মদীনার দিকে গমণকারীদের ইহরাম
===============
যারা নিজের দেশ থেকে মদীনা শরীফে زَادَہَا للہُ شَرَفًا وَّ تَعۡظِیۡمًا   সরাসরি  যাত্রা   করে,   তাদেরকে  ইহরাম  ছাড়া  এই যাত্রা করতে হবে। মদীনা শরীফ থেকে যখন মক্কা শরীফের   দিকে     আসবেন,   ঐ   সময়   মসজিদে   নববী শরীফ  থেকে  অথবা   যুলখুলাইফা  (অর্থাৎ   আব্‌ইয়ারে  আলী) থেকে ইহরামের নিয়্যত করুন।

মুয়াল্লিমের পক্ষ থেকে গাড়ির ব্যবস্থা
============
জিদ্দা শরীফ থেকে মক্কা  শরীফ, মদীনা   শরীফ,  মিনা, আরাফাত,  মুয্‌দালিফা, আর প্রত্যাবর্তনের সময়    মক্কা শরীফ      থেকে    জিদ্দা     শরীফ     পর্যন্ত     পৌঁছিয়ে    দেয়া  এমনকি নিজ দেশ থেকে সরাসরি মদীনায়ে মুনাওয়ারা অভিমুখীদেরও   এই   সুবিধা,   প্রদান    করা    মুয়াল্লিমের দায়িত্ব।  আর ইহার  ফিঃ আপনার কাছ  থেকে   আগেই  নিয়ে    নেওয়া   হয়েছে।   যখন    আপনি   প্রথমবার   মক্কা  শরীফে  মুয়াল্লিমের   অফিসে  যাবেন  ঐ সময়ের খাবার ও      আরাফাত      শরীফে      দুপুরের       খাবার        আপনার মুয়াল্লিমের দায়িত্বে থাকবে।

