ঊনচল্লিশতম অধ্যায়ঃ হোদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তিঃ
প্রসঙ্গঃ ওমরাহ, বাইয়াতে রিদওয়ান, ইলমে গায়েব প্রকাশ, হাউযে কাউছারের পানি প্রবাহ, উম্মতের মাগফিরাতের আয়াত নাযিল
========
মক্কার ৯ মাইল উত্তর-পশ্চিমে হোদায়বিয়ার অবস্থিত। এটি একটি কূপের নাম। পরবর্তীতে স্থানের নামও হোদায়বিয়া হিসেবেই পরিচিত লাভ করে। এইস্থানে নবী করিম [ﷺ] ও কোরাইশদের মধ্যে একটি সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল ৬ষ্ঠ হিজরীর যিলক্বদ মাসে। এই অসম চুক্তিটি ছিল নবী করিম [ﷺ] এবং মুসলমানদের জন্য রাজনৈতিক মহাবিজয় এবং মক্কা বিজয়ের প্রথম সোপান স্বরূপ
এই চুক্তির মাধ্যমে কোরাইশগণ মুসলমান ও ইসলামী রাষ্টকে একটি পক্ষ ও শক্তি বলে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং দশ বৎসরের জন্য স্বাধীনভাবে ধর্ম প্রচারের সুযোগ প্রদান করে। সুতারাং ইসলামের ইতিহাসে এই সন্ধিচুক্তিকে স্পষ্ট বিজয় বলে কোরআন মজিদে ঘোষণা করা হয়েছে।
৫ম হিজরী সনে খন্দকের যুদ্ধ শেষে নবী করিম [ﷺ] ভবিষৎবানী করেছিলেন-
“এ বৎসরের পর হতে কোরাইশগণ আর আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারবে না।” হুযুর [ﷺ]-এঁর ভবিষৎবানী এক বৎসরের মধ্যেই ফলে গেলো। তিনি স্বপ্নে দেখলেন-আপন সঙ্গীগনকে নিয়ে তিনি মক্কা মোয়াযযমায় প্রবেশ করেছেন এবং তাওয়াফ শেষে সায়ী করে কেউ মাথা মুন্ডন করছেন, কেউ চচুল ছাঁটছেন এবং নিরাপদেই তিনি ওমরা সমাধা করছেন। (সুঁরা আল-ফতহতে এর ইঙ্গিত)।
এই স্বপ্ন ছিল ভবিষ্যৎ বিজয়ের ইঙ্গিতবহ। এই স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনে মোহাজির সাহাবীগণ জম্মভুমি দর্শন এবং আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য উতলা হয়ে উঠলেন। ছয় বৎসর পূর্বে মাতৃভূমি ত্যাগ করে মদিনায় এসেও মুসলমানরা শান্তিতে থাকতে পারেননি। সুতরাং মাতৃভূমির মাটি তাঁদেরকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করেত লাগলো। নবী করিম [ﷺ] চৌদ্দশত সাহবী নিয়ে- (যাদের অধিকাংশই ছিলেন মোহাজির) মক্কার উদ্দেশ্যে ওমরা করার নিয়তে রওনা হলেন যিলক্বদ চাঁদের ১লা তারিখ সোমবার দিন। সাথে নিলেন কোরবানীর উট। তখনও হজ্ব ফরয হয়নি। তাই ওমরার এই ব্যবস্থা। সাথে নিলেন উম্মুল মোমেনিন হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنها)-কে। আত্মরক্ষামূলক খাপযুক্ত সাধারণ অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধের কোন অস্ত্রই সাথে ছিল না। কাজেই এই সফর ছিল শুধু ধর্মীয় সফর।
মদিনার সামান্য দূরে ‘যুল হোলায়ফা’ নামক স্থানে গিয়ে তিনি ওমরার এহরাম পরিধান করে তালবিয়া পড়ে- অর্থাৎ “লাব্বায়েক” বলে মক্কা মোয়যযমার পথে রওনা দিলেন। বনু খোযাআ গোত্রের একজনকে মক্কাবাসীদের প্রতিক্রিয়া জানার উদ্দেশ্যে আগে প্রেরণ করলেন। সে এসে সংবাদ দিল- কোরইশগন নবী করিম [ﷺ]-এঁর কাফেলাকে বাঁধা দিবে এবং প্রয়োজনে যুদ্ধ করবে। এই সংবাদ পেয়ে নবী করিম [ﷺ] সাহাবীদেরকে নিয়ে মক্কা শরীফের ৯ মাইল দূরে হোদায়বিয়া ময়দানে তাবু ফেললেন এবং হযরত উসমান (رضي الله عنه)-কে নিজেদের আগমনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার জন্য কুরাইশদের নিকট মক্কায় প্রেরণ করলেন। আবু সুফিয়ান হযরত ওসমানকে সাদরে গ্রহণ করলো।
