অযুর ফরয ৪টি
=========
❁ মুখমন্ডল ধৌত করা। ❁ কনুই সহ দু’হাত ধৌত করা। ❁ মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ্ করা। ❁ টাখ্নু সহ দুই পা ধৌত করা। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৩, ৪, ৫ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা)
ধৌত করার সংজ্ঞা
কোন অঙ্গকে ধৌত করার অর্থ হচ্ছে, ঐ অঙ্গের প্রতিটি অংশে কমপক্ষে দু ফোঁটা পানি প্রবাহিত করা। শুধুমাত্র ভিজে যাওয়া, পানিকে তেলের মত মালিশ করা অথবা এক ফোঁটা পানি প্রবাহিত করাকে “ধৌত করা” বলা যাবে না, আর না এইভাবে অযু গোসল আদায় হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ২১৮ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা)
অযুর ১৪টি সুন্নাত
হানাফী মাযহাব মতে অযুর পদ্ধতিতে অযুর কিছু সুন্নাত ও মুস্তাহাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে। এখন তার বিস্তারিত আলোচনা লক্ষ্য করুন: ❁ নিয়্যত করা ❁ بِسْمِ الله পড়া। যদি অযুর পূর্বে কেউ بِسْمِ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰه বলে, তাহলে যতক্ষণ অযু সহকারে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেস্তাগণ তাঁর জন্য নেকী লিখতে থাকবে। ❁ উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া ❁ তিনবার মিসওয়াক করা ❁ তিন অঞ্জলি পানি দিয়ে তিনবার কুলি করা, ❁রোযাদার না হলে গড়-গড়া করা ❁ তিন অঞ্জলী পানি দিয়ে তিনবার নাকে পানি দেয়া। ❁ দাঁড়ি থাকলে (ইহরামে না থাকাবস্থায়) দাঁড়ি খিলাল করা। ❁ হাত ও ❁ পায়ের আঙ্গুল সমূহ খিলাল করা। ❁ সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসেহ করা। ❁ কান মাসেহ্ করা ❁ অযুর ফরযগুলোতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। (অর্থাৎ প্রথমে মুখ তারপর কনুই সহ হাত ধোয়া, তারপর মাথা মাসেহ্ করা তারপর পা ধোয়া) আর ❁ একটি অঙ্গ শুকানোর আগে অন্য অঙ্গ ধৌত করা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৯৪ পৃষ্ঠা)
অযুর ২৯টি মুস্তাহাব
❁ কিবলামুখী হওয়া, ❁ উঁচু জায়গায়, ❁ বসা, ❁ পানি প্রবাহিত করার সময় অঙ্গসমূহের উপর হাত বুলানো, ❁ শান্তভাবে অযু করা, ❁অযুর অঙ্গ সমূহ প্রথমে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নেয়া, বিশেষ করে শীতের সময়ে, ❁ অযু করার সময় প্রয়োজন ছাড়া কারো সাহায্য না নেয়া, ❁ ডান হাতে কুলি করা, ❁ ডান হাতে নাকে পানি দেয়া, ❁ বাম হাত দ্বারা নাক পরিস্কার করা, ❁ বামহাতের কনিষ্টাঙ্গুলী নাকে প্রবেশ করানো। ❁আঙ্গুল সমূহের পিঠ দ্বারা ঘাঁড় মাসেহ্ করা, ❁ কান মাসেহ্ করার সময় হাতের ভিজা কনিষ্ঠাঙ্গুলী কানের ছিদ্রে প্রবেশ করানো, ❁আংটি নাড়া দেওয়া, যখন আংটি ঢিলা হয় এবং আংটির নিচে পানি পৌঁছেছে বলে প্রবল ধারণা হয়, আর যদি আংটি আঙ্গুলের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে তাহলে আংটি নেড়ে এর নিচে পানি পৌঁছানো ফরয। ❁ শরয়ী মাযুর (অক্ষম ব্যক্তি) না হলে নামাযের সময় শুরু হওয়ার পূর্বেই অযু করা। (শরয়ী মাযুরের বিস্তারিত বিধান এই রিসালা থেকে দেখে নিন) ❁ যারা পরিপূর্ণভাবে অযু করে অর্থাৎ যাদের কোন অঙ্গই পানি প্রবাহিত না হয়ে থাকে না তাদের