সাঈ প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: হাজী সাহেব একেবারে সাঈই করল না এবং নিজ দেশে চলে গেল, তখন কি করবে?
উত্তর: হজ্বের সাঈ ওয়াজিব। যে মোটেও সাঈ করল না কিংবা চার অথবা তার অধিক চক্কর ছেড়ে দিল, তার উপর দম ওয়াজিব হবে, আর যদি তার কমসংখ্যক চক্কর ছেড়ে দেয় তখন সে প্রতিটি চক্করের পরিবর্তে সদকা দিয়ে দিবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৭৭ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যার হজ্বের সাঈ অনাদায়ী রয়ে যায়, আর এ অবস্থায় দেশে চলে যায় এবং দমও না দিয়ে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে সুযোগ করে দিল এবং ২ বছর পর আবার হজ্ব করার সৌভাগ্য নসীব হয়। এখন অবশিষ্ট সাঈ করতে পারবে কি পারবে না?
উত্তর: করতে পারবে এবং দমও রহিত হয়ে যাবে। কিন্তু এটা ভেবে সাঈ না করে দেশে চলে যাবেন না যে, পরবর্তীতে আবার এসে করে নিব। কেননা জীবনের কোন ভরসা নেই, আর জীবিত থাকলেও পুনরায় হাজির হওয়াটা অনিশ্চিত।
প্রশ্ন: কেউ হজ্বের সাঈর চারটি চক্কর করল এবং ইহরাম খুলে দিল, অর্থাৎ হলক ইত্যাদি করিয়ে নিল, এখন সে কি করবে?
উত্তর: সে তিনটি সদকা আদায় করবে। হ্যাঁ যদি হলক ইত্যাদির পরেও অবশিষ্ট সাঈ আদায় করে নেয়, তাহলে কাফ্ফারা রহিত হয়ে যাবে। স্মরণ রাখবেন! সাঈর জন্যে হজ্বের সময়কাল কিংবা ইহরাম শর্ত নয়। সে যদি আদায় না করে থাকে তাহলে জীবনে যে কোন সময় আদায় করে নিলেও ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। (আদায় করার পর কাফ্ফারার প্রয়োজন নেই)
প্রশ্ন: যদি তাওয়াফের পূর্বেই সাঈ করে নেয়, তখন কি করা চাই?
উত্তর: সদরুশ শরীয়াহ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: সাঈর জন্য শর্ত হচ্ছে যে, সারা তাওয়াফ অথবা তাওয়াফের অধিকাংশের পরেই হওয়া, তাই যদি তাওয়াফের পূর্বে অথবা তাওয়াফের তিন চক্করের পরে সাঈ করে নেয়, তাহলে (আদায়) হবে না এবং সাঈর পূর্বে ইহরাম (পরিহিত অবস্থায়) হওয়াও শর্ত।
চাই তা হজ্বের ইহরাম হোক কিংবা ওমরার, ইহরামের পূর্বে সাঈ হতেই পারে না, আর হজ্বের সাঈ যদি আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের পূর্বে করে নেয়, তাহলে সাঈর সময়েও ইহরাম হওয়া শর্ত। আর উকুফে আরাফার পরে করলে, তবে সুন্নাত হল যে, ইহরাম খুলে ফেলা অবস্থায় হওয়া এবং ওমরার সাঈতে ইহরাম ওয়াজিব অর্থাৎ যদি তাওয়াফের পর মাথা মুন্ডিয়ে নেয় অতঃপর সাঈ করে নেয় তাহলে সাঈ হয়ে গেল। যেহেতু ওয়াজিব ছুটে গেছে সেহেতু দম ওয়াজিব হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১০৯ পৃষ্ঠা)
স্ত্রীকে চুমু খাওয়া কিংবা স্পর্শ করা প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: ইহরাম অবস্থায় নিজ স্ত্রীকে স্পর্শ করা কেমন?
উত্তর: স্ত্রীকে কামবাসনা ছাড়া স্পর্শ করা বৈধ। তবে উত্তেজনা বশতঃ হাতে হাত রাখা কিংবা শরীর স্পর্শ করা হারাম। যদি কামবাসনা সহ চুমু ও স্পর্শ করল কিংবা শরীরকে স্পর্শ করল, তাহলে দম ওয়াজিব হয়ে যাবে। এই কাজগুলো চাই স্ত্রীর সাথে হোক অথবা কোন আমরদ (সুদর্শণ বালক) এর সাথে হোক, উভয়টির হুকুম একই। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৬৬৭ পৃষ্ঠা) যদি মুহরিমা মহিলারও পুরুষের এই ধরনের কাজে স্বাদ, মজা, তৃপ্তি অনুভব হয়, তাহলে তাকেও দম দিতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৭৩ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি কল্পনা দৃঢ় হয়ে যায় কিংবা লজ্জাস্থানের দিকে নজর পড়ে যায় এবং বীর্যপাত ঘটে যায়, তাহলে তার কাফ্ফারা কি হবে?