“প্রথমে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করে পরে কথাবার্তা হবে”- আবু সুফিয়ান এই প্রস্তাব দিল। হযরত ওসমান (رضي الله عنه) বললেন- “আমার প্রিয় নবীর পূর্বে আমি আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে পারিনা। প্রিয় নবীর সম্মান আল্লাহর ঘরের সম্মানের চাইতেও অনেক বেশী।” একথা শুনে আবু সুফিয়ান ও অন্য নেতৃবর্গ তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো এবং হযরত ওসমানকে আটক করে রাখলো। হোদায়বিয়ায় মুসলমানদের তাঁবুতে গুজব-সংবাদ পৌছানো হলো যে, হযরত ওসমান (رضي الله عنه)-কে শহীদ করে ফেলা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা দেখা দিল- হযরত ওসমান হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য।
নবী করিম [ﷺ] এই অবস্থা দর্শনে সকলকে একটি ছামুরা (বাবলা) গাছের নীচে ডেকে আনলেন। তিনি শান্তভাবে তাঁদের মতামত জানতে চাইলেন সবাই এক বাক্যে কথিত ওসমান হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্প ঘোষণা করলেন। দৃত হত্যা সকর ধর্মে নিষিদ্ধি এবং তার পরিণতি মারত্মক। নবী করিম [ﷺ] সাহাবায়ে কেরামের এই সংকল্পকে (বায়াতে) রূপদান করলেন।
আল্লাহ-রাসুলের রেজামন্দি অর্জন ও যুদ্ধ করার লক্ষ্যে এই বাইআতে অনুষ্টিত হয়েছিল বলে এই বায়াতকে বায়াতে রিদুয়ান ও বায়াতে কিতাল বলা হয়। নবী করিম [ﷺ]-এঁর ডান হাত মোবারকের নিচে সকলের ডান হাত রেখে এই বায়াত বা অঙ্গীকার করেছিলেন বলে এটাকে “বায়াতে রাসুলও” বলা হয়। কোরআন মজিদে এই আয়াতে রিদুয়ান বা বায়াতে কিতালকে বাইয়াতে রাসুল বলা হয়েছে।
বাইআত শেখ সুন্নাতঃ
[বাইআত গ্রহণ করা সুন্নাত। তাই বাইআতে খিলাফত ও বাইআতে শেখ- উভয়টিই সুন্নাত। রাসূলে [ﷺ]-এঁর পরবর্তীকালে চার খলিফা মানুষের নিকট থেকে নিজেদের জন্য ঐ পদ্ধতিতেই “খেলাফত ও তরিকতের” বাইআত গ্রহণ করতেন। অর্থাৎ- জাগতিক ও আধ্যত্মিক- উভয় প্রকারের বাইআত খোলাফায়ে রাশেদীন গ্রহণ করতেন (বোখারী ও মুসলিম)- এটাই বাইআত শেখের দলীল। বাইআতে আবু বকর, বাইআতে ওমর, বাইআতে ওসমান, বাইআতে আলী, বাইআতে হাছান, ও বাইআতে হোসাইন এটার প্রকৃষ্টি প্রমাণ। তাঁদের নামে তাঁদের হাতে লোকেরা বাইআত করতো (বুখারী)। ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) -এঁর নামে কুফাবাসীরা ইমাম মুসলিমের হাতে বাইআত করেছিল। কাওলুল জামিল বর্ণিত বাইআত পদ্ধতি খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে এবং পরবর্তী যুগেও ছিলনা।
খেলাফতের যুগ শেষ হয়ে গেলে রাজতন্ত্রের যুগ শুরু হয়। তখন থেকেই জাগতিক ও আধ্যত্মিক জগতের যৌথ বাইআত প্রথা রহিত হয়ে যায়। জাগতিক বাইআত করা হতো কথিত খলিফার নামে- কিন্তু আধ্যাত্মিক বাইআত করা হতো ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ইমামগণের হাতে। এভাবে তখন থেকেই অদ্যাবধি বাইআত ছিয়াছাত এবং বাইআত শেখ পৃথক পৃথক ভাবে চলে আসছে।
তাফসীরে রুহুল বয়ান সুরা আল ফাতহ্- এর অনুযায়ী “বাইআতে শেখ” বাইআতে রাসুলেরই প্রতিনিধিত্বকারী এবং বাইআতে রাসুল মূলতঃ বাইআতুল্লাহরই প্রতিনিধিত্বকরী। এই কারণেই তরিকতের তিনটি স্তর ফানা পিশ শেখ, ফানা ফির রাসুল এবং ফানা বিল্লাহ- নির্ধিরিত হয়েছে। ফানা ফিস শেখ হলো ফানা ফির রাসুলের পূর্বশর্ত এবং ফানা ফির রাসুল হলো ফানা ফিল্লাহর পূর্বশর্ত। (ইরগামুল মুরিদীন)