জন্য নাকের দিকস্থ চোখের উভয় কোণা, টাখনু, গোড়ালি, পায়ের তালু, গোড়ালীর উপরের মোটা রগ, আঙ্গুল সমূহের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা, কনুই ইত্যাদি অঙ্গ সমূহের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা মুস্তাহাব, যাতে উক্ত অঙ্গ সমূহ শুষ্ক থেকে না যায়। আর যারা খামখেয়ালী তাদের জন্য অযুর সময় উক্ত জায়গাগুলোর প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ফরয। কেননা, অধিকাংশের ক্ষেত্রে উক্ত জায়গাগুলো ধৌত করার পরও শুষ্ক থেকে যেতে দেখা গিয়েছে। আর এটা খামখেয়ালিপনারই কারণে হয়ে থাকে। এরূপ খামখেয়ালিপনা হারাম এবং বিশেষভাবে খেয়াল রাখা ফরয যাতে কোন অঙ্গ শুষ্ক থেকে না যায়। ❁অযুর লোটা (বদনা) বাম দিকে রাখুন। যদি বড় গামলা বা পাতিল ইত্যাদি থেকে অযু করে, তাহলে ডান পাশে রাখুন।❁মুখমন্ডল ধোয়ার সময় কপালের উপর এমনভাবে পানি দেয়া যেন কপালের উপরের কিছু অংশও ধুয়ে যায়।❁ মুখমন্ডল, ❁হাত ও পায়ের উজ্জলতা বৃদ্ধি করা অর্থাৎ যতটুকু জায়গা ধৌত করা ফরয তার চতুর্দিকের কিছু কিছু অংশ বাড়িয়ে ধৌত করা। যেমন- হাত ধোয়ার সময় কনুইর উপর বাহুর অর্ধেক পর্যন্ত ও পা ধোয়ার সময় টাখনুর উপর গোছার অর্ধেক পর্যন্ত ধৌত করা। ❁দুই হাতে মুখমন্ডল ধৌত করা। ❁হাত ও পা ধোয়ার সময় আঙ্গুল সমূহ থেকে ধোয়া শুরু করা। ❁প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার পর হাত বুলিয়ে অঙ্গ থেকে পানির ফোঁটাগুলো ফেলে দেয়া, যেন শরীর অথবা কাপড়ের উপর ফোঁটা ফোঁটা না ঝরে। বিশেষত: মসজিদে যাওয়ার সময়। কেননা, মসজিদের ফ্লোরে অযুর পানির ফোঁটা ফেলা মাকরূহে তাহরীমী।❁ প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় ও মাথা মাসেহ করার সময় অযুর নিয়্যত কার্যকর রাখা। ❁অযুর শুরুতে بِسْمِ الله পাঠ করার সাথে সাথে দরূদ শরীফ ও কলেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা। ❁ বিনা প্রয়োজনে অযুর অঙ্গ সমূহ না মোছা, যদি নিতান্তই মুছতে হয় তাহলে সম্পূর্ণ না শুকিয়ে সামান্য আদ্র (ভিজা) অবস্থায় রেখে দেয়া। কেননা, কিয়ামতের দিন নেকীর পাল্লায় রাখা হবে। ❁ অযুর পর হাত না ঝাড়া, কারণ এটা শয়তানের জন্য পাখায় পরিণত হয়, ❁পানি ছিটানোর সময় পায়জামার উক্ত অংশকে জামার প্রান্ত বা আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত। অযুর সময় এমন কি সবসময় পায়জামার উক্ত অংশ জামার আচল বা চাদর ইত্যাদি দ্বারা ঢেকে রাখা উত্তম। যাতে ভেসে উঠা সতর দেখা না যায়। ❁ যদি মাকরূহ সময় না হয় তাহলে অযুর পর দু’রাকাত নফল নামায আদায় করা, যাকে তাহিয়্যাতুল অযু বলা হয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ২৯৩-৩০০ পৃষ্ঠা)
অযুর ১৬টি মাকরূহ
