মুসাফিরের জন্য কি সুন্নাত সমূহ রহিত?

সুন্নাতের   মধ্যে    কসর    নেই    বরং   পূর্ণ   চার    রাকাতই আদায়   করতে হবে।   ভীতিকর অবস্থায় সুন্নাত ছেড়ে   দিতে   পারবে    আর   নিরাপদ    থাকলে   আদায়    করতে হবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩৯ পৃষ্ঠা)

চলন্ত     গাড়িতে   নফল     নামায   আদায়    করার   চারটি  মাদানী ফুল

(১)    শহরের    বাহিরে     (অর্থাৎ    শহরের    বাইরে     দ্বারা উদ্দেশ্য  যেখান  থেকে মুসাফিরের   উপর  নামায  কসর করা   ওয়াজীব)  সাওয়ারীর  উপর    (যেমন   চলন্ত  কার, বাস,   মালগাড়ী   ইত্যাদিতেও)    নফল    নামায    পড়া  যেতে     পারে।  তখন  কিবলামুখী  হওয়া  শর্ত  নয়    বরং সাওয়ারী    বা   গাড়ি    যেদিকে    যাচ্ছে    সেদিকেই   মুখ  করতে হবে।  সেদিকে  মুখ না করলে নামায  শুদ্ধ  হবে   না।   এমনকি    নামায   শুরু    করার   সময়ও    কিবলামুখী হওয়া  শর্ত নয় বরং সাওয়ারী বা গাড়ি যেদিকে যাচ্ছে সেদিকেই মুখ করতে হবে। এমতাবস্থায় রুকু ও সিজদা ইশারা  করে  আদায়  করতে   হবে  এবং   রুকুর   তুলনায় সিজদাতে অধিক পরিমাণ  ঝুঁকতে হবে  (অর্থাৎ-রুকুতে যতটুকু   পরিমাণ   ঝুঁকবে   সিজদাতে  তার    চেয়ে  বেশি  ঝুঁকতে   হবে।  (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল   মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৮৭ পৃষ্ঠা) চলন্ত ট্রেন ও এমন সব যানবাহন যেগুলোতে       স্থানের       সংকুলান        আছে       সেগুলোতে   কিবলামুখী    হয়ে   নিয়মানুযায়ী    নফল     নামায    আদায় করতে হবে।

(২)  গ্রামে  বসবাসকারী  লোক  যখন    গ্রাম  থেকে  বের হয়ে পড়বে তখন সাওয়ারী  বা গাড়িতে নফল নামায আদায় করতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার, ২য় খন্ড, ৪৮৬ পৃষ্ঠা)

(৩)    শহরের      বাইরে     সাওয়ারীর    উপর    নামায    শুরু করেছিল   এবং    নামায    পড়া   অবস্থায়   শহরে   প্রবেশ করলো। তাহলে ঘরে না পৌঁছা পর্যন্ত সাওয়ারীর উপর  নামায পূর্ণ করতে  পারবে। (দুররে  মুখতার,  ২য় খন্ড, ৪৮৭, ৪৮৮ পৃষ্ঠা)

(৪)   শরীয়াত  সম্মত  অসুবিধা  ব্যতীত  চলন্ত   গাড়িতে ফরয         নামায,      ফজরের      সুন্নাত,      সমস্ত       ওয়াজীব যেমন-বিতর  ও  মান্নতের নামায এবং  যে  সমস্ত  নফল নামায  শুরু  করার  পর পূর্ণ না  করেই ভঙ্গ করা হয়েছে   তা, তিলাওয়াতে সিজদা  যদি সিজদার আয়াত  জমিনে তিলাওয়াত  করা হয় আদায় করা যাবে   না। আর  যদি  শরীয়াত সম্মত অসুবিধা থাকে, তাহলে চলন্ত গাড়িতে তা  আদায়   করার  জন্য     শর্ত  হলো,    কিবলামূখী  হয়ে  দাঁড়িয়ে  তা  আদায়  করতে  হবে,   যদি  সম্ভবপর   হয়, অন্যথায়     যেভাবে     সম্ভব   সেভাবেই    আদায়   করবে। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৮৮ পৃষ্ঠা)

মুসাফির      তৃতীয়     রাকাতের      জন্য     দাঁড়িয়ে       গেলে তবে...