প্রতিনিধিত্বকারী বাইআতের পরস্পরের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। ওয়াছেতা বা পীরের মাধ্যম ছাড়া সরাসরি বাইআত রাসুল হতে পারেনা। আল্লাহর কালাম “ওয়াবতাগো ইলাইহি ওয়াছিলাতা” এই আয়াতে ওয়াছিলার অর্থ আহলে সুন্নাতের মতে পীর ধরা বা পীরের হাতে বাইয়াত হওয়া। এই প্রভেদ না জানার কারনেই কোন কোন পীর বুযর্গদের মধ্যে বাইআতে শেখ ও বাইআতে রাসুল নিয়ে দ্ধন্ধ দেখা যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে উভয়ের মধ্যে কোন দ্ধন্ধ বা সংঘাত নেই। বাইআতে শেখই মূলতঃ বাইআতে রাসুল এবং বাইআতে রাসুলই মূলতঃ বাইআতুল্লাহ (রুহুল বয়ান)। তাফসীরে ছাভী-তে বলা হয়েছে- “বাইআত রিদওয়ান” আয়াতটির নুযুল, খাস হলেও হুকুমও আম। অর্থাৎ বাইআতে ইমাম উক্ত আয়াতের অর্ন্তভুক্ত। আরবী এবারত দেখুন-
هذه الآية وأن كان سبب نزولها بيعة الرضوان إلا أن العبرة بعموم اللفظ فيشتمل مبايعة الإمام على الطاعة والوفاء بالعهد ومبايعه الشيخ العارف على محبة الله ورسوله -
অর্থ- সুরা আলা ফাতহ ১০ নম্বর আয়াতে বাইআতে রিদওয়ান শব্দ উল্লেখ থাকলেও তার হুকুম আম বা ব্যাপক। অতএব বাইআতে ইমাম বা শাসক এবং বাইআতে শেখ উক্ত আয়াতের অর্ন্তভুক্ত। শাসক বা ইমামের নিকট বাইআত করার অর্থ তার আনুগত্য ও ওয়াদা পূর্ণ করার শপথ। আর বাইআতে শেখের অর্থ হলো, শেখে আরেফের নিকট আল্লাহ ও রাসুলের মহব্বৎ হাসেলের জন্য শপথ করা। (তাফসীরে ছাভী সুরা আল-ফাতহ, ১০আয়াত)
সুতরাং আয়াতের ব্যাপক অর্থ হবে এভাবে- “যারা রাসুলের হাতে বাইআত করে কিংবা পীর অথবা ন্যায়পরায়ণ শাসকের হাতে বাইআত করে- তারা মূলতঃ আল্লাহর হাতেই বাইআত করে - তাঁদের হাতের উপরেই আল্লাহর হাত রয়েছে।” (তাফসীরে ছাভী, সুরা আল-ফাতহ, ১০আয়াত মর্ম)
হযরত বায়েযীদ বোস্তামী (رحمة الله عليه) স্বীয় ভক্ত আবুল হাছান খারকানী (رحمة الله عليه) কে স্বপ্নে বলেছিলেন- “র্পথিবীর উপরে জীবিত পীরের কাছে তুমি মুরীদ হইও। কেননা, এটাই সুন্নাত”। (ইরগামুল মুরিদীন)
বাইআত রিদওয়ান গ্রহণঃ
হুযুর [ﷺ] সকল সাহাবীকে ছামুরা গাছের নীচে একত্রিত করে নিজের ডান হাত মোবারক সাহাবীগণের ডানহাতের উপরে স্থাপন করে জেহাদের বাইআত বা অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। তিনি আপন বাম হাত নিজ ডান হাতের নীচে স্থাপন করে বললে, “আমি ওসমানের পক্ষে এই বাইআত গ্রহণ করছি।”
একথা বলার সাথে সাথে সকলে বুঝে ফেললেন যে, হযরত ওসমান এখনও জীবিত আছেন। কেননা, মৃত লোকের পক্ষে কোন বাইআত হতে পারেনা। নবী করিম [ﷺ] একদিকে জেহাদের বাইআত বা অঙ্গীকার গ্রহণ করে নিলেন, অপরদিকে হযরত ওসমানের বেঁচে থাকারও গায়েবী সংবাদ দিয়ে দিলেন। প্রয়োজনের সময়ে নবী করিম [ﷺ] কাজের মাধ্যমে “ ইলমে গায়েব” প্রকাশ করেতন। এটা ছিল আল্লাহ্ প্রদত্ত এলাম। সুতরাং কোরআনের যে যে স্থানে আমভাবে বলা হায়েছে- “আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানেনা”- তার অর্থ হচ্ছে “নিজে নিজে ইলমে গায়েব কেউ জানেনা।” কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত এলমে গায়েব-এর নিষেধাজ্ঞামূলক কোন আয়াত বা হাদীস নেই- বরং আল্লাহ নিজে রাসুল [ﷺ] কে ইলমে গায়েব শিক্ষা দিয়েছেন বলে সুরা নিছার- ১৩৩ আয়াতে উল্লেখ আছে (জালালাঈন)। আয়াতটা হলো-
