তাওয়াফের মধ্যে ৭টি কাজ হারাম
তাওয়াফ যদিওবা নফল হয়, তাতে ৭টি কাজ হারাম:
===========
﴾১﴿ অজু ছাড়া তাওয়াফ করা। ﴾২﴿ একান্ত অপারগতা ব্যতীত পালকীতে আরোহন করে অথবা কোলে চড়ে অথবা কারো কাঁধে আরোহন করে ইত্যাদি নিয়মে তাওয়াফ করা। ﴾৩﴿ কোন অপারগতা ছাড়া বসে বসে সরে যাওয়া (পার্শ্বপরিবর্তন করা) অথবা হামাগুড়ি দিয়ে চলা।﴾ ৪﴿ কা’বাকে হাতের ডান দিকে রেখে উল্টা তাওয়াফ করা। ﴾৫﴿ তাওয়াফে ‘হাতিমের’ ভিতর দিয়ে চলা। ﴾৬﴿ সাত চক্করের কম তাওয়াফ করা। ﴾৭﴿ যে অঙ্গ সতরের অন্তর্ভূক্ত, উহার এক চতুর্থাংশ খোলা (অনাবৃত) রাখা। যেমন: রান (উরু), কান অথবা হাতের কবজি ও কুনুই এর মধ্যাংশ।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১১২ পৃষ্ঠা) ইসলামী বোনেরা এ ব্যাপারে খুব বেশী সতর্ক থাকুন যে, তাওয়াফের সময় বিশেষতঃ হাজরে আসওয়াদে ইসতিলাম দেওয়ার সময় অনেক ইসলামী বোনের হাতের কবজির এক চতুর্থাংশ তো নয় বরং অনেক সময় সম্পূর্ণ হাতের কব্জিই (কবজি থেকে কুনুই এর মধ্যাংশ) উম্মুক্ত হয়ে যায়। (তাওয়াফ ব্যতীত অন্যান্য সময়ও গাইরে মাহরামের সামনে মাথার চুল বা কান বা কব্জি খোলা (উন্মুক্ত করা) হারাম। পর্দার বিশতারিত বিধান জানার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩৯৭ পৃষ্ঠা সম্বলিত উর্দূ কিতাব “পর্দে কে বারে মে সাওয়াল জাওয়াব” খুব ভালো করে অধ্যয়ন করুন।
তাওয়াফের এগারটি মাকরূহ
============
﴾১﴿ অনর্থক কথাবার্তা বলা। ﴾২﴿ জিকির, দোআ বা তিলাওয়াত বা না’ত, মুনাজাত অথবা যে কোন শরয়ী কালাম (যেমন: শের-আশআর বা যে কোন ধরনের বৈধ কাথাবার্তা) ইত্যাদি উচ্চ আওয়াজে করা। ﴾৩﴿ হামদ ও সালাত (আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুলে পাকের উপর দরূদ ও সালাম) ব্যতীত অন্য কোন শের পড়া। ﴾৪﴿ অপবিত্র কাপড়ে তাওয়াফ করা। (সতর্কতা হচ্ছে, ব্যবহারের সেন্ডেল অথবা জুতা সাথে নিয়ে তাওয়াফ না করা।) ﴾৫﴿ রমল (চক্কর) অথবা ﴾৬﴿ ইজতিবা (ডান কাঁধ উন্মুক্ত রাখা) অথবা ﴾৭﴿ হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেয়া ইত্যাদি কাজের যেখানে যেখানে করার হুকুম রয়েছে তা না করা। ﴾৮﴿ তাওয়াফের চক্কর সমূহের মধ্যে বেশী ব্যবধান করা। (অর্থাৎ এক চক্কর ও অন্য চক্করের মাঝখানে বেশী সময়ের দূরত্ব সৃষ্টি করা) ইস্তিঞ্জার জন্য যেতে পারেন। অযু করে বাকী গুলো সম্পূর্ণ করে নিবেন। ﴾৯﴿ এক তাওয়াফ শেষ করার পর উহার দুই রাকাত নামায না পড়ে দ্বিতীয় তাওয়াফ শুরু করে দেয়া। তবে যদি মাকরূহ ওয়াক্ত চলে আসে, তাহলে অসুবিধা নেই। যেমন: সুবহে সাদিক হতে সূর্য উদয় পর্যন্ত, অথবা আসরের নামাযের পর হতে সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত এই সময়ে করা অনেক তাওয়াফ ‘তাওয়াফের নামায’ ব্যতীত জায়েজ হবে। তবে মাকরূহ সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রতি তাওয়াফের জন্য দুই দুই রাকাআত নামায আদায় করে দিতে হবে। ﴾১০﴿ তাওয়াফের সময় কোন কিছু খাওয়া। ﴾১১﴿ প্রস্রাব কিংবা বায়ু ইত্যাদি প্রচন্ড বেগ নিয়ে তাওয়াফ করা।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১১৩ পৃষ্ঠা। আল মাসলাকুল মুতাকাস্যিত লিল কারী, ১৬৫ পৃষ্ঠা)