সফরের ২৬ টি মাদানী ফুল
===============
﴾১﴿   সফরের   পথ    চলার   সময়  আপনার  প্রিয়    ভাজন বন্ধু-বান্ধবের কাছ  থেকে  ভূলত্রুটি ক্ষমা    চেয়ে নিবেন, আর যাদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়, তাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা করে দেয়া। হাদীস শরীফে      রয়েছে:      যে      ব্যক্তির      নিকট      তার      কোন  (ইসলামী) ভাই  ক্ষমা চাওয়ার  জন্য  আসে, তার  উপর ওয়াজিব হয়ে  যায়  ক্ষমা  করে দেয়া। অন্যথায়  হাউজে কাউছারে   আসা   তার    নছীব      হবেনা।    (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া,   ১০ম  খন্ড,  ৬২৭  পৃষ্ঠা)    ।  ﴾২﴿  যদি    কারো আমানত আপনার কাছে থাকে কিংবা কর্জ থাকে, তবে ফেরত  দিয়ে   দিন।  যাদের   সম্পদ  অন্যায়ভাবে   গ্রহণ করেছেন    তা    তাদেরকে     ফেরত    দিয়ে   দিন।   কিংবা তাদের    থেকে   ক্ষমা  করিয়ে   নিন।  যদি  তার    ঠিকানা  পাওয়া    না   যায়,   ততটুকু   পরিমান  সম্পদ  ফকীরদের মাঝে সদকা করে দিন। ﴾৩﴿ নামাজ, রোযা, যাকাতসহ যতগুলো ইবাদত আপনার জিম্মায় অনাদায়ী আছে, তা আদায়   করে   নিন।   আর   বিলম্ব   করার   দরুণ     অর্জিত গুনাহের জন্য  তাওবাও করুন। এই মোবারক  সফরের  উদ্দেশ্য   শুধুমাত্র  আল্লাহ   তাআলা  ও  তাঁর  প্রিয়  হাবীব صَلَّی اللہُ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর  সন্তুষ্টি  অর্জন  করার জন্য   হওয়া  চাই।    লোক   দেখানো  ভাব  ও    অহংকার  থেকে    দূরে   থাকবেন।    ﴾৪﴿    ইসলামী    বোনের   সাথে যতক্ষণ    পর্যন্ত   নিজ   স্বামী    কিংবা    প্রাপ্ত    বয়স্ক   বিশ্বস্ত নির্ভরশীল মুহরিম (অর্থাৎ যাদের সঙ্গে বিবাহ করা, সব সময় হারাম) এমন ব্যক্তি সাথে থাকবেনা তাদের জন্য এই হজ্বের সফর করাটা হারাম। যদি করে ফেলে তবে হজ্ব  হয়ে    যাবে কিন্তু তার প্রতিটি  কদমে  কদমে গুনাহ লিখা হবে। (বাহারে    শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১০৫১  পৃষ্ঠা) (আর এই হুকুম শুধু হজ্বের সফরকারীদের জন্য নির্দিষ্ট নয়     বরং     প্রত্যেক     সফরের     জন্য।)     ﴾৫﴿     ভাড়ার  গাড়ীতে  যে  সকল  মালামাল  বহন  করবেন,  প্রথমেই  গাড়ির মালিককে তা দেখিয়ে নিবেন,  আর এর থেকে অতিরিক্ত মালামাল গাড়ীর মালিকের অনুমতি ব্যতীত রাখবেন  না।          ঘটনা:    হযরত     সায়্যিদুনা   আব্দুল্লাহ ইবনে   মোবারক   رَحۡمَۃُ     اللہِ     تَعَالٰی   عَلَیْہِ    কে   সফরে রওয়ানা হওয়ার সময় কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট পৌঁছিয়ে  দেয়ার   জন্য  একটি  পত্র   পেশ   করলে   তিনি رَحۡمَۃُ  اللہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  বললেন:  উট  ভাড়ায়  নিয়েছি।  এখন     সাওয়ারীর     মালিকের     অনুমতি     নিতে     হবে। কেননা  ইতিপূর্বে আমি   তাকে সকল মালামাল দেখিয়ে নিয়েছি,    আর  এই   পত্র   হল  তার     অতিরিক্ত  জিনিস। (ইহ্‌ইয়াউল   উলুম, ১ম খন্ড, ৩৫৩  পৃষ্ঠা) ﴾৬﴿ হাদীসে পাকে আছে: “যখন তিনজন ব্যক্তি (কোন) সফরে বের হবে,   তখন   তাদের   মধ্য   থেকে     একজনকে   আমির   (দলনেতা) বানিয়ে নিবে।”(আবু  দাউদ,   ৩য় খন্ড, ৫১ পৃষ্ঠা,  হাদীস:  ২৬০৮)   আর   এর  দ্বারা  কাজ  সুশৃংখল  হয়।  ﴾৭﴿       আর   ঐ    ব্যক্তিকে   আমীর  বানাবেন  যিনি সুন্দর        চরিত্রধারী,     জ্ঞানী,      ধার্মিক     এবং     সুন্নাতের অনুসারী  হয়।   ﴾৮﴿  আর  আমিরের   উচিৎ  নিজ   সফর  সঙ্গীদের   খেদমত  করা,    আর  তাদের  আরামের  প্রতি  পূর্ণ খেয়াল  রাখা।  ﴾৯﴿ যখন   সফরে বের  হবেন  তখন এভাবেই   বিদায়  গ্রহণ  করবেন,  যেমন  পৃথিবী   থেকে  বিদায়     নিয়ে    যাচ্ছেন।     যাওয়ার     সময়     এই    দোআ পড়ুন:

اَللّٰهُمَّ اِنَّا نَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَّعْثَآءِ السَّفَرِ وَكَاٰبَةِ الْمُنْقَلَبِ
وَسُوْٓ ءِ الْمَنْظَرِ      فِي الْمَالِ وَالْاَهْلِ  وَالْوَلَدِط