وعلمك ما لم تكن تعلم من الأحكام والغيب -
তাহকীকঃ (ইলমে গায়েব)
[ইলম শব্দটি বাবে ছামিয়া-ইয়াছমাউ হতে নির্গত হলে তার অর্থ হয় “নিজে নিজে জানা”, আর বাবে তাফঈল হতে নির্গত হলে তাঁর অর্থ হয়- “অন্য কর্তৃক অবগত করানো।” নবী করিম [ﷺ]-এর ক্ষেত্রে প্রথমটি নিষিদ্ধ, কিন্তু দ্বিতীয়টি প্রমাণিত। উভয়টিরই উল্ল্যেখ কোরআনে আছে। যেমন- প্রথমটি দলীল হলো “লা-ইয়ালামু মান্ ফিস সামাওয়াত ওয়াল আরদিল গায়বা ইল্লাল্লাহু”- অর্থাৎ “আসমান-যমীনের কেউই নিজে নিজে গায়েব জানেনা- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া।” অপরদিকে দ্বিতীয়টির দলীল হলো “ওয়া আল্লামাকা মা-লাম্ তাকুন তা’লাম” অর্থাৎ “ আপনি নিজে নিজে যা কিছু জানেতেন না” তা সবেই আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।” (সুরা নিসা-১১৩ আয়াত জালালাঈন ব্যাখ্যা করেছেন”- ইলমুল আহকাম ও ইলমুল গায়েব- অর্থাৎ “আল্লাহ নিজে আপনাকে ইলমুল আহকাম ও ইলমুল গায়েব শিক্ষা দিয়েছেন।”
সুতারাং ইলমে গায়েব দু-প্রকার মানতেই হবে। এক প্রকার হলো- নিজে নিজে জানা, আর এক প্রকার হলো- আল্লাহর মাধ্যমে জানা। প্রথমটিকে বলা হয় ইলমে গায়েব যাতি। এটা আল্লাহর জন্য খাস। আর দ্বিতীয়টিকে বলা হয় ইলমে গায়েব আতায়ী বা আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েব। এটা নবী রাসূল এবং তাদের মাধ্যমে ওলী আল্লাহগণের জন্য খাস। যাতি ইলমে গায়েব আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য মানা যেমন কূফরী ও শেরেকী কাজ - তদ্রুপ আতায়ী ইলমে গায়েবও আল্লাহর জন্য মানা নাজায়েয এবং হারাম। কেননা, আল্লাহ নিজ ইলম আতায়ী (প্রদত্ত) হতে পারেনা। এই প্রভেদটুকু না জানার কারনে এক শ্রেণীর ওয়াহাবী আলেম ঢালাও ভাবে সময়ে নবী করিম [ﷺ]-এর ইলমে গায়েব আতায়ীকে অস্বীকার করে বসে। এটা তাদের মুর্খতার পরিচায়ক। আল্লাহর নিজই বলেন- “হে হাবীব! আপনার প্রভূ আপনাকে অজানার গায়েবী এলেম নিজে শিক্ষা দিয়েছেন।” (জালালাঈন সুরা নিসা ১১৩ আয়াত) ওহাবী আলেমদের খপ্পরে পড়ে স্বঘোষিত নামধারী দারুস সালামে জাহেল পীর আবদুল কাহহার সাহেবও নবী করিম [ﷺ]-এঁর আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবকে অস্বীকার করে বিজ্ঞাপন ছেড়েছে ১৯৯৪ ইং সালে। এ অধম বাধ্য হয়ে তাঁর উক্ত বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে ১৯৯৫ সালের ১লা এপ্রিল তারিখে দৈনিক ইনকিলাবে চ্যালেঞ্জ করে বাহছের আহবান করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত উক্ত পীর সাহেবের কোন প্রতিক্রিয়া নজের পড়ছেনা। ইতিমধ্যে তিনি বাহাছের চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে কবরে চলে গেছেন। ]
চুক্তি সম্পাদনঃ