তাওয়াফ এবং সাঈতে এ সাতটি কাজ জায়েজ
============
﴾১﴿ সালাম করা। ﴾২﴿ সালামের জবাব দেওয়া। ﴾৩﴿ প্রয়োজনের সময় কথা বলা। ﴾৪﴿ পানি পান করা। (সাঈর সময় খেতেও পারবেন) ﴾৫﴿ হামদ, না’ত অথবা মানকাবাতের (স্মৃতিচারণ মূলক জীবনী) পংক্তি সমূহ আসতে আসতে পড়া। ﴾৬﴿ তাওয়াফকালীন সময়ে নামাজীর সামনে দিয়ে পথ চলা জায়েজ। কারণ তাওয়াফও নামাযের মত। কিনত্মু সাঈর সময় নামাযীর সামনে দিয়ে যাওয়া জায়েজ নয়। ﴾৭﴿ ধর্মীয় মাসআলা জিজ্ঞাসা করা অথবা তার জবাব দেয়া।
(প্রাগুক্ত, ১১১৪ পৃষ্ঠা। আল মাসলাকুল মুতাকাস্যিত, ১৬২ পৃষ্ঠা)
সাঈর ১০টি মাকরূহ
============
﴾১﴿ প্রয়োজন ছাড়া সাঈর চক্করসমূহের মধ্যে বেশী ব্যবধান করা (অর্থাৎ এক চক্করের মাঝখানে লম্বা দূরত্ব সৃষ্টি করা)। হ্যাঁ! তবে হাজত সারার (প্রস্রাব পায়খানার প্রয়োজনে) জন্য যেতে পারে। অথবা অযু নবায়ণ করার জন্যও যেতে পারে। (সাঈতে অযু আবশ্যক নয় বরং মুশতাহাব) ﴾২﴿ কেনাকাটা করা। ﴾৩﴿ কোন কিছু বিক্রয় করা। ﴾৪﴿ অনর্থক কথাবার্তা বলা। ﴾৫﴿ অনর্থক এদিক সেদিক তাকানো, সাঈর মধ্যেও মাকরূহ এবং তাওয়াফের মধ্যে আরো অধিক মাকরূহ। ﴾৬﴿ সাফা অথবা ﴾৭﴿ মারওয়ায় আরোহণ না করা। (অল্প কিছু দূর উঠুন, একেবারে চূড়ায় নয়।) ﴾৮﴿ অপারগতা ব্যতীত কোন পুরুষ ‘মাসআর’ মধ্যে (সাঈর স্থলে) না দৌড়ানো। ﴾৯﴿ তাওয়াফের পর অনেক বিলম্বে সাঈ করা। ﴾১০﴿ লজ্জাস্থান (পরিপূর্ণ) না ঢাকা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১১৫ পৃষ্ঠা)
সাঈর চারটি পৃথক মাদানী ফুল
============
﴾১﴿ সাঈর মধ্যে পায়ে হাঁটা ওয়াজিব, যখন কোন অপারগতা না থাকে ঐ অবস্থায়। (কোন অপারগতা ছাড়া বাহনে চড়ে অথবা হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে সাঈ করলে ‘দম’ ওয়াজিব হবে) (লুবাবুল মানাসিক, ১৭৮ পৃষ্ঠা) ﴾২﴿ সাঈর জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। বরং হায়েজ ও নেফাস চলাকালীন সময়েও মহিলারা সাঈ করতে পারবে। (আলমগীরী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা) ﴾৩﴿ শরীর ও পোষাক পবিত্র হওয়া এবং ওযু অবস্থায় হওয়া মুশতাহাব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১১০ পৃষ্ঠা) ﴾৪﴿ সাঈ শুরু করার সময় প্রথমে ছাফার দোআ পড়বেন, অতঃপর সাঈর নিয়্যত করবেন। সাঈর অনেক কাজ রয়েছে। যেমন: হাজরে আসওয়াদের ইসতিলাম। ছাফা পর্বতে আরোহণ, দোআ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সকল কাজের শুরুতে ভাল ভাল নিয়্যত করে নিলে, খুব উত্তম হয়। কমপক্ষে অন্তরে এতটুকু নিয়্যত হওয়া যথেষ্ট যে, সাওয়াব অর্জনের জন্য মূল সাঈর পূর্বের কাজগুলো করছি।
ইসলামী বোনদের জন্য বিশেষ তাকিদ
============