ফিরে  আসা  পর্যন্ত   আপনার সম্পদ, পরিবার,   পরিজন নিরাপদে   থাকবে।   ﴾১০﴿   সফরের   পোশাক   পরিধান  করতঃ মাকরূহ সময়  না হলে ঘরের মধ্যে চার রাকাত নফল নামায সুরা ফাতেহা ও সুরা ইখলাস দ্বারা আদায় করে  বেরিয়ে   পড়ুন।  ঐ  চার  রাকআত   আপনি  ঘরে  ফিরে     আসা     পর্যন্ত     আপনার     পরিবার     পরিজন     ও  সম্পদের  হেফাজতের দায়িত্ব পালণ করবে। ﴾১১﴿  ঘর থেকে   বের    হওয়ার   সময়   আয়াতুল   কুরসী   ও      সুরা কাফেরুন থেকে সুরা নাস পর্যন্ত সূরা লাহাব ব্যতিত এই পাঁচটি সুরা প্রতিটি তাসমিয়্যাহ (বিসমিল্লাহ) সহ পড়ে নিবেন।      শেষেও      (তাসমিয়্যাহ)     বিসমিল্লাহ      শরীফ পড়বেন।   اِنۡ   شَآءَ   اللہ      عَزَّوَجَلّ   সফরের   পূর্ণ   পথে  আরাম অর্জিত হবে।

এ  সময়  নিন্মে   দেওয়া   এই  আয়াতটি  একবার  পড়ে নিন,  তাহলে নিরাপদে  ফিরে আসবেন।  اِنَّ الَّذِیۡ فَرَضَ عَلَیۡکَ  الْقُرْاٰنَ لَرَآدُّکَ  اِلٰی  مَعَادٍ (পারা: ২০, সূরা:  কাসাস, আয়াত:  ৮৫)  (কানযুল  ঈমান   থেকে   অনুবাদ:  নিশ্চয় যিনি    আপনার     উপর   কুরআনকে   ফরয   (অপরিহার্য) করেছেন।     তিনি     আপনাকে     ফিরিয়ে     নিয়ে     যাবেন  যেখানে আপনি ফিরে যেতে চান।) ﴾১২﴿ মাকরুহ সময় না   হলে  নিজের   মহল্লার   মসজিদে   গিয়ে  দুই  রাকাত  নফল নামায আদায় করুন।

বিমান ভূপাতিত হওয়া  ও আগুনে পুড়ে  যাওয়া থেকে নিরাপদে থাকার দোআ
===========
﴾১৩﴿       বিমানে   আরোহন    করে   শুরু   ও   শেষে   দরূদ শরীফ   সহকারে  এই  দোআয়ে  মুস্তফা    صَلَّی   اللہُ   تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم টি পড়ে নিন:

اَللّٰهُمَّ  اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ   مِنَ  الْهَدْمِ  وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ  التَّرَدِّيْ  ط  وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَاَعُوْذُ بِكَ اَنْ يَّتَخَبَّطَنِيَ الشَّيْطٰنُ  عِنْدَ  الْمَوْتِ   ط  وَاَعُوْذُ  بِكَ  اَنْ  اَمُوْتَ   فِي  سَبِيْلِكَ مُدْبِرًا وَاَعُوْذُ بِكَ اَنْ اَمُوْتَ لَدِيِغًا ط

অনুবাদ:   ইয়া   আল্লাহ!    আমি    তোমার   নিকট    দালান ভেঙ্গে   পড়া   থেকে   আশ্রয়    প্রার্থনা   করছি     এবং   উঁচু থেকে পড়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থণা করছি। আরো আশ্রয়  প্রার্থনা করছি ডুবে   যাওয়া,  জ্বলে পুড়ে  যওয়া  এবং এমন বার্দক্য  থেকে তোমার কাছে  আরো   আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঐ বিষয় থেকে যে, শয়তান  মৃত্যুর সময় আমাকে কুমন্ত্রণা দিবে। আরো আশ্রয় প্রার্থণা  করছি ঐ বিষয় থেকে যে, আমি তোমার (দ্বীন ইসলামের) রাশতা থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে মরে যাব এবং সাপের দংশনে মৃত্যু বরণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