উত্তর: এই অবস্থায় এর কোন কাফ্ফারা নেই। (আলগিরী, ১ম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা)। তবে বাকী রইল ঐ কথা যে, হারামকৃত মহিলা অথবা আমরদ (সুদর্শন বালক) এর প্রতি কুদৃষ্টি দেয়া অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে তাদের নোংড়া কল্পনা করা। এসব কাজ ইহরাম ছাড়াও হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। এমনকি এই ধরনের নোংড়া কুমন্ত্রনা যদি এসেও পড়ে তাহলে مَعَاذَ اللہ عَزَّوَجَلَّ এর দ্বারা তৃপ্তি অনুভব না করে খুবদ্রুত নিজের দৃষ্টি কিংবা মনোভাবকে ফিরিয়ে নিন। অনুরূপভাবে মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই হুকুম।
প্রশ্ন: যদি স্বপ্নদোষ হয়ে যায় তখন কি করবে?
উত্তর: কোন কাফ্ফারা নেই। (আলগিরী, ১ম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি (আল্লাহ না করুক) কোন মুহরিম হস্তমৈথুনে লিপ্ত হয়, তখন তার কাফ্ফারা কি?
উত্তর: যদি এমতাবস্থায় বীর্যপাত ঘটে যায়, তবে দম ওয়াজিব হবে। অন্যথায় মাকরূহ হবে। (প্রাগুক্ত) ইহরাম অবস্থায় হোক বা না হোক এই ধরনের কাজ সর্বাবস্থায় অবৈধ ও হারাম হবে এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খান رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: যে ব্যক্তি হস্তমৈথুন করে, যদি সে তাওবা করা ছাড়া মারা যায় তাহলে কিয়ামতের দিন সে এই অবস্থায় উঠবে যে, তার উভয় হাতের তালুদ্বয় গর্ভবতী (মহিলার পেটের ন্যায়) হবে। যার কারণে অসংখ্য লোকের জন সমুদ্রে তার খুব মানহানি হবে (লজ্জা হবে)। (ফাতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা)
ইহরাম অবস্থায় আমরদের সাথে মুসাফাহা করল এবং ......?
=======
প্রশ্ন: যদি কেউ কোন আমরদ তথা সুন্দর আকর্ষনীয় বালকের সাথে মুসাফাহা করল, আর তা দ্বারা কামবাসনা জাগ্রত হল, তখন তার শাস্তি কি?
উত্তর: তার উপর দম ওয়াজিব হবে, আর এক্ষেত্রে আমরদ ও আমরদ নয় এরূপ কোন শর্ত নেই। যদি উভয়ে কামবাসনার হয়, আর অপর ব্যক্তিও মুহরিম হয়, তখন তার উপরও দম ওয়াজিব হবে।
স্বামী-স্ত্রী হাতে হাত রেখে চলা
প্রশ্ন: ইহরাম অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হাত ধরে তাওয়াফ অথবা সাঈ করার সময় যদি উত্তেজনা চলে আসে তবে?
উত্তর: যার উত্তেজনা চলে আসে তার উপর দম ওয়াজিব। যদি উভয়ের আসে তবে উভয়ের উপর ওয়াজিব। যদি ইহরাম পরিহিত পুরুষেরা একে অপরের হাত ধরে চলার ক্ষেত্রেও একই হুকুম।
স্ত্রী সঙ্গম প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: স্ত্রী সহবাসের কারণে কি হজ্ব ভঙ্গও হয়ে যেতে পারে?
উত্তর: উকুফে আরাফাতের পূর্বে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করলে তখন হজ্ব ভঙ্গ হয়ে যাবে, আর সে ঐ হজ্বকে হজ্বের ন্যায় পূর্ণ করে দম দিবে এবং পরবর্তী বছর কাযা করে দিবে। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা) আর যদি মহিলাও হজ্বের ইহরামে হয় তাহলে তার উপরও ঐ কাফ্ফারা আবশ্যক হবে। যদি এই বিপদে পুনরায় পড়ার ভয় হয়, তাহলে এটাই উপযুক্ত হবে যে, কাযা করার সময় ইহরামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উভয়ে এমনিভাবে পৃথক থাকবে যেন একে অপরকে না দেখে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৭৩ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি কেউ মাসআলা জানা না থাকার কারণে অথবা ভুলে স্ত্রী সঙ্গম করে নিল তখন কি করবে?