❁ অযুর জন্য নাপাক জায়গায় বসা ❁নাপাক জায়গায় অযুর পানি ফেলা ❁অযুর অঙ্গ সমূহ থেকে লোটা (বদনা) ইত্যাদিতে ফোঁটা ফোঁটা পানি ফেলা, (মুখ ধোয়ার সময় পানিপূর্ণ অঞ্জলীতে সাধারণত মুখমন্ডল হতে পানির ফোটা পড়ে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা একান্ত প্রয়োজন) ❁কিবলার দিকে থুথু, কফ, কুলির পানি ইত্যাদি নিক্ষেপ করা❁প্রয়োজন ছাড়া দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা, ❁ অতিরিক্ত পানি খরচ করা (আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আযমীرَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ “বাহারে শরীয়াত (সংগৃহীত) ”১ম খন্ডের ৩০২-৩০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন: নাকে পানি দেয়ার সময় আধা অঞ্জলী থেকে বেশি পানি ব্যবহার করা অপচয়) ❁এত কম পানি ব্যবহার করা যাতে সুন্নাত আদায় হয় না। অতএব পানির নল এত বেশি খোলাও উচিত নয় যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পড়ে, আবার এত সামান্য পরিমাণ খোলাও উচিত নয় যাতে সুন্নাত আদায় না হয় বরং মধ্যম ভাবেই পানির নল খোলা উচিত। ❁মুখে পানি মারা ❁ মুখে পানি দেয়ার সময় ফুঁক দেয়া ❁এক হাতে মুখ ধোঁয়া কারণ এটা রাফেজী ও হিন্দুদের রীতি, ❁গলা মাসেহ্ করা। ❁ বাম হাতে কুলী অথবা নাকে পানি দেয়া। ❁ডান হাতে নাক পরিষ্কার করা ❁তিনবার নতুন পানি দিয়ে তিনবার মাথা মাসেহ্ করা, ❁ রোদের তাপে গরম করা পানি দিয়ে অযু করা, ❁ মুখ ধোয়ার সময় উভয় ঠোঁট ও উভয় চক্ষু দৃঢ়ভাবে বন্ধ রাখা। যদি ঠোঁট ও চোখের কিছু অংশও শুষ্ক থেকে যায় তাহলে অযুই হবে না। অযুর প্রতিটি সুন্নাত বর্জন করা মাকরূহ আর প্রতিটি মাকরূহ বর্জন করা সুন্নাত। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩০০-৩০১ পৃষ্ঠা)
রোদের তাপে গরম পানির ব্যাখ্যা
=================
সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরীকা, হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ এর লিখিত মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত (সংগৃহীত) ”১ম খন্ডের ৩০১ পৃষ্ঠার পাদটীকায় লিখেন: যে পানি রোদের তাপে গরম হয়ে গেলো, সেটা দ্বারা অযু করা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহ নয় বরং এতে কিছু শর্ত রয়েছে, যার আলোচনা পানির অধ্যায়ে আসবে এবং এর দ্বারা অযু করা মাকরূহে তানযীহি, তাহরিমী নয়। পানির অধ্যায় ৩৩৪ পৃষ্ঠায় লিখেন: যে পানি উষ্ণ দেশে গরম ঋতুতে স্বর্ণ রূপা ছাড়া অন্য কোন ধাতুর প্লেটের মধ্যে রোদে গরম হয়ে গলো। তখন যতক্ষণ পর্যন্ত গরম থাকে এর দ্বারা অযু ও গোসল না করা উচিত এবং পান না করা উচিত। বরং শরীরের মধ্যে যাতে না পৌঁছে, যদিও কাপড় ভিজে যায়। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত ঠান্ডা না হয় সেটা পরিধান করা থেকে বেঁচে থাকবে। এই পানি ব্যবহারের দ্বারা শরীরে সাদা দাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার পরও যদি কেউ অযু গোসল করে নেয়, হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩০১, ৩৩৪ পৃষ্ঠা)
ব্যবহৃত পানির গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
===================
যদি অযুহীন ব্যক্তির হাত, আঙ্গুলের মাথা, নখ অথবা শরীরের এমন কোন অংশ যা অযুতে ধৌত করা হয়, জেনে শুনে অথবা ভূলবশত ১০০ বর্গগজ কম পানিতে (যেমন-পানি ভর্তি বালতি অথবা লোটা (বদনা) ইত্যাদিতে) পড়ে, তাহলে এটা ব্যবহৃত পানি হয়ে গেলো। ঐ পানি দ্বারা অযু ও গোসল করা যাবে না। অনুরূপ যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তার শরীরের কোন ধৌতহীন অঙ্গ যদি পানিতে স্পর্শ করে ঐ পানিও অযু-গোসলের জন্য উপযুক্ত নয়। হ্যাঁ! ধৌত করা কোন হাত বা অঙ্গ যদি পড়ে তাহলে কোন ক্ষতি নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা) (ব্যবহৃত পানি ও অযু-গোসলের বিস্তারিত আহকাম শিখার জন্য “বাহারে শরীয়াত” ২য় খন্ড অধ্যয়ন করুন)