যাই হোক- মক্কার কোরাইশ এবং নবী করিম [ﷺ]-এঁর মধ্যে দূত বিনিময় হতে লাগলো এবং আলাপ-আলোচনা চলতে থাকলো। আমর নামের প্রথম দূত কোরাইশদেরকে গিয়ে বলেছিল— “আমি তাঁদের তাবুতে গিয়ে দেখলাম- নবীর সাহবীগণ কথিত ওসমান হত্যার প্রতিশোধ নিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। তারা জান দিতে প্রস্তুত। অপরদিকে তোমাদের জানের মায়া রয়েছে। নবীর সাহাবীগণ তাঁদের নবীর দিকে চোখ তুলে কথা বলেন না। যখন তিনি কথা বলেন- তখন তাঁর সাথীগণ মৃতদেহের ন্যায় নিস্তব্ধ হয়ে বসে থাকেন। তিনি যখন থুথূ ফেলেন বা নাসিকা পরিস্কার করেন, তার সাথীগন ঐসব জিনিষ পবিত্র ও তাবাররুক জ্ঞানে নিজেদের গায়ে-মুখে মালিশ করে নেন। তিনি ওযু করার সময় তাঁর ব্যবহৃত পানি সাহাবীগণ মাথায় ও মুখে-বুখে মালিশ করে নেন। আমি অনেক রাজা বাদশাহর দরবারে দৌত্যগীরি করেছি, কিন্তু এমন মর্যাদাবান কাউকে পাইনি। সুতরাং তাদের সাথে যুদ্ধ করলে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।”
আমরের মুখে একথা শুনে কোরাইশ নেতারা ঘাবড়িয়ে যায়। তারা হযরত ওসমানকে ছেড়ে দেয় এবং সন্ধিচুক্তির খসড়া তৈরীর জন্য সোহায়লকে প্রেরণ করে। সোহায়ল নবী করিম [ﷺ]-এঁর খেদমতে উপস্থিত হলে তিনি তার সাথে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কেননা, তার নামটি ছিল সোহায়ল বা সহজ।
অনেক আলোচনায় পর দশ দফা ভিত্তিক একটি চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করা হয়। দশ দফার ভিত্তিক খসড়া চুক্তির মধ্যে কয়েকটি দফা বা শর্ত মুসলমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক ছিল। যেমনঃ (১) এ বৎসর মুসলমানদেরকে ওমরা করতে দেয়া হবে না (২) আগামী বৎসর নবীজি ও মুসলমানদেকে তিন দিনের জন্য মক্কায় অবস্থান করে ওমরা করার সুযোগ দেয়া হবে। তবে সাথে উম্মুক্ত তরবারী রাখা যাবে না (৩) মক্কার কেউ মুসলমান হয়ে মদিনায় আশ্রয় নিলে তাকে ফেরত দিতে হবে। (৪) মদিনার কেউ মক্কায় আশ্রয় নিলে তাকে ফেরত দেয়া হবে না।
অপর পক্ষে কয়েকটি ধারা ছিল যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য। যেমনঃ (৫) আগামী দশ বৎসরের জন্য যুদ্ধ বিরতি বহাল থাকবে। (৬) মক্কা সংলগ্ন বনু বকর গোত্র কোরাইশদের আশ্রয়ে থাকবে এবং মদিনা সংলগ্ন বনু খোবাআ গোত্র নবী করিম [ﷺ]-এঁর আশ্রয়ে থাকবে। (৭) এই দুই গোত্রের যে কোন একটির উপর হামলা করা হলে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়ে যাবে (৮) চুক্তির মেয়াদকালে উভয় পক্ষের লোকজন মক্কা ও মদিনায় অবাধে যাতায়াত করেত পারবে। (৯) চুক্তির মেয়াদকালে যার যার ধর্ম পালন ও প্রচার করার স্বাধীনতা থাকবে।
শেষোক্ত ধারাগুলোর মধ্যে নবী করিম [ﷺ] আপন নবুয়তী জ্ঞান দ্বারা সুদূর প্রসারী বিজয় লক্ষ্য করে চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি দিলেন। চুক্তিনামা স্বাক্ষরের জন্য পেশকরা হলে নবী করিম [ﷺ]-এঁর নাম এভাবে লেখা হলো- “মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ [ﷺ]-এঁর পক্ষে”........। সোহায়ল একথায় আপত্তি জানিয়ে বললো- “রাসুলুল্লাহ” শব্দটি বাদ দিতে হবে এবং তদস্থলে “ইবনে আবদুল্লাহ” লিখতে হবে। হযরত ওমর রাগে গর্জে উঠলেন। এমন অপমানজনক শর্তে কিভাবে চুক্তি হতে পারে- ইয়া রাসুলাল্লাহ? নবী করিম [ﷺ] শান্তস্বরে বললেন,
আমিতো প্রকুতপক্ষে আল্লাহর রাসুল- এটা লিখা বা না লিখার মধ্যে এমন কিছু আসে যায়না। আমি যে ইবনে আবদুল্লাহ্, এটাও তো সত্য। হযরত আলীকে ‘রাসুলুল্লাহ’ শব্দটি মুছে ফেলতে তিনি নির্দেশ দিলেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) আদবের সাথে ঐ শব্দ মুছে ফেলতে অস্বীকৃতি জানালেন। একদিকে নির্দেশ পালন করা ওয়াজিব-অন্যদিকে আদব রক্ষা করা ফরয। নির্দেশ পালনের উপরে হলো আদবের স্থান।
