খন্ড,  ১৩৪ পৃষ্ঠা,  হাদীস:   ৩) ﴾৩﴿ সাতটি কংকরের চেয়ে কম নিক্ষেপ করা জায়েজ নেই। যদি     শুধুমাত্র     তিনটি    কংকর    নিক্ষেপ    করে      অথবা মোটেও   নিক্ষেপ না  করে তাহলে  ‘দম’ ওয়াজিব  হবে, আর   যদি চারটি  কংকর  নিক্ষেপ  করে তাহলে অবশিষ্ট প্রতিটি   কংকরের পরিবর্তে ‘সদকা’  দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য়   খন্ড,  ৬০৮ পৃষ্ঠা) ﴾৪﴿  যদি সমস্ত কংকর এক সাথে নিক্ষেপ করেন তাহলে ইহা সাতটি ধরা হবে না   বরং   একটি   কংকর   বলে   গণ্য    করা   হবে।(রদ্দুল  মুহতার,  ৩য় খন্ড, ৬০৭ পৃষ্ঠা)  ﴾৫﴿ কংকর সমূহ  মাটি জাতীয় পদার্থ হতে হবে। (যেমন: কংকর, পাথর, চুনা, মাটি) যদি কোন প্রাণীর বিষ্টা নিক্ষেপ করে তাহলে রমী হবে না। (দুররে মুখতার ও  রদ্দুল মোহতার, ৩য় খন্ড,  ৬০৮ পৃষ্ঠা)                 ﴾৬﴿ অনুরূপভাবে কোন কোন লোক  ‘জামারাতের’মধ্যে  পাত্র,  জুতা  ইত্যাদি  নিক্ষেপ  করে, ইহাও সুন্নাত নয়, আর  কংকরের  পরিবর্তে  জুতা অথবা  ডিব্বা   ইত্যাদি  যদি   নিক্ষেপ  করে  তাহলে  রমী আদায় হবে না।   ﴾৭﴿ রমীর জন্য উত্তম এটাই হল যে, মুজদালিফা  হতে  কংকরসমূহ নিয়ে  যাবেন। তবে  ইহা আবশ্যক নয়। দুনিয়ার  যে কোন  অংশের কংকর সমূহ নিক্ষেপ  করুন  না  কেন  রমী  সঠিক  ভাবে  আদায়  হয়ে  যাবে। ﴾৮﴿ দশ তারিখের রমী তথা পাথর নিক্ষেপ সূর্য্য উদয় হতে শুরু করে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত (অর্থাৎ যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বে পর্যন্ত) সময়ে করা সুন্নাত, আর সূর্য ঢলে পড়া হতে সূর্য অস্ত  যাওয়া  পর্যন্ত রমী করা  মুবাহ   (অর্থাৎ   জায়েজ), আর সূর্য অস্ত যাওয়া    হতে   সুবহে   সাদিক   পর্যন্ত   সময়ে     রমী    করা মাকরূহ।  যদি  কোন    অপরাগতার  কারণে  হয়,  যেমন রাখাল যদি  রাতে রমী করে তাহলে  মাকরূহ  হবে   না। (প্রাগুক্ত, ৬১০)

ইসলামী বোনদের রমী
============
সাধারণত    দেখা  যায়  যে,   পুরুষেরা   কোন  অপারগতা ছাড়াই   মহিলাদের পক্ষ হতে রমী  আদায়  করে দেয়। এভাবে  ইসলামী  বোনেরা রমীর সৌভাগ্য হতে  বঞ্চিত থেকে  যায়,   আর  যেহেতু রমী করা  ওয়াজিব,  সেহেতু  ওয়াজিব  ছেড়ে  দেওয়ার  কারণে   তাদের  উপর  ‘দম’  ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই ইসলামী বোনেরা নিজের রমী নিজেরাই করবেন।

রোগীদের রমী
============
কিছু কিছু হাজী সাহেবান এমনি তো সবস্থানে সতস্ফুর্ত ঘুরাঘুরি  করে  কিনত্মু   সাধারণ অসুস্থতার কারণে  তারা অন্যদের মাধ্যমে রমী করিয়ে নেয়।

অসুস্থ ব্যক্তির পক্ষ থেকে রমী করার পদ্ধতি
============
সদরুশ      শরীয়া,      বদরুত      তরীকা      হযরত      আল্লামা  মাওলানা   মুহাম্মদ  আমজাদ   আলী  আজমী  رَحۡمَۃُ   اللہِ تَعَالٰی     عَلَیْہِ   বলেন:   যে    ব্যক্তি   এমন    অসুস্থ   হয়   যে, বাহনের উপর বসেও জামরা  পর্যন্ত  পৌঁছতে পারে না। সে অন্যকে নির্দেশ দিবে যে, তার পক্ষ থেকে যেন রমী করে  দেয়।   এখন  প্রতিনিধির জন্য উচিত যে, যদি সে  এখনও    পর্যন্ত    নিজের   রমী   না    করে   থাকে,   তাহলে প্রথমে    নিজের     পক্ষ   থেকে    সাতটি    কংকর    নিক্ষেপ করবে, অতঃপর রোগীর পক্ষ থেকে রমী করবে। এখন যদি   প্রতিনিধি  এমন  করে  যে,  একটি   কংকর  নিজের পক্ষ থেকে মেরে অপরটি রোগীর  পক্ষ থেকে। এভাবে সাতবার  করল      তবে  মাকরুহ  হবে।  যদি  কেউ  অসুস্থ ব্যক্তির হুকুম ব্যতীত তার পক্ষ থেকে রমী আদায় করে দেয়,   তাহলে   রমী   আদায়  হবে  না,   আর   যদি   অসুস্থ ব্যক্তির      মধ্যে   এতটুকু   শক্তি     নেই   যে,   রমী   করতে পারবে।     তাহলে উত্তম  হল   যে, তার সাথী তার  হাতে কংকর রেখে রমী  করিয়ে  দিবে। অনুরূপ ভাবে বেহুশ, মাজনুন (অর্থাৎ পাগল) অথবা অবুঝ শিশুর পক্ষ থেকে তার   সাথীরা   রমী   করে   দিবে,    আর   উত্তম    হল   যে,  তাদের হাতে কংকর রেখে রমী করিয়ে দিবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪৮ পৃষ্ঠা)

Top