মাটি মিশ্রিত পানি দ্বারা অযু হবে কিনা?
==================
❁ পানির মধ্যে যদি বালি কাদা মিশ্রিত হয়ে যায়, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত মসৃণ থাকে এর দ্বারা অযু জায়েয। আমি বলি (আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন: “আমি বলছি”) কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া কাদা মিশ্রিত পানি দ্বারা অযু করা নিষেধ যেহেতু আকৃতি বিকৃত অর্থাৎ আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়াটা শরয়ীভাবে হারাম। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ৪র্থ খন্ড, ৬৫০ পৃষ্ঠা) জানা গেলো; মুখে এই ধরণের মাটি মিশ্রিত করা যার দ্বারা আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায় বা মুখ কালো করা। যেমনিভাবে অনেক সময় চোর কয়লা ইত্যাদি দিয়ে মুখ কালো করে দেয়। এটা হারাম ইচ্ছাকৃত ভাবে কাফেরের ও বিকৃত করা অর্থাৎ চেহারা পরিবর্তন করা জায়েয নেই। ❁ যেই পানিতে কোন দূর্গন্ধ যুক্ত জিনিস পাওয়া যায় এর দ্বারা অযু করা মাকরূহ। বিশেষ করে এর দূর্গন্ধ নামাযের মধ্যেও বিদ্যমান থাকে এর দ্বারা নামায মাকরূহে তাহরিমী হবে। (প্রাগুক্ত, ৬৫০ পৃষ্ঠা)
পান ভক্ষনকারী মনোযোগ দিন
আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, অলীয়ে নেয়ামত, আজীমুল বারাকাত, আজীমুল মারতাবাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালত, হামীয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদ‘আত, ‘আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, বা-ইছে খাইরু বারাকাত, হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ্ব হাফেজ ক্বারী শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁনرَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন: যারা পান ভক্ষণে বেশি পরিমাণে অভ্যস্থ এবং যাদের দাঁতগুলো বিশেষত ফাঁকা, অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, সুপারীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা এবং পানের ছোট ছোট টুকরা তাদের মুখের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় বিশেষত দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে এমনভাবে স্থান দখল করে নেয় যে, সেগুলো তিনবার নয় বরং দশবার কুলি করেও পরিপূর্ণভাবে পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। খিলাল বা মিসওয়াক কোন কিছুর দ্বারাই এগুলোকে বের করে আনা যায় না। একমাত্র মুখের ভিতর পানি নিয়ে তা ভালভাবে নাড়া-চাড়া করেই মুখের বিভিন্ন অংশ ও দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আটকে থাকা পান ও সুপারীর সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো আস্তে আস্তে বের করে আনা সম্ভব হয়। তাই এ ক্ষেত্রে কুলি করার নির্ধারিত কোন সংখ্যা হতে পারে না এবং এই পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কঠোর