তাই হযরত আলী (رضي الله عنه) অস্বীকৃতি জানিয়ে আদব রক্ষা করলেন (সোবহানাল্লাহ)। নবী করিম [ﷺ] আবদুল্লাহ শব্দটি নিজহাতে লিখে দিলেন। আল্লামা খরপুতি (رحمه الله عليه) কাছিদায়ে বুরদা শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
وفى حديث يروى عن معاوية أنه كان يكتب بين يديه عليه السلآم فقال له ألق الدواة وحرف القلم واقم الباء وفرق السين ولا تعور الميم مع أنه عليه السلآم لم يكتب ولم يقرأ
অর্থাৎ-“হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) হতে হাদীস বর্ণিত আছে যে, তিনি হুযুর [ﷺ]-এঁর সামনেই অহী লিখার কাজ করতেন। রাসুলে পাক [ﷺ] তাঁকে এভাবে নির্দেশ দিতেন- “দোয়াত এভাবে রাখ, কলমকে ঘোরাও, “ফা” হরফ সোজা করো, “ছীন” হরফটি পৃথক করে লিখ, মীম হরফকে বাকা করোনা”- অথচ তিনি [ﷺ] লিখার পদ্ধতি কোরআন নাযিলেন পূর্বে কোনদিন শিখেননি এবং পূর্ববর্তী কোন কিতাবও পাঠ করেননি” (খরপূতি-শরহে বুরদা)। বুঝা গেল- আল্লাহপাক কোরআন শিক্ষা দেয়ার সাথে সাথে কোরআন লিখন পদ্ধতিও শিক্ষা দিয়েছেন। তা না হলে তিনি নির্দেশ দিতেন কি করে?
এতে প্রমাণিত হলো- নবী করিম [ﷺ] প্রচলিত অর্থে নিরক্ষর ছিলেননা- বরং তিনি ছিলেন উম্মি বা সৃষ্টির মূল। তাফসীরে রুহুর বয়ানের গ্রন্থকার সুরা আরাফে ”উম্মি” শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন- “নবী করিম [ﷺ]-এঁর উম্মি হওয়ার অর্থ- তিনি সৃষ্টির মূল। অর্থাৎ উম্মুল খালায়েক। যেমন, উম্মুল কোরা মক্কা শরীফকে বলা হয় এবং উম্মুল কোরআন সুরা ফাতিহাকে বলা হয়- তদ্রুপ ”উম্মি” শব্দটির অর্থ সৃষ্টির মূল। এটা নবী করিম [ﷺ]-এঁর একক বৈশিষ্ট। অন্য নবী এই উপাধীতে ভূষিত ছিলেননা। দুনিয়ার কলম কাগজের সাহায্য নেয়ার কোন প্রয়োজনই হয়নি নবী করিম [ﷺ]-এঁর। কেননা, আল্লাহর কুদরতী কলম ছিল নবী করিম [ﷺ]-এঁর আজ্ঞাবহ খাদেম এবং লওহে-মাহফুয ছিল হুযুর [ﷺ]-এঁর কিতাব বা দৃষ্টিস্থল। (তাফসীরে রহুল বয়ান ৯ পারা)।
যুক্তিতেও বলে-তিনি নিরক্ষর হতে পারেন না। কেননা, তিনি সাহাবীদেরকে দিয়ে কোরআন লিখিয়েছেন এবং নিজে হরফ লেখার পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়েছেন। নিজে নিরক্ষর হলে কি বিশুদ্ধভাবে অহী লেখানো সম্ভব হতো? তবে তিনি ইচ্ছা করেই লিখতেন না। ( খরপুতি শরহে কাসিদায়ে বুরদ)।
পানির ফোয়ারাঃ
হোদায়বিয়ার ময়দানে নবী করিম [ﷺ] সাহাবাগণকে নিয়ে ১৯ দিন অবস্থান করেছিলেন। শুদ্ধ মরুভুমিতে এমনিতেই পানির অভাব। চৌদ্দশত সাহাবীর সাথে রক্ষিত পানি অল্প সময়ের মধ্যিই ফুরিয়ে যায়। সাহাবাগণ পানির অভাবের কথা এবং তীব্র পিপাসার কথা নবী করিম [ﷺ]-এর খেদমতে পেশ করলেন। হুযুর আকরম [ﷺ] এরশাদ করলেন- “কারও কাছে সামান্য কিছু পানি আছে কিনা”? সাহাবীগন আরয করলেন- ”আপনার লোটাতেই কেবল সামান্য পানি আছে”। হুযুর পুরনুর [ﷺ] লোটার উপরে পবিত্র ডান হাত স্থাপন করলেন। অমনি পাঁচ আঙ্গুলের চারটি ফাঁক দিয়ে ৪টি পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হলো। পানি উপরে পড়তে লাগলো। সাহাবাগণকে তিনি আহবান করলেন- যার প্রয়োজন মত পানি সংগ্রহ করার জন্য। চৌদ্দশত সাহাবী নিজেদের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করে