ইসলামী বোনেরা এখানেও এবং প্রত্যেক জায়গায় পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক থাকবেন। অধিকাংশ মূর্খ মহিলারা হাজরে আসওয়াদ এবং রুকনে ইয়ামানীকে চুমা দেওয়ার জন্য অথবা আল্লাহর কা’বা শরীফের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য বিনা দ্বিধায় পুরুষদের (ভিড়ের) মধ্যে মিশে একাকার হয়ে যায়। তাওবা! তাওবা! ইহা খুব ঔদ্ধত্য পূর্ণ আচরণ এবং নির্লজ্জের কথা। ইসলামী বোনদের জন্য ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় যেমন দিনের ১০টা বাজে তাওয়াফ করা খুবই যথার্থও উপযুক্ত। কেননা ঐ সময় ভীড় খুব কম থাকে।
বৃষ্টি এবং মীজাবে রহমত
============
বৃষ্টির সময় হাতীম শরীফের মাঝে চারপাশে প্রচন্ড ভিড় হয়ে যায়। মীজাবে রহমত থেকে গড়িয়ে পড়া মোবারক পানি নেওয়ার জন্য হাজী সাহেবগণ পাগলের ন্যায় লাফিয়ে পড়ে। এই মুহুর্তে আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার বরং চাপা খেয়ে মৃত্যু বরণ করার পর্যন্ত ঝুঁকি থাকে। এমন স্থানে ইসলামী বোনদের দূরে থাকা জরুরী।
হে তাওয়াফে খানায়ে কা’বা সাআদাত মারহাবা!
খুব বারাসতা হে ইয়াহা পর আবরে রহমত মারহাবা!
صَلُّوْا عَلَی الۡحَبِیۡب! صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
হজ্বের ইহরাম বেঁধে নিন
============
যদি আপনি এখনও পর্যন্ত হজ্বের ইহরাম না বেঁধে থাকেন, তাহলে জুলহিজ্জা মাসের ৮ তারিখেও বাঁধাতে পারেন। কিন্তু ৭ তারিখে বেঁধে নিলেই সুবিধা হয়। কেননা ‘মুআলিস্নাম’ আপন আপন হাজীদেরকে ৭ তারিখ ইশার নামাযের পর থেকে মীনা শরীফ পৌঁছানো শুরু করে দেয়। মসজিদে হারমে মাকরুহ ওয়াক্ত ব্যতীত অন্য সময়ে ইহরামের দুই রাকাত নামায আদায় করে শব্দের অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে এভাবে হজ্জের নিয়্যত করুন:
اَللّٰھُمَّ اِنِّیْۤ اُرِیْدُ الْحَجَّ ط فَیَسِّرْہُ لِیْ وَتَقَبَّلْہُ مِنِّیْ ط وَاَعِنِّیْ عَلَیْہِ وَبَارِکْ لِیْ فِیْہِ ط نَوَیْتُ الْحَجَّ وَاَحْرَمْتُ بِہٖ لِلہِ تَعَالٰی ط
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি হজ্বের ইচ্ছা করেছি। অতঃপর উহা আমার জন্য সহজ করে দাও এবং উহা আমার পক্ষ থেকে কবুল কর এবং এতে আমাকে সাহায্য কর এবং ইহার মধ্যে আমার জন্য বরকত দান কর। আমি হজ্বের ইচ্ছা করেছি, আর ইহার ইহরামও বেঁধেছি আল্লাহর জন্য।
নিয়্যতের পরে ইসলামী ভাইয়েরা বড় আওয়াজে আর ইসলামী বোনেরা নিচু আওয়াজে তিনবার তিনবার “লাব্বাইক” পড়বেন। এখন আবার আপনার উপর ইহরামের নিয়ম অনুসারে বাধ্যবাধকতা শুরু হয়ে গেল।
একটি উপকারী পরামর্শ
============
যদি আপনি চান তাহলে, একটি ‘নফল তাওয়াফে’হজ্বের ইজতিবা, রমল এবং সাঈ সম্পন্ন করে ফেলতে পারেন। এতে ‘তাওয়াফে জিয়ারতে’আপনার আর রমল এবং সাঈ করার প্রয়োজন অবশিষ্ট থাকবেনা। কিন্তু এ কথাটি স্মরণ রাখবেন যে, ৭ ও ৮ তারিখে প্রচন্ড ভিড় হয়। এমনকি ১০ তারিখে ‘তাওয়াফে যিয়ারতে’ও মারান্তক ভিড় হয়। অবশ্য ১১ ও ১২ তারিখের ‘তাওয়াফে যিয়ারতে’ ভিড় ধীরে ধীরে হ্রাস পায়, আর সাঈ করার ক্ষেত্রেও খুব সহজতার সুযোগ থাকে।