উত্তর: ভুল করে হোক কিংবা না জেনে স্ত্রী সহবাস করে ফেলল অথবা জেনে বুঝে নিজ ইচ্ছায় (তা) করে নিল, কিংবা বাধ্য হয়ে স্ত্রী সঙ্গম করল, সর্বাবস্থায় একই হুকুম। বরং অন্য মজলিশেও যদি দ্বিতীয়বার স্ত্রী সঙ্গম করে থাকে, তখন দ্বিতীয় বার দম আবশ্যক হবে। হ্যাঁ! হজ্ব পরিত্যাগ করার ইচ্ছা করে নেয়ার পর স্ত্রী সঙ্গম করার দ্বারা দম আবশ্যক হবে না।
প্রশ্ন: স্ত্রী সঙ্গম করার কারণে কি হাজীর ইহরাম শেষ হয়ে যায়?
উত্তর: জ্বি না। ইহরাম নিয়মানুযায়ী অবশিষ্ট থাকবে। যে কাজ মুহরিমের জন্য না-জায়িয। তা এখনও (তার জন্য) না-জায়িয, আর অনুরূপ সকল আহকামই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৭৫ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি হজ্ব ভঙ্গ হয়ে যায়, আর ঐ সময়ই সে ঐ বছরের হজ্ব পালনের জন্য নতুন ইহরাম বেঁধে নেয় তবে?
উত্তর: এই নিয়ম পালনে না সে কাফ্ফারা থেকে মুক্তি পাবে, না এ বছরের তার হজ্ব আদায় হবে। কেননা তা তো নষ্ট হয়ে গেছে। সর্বোপরি কথা হল, সে আগামী বছর হজ্ব কাযা আদায় করা থেকে মুক্তি পাবে না। (প্রাগুক্ত)
প্রশ্ন: তামাত্তুকারী ওমরা করে ইহরাম খুলে নিল, আর এদিকে হজ্বের আহকাম পালণের দিনগুলো শুরু হতে এখনো কয়েক দিন বাকী আছে, তাহলে কি সে তার স্ত্রীর সঙ্গে নির্জনে বাস করতে পারবে? নাকি পারবে না?
উত্তর: যতক্ষণ পর্যন্ত উভয়ে হজ্বের ইহরাম পরিধান করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত পারবে।
প্রশ্ন: যদি ওমরার ইহরাম বাঁধার পর তাওয়াফ ইত্যাদির পূর্বে স্ত্রী সঙ্গম করে নিল তখন তার কাফ্ফারা কি হবে?
উত্তর: ওমরার মধ্যে তাওয়াফের চার চক্কর পূর্ণ করে নেয়ার পূর্বে যদি স্ত্রী সঙ্গম করে নেয় তখনই তার ওমরা ভঙ্গ হয়ে যাবে। সে ওমরা পুনরায় করবে এবং তার দমও দিতে হবে, আর যদি চার চক্কর কিংবা পূর্ণ তাওয়াফের পরে স্ত্রী সঙ্গম করে, তখন শুধু দম ওয়াজিব হবে, ওমরা বিশুদ্ধ ভাবে আদায় হয়ে যাবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ৬৭৬ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি ওমরাকারী তাওয়াফ ও সাঈর পরে শুধুমাত্র মাথা মুন্ডানোর পূর্বে স্ত্রী সঙ্গম করে থাকে, তাহলে তো কোন শাসিন্ত নেই?
উত্তর: কেন শাসিন্ত থাকবে না। এখনও দম ওয়াজিব হবে। হলক কিংবা কসর করে নেয়ার পরই স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে।
নখ কাটা প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: মাসআলা জানা ছিল না, আর উভয় হাতের কিংবা উভয় পায়ের নখ কেটে নিল, এখন কি হবে? যদি কাফ্ফারা থাকে, তবে তাও বলে দিন?