নিলেন। তারপর নবী করিম [ﷺ] হাত মোবারক তুলে নিলেন। পানিপ্রবাহ সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেল। বর্ণানাকারী সাহাবী হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) উক্ত হাদীস বর্ণানাকালে তাঁকে প্রশ্ন করা হলো- “আপনারা ঐ সফরে কতজন সাথী ছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন- আল্লাহর শপথ! যদি আমরা একলক্ষ লোকও হতাম, তবুও ঐ পানি আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারতো। আমরা ছিলাম মাত্র চৌদ্দশত।” (সোবাহানাল্লাহ)।
ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান (رحمة الله عليه) উক্ত ঘটনাকে উর্দূ কবিতায় কত সুন্দর করে বর্ণানা করেছেনঃ
“নুরকে চশমে লেহরায়ে দরিয়া বহে
অংলিউ কি কারামত পে লাখো ছালাম
অর্থঃ ‘নুরের নহর নয়তো- যেন সাগর বহমান
অঙ্গলীরই কারামতে লাখো ছালাম।
উক্ত ঘটনায় কয়েকটি শিক্ষাণীয় বিষয়-
(১) পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে একটি আবাদী এলাকা বিরান হয়ে যায়। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ইঞ্জিনিয়ার, পাইপ টিউব সংগ্রহ করে এবং অনেক অর্থ ব্যয় করে পানির ব্যবস্থা করতে হয়। তাও আবার সময় সাপেক্ষে। কিন্তু আল্লাহর প্রিয় হাবীব [ﷺ] সামন্য পানির উপর দস্ত মোবারক রাখার সাথে সাথে পানির প্রস্রবন প্রবাহিত হয়। এই পানির উৎস কোথায়? বেহেস্তের চারটি নহর ছিল এর উৎস। হুযুরের হাত ছিল জমিনে- কিন্তু তার ক্রিয়া হয়েছিল জান্নাতে। এটা ছিল প্রাকৃতিক ক্ষমতার উর্দ্ধের শক্তি। এজন্যই নবী করিম [ﷺ] ছিলেন অতিমানব এবং মহামানব। নবী করিম [ﷺ] প্রয়োজনের সময় গায়েবী পানি দিতে পারেন। এটা ছিল সাহাবীগণের আক্বিদা। এই আকিদার পোষণের নামই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত।
(২) সামান্য পানিকে উছিলা করে পানির সাগর প্রবাহিত করার মধ্যে হেকমত হলো- “নাই” থেকে কিছু পয়দা করা আল্লাহর একক কুদরত। আর নবী করিম [ﷺ] সামান্য কোন জিনিসকে উপলক্ষ করে তাতে বৃদ্ধি ঘটাতেন। এটা ছিল আল্লাহর সাথে আদব রক্ষা করা।
(৩) প্রশ্নঃ পৃথিবীর কোন পানি সর্বোত্তম? এর জবাব হলো- সাধারণ পানির চেয়ে অযুর পানি উত্তম। অযুর পানির চেয়ে যমযমের পানি উত্তম। আর যমযমের পানির চেয়েও উত্তম হলো হুযুর [ﷺ]-এঁর দস্ত মোবারক হতে প্রবাহিত পানি (শামী)। তদ্রুপ দুনিয়ার যে মাটি নবী করিম [ﷺ]-এঁর দেহ মোবারকের সাথে সংলগ্ন অর্থাৎ রওযা মোবারকের পবিত্র মাটি- তা আসমান, জমিন, কা’বা, বাইতুল মামুর, এমনকি আরশ মোয়াল্লা হতেও উত্তম (শামী-যিয়ারত অধ্যায়)। নবীর সাথে সম্পর্কের কারণে যদি মাটির এই মর্তব্য হয়, তাহলে যে অন্তরে নবীর নূর ও জ্যোতি বিদ্যমান- সে অন্তরের মর্যাদা কি হতে পারে ? আল্লাহ সকলকে উপলব্দির শক্তি দান করুন।
মো’জেযা দু প্রকারঃ ইখতিয়ারী ও ইযতিরারীঃ
মোদ্দা কথা হলো- হোদায়বিয়ার একটি সফরেই অসংখ্য মো’জেযার প্রকাশ ঘটে। হুযুরের কোন কোন মো’জেযা ছিল ইখতিয়ারাধীন বা নিয়ন্ত্রনাধীন। এটাকে ইখতিয়ারী মো’জেযা বলা হয়। যেমন- অঙ্গুলী থেকে পানি বের করা, স্বল্প খাদ্যে বরকত দান, বৃক্ষের আগমন ও প্রত্যাবর্তন, পানির উপর পাথরের সন্তরণ- ইত্যাদি।