উঁচু স্থান  থেকে নিচে পতিত হওয়াকে تَـرَدِّيْ বলে,  আর জ্বলে পুড়ে যাওয়াকে حَـرَق বলে। হুজুরে পাক صَلَّی اللہُ تَعَالٰی     عَلَیْہِ    وَاٰلِہٖ      وَسَلَّم    এই    দোআ    করতেন।    এই দোআটি উড়োজাহাজের জন্য নির্দিষ্ট নয়। যেহেতু এই দোআতে  উঁচু  স্থান  থেকে  পতিত   হওয়া  এবং  আগুনে  পুড়ে  যাওয়া  থেকে আশ্রয়  প্রার্থনা   করা হয়েছে, আর  আকাশ  পথের   সফরে     এই  উভয়   বিপদের  সম্ভাবনা  তাকে বিধায় আশা করা যায়  যে, এই দোআটি পড়ার বরকতে   বিমান দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদে  থাকে।  ﴾১৪﴿ রেল,   বাস বা  কার   ইত্যাদি গাড়ীতে بِـسْمِ  اللّٰـہِ اَلـلّٰـہُ اَکْبَرْ,   اَلۡحَمۡدُلِـلّٰـہِ   ও   سُبۡحٰنَ   الـلّٰـہِ     সবগুলো   তিনবার তিনবার করে এবং لَآاِلٰـہَ اِلَّا الـلّٰـہ একবার করে আদায় করবেন।   অতঃপর   পবিত্র    কোরআন    মজিদে     বর্ণিত নিন্মের   এই   দোআটি    পড়ে   নিবেন।   اِنۡ   شَآءَ      اللہ    عَزَّوَجَلّ     সাওয়ারী     প্রত্যেক    বিপদাপদ    থেকে      রক্ষা পাবেন। দোআটি এই:

سُبْحٰنَ الَّذِیْ سَخَّرَ لَنَا  ھٰذَاوَمَا کُنَّا لَـہٗ مُقْرِنِیْنَ ﴿ۙ۱۳﴾ وَ اِنَّاۤ  اِلٰی رَبِّنَا لَمُنۡقَلِبُوۡنَ ﴿۱۴﴾

কানযুল      ঈমান      থেকে    অনুবাদ:    ঐ     সত্তার    জন্যই  পবিত্রতা, যিনি এই  বাহন  কে আমাদের  বশীভূত করে দিয়েছেন।  অথচ  সেটা  আমাদের  বশীভূত  হবার  ছিল  না।    এবং   নিশ্চয়    আমাদেরকে     আপন   প্রভুর     দিকে প্রত্যাবর্তন  করতে   হবে।  (পারা:  ২৫,  সূরা:     যুখরুফ,  আয়াত: ১৩-১৪)

﴾১৫﴿    যখন কোন   স্থানে  নামবেন  তখন দুই রাকাআত নফল   নামায পড়ে  নিবেন।  কেননা তা সুন্নাত।  (যদি মাকরুহ   ওয়াক্ত   না    হয়।)     ﴾১৬﴿   যখন    কোন      স্থানে অবতরণ করবেন তখন এই দোআটি পড়ে নিবেন। اِنۡ شَآءَ   اللہ     عَزَّوَجَلّ   ঐ   গমণ   করার   সময়   কোন   কিছু  আপনার ক্ষতি করবে না। দোআটি এই:

اَعُوۡذُ بِکَلِمَاتِ اللہِ التَّآمَّاتِ مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَ

(অনুবাদ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্য দ্বারা আশ্রয় চাই ঐ    সকল    খারাপ   অনিষ্টতা    থেকে   যাকে   তিনি   সৃষ্টি  করছে।)    ﴾১৭﴿     یَا    صَمَدُ     ১৩৪     বার    প্রত্যেক     দিন পড়বেন।  ক্ষুধা  ও  পিপাসার্ত  হওয়া    থেকে  নিরাপদে থাকবেন।