কসর বিশিষ্ট  নামাযে মুসাফির যদি তৃতীয়  রাকাত  শুরু করে দেয়, তখন এর দু’টি পদ্ধতি:

(১)  তাশাহহুদ    পরিমাণ   বসার   পর   তৃতীয়  রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে তৃতীয় রাকাতের সিজদা না করা  পর্যন্ত   সে   বসে  যাবে   এবং  সিজদায়ে  সাহু  দিয়ে সালাম     ফিরিয়ে   নামায   শেষ   করে   নেবে।   না      বসে দাঁড়ানো  অবস্থায় সালাম  ফিরিয়ে নিলেও তার  নামায হয়ে   যাবে,   তবে  সুন্নাতের  পরিপন্থি  হবে।   আর    যদি তৃতীয়    রাকাতের  সিজদা  করে  ফেলে,  তাহলে  আরো  এক রাকাত মিলিয়ে    সিজদায়ে   সাহু  দিয়ে  নামায পূর্ণ করে  নেবে, এমতাবস্থায় তার শেষ দুই   রাকাত  নামায নফল হিসাবে গণ্য হবে।

(২) দুই রাকাতের পর শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পরিমাণ না   বসেই  যদি   তৃতীয়  রাকাতের  জন্য  দাঁড়িয়ে  যায়, তাহলে    তৃতীয়    রাকাতের    সিজদা    না    করলে    ফিরে  আসবে   এবং   সিজদায়ে   সাহু   দিয়ে     সালাম    ফিরিয়ে  নামায   শেষ   করে   নেবে।  আর  যদি  তৃতীয়  রাকাতের সিজদা    করে  ফেলে,  তাহলে  তার    ফরয  বাতিল  হয়ে যাবে।   সে  আরো এক  রাকাত  মিলিয়ে সিজদায়ে সাহু  দিয়ে নামায  পূর্ণ করে নেবে তখন  চার রাকাতই নফল নামায   হিসাবে   গণ্য   হবে।   (পরে   দুই   রাকাত   ফরয  নামায    তাকে    অবশ্যই    আদায়    করে     দিতে     হবে।) (দুররে মুখতার সম্বলিত রদ্দুল  মুহতার,  ২য় খন্ড,   ৫৫  পৃষ্ঠা)

সফরে কাযা নামায

মুকীম  অবস্থায় কাযাকৃত নামায সফরে    আদায় করলে পূর্ণ নামাযই আদায় হবে আর সফরে কাযাকৃত   নামায মুকীম অবস্থায় আদায় করলে কসরই পড়তে হবে।

চাশতের নামাযের সময়

এর সময়, সূর্য  উপরে উঠার  পর  থেকে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত। তবে  উত্তম হলো দিনের   এক  চতুর্থাংশে  আদায়   করে নেওয়া।     (বাহারে     শরীয়াত,     ৪র্থ    খন্ড,     ২৫    পৃষ্ঠা) ইশরাকের নামাযের পরও ইচ্ছা করলে চাশতের নামায আদায় করা যায়।

صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب!                            صَلَّی اللهُ   تَعَالٰی  عَلٰی مُحَمَّد

হিফয ভুলে যাওয়ার শাস্তি

নিঃসন্দেহে      কুরআনুল      কারীম      হিফয      করা      বড়  সাওয়াবের কাজ। কিন্তু স্মরণ রাখবেন!  কুরআন শরীফ হিফয করা সহজ, তবে সারা জীবন তা মনে রাখা খুবই কঠিন।   হাফিয সাহেব    ও হাফিযা সাহেবাগণের উচিত যে,    দৈনিক কমপক্ষে  এক  পারা অবশ্যই  তিলাওয়াত করে    নেয়া।    যে    সমস্ত    হাফিয    সাহেবগণ    রমযানুল  মুবারক   আসার  কিছুদিন  পূর্বে   শুধুমাত্র  মুসল্লীদেরকে  শুনানোর     উদ্দেশ্যে     কুরআন     তিলাওয়াত    দ্বারা     ঘর সরগরম  করে  তোলে,   এছাড়া   আল্লাহ্র  পানাহ!   সারা বছর অলসতার কারণে তারা কুরআনের অনেক আয়াত ভুলে   যায়,   তাদের    উচিত    নিয়মিত     কুরআন   শরীফ তিলাওয়াত   করা   এবং   আল্লাহ্   তাআলার   ভয়ে   ভীত  হওয়া।  যে  ব্যক্তি   কুরআন   শরীফের   একটি  আয়াতও ভুলে  গিয়েছে  সে  তা   পুনরায়  মুখস্থ    করে  নেবে  এবং কুরআনের আয়াত ভুলে যাওয়ার কারণে তার যে গুনাহ হয়েছে তা থেকে সত্যিকার তাওবা করে নেবে।