তাকিদ দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য হাদীসে বর্ণিত আছে: “যখন মানুষ নামাযে দন্ডায়মান হয়, তখন ফিরিশতা তার মুখ ঐ নামাযীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয় এবং মানুষ নামাযের মধ্যে যা কিছু পড়ে তা তার মুখ থেকে বের হয়ে ফিরিশতার মুখে প্রবেশ করে।” তাই নামাযরত অবস্থায় মানুষের দাঁতের ফাঁকে কোন খাদ্যকণা থাকলে তাতে ফিরিশতার এমন কষ্ট হয় যেরূপ কষ্ট অন্য কিছু দ্বারা হয় না।
রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, শাহে বনী আদম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “যখন তোমাদের কেউ রাতের বেলায় নামাযের জন্য দাঁড়ায়, তখন উচিত হচ্ছে; নামাযের পূর্বে মিসওয়াক করে নেওয়া। কেননা, সে যখন নামাযে কিরাত পাঠ করে, তখন ফিরিশতা তার মুখ ঐ নামাযীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয় এবং নামাযরত অবস্থায় যা কিছু ঐ নামাযীর মুখ থেকে নির্গত হয়, তা ফিরিশতার মুখে প্রবেশ করে।” আল্লামা তাবরানী তার বিখ্যাত গ্রন্থ “কাবীর” এ হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ হতে বর্ণনা করেন: “দুজন ফিরিশতার নিকট এর চেয়ে কষ্টদায়ক বস্তু আর কিছুই নেই যে, তারা তার সাথীদের নামাযরত অবস্থায় দেখতে পায়, অথচ তার দাঁতে খাদ্য কণা আটকে রয়েছে।” (আল মুজামুল কবীর, ৪র্থ খন্ড, ১৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪০৬১। ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ৬২৪ পৃষ্ঠা, ৬২৫)
সুফী তত্ত্বের মহান মাদানী ব্যবস্থাপত্র
==============
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম আবু হামীদ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বলেন: অযু থেকে অবসর হয়ে যখন আপনি নামাযের ইচ্ছা পোষণ করবেন তখন এ ধ্যান করুন যে, যে সকল প্রকাশ্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর মানুষের দৃষ্টি পড়ে ঐগুলোতো পাক হয়ে গেলো কিন্তু অন্তরের পবিত্রতা ছাড়া আল্লাহ্ তাআলার দরবারে মুনাজাত করা একটা নির্লজ্জতা। কেননা, আল্লাহ্ তাআলা অন্তর দেখেন। তিনি আরো বলেন: প্রকাশ্য অযুকারীর (পবিত্রতা অর্জনকারীর) এ কথা স্মরণ রাখা উচিত যে, অন্তরের পবিত্রতা তাওবা, গুনাহ্ বর্জন ও সুন্দর চরিত্র গঠনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি অন্তরকে পাপের ময়লা থেকে পরিস্কার করে না শুধু বাহ্যিক পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য্যরে প্রতি যতœবান হয় তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত, যে বাদশাহকে তার ঘরে আমন্ত্রণ করলো এবং বাদশাহের আগমন উপলক্ষ্যে তার ঘরের বাইরে খুবই সাজসজ্জা ও চাকচিক্য করলো অথচ ঘরের ভিতর অপরিস্কার, নোংরা ও ময়লা আবর্জনা পূর্ণ রেখে দিল। এখন বাদশাহ তার ঘরে আগমন করে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে যখন ময়লা আবর্জনা ও দুর্গন্ধ দেখতে পাবেন তখন তিনি কি খুশী হবেন না অসন্তুষ্ট হবেন, তা প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তিই সহজে অনুধাবন করতে পারে। (ইহ্ইয়াউল উলুম, ১ম খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)