﴾১৮﴿   যখন    শত্রুর   অথবা   ডাকাতের    ভয়    হয়,   সূরা কোরাইশ পড়ে নিবেন। اِنۡ شَآءَ اللہ  عَزَّوَجَلّ  যে কোন বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তা লাভ  করবেন। ﴾১৯﴿ শত্রুর ভয়ের সময় এই দোআটি পড়া খুবই উপকারী:

اَللّ?هُمَّ اِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ

অনুবাদ:       ইয়া      আল্লাহ!      আমি       তোমাকে      তাদের   বক্ষগুলোর   প্রতিপক্ষ  দাঁড়   করছি  এবং   তাদের  ক্ষতি থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

﴾২০﴿ যদি কোন বস্থ হারিয়ে যায় তবে এটা বলুন:
يَاجَامِعَ  النَّاسِ   لِيَوْمٍ   لَّا  رَيْبَ   فِيهِط  اِنَّ  اللهَ   لَا   يُخْلِفُ  الْمِيْعَادَ () اِجْمَعْ بَيْنِيْ وَ بَيْنَ ضَآ   لَّتِيْ

অনুবাদ:    ওহে  লোকদেরকে  সেই  দিন  একত্রিতকারী! যাতে    কোন    সন্দেহ    নেই।    নিশ্চয়    আল্লাহ    তাআলা  প্রতিশ্রুতির  ব্যতিক্রম  করে  না।   (আমাকে)   আমার  ও আমার হারানো বস্থর মধ্যস্থানে একত্রিত করে দাও।اِنۡ  شَآءَ   اللہ     عَزَّوَجَلّ বস্থটি  পেয়ে যাবেন।  ﴾২১﴿    প্রতিটি উঁচু  স্থানে   আরেনাহণের    সময়  اَلـلّٰـہُ    اَکْبَر  বলবেন; আর  নিচের  দিকে  নামার  সময়   বলবেন     سُبۡحٰنَ  الـلّٰـہ ﴾২২﴿   শোয়ার   সময়  একবার  আয়াতুল  কুরছি   সর্বদা   পড়ে   নিন।   যাতে    চোর  ও  শয়তান  থেকে  নিরাপত্তা পাওয়া যায়। ﴾২৩﴿ যখন কোন সাহায্যের প্রয়োজন হয় তখন   হাদিসে   পাকের   বর্ণনা    মতে    তিনবার   এভাবে ডাকবেন: یَا  عِبَادَاللہ  اَعِیۡنُوۡ  نِیۡ  (অর্থাৎ)   হে  আল্লাহর  বান্দাগণ,  আমাকে সাহায্য করুন। (হিসনে হাসীন, ৮২ পৃষ্ঠা)   ﴾২৪﴿  সফর  থেকে   ফিরার  সময়েও পূর্বে বর্ণিত সফরের আদব সমূহের যথাযথ খেয়াল রাখবেন। ﴾২৫﴿ লোকদের উচিৎ, হাজীদের অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করা এবং তার ঘরে পৌঁছার পূর্বে তাঁর দ্বারা দোআ করানো। কেননা,  হাজী  সাহেব  আপন   ঘরে   পা  না  রাখা   পর্যন্ত তার    দোআ    কবুল    হয়।    ﴾২৬﴿    নিজ    দেশে    পৌঁছে  সর্বপ্রথম নিজ মহল্লার মসজিদে (যদি মাকরুহ সময় না হয়)   দুই  রাকাত   নফল  নামাজ   আদায়  করে  নিবেন। ﴾২৭﴿  ঘরে পৌঁছেও দুই রাকাত (যদি মাকরুহ সময় না হয়)   আদায়   করে   নিবেন।   ﴾২৮﴿   অতঃপর   সকলের  সাথে    খুশি    মনে     সুন্নাত     নিয়মে     সাক্ষাৎ    করবেন।  (বিস্তারিত জানার জন্য বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৬ষ্ঠ অংশ,   ১০৫১-১০৬৬  পৃষ্ঠা।)    (ফতোওয়ায়ে   রযবীয়া, ১০ খন্ড, ৭২৬-৭৩১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অধ্যয়ন করুন।)