(১)  যে  ব্যক্তি  কুরআন  শরীফের    কোন  আয়াত   মুখস্থ করার পর তা আবার ভুলে যায়, কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ   অবস্থায়  উঠানো   হবে।    (পারা-১৬,   সূরা-   ত্বাহা, আয়াত-১২৫, ১২৬)

ফরমানে মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم

(২) আমার উম্মতের সাওয়াব আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল, আমি  এতে ঐ  ক্ষুদ্র   খড়কুটাও দেখতে পেয়েছিলাম, যা লোকেরা মসজিদ হতে বাইরে নিক্ষেপ করেছিল   এবং    আমার  উম্মতের   গুনাহসমূহও  আমার সামনে   উপস্থাপন  করা   হয়েছিল,   এতে   আমি  আমার উম্মতের কোন লোক কুরআন  শরীফের একটি সূরা  বা আয়াত মুখস্থ করার  পর তা ভুলে যাওয়ার কারণে তার যে    গুনাহ     হয়েছিল    তার   চাইতে   কোন     বড়   গুনাহ দেখতে পাইনি। (জামে তিরমিযী, হাদীস- ২৯১৬)

(৩)    যে   ব্যক্তি    কুরআন  শরীফ   মুখস্থ  করার  পর    তা আবার ভুলে যায়, কিয়ামতে দিন  সে আল্লাহ্ তাআলার সাথে   কুষ্ঠ    রোগী  হয়ে  সাক্ষাৎ   করবে।    (আবু  দাউদ  শরীফ, হাদীস-১৪৭৪)

(৪) কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে যে গুনাহের জন্য পরিপূর্ণ    শাস্তি    দেয়া    হবে    তা    হচ্ছে,    তাদের    কেউ  কুরআন   শরীফের   কোন     সূরা    মুখস্থ     করার   পর   তা আবার ভুলে গেলো। (কানযুল উম্মাল, হাদীস- ২৮৪৬)

(৫)    আ’লা    হযরত,    ইমামে     আহলে    সুন্নাত,    ইমাম  আহমদ  রযা  খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی  عَلَیْہِ ِ  বর্ণনা করেন: “সে   ব্যক্তি   হতে   মূর্খ   আর  কে   আছে?   যাকে  আল্লাহ্ তাআলা    এমন   শক্তি    (অর্থাৎ    কুরআন   শরীফ   মুখস্থ  করার      শক্তি)    দান   করেছেন,   আর   সে     তা    নিজেই হাতছাড়া করে দিয়েছে। যদি সে কুরআন শরীফ মুখস্থ করার   গুরুত্ব   অনুধাবন   করতে   পারত   এবং   কুরআন  শরীফ মুখস্থ করাতে  যে  সাওয়াব ও মর্যাদা  রয়েছে তা অবগত হতে  পারত,   তাহলে সে  কুরআন শরীফ মুখস্থ করাকে    নিজের    প্রাণের    চাইতেও    বেশি    প্রিয়     মনে  করতো।”

তিনি   আরো   বলেন:   “যতটুকু   সম্ভব   কুরআন    শরীফ  শিক্ষাদান, মুখস্থ করানো এবং নিজে মুখস্থ রাখার চেষ্টা করবে।  যাতে এর   জন্য আল্লাহ্  প্রদত্ত   যে  সাওয়াবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা লাভ করার সৌভাগ্য  অর্জিত হয় এবং    কিয়ামতের  দিন   অন্ধ   ও  কুষ্ঠ  রোগী    হয়ে  উঠা  থেকে    মুক্তি    পাওয়া    যায়।”    (ফতোওয়ায়ে    রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৬৪৫, ৬৪৭ পৃষ্ঠা)

Top