উত্তর: জানা বা না জানা এখানে কোন ওজর (বাধ্যগতকারণ) হিসেবে গণ্য হবে না। চাই আপনি ভুল করে অপরাধ করুন কিংবা জেনে শুনে নিজ ইচ্ছায় করেন কিংবা কেউ বাধ্য করে করিয়ে থাকে প্রত্যেক অবস্থাতেই কাফ্ফারা দিতে হবে। সদরুশ শরীয়াহ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: এক হাত এক পায়ের পাঁচটি নখ কাটলে অথবা বিশটি নখ সব এক সাথে কাটলে একটি দম দিতে হবে, আর কেউ যদি হাত অথবা পায়ের সম্পূর্ণ পাঁচটি কাটেনি তাহলে প্রতিটি নখের বিনিময়ে একটি করে সদ্কা দিবে। এমনকি যদি হাত-পা চারটির চারটি করে করে নখ কাটে তাহলে ষোলটি সদ্কা দিবে। কিন্তু যদি সদ্কার মূল্য একটি দমের বরাবর হয়ে যায়, তাহলে কিছুটা কমিয়ে নিবে অথবা দম দিবে, আর যদি এক হাত অথবা এক পায়ের পাঁচটি নখ একই বৈঠকে এবং অন্য পাঁচটি অপর একটি বৈঠকে কাটে তাহলে দুইটি দম আবশ্যক হবে, আর হাত-পা চারটির নখ চারটি বৈঠকে কাটে তাহলে চারটি দম (দিতে হবে)। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৭২ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৩৪৪ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: নখ যদি দাঁত দিয়ে কেটে থাকে, তাহলে এর শাসিন্ত কি?
উত্তর: আপনি চাই নখ বেস্নইড দিয়ে কাটুন কিংবা ছুরি দিয়ে কিংবা নেইল কাটার দিয়ে কিংবা দাঁত দিয়ে, সবকটির একই হুকুম।(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৭২ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: মুহরিম ব্যক্তি অন্যের নখ কেটে দিতে পারবে, কি পারবে না?
উত্তর: কাটতে পারবে না। এর ক্ষেত্রে ঐ হুকুমই প্রযোজ্য হবে, যা অন্যের (মাথার) চুল মুন্ডিয়ে বা কেটে দেয়ার কারণে হয়ে থাকে। (আল মাসলাকুল মুতাকাস্যিত লিলক্বারী, ৩৩২ পৃষ্ঠা)
চুল কাটা প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন: যদি مَعَاذَ اللہ عَزَّوَجَلَّ কোন মুহরিম ব্যক্তি নিজের দাড়িকে কর্তন করে নিলেন তখন তার শাসিন্ত কি?
উত্তর: দাড়ি মুন্ডানো কিংবা ছেটে ছোট করে ফেলা এমনিতেই হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ, আর ইহরামকালীন তা অত্যাধিক হারাম। তবে ইহরামকালীন মাথার চুলও কাটতে পারে না। সর্বোপরি ইহরামের হুকুমের ব্যাপারে সদরুশ শরীয়াহ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: যদি মাথার এক চতুর্থাংশের চুল কিংবা দাড়ির এক চতুর্থাংশ চুল কিংবা তার চেয়ে বেশী যে কোন পন্থায় কেটে নেয় তখন তার উপর দম ওয়াজিব হবে, আর এক চতুর্থাংশের কমে হলে সদকা দিতে হবে এবং যদি টাক থাকে অথবা দাড়িতে লোম কম থাকে, আর তা যদি এক চতুর্থাংশের সমপরিমাণ হয় তাহলে ঐ পরিপূর্ণ অংশের জন্য দম অন্যথায় সদ্কা দিতে হবে। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে অল্প অল্প চুল নিলে, তবে তার সমষ্টি যদি এক চতুর্থাংশের সমপরিমাণ হয় তবে দম দিতে হবে অন্যথায় সদ্কা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৭০ পৃষ্ঠা। রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৬৫৯ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: মহিলারা নিজের চুল তুলে নিতে পারবে কিনা?
উত্তর: না। মহিলারা যদি পূর্ণ মাথা কিংবা এক চতুর্থাংশ মাথার চুল এক দাগ পরিমাণ তুলে নেয়, তাহলে দম দিতে হবে, আর তার চেয়ে কম হলে সদ্কা দিবে।
প্রশ্ন: কোন মুহরিম ব্যক্তি নিজ গর্দান বা বগল অথবা নাভীর নিচের চুল তুলে নিলে এর কি হুকুম হবে?
উত্তর: সম্পূর্ণ গর্দান অথবা পরিপূর্ণ এক বগলে দম দিতে হবে, আর এর কম হলে সদ্কা (ওয়াজিব হবে)। যদিও তা অর্ধেক অথবা তার চেয়ে বেশী হয়, আর একই হুকুম নাভীর নিচের লোমের ক্ষেত্রেও। উভয় বগল সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে নিলেও একটি মাত্র দম (দিতে হবে)।
(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৭০ পৃষ্ঠা। দুররে মুহতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৬৫৯ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: মাথা, দাঁড়ি, বগল ইত্যাদি এক সঙ্গে একই মজলিশে মুন্ডিয়ে নিল, তখন কতটি কাফ্ফারা আবশ্যক হবে?