আর কিছু মো’জেযা ছিল ইযতিরারী বা এখতিয়ার বর্হিভূত। যেমন কোন কোন গায়েবের সংবাদ, কেয়ামতের তারিখ। এগুলো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (জা’আল হক-মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈম)। তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজে ব্যাপক ইলমে গায়েব শিক্ষা দিয়েছেন বলে ছুরা নিছার ১১৩ আয়াতের ব্যখ্যায় উল্লেখ আছে। ( জালালাঈন দেখুন)
বাতিলেরা প্রথম ধরণের মো’জেযাকে অস্বীকার করে। তারা বলে- নবীর ইচ্ছায় কিছুই হয় না। মো’জেযার মধ্যে নবীর কোন একতেয়ার নেই। নাউযুবিল্লাহ। (দেখুন বদরে আলম মিরাটি-এঁর তরজুমানুস সুন্নাহ- ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
সুস্পষ্ট বিজয়ঃ
হোদায়বিয়ার সন্ধিটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অসন্তোষজনক মনে হলেও সুক্ষ্ম কুটনৈতিক বিচারে এটি মুসলমানদের জন্য বিরাট স্পষ্ট বিজয় সুচনা করেছিল। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এই সন্ধিকে “ফাতহাম মুবিনা” বা সুদূর স্পষ্ট বিজয় বলে কোরআনে উল্লেখ করেছেন এবং মুসলমানগণকে শান্ত্বনা দিয়েছেন। সাথে সাথে এ ঘোষণাও দিয়েছেন যে, “নবী করিম [ﷺ]-এঁর উছিলায় তাদের পূর্বাপর গুনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।” (সুরা ফাতাহ, আয়াত-২)
মদিনার পথেঃ
নবী করিম [ﷺ] হোদায়বিয়ায় উট কোরবানী করে মাথা মুন্ডন ওমরার কাজ এখানেই সম্পন্ন করেন। সকলকে নিয়ে ১৯ দিন পর তিনি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। প্রত্যাবর্তনকালে পথিমধ্যে “কুরা গামীম” নামক স্থানে ১০ই মুহররম আশুরার দিনে সুরা ফাতাহ-এর প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়। হোদায়বিয়ার সন্ধির শর্তাবলীর অন্তর্নিহিত গুঢ় রহস্য অনুধাবন করতে সাহাবায়ে কেরামের কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল। রাসুলে পাকের নির্দেশ শিরোধার্য করে নিলেও তাঁদের মনে ছিল বাহ্যিক ব্যর্থতার গ্লানি। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁদের পূর্বাপর ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করার সুসংবাদবাহী শান্তনামূলক নিম্ন আয়াতটি নাযিল করলেন-
اِنَّا فَتَحۡنَا لَكَ فَتۡحًا مُّبِيۡنًاۙ لِّيَغۡفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنۡ ذَنۡۢبِكَ وَمَا تَاَخَّر -
অর্থঃ হে প্রিয় রাসুল! জেনে রাখুন- এটা পরাজয় নয়- বরং আমরা আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করছি। আপনার উছিলায়ই আপনার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের গোনাহসমূহ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেবেন।” (তাফসীরে কানযুল ঈমান ও রুহুল বয়ান)।
যারা বলে- “নবীজীর গুনাহ ক্ষমা করা হয়েছে” তারা অপব্যাখ্যাকারী ও পথভ্রষ্ট। কেননা, নবীগণ সবসময়ই বে-গুনাহ বা মাসুম। তাই আয়াতটির সরাসরি শাব্দিক অর্থ করা মারাত্নক ভুল। সেজন্য তাফসীর ভিত্তিক অর্থ করতে হবে। কোরআন মজিদের বাংলা অনুবাদে শাব্দিক অর্থ করা জায়েয নয়- বরং তাফসীর ভিত্তিক অনুবাদ করতে হবে। এই দৃষ্টিতে দেখতে গেলে একমাত্র আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরেলী (রহ)-এঁর উর্দূ অনুবাদ “কানযুল ঈমান” স্বার্থক অনুবাদ প্রমাণিত হয়েছে।