সফরে নামাযের ৬টি মাদানী ফুল
==================
﴾১﴿   শরীয়াতে   মুসাফির   ঐ   ব্যক্তিকে   বলে:   যে   তিন  দিনের দূরত্বের স্থানে যাওয়ার নিয়্যতে আপন আবাসিক স্থান যেমন; শহর  অথবা   গ্রাম থেকে  বের  হল, শুকনা ভূমিতে  সফরের ৩  দিনের  দূরত্ব বলতে ৫৭.৫   মাইল  (প্রায়   ৯২  কি:  মি:)  উদ্দেশ্য।  (ফতোওয়ায়ে   রযবীয়া, ৮ম  খন্ড,  ২৪৩,    ২৭০  পৃষ্ঠা।  বাহারে  শরীয়াত,  ১ম  খন্ড,  ৭৪০,    ৭৪১  পৃষ্ঠা)    ﴾২﴿  যেখানে   আপনি  সফর করে  পৌঁছেছেন   সেখানে   ১৫  দিন   কিংবা   তার  বেশী দিন   অবস্থান   করার   নিয়্যত   থাকে,   তখন   আপনাকে  মুসাফির বলা  যাবে  না বরং আপনি মুকীম  (নিজ ঘরে   স্থায়ী       বসবাসকারী     ব্যক্তির      ন্যায়)      হয়ে     গেলেন।  এমতাবস্থায়   আপনি   নামাজকে   কসর   পড়বেন     না। আর যদি  ১৫ দিনের কম সময়   অবস্থান করার  নিয়্যত হয়, তখনই আপনি নামায সমূহ কসর করে পড়বেন। অর্থাৎ জোহর, আসর ও এশার ফরজের রাকাত সমুহে চার   চার     এর   স্থানে    দুই   দুই   রাকাত   ফরজ   আদায় করবেন। ফজর ও মাগরিবে কসর নেই। অবশিষ্ট সকল সুন্নাত, বিতর  ইত্যাদি পরিপূর্ণ ভাবে  আদায়  করবেন। ﴾৩﴿  অসংখ্য   হাজী সাহেব  শাওয়ালুল মুকাররম অথবা জিলকাদাতুল   হারাম  মাসে  মক্কায়ে  মুকাররমা শরীফে পৌঁছে     থাকেন,   যেহেতু  হজ্বের  দিন  আসাতে   অনেক সময়  বাকী  থাকে।  সেহেতু   কিছুদিন  পর    তাঁদেরকে    আনুমানিক প্রায় ৯ দিনের  জন্য  মদীনায়ে মুনাওয়ারায় পাঠানো হয়ে থাকে। এই অবস্থায় তারা মদীনা শরীফে মুসাফিরই   থাকবে।  কিন্তু  এর  পূর্বে  মক্কা   শরীফে  ১৫  দিনের চেয়ে কম সময় থাকলে সেখানেও মুসাফির হয়ে থাকবেন।    হ্যাঁ,      মক্কা    অথবা   মদীনা   শরীফে   অর্থাৎ একটি শহরে  ১৫  অথবা   এর চেয়ে বেশী   দিন থাকার  বাস্তবেই যদি   সুযোগ  পাওয়া যায়, তবে  ইকামত তথা মুকীমের    নিয়্যত    করলে  বিশুদ্ধ   হবে।  ﴾৪﴿  যে  ব্যক্তি ইকামতের  নিয়্যত  করল  কিন্তু তার  অবস্থাই  বলে দেয় যে, সে ১৫ দিন অবস্থান করবে না, তবে নিয়্যত বিশুদ্ধ হবে না। যেমন; হজ্ব করতে গেলেন আর জুলহিজ্জাতুল হারাম  মাস  শুরু  হয়ে  যাওয়া  সত্ত্বেও  ১৫  দিন  মক্কায়ে  মুআয্‌যমায়  অবস্থান  করার   নিয়্যত  করল   তখন   তার  এমন নিয়্যত করাটা অনর্থক।