উত্তর: মাথা হতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরের চুল একই মজলিশে মুন্ডিয়ে নিলে তবে একটি মাত্র দম ওয়াজিব হবে, আর যদি প্রত্যেক অঙ্গকে ভিন্ন ভিন্ন মজলিশে মুন্ডানো হয় তখন যত মজলিশ তত সমপরিমাণ কাফ্ফারা আবশ্যক হবে। (দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৬৫৯-৬৬১ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: যদি ওযু করতে চুল (বা দাঁড়ি) ঝড়ে পড়ে, তার জন্যও কি কাফ্ফারা দিতে হবে?
উত্তর: কেন দিতে হবে না! অবশ্যই দিতে হবে। ওযু করার সময়, চুলকালে কিংবা আঁচড়াতে গিয়ে যদি দুই কিংবা তিনটি চুল পড়ে যায় তখন প্রত্যেক চুলের পরিবর্তে একটি মিষ্টি আনারস কিংবা একেকটি রুটির টুকরা কিংবা একটি খেজুর গাছ খাইরাত করবে, আর তিনের অধিক হলে সদকা দেয়া আবশ্যক হবে।
প্রশ্ন: যদি খাদ্য রান্না করার সময় চুলার গরমে কিছু চুল জ্বলে গেল। তখন কি করবে?
উত্তর: সদকা প্রদান করতে হবে। (প্রাগুপ্ত)
প্রশ্ন: গোঁফ পরিস্কার করলে তার কাফ্ফারা কি?
উত্তর: গোঁফ যদি সম্পূর্ণ কর্তন করে নেয় কিংবা মুন্ডিয়ে নেয়। তাহলে সদকা প্রদান করতে হবে।
প্রশ্ন: যদি সিনার চুল মুন্ডিয়ে নেয় তখন কি করবে?
উত্তর: মাথা, দাঁড়ি, গর্দান, বগল এবং নাভীর নিচের চুল ব্যতীত বাকী অঙ্গের চুল মুন্ডিয়ে ফেললে শুধু সদকা আবশ্যক হবে।
প্রশ্ন: চুল পড়ে যাওয়ার রোগ হল কিংবা চুল নিজে নিজে পড়ে যায়। তখন তার প্রসঙ্গে কোন ছাড় আছে কিনা?
উত্তর: যদি হাত লাগানো ব্যতীত নিজে নিজে চুল পড়ে যায়। এরকম যদি নিজে নিজে সব চুলও পড়ে যায়। তখন কোন কাফ্ফারা দিতে হবে না।
প্রশ্ন: মুহরিম ব্যক্তি অপর মুহরিমের মাথা মুন্ডিয়ে দিল তখন তার শাসিন্ত কি?
উত্তর: যদি ইহরাম খুলে নেয়ার সময় হয়, তখন তারা একে অন্যের চুল মুন্ডিয়ে দিতে পারবে, আর যদি ইহরাম খুলে নেয়ার সময় এখনও হয়নি তখন তার জন্য কাফ্ফারার ধরন ভিন্ন রয়েছে। যদি এক মুহরিম অপর মুহরিমের মাথা মুন্ডিয়ে দিল। তখন যার মাথা মুন্ডাল তার উপর কাফ্ফারা আবশ্যক হবে, আর মুন্ডনকারীর উপর সদকা আবশ্যক হবে এবং যদি কোন মুহরিম ব্যক্তি অপর গাইরে মুহরিম ব্যক্তির মাথা মুন্ডিয়ে দিল। কিংবা গোফ কেটে দিল। কিংবা নখ কেটে দিল তখন কোন মিসকীনকে খাইরাত দিবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪২, ১১৭১ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন: গাইরে মুহরিম ব্যক্তি মুহরিমের মাথা মুন্ডাতে পারে কিনা?
উত্তর: সময় হওয়ার পূর্বে পারবে না। তবুও মুন্ডিয়ে নিলে মুহরিমকে কাফ্ফারা আর গাইরে মুহরিমকে অবশ্যই সদকা প্রদান করতে হবে।
প্রশ্ন: যদি হেয়ার ক্লিনার বা ক্রিম দিয়ে চুল উঠালে এর কি হুকুম?
উত্তর: বাহারে শরীয়াতে উলেস্নখ রয়েছে: চুল মুন্ডানো, কাটা অথবা কিছু দিয়ে চুল উঠানো সব কিছুর একই হুকুম। (প্রাগুপ্ত)