কেননা   সে যখন হজ্বের নিয়্যত  করছে তখন  (১৫ দিন তার     মিলবেই    না,    যেমন;     জিলহজ্জের    ৮    তারিখ) মীনায়,    (এবং     ৯     তারিখ)   আরাফাতে   অবশ্যই   সে  যাবে।     অতএব     এতদিন     পর্যন্ত     (অর্থাৎ       ১৫     দিন ধারাবাহিক    ভাবে)    মক্কা     শরীফে      কিভাবে     অবস্থান করতে   পারবে?   মীনা  শরীফ  থেকে   ফিরে  এসে  যদি ইকামতের   নিয়্যত   করে  তবে  বিশুদ্ধ     হত,    যখন  সে বাস্তবিকই   ১৫    অথবা    এর    বেশী   দিন   মক্কা   শরীফে অপেক্ষা   করতে   পারে!  যদি প্রবল  ধারণা   হয় যে, ১৫ দিনের মধ্যেই মদীনায়ে মুনাওয়ারা অথবা নিজ দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে তাহলে  এখনও তিনি মুসাফির থাকবেন।     ﴾৫﴿     আজকের     এই     লিখার     সময়     পূর্ব  হিসাবানুযায়ী জিদ্দা শরীফের জনবসতির   শেষ সীমানা থেকে   মক্কায়ে   মুকাররমায়    জন   বসতির    শুরু   সীমার মধ্যকার দূরত্ব স্থল পথে ৫৩ কি:মি:, আর আকাশ পথে ৪৭ কি:মি:।   আবার  জিদ্দা  শরীফের  জনবসতির শেষ  সীমানা   থেকে  আরাফাত   শরীফ  পর্যন্ত  একটি  সড়ক  পথের হিসাব মতে ৭৮ কি:মি:, আর অন্য ২টি  সড়ক পথের     হিসাবানুযায়ী     ৮০    কি:মি:     দূরত্বের     সফর।  যেখানে  বিমান   বন্দর থেকে আকাশ পথের   দূরত্ব ৬৭ কি:মি:। অতএব, জিদ্দা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ গেলে তখনও অথবা সরাসরি  আরাফাত শরীফ পৌঁছে  গেলে তখনও হাজ্বী সাহেব পূর্ণ (রাকাত) নামায পড়বে। ﴾৬﴿ বিমানে   ফরজ,   বিতির,    সুন্নাত   এবং    নফল    ইত্যাদি সকল  নামায  উড়ন্ত    অবস্থায়  আদায়  করতে  পারবে। পূনরায় আদায় করারও  প্রয়োজন নেই।  ফরজ, বিতির এবং ফজরের সুন্নাত ক্বিবলামুখী হয়ে নিয়ম মত আদায় করুন।  বিমানের  পিছনের  অংশে,  বাথরুম  ও  রান্নাঘর  ইত্যাদির     পাশে     দাঁড়িয়ে     দাঁড়িয়ে      নামায      পড়া সম্ভবপর হয়ে  থাকে। অবশিষ্ট সুন্নাত এবং  নফলগুলো উড়ন্ত    অবস্থায়    আপন   সিটে      বসে   বসেও    পড়তে পারেন। এ অবস্থায় ক্বিবলামুখী হওয়া শর্ত নয়। (আরো বিশতারিত   জানার   জন্য   মাকতাবাতুর   মদীনা   কর্তৃক প্রকাশিত  “নামাযের আহকাম”নামক  কিতাবে অন্তর্ভূক্ত “মুসাফিরের নামায” নামক রিসালা অধ্যয়ন করুন।)

রুকে হায়বত ছে জব মুজরিম তু রহমত   নে  কাহা বড় কর
চলে   আও  চলে  আও   ইয়ে   ঘর  রহমান    কা    ঘর  হে। (যওকে